" এই শুনছো ? আরে শোনোনা,"ওহ ! এই শুরু হলো ," আচ্ছা রাত্রি হলেই কি তোমার মাথায় পাগলামির ভূত নামে? সত্যি ! ঘুমোও না " সাগর এর ধমকেও পূর্বা ঘুমোতে পারেনা ..কিযে হয় আজকাল সারাদিন যেন খোলা আকাশ আর সবুজকে ছুঁয়ে যেতে চায় মন ..কিন্তু সকাল থেকে ভালো করে বাইরে চোখ মেলে তাকাতেই পারেনা পূর্বা..সাগরের অফিসের রান্না,টিফিন গোছানো,মনি র কলেজের তাড়া বেশিরভাগ দিন খাইয়েও দিতে হয় ...আবার মেয়ের কাছে শুনতেও হয়," তুমি কি আর বুঝবে সারাদিন তো বাড়িতেই থাকো আর ঘুমোও "। কিছু উত্তর দেয়না পূর্বা আজকাল আর ভালো লাগে না । শিলংয়ে মেয়ে বেলা কেটেছে পূর্বার,জানলা দিয়ে মেঘেরা এসে বলতো,'এই মেয়ে খেলতে যাবি,চল যাই মেঘের দেশে' ..সত্যি কি যে ভালো লাগা! কখনো মেঘের পরশ কখনো রোদের ঝলক ! কখন যে মন ডানা মেলে উড়ে যেত এক পাহাড় থেকে এক পাহাড়ে কি মজার ছিল দিনগুলো ,বন্ধু দের সাথে হৈ হৈ করে কলেজ যাওয়া আর বাড়ি ফেরা ।এসে মায়ের গলা জড়িয়ে আদর খাওয়া আবার কখনো লোডশেডিংয়ে কাঠের দেওয়ালে নিজের ছায়া দেখে চমকে ওঠা !...এখন ভাবলে কি হাসি পায়।কিন্তু ছোটবেলার মেয়েবেলার দিন গুলো কেন যে মেয়েদের জীবনে থাকে না কে জানে ? বাবার একদিন সকালে আর ঘুম ভাঙলো না ।মা আর আমি থমকে গেলাম শুধুই বর্ষা আর চোখ ভরা জল । মেঘেরা ডাকলেও আজ আর যাইনা,বড় অভিমান হয় । মামারা নিতে এলেন আমিও আড়ি করলাম মেঘের দেশের সাথে চলে এলাম কলকাতায় কিছুদিন বাদে মামারা সাগরকে পছন্দ করলেন আমার জন্য,আর তারপর .. সকালে উঠি সারাদিন ছুটি সবাইকে খুশি রাখতে চাই ..অনেক পাওয়া অনেক অদল বদল আর অনেক না পাওয়া নিয়ে জীবন ।তবুও সাগর না শুনতে চাইলেও আমি মনে মনে শুনি মেঘেদের ডাক, 'ওরে আর কতদিন রাগ করবি ? একবার আয় না আবার লুকোচুরি খেলি পাহাড়ের ঢালে'।সাহস করে একদিন বলেই ফেললাম ," এই শোনো না আমায় শিলং নিয়ে যাবে ? চলো না " ..সেই আবার সাগরের ধমক "পূর্বা তুমি কি পাগল ! এখন কি করে ? Year ending চলছে।তুমি জানো আমার কি ঝামেলা ?" তাহলে এবার সাহস করে বলেই ফেললাম, আমায় কদিন ছুটি দেবে ? অনেকদিন তো হলো দাও না গো কদিন ছুটি আমি তাহলে মাকে নিয়ে যাই "জানিনা কি হবে তবুও চাইলাম ছুটি। বড় অসহায় লাগে আজকাল আমার ছুটিও দুষ্প্রাপ্য।তবুও এবার মঞ্জুর হল কুুুড়ি বছর পর । উঃ! কি আনন্দ ! মেঘের দেশে যাবো ! মা বললেন ,"ওরে আমি যে ভালো করে হাঁটতে পারিনা " বললাম তাতে কি ? তুমি এক জায়গায় বসে থাকবে আর আকাশ দেখবে ,আর আমি লুকোচুরি খেলবো ছোট বেলার মতো মেঘের সাথে ,ক্লান্ত হয়ে গেলে তোমার কাছে এসে কোলে মাথা দিয়ে আদর খাবো,কি মজা হবে বলতো ? ইচ্ছেডানা মেলে দিয়ে মায়ের হাত ধরে এলাম বাইশ বছর আগের ফেলে আসা মেঘের দেশে।নিরিবিলি জায়গায় রিসর্ট নিলাম লুকোচুরি খেলবো তো ? যদি মেঘেরা আড়ি করে ? রাত যেন আর কাটতেই চায় না ।আরে এই তো ভোর হয়েছে ! মেঘেরাও সারি বেঁধে নামছে আকাশ থেকে ,আমিও সাজলাম আজ আশমানি নীল শাড়ীতে,চুলটা না হয় খোলাই থাক মেঘের পরশ ওরাও পাক । মা ঘুমোচ্ছে, না ঘুম ভাঙাব না দরজা বন্ধ করে বেড়িয়ে এলাম।ওহ! কি শান্তি !এক মুঠো ঠান্ডা পরশ ভরিয়ে দিলো মন প্রাণ । হঠাৎ একটুকরো মেঘ এসে বললো ," এই মেয়ে এতদিন কোথায় ছিলে? এত অভিমান ! আমি কিছু বলবো হঠাৎ মেঘেদের দল এসে বলল,"চল খেলতে যাই " আমায় যেন উড়িয়ে নিয়ে গেলো বাধা দিতে গেলাম বললাম মা একা আছে কেউ শুনলোনা ।তারপর কি যে হলো হারিয়ে গেলাম এক মেঘ থেকে আরেক মেঘে।কেঁদেই ফেলি এবার বলি , মায়ের কাছে যাবো " হঠাৎ দেখি বাবা এসে আদর করে হাত দুটো ধরে বলছে , " খুকু কতদিন তোকে দেখিনি ,আশমানি নীল শাড়ী তে কি সুন্দর লাগছে রে তোকে! আর তেমন সুন্দর তোর লম্বা চুলের গোছা, কতদিন বসে আছি তোকে দেখবো বলে ,আরেকটু বসে যা মা " ..হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো মা ডাকছেন ,খুকু ওঠ ,চল আমি চেয়ারে বসি , আর তুই লুকোচুরি খেল মেঘেরা এসেছে "।
#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...
Comments
Post a Comment