ববের ডাকে সাড়া দিয়ে এখনই কিছু লিখতে পারলামনা। একটা ছোট চিঠি লেখা আছে অনেকদিন সেটাই পোষ্ট করলাম।
#আকাশের_ঠিকানায়#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
শ্রীচরণেষু বাবা,
প্রণাম নিও, অনেকদিন বাদে তোমায় চিঠি লিখছি। কতদিন বাদে বলতো? নাহ্ দিন কেন বলছি গো , অনেক বছর বাদে। তোমাকে মোবাইল ফোন কিনে দেবার পর আর সেভাবে চিঠি লেখাই হয়নি তাই না? প্রতিদিনই তো দুবার তিনবার ফোন করতাম, যদিও ফোনে বরাবর কম কথা বলতে তুমি বেশি কথা হত মায়ের সাথেই। অনেক কথা জমে আছে অনেক দিন বলা হয়না। তোমার নম্বর টা তোমার ছবি দিয়ে এখনও সেভ করা আছে আমার মোবাইলে । কিন্ত তোমার নতুন দেশে তো আর ফোন করা যায়না। আর কিছুদিন বাদেই তো আমার জন্মদিন, কত প্ল্যান থাকতো তোমার ঐ দিনটা নিয়ে। কখনও বা আমায় নিয়ে যেতে শাড়ি কিনতে বা গয়নার দোকানে,আমার দারুণ মজা হতো যখন নিয়ে আসতে কোন সারপ্রাইজ গিফ্ট। নীল আর হলুদ রঙ আমাদের দুজনেরই পছন্দের রঙ তাইনা? তোমার আর মায়ের আদরে আমি সেই ছোট্টবেলায় চলে যেতাম। আসলে তোমার মধ্যে ছিলো এক শিশুসুলভ উচ্ছ্বাস যা এখনকার মানুষের নেই। আজ আমি খুব সুন্দর একটা নীল শাড়ি কিনলাম আর হলুদ সবুজ একটা শাড়িও কিনলাম। কেন যেন মনে হলো তুমিই বললে কিনে নিতে, যেমন সব সময় বলতে, 'পছন্দের জিনিস কিনে নিতে হয়।'
এখানে বসন্তকাল তোমার ওদেশে তো চির বসন্ত। ওখানে কি দূগ্গা পূজা হয়? তুমি যাবার পর বড় পিশিমা ও চলে গেলো তোমার কাছে, যাতে তোমায় ফোঁটা দিতে পারে, ভাই ফোঁটার দিনটা তোমার খুব প্রিয় ছিলো তাইনা? কি সুন্দর ধুতি পাঞ্জাবী পরে বসে ফোঁটা নিতে। আর অষ্টমীর অঞ্জলি আর সরস্বতী পূজোর দিন কি সুন্দর না লাগতো তোমায়, মনে হত যেন দেবদূত নেমে এসেছে ।
তোমাকে ছাড়া পুরো দুবছর কাটিয়ে দিলাম। আসলে মার্চ মাস এলেই কেমন যেন কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে যায় মনের মধ্যে,এক একটা করে দিন যায় আর আমি অস্থির হয়ে পড়ি।সবসময় মনে হয় হয়ত বা আমার দোষেই তোমায় যেন হারিয়েছি,হয়ত এতো তাড়াতাড়ি যাবার কথা ছিলোনা তোমার। কিন্তু তোমার বৃন্দাবনে যাওয়াতে কেন যেন বাধা দিতে পারিনি। আজো মনে পড়ে তোমায় ট্রেনে তুলে দিয়ে ট্রেন ছাড়ার আগে যখন আমি প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ,তুমি তখন বারবার এসির পর্দাটাকে সরিয়ে আমাকে দেখার চেষ্টা করছিলে। যাবার আগে মাথায় হাত দিয়ে আমি তোমার কন্যারত্ন বলে আশীর্বাদ করে গিয়েছিলে। আসলে আমিই তো ছিলাম তোমার চোখের মণি। ভালো জিনিস সব বোধহয় ভেবে রাখতে আমার জন্য। সবসময় বলতে শাড়ী আর গয়নায় আমাকে অনন্যা লাগে, কেনো যে শালোয়ার পরি! চুল কেটে ফেললে খুব রাগ হোত তোমার। বলতে মেয়েরা মা দুর্গা, চুল কাটলে সৌন্দর্য কমে যায়। তুমি চলে যাবার পর কেন যেন আর কাঁচি চালাতে পারিনি চুলে। অবহেলায় নিজের খেয়ালে বেড়ে চলেছে। খুব মনে পড়ে ছোটবেলার কথা,ক্লাস সিক্স পর্যন্ত আমার থুতনিটা ধরে আমার চুলগুলো বেশ সুন্দর টানটান করে আঁচড়ে দিতে। আর হাঁসের ডিমের কুসুম চটকে মাখানো তোমার হাতের একদলা ভাতের স্বাদ এখনো পাই জানো। বিয়ের পরেও যখন গেছি তখনই আনতে আমার পছন্দের ডিমভরা ট্যাংরা , রাইখর, পিয়ালী মাছ। আর গরম কালে নদীর টাটকা গলদা চিংড়ী। কত কথাই যে মনে পড়ে যায় সবসময়। পাশে বসিয়ে মাছের মাথা খাওয়াতে মাকে বলতে,ওকে দাও পড়াশোনা করে তো বুদ্ধি হবে। কত গল্প শুনতাম ছোটবেলায় পাশে বসে। হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যেতো। শুধু আদরই না তোমার কড়া শাসনও পেয়েছি মাঝে মাঝে। তার জন্য কাঁদলে তুমিই আবার আদর করতে। মা রাগ করতো বলতো এতো আদর যখন দেবে তখন শাসন করো কেন? এখন মনে হয় সেই জন্যই হয়তো আজ একটু হলেও মানুষ হতে পেরেছি।এখনো বাসে,ট্রেনে ধুতি পরা কোন ফরসা লম্বা বয়স্ক মানুষ দেখলে তাকিয়ে থাকি। খুব খুব মিস করি তোমায়। ক্যাডবেরি সেলিব্রেশনের আ্যডটা দেখে বেশ কয়েকবছর আগে আমায় কিনে দিয়েছিলে, আমি তোমায় জড়িয়ে ধরেছিলাম। কেমন করে বুঝতে জানিনা আমার মন কেমন আছে,কি চাই আমার? ম্যাজিসিয়ান ছাড়া জীবনে,তোমার হাতের ম্যাজিক স্টিকটা আমিই নিয়ে নিয়েছি তোমার হাত থেকে। কারণ আমাকেই তো ভালো রাখতে হবে সবাইকে আর ভালো থাকতে হবে। তাই মনখারাপ নিয়েও হয়ত হাসি,জীবনকে ভালোবাসি। আমি ভালো নেই সেটা তো তোমারও ভালো লাগতো না। তাই হয়ত তোমার হঠাৎ চলে যাওয়া অনেক দূরে গিয়ে,আমাকে কোন কষ্ট হয়ত দিতে চাওনি। তোমার চলে যাওয়া ছিলো ঘুমের মধ্যে ,আর আমি অনুভব করেছিলাম ঘোরের মধ্যে যে তুমি আর কোনদিন ফিরবেনা। তোমার ঘুমন্ত মুখটা আমার দেখতে আর ইচ্ছে হয়নি। প্রাণবন্ত ছিলে,সুপুরুষ আর দেবকান্তি ছিলে,সেটাই ধরে রেখেছি স্মৃতিতে।দোল দেখতে গিয়েছিলে বৃন্দাবনে,খুব পছন্দের জায়গা ছিলো তোমার। ওখানেই তাই যমুনার ধারে বা কুঞ্জবনে কোথাও রয়ে গেলে চিরতরে।তোমার চিররঙিন আর সুন্দর মন নিয়ে ভালো থেকো ওখানে। আমিও ভাল থাকার চেষ্টা করি গো সবসময়।
ও একটা কথা তো বলাই হয়নি,তোমার কলমটা আমি নিয়ে নিয়েছি। প্রতিদিনই কিছু এলোমেলো শব্দ লিখি,ভাঙি আবার সাজাই কখনো ছড়িয়ে ফেলি। তুমি থাকলে হয়ত খুব খুশি হতে,কারণ বই ছিলো তোমার অবসরের সঙ্গী। কিন্তু ওখানে তো আর মেল করা যাবেনা। হয়ত তুমি সবটাই জানো আর দেখো।
যেখানেই থাকো ভালো থেকো,আমাদের ভালো রেখো।
আসছে পূজা বছর পরে
মনটা তবুও কেমন করে।
সারাদিনের কাজের ভীড়ে
তোমায় শুধু মনে পড়ে।
সবই আছে,যেমন ছিলো,
তোমার মানাও আছে ভালো।
বুকের মাঝে লুকিয়ে ব্যাথা,
হাসিমুখে বলছে কথা।
মানার এখন কত্ত কাজ,
রান্নাবান্না, গোছগাছ।
কেমন আছো নতুন দেশে?
ওখানেও কি দুগ্গা আসে?
তোমারও কি পড়ছে মনে,
মানার কথা পূজোর দিনে?
তোমার 'মানা'
Comments
Post a Comment