Skip to main content

#ছেঁড়া রাখী #

#ছেঁড়া_রাখী#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

কলেজের সামনে গাড়ি থেকে নামতে  নামতে হাত ঘড়িতে চোখ রাখে সৃষ্টি,"ওহ ! আজ ও আবার দেরি হয়ে গেলো!সিঁড়ির মুখেই  দেখা হয়ে গেলো তিস্তার সাথে,একগাল  হেসে বললো,' ছুটিস না থাম।" তোকে হোয়াটস আ্যপে মেসেজ করেছিলাম আজ ফার্স্ট ক্লাস হবে না। কি ব্যাপার সুন্দরী তাড়াতাড়ি ঘুমের দেশে ? বলেই হেসে গড়িয়ে পরে তিস্তা , সৃষ্টির বেস্ট ফ্রেন্ড।

শুধু তিস্তার চোখে কেন ? সৃষ্টি কলেজ এর ড্রিম গার্ল  যদিও মাত্র দুমাস  আগে কলকাতার এই  নামী কলেজ এ ভর্তি হয়েছে সে,তবু কলেজে সবাই প্রায় ওকে  চেনে এক ডাকে।
এবার ব‍্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে ওর জন্যই জিতেছে ওদের কলেজ। তারপর থেকেই সবাই চেনে সৃষ্টিকে।

শুধু খেলা কেন ? গান ,বিতর্ক  সবেতেই  সৃষ্টি সেরা । তেমন চোখজুড়ানো সুন্দরী সে।
কলেজের অনেক ছেলেদেরই হার্টথ্রব সৃষ্টি । সুন্দরী সৃষ্টি যখন রঙ্গিন প্রজাপতির মতো বন্ধুদের সাথে হেসে গড়িয়ে পরে বা কোর্টে গিয়ে ব্যাডমিন্টন  খেলে তখন অনেকেরই মনে ছড়িয়ে পরে রামধনুর রং।
তবে পড়াশোনাটা খুব মন দিয়ে করে সৃষ্টি। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান সে তাই সবসময়  মনে রাখে দুস্টুমি,মজা,খেলা সবকিছুর মধ্যেও  জীবনে ভালো কিছু করে এগিয়ে যেতে হবে।

আজ সকাল থেকেই খুব বৃষ্টি , আকাশের  মুখ ভার। মা অফিস এ যাবার জন্য রেডি হচ্ছে, ও মায়ের গলা টা জড়িয়ে আদুরে গলায় বলে আজ কলেজ বাঙ্ক করবো মাম্মা। মা হেসে ফেলেন , বলেন যা খুশি কর ।
            এমন সময় তিস্তার মেসেজ,"যাবি তো আজ ?"..... " বড্ডো আলসেমি লাগছে রে।" চল না রে , আজ স‍্যার Blake  ￰পড়াবেন চল না প্লিজ ।
       সৃষ্টি অগত্যা তৈরি হয়,আজ বর্ষার ময়ূরীর সাজ ওর। হলুদ,লাল,কালো , সবুজ সুতোর কাজ করা নীল রঙের কুর্তা  আর লাল টকটকে ওড়না পরা সৃষ্টি কে দেখে মেঘলা আকাশের কান্না যেন মুছে যাবে।
      তিস্তা বলে ,"অপরূপা',আজ তো ময়ূরের মতো পেখম  মেলেছিস। খুব মিষ্টি লাগছে রে |
         ওরা ক্লাসে ঢুকতেই  শুরু হলো  আকাশভাঙ্গা বৃষ্টি ।
স্যার এসে গুরুগম্ভীর গলায় Blake শুরু করলেন, সারা ক্লাস চুপ |
   এমন সময় ,"মে আই কাম ইন স‍্যার?"খুব আস্তে একটা গলা শোনা গেলো। সারা ক্লাস এর চোখ তখন দরজার  দিকে।
     স্যার দরজার  দিকে তাকিয়ে বললেন ," ও তুমি!একদম ভিজে গেছো , পেছনে গিয়ে বসো।" সৃষ্টি দেখলো নতুন মুখ একটু আশ্চর্য হলো , দুমাস এর বেশি ক্লাস হয়ে গেছে , এতো দিনে ?
    
সবাই দেখলো বৃষ্টি তে কাক ভেজা হয়ে খুব সংকুচিত  হয়ে একটি  ছেলে বোকা বোকা মুখ করে ক্লাস এ ঢুকছে । খুব হাসি পেলো ছেলেটার  ভাবভঙ্গী দেখে। কি রকম যেন একটা বোকা বোকা আনস্মার্ট।বয়েসেও ওদের চেয়ে একটু বড়।
কেন মনে হলো স্যার যেন ছেলেটির  প্রতি একটু বেশিই সহানুভূতিশীল।স্যার আলাপ করিয়ে দিলেন, ছেলেটির নাম আর্য , দার্জিলিং এর  সেন্ট  পলস কলেজ থেকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট নিয়ে এখানে এসেছে।
   সৃষ্টির র একটু ঈর্ষা হয়, কি আছে এই বোকা ছেলেটার মধ্যে যে স্যার ওকে এতো প্রাধান্য  দিচ্ছেন ? যত্তসব পার্সিয়ালিটি।
    সৃষ্টি এক মাসের  মধ্যে বুঝতে পারে , আর্য বোকা বোকা দেখতে হলেও বোকা নয়, খুব মেধাবী। ক্লাসে অনেক ছেলে মেয়ে আর্যর সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলো। তবে কেন যেন আর্য খুব একটা বেশি কথা বলত না।

সৃষ্টি কিন্তু একটুও পছন্দ করত না আর্য কে,আর্য যেদিন প্রথম সৃষ্টির মুখোমুখি হয় সেদিন অদ্ভুত রকম যেন অবাক হয়ে গেছিলো।সৃষ্টির দিক থেকে চোখ সরাতেই  পারছিলোনা।
       ঐ দৃষ্টি তে কি ছিল সৃষ্টি বোঝেনি,খুব অস্বস্তি হয়েছিল,বাড়ি গিয়ে চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল বিষণ্ণ অথচ অবাক করা দুটো চোখ। রাগ হয়েছিল সৃষ্টির , মনে মনে বলেছিলো ইডিয়ট একটা।
     আর্য প্রতিদিন যেন অদ্ভুত মুগ্ধতা ভরা দৃষ্টি নিয়ে দেখত ওকে।
          সৃষ্টি বন্ধুদের সাথে খুব হাসাহাসি করত আর্যকে নিয়ে। আর্য র বোকা বোকা অবাক দৃষ্টি ওর মাথা টা আরো গরম করে দিত। তিস্তা , তিন্নি , মেখলা আরো সবাই হাসাহাসি করে বলত ,'  ওই বোকা টা তোর প্রেমে পড়েছে ,এবার রাখী পূর্ণিমা  তে ওকে একটা রাখী পরিয়ে দিস ।তুই তো আর ওকে পাত্তা দিবি না।
      রাখী পরে বোকা টা জব্দ  হবে । "তাইতো,ঠিকই বলেছিস আরে সোমবারই তো রাখী মাঝে তো মাত্র কদিন। এবার বোকাটা বুঝবে"।
  রাখীর দিন কলেজের গেটে ওরা সবাই | সবাই অনেকগুলো  করে রাখী কিনেছে , কিছু বন্ধুদের জন্য আর কিছু কলেজ এর রোমিওদের জন্য যারা ওদের জ্বালিয়ে মারছে।খুব ভালো করে জানে যে ওরা রাখী পরবে না,তবুও ওদের মুখ গুলো আজ দেখতে হবে , হা হা হা |
         সৃষ্টি আজ আর্য র জন্যও একটা খামে  করে একটা রাখী আর ছোট একটা চিঠি এনেছে যাতে আর্য কে অপমান  করে কিছু কথা লেখা। আর যেন কোনোদিন সৃষ্টির দিকে বোকা বোকা মুখ না করে  তাকায়। কেন যে এতো রাগ ওই ছেলেটার ওপর ও নিজেও জানেনা।
           ছুটির একটু আগে তিস্তা আর্য কে বললো, "এই নে খামটা রেখে দে সৃষ্টি দিলো।বাড়ীতে গিয়ে পড়িস। আর্য কি বলবে বুঝতে না পেরে খাম টা ব্যাগে রেখে দিলো।
              ক্যান্টিনে গিয়ে হাসিতে গড়িয়ে পড়লো ওরা, ওহ ! আজ একটা দিন গেলো।আর্য যে বাড়ী গিয়ে কি করবে কে জানে ?বেচারা,সৃষ্টি যে কি ভাবে ওকে বোকা বানালো !
              পরদিন কলেজ এ সৃষ্টির আর বন্ধুদের বারবার  নজর যাচ্ছিলো আর্য র বসার  জায়গা র দিকে , এখনো এলো না কেন?
          পরের দিন ও আর্য এলো না,আজ সৃষ্টি আর তিস্তা র মনটা কেমন যেন খচ খচ করছে | তাহলে কি ওরা বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে  |
      
দুটো ক্লাস এর পর সৃষ্টিকে ডাকা হলো প্রিন্সিপ‍্যালের ঘরে | অজানা একটা ভয়ে সৃষ্টির মনটা খারাপ হয়ে গেলো , স্যার ওকে বসতে  বললেন।সৃষ্টি দেখলো একজন ভদ্রমহিলা ওর পাশের চেয়ার এ বসে।
      মাথা নিচু করে বসে সৃষ্টি,জানতে পারলো  উনি আর্যর মা। সৃষ্টির বুকের মধ্যে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো,তবে কি আর্যর কিছু হয়েছে ? স্যার আরো বললেন,"ওনার আরো একটা পরিচয়  আছে উনি আমার বন্ধুর স্ত্রী।উনি তোমায় কিছু বলতে চান , তুমি আমাদের সবার প্রিয় ছাত্রী তাই আলাদা  করে তোমায় ডেকে পাঠালাম।"
       স্যার বলাতে এবার ভদ্রমহিলা র দিকে তাকালাম | কি আশ্চর্য !  তিনি অদ্ভুত ভাবে সৃষ্টির দিকে তাকিয়ে , সেই চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকাতে  পারলোনা সৃষ্টি।
       স্যার উনার দিকে তাকিয়ে বললেন ,'  আপনি বলুন , ভদ্রমহিলার চোখে এক রাশ বিষণ্নতা। আর্যর মা যা বললেন তা শুনে আর মাথা তুলতে পারলো না সৃষ্টি।অপরাধবোধ আর লজ্জায়  মাটিতে  মিশে যেতে ইচ্ছে হলো ওর।
     আর্য র মা বললেন তার দুই সন্তান , আর্য আর উর্মি। দুজনেই খুব মেধাবী আর ভদ্র , হাসি খুশি প্রাণোচ্ছল। স্বামী র কর্মসূত্রে ওনারা  দার্জিলিং এ থাকতেন , ওখানকার  কনভেন্ট স্কুল আর কলেজ এ পড়তো উর্মি আর আর্য। দুই ভাইবোন  পিঠোপিঠি , এক ক্লাস উঁচু  তে আর্য পড়তো উর্মির থেকে ।বাইরের বন্ধু ওদের বেশি ছিল না , দুই ভাইবোন এর মধ্যে কি যে মিল  ওদের !  এক মুহূর্ত ও চলতো না উর্মির দাদা ছাড়া |
          মা বাবার গর্বের শেষ ছিল না দুই ছেলে মেয়ে কে নিয়ে ।আর্যর চোখের মণি ছিল উর্মি | সেদিন ছিল রাখী র আগের দিন , ওরা দুই ভাই বোন প্রতি বছরের মতো বেরিয়েছিল রাখী ,  চকোলেট, মিষ্টি আর গিফট কিনতে।ফেরার পথে উল্টো দিক থেকে নেমে আসা একটা  জিপ ব্রেক ফেল করে ধাক্কা দেয় আর্যর হাত ধরে থাকা উর্মি কে , ছিটকে  পরে উর্মি , শেষ বারের  মতো বলে দাদা।আরেকদিকে ,ছিটকে পরে আর্য মুহূর্তের জন্য চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে যায়। কোনরকমে উঠে দাঁড়িয়ে দেখে রাস্তায় পরে উর্মি আর ওর হাতে শক্ত  করে ধরা রাখীর প্যাকেটটা। মনে হলো যেন ঘুমিয়ে আছে।
          ততক্ষনে  অনেক ভীড় রাস্তায় , কিন্তু উর্মির রাখী পড়ানো হয় নি দাদা কে। হসপিটালে ডাক্তার বলেন কিছু করার নেই ।ওলটপালট হয়ে গেলো সব কিছু।
   এভাবেই একদিন রাখী কিনতে গিয়ে চলে গিয়েছিলো  উর্মি | কিন্তু আর্য যেন পাথর হয়ে গেছে , ভালো মন্দ কোন কিছু তাকে স্পর্শ করে না।কানে বাজে শুধু দাদা ডাক আর চোখের সামনে  উর্মির হাতের মুঠোয়  শক্ত  করে ধরা রাখীটা।
     জীবন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া আর্য কে মূল স্রোতে  ফেরানোর  জন্য দিনের পর দিন কেটে গেছে তাদের।শেষ পর্যন্ত আর্যর বাবা ট্রান্সফার নিয়ে কলকাতা চলে আসেন ওদের নিয়ে।দিনের পর দিন কাউন্সিলিং করে কিছুটা সুস্থ হয় আর্য। একবছর  নষ্ট হলেও বাবার বন্ধু এই কলেজে  থাকায় আর্য ট্রান্সফার নিয়ে ভর্তি হয়।
       কিন্তু কলেজেএসে যখন সে সৃষ্টির মুখোমুখি হয় তখন চমকে ওঠে আর্য,অনেকটা  বনুর মতো।  ওর কাছাকাছি কেউ তো আছে বনুর মতো।
        সৃষ্টির হাসি, কথা , দুস্টুমি সবই দেখতো আশ্চর্য হয়ে।শুধু চোখ দুটো ঘুরতো  সৃষ্টির দিকে। কিন্তু মা বাবাকে কখনো  সৃষ্টির কথা বলেনি। আর্য আবার পড়াশোনা করছে , কলেজে যাচ্ছে তা দেখে শত মনখারাপের  বোঝা নিয়ে বাবাও অফিস করছেন।কি দরকার আবার সব কিছু উল্টে  দেবার।
         তবুও সৃষ্টির দেয়া খাম টা সে উর্মির মুখ মনে করেই নিয়েছিল,এমন অনেক মজা উর্মিও করতো।এপ্রিল  ফুল করা , আর্যর জন্মদিনে বালিশের  তলায় কার্ড,চিঠি কত কি চুপ করে রেখে দিতো উর্মি।তাই সৃষ্টি ও হয়তো কিছু মজাই করেছে।
             বাড়ীতে এসে খাম খুলে রাখী দেখে জলের ধারা গড়িয়ে পরে আর্যর চোখ দিয়ে , কিন্তু চিরকুট টা দেখে আর্য বনুর ছবি র সামনে গিয়ে অঝোরে  কেঁদে ফেলে। এ কাকে সে বনুর জায়গায় বসিয়েছিল?
         আজ এমনিতেই  মনটা ভীষণ খারাপ ছিল , রাখীর দিন উর্মির কত বায়না ছিল গিফ্ট নিয়ে , ক্যাডবেরি  নিয়ে।আর কোনোদিন কেউ বলবে না ,' দাদা ওই ক্যাডবেরি টা না আনলে  হবে না '। তবুও আর্য কলেজে যায় কারণ ও জানে ওকে বাড়িতে দেখলে  মা মন খারাপ করবেন।
           চিরকুট এ কি লিখেছে  সৃষ্টি ! বোকা বোকা চোখে আর্য যেন ওর দিকে আর না  তাকায়, এমন ছেলেদের ও পাত্তা দেয় না | তাই ওর জন্য এই রাখী, বাড়ী গিয়ে সৃষ্টির কথা মনে করে যেন হাতে পরে নেয়।
         লজ্জায় দুঃখে কুঁকড়ে  যায় আর্য,যাকে সে বনু র মতো দেখতে বলে অবাক বিস্ময়ে দেখতো ।সে এতো টা ঘেন্না করে ওকে!কি করেছে ও ?
             মা ঘরে এসে দেখে বোনের ছবি র সামনে অঝোরে  কাঁদছে আর্য। বুকে টেনে নেন আর্যকে, নিজেকে সামলাতে পারেননা।সেদিন কিছু খাওয়াতে  পারেননি  ছেলেকে। নিজেদেরও খাওয়া হয়নি।
      রাতে খুব জ্বর আসে আর্যর , সেদিন থেকে কোনো কথা বলেনি আর্য ,শুধু চোখে জল নিয়ে বনুর ছবির দিকে তাকিয়ে দেখেছে মাঝে মাঝে।
 
      চিন্তায় অস্থির  হয়ে ওঠেন মা , হঠাৎ কি হলো ? পরদিন ঘর ঝাড় দিতে গিয়ে লতিকা দেখতে পান একটা ছেঁড়া রাখী আর দলা পাকানো একটা খাম | চিরকুট পড়ে কিছুটা বোঝেন,কিন্তু সব পরিষ্কার  হয় না | অনেক কষ্টে  ছেলেকে অনেক বুঝিয়ে আদর করে সবটা জানতে পারেন।এক দলা কান্না বুকে মোচড়  দিয়ে ওঠে।
সবে ছেলেটা  একটু সেরে  উঠছিলো,আবার কি তবে ? প্রিন্সিপাল স্যার আর্য র বাবা র বন্ধু , তাকে জানান  পুরো ব্যাপার টা।তিনি বলেন একটু কষ্ট করে কলেজ এ আসতে , সৃষ্টির সাথে মুখোমুখি কথা বলা দরকার।আর্য কে না জানিয়েই   সমবায়িকা যাবার নাম করে লতিকা  বেরিয়েছেন বাড়ী থেকে |
সৃষ্টিকে দেখে নিজেও অনেকটা অবাক হয়েছেন  লতিকা।আর্য তো ভুল কিছু বলেনি,সৃষ্টি যেন উর্মির ছায়া।
        সৃষ্টির মুখে আর কোনো কথা নেই , কি বলবে ও, নিজের কাছে বড্ডো ছোট হয়ে গেছে।
   স্যার জিজ্ঞেস করলেন ,'কেন এমন করলে তুমি ?' আর্য কি কখনো অসম্মান  করেছে তোমায়? উত্তর দাও। কি হচ্ছে এসব ? আমার কত গর্ব তোমাকে নিয়ে।ক্ষমা চাও।
          সৃষ্টির গলা শুকিয়ে  গেছে , দুচোখে জল , শুধু মাথা নিচু করে বলে আন্টি  আমায় ক্ষমা করবেন। দয়া করে একটা সুযোগ দিন আমাকে শেষবারের  মতো , যদি পারি ভুল শোধরাতে।    লতিকা না করতে পারলেননা।সৃষ্টি কে সঙ্গে নিয়ে এলেন বাড়ীতে।আস্তে আস্তে নিয়ে এলেন আর্য র ঘরে। উর্মির ছবি দেখে সৃষ্টি চমকে উঠলো, অনেকটা যেন তার ই মতো দেখতে উর্মিকে শুধু চুলটা ছোট করে কাটা।
        আর্যর চোখ বোজা,মা মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন ,'খোকা আমি এসে পড়েছি , চোখ খুলে দেখ। বিষণ্ণ চোখ দুটো মেলে আর্য,দেখে মায়ের পাশে উর্মি দাঁড়িয়ে। না না তা কি করে সম্ভব ? তবে এ কে সৃষ্টি?চোখ বুঝে ফেলে আর্য।
      এবার সৃষ্টি ডাকে,'চোখ খোল দাদাভাই  , আমি যদি উর্মি হতাম তাহলে কি তুই আমায় ক্ষমা করতিসনা? বিছানার পাশে বসে আর্য র হাত দুটো জড়িয়ে ধরে সৃষ্টি।
        ভয়ে সংকোচে উঠে বসে আর্য,মায়ের দিকে তাকায়। মা চোখে জল , মুখে হাসি নিয়ে বলেন," ওকে ক্ষমা করে দে বাবু ভুল বুঝতে পেরেছে ও , মেয়েটা এখনো কাঁদছে। "
     আর্য কিছু বলতে পারেনা,শুধু সৃষ্টি আর্যর হাত দুটো ধরে,হাতের মুঠোয় ধরে রাখা রাখীটা বেঁধে দেয় আর্য র হাতে।বললো," আজ নাই বা থাকুক রাখীপূর্ণিমা আমি তোকে সারাজীবনের  মতো বেঁধে রাখলাম দাভাই,আর দুঃখ পাসনা।"
    সৃষ্টির কাছে আর্যর সহজ হতে অনেক দিন লেগেছিলো। সৃষ্টি যত্ন আর ভালোবাসা দিয়ে আর্যর মনের ক্ষত অনেকটা ভরিয়ে দিয়েছিলো |
          আজ আর্য বোঝে জীবন অনেক কিছু কেড়ে নিলেও  ফিরিয়ে দেয় অল্প কিছু যা নিয়ে মানুষ কষ্ট ভোলে। সৃষ্টির আর আর্যর পরিবার আজ বড় আপন কলেজের সবাই দেখে সম্পর্কের মাধুর্য কি ভাবে বাঁচিয়ে দেয় একটা সুন্দর জীবনকে।
       মিথ্যে রাখী পূর্ণিমা সত্যি হয়ে ওঠে আর্যর জীবনে।নতুন করে পথ খুঁজে পেলো একটা পথ হারানো উজ্জ্বল তারা। ছেঁড়া রাখীকে জুড়ে দিয়ে স্নেহের বাঁধনে বাঁধলো আর্য কে তার নতুন করে খুঁজে পাওয়া হারানো  মিষ্টি বোন সৃষ্টি |

সমাপ্ত:-

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...