Skip to main content

#সবুজ_পালক#

#সবুজ পালক #
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

কেন যে আজ সারাদিন বড্ডো মেজাজ  টা খারাপ হয়ে আছে কে জানে ? মাঝে মাঝে আজকাল এমন হয় ,কথায় কথায় রাগ হয়ে যায়,, সব মনে হয় বিরক্তিকর |      শুভ হাসে  বলে বিপাশা  এটা মিড্ এইজ ক্রাইসিস তাই সব একঘেয়ে লাগে হা হা হা | আবার শুরু করো সব নতুন করে , আমি বলি কি ,"একটা প্রেম করো "| বলেই এক গাল  হাসি,, রাগ হলেও  ওই মানুষ টা যে কি ভালো তার ওপর  রাগ করা যায় না | শেষে হেসে ফেললো  বিপাশা , অমনি শুভ র হাসির  রোল হা হা হা | আচ্ছা চলো যাই ,চট করে তৈরি হয়ে নাও তো  অনেকদিন বলছিলে  না সবুজ দেখবে তোমায় সবুজ দেখিয়ে নিয়ে আসি |

তবে একটা শর্ত , বিপাশা র মন টা নেচে  ওঠে , শুভ র কথা শুনে থমকে দাঁড়ায় , আবার কি হলো ?

আছে আছে , আজ কিন্তু আমার পছন্দের সেই সবুজ আর লাল গুজরাটি কাজের শাড়ী টা পড়তে হবে কিন্তু আর গলায় তোমার নিজের বানানো সেই সবুজ সুতোর হার ,, রাজি তো ?
বিপাশার মনে ততক্ষণে  সবুজ চাদর পাতা হয়ে গেছে |ওহ!  কতদিন সবুজ কে ছুঁয়ে দেখা হয় না , শুভ সত্যি তার মন বোঝে ,এই টুকু আবদার  রাখাই  যায়|

ছেলেতো এই গত মাসেই পড়তে ব্যাঙ্গালুরু গেলো এটাও বিপাশার মন খারাপের  একটা কারণ  , ছেলে কে তবুও ছাড়তেই  হলো | শুভ র ও খারাপ লাগে তাই নিজেকে আরো বেশি ব্যস্ত করেছে সে ,এদিকে  বিপাশার রান্না, ঘর গোছানো  সব  কাজ প্রায় অর্ধেক  হয়ে গেছে | কতবার আর এক জিনিস  মোছা যায়,ফেইসবুক , হোয়াট্স আপের আড্ডা ও তেমন জমে  না |
ছেলের প্রিয় খাবার গুলো তো রাধঁতেই  ইচ্ছে করে না | দিন গুলো খুব একঘেয়ে , রাতে অপেক্ষা  শুভ আসার | তাতে ও বেশির ভাগ ঝগড়া লেগে যায় দুজনের |

তাই আর দেরি না , বিপাশা আজ খুব সুন্দর করে সাজলো অনেকদিন বাদে , এই শাড়ী টা ওর নিজের ও খুব পছন্দ , কি সুন্দর যে সবুজ রং টা!
সাজের একটা ম্যাজিক  আছে , ড্রেসিং টেবিল এর সামনে দাঁড়িয়ে  যখন  চন্দন  এর গন্ধ টা গায়ে মেখে ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক   লাগালো তখন নিজেকে আবার ভালো লাগলো |
ড্রয়িং রুমে  অপেক্ষা করছিলো শুভ , আজ আর সে বিপাশা কে কোনো তাড়া দেয়  নি , ও বুঝেছে বিপাশা র স্পেস  দরকার | আজ সত্যি বিপাশার দিক থেকে চোখ ফেরানো যায় না , আজ যেন  বিপাশাই এক টুকরো  খোলা আকাশ |
চলো বেড়িয়ে পড়ি, আজ জানিনা গাড়ি টাও ঠিক মতো চালাতে  পারবো কি না ? হা হা  হা ,,এবার সত্যি এতো বছর বাদেও  বিপাশা ব্লাশ করলো |
বয়েস কি কমছে ? শুভ হাসতে হাসতে বললো এটা জীবনের সেকেন্ড ইনিংস  বিপ্স    এনজয় করো |ছেলে আর তোমার সেই ছোট্ট খোকা টি হয়ে ফিরবে  না | ওকে স্পেস দাও , তুমিও ছোট্ট ছোট্ট ভালো লাগা গুলো এনজয় করো |
চলো চলো , দেরি হয়ে যাচ্ছে ,, আজ সবুজের খোঁজে  যেখানে খুশি যাবো , চলো আজ যাই নতুন কোথাও , নিরুদ্দেশের খোঁজে |

গাড়িতে বিপাশা একদম চুপ সবুজের ছোঁয়া আর ঠান্ডা বাতাস শরীর ,মন ,চোখ সব যেন জুড়িয়ে  যাচ্ছে |  শরতের বিকেল কি যে সুন্দর !

প্রায়এক ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে শুভ থামলো ,, আবেশে  মুগ্ধ বিপাশা এতক্ষণে সম্বিৎ পেলো, এ কোথায়? শহর ছাড়িয়ে  অনেক দূর এ কোথায় ? চারদিকে  শুধু সবুজ আর সবুজ , শিউলির  কুড়ির  গন্ধ আর দোলন চাপা র গন্ধ মন প্রাণ ভরিয়ে দেয় |

বিপাশা আজ  যেন কিশোরী , কোনো ব্যাথা ই আজ আর এ মুহূর্তে যন্ত্রনা দিলো না | একজায়গায় বসে শুভর  হাতে হাত রেখে শুধু অনুভব  করলো প্রকৃতি  কে |

চমক ভাঙলো একটা ছোট্ট কচি গলায় , "  দিদিমনি এই লে লাল ফুল  গুলা , মাথায় গুঁজে  লে, তোকে খুব সুন্দর লাগবে " | প্রকৃতির রাজকন্যা  যেন উপহারের  ডালি  নিয়ে তার সামনে | জড়িয়ে ধরে বাচ্ছা মেয়েটা  কে আদর করে বিপাশা |
সন্ধ্যে নামার  মুখে পাখির  ঝাঁক  দল বেঁধে ঘরে ফিরছে | আবেশে  মুগ্ধ  বিপাশা ,তার মন প্রাণ আজ সবুজের ছোঁয়া পেয়ে স্নিগ্ধ |

শুভ বললো বিপ্স চলো এবার আমরা ও ফিরি তুমি খুশি তো ? বিপাশা কিছু বলতে পারে না তবে তার মুগ্ধতা  শুভ র চোখ এড়ায় না | শহরের  দিকে ফিরছে ওরা, ভালো লাগা ছুঁয়ে আছে বিপাশা কে |
একটা কথা বলবো বিপাশা ,আজ কিন্তু বাইরে ডিনার  করেই  ফিরবো | বিপাশা আজ আর আপত্তি  করলো না ছেলে নেই বলে |
রাতে বাড়ি ফিরে খুশিতে ঝলমলে বিপাশা ছেলের সাথে স্কাইপে গল্পে  বসলো  , " জানিস বাবু ! আজ না?,"  ছেলে বললো ,"সব জানি মা , আমি বাবাকে বলেছিলাম তোমায় সবুজ দেখাতে, তুমি ভালো থেকো মা , তোমাকে ঘিরেই  যে আমাদের ভালো থাকা , নিজেকে ভালোবাসো মজা করে বাঁচো , প্রানখুলে হাসো,"

বিপাশার মনে আজ শুধুই সবুজের ছোঁয়া , সত্যি কি জীবন এতো সুন্দর !

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...