#স্বপ্নিলের_রূপান্তর_স্বপ্নলীনায়#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
....কোথা থেকে বলছেন?
......হ্যালো হ্যালো হ্যালো
....কে বলছেন?
"ওহ্ চন্দ্রা এতরাতে কে ফোন করেছে? কার সাথে কথা বলছো? রেখে দাও ফোনটা। যত্তসব বদমায়েসের দল। রাতে ফোন করে মানুষকে উত্যক্ত করে। ঘুমিয়ে পড়ো।"
ঘুমোতে পারেনা চন্দ্রা বড় অস্থির লাগে মনটা। ল্যান্ডফোনে ফোন এসেছিলো, মনে হলো যেন এস টি ডি কল। কিন্তু কেটে গেলো কেন। কে ফোন করেছিলো এত রাতে? কুশল? না না কুশল তো অনেকদিন ফোন করেনা। চন্দ্রা বা দিব্যেন্দু ফোন করলেও বৌমা ধরে ফোন, বলে ছেলে এখনো ফেরেনি,বা অফিসে আছে। আই এস ডি কলে বেশিক্ষণ থাকতে পারেনা ওরা। তাই বাধ্য হয়ে ফোন রেখে দিতে হয়। বড় আশা ছিলো চন্দ্রার কুশলকে নিয়ে,হয়ত বেশি পক্ষপাতিত্বও ছিলো।
সেই জন্য এলেবেলে হয়ে মানুষ হয়েছিলো স্বপ্নিল। বড় ছেলের দিকে বেশি নজর দিতে গিয়ে ছোটছেলেটাকে তেমন ভাবে সময়ই দিতে পারেনি চন্দ্রা। আর দিব্যেন্দুতো তেমন ভাবে সংসার দেখার সময়ই পেতোনা। ট্রান্সফারের চাকরি ,মাঝে মাঝেই এদিক ওদিক যেতে হোত।
কুশল আর স্বপ্নিল প্রায় সাতবছরের বড় ছোট। স্বপ্নিল আসার আগেই কুশলের পড়াশোনা শুরু হয়ে গিয়েছিলো। বড়ছেলের পড়াশোনা দেখাতো পুরোটাই চন্দ্রা, তাই পুচকে স্বপ্নিল দাদার কৃতিত্ব দেখতে দেখতে কখন যে মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো বুঝতেই পারেনি চন্দ্রা। প্রথমে খুব অস্বস্তিতে পড়েছিলো চন্দ্রা যখন জানতে পেরেছিলো ও আবার মা হতে চলেছে। একা সংসারে কিভাবে সামলাবে আরেকটা বাচ্ছা! প্রায়দিনই কাজের লোকের কাছে স্বপ্নিলকে রেখে কুশলকে স্কুলে দেওয়া নেওয়া করতো চন্দ্রা।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে আজ বড় মনটা অস্থির লাগে দুই ছেলের জন্য। একজন আমেরিকায় গিয়ে বসে আছে যার কাছে আর এখন কোন অস্তিত্ব নেই মা বাবার। সম্পর্কটা যেন সরু সুতোর ওপর ঝুলে রয়েছে। সেখানেও হয়ত ভাঙন ধরার কারণ স্বপ্নিল।
ছোট থেকে কি ভীষণ দাদার নেওটা ছিলো ছেলেটা। সবার একটু আ্যটেনশন পাওয়ার জন্য পেছন পেছন ঘুরতো ছেলেটা। অথচ দাদার সব সেকেন্ডহ্যান্ড জিনিসেই ও মানুষ। দিব্যেন্দুর তখন সামর্থ্যই বা কত? দাদার পুরনো সাইকেল, দাদার ব্যাটবল, সোয়েটার ,জামা সবই ছিলো ওর। খুশি হয়ে ব্যাবহার করতো। দাদার সমস্ত দুষ্টুমির সাথে হাতও মেলাতো। তবু দাদার মত হতে পারেনি।
কুশলের হীনমন্যতার কারণ ওই ভাই, মাকে এসে অভিযোগ করতো ,"তুমি আমার স্যারদের কাছেই ওকে পড়তে পাঠালে আর কোন যায়গা পেলেনা, আশ্চর্য! এই তো সেদিন দেবাশীষ স্যার বললেন বিশ্বাস করতে পারিনা ও তোর ভাই। পড়াশোনায় একটুও মন নেই কবিতা লিখে বেড়ায়। অদ্ভুত একটা মেয়েলী চালচলন। ন্যাকা ন্যাকা কথা বলে। "
আশ্চর্য লাগতো চন্দ্রার, কেন যে কুশল ভাই কে সহ্য করতে পারতোনা কে জানে? দ্বিতীয় বাচ্ছা এলেও বরাবর কুশলকেই বেশি কেয়ার আর সাপোর্ট দিয়ে গেছে বরাবর।
এটা ঠিক স্বপ্নিল কবিতা লেখে, কল্পনার জগতে থাকে। ছোটবেলা থেকেই চন্দ্রার ড্রেসিং টেবিল আর রান্নাঘর ছিলো ওর খেলার জগত। চন্দ্রারও একটু সখ ছিলো ছেলেকে মেয়ে সাজানোর। পুতুল পুতুল দেখতে ছিলো স্বপ্নিলকে। তাই মাথায় ঝুঁটি বেঁধে দিতো চন্দ্রা। মায়ের কত নেলপালিশ যে নষ্ট করেছে তার ঠিক ছিলোনা।
দিব্যেন্দু বিরক্ত হয়ে বলতো," চন্দ্রা ওকে আর মেয়ে সাজিয়োনা তো। দেখেছো কি রকম পায়ে হাতে নেলপালিশ পরে বসে আছে। পুতুল আর রান্নাবাটি খেলছে। তুমি আর প্রমিলাটা ওর মাথা খাচ্ছো। আমি আর শুনবোনা, ও কালই যাবে ক্রিকেট কোচিং এ ভর্তি হতে।"
কুশল তখন ভালো ক্রিকেট খেলছে, ইউনাইটেড ক্লাবের বয়েজ গ্ৰুপে। ঘেমেনেয়ে যখন ফিরতো কুশল মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখতো চন্দ্রা। কি ভালো তৈরি হয়েছে ছেলেটা যেমন পড়াশোনায় তেমন খেলাধুলোয়।
কিন্তু স্বপ্নিলের ক্রিকেট খেলা হয়নি ওর খাতার পাতায় তখন শুধু ভীড় করতো রামধনু আর প্রজাপতি। নোটবুকে ছোট ছোট কবিতা।
বিরক্ত হতো দিব্যেন্দু, "এই অপদার্থটা কোথা থেকে এলো বলতো। না মাথায় ঢোকে অঙ্ক, না পারে সায়েন্স। কি করবো এটাকে নিয়ে! সত্যি যদি মেয়ে হত তাহলে নাহয় বিয়ে দিয়ে ঝামেলা মিটতো।"
শুধু মুখ ফেরাতে পারতো না চন্দ্রা, সন্তান তো। স্নেহ যে নিম্নগামী, কিছু করার নেই। দিব্যেন্দু কে বোঝাতেন ,"সবাই কি একরকম হয়?ও হোকনা ওর মত, এত ভালো ছেলেটা। একটু আদর পাওয়ার জন্য ঘুরে বেড়ায় অথচ তোমাদের কাছে অবহেলা ছাড়া কিছুই পায়না বেচারা। আমিও যদি মুখ ফিরিয়ে থাকি ও যাবে কোথায়?"
কুশল যখন যাদবপুরে এম.ই পড়তো ঠিক সেই সময় যাদবপুরে ইংরেজী অনার্স নিয়ে ভর্তি হয় স্বপ্নিল। ভীষণ বিরক্ত হয়েছিলো কুশল। কয়েকদিন বাদেই কুশল এসে বলেছিলো," ওকে তোমাদের যাদবপুরেই ভর্তি করতে হলো। সারাদিন মেয়েদের সাথে আড্ডা মারে। যেন মনে হয় ও নিজেই একটা মেয়ে, ফাংশানে মেয়েদের সাজানো শাড়ী পরানো সব ওর কাজ। কে কি পোশাক পরবে সব রঙ বলে দেয় ও। নিজেও মাঝে মাঝে মেয়েদের মত কামিজ আর সব অদ্ভুত উত্তরীয় পরে। অনেকেই ওকে আড়ালে বৃহন্নলা বলে। ছি ছি!"
মনটা ছোট হয়ে যেতো চন্দ্রার কি দোষ করেছে ছেলেটা যে সবার ওকে অপছন্দ। সবার মাথাব্যাথা ওকে নিয়ে। অথচ ওই আসে চন্দ্রাকে রান্নাঘরের কাজে সাহায্য করতে। কখনো বা রুটি বেলে দিয়েছে, কখনো তাড়ার সময় ব্রেকফাস্ট বানিয়ে দিয়েছে। চন্দ্রার কোথাও যাওয়া থাকলে ওর ড্রেস সিলেকসন করে দিতো স্বপ্নিল।
কিন্তু স্বপ্নিলের স্বপ্ন দেখতে দেয়নি কুশল। কুশল পছন্দ করতোনা তাই স্বপ্নিল গুটিয়ে যেতে শুরু করেছিলো একটু একটু করে। ওর একমাত্র আশ্রয় ছিলো মা।
ততদিনে কুশলের জীবনে এসেছে মোনা, বড়লোকের সুন্দরী মেয়ে। কুশল বদলে যাচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি, আজকাল স্বপ্নিলকে নিয়ে ওর যত মাথাব্যাথা। চন্দ্রার খুব খারাপ লেগেছিলো যেদিন শুনেছিলো কুশলের মুখে,"ওকে ভাই বলে পরিচয় দিতে আমার লজ্জা লাগে।" চন্দ্রা চোখের জল ফেলে বলেছিলেন," তুই তোর মত থাক ওকে নিয়ে তোর কোন সমস্যা হবেনা। নাইবা দিলি পরিচয়। কি এসে যায় তাতে, আমি তো আর ওকে ফেলতে পারবোনা।"
যাদবপুরের পড়াশোনা শেষ করে স্বপ্নিল তখন উচ্চশিক্ষার জন্য দিল্লীতে। কুশল তখন আমেরিকায় ছয়মাস বাদেই ওর বিয়ে। চন্দ্রা আর দিব্যেন্দু গিয়েছিলেন স্বপ্নিলের কাছে। হঠাৎই অজ্ঞান হয়ে যায় দিব্যেন্দু একটা মাইল্ড স্ট্রোক। দিনরাত এক করে দিয়েছিলো স্বপ্নিল। আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলো চন্দ্রা যাকে অযোগ্য অকর্মণ্য বলে একসময় বিদ্রূপ করতো দিব্যেন্দু সেই দিনরাত এক করে আজ বাবার পাশে।
এখনো চমকে ওঠে চন্দ্রা সেইদিনটার কথা ভেবে। দিব্যেন্দু তখন সুস্থ ওদের ফেরার ফ্লাইটের টিকিট কাটা হয়ে গেছে। মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে স্বপ্নিল যেন এক নিরাপদ আশ্রয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে আছে। চন্দ্রা হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো ওর এলোমেলো চুলে। হঠাৎই বলে ওঠে," মা তুমি তো সবসময় আমার পাশে ছিলে আচ্ছা আমি যদি হঠাৎ এমন কিছু করতে চাই যা তুমি ভাবতেও পারোনা। তাহলেও থাকবে তো আমার পাশে। "
........চমকে উঠলো চন্দ্রা কি বলতে চায় ছেলেটা!সব সময় অবহেলাই পেয়েছে ছেলেটা হয়েছে অপমানিত নিজের পরিবার পরিজনদের কাছেও। শুধু একটু ভালবাসার যায়গা ওর মা। কুশল যত দূরে চলে গেছে চন্দ্রার তত কাছাকাছি এসেছে স্বপ্নিল। এখন ওকেই একমাত্র অবলম্বন মনে হয় চন্দ্রার।
......"মা আমি নিজেকে রূপান্তর করতে চাই। আমার মনটা তোমার মত একদম একটা মিষ্টি নরম মেয়ে। ছোটবেলায় ছেলে হতে গিয়ে বার বার ব্যর্থ হয়ে যখন ফিরে এসেছি তখন তুমিই আদর করে কাছে টেনে নিয়েছো আমায়। আমার জগৎ ছিলো তোমার সাজগোজের ড্রেসিং টেবিল আর রান্নাঘরটা। ওখানেই জড়িয়ে আছে আমার সব ভালবাসা। আমি মেয়ে হতে চাই।"
থমকে যায় চন্দ্রা সেই মূহুর্তে সারা পৃথিবী অন্ধকার হয়ে যায় চোখের সামনে। কি শুনছে এসব। স্বপ্নিলের মনে যে ইচ্ছে দানা বেঁধেছে তা কি করে সফল করবে ও। সমাজকে কি জবাব দেবে এমনিতেই ছেলেকে নিয়ে তাকে অনেক কথা অপমান সহ্য করতে হয়। কুশল এমনকি দিব্যেন্দুও তাকে ছাড়েনা। এইসবে ভালো হয়েছে দিব্যেন্দু মনটা অনেকটা নরম হয়েছে স্বপ্নিলের প্রতি কি করে ও বলবে?
কেঁদে ফেলে চন্দ্রা,"এও ছিলো আমার কপালে! আর কত কষ্ট দিবি আমাকে! শেষ পর্যন্ত প্রকৃতির বিরুদ্ধে যাবি? ভগবানের যদি তাই ইচ্ছে হত তাহলে তো তোকে মেয়ে করেই পাঠাতো। বিজ্ঞানকে তুই ভগবানের বিরুদ্ধে কাজে লাগাবি। আমি আর ভাবতে পারছিনা।"
........" বিজ্ঞান তো মানুষকে বাঁচাচ্ছে মা। মানুষের জীবন ফিরিয়ে দিচ্ছে । মানুষের জীবনে বিজ্ঞান আশীর্বাদ। আমিও চাই এই আশীর্বাদকে কাজে লাগিয়ে হীনমন্যতা থেকে মুক্ত হতে।"
স্তব্ধ হয়ে যায় চন্দ্রা কি নিষ্ঠুর সমাজ ছেলেটাকে সুস্থ ভাবে পাখা মেলতে দিলোনা! তবে রূপান্তরের পর ওকি সুস্থ জীবন পাবে? ভাবতে পারেনা কিছু, দিব্যেন্দুকে জানায় সবটা। অশান্তি, বকাঝকা, ত্যাজ্যপুত্র করে দেওয়া হবে কোন কিছুই বলতে বাকী রাখেনা দিব্যেন্দু কিন্তু স্বপ্নিল সিদ্ধান্তে অচল থাকে। শুধু বলে ," আমায় আমার মত একটু বাঁচতে দাও বাবা।" ছেলের গায়ে হাত তোলেন দিব্যেন্দু। অসহায় চন্দ্রা বুঝতে পারেননা কার পক্ষ নেবেন।
বড় ছেলের দ্বারস্থ হন দিব্যেন্দু, সেখান থেকে অপমান আর অসম্মান ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়না।কুশল শাসায় কোন সম্পর্ক রাখবেনা এর পর বাড়ীর কারো সাথে। স্বপ্নিলকে ও ভাই বলে মনে করেনা। ওর যা খুশি করুক, এমন ছেলে সমাজের কলঙ্ক।
অশান্তি চরমে ওঠে। চন্দ্রা কাছে টেনে ছেলেকে আদর করে বোঝাতে থাকেন। স্বপ্নিল কেঁদে ফেলে মায়ের কাছে। বলে,"মা ছোটবেলা থেকে তোমাদের সবার মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি। শুধু অপমানিতই হয়েছি। আজ অন্তত আমাকে বাঁচতে দাও আমার মত করে। একবার বলো মা, আমার সাথে আছো তুমি। যাকনা সারা পৃথিবী একদিকে। তুমি একা থাকো আমার পৃথিবী আলো করে। বলোনা মা ।"
উত্তর দিতে পারেনি চন্দ্রা। তবে উত্তর খুঁজতে চেয়ে নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল স্বপ্নিল। পরদিন চন্দ্রা আর দিব্যেন্দুর কলকাতা ফেরা হয়নি। সকালবেলা ঘুম ভাঙছেনা ছেলের দেখে সন্ধেহ হয় চন্দ্রার। অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ একসাথে খেয়েছিল স্বপ্নিল। আ্যম্বুলেন্স, নার্সিং হোম, ডাক্তার এই নিয়ে কয়েকদিন কেটে গিয়েছিল চন্দ্রাদের। রাগ করে দিব্যেন্দু বলেছিলো,"খুচরো পাপ, বিদায় হলেই ভালো হত।"
....."আঁতকে উঠেছিলো চন্দ্রা। দিব্যেন্দুর মুখে চাপা দিয়ে চোখের জল ফেলেছিলো। চোখের জল ফেলেছিলেন দিব্যেন্দুও। শুধু কুশল বলেছিলো,"আর কত নাটক করবে ও।'
নিজের মাথায় হাত রাখিয়ে ছেলের কাছে কথা আদায় করেছিলো চন্দ্রা আর যেন কখনো এমন ভুল না করে। কথা দিয়েছিলো স্বপ্নিল। শুধু বলেছিলো," মা আমার কি পরিণতি ভেবেছো, ছেলেরা আমাকে নিয়ে মজা করে। মেয়েরা আমাকে ছেলে বলেই ভাবেনা। আজ পর্যন্ত আমার জীবনে কেউ আসেনি।"
.....চন্দ্রা স্বান্তনা দিয়ে বলে," তুই ভাবিসনা, তোর চাকরিটা হয়ে গেলেই আমি তোর বিয়ে দিয়ে দেবো।"
.....অসহায় হাসি হাসে স্বপ্নিল। কিছু বলেনা।
প্রায় কেটে গেছে আরো একটা বছর এরপর। এরমাঝে দিল্লীতেই চাকরি পেয়ে গেছে স্বপ্নিল কিন্তু সেখানেও কানাকানি,তির্যক চাহনি।
আজকাল ছোটছেলের জন্যই বড় মনখারাপ করে চন্দ্রার।
ফোনটা আসার পর আরো অস্থির লাগছে। ছেলেটার কোন বিপদ হলোনা তো? মোবাইলটা অন করে দেখে প্রায় দুটো বাজে। একবার কি ফোন করবে স্বপ্নিলকে?
অস্থির হয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে ড্রয়িং রুমে উঠে আসে চন্দ্রা। এখান থেকেই ফোন করা ভালো, নাহলে দিব্যেন্দুর ঘুম ভেঙে যাবে। চন্দ্রা ফোনের বোতামে হাত দেবার আগেই বেজে ওঠে মোবাইলটা। কি আশ্চর্য টেলিপ্যাথি,স্বপ্নিলের ফোন। ছেলেটা এখনো ঘুমোয়নি!
ফোনটা ধরে চন্দ্রা চাপা স্বরে কথা বলতে থাকে," ঘুমোসনি এখনো , কিরে? ঘন্টাখানেক আগে কি তুই ফোন করেছিলি ল্যান্ডফোনে? চুপ করে আছিস কেন? কিছু বল, আমার বড় অস্থির লাগছে। কি হয়েছে?"
......." মা তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে গো। আজই হয়ত আমার স্বপ্নিল জীবনের শেষ রাত, কাল থেকে আমার স্বপ্নলীনা হবার যাত্রা শুরু। আমার এই রূপান্তরের জীবনে শুধু তোমাকেই চাই মা।"
....নির্বাক আর অবাক হয়ে যায় চন্দ্রা কি বলবে সে। সমর্থন করবে তার অসহায় আত্মজকে না প্রত্যাখান করবে। কি করা উচিত তার?
....." মা কিছু বলো, আমি একটা খড়কুটোর মত ভাসছি। তুমি কি আমাকে একটু যায়গা দেবেনা? আমার অপারেশনটা কাল হবে। আজ খুব একা লাগছে। মনের মাঝে হাজার প্রশ্ন। স্বপ্নিল পায়নি তার স্বপ্নের পৃথিবী, স্বপ্নলীনা পাবে তো?"
চন্দ্রার দুচোখে জল গড়িয়ে পড়ে, ঠিক করেন একা গিয়ে যদি দাঁড়াতে হয় তবুও থাকবেন ছেলেটার পাশে। থাকুক বেঁচে ছেলেটা, কি বা যায় আসে যদি স্বপ্নিল হয় স্বপ্নলীনা। তবুও তো পৃথিবীর আলোতে পাখনা মেলবে ওর স্বপ্ন আর ইচ্ছেগুলো। বেঁচে থাক, ভালো থাক ছেলেটা। মায়ের হাতটা বাড়িয়ে দেবেন তিনি।
ফোনের অপরপ্রান্তে উত্তরের অপেক্ষায় অস্থির ছেলেকে শান্ত করলেন এই বলে আমি আসছিরে তোর কাছে। তুই ভাবিসনা। হয়তবা অনেক লড়াই করেই যাবো,তবুও যাবো। একটু শান্তিতে ঘুমো আজ।
শান্ত হয়ে ঘুমোয় স্বপ্নিল মায়ের মুখটা মনে করে।
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment