#পাগলী_তোর_জন্য#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
ফর্সা,সুন্দরী,উচ্চশিক্ষিতা কায়স্থ পাত্রী চাই....
পাত্রী চাই কলমে চোখ রাখে কুন্তলা, একের পর এক আ্যড দেখতে থাকে। উফফ্ কিছুই বাদ নেই রে বাবা। সব চাই,সুন্দরী হতে হবে,লম্বা হতে হবে আবার বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে হতে হবে,উচ্চশিক্ষিতা হতে হবে চাহিদার আর শেষ নেই। কি যে চায় এরা কে জানে?
না না কুন্তলা নিজের জন্য পাত্র দেখছে না। ও বিয়ের বয়স পার করে এসেছে কবেই। তবুও এক যায়গায় এসে চোখটা আটকে যায় কুন্তলার।
....... রুচিশীলা শিক্ষিতা পাত্রী চাই, পাত্রের বয়স ৫১ কলেজের প্রফেসর। পাত্রী উইডো বা ডিভোর্সি হলেও আপত্তি নেই। হাসি পেয়ে যায় কুন্তলার লোকের শখও মন্দ নয়। এতদিন কি করছিলি বাপু?এই বয়সে বিয়ের সাধ জাগলো! দিনে দিনে যে কত কি হবে।
অনন্যা টা আজও অফিসে গেছে,আইটি সেক্টরের চাকরি অনেক সময়েই সিফ্টিং ডিউটি থাকে। নাহলে বেশ মজা হত মাসি বোনঝি মিলে, বেশ অনেকগুলো এমন আ্যড চোখে পড়লো কুন্তলার। একজন আবার রিটায়ারমেন্টের পর বিয়ে করতে চান,পাত্রী চাইছেন।
কিছু করার নেই অবশ্য ,যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে,মানুষ এখন বড় একা তাই হয়ত একটা বয়সে এসে মনে হয় সঙ্গীর কথা।
বাঁচার জন্য জীবনে একটা অবলম্বন খুঁজতে হয়ত মন চায়। হয়ত স্বাদ নিতেও ইচ্ছা করে বিবাহিত জীবনের। একসময় খুব শুনতো কুন্তলা,বিয়ে হলো দিল্লীকা লাড্ডু যো খায়া ও পস্তায়া যো নেহি খায়া ও ভি পস্তায়া। ওই জন্য আগের দিনে অনেকেই দিল্লী বেড়াতে গিয়ে লাড্ডুর খোঁজ করতো। আপন মনেই হেসে ফেলে কুন্তলা। কত বকুনি খেয়েছে একসময় বাবার কাছে ওর এই অকারণ হাসির জন্য। অথচ ওর হাসির ফিদা ছিলো একজন ভাবলেই মনটা চলে যায় প্রায় তিরিশ বছর আগে। কুন্তলার এখন প্রায় পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই,একটা প্রাইভেট স্কুলে পড়ায়। চাকরী না করলেও চলে যায় ওর তবুও নিজেকে ব্যাস্ত রাখার জন্য স্কুলটা করে,অর্থের চেয়েও বেশি ভালবাসা জড়িয়ে আছে ওর পেশার সাথে।
সত্যি কি ভালো ছিলো কলেজের দিনগুলো! কোন চিন্তা ভাবনা নেই,সারাক্ষণ হাসি মজা আর আড্ডা। তখন তো অত কম্পিটিশন ছিলোনা, পড়ার জন্যই পড়া। তারপর যা হয় হবে। ওদের নবীনবরণের দিনটা এখনো মনে পড়ে যায় কুন্তলার। ইশ্ কি যে ভাবছে বসে নিজের ওপর নিজেরই বিরক্ত লাগে। পাত্রপাত্রীর কলম দেখতে গিয়ে উল্টোপাল্টা চিন্তা।
যাক অনেকগুলো সম্বন্ধ পাওয়া গেলো। অনন্যার পছন্দ হলে হয়। মেয়েটাকে বিয়ে দেওয়াটাও ওর একটা দায়। দিদি জামাইবাবু পর পর হঠাৎ চলে যাওয়ার পর এখন কুন্তলাই অনন্যার গার্জেন। বাবা মারা যাবার পর এই দিদিই আগলে রেখেছিলো ওকে একসময়। অনন্যাকে ছোট থেকে সন্তানস্নেহে বড় করেছে কুন্তলা। ওদের সম্পর্কটা বন্ধুর মতো। এখন দুুজনে দুজনের অবলম্বন।
সবগুলো আন্ডারলাইন করে রাখলো কুন্তলা মার্কার দিয়ে। দেখা যাক পাগলী টা কি বলে।
রাতে মাসি বোনঝির বেশ আড্ডা জমে খাওয়ার টেবিলে। খেতে খেতে কুন্তলা বললো,"অনু খেয়ে উঠে একটু আনন্দবাজারটা দেখবি? তোর পছন্দ হলে আমি ফোন করবো। তোর বিয়েটা দিলে আমি বাঁচি।"
.......হাসতে হাসতে অনন্যা বলে ,"আচ্ছা মিমি আমি বিয়ে করে চলে গেলে তোমায় কে দেখবে শুনি? এখন তো আমিই তোমার গার্জেন। এখনও তোমায় যা ফাটাফাটি দেখতে আমি একদম ভরসা পাবোনা তোমায় ফেলে যেতে। আগে তোমার একটা ব্যবস্থা করি তারপর। মিমি আমাকে হয়ত নেক্সট ইয়ার বোস্টন যেতে হবে।"
...........লাফিয়ে ওঠে কুন্তলা,"ওমা তাই নাকি তাহলে তো আমাকে এরমধ্যেই তোড়জোড় করতে হবে তোর নতুন গার্জেন জোগাড়ের।
....."দেখাও দেখি তোমার চয়েস। আমি কিন্তু বেশ এনজয় করি গো তোমার এই ঘটকালিটা।"
....."এই দেখ এগুলো আন্ডারলাইন করেছি, মনেহয় তোর পছন্দ হবে।"
যথারীতি অনন্যারও চোখে পড়ে আ্যডগুলো, তার সাাথে এটাও চোখে পড়ে ৫৫ বছরের প্রফেসর পাত্রী চাইছেন। রিটায়ারমেন্টের পর বিয়ে করতে চাইছেন একজন।
...….মিমি ওহ্ মেঘ না চাইতেই জল , তোমার সিলেকশন বেশ ভালো। কিন্তু এসব কি শুনি?৫১র পাত্রটি কার জন্য শুনি? এটাতেও দেখছি আন্ডারলাইন করা।"
......"সেকি!ঝুঁকে দেখে কুন্তলা ভুল করে সে আন্ডারলাইন করেছে। "নারে ভুল করে দাগ দিয়ে ফেলেছি রে। তুইও পারিস!পাকা মেয়ে একটা।"
....হুঁ আমি কিন্তু বিশ্বাস করছিনা, এবার আমাকে ঘটকালি করতে হবে দেখছি।"
অনন্যার পছন্দমত পাত্রগুলোকে মেল করিয়ে দেয় কুন্তলা অনুকে দিয়ে। যথাসময়ে রিপ্লাই আসে। একজনের বায়োডেটা দেখে পছন্দ হয় অনন্যার,"ও মিমি এই ছেলেটা মানে অভিমন্যু সেন আমাদের স্কুলেরই,খুব ব্রিলিয়ান্ট আমাদের থেকে দুবছরের সিনিয়র ছিলো, অনেকেরই ক্রাশ ছিলো ওর ওপর। কিন্তু কি যে মুখচোরা! কাকুর সঙ্গে মাথা নীচু করে আসতো যেতো। এখন তো বেশ হ্যান্ডসাম হয়েছে দেখছি। ইউ এস এ আছে এখন। সত্যি পৃথিবীটা গোল।"
......."কি রে তোরও ক্রাশ ছিলো নাকি ওর ওপর। আমার তো কেমন যেন মনে হচ্ছে। তাহলে এখানেই এগোই কি বল।"
....."মিমি সত্যি তোমার সেন্স অফ হিউমার এখনো দারুণ আর তেমনি মিষ্টি তোমার ওই হাসিটা। তোমার কার ওপর ক্রাশ ছিলো শুনি?যার জন্য তোমার আর ছাঁদনাতলায় যাওয়াই হলোনা। মা আর দাদু তো তোমার ওপর খুব বিরক্ত ছিলেন ওই জন্য। এবার তোমার লোকাল গার্জেনকে বলো তো দেখি? মায়ের কাছে শুনেছি তোমার খুব জেদ।
....."এইই মেয়ে এতো কৌতূহল ভালোনা।"
......"ও মিমি বলোনা গো , বলোনা।"
....."আচ্ছা সেসব হবে। তাহলে আমি এগোই, মানে তুই যদি বলিস।"
রিপ্লাই এলো মেলের ওদেরও ভালো লেগেছে অনন্যার বায়োডেটা। কুন্তলা ফোন করে ওদের বাড়ীতে। ফোনটা ধরেন অভিমন্যুর মা। অভিমন্যুর বাবা মারা গেছেন ছোটবেলায়। কথা হয় সামনে মাসে অভিমন্যু এলে তখন ওরা দেখার ব্যাপারটা করবেন।
এদিকে অনন্যা ভেতর ভেতর এক কান্ড করেছে। ও মিমির বায়োডেটা মেল করে ৫৫ বছরের প্রফেসরের ইমেল আইডি তে পাঠিয়ে দিয়েছে। অদ্ভুতভাবে ওখান থেকেও পজেটিভ উত্তর আসে। মিমির সাথে ভদ্রলোক দেখা করতে চান তবে নেক্সট মান্থে।
কুন্তলার ইমেইল আইডি থেকে মেল করা হয় অনন্যার জন্য। আর অনন্যার মেল আইডি থেকে ও মিমির জন্য এগোয়। ভয়ও হয় একটু ,কে জানে মিমিটা যা জেদী। যাক দেখা যাক কপাল ঠুকে এভাবে কতদিন কাটাবে একা একা। খুব বেঁকে বসলে নাহয় দেখা যাবে। বেশ এক্সাইটেড লাগে অনন্যার।
ভদ্রলোক বেশ মজার তো!প্রত্যেকদিন খুব সুন্দর একটা করে কবিতা পাঠান। মনে হয় যেন অনন্যার জন্যই লেখা। এই বয়সেও এতো রোমান্টিক!ভাবা যায় না। এমন রোমান্টিক মানুষের জীবনে এতদিন বসন্তের ছোঁয়া আসেনি। উফফফ দুর্দান্ত পাগল করা প্রেমের কবিতা, অনন্যাই তো পড়ে গেছে ওনার কবিতার প্রেমে। ইশ্ যদি বয়সটা আরো কুড়িবছর কম হত ভদ্রলোকের!
অনন্যার মাথায় একটা প্ল্যান আসে,"মিমিটা তো কবিতা পাগল ,এই কবিতাগুলো মিমিকে শোনালে কেমন হয়? যদি মোল্ড হয়ে যায় তাহলে তো কোন চিন্তায় নেই। ব্যাপারটা সহজ হবে।
আজকাল অফিস থেকে এসে অনন্যা বসে পড়ে মেলবক্স খুলে। একের পর এক কবিতা আসে। সত্যি একদম প্রেমে ভেজানো আবেগ। কি অপরূপ সৃষ্টি ভদ্রলোকের! ইশ্ এগুলো কি অফিসে দেখা যায়। ইচ্ছে করেই মিমির সামনে একটু বেশি ব্যাস্ত থাকে।
......."কি ব্যাপার অনু, প্রেম ট্রেম করছিস নাকি,সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে থাকিস। আমি কিন্তু অনেকটাই এগিয়ে গেছি। অভিমন্যুর মায়ের সাথে কালও কথা হলো।
....."ওহ্ মিমি আমি কবিতার প্রেমে পড়েছি গো আমার এক ফেসবুকের ফ্রেন্ড যে কি অপূর্ব রোমান্টিক কবিতা পাঠায় গো কি বলবো!"
কবিতার কথা শুনে এখনও হৃদয়ে একটু রক্তক্ষরণ হয়ে যায় কুন্তলার।
......"শুনবে নাকি মিমি,ইশ্! ভদ্রলোক বয়স্ক এটাই ব্যাড লাক। নাহলে তোমার ওই অভিমন্যুকে পাত্তাই দিতাম না।"
অনু কবিতা পড়তে থাকে চমকে ওঠে কুন্তলা। এই কবিতাগুলো কার লেখা! ওর অনেকদিনের চেনা কবিতাগুলো। একসময় হৃদয়ের তন্ত্রে তন্ত্রে ঝড় উঠতো এই কবিতাগুলো শুনে। প্রথমদিন কলেজের নবীন বরণ উৎসবে শুনেই ঝড় উঠেছিলো ওর মনে। শীর্ষেন্দু সেন, টল,ডার্ক এন্ড হ্যান্ডসাম চোখে চশমা। ইংরেজী অনার্স কিন্তু পি.এইচ.ডি বাংলা কবিতায়। উদাত্ত গলায় নবীন বরণের দিন যখন আবৃত্তি করেছিলো সমস্ত অডিয়েন্স মুগ্ধ হয়ে শুনেছিলো। লাভ এট ফার্সট সাইট হয়ে গেছিলো কুন্তলার।
আনমনা হয়ে যায় কুন্তলা,মুখে দেখা যায় এক বসন্ত রাঙানো মুগ্ধতা। অনন্যার চোখ পড়ে যায় মিমির দিকে। বুঝতে পারে ও প্রথম চালেই কিস্তিমাত করেছে।
....."কি মিমি কেমন লাগলো?"
...... মন ছুঁয়ে গেলোরে,মনে হলো অনেকদিনবাদে এমন মনকেমন করা কবিতা শুনলাম।
এখন আর অনন্যাকে বলতে হয়না,কুন্তলাই বসে থাকে কবিতা শোনার জন্য,"অনু আজ কোন কবিতা পাঠিয়েছেন রে। একটু শোনা না"
ইচ্ছে করেই অনেকদিন বলে আজ কিছু পাঠায়নি গো। কুন্তলার নিভে যাওয়া মুখটা দেখে মজা করে বলে,"ও মিমি তুমি কি ঐ ভদ্রলোকের প্রেমে পড়লে নাকি গো, দেখবো যোগাযোগ করে আনম্যারেড কিনা?আসলে ওনার প্রোফাইলে কোন ছবি নেই শুধুই কবিতা। তাই বোঝা যায়না কিছুই।" যদিও কথাগুলো পুরোটাই অনন্যার নিজের বানানো।
শীর্ষেন্দু সেনের কবিতার প্রেমে পাগল হয়েছিলো কুন্তলা। অদ্ভুত সব কবিতা লিখতো," স্বপ্ন মোড়ানো থাক তোর কাজল জড়ানো চোখের পাতায়....ঝড় তুলতো মনে। আর সেবারের কলেজ সোশ্যালে শীর্ষেন্দুর মন কেড়েছিলো কুন্তলার ...."কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি"...
কবি আর কবিতা মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিলো। কফিহাউসের কফির কাপের ধোঁয়ার সাথে মিলে গেছিলো শীর্ষেন্দুর প্রেম আর প্রেমের কবিতা।
আজও হাজার কাজের মাঝে কুন্তলার মনে পড়ে জয় গোস্বামীর "প্রাক্তন" কবিতার লাইনগুলো।
.........'সেই শার্টটা পরে এখনও
ক্যাটকেটে সেই নীল রঙটা
নিজের তো ওইসব পছন্দ
আমি অলিভ দিয়েছিলাম।'........
আজ আবার কবিতা শোনায় অনু,মনটা ভরে যায় কুন্তলার। ওর মিলিটারি কর্ণেল বাবা কিছুতেই মেনে নেননি ওদের সম্পর্ক অপমান করেছিলেন শীর্ষেন্দুকে। বলেছিলেন চালচুলোহীন বখাটে ছেলে একটা ,সারাদিন কবিতা লিখে বেড়ায়। কি ফিউচার ওর? কুন্তলাকে নিয়ে চলে গিয়েছিলেন দেরাদুনে। ছোটবেলায় মা হারানো কুন্তলার জীবনে বাবার প্রভাব এতই বেশি ছিলো ওর সাহস হয়নি বিরোধিতা করার।
তখনকার দিনে বাবা মায়ের মন রাখতে কত ভালবাসাই যে গেছে অগাধ জলে। কান্নায় কষ্টে ভেঙে পড়েছিলো কুন্তলা। শীর্ষেন্দু এই বলে বুঝিয়েছিলো সত্যিই তো ও চালচুলোহীন। তেমন কোন আয় নেই অথচ অনেক দায়িত্ব। এখনও কোন ভালো চাকরী পায়নি।
বাবা বিয়ে ঠিক করেছিলেন ওর এয়ারফোর্সের অফিসারের সাথে। শেষদিন শীর্ষেন্দু শুনিয়েছিলো,
'ঘরেতে এলোনা সে তো, মনে তার নিত্য আসা যাওয়া
পরনে ঢাকাই শাড়ী কপালে সিঁদুর।'
তবে সে বিয়ে হয়নি কুন্তলার এয়ার ক্র্যাশে ছেলেটি মারা যায় বিয়ের ছয়মাস আগে। তারপর আর কেউ রাজী করাতে পারেনি কুন্তলাকে।
অনন্যা চিন্তায় পড়েছে ,মেল এসেছে ভদ্রলোক কাল দেখা করতে চান মিমির সাথে কিন্তু ও মিমিকে কি করে বলবে? বাধ্য হয়ে ঠিক করে আগে ও একাই যাবে ওর যদি ভালোলাগে তাহলে মিমিকে ম্যানেজ করবে।
আরেকটু হলেই বোধহয় চেয়ার থেকেই পড়তো অনন্যা, এ কাকে দেখছে! ছেলেটিও মহা ঘাবড়ে গেছে। দুজনের কথা হারিয়ে গেছে। এসব কি? ৫১ বছরের ভদ্রলোকের যায়গায় কাকে দেখছে! এতো টল ডার্ক হ্যান্ডসাম অভিমন্যু সেন। অন্যদিকে অভিমন্যুরও এক অবস্থা। তাহলে ব্যাপারটা কি....
অভিমন্যুর মা আর ও প্ল্যান করে একসাথে আ্যড দিয়েছিলো কাকা ভাইপো দুজনের বিয়ের আ্যড পাত্রী চাই কলমে। ওর মায়ের খুব ইচ্ছে চালচুলোহীন দেওর টার জীবনটা যদি গুছিয়ে দেওয়ার। কাকা কিছুই জানেনা। ওই পুরনো কবিতার খাতা থেকে ওই কবিতাগুলো পাঠাতো। দুজনেই হেসে ফেলে, যাক ভালোই হলো। অনন্যার মিমি তো মোটামুটি কবিতা শুনে বোল্ড আউট এখন কবিকে পছন্দ হলেই হয়। তবে অভি বেশ ভয় পায় কাকার কথা ভেবে।
যদিও এই সুযোগে অভিমন্যু আর অনন্যার আলাপ ,দেখা আর ভালোলাগা সবটাই হয়ে যায়। তবে ব্যাপারটা এখন সিক্রেটই রাখে ওরা।
অভির মা আগেই জানিয়েছিলেন এই সপ্তাহেই ছেলে আসবে, ওকে নিয়ে ওনারা আসবেন ওদের বাড়ীতে একটু আলাপ পরিচয়ের জন্য। বা অন্য কোথাও দেখা হতে পারে কুন্তলা যেন অনন্যার সাথে কথা বলে নেয়।
অভির সাথে এরমধ্যেই অনন্যার কথা হয়ে যায়। অনন্যা জানে মিমির খুব নষ্টালজিয়া আছে কফি হাউস নিয়ে। আর অভির কাকুরও নাকি প্রিয় যায়গা কফিহাঊস।
অভিমন্যুর মা ফোন করে জানান ওরা কফি হাউসের দোতলায় বসবেন সেখানেই আসতে ওদের। একটু আপত্তি করছিলো কুন্তলা,আশ্চর্য ও লাগছিলো। এ কেমন ছেলেরে বাবা, আজকালকার ছেলে বিদেশে থাকে, শেষ পর্যন্ত কফি হাউসে!
কফি হাউসে আর যেতে ভালো লাগেনা কুন্তলার কিন্তু কিছু করার নেই। অনন্যা আর কুন্তলা আগেই পৌঁছে গেছে। অনুকে হাজার বলেও শাড়ী পরানো গেলোনা। কুন্তলার পরনে আজ নীল ঢাকাই, অনু সাজিয়েছে মিমিকে। কুন্তলা বলে, "আরে কনে দেখাটা কার, আশ্চর্য তো,ওরে ছাড়।"
অভিমন্যুরা তখনও পৌঁছয়নি। অনন্যা দুটো কোল্ড কফি উইথ আইসক্রীম অর্ডার দিলো। স্মৃতির অতলে ডুবে যায় কুন্তলা।....."কি ভাবছো মিমি?" উত্তর দিতে পারেনা কুন্তলা,সত্যি তো কত এলোমেলো কথা আর কবিতা।
হঠাৎ মনে হয় ওকি স্বপ্ন দেখছে। নাকি আবার তিরিশ বছর আগে চলে গেছে!
ওদের সামনে দাঁড়িয়ে অভিমন্যু ওর মা আর কাকু। আলাপ করিয়ে দেন অভিমন্যুর মা,"আমার দেওর শীর্ষেন্দু।
অলিভ শার্টে এখনো শীর্ষেন্দু অনন্য। দুজনের ঘোর যেন কাটেনা। এও কি করে সম্ভব! শীর্ষেন্দু নিতে পারেনা এই চমকটা," এক্সকিউজ মি ,আমি একটু আসছি।"বলে বাইরে বেড়িয়ে আসে।
এতবছর বাদে কুন্তলার সামনে, যার জন্য আর কোনদিন কবিতা লেখেনি আর। কিন্তু ওর তো বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো। কেমন যেন অস্থির লাগে শীর্ষেন্দুর। অনন্যা আর অভি পাশের টেবিলে গিয়ে বসে।
অস্থিরমন নিয়ে কুন্তলা গল্প করে অভির মায়ের সাথে।অভিমন্যু মাকে ওর পুরো প্ল্যানটাই বলেছিলো। জানতে পারে দেওর বিয়ে করেনি তবে উনি চাইছেন ওর দেখাশোনার জন্য কেউ আসুক। কুন্তলাকেও ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করেন অনন্যা ইউ.এস.এ চলে গেলে ও তো একা হয়ে যাবে। শীর্ষেন্দুর বৌদি জানতেন ওর জীবনে কেউ একজন ছিলো। কিন্তু সেই যে কুন্তলা তা কারো জানা ছিলোনা।
অনন্যা আর অভির বিয়ের ডেটটা ফাইনাল হয়ে গেলো।অনন্যা আর অভিমন্যুুর খুব একটা চেষ্টা করতে হয়নি কাকু আর মাসিকে রাজী করতে। কিন্তু এবার কুন্তলার হোয়াটস আ্যপ নম্বরে আননোন নাম্বার থেকে কবিতা আসতে শুরু করলো রোজ। শীর্ষেন্দু আবার কবিতা লিখছে তবে এবার ব্লগারে।
অনেক বছর বাদে আবার কফি হাউসের গরম ধোঁয়ায় মিশে গেল উষ্ণতা মেশানো শীর্ষেন্দুর গলায় জয় গোস্বামীর কবিতা.......'পাগলী তোমার সঙ্গে'
"পাগলী, তোমার সঙ্গে ভয়াবহ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোবালি কাটাব জীবন
এর চোখে ধাঁধা করব, ওর জল করে দেব কাদা
পাগলী, তোমার সঙ্গে ঢেউ খেলতে যাব দু’কদম।
অশান্তি চরমে তুলব, কাকচিল বসবে না বাড়িতে
তুমি ছুঁড়বে থালা বাটি, আমি ভাঙব কাঁচের বাসন
পাগলী, তোমার সঙ্গে বঙ্গভঙ্গ জীবন কাটাব
পাগলী, তোমার সঙ্গে ৪২ কাটাব জীবন।......
ভালো থাক ওরা জীবনের গোধূলির বসন্তের রঙে। কবিতা আর কবি নতুন করে বাঁচুক ভালবাসার কাজল চোখে মেখে।
Comments
Post a Comment