#অন্ধবিশ্বাস#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
"মা আমি কিন্তু যাবোই, এবার আর না কোরনা। "
" তোকে তো বললাম বাবা নিষেধ করছে,একটা কথাও কি শুনবিনা! কেন এমন নাছোড়বান্দা হয়ে উঠেছিস?'
...."আর কতদিন আমাকে আঁচলের তলায় রাখবে শুনি? এবার তো ছাড়ো।"
কদিন ধরেই ছেলের জেদের সাথে তাল মেলাতে প্রায় হিমসিম খাচ্ছে রাখী। ইঞ্জিনিয়ারিং ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষার পর বন্ধুদের সাথে বেড়াতে যাবার জন্য কদিন ধরে জ্বালাচ্ছে ছেলেটা।
আজকাল যা দিনকাল পরেছে প্রায় তো শোনা যায় এখানে ওখানে গন্ডগোল। তাই ছেলেকে ছাড়তে মন চায়না ওদের। সবসময় ছেলেকে সাথে নিয়েই ওরা বেড়িয়েছে।
রাতে আবার খাবার টেবিলে কথা ওঠে। আজকালকার ছেলেমেয়েদের সাথে সত্যিই পেরে ওঠা মুশকিল। শ্রীজিতও বোঝায় ছেলেকে,"দেখছিস তো বাবা আজকাল কমবয়সী ছেলেরা বন্ধুদের পাল্লায় পরে ড্রিংক করে কখনো জলে তলিয়ে যাচ্ছে, কখনো বা গাড়ী আ্যক্সিডেন্ট করছে। খুব চিন্তা হয় রে।"
অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে প্রীতম, বিরক্ত হয়ে যায় একঘেঁয়ে কথা শুনতে শুনতে।চিৎকার করে ওঠে,"এককথা বারবার বোলোনা তো একটুও ভালো লাগেনা। লোকে রাজ্য ঘুরে বেড়াচ্ছে আর আমাকে নিয়েই তোমাদের যত সমস্যা। আর কোন কথা শুনবোনা, অনেক হয়েছে। আমি এবার যাবোই।"
চুপ করে যায় রাখী আর শ্রীজিত,কেমন যেন অচেনা লাগে আজকাল ছেলেটাকে। অদ্ভুত ভাবে পাল্টে যাচ্ছে,কখনো চিৎকার করে কথা বলে। কখনো বা মুখে মুখে তর্ক করছে। বেশিরভাগ সময়ই ওদের হার মানতে হয় ছেলের মুখের কাছে।
অথচ কি বাধ্য আর ভালো ছিলো এই ছেলে একসময়। মা বাবা ছাড়া আর কিছুই বুঝতোনা। মা ছিলো ওর একমাত্র জগৎ। রাখীর একটু শরীর খারাপ হলে অস্থির হয়ে উঠতো ছেলে। এখন সারাদিনে মায়ের সাথে দুটো কথা বলারও যেন সময় পায়না। কাছে এসে বসা তো দূরের কথা,খুব প্রয়োজন না হলে মা ডাকটাও শোনা হয়না রাখীর।সারাক্ষণ ছেলের মোবাইলে চোখ, আর কানে কর্ড গোঁজা। কি দেখছে,কি শুনছে কে জানে। বললে কিছুই শোনেনা,ছেলের চ্যাঁচামেচিকে আজকাল ভয় পায় রাখী। ফ্ল্যাটবাড়ীতে থাকে ওরা,লোকে শুনলে কিই বা ভাববে। কেমন যেন অসামাজিক হয়ে যাচ্ছে এখনকার ছেলেমেয়েগুলো।
কখন যে রাতে ঘুমোতে যায়,কখন সকালে ওঠে তার কোন হিসেব নেই। জেগে থাকতে থাকতে রাখীর ক্লান্ত চোখদুটো বুজে আসে একসময়। রাত্রি দুটো আড়াইটের সময় উঠেও দেখে অনেকসময় তখনও ছেলের ফোনে গল্প চলছে। কখনও বা ভোর রাতেও দেখে ছেলের ঘরে আলো জ্বলছে, বন্ধ দরজার ভেতর দিয়ে নাকে আসে সিগারেটের গন্ধ। অনেক কম বয়স থেকে সিগারেট খাচ্ছে ছেলেটা, ক্লাস ইলেভেনে প্রথম ধরে ফেলেছিলো রাখী। অনেক অশান্তিও করেছিলো কিন্তু কিছু করতে পারেনি, না বকে, না বুঝিয়ে।
মাঝে মাঝে খুব ডিপ্রেসড লাগে আজকাল রাখীর,খুব তাড়াতাড়ি যেন ছেলেটা বদলে গিয়ে পর হয়ে গেলো। নিজেকেই আজকাল দোষী মনে হয় রাখীর, হয়ত ওর ভালবাসায় কোন গলদ ছিলো? ছেলেকে কি একটু বেশি শাসন করে ফেলেছে ছোটবেলায় তাই এখন এত একরোখা হয়ে গেছে।
এখনকার প্রজন্ম কি এমন ভাবেই পাল্টে যাচ্ছে নাকি ওদের ছেলেই এমন বড্ড জানতে ইচ্ছে করে রাখীর। শ্রীজিতকে বেশি কিছু বললে বলে তুমি বেশি চিন্তা করো ছেলে তো বড় হচ্ছে এখন তো পাল্টাবেই।
অনেক ঝামেলা করেও ছেলেকে আটকাতে পারলোনা রাখী। "আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে কাছাকাছি থেকে ঘুরে আসবো চিন্তা কোরনা, সঙ্গে দুজন বন্ধুও যাবে। তবুও এবার বেরোবো, এর আগেও তো গেছি মা এবার এত আপত্তি করছো কেন?"
রাখী একটু নিশ্চিন্ত হয় যাক কাছাকাছিই তো যাবে, ঘুরে আসুক। "ফোননম্বর গুলো ঠিকমত দিয়ে যাস বাবা, বুঝিস তো চিন্তায় থাকি।"
প্রীতম বেড়িয়ে যায়, স্টেশনে যেতে দেয়না মা বাবাকে। "দরকার নেই এতরাতে বেরোবার, ফিরতে সমস্যা হবে। বন্ধুরা তো আছেই, বাড়ী থেকে উবার ধরে বেড়িয়ে যাবো। কি সমস্যা আছে এতো বলতো? আমি পৌঁছেই ফোন করে দেবো।"
ছেলে বেড়িয়ে ঘন ঘন ফোন করতে থাকে। মোটামুটি কারেন্ট আপডেট দিয়ে যাচ্ছে ছেলে, নিশ্চিন্ত হয় ওরা। যাক ছেলের সুমতি হয়েছে। শ্রীজিত বলে,"দেখেছো বাইরে গিয়ে আমাদের কেমন মিস্ করছে বার বার ফোন করছে। যাক এইরকম থাকলেই হয়। নাহলে তুমিও টেনশন করবে আর আমাকেও জ্বালাবে।"
পরেরদিন অফিস থেকে ফিরে ল্যাপটপটা খোলে শ্রীজিত। রাখী রান্নাঘরে ব্যাস্ত পরেরদিনের কিছু কাজ সেরে রাখছে। ল্যাপটপটা খুলে বিরক্ত হয় শ্রীজিত , "কি যে করে ছেলেটা! কোন জিনিসেরই যত্ন নেয়না। এত রাফ হ্যান্ডলিং করলে আর কদিন যাবে এত দামী জিনিসটা। নিজের মেলবক্সটাও খুলে গেছে, যাচ্ছেতাই একটা।"
হঠাৎই চোখ আটকে যায় একটা মেলে লগ আউট করতে গিয়ে। মনটা খুব ভারী হয়ে যায় কিছুই যেন ভালো লাগেনা। রাখী এসে একবার উঁকি দিয়ে যায়, কিছু খাবে কিনা জানতে চায়।
একটু বিরক্ত হয় শ্রীজিত, " না না কিছু খাবোনা। আমি একটু কাজ করছি এখন বিরক্ত কোরোনা প্লিজ। আর শোনো তোমার গুণধর পুত্র ফোন করেছিলো?"
......"এ ভাবে বোলনা, ছেলেটা বাড়ীর বাইরে তবুও বার বার করে ফোন করছে। বাড়ীতে থাকলে বরং কথা বলেনা।"
কিছু বলেনা শ্রীজিত চুপ করে যায়, ওর চোখ তখন ল্যাপটপের স্ক্রীনে। একটু যেন চিন্তিত মনে হয় দেখে। রাখী আর বিরক্ত করেনা, পাশের ঘরে বসে হাতে ফোন নিয়ে সিরিয়ালে মন দেয়।
প্রীতমের খুব ফুরফুরে লাগে মেজাজটা ওহ্ কতদিন ধরে প্ল্যানটা করছে কিন্তু কিছুতেই মা বাবাকে বোঝানো যাচ্ছিলো না। উফ্ এতদিনে সফল হলো পুরোপুরি। আদর করে জড়িয়ে ধরে পায়েলকে। বছর দুয়েক ওরা রিলেশনে আছে, মা বাবা কিছুটা জানে ব্যাপারটা তবে পুরোটা না। অনেক ছল চাতুরী করে দুজনেই বেড়িয়েছে এবার দিন পাঁচেক একসাথে থেকে ফিরে যাবে। খুব এক্সাইটেড লাগছে,মাকে বোকা বানানোর জন্য একটা এক্সট্রা সিমকার্ড নিয়ে নাম্বারটাও দিয়ে এসেছে। বলে এসেছে ওটা বন্ধুর নম্বর, মা ফোন করলে ওই ধরবে ফোনটা। সবসময় তো ফোনে যোগাযোগ রাখছে সেইজন্য।
পায়েল রিয়েলি খুব হট আর মডার্ণ, ন্যাকা মিডলক্লাশ মেয়েদের মত নয়। হিমাচলের পাহাড়ের কোলে এই যায়গাটা খুব নিরিবিলি আর সুন্দর দারুণ এনজয় করছে ওরা। বাবাকে কিছুতেই না বোঝাতে পেরে বলেছে বন্ধুরা মিলে দার্জিলিং যাচ্ছে। কাছাকাছিই তো তাই চিন্তার কিছু নেই। শেষ পর্যন্ত মিথ্যার আশ্রয় নিতেই হয়েছে পায়েলের সাথে টাইম স্পেন্ট করার জন্য।
পায়েলকে আদর করতে করতে মাকে ফোন করে," মা কেমন আছো? তোমাকে আর বাবাকে খুব মিস্ করছি।"
......রাখীর ও মনটা খারাপ হয়ে যায়," তোকেও খুব মিস্ করছি বাবু। খুব সাবধানে থাকিস বাবু, ঠান্ডা লাগাস না। সবসময় যোগাযোগ রাখিস।"
....."মা, বাবা কোথায়?"
...."আর বলিসনা সেই থেকে ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে, একটু আগে দেখছিলাম ফোন করছিলো কাকে যেন বারান্দায় কথা বলছিলো, মনেহয় অফিসের সমস্যা। আচ্ছা আমি বলে দেবো বাবাকে।'
যাক মায়ের সাথে ভালোই কথা হয়ে গেলো। পায়েলের সাথে আদরে আনন্দে ডুবে যায় প্রীতম। ইন্টার্নশিপের জমানো টাকাটা এইভাবেই খরচ করলো কিছুটা। বাকীটা অবশ্য বাবা মা দিয়েছে। পায়েল হাসতে হাসতে বলে," দুজনেই কিভাবে ম্যানেজ করলাম বলো। একটু খারাপ লাগছে কিন্তু আমার মাকে অনেক করে ম্যানেজ করে এসেছি ডিপার্টমেন্টাল ট্যুরে যাচ্ছি বলে। এরপর যদি আমায় ছেড়ে দেবার কথা বলোনা দেখো কি করি।"
আদুরে গলায় প্রীতম বলে,"নো সোনা, নেভার।"
রাতে শ্রীজিত ভালো করে খেলেও না। খুব চিন্তিত লাগছিলো ওকে। " তোমার কি শরীর খারাপ? কোন সমস্যা হয়েছে?" রাখী জিজ্ঞেস করে।
....." তুমি শুয়ে পড়ো আমি কয়েকটা মেল করে শোবো,একটু দেরী হবে। চিন্তা কোরনা সব ঠিক আছে। ছেলে ফোন করেছিলো? কি বললো কোথায় আছে এখন?"
রাখী সব কথা বললো চুপ করে শুনলো শ্রীজিত।
রাখী শুয়ে পড়লে বেশ রাত করে শুতে আসে শ্রীজিত, বড় মায়া লাগে রাখীর ঘুমন্ত মুখখানার দিকে তাকিয়ে। কি সরল নিষ্পাপ মুখখানা এখনো, পরম মমতায় ওদের সংসারটাকে ধরে রেখেছে। কতটুকুই বা সুখ দিতে পেরেছে বেচারাকে বিয়ের পর থেকে। ভাবলে নিজেকে আজকাল অপরাধী বলেই মনে হয়।
দুটো দিন বেশ আনন্দে কেটে গেলো প্রীতম আর পায়েলের যেন একটা অদ্ভুত নেশায় কাটছে দিনগুলো। পরশু ওদের ফ্লাইট, এখান থেকে গাড়ী করে দিল্লী গিয়ে ফ্লাইট ধরবে ওরা। ইশ্ দিনগুলো কত তাড়াতাড়ি কেটে গেলো। পরেরদিন ওরা একটু বেড়িয়েছিলো বিকেলের দিকে, সকালে ঘুম থেকে উঠতেই বড্ড দেরী হয়ে যায়, বেরোনো হয়না। পাহাড়ী রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে বেশ অনেকটা চলে এসেছে ওরা খেয়ালই করেনি হঠাৎ ঝপ্ করে সূর্য ডুবে যাচ্ছে। খুব তাড়াতাড়ি পা চালায় ওরা এদিকে লোকজন খুব কম। আরেকটু এগোতেই আবছা অন্ধকার নেমে আসে তখনো প্রায় মিনিট পনেরো লাগবে হয়ত পৌঁছতে।" কি হলো পায়েল একটু তাড়াতাড়ি পা চালাও,কেন যে এই জুতো গুলো পরো জানিনা।"
....." উফ্ যাচ্ছি তো এইরকম করে হাত ধরে টানছো কেন, আমি হাঁপিয়ে যাচ্ছি তো।"
পাহাড়ের বাঁক ঘুরতেই চমকে ওঠে প্রীতম, চার পাঁচজন ছেলে হঠাৎই যেন কোথা থেকে অন্ধকার ফুঁড়ে ওদের সামনে এসে দাঁড়ায়। পায়েল প্রীতমের হাতটা চেপে ধরে। ওদের পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে চায় ওরা, ছেলেগুলো পায়েলকেক দেখে কুৎসিত অঙ্গভঙ্গী করে কিছু অশালীন কথা বেড়িয়ে আসে ওদের মুখ থেকে। পা চালায় জোরে ওরা, ঝাঁঝালো মাদকের গন্ধ নাকে আসে। ভয়ে কাঁপতে থাকে পায়েল, প্রীতমের বুকের ভেতরটাও কেঁপে ওঠে। এবার প্রায় দৌড়তে শুরু করে ওরা, পেছনে ছুটে আসে কুৎসিত হাসি হাসতে হাসতে ছেলেগুলো।
....."আরেকটু পায়েল, আরো জোরে পা চালাও আর দশমিনিট ও লাগবেনা। ওই তো আলো দেখা যাচ্ছে নীচে।
.....কাঁতরে ওঠে পায়েল," আর পারছিনা, খুব হাঁপ ধরে যাচ্ছে।" গলা দিয়ে বমি উঠে আসে ওর।
আর এগোনো হয়না ওদের, পায়েলের হাতটা ধরে টানে দুটো ছেলে,বাধা দিতে যায় প্রীতম। একধাক্কায় ওর হাত দুটো মুচড়ে পাথরের গায়ে চেপে ধরে দুজন। পায়েল চিৎকার করে কেঁদে ওঠে, আবছা আলোয় প্রীতম দেখে পায়েলকে মুখে চাপা দিয়ে টানতে টানতে ওরা নিয়ে যাচ্ছে, হাত পা ছুড়ছে পায়েল। নিজেকে ছাড়ানোর খুব চেষ্টা করে প্রীতম আবার একটা ধাক্কা খায় পাথরের গায়ে,মাথার কিছুটা কেটে রক্ত পড়ে।
চোখের সামনে অন্ধকার হতে হতে মনে পড়ে দিল্লীর নির্ভয়ার কথা, যার বন্ধু ওকে বাঁচাতে পারেনি। মনে পড়ে যায় মা বাবার মুখ দুটো, যাদের ঠকিয়ে মিথ্যে বলে এখানে এসেছে।
হঠাৎই ওর চোখদুটো বুজে আসতে আসতেও তীব্র আলোয় ঝলসে যায়। কিসের আলো ওটা? আর কিছু মনে করতে পারেনা প্রীতম, অসহ্য যন্ত্রণা করে মাথার পেছনে।
যখন চোখ খোলে তখন দেখে একটা হেল্থ সেন্টারের বেডে ও শুয়ে আছে। অনেকের মাঝে পায়েলকেও দেখে একটা চেয়ারে মাথা নীচু করে বসে আছে, গায়ের কার্ডিগানটা ছেঁড়া। আবার চোখ বোজে লজ্জায় আর অপরাধে প্রীতম।
পুলিশের পোশাকে এগিয়ে আসেন এক ভদ্রলোক জানতে পারে উনি মিঃ শর্মা বাবার বন্ধুর পরিচিত। বাবাই বলেছিলো ওরা একা গেছে ওদের দিকে একটু খেয়াল রাখতে। উনি হোটেলে এসে ওদের না পেয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেছে দেখে পাহাড়ের পথ ধরে এগিয়ে যান জিপ নিয়ে। আর কিছুটা দেরী হলে কি যে হত ! ছেলেগুলোকে আ্যরেস্ট করা হয়েছে। ব্যাপারটা আপাতত ওরা কনফিডেন্সিয়াল রেখেছে তবে পরে ওদের দরকার হতে পারে। হয়ত ভগবানই বাঁচিয়েছে ওদের।
আজ প্রীতমের সত্যিই মনে হয় বাবা বোধহয় ছোটবেলার শক্তিমানের মতোই এখনো ওকে রক্ষা করে চলেছে। আর ও কিনা ওদের ঠকিয়ে বোকা বানিয়ে এখানে বেড়াতে, ফূর্তি করতে এসেছে। কিন্তু বাবা কি করে জানলো ওরা এখানে এসেছে? ও তো দার্জিলিং বলেছিলো। খুব অবাক লাগে প্রীতমের। কিছুতেই বুঝতে পারেনা ব্যাপারটা।
প্রীতম চলে যাবার পর শ্রীজিত ল্যাপটপ খুলতে গিয়েই দেখে প্রীতমের মেইলবক্সটা খোলা, লগ আউট করতে গিয়ে, হোটেল বুকিংয়ের আর ফ্লাইটের টিকিটের মেলটা চোখে পড়ে। দুঃখে,রাগে, ছেলের প্রতারণায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে কিছুক্ষণের জন্য, কিন্তু কিছুই জানতে দেয়না রাখীকে। শ্রীজিত বুদ্ধি দিয়ে অভিজ্ঞতা দিয়ে বোঝে দুটো কমবয়সী ছেলেমেয়ে কতটা নিরাপদ বর্তমান পরিস্থিতিতে। তাই সাথে সাথেই যোগাযোগ করে ওর স্কুলের বন্ধু র সাথে,যিনি এখন ডি এস পি। ওনাকেই হোটেলের ডিটেলস্ জানিয়ে সাহায্য চায়। এইভাবেই উনি এই এরিয়ার লোকাল অফিসার মিঃ শর্মার সাথে যোগাযোগ করে ব্যাপারটা বলেন। আর সেই জন্যই হয়ত ওরা বেঁচে গেলো এক ভয়াবহ বিপদের থেকে। প্রীতমের একটা ছোট ভুল হয়ত বাঁচিয়ে দিয়েছিলো ওদের। কোথায় গেছে ছেলে সেটা জানতে না পারলে কিছুই হয়ত করা যেতোনা।
সত্যিই কি এভাবে বাবা মাকে ঠকিয়ে কোন লাভ হয়? আজ প্রীতমের উল্টোটাই মনে হলো, সত্যি যদি পায়েল রেপড হতো আর প্রীতম আধমরা হয়ে পড়ে থাকতো রাস্তায়। পরের দিনের খবরের কাগজে বড় বড় করে বেরোতো ঘটনার খবর। মিডিয়া, পুলিশ সবার জেরার উত্তর দিতে হোত মা বাবাকেই। ছেলেমেয়েরা প্রাপ্তবয়স্ক হলেই কি বাবা মায়েরা ছাড় পাবে ? আর ভাবতে পারেনা প্রীতম।
শুধু মনে হলো যে কাজের জন্য এতদিন ধরে লালন পালন করা বাবা মাকে মিথ্যে বলতে হয় তেমন কাজ আর ভবিষ্যতে কখনোই করবেনা।
নিজেকে বড্ড অপরাধী লাগে। অথচ ওর মা বাবা তো বন্ধুর মতই মিশতো ওর সাথে। তাহলে মিথ্যে বলতে হলো কেন? ভয়ে না সংস্কারবিরোধী কাজ করার জন্য। অনেকটা ভুল আবার নতুন করে চোখ খুলে দিলো ওর। সবার বাবার তো আর ডিএস পি বন্ধু থাকেনা।
আজ সত্যিই বাবাকে সুপারস্টার আর সুপারম্যান বলেই মনে হলো প্রীতমের। শুধু ভাবতে থাকে ওখানে ফিরে কি করে সামনাসামনি হবে বাবার। আজ নিজেকে খুব ছোট মনে হয় প্রীতমের, অনুতাপে মিশে যেতে ইচ্ছে করে মাটির সাথে।
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment