"তুমি এখানে দাঁড়াও না আমার ভয় করছে।"
"সত্যি এই এক ছেলে হয়েছে! হাড় জ্বালিয়ে খেলো একেবারে। সারাদিন পায়ে পায়ে ঘুরছে, একটুও শান্তি নেই। মা তো হাড় জ্বালিয়ে মরেছে ছেড়ে গেছে এই আধপাগল ছেলেটাকে। এখন আমার হয়েছে যত জ্বালা।" গজগজ করতে থাকে রাগে সরমা।
শুভ। ওর দেওরের ছেলে। ওর মায়ের প্রিম্যাচিওর বেবি, একটু বুদ্ধি কম। তাই সবাই বলে একদম বোকা পাগল ছাগল ছেলে। মা ছিলো ওর জগত মাকে ছাড়া আর কিছুই বুঝতোনা কখনো। সারাদিন উমার কাজ ছিলো ওই ছেলে সামলানো। কখন কি খাবে? কি জামাকাপড় পড়বে, কখন স্নান করবে সবটা সামলাতে সামলাতে নিজের দিকে খেয়ালই রাখতে পারতোনা। তার উপর সংসারের কাজের ঝামেলাতো ছিলোই। সরমা চিরকালই খবরদারি করে এসেছে উমার ওপর।
ছোটবেলায় মা বাবা হারিয়ে মামার বাড়ীতে মানুষ উমা। বাপের বাড়ী বলে তেমন কিছু ছিলোনা। তাই জায়ের সব কথা আর দাপট মুখ বুজে সহ্য করতে হত। অমল কাজের জন্য থাকতো শহরে সেখানে বাড়ী ভাড়া করে উমাকে নিয়ে যাওয়ার মত ক্ষমতা ছিলোনা। কোনরকমে নিজে একটা ছোট খুপরীতে মাথা গুঁজে থেকে বাড়তি টাকাটা সংসারে পাঠিয়ে দিতো।
খুব ভালো মেয়ে ছিলো উমা, আসলে দুঃখে কষ্টে মানুষ হলে যা হয়,সব কিছুই মেনে নিতো হাসিমুখে। কখনো কোন দাবী করতোনা অমলের কাছে। মনে কষ্ট হত অমলের এত মিষ্টি আর ভালো বৌটা অথচ ওর জন্য কিছুই তেমন করতে পারেনা। মিষ্টি মুখে ধৈর্য নিয়ে সব দায়িত্ব পালন করতো উমা হাসিমুখে। শুভটা হয়ত ভালোই হত, সবই কপালের ফের। উমার যখন আটমাস চলছে তখন হঠাৎ কলকাতা থেকে টেলিফোন আসে চৌধুরী বাড়িতে কারখানায় আগুন লেগে পুড়ে গেছে অমল। সহ্য করতে পারেনি উমা হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যায় তার কিছুক্ষণ বাদে পেটে ব্যাথা শুরু হয়ে যায় আর তারপরেই জন্ম নেয় শুভ। একটু একটু করে বড় হতে হতে দেখা যায় শুভর সব কিছুই একটু দেরীতে হচ্ছে।
মাঝে মাঝেই মুখঝামটা দিতো সরমা, " একটা কাজ করতে এক ঘন্টা লাগে তোর উমা, আর পারিনা বাপু। তোর ঐ ন্যালা ক্ষ্যাপা ছেলেকে নিয়ে সারাদিন বসে থাকলে চলবে?"
ছলছল চোখে এগিয়ে আসতো উমা," অমন করে বোলোনা দিদি, ছেলেটা আমার বড় সরল শুধু একটু মায়ের ন্যাওটা।"
....আর কি তবে? থাকো ঐ ন্যাওটা ছেলেকে নিয়ে কোলে বসে। পারিনা বাপু আদিখ্যেতা দেখতে আর।"
সত্যিই বোধহয় আধিখ্যেতা করা হলোনা উমার বেশিদিন ছেলেকে নিয়ে। মাঝে মাঝেই পেটে ব্যাথায় কষ্ট পেতো, বুক আর পিঠ আঁকড়ে অদ্ভুত একটা ব্যাথা হত। কিছু খেলে একটু কমতো। কিন্তু সবসময় খাওয়ার জুটতোই বা কই।
মাঝে মাঝে গ্যাসের ওষুধ খেয়ে নিতো রায়েদের দোকান থেকে কিনে। কিন্তু তাতে আর কয়দিন? ঘুরে ফিরেই ব্যাথাটা হত।
Comments
Post a Comment