#ডার্লিংয়ের_বিরিয়ানি#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
"আজ তোমার হসপিটালে কি এক্সট্রা আওয়ার থাকতে হলো? আজ অনেকটা দেরি হলো ফিরতে।" জিজ্ঞেস করে কবিতা।
"হ্যাঁ আজ অনেকগুলো এমারজেন্সি ছিলো। তারপর একটু রিল্যাক্স করছিলাম, এক কাপ কফি নিয়ে বসে লবিতে। লন্ডন আইয়ের দিকে তাকাতে তাকাতে মনটা কেমন যেন হারিয়ে গিয়েছিলো। আজ খুব মনে হচ্ছিলো কবিতা,বাবা মায়ের সাথে প্রথম লন্ডনে আসার কথা। কি যে আনন্দ হয়েছিলো! অথচ খুব কষ্ট করে ইউরোপ ট্রিপের টাকাটা জোগাড় করেছিলো বাবা মা, শুধু দুচোখ ভরে অজানাকে দেখার জন্য।"
......."আর এখন তো মা এদেশে আসতেই চাননা, কি যে দেশের টান মায়ের কি বলবো! আমরা দু তিন বছর বাদে যখন যাই তখনই দেখা হয়। কত বলেছি,মা চলুন সামারটা কাটাবেন ওদেশে। বাবা থাকতে যা দুএকবার এসেছেন ওই যা।".... বলে কবিতা।
...."তুমি কি রাতে ব্রেড আর স্যুপ খাবে? আমি আজ একটু তাড়াতাড়ি ডিনার করেছি।"
......"ওকে তুমি রেস্ট নাও। আমি একটু স্টাডিতে যাবো। আমার খাবারটা ওখানেই দিয়ে দাও।"
গরম স্যুপটা খেতে খেতে আইপ্যাডে কয়েকটা নতুন কেস হিস্ট্রি দেখে নেন। কাজ শেষ করে অনেকটা রিল্যাক্সড্ লাগে সৌম্যব্রতর।
তবুও কেন যেন আজ রাতে ঘুম আসছেনা । লন্ডনের আবহাওয়া এখন অনেকটা ভালো অত কনকনে ঠান্ডাটা আর নেই। নাইটগাউনটা জড়িয়ে রকিং চেয়ারে গিয়ে বসেন একটা বই হাতে,স্বামী বিবেকানন্দের বই। স্কুলজীবনে সেরাছাত্রের প্রাইজে স্বামী বিবেকানন্দের কমপ্লিট ওয়ার্কস পেয়েছিলেন এখনো মনের অস্থিরতার সময়ে অনেক ভরসা দেয় বইগুলো। বইগুলো পড়লে এক নিমেষে মনে এক অদ্ভুত শক্তি জাগে। খুব যত্ন করে মা রেখে দিয়েছিলেন সব প্রাইজের বইগুলো।
সামনের সপ্তাহে সিনিয়র সিটিজেন হবেন সৌম্যব্রত। ষাটবছরও কেমন যেন দেখতে দেখতে এলো জীবনে। মনে হয় এই তো সেদিনের কথা,ছোটবেলায় অঙ্কে ভীষণ ভয় ছিলো। অঙ্ক পরীক্ষার আগের দিন মায়ের কোল ঘেঁষে শুয়ে অনেকটা নিরাপদ লাগতো। মা অভয় দিতেন সব জানা অঙ্ক আসবে, সত্যি তাই আসতো। আর তারপর বাড়ী এসে মায়ের কোল ঘেঁষে অঙ্ক মেলানোর পালা। আর ঠিক এমনটা হত আ্যনাটমি পরীক্ষার দিন,সব জানা জিনিসগুলো ঘেঁটে ঘ হয়ে যেতো। সেদিনও মায়ের পাশের নিরাপদ আশ্রয় ভরসা। মা বলতেন,"বুড়ো ছেলে এখনও এত ভয়!"
আজ যেন খুব মায়ের কথা,বাবার কথা, ছোটবেলার কথা মনে হচ্ছে। সেই কবে থেকে দেশ ছাড়া হতে হয়েছে সৌম্যব্রতকে পেশার জন্য হয়ত বা কিছুটা ইচ্ছেও ছিলো বিদেশে থাকার। তখন অর্কের মাত্র পাঁচ বছর বয়েস। খুব মন খারাপ হয়েছিল মা বাবার, ছেলে, বৌমা আর আদরের নাতিকে ছেড়ে থাকতে, কিন্তু মুখে একবারও বলেননি কেউ। দুজনেই বলেছিলেন,"যা সুযোগ যখন পেয়েছিস আর পেছনে তাকাসনা।আমরা ঠিক থাকবো। সুযোগ পেলেই তো যাবো আর তুইও আসবি। কোন সমস্যা নেই।"
তবে সবচেয়ে বোধহয় মনখারাপ হয়েছিলো অর্কর ওর গ্ৰ্যানি আর গ্ৰান্ডপা কে ছেড়ে যেতে। ওর সবসময়ের সঙ্গী ছিলো বাবা মা।
দেখতে দেখতে অনেকগুলো বছর পার হয়ে গেছে। প্রায় দুবছর অন্তর দেশে যায় ওরা। কিন্তু এখন চিত্রটা অনেকটাই পাল্টে গেছে। বাবা হঠাৎ চলে গেলেন তিনবছর আগে। মাকে কিছুতেই রাজী করাতে পারেনি সৌম্যব্রত এদেশে এসে কিছুদিন থাকার জন্য।
অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নিলেন মা, সব সম্পত্তি দানপত্র করে নাতিকে দিয়ে ভীষণ জেদ করলেন বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়ার জন্য। সেইদিনটা খুব মন খারাপ হয়েছিলো সৌম্যব্রতর। কিন্তু মা বুঝিয়ে বলেছিলেন,"শোন বাবা প্রায় আশির কাছাকাছি বয়স হচ্ছে আমার, যদি হঠাৎ কখনো মরে পড়ে থাকি বন্ধ ফ্ল্যাটে তখন এই শরীরটাকে নিয়ে কাটাছেঁড়া হবে। ওই হোমে আমার দুএকজন বন্ধু আছে,ওটা আমার সেকেন্ড হোমের মত, ওখানে কোন অসুবিধে হবেনা দেখিস।"
মা বুঝিয়ে বলাতে কিছুটা শান্ত হয় সৌম্যব্রত তবুও মনটা ভীষণ খারাপ লাগে।
শুধু অর্ক বলে ওঠে,"গ্ৰ্যানি ডার্লিং কিন্তু পাপার বিরিয়ানি খাওয়ার কি হবে শুনি? পাপা তোএদেশে আসেই তোমার হাতে তৈরী হোমমেড বিরিয়ানি খেতে। মমকে তো সবসময় বলে, এতবছরেও মায়ের মত বিরিয়ানি বানাতে শিখলেনা।"
ছেলের কথা শুনে হেসে ফেললেন সৌম্যব্রত আর কবিতা আর তার সাথে সাথে অর্কের গ্ৰ্যানি ডার্লিং মধুশ্রীও।
"সত্যি গ্ৰ্যানি তোমার হাসি এখনো মুক্তো ছড়ায়। আমি তো ফিদা। তুমি আমার প্রথম ক্রাশ।"
"আচ্ছা দাদুভাই এখনো এত ভালো বাংলা বলিস কি করে? একদম পরিস্কার।"
......"ছোটবেলায় বাংলাটা তোমার আর গ্ৰ্যান্ডপার কাছে শিখেছিনা।"
.....".তাহলে ঠাকুমা না বলে গ্ৰ্যানি বলিস কেন শুনি?"
......"তোমরা যে গ্ৰ্যান্ড আমার কাছে তাই। আর ডার্লিং ডাকটা গ্ৰ্যানির সাথে যায়। খুব রোমান্টিক লাগে।"
মনটা জুড়িয়ে যায় মধুশ্রীর, কি ভালো হয়েছে ছেলেটা! নিখিলেশ আর তার নিজের হাতে তৈরি নাতি। খুব মনটা কেঁদেছিলো যখন ছেলেটা চলে গেলো বিদেশে।
মাকে বাবাকে ছেড়ে আসতে খুব খারাপ লেগেছিলো,তবুও এসেছিলো নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে। আজ ষাটের দোরগোড়ায় এসে মাকে আর দেশের মাটিকে খুব মনে হয়, সত্যি বলতে মিস্ করে।
অনেক কষ্টে নানা কথা ভাবতে ভাবতে ঘুম আনার বৃথা চেষ্টা , অর্কটাও এখন প্যারিসে চাকরি নিয়ে চলে গেছে। এতবড় বাড়িতে এখন শুধু ওরা দুজন। কেমন যেন ছন্নছাড়া লাগে এখন শেকড় ছেঁড়া জীবনটা। যৌবনে মোহময় আর আকর্ষণীয় লাগে বিদেশ কিন্তু বয়েস বাড়ার সাথে সাথে কেন যেন উঁকি মারতে ইচ্ছে করে ফেলে আসা শৈশবে আর জন্মভূমিতে।
পরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট করতে করতে কবিতা বলে,"তোমার কি কিছু হয়েছে?কাল থেকে দেখছি একটু আ্যবসেন্ট মাইন্ডে আছো। কি ব্যাপার গো?"
" না না তেমন কিছুনা মায়ের কথা মনে হচ্ছে খুব কেন জানিনা। কালও ফোনে অনেক কথা হলো তবুও কেন জানিনা খুব মিস্ করছি মাকে। ভাবছি এইবছর আবার দেশে যাবো।"
....."তোমার এখানের জব শেষ হয়ে গেলে আমরা বরং...এই সময় মায়ের কাছে থাকাটাও জরুরী তাইনা।"
.....সব ঠিক আছে কিন্তু এই বয়সে কি আর ওখানে গিয়ে আ্যডজাস্ট করতে পারবো? আর অর্ক, ওর কি হবে? ওতো এখানেই পুরোপুরি সেটেলড্। আমরা চলে গেলে ও তো একদম একা হয়ে যাবে। ওর বিয়েটাও এবার দিতে হবে, এবার এলেই আমি বলবো এবার সেট্ল করতে।"
....."যা পাজী তোমার ছেলে,বিয়ের কথা বললেই বলে গ্ৰ্যানির মত সুইট কেউ থাকলে আমি রাজী। এদিকে হাজার একটা গার্লফ্রেন্ড। কি যে করবে কে জানে? আসলে ছেলেটা আমার একদম অন্যরকম। এত ভালো ছেলে এখন দেখা যায়না।"
..."আচ্ছা নেক্সট উইকের কথা মনে আছে তো? তোমার কাদেরকে ইনভাইট করার আছে একটু বলে দিয়ো।"
হাসে সৌম্যব্রত বলে," ষাট বছরের বুড়োর আবার জন্মদিন। ভেবেছিলাম কোনদিনই বুড়ো হবোনা। কিন্তু যা হয়,কালের কাছে অসহায় আমরা। কবিতা আমিও পা রাখলাম ষাটে।"
....."বুঝতে পারছি, তাই তোমার মনখারাপ, মাই ডিয়ার এভার গ্ৰীন ইয়াং ম্যান।"
কলকাতার হোমে বসে মধুশ্রীরও খুব মনে হয় ছেলের কথা। খেতে যে কি ভালোবাসতো ছেলেটা ওর বায়নাতেই নানা রকম রান্না করতো মধুশ্রী। মিষ্টি,পায়েশ,পিঠে,মাংস,বিরিয়ানি এমনকি মধুশ্রীর হাতের শুকনো রুটিও খুব পছন্দের ছিলো সৌমব্রতের। আর লুচি পেলে তো কথাই নেই কটা যে খেতো ঠিক থাকতোনা। মাঝে মাঝেই বকুনি দিতো মধুশ্রী, "এতো খাস না বাবু মোটা হয়ে যাচ্ছিস।"
মাকে হেসে জবাব দিতো,"মা সার্জেনদের ভুড়ি থাকলে সুবিধা হয়। ওই জন্যই তো ভুড়ি বাড়াচ্ছি।"
সেই ছেলের এখন কত রেস্ট্রিকটেড ডায়েট। তবে কলকাতা এলে ওর আর কিছু মনে থাকেনা। সব আবদার জমিয়ে রাখে। তবুও ভালো এইবয়সেও কর্মক্ষম মধুশ্রী। সবকিছু গোছানো থাকলে রান্নাটা করতে পারেন। আর তারপর ছেলে নাতি বৌমা এলে একলাফে বয়স কমে যায় দশবছর। সামনে সপ্তাহে ছেলেটার জন্মদিন, এই দিনটাতে অনেক পুরনো কথা মনে পড়ে যায় মধুশ্রীর। একদম সৌম্যব্রতর একবছরের জন্মদিন থেকে আজ পর্যন্ত সব মনে পড়ে যায়। ভালো ছেলের বৌ পেয়েছিলেন মধুশ্রী। ছেলের ভবিষ্যত আর স্বপ্নের মাঝে কখনোই বাধা হয়ে দাড়াননি মধুশ্রী। ভালো থাক ওরা, সুস্থ আর আনন্দে থাক। কথা তো প্রতিদিনই হয় দিনে দুবার, আবার নাতিও ফোন করে।
দুষ্টু ছেলেটা ফোনে প্রতিদিন ফ্লাইং কিস্ নিয়েই ছাড়বে। ভাবলেই হাসি পায় মধুশ্রীর। নিখিলেশ ও এই নিয়ে মজা করতেন, বলতেন," ওরে এই বুড়ো বয়সে আমার বৌটাকে দখল করিসনা। আমি যাবো কোথায়?"
ছেলের জন্মদিনে মধুশ্রীকে বিরিয়ানি করে খাওয়াতেই হোত। স্কুল থেকে এসে বিরিয়ানি,চাপ আর পায়েশ সব রান্না করতেন মধুশ্রী। কে জানে এবার কি করবে ছেলেটা, ভাবতেই হাসি পায় ছেলে যে ষাটে পড়বে।
কবিতা সব ব্যবস্থা করে ফেলেছে মোটামুটি। ছেলেটা জ্বালিয়ে মারছে, এরমধ্যে নাকি ওকে একটু জার্মানি যেতে হয়েছে কিন্তু পজেটিভলি চলে আসবে বার্থডে পার্টির দিন বলেছে। তাই সব চাপ কবিতার উপরেই পড়েছে।
দেখতে দেখতে এসে গেলো দিনটা। সৌম্যব্রতর মনটা ভেতরে একটু অস্থির কিন্তু ওপরটা একদম শান্ত। প্রতিদিনের মতই সৌম্যব্রত স্টাডিতে, কবিতাও আজ ঘুমোয়নি। বারোটা বাজতে বাজতেই ছেলের ফোন এলো, ফোনেই অনেক আদর ,ভালবাসা, মজা সবই করলো বাবার সাথে। ছেলের সাথে কথা বলে অনেকটা হাল্কা লাগলো সৌম্যব্রতর। মনটাও বেশ খুশি খুশি লাগে।
...." হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার,মনটা এমনই সুন্দর রেখো। সবুজ থেকো মনে প্রাণে। চলো এবার ঘুমোতে যাই , কাল অনেক কাজ আছে।"
গভীর আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয় কবিতা আর সৌম্যব্রত। ভালবাসাটুকু এভাবেই বেঁচে থাক সারাজীবন বিপদে সম্পদে।
খুব নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়েছিলো ওরা ,কখন যে ভোর হয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি। আসলে গত রাতে ঘুমোতে অনেকটা রাতও হয়ে গেছিলো।
কলিংবেলের আওয়াজে হঠাৎই ঘুম ভেঙে যায়। কবিতা ওঠার আগেই সৌম্যব্রত উঠে গ্ৰাউন্ডফ্লোরে নেমে আসেন। আই হোলে চোখ রাখেন কাউকে দেখা যায়না। তবুও নাইটল্যাচটা খোলেন,খুলেই চমকে যান হঠাৎ...
......"হ্যাপি বার্থডে পাপা"
বাবাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে অর্ক।
....."আরে তুই! এত সকালে! কাল কিছু বললিনা তো।"
ততক্ষণে পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে কবিতাও। দুষ্টু ছেলের দুষ্টুমি দেখছে দুচোখ ভরে।
...."আয় তো আগে ভেতরে", কবিতা বলে।
মুখটা পেছন ঘুরিয়ে একবার দেখে অর্ক, তারপর বলে," ওহ্ ! সুইটহার্ট, প্লিজ কাম।"
অস্বস্তিতে পড়েন সৌম্যব্রত আর কবিতা। কাকে নিয়ে এসেছে ছেলেটা? ওর সেই ফরাসী বান্ধবী? কোন খবর না দিয়ে এভাবে এরকম একটা দিনে, কি আর করা যাবে?
"একমিনিট পাপা, ও বোধহয় লজ্জা পাচ্ছে। আমি ওকে নিয়ে আসছি।" সৌমেন্দু ,কবিতা দরজা থেকে একটু সরে দাঁড়ায়।
অর্ক সিনেমার স্টাইলে প্রায় পাঁজকোলা করে যাকে তুলে নিয়ে এগিয়ে আসে, তাকে দেখে সৌম্যব্রত আর কবিতা কোন কথা বলতে পারেন না। দুজনেই চুপ করে যান কিছুক্ষণের জন্য।
অর্কর কোলে তখন লাজুক মুখে একগাল হাসি নিয়ে মধুশ্রী। " ও দাদুভাই কোল থেকে নামিয়ে দে আমাকে, পাগল ছেলে।"
...." না না আজকে তুমি পাপার জন্য স্পেশাল গিফ্ট। একদম পাপার কাছে গিয়ে নামবে। আর একটা টাইট হাগ দেবে তোমার বুড়ো ছেলেকে।"
সত্যি যেন স্বপ্ন দেখছেন সৌম্যব্রত, এমনও কি হয়। মাকে দেখতে সত্যি যে খুব ইচ্ছে করছিলো কদিন ধরে।
মধুশ্রী জড়িয়ে ধরেন ছেলেকে আদর করে।কপালে এঁকে দেন আলতো করে একটা চুমু। পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে সৌম্যব্রত আর কবিতা। ছেলে, বৌ আর নাতিকে একসাথে কাছে টেনে নেন মধুশ্রী।
" মা তুমি কি করে এলে?"
...."আমি তো জানি আমার ছেলের মনখারাপ হচ্ছে বুড়ো হচ্ছে বলে, তাই আমাকে তো আসতেই হবে মন ভালো করার জন্য। সবটাই দাদুভাইয়ের জন্য রে। খুব ভালো, একদম সেরার সেরা আমার দাদুভাই।"
অর্ক এগিয়ে এসে গলা জড়িয়ে ধরে ওর গ্ৰ্যানির," উঁহু আমি এইসব কথায় ভুলছিনা। আমাকে গিফ্ট দিতে হবে।"
....."কি চাই তোমার দাদুভাই?"
......."তোমার হাতের বিরিয়ানি, আমার আর পাপার জন্য।"
হেসে ফেলেন মধুশ্রী। সৌম্যব্রতও বলেন," মা হয়ে যাক।"
সেদিনের জন্মদিনের সন্ধ্যেটা স্মরণীয় হয়ে থাকলো ওদের সবার মনে। সারা বাড়িটা ম ম করছিলো মায়ের আদর মাখানো বিরিয়ানির গন্ধে।
....."দাদুভাই আমার বর্মিবাক্সটা নিয়ে আয় তো এবার খুলি। বৌমা আর দাদুভাই এদিকে এসো।"
বাক্সে থরে থরে সাজানো সৌম্যব্রতর মাকে দেওয়া দামী উপহারগুলো। মধুশ্রীর কাছে এগুলো অমূল্য। "এ গুলো সব আমার দাদুভাইয়ের বৌয়ের জন্য।"
......'সত্যি মা, আপনার কোন তুলনা হয়না। আমি ভাবতেই পারিনা এমন করে।"
আশ্চর্য হয়ে যান সৌম্যব্রত কি যত্নে মা রেখেছেন এতবছরের উপহারগুলো। প্রথমদিন থেকে এখন পর্যন্ত।
সারা বাড়ীতে আনন্দের বন্যা, সৌম্যব্রতর মনখারাপটা আর নেই। মাকে পেয়ে আর বিরিয়ানির গন্ধে ম্যাজিকের মত উবে গেছে। সন্ধ্যার মূল আকর্ষণ অর্কর গ্ৰ্যানি ডার্লিং আর গ্ৰ্যানির বিরিয়ানি।
মধুশ্রীর মনটা জুড়িয়ে যায়, মনে মনে বলেন এমন ছেলে, বৌমা আর নাতি যদি ঘরে ঘরে থাকতো! পেশার জন্য হয়ত দেশ ছাড়তে হয় অনেককেই কিন্তু এমনই অটুট থাকুক মিষ্টি সম্পর্কগুলো। আপনজন আর নিজের দেশকে ভালবাসার শিকড় এমনই গভীর যত্নে রাখা থাক সবার অন্তরে।
মধুশ্রীর অজান্তেই মুখ থেকে বেড়িয়ে আসে,"আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে।"
অর্ক শুনে ফেলেছে কথাটা, মিষ্টি হেসে বলে," গ্ৰ্যানি ডার্লিং একটু কারেকশন হবে।"
......" কোনটা দাদুভাই?"
"ওটা হবে, আমার সন্তান যেন থাকে বিরিয়ানী আর চাপে।"
মুক্তো ছড়ানো হাসি হাসলো মধুশ্রী," সত্যিই আমার দাদুভাইয়ের কোন জুড়ি নেই। ভালো থাকিস দাদুভাই আর মনটাকে এমনি সুন্দর রাখিস।"
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment