বিপন্ন পুরুষসমাজ
মাঝে মাঝে খুব অসহায় লাগে, প্রতিমুহূর্তেই অনুভব করি মানুষের অসহায়তা। সমাজ যত এগোচ্ছে ততই হয়ত কমছে আমাদের মূল্যবোধ,ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে অনুভূতিগুলো আর অদ্ভুতভাবে জটিল হয়ে যাচ্ছে সম্পর্কগুলো।অনেক কিছু পাওয়ার মধ্যেও হারিয়ে যাচ্ছে অনেক ভালো জিনিস,সমাজবদ্ধ মানুষ এখন মুঠোতে বিশ্বদর্শন করে। লৌকিকতা,বিজয়া,নববর্ষ সবটাই মুঠোতে ছবির আদানপ্রদানে হয়ে যায়। এর কুফল অনেকটাই ভোগ করছে শিশুরা, তারা জানেইনা সম্পর্কগুলো কেমন হয়। সেভাবে সুযোগই পায়না বুঝতে স্কুল আর ঘরের বাইরেও একটা জগৎ আছে যেখানে অনেকেই সম্পর্কে তার আত্মীয় বা হয়ত আত্মীয়ের চেয়েও বেশি। নারী পুরুষের সম্পর্ক চিরকালীন একদম সৃষ্টির আদিযুগ থেকে। আমাদের সভ্যতায় পুরুষ কখনো রক্ষক, কখনো স্বামী,পিতা,ভাই আবার বন্ধু। প্রাচীনকাল থেকে এখনো নারী নানা ভাবে নির্যাতিতা হয়েছে, আর সবসময়ই বিপক্ষে তখন কোন না কোন পুরুষ। নানা উপাধিতে আমরা ডেকেছি তাদের,কখনো তারা ধর্ষক,কখনো বা শাসক আবার কখনো পালক। তবুও আমার পিতা একজন পুরুষ ,আমার স্বামীও একজন পুরুষ এবং আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু, আর আমার সন্তান যে আমার সবচেয়ে প্রিয় সেও একজন পুরুষ। পৃথিবীর সব পুরুষই কোন না কোন সম্পর্কে নারীর সাথে বাঁধা। সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হাতে হাত মিলিয়ে একসাথে কাজ করেছে নারী,পুরুষ। সাম্প্রতিক কালে যে ঘটনাগুলো ঘটছে তা অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং অমানবিক এই ঘটনায় নারীসমাজ যত না বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তার থেকে বহুগুণ সঙ্কটে আজ ছেলেরা । তাদের এরপর আর কেউ রাখতে চাইবেনা গৃহশিক্ষক হিসেবে, কেউ বিশ্বাস করে তাদের কাছে বাচ্ছাকে নাচ শেখাতে দেবেনা। একজন রুগী ভয় পাবে ডাক্তারকে। ছাত্রী ভয় পাবে মাস্টারমশাইকে। শুধু একটাই প্রশ্ন সমাজের সব পুরুষই কি নারী শরীর লোভি ধর্ষক, অত্যাচারী আর কাপুরুষ?নারীর মধ্যে যে মায়া,মমতা আর অনুভূতি আছে তা কি পুরুষদের মধ্যে একটুও নেই? মায়ের মত একজন বাবাও পরম যত্নে সন্তান পালন করেন,আদর করেন,তার ন্যাপি পাল্টানো থেকে স্নান করানো,স্কুলে নিয়ে যাওয়া কত কি যে করেন তার কোন হিসেব থাকেনা। নিজের বাচ্ছার বয়সী আরেকটি বাচ্ছা যে বাসে সীট পায়নি তাকে কোলে নিলে সেটা কোন টাচ হবে,গুড না ব্যাড? আমার তো মনেহয় এটা শুধুই মানবিকতার টাচ। একজন শিশুকে একটি মেয়ে যদি গাল টিপে আদর করতে পারে,চুমু খেয়ে কোলে নিতে পারে। তখন এই অনুভূতি একটি ছেলের হওয়া কি খুব দোষের? সেও তো মানুষ, তাই মানবিক আবেগ তো তার মধ্যে থাকতেই পারে। নিশ্চয় উত্তরে বলবেন তাহলে কেন শিশুকে যৌন নির্যাতন করা হচ্ছে? নারী ,পুরুষ উভয়ের মধ্যেই লুকিয়ে আছে কিছু বিকৃতমনস্কতা আর অসুস্থতা। সবাই সেই দলে পরেননা। শিশুদের গুড টাচ আর ব্যাড টাচ শেখাতে গিয়ে এমন দিন আসবেনা তো যেদিন বাবার জড়িয়ে ধরে আদর করা,দাদার আদর করে চুমু দেওয়া সবটাই ব্যাড টাচ বলে মনে হবে? বা একসময় স্বামীর স্পর্শও ব্যাড টাচ বলে মনে হবে? একসময় আমাদের সাইকেল শিখিয়েছে পাড়ার বন্ধুরা,দাদারা। কেউ কিছু বললে ওরা ছুটে গেছে প্রতিবাদ করতে। কিন্তু আগামীতে হয়ত এমন দিনও আসছে যেদিন কোন মহিলা রাস্তায় পড়ে থাকলেও ব্যাড টাচ হবে এই ভেবে কেউ তাকে তুলবে না,নদীতে ডুবে যাচ্ছে তবুও তাকে বাঁচাবেনা কারণ দুই ক্ষেত্রেই মহিলাকে হাতদিয়ে জড়িয়ে বা তার শরীরের খুব কাছে গিয়ে টেনে তুলতে হবে। ছাত্রীরা প্রণাম করলে শিক্ষক মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করবেন না,জড়িয়ে ধরার কথা তো আসেই না। পুরুষ ,নারী সবাই বাঁচুক এই পৃথিবীতে নির্ভয়ে, নিশ্চিন্তে। অনুভূতি,আবেগ আর উচ্ছ্বাসগুলো হোক একদম নির্মল, সেখানে যেন কোন গন্ডী না থাকে। ব্যাড টাচের খাঁচায় বন্দী বিপন্ন পুরুষকে বাঁচাতে হবে আমাদেরই কারণ এরা কেউ আমাদের পিতা,কেউ সন্তান,কেউ ভাই আবার কেউ স্বামী। নারীর অনুভূতির মতো পুরুষদের সুস্থ স্বাভাবিক অনুভূতিগুলোও একরাশ আবেগ আর উচ্ছ্বাস নিয়ে পাখনা মেলুক আকাশে।
রুমাশ্রী সাহা চৌধুরী
Comments
Post a Comment