Skip to main content

ভালোবাসার রঙে ভ‍্যালেনটাইনস

#ভালোবাসার_রঙে_ভ‍্যালেনটাইনস#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

"ওহ্ বেবি! কোথা থেকে যে দিন আর রাত হচ্ছে কিছুই বুঝছিনা, মনের মাঝে শুধু তুই আর তুই। প্রেমের জোয়ারে হাবুডুবু খাচ্ছি একেবারে। একটু ধরে তোল না আমায়।"
             প্রতিমের এই ন‍্যাকা ন‍্যাকা প্রেমের মেসেজগুলো যখন ইনবক্সে আসে তখন হয়ত ভেসে যায় টিয়াও প্রেমের সাগরে।
                      মুঠোফোনে রাতে প্রেম,দিনে প্রেম। একেবারে আবেগ অনুভূতির ছড়াছড়ি আর মান অভিমান এই নিয়ে কেটে গেছে দুটো মাস। এর মাঝে ঝগড়াও হয়েছে প্রচুর। টিয়া তো পুরো চিরুনি চালিয়ে দেখে প্রতিমের ফ্রেন্ডলিষ্ট। একটু মাখো মাখো কমেন্ট দেখলেই হয়েছে। এক্বেবারে পুলিশের জেরা," এ আবার কে? নতুন বান্ধবী নাকি তোর। সব ছবিতেই লাইক আর কমেন্ট মারছে ব‍্যাপারটা কি শুনি? ভালো হবেনা কিন্তু।"

             পেছনে লাগে প্রতিম,"আরে ওই একটু ক্রাশ আছে আমার ওপর,একদম হাল্কা। একটু টাইমপাসিং আর কি।"
         
আরো রেগে যায় টিয়া,"আমি আর কথাই বলবোনা তোর সাথে। বাজে ছেলে একটা। হাজার জনের ওপর ক্রাশ নিয়ে বসে আছে। আর দেখাই করবোনা তোর সাথে।"
....."এই চিনলি আমাকে? আরে পাবিনা এমন সাচ্চা দিল। বুঝবি একদিন যখন থাকবোনা। হাজার খুঁজলেও পাবিনা এমন একটা প্রেমে ধুকপুক করা হার্ট।"
......"শুধু আজেবাজে কথা। আবার যদি এইসব বলিস,দেবো তাহলে একদম ব্লক মেরে।"
      টিয়া বেথুন কলেজে পড়ে আর প্রতিম যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে। আলাপের সূত্র ফেসবুকীয় প্রেম, মিউচ‍্যুয়াল ফ্রেন্ডের মাধ‍্যমে। প্রথমে কথা,তারপর দেখা আর সেই থেকেই মাঝে মাঝে দেখা হয় বন্ধুদের গ্ৰুপে। প্রথমে প্রতিমেরই ভালো লেগে যায় ফরসা পুতুল পুতুল স্টেপস কাটের টিয়াকে। তারপর ধীরে ধীরে ভালোলাগা ট্রান্সফারড ইনটু হার্টবিটিং ম‍্যাড লাভ।
        যদিও দুজনের বাড়ী দুপ্রান্তে, তাই উইক এন্ড ছাড়া দেখা হয়না। তবুও টিয়াকে অনেক বাহানা বানাতে হয়, মাকে ম‍্যানেজ করতে হয়। মিঠিকে ম‍্যানেজ করে কখনো বা বলে ওর সাথে কে এফ সি তে খাবে। আবার কখনো তনুকাকে ফিট করে মাকে বোঝানোর জন‍্য। এর জন‍্য ওদেরকে ঘুষ ও দিতে হয় তবে বিশেষ কিছুনা, কখনো আইসক্রিম বা হেদুয়ার ফুচকা।

      আর বাদবাকি সময় মুঠোফোনই ভরসা। "ওরে আমার মুঠোফোন, তোকে ছাড়া অন্ধ জীবন।" সত‍্যি এবার শীতটা বেশ পড়েছিলো। টিয়াটা রাজ‍্যের শীতকাতুরে তাই প্রায় দিন পনেরো আর সন্ধ‍্যেবেলায় বেরোয়নি। যাক তবুও একটু কমেছে শীতটা। চারদিকে বেশ একটা রোমান্টিক পরিবেশ এইতো সেদিন ওদের কলেজের একটা গাছ থেকে কোকিলের ডাক ভেসে এলো। মেয়েরা চোখাচোখি করে হাসছিলো, মিঠি খাতায় লিখলো," বসন্ত এসে গেছে,বসন্ত এসে গেছে।" চোখ পাকান শিউলি ম‍্যাম।
        দেখতে দেখতে চলে এলো প্রেমের মাস ফেব্রুয়ারী,ওহ্ সামনেই তো ভ‍্যালেন্টাইনস ডে। প্রথম আসছে এই দিনটা ওর জীবনে আসলে ওর মত অনেক কমবয়সী মেয়েদের খুব বেশি ক্রেজ থাকে এই দিনটা নিয়ে। অনেক প্ল‍্যান টিয়ার,কি ড্রেস পরবে কেমন করে সেলিব্রেট করবে দিনটা।
কিন্তু এটাও চিন্তা মাকে কি করে ম‍্যানেজ করবে একদম লেডি শার্লক হোমস সব দিকে নজর। সে যা হয় হবে।
        কিন্তু প্রতিমটা বড্ড বেরসিক ঠিক একদম ওর বাবার মত। ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে বললো,"কি ডে?ওহ্ প্রেমের দিন। ধুসস্ প্রেমেই তো আছি সারাদিন। ওসব আমার পোষায় না। যাদের প্রেম ঠুনকো ওসব তাদের জন‍্য। আমার তো প্রতি মুহূর্তই প্রেমের। এবার ঘুম পাচ্ছেরে অফ হয়ে গেলাম। গুডনাইট বেবি।" বলেই একটা স্লিপি ইমোজি পাঠিয়ে দিলো।
  রাগে গজগজ করতে থাকে টিয়া,"যাচ্ছেতাই একটা একদম বেরসিক। তোর হচ্ছে, দেখাচ্ছি মজা। " যথারীতি পরদিন থেকে কথা বলা কমিয়ে দেয় টিয়া,বুঝিয়ে দেয় যে ওর খুব রাগ হয়েছে। প্রতিম বারবার মেসেজ করছে।কখনো বা মিসড কল দিচ্ছে। মা এসে একবার চোখ পাকিয়ে বলে গেলো,"কে ফোন করছে রে বার বার।" বাধ‍্য হয়ে ফোনটা সাইলেন্ট করে দেয় টিয়া।

           অনেক কষ্টে ম‍্যানেজ করে টিয়াকে প্রতিম,একগুচ্ছ গোলাপ আর ক‍্যাডবেরি দিয়ে। তারজন‍্য একদিন গিয়ে দাড়াতে হলো মহারানীর কলেজে। প্রমিস করতে হলো ভ‍্যালেনটাইনস ডে সেলিব্রেশন হবেই তারপর তো হাসিমুখটা দেখতে পেলো। "ওহ সত‍্যি তুই একটা পাগলী,তোর জন‍্য আকাশের চাঁদটাকেও তো আনতে পারি। আর এইটুকু পারবোনা। ওরে আরেকটু হলেই তো হার্টের ধুকপুকানিই বন্ধ হয়ে যেতো। হাতটা রেখে দেখ একবার বুকে।"
......"আমার বয়েই গেছে হাত দিতে। কিপ্টে একটা,খরচের ভয়ে পিছটান দিচ্ছিস আমি সব জানি।"
.......টিয়ার গালটা একটু আলতো করে টিপে দেয় প্রতিম,"তা একটু আছে খরচের ভয় সোনা,এখনো তো বেকার। তবে টিউশনগুলো আছে তো তাই নো চিন্তা। আমার তো বেশি কিছু লাগেনা খুব সাধারণ ভাবে বাঁচতে চাইরে। বাবা ছোটবেলায় মারা গেছেন শুধু চাই মাকে একটু খুশি রাখতে। তোকে ভালো রাখবো যতটা পারবো,পারবিনা এই বাউন্ডুলেটাকে ভালোবাসতে?"
       চোখের কোলে এক ফোঁটা জল চিকচিক করে টিয়ার প্রতিমের কথাগুলো শুনে। সত‍্যি এভাবে একটা সামান‍্য কারণে এতটা রিআ্যক্ট করাটা একদমই উচিত হয়নি। " ভ‍্যালেন্টাইনস ডে তে আমার কিচ্ছু চাইনা শুধু তোর হাতে হাত রেখে কাটাবো সারাদিন।"
......"এই সরি রে, সারাদিন সময় দিতে পারবোনা। সকালে আমার একটা কাজ আছে,বিকেলে তোর সাথে কাটাবো, খুশি তো?"
....মেজাজটা আবার খারাপ হয়ে যায় টিয়ার,"বিকেল! তাহলে আর কতক্ষণ থাকা হবে? আমাকে তো ফিরতে হবে বাড়ীতে। ইশ্ ভাবলাম সেদিন শিবরাত্রির ছুটি কলেজ নেই, দুপুর থেকে আড্ডা মারবো। সব কিছুতেই জল ঢেলে দিলি।"
           ....." তোর উপোশ নেই শিবরাত্রিতে? এতো ভালো একটা শিব পেয়েছিস। শিবকে এবার একটু ভালো করে পূজো করিস।"
...."আমার বয়ে গেছে,আমি খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম করবো, ঘুমোবো।"
       ..."আচ্ছা তাই করিস,তাহলে বিকেলে। ঠিক আছে মহারানী ঝগড়ুটি।"

    ভ‍্যালেন্টাইনস ডের সকালে ঘুম ভাঙলো টিয়ার প্রতিমের আদরমাখা মেসেজে। কিছুক্ষণ চ‍্যাটে থাকার পর প্রতিম তাড়া লাগায় ওর কাজ আছে বেরোতে হবে। " সেদিন থেকে তো খুব বলছিস কাজ আর কাজ, কি কাজ শুনি?"
      একচোট হেসে নেয় প্রতিম," আছে সোনা, আই হ‍্যাভ প্রমিসেস টু কিপ।"
...."কার কাছে প্রমিস শুনি? তোর ক্রাশদের কাছে নাকি? মাথাটা ফাটাবো একদম।"
...." আচ্ছা বিকেলে থান ইট নিয়ে আসিস, মাথা পেতে দেবো। এখন বাইইই।"

   "ওহ্ একদম যাচ্ছেতাই বেরসিক একটা! কেমন তাড়াহুড়ো করে অফ হয়ে গেলো। কি যে কাজ কে জানে?"
       সারাদিন আর অনলাইনে দেখলোনা প্রতিমকে টিয়া, ফোনটাও সুইচড অফ্ দেখলো। মাঝে একবার ফোন করার চেষ্টা করেছিলো। তারপর বার বার ট্রাই করে সেই এক অবস্থা। কি যে রাগ আর টেনশন হচ্ছে বলার নয়। যদিও টাইম যায়গা সবই ঠিক করা আছে,তবুও টিয়ার মনে উঁকি মারে ভয় আর সন্দেহ। বলে গেলো প্রমিসেস টু কিপ, তাহলে কি অন‍্য কেউ আছে নাকি? দুমাসের প্রেমে এতোটা বিশ্বাস হয়তো করা উচিত হয়নি ছেলেটাকে।
       সেদিন ওর টিউশন ছিলো,তাই মাকে ম‍্যানেজ করা খুব একটা ব‍্যাপার হয়নি তবুও মধুবনী পেন্টিংয়ের লাল কুর্তিটা দেখে মা বললো,"এটা তো বুটিকের এক্সক্লুসিভ ড্রেস, আজ হঠাৎ এই ড্রেসটা? কি ব‍্যাপার শুনি?"
            জড়িয়ে ধরে মাকে আদর করে বলে," মা আজ মিঠি ওর বার্থডে ট্রিট দেবে,একটু দেরি হবে গো।"
....."প্রেম ট্রেম করছিস না তো? দেখিস বাবা, আজ তো আবার ভ‍্যালেনটাইনস ডে। আমার কথা কি আর শুনবি? বড় হয়েছিস চোখ কান খোলা রেখে চলিস। নিজের পায়ে দাঁড়ানোটা কিন্তু খুব জরুরী। পড়াশোনাটা নষ্ট করিসনা কিন্তু।"
           সেটা ভালোই জানে টিয়া মেয়েদের স্বনির্ভর হওয়াটা কত জরুরি। মাকে দেখে অনেকটা বুঝেছে টিয়া। আর ওকে তো মা বাবার পাশে দাঁড়াতেই হবে। সারাদিন উৎকন্ঠার মধ‍্যে থেকে, বেরোনোর আধঘন্টা আগে একটা ছোট্ট মেসেজ ঢুকলো, ফোনটায় একদম চার্জ ছিলোনা। যেখানে বলেছিলাম চলে আসিস।

       আজ মিঠি, তনুকা আর ওদের বন্ধুরাও আছে ওর সঙ্গে,কথা হয়েছিলো ওরা একসাথেই মজা করে কাটাবে। সবাই হৈ হৈ করে পৌঁছে যায় ওখানে। সবাই টিয়াকে আওয়াজ দেয়,"আজ তো চোখ ফেরানো যাচ্ছেনা, কি জানি প্রতিমটা আজ বোধহয় বোল্ড আউট হয়ে যাবে। দেখিস আবার আমাদের আউট করে দিসনা। আমাদের একটু ছোট্ট ট্রিট দিস,প্রথম প্রেমের ভ‍্যালেন্টাইন ডে বলে কথা, তারপরে আমরা চলে যাবো। ওরা আসাতে ভালোই হয়েছে,আসলে তনুকার বয়ফ্রেন্ড আবীর প্রতিমের বন্ধু।
       কিন্তু প্রতিম কোথায়? তখনো এসে পৌঁছয়নি। খুব রাগ হয় টিয়ার, মনে মনে বলে আসুক তারপর হবে। ভাবতে ভাবতেই ফোন," প্লিজ প্লিজ রাগ করিসনা,আমি একটু আটকে গেছি। কাছাকাছিই আছি,আবীর চেনে যায়গাটা। চলে আয় সোনা। ওরা আসতে চাইলে ওদেরকেও নিয়ে আয়। তুই আবীরকে দে আমি বলে দিচ্ছি।"
          রাগে গজগজ করতে করতে আবীরের হাতে ফোনটা ধরিয়ে দেয় টিয়া। মনে হচ্ছিলো,গোলাপগুলো ওখানেই ফেলে বাড়ী চলে যায়।
      ...."চল টিয়া প্রতিম কাছাকাছিই আছে,আমরা যাই। কিরে তোরা যাবিতো? ও তো সবাইকেই যেতে বললো।"
         অগত‍্যা আবীরই ভরসা,কারণ বন্ধুরা কেউ ওকে একা ছাড়বেনা।
    
            একটা দোতলা বাড়ীর গেটের সামনে ওদের নিয়ে আসে আবীর,মনে হয় যায়গাটা ওর চেনা। ছোট্ট করে লেখা একটা বোর্ডে "শান্তিনীড়"। একজনকে বেরোতে দেখে আবীর জিজ্ঞেস করলো," আচ্ছা প্রতিম কোথায়?"
             ভদ্রলোক ইশারায় ভেতরে দেখিয়ে দেয়। বেশ বড় বাড়ীটা,অনেকটা যায়গা নিয়ে তৈরি। ওরা সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে আসে দেখে চারিদিকে বেলুন দিয়ে সুন্দর করে সাজানো,সবই হার্টশেপের বেলুন,লাল রঙের। একটা হলঘরের ভেতর থেকে আসে মিউজিকের আওয়াজ। সুরটা চেনা টিয়ার যদিও পুরনো দিনের গান,"আজকাল তেরে মেরে প‍্যায়ার কা চর্চে হর জুবান পর সব কো মালুম হ‍্যায়।"
    ওরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করে,প্রতিমটা এখানে কি করছে? মনে তো হয় এখানে ভ‍্যালেন্টাইনস ডের পার্টি হচ্ছে। বুকটা কেঁপে ওঠে টিয়ার,প্রতিম কি তাহলে অন‍্য কারো? আজ ওই সত‍্যিটা জানানোর জন‍্য এখানে এনেছে? নাকি অন‍্য কিছু?
            হলঘরের বাইরে বসে থাকা ভদ্রলোক বলেন ওদের ভেতরে যেতে। টিয়ার মুখ দিয়ে কোন কথা বেরোয়না। চুপ করে একটা টেবিলের চারধারে ওরা বসে পরে। প্রতিম নাচছে বাজনার তালে তালে একজনকে জড়িয়ে ধরে,তারপর আবার একটু পরে অন‍্য কাউকে। এখানে হিরো শুধু প্রতিম কেবল নায়িকা পাল্টে যাচ্ছে একটু বাদে বাদে। এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে এগিয়ে আসছে প্রতিম নাচতে নাচতে। একসময় টিয়াকে নিয়ে যায় তুলে,গান তখন প্রায় শেষের দিকে। কোন বাধা দিতে পারেনা টিয়া,সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করে প্রতিমের কাছে। বন্ধুদের মোবাইলগুলো ক্লিক ক্লিক করে ছবি নিয়ে নেয়। গান আর নাচ শেষ হলে হাততালিতে সবাই ফেটে পরে।
              প্রতিম আ্যনাউন্স করে, " ডোন্ট বি জেলাস মাই প্রেটি গার্লফ্রেন্ডস। হেয়ার ইজ মাই বিলাভেড ভ‍্যালেন্টাইন টিয়া। আমার মনে হয় সবাই খুব এনজয় করছো তোমরা।" আবার হাততালি পরে, হাসির রোল ওঠে চারিদিকে।

                  এবার তোমরা একটু তোমাদের প্রেমের কথা শেয়ার করো। আমি কিন্তু কাউকে ছাড়বোনা,না বললে। মুগ্ধ হয়ে যায় টিয়া,এ কাকে দেখছে ও?
          এক এক করে সবাই একটু একটু করে প্রেমের গল্প শেয়ার করে। কারো প্রেম হয়েছিলো গ্ৰামের পথে সাইকেলে যেতে যেতে। কারো বা ঝগড়াতেই প্রেম। কেউবা আবৃত্তি করতে করতে প্রেমে পড়েছেন। আবার কারো প্রেম সরস্বতী পূজোর দিন। ওখানে বসে বসে টিয়ার মনও চলে গিয়েছিলো,কখনো বা পায়ে মল বেঁধে দিতে প্রেমে। আবার কখনোবা লাল ঢাকাই এর প্রেমে। আর ছিলো শুধুই মুগ্ধতা আর মনছুঁয়ে যাওয়া অনুভূতি।
           অসাধারণ একটা সুন্দর সন্ধ‍্যা প্রতিম উপহার দিলো টিয়াকে। আলাপ হলো অনেকগুলো ঠাম্মি আর দাদুর সাথে। একসময় যাদের সংসার ছিলো,যারা ছিলেন সংসারের সর্বময় কর্তা বা কত্রী। সংসার চলতো তাদের কথায়,আদরে আর শাসনে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তারা অপ্রয়োজনীয় হয়ে গেছেন সংসারের কাছে ফালতু জিনিসের মতো। আসলে অপ্রয়োজনীয় মানুষকে জিনিসের মতো ইচ্ছেমতো ফেলে দেওয়া যায়না ডাষ্টবিনে বা এক্সচেঞ্জ করাও যায়না। তাই সাধের আর ভালবাসার সংসার,আত্মীয়স্বজন ছেড়ে তাদের চলে আসতে হয় বৃদ্ধাশ্রমে আরেক নতুন জীবনের প্রত‍্যাশায়।
               কিন্তু সত‍্যি কি ভালোবাসারা মরে যায়? ভালোবাসার মৃত‍্যু বোধহয় কোনদিনই হয়না। নাইবা থাকলো ভ‍্যালেন্টাইনস ডে। আজ টিয়ার খুব মনে হলো মান্না দের গানের একটা লাইন," চাইনা বাঁচতে আমি প্রেমহীন হাজার বছর।"
            এই মানুষগুলোর জীবনেও তো একদিন প্রেম ছিলো,ভালোবাসার মানুষ ছিলো,সংসার ছিলো। হয়ত ছিলো খুব যত্ন করে আর পছন্দ করে কেনা খাট,আলমারি আর শাড়ি গয়নাও। সত‍্যিই কি মানুষ স্বেচ্ছায় তার এতোদিনের সংসার আর আপনজনকে ছাড়তে চায়? নাকি পরিস্থিতির চাপে ছাড়তে হয়?
            আর প্রেমের দিনে এই প্রেম ভালবাসা শুকিয়ে যাওয়া মনগুলোকে রাঙিয়ে দিলো প্রতিম। বাঁচুক ওরা জীবনের বাদ বাকি দিনগুলোতে এইভাবেই ভালোবাসার ছোঁয়া নিয়ে।
জীবনে থাক ভালোবাসা এভাবেই।
                   মন ছুঁয়ে যায় টিয়ার,সত‍্যি প্রথম ভ‍্যালেন্টাইনস ডে টা হয়ত চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে মনের মণিকোঠায়। আজ বড্ড গর্ব হলো প্রতিমের জন‍্য।
     ...."কি রে হিংশুটি আমার ওপর কিন্তু অনেকের ক্রাশ। আমি অনেক ছোট থেকে এখানে আসি,একসময় বাবা মারা যাবার পর মা এখানেই কাজ করতো। এটাই আমার আধখানা আকাশ। মানতে পারবি তো? আবীর সবটাই জানে,আমিই বারণ করেছিলাম বলতে।"
            আনন্দে আর ভাললাগায় টিয়ার চোখের কোলে একফোটা জল চিকচিক করে। কত কি ভাবছিলো এই ছেলেটার সম্বন্ধে।
...."আমি হয়ত বাউন্ডুলে একটা ছেলে কিন্তু প্রেমটা এক্কেবারে হানড্রেড পারসেন্ট খাঁটি। লাল রঙে কি সুন্দর লাগছেরে তোকে!এবার তো একটা টাইট হাগ দে আমায়।"
          দুহাতে জড়িয়ে ধরে টিয়া প্রতিমকে, মাথাটা রাখে বুকের খুব কাছে। একটা অশান্ত ধুকপুক শুনতে পায়,অনুভব করে একটা খাঁটি অনুভূতিপ্রবণ হৃদয়ের স্পন্দন। যেখানে শুধুই আছে এক পৃথিবী ভালোবাসা সবার জন‍্য।

সমাপ্ত:-

                  

  
           
       

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...