Skip to main content

ইচ্ছাপূরণ

#ইচ্ছাপূরণ#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

" ইয়াআআ লেটস হ‍্যাভ আ সেলেব"
......."আরে কি করছিস কি বুদ্ধিসুদ্ধি কি সব লোপ পেলো? এটা পাবলিক প্লেস বেবি।"
...."ইশ্ তাতে কি হয়েছে? এতো ভালো একটা খবর দিলি সেলিব্রেট করবো না! সত‍্যি কিছু ছুপা রুস্তম রে তুই?যাক বাবা আমার পকেটটা বাঁচবে এবার থেকে।এখন থেকে রেষ্টুরেন্টের বিল,ওলা,উবার আর ফিফটি ফিফটি নয়। সব তোর খরচ। তুম তো জেন্টেলম‍্যান বন গয়া। এত্তোবড় একটা মাল্টিন‍্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি,ওহ্ ভাবতেই পারছিনা। একটা জাদু কি ঝাপ্পি হয়ে যাক কি বল?"
                একটু আড়ষ্ট লাগে উত্তীয়র, ইচ্ছা যা পাগলী কিছুই অসম্ভব নয়। এখানেই হয়ত হাগ কিস সব করে ফেলবে।
               অনেকদিন ধরেই আসছে ওরা এই রেষ্টোরেন্টে,স্টাফরা সবাই মোটামুটি চেনা। ইচ্ছার বকবকানি সম্বন্ধে সবাই যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। তাই একটু কোণের দিকের সীটটাই ওদের জন‍্য বরাদ্দ। আর ওখানে বসতে বসতে ওটা মোটামুটি ওদের পার্মানেন্ট সীট হয়ে গেছে।
......আরে এইইই,স্ট‍্যাচু হয়ে গেলি কেনো? এমন আদর তো মাঝে মাঝেই করি,ও ওরা কিছু মনে করবেনা।"
.......তা আর আমি জানিনা,তবে আজকে উত্তেজনার পারদটা তো একদম তুঙ্গে, তাই একটু ভয় পাচ্ছি। তোর আবেগ,কান্না,খুশি আর মনখারাপ সবই তো একটু বেশি তাইতো মাঝে মাঝে ভাবি তবুও কেন যে তোকেই ভালোবাসি।"
........"ব্রেকআপের মতলবে আছিস নাকি রে? আমার হাত থেকে তোকে কেউ বাঁচাতে পারবেনা। ডনসে বাঁচনা নামুমকিন হ‍্যায়।"
........"মহিলা ডন এই যা" হাসতে থাকে উত্তীয়।ওরে তোর এই ভুলভাল হিন্দি থামা সোনা। ক্ষেপলেই হাজার একটা হিন্দি ডায়ালগ মারতে থাকে ক্ষেপিটা। মাঝে মাঝে এমন কাজ কারবার করে প্রেস্টিজ ঢিলে হয়ে যায়। এই তো কিছুদিন আগে গড়িয়াহাটে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো, হঠাৎই মায়ের মুখোমুখি, ঝাঁপিয়ে পরে মাকে প্রণাম করে আন্টি আন্টি করে প্রায় জড়িয়ে ধরে আরকি। কনভেন্টের প্রিন্সিপাল উত্তীয়র মা পরে বকুনি দিয়েছিলেন ছেলেকে। "তোমার ফ্রেন্ডসার্কেল কেমন যেন!এই মেয়েটা কে? কোন ম‍্যানার্স জানেনা,উহ্ কি হাইলি ইমোশনাল! রাস্তায় যা কান্ড শুরু করেছিলো।
......."ওর মনটা খুব ভালো মা,ভীষণ পরোপোকারী আর হাসিখুশি।"
                             শুধু একটা কথাই মাকে বলতে পারনি যে উত্তীয়র পকেটমানি কম পড়লে দরকার হলে ওর পুরো পার্সটাই দিয়ে দিতে পারে‌।
                  গ্ৰামের মেয়ে ইচ্ছা পড়াশোনার জন‍্য কলকাতায় এসেছিলো। খুব কমবয়স থেকে চেষ্টা করেছে স্বাবলম্বী হতে। কখনো স্ক্রীপ্ট লেখে,কখনো অনলাইনে সাজেশনস তৈরি করে দেয় আবার কখনো বা আ্যডএজেন্সির ছোটখাটো কোন কাজ। এইসব দিয়ে যা পায় ওর ছোটখাটো শখগুলো মিটে যায়। বাবার কাছে হাত পাততে হয়না। বরং বাড়ীতে চেষ্টা করে কিছু কিছু দিতে। বিভিন্ন রকম কাজ করার জন‍্য হাজার একটা লোকের সাথে আলাপ,আর লোকজনও ভালোবাসে ওকে। আর সম্পর্কের তো শেষই নেই। মাঝে মাঝে বকুনি খায় উত্তীয়র কাছে,"চেনা নেই জানা নেই বাবার বয়সী লোক দেখলেই মেসো,মামা,আঙ্কেল। আর মায়ের বয়সী মহিলা দেখলেই মাসিমা,আন্টি,মামীমা, পিশিমা। কি ব‍্যাপার বলতো? দাদু ঠাকুমাও আছে নাকি রে তোর? আজকাল কিন্তু বাবার বয়সী লোকজনও খারাপ হয় জানিস তো।
..."আরে এই সম্পর্কগুলোই তো থেকে যাবে। আমার তো সবাইকে ভালো লাগে বন্ধু হতে ইচ্ছে করে।
........." হুঁ তা আর জানিনা,ওই জন‍্যই তো ফেসবুকে গাদাগাদা বন্ধু। যাকে পারিস আ্যড করে নিস। যেদিন ঝামেলায় পড়বি,বুঝবি।''
       ....."আমার ম‍্যাজিক টাচে সবাইকে ভালো করে নেবো চিন্তা করিসনা। যাহ্ বাবা কতো প্ল‍্যান ছিলো তোর চাকরি নিয়ে। ভেবেছিলাম একটা শ‍্যাম্পেন দিয়ে সেলিব্রেট করবো,এমন ছুপকে ছুপকে খবরটা দিলি।"
                    
......." মন খারাপ করিসনা ক্ষেপি। এখন তো মুম্বইয়ে পোষ্টিং কিছুদিন বাদে হয়ত বাইরে পাঠাবে তখন দুবাই এয়ারপোর্ট থেকে পাক্বা আনবো শ‍্যাম্পেন।"
         গজদাঁতটা বেরিয়ে যায় ইচ্ছার হাসির চোটে। উত্তীয় একদিন বলেছিলো ওই হাসিটাই নাকি ওকে একদম কুপোকাৎ করেছিলো।
                  সব আনন্দের মাঝেও একটু খারাপ লাগে ইচ্ছার। অনেকটা দূরে চলে যাবে উত্তীয়টা। তবে কুছ পরোয়া নেহি,ভিডিও কল আছে,মেসেঞ্জার আছে। হাতের মুঠোয় তো এখন দুনিয়া।
            উত্তীয়র বাড়ীর লোকেরা এয়ারপোর্টে যাবে তাই ইচ্ছার আর এয়ারপোর্টে যাওয়া হয়নি।তবে খুশিমতো জাদু কি ঝাপ্পি আর আদরে আদরে ভরিয়ে দিয়েছিলো উত্তীয়কে। হয়তো তার সাথে মাখানো ছিলো অনেকটা চোখের জল আর হৃদয় থেকে ছলকে পড়া কয়েক ফোঁটা তাজা রক্ত।
             উত্তীয় চলে গেছে মাসদুয়েক,কাজ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে ইচ্ছা। তবে পুরোটাই শখ। অর্থকে খুব একটা প্রাধান‍্য দেয়না ইচ্ছা জীবনে। স্বভাবে বোহেমিয়ান ইচ্ছা যখন যা ভালো লাগে তাই করে,জুটেও যায় কিছু না কিছু। বন্ধুরা হাসে,"সারাদিন নিজেকে এনগেজ রাখিস কিভাবে? ইশ তোর কি এনার্জি! আমরা তো ল‍্যাদ খেয়ে মরি। তার ওপর তোর সমাজসেবাও আছে। কারো টিকিট কেটে দেওয়া,কারো ব্লাড জোগাড় করা। আবার কারো বিয়ের মার্কেটিং করে দেওয়া। রিয়েলি মা তুঝে সেলাম।"
                  সব কিছুর মাঝেও ভরসা সেই মুঠোফোন। সারাদিনই নেট অন করা থাকে ইচ্ছার। উত্তীয় মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত হয়।" কি করিস সারাদিন বলতো? কার সাথে এতো কথা তোর? যখনই দেখি অনলাইনে বসে থাকিস।"
......."এইইই মিষ্টার জেলাস,আমি অনলাইনে থাকি তোর জন‍্য হাঁদু। আর তুই অন থাকলেও আমায় তাকিয়ে দেখিসনা,সেই রাত্রিবেলা ছাড়া। আরে এইটুকু কথা বলে মন ভরে নাকি?
......"তুই তো একটা বকবকুম মাষ্টার,বক্তিয়ার খিলজী। আমার অত দম নেইরে। একদম নতুন জব,অফিসে খাটিয়ে মারছে। রাতে ঘুম পেয়ে যায় রে,পুরো চোখ বুজে আসে।"
......."আর কি তুই ঘুমো,আমার রাতজাগা অভ‍্যেসটা তো তুইই করে দিয়েছিলি। তাই কি করবো বল রাতে তো ঘুমই আসেনা। বিরহিনী রাই হয়ে রাত জাগি।"
               একলা হয়ে তবুও একলা হয়না ইচ্ছা,ওর মতো অনেক একলা মানুষ আছে ফেসবুক জুড়ে। সবাই বোধহয় কোন না কোন কারণে একলা। তাই ঘুম না এলে তাদেরই কারো সাথে কথা বলে নেয় ইচ্ছা ,তারপর একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। পেছনে লাগে ওর বন্ধুরা,আরে তোর তো হাজার একটা ফ‍্যান।
                      মাঝে কেটে গেছে একটা বছর,উত্তীয় খুব কমদিনের জন‍্য এসেছিলো, থাকতেই পারেনি। ওকে কাছে তেমন ভাবে পায়নি ইচ্ছা। খুব মন কেমন করেছে ওর। "এবারও ট্রিটটা বাকী রয়েই গেলো,ফাঁকি দিয়ে পালাচ্ছিস কিন্তু।"
            হবে হবে ইচ্ছাদেবী তোমার ইচ্ছাপূরণ, আমার দুবছরের প্রোজেক্টটা হয়ে যাক তারপর একদম শ‍্যাম্পেন আসবে আর তার সাথে গ্ৰ‍্যান্ড সেলিব্রেশন। তোর মন খারাপ দেখলে ভালো লাগেনা ক্ষেপি। জাদুকি ঝাপ্পিটাতো দিয়ে দে। চোখে জল আসে ইচ্ছার,কতদূরে চলে যাচ্ছে উত্তীয় একদম দেশের বাইরে! দুবছর কি করে কাটবে ওর? ভালো লাগেনা কিছু ভাবতে।
                  মেসেজের রঙ যেন একটু একটু করে ফিকে হতে লাগলো মাস ছয়েক বাদ থেকে। হয়ত ওই কথাটাই সত‍্যি,'আউট অফ সাইট,আউট অফ মাইন্ড', হঠাৎই একদিন ফেসবুকে আর খুঁজে পায়না উত্তীয়কে। ও জানায় এখন এখানে ভীষণ বিজি ও তাছাড়া ওর আ্যকাউন্টটা হ‍্যাক হয়েছে মনে হচ্ছে তাই ডিআ্যক্টিভেট করা আছে। হোয়াপেই মাঝে মাঝে কথা হোত কখনো ভিডিও কলে কথাও হোত। তবুও যেন ইচ্ছার মনে হোত কি যেন একটা মিসিং,সুতোটা আলগা হচ্ছে ধীরে ধীরে। সেই প‍্যাশনটা আর পায়না উত্তীয়র কথায়। সবসময় যেন ব‍্যস্ত ও ,আজ এখানে কাল ওখানে করে বেড়াচ্ছে। বড্ড একা হয়ে যায় ইচ্ছা,একদিন বুঝতে পারে হোয়াপ নম্বরটাও খুব বেশি ব‍্যবহার করেনা উত্তীয়। মেসেজ করার অনেক পরে উত্তর পায়,কখনো হয়তো দুদিনবাদে। কিছু করার ছিলোনা ওর। বুঝতে পারে অনেক কিছুর ভীড়ে হারিয়ে গেছে কোথাও উত্তীয়।
               উত্তীয় তখন হারিয়েছিলো কাজের সূত্রে আলাপ হওয়া মোহনার বন্ধুত্বে। যেন মনে হয়েছিলো মোহনা অনেক বেশি পলিসড্,ম‍্যানারড আর সুন্দরী। বেশ কাটতো উইকএন্ডগুলো। সত‍্যিই ক্ষেপিটা বড্ড বেশি ইমোশনাল সবসময় ভালো লাগেনা। উত্তীয়র আসলে আসল আর নকলে ফারাক করতে হয়ত একটা ভুল হয়ে গিয়েছিলো।
               খুব খুব একা হয়ে গিয়েছিলো ইচ্ছা,রাতে ঘুম আসতোনা। হয়ত প্রতীক্ষায় থাকতো। সবাই বলতো,ইচ্ছার ব্রেক আপ হয়ে গেছে। আসলে ব্রেক আপ আর ইন রিলেশন ব‍্যাপারটা এখন ঠিক পুতুল ভাঙার আর নতুন পুতুল কেনার মতো।
                তবে ফেসবুকটা ছাড়েনি ইচ্ছা। সত‍্যি ওখানে তো ওর অনেকের সাথে বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। নানান সম্পর্কে ডাকে ওদের,তাই হয়ত ব্রেক আপেও ফেসবুকই ওয়েক আপ করিয়ে রাখলো ইচ্ছাকে। একটু যেন বেশি আ্যডিকটেড হয়ে গেলো নানা রকম কাজে।
                 লেডিস হস্টেলে ওর রুমমেট পূর্বা বলেছিলো," ইচ্ছা এতো উল্টোপাল্টা লোকের সাথে চ‍্যাটে ভাট বকিসনা তো,কে কেমন হয় জানিস? সবাই কি তোর মতো এতো সরল হবে? ব্রেকআপের পর কি সত‍্যি পাগল হয়ে গেছিস নাকি? সত‍্যি আমার খুব খারাপ লাগে তোর জন‍্য।'
              হাসতে হাসতে ইচ্ছা বলে,"পারিনা,আমার ব্রেক আপে তোর মন খারাপ! ধুৎ ছাড়তো। একটা আইডিয়া এসেছে রে। বেশ কয়েকদিন ধরেই ভাবছিলাম,শুনবি?"
                 পূর্বাকে বলতেই ও লাফিয়ে ওঠে,"সত‍্যিই তুই একটা ক্ষেপি,এই জন‍্যই বোধহয় উত্তীয় তোকে ছাড়লো। মাথার মধ‍্যে সবসময় পোকা নড়ছে। আর তোকে বোঝালেও তো বুঝবি না। যা খুশি কর,পরে কিছু হলে আমায় বলতে আসিসনা।"
              শুরু করে দেয় ইচ্ছা,ইচ্ছাপূরণের স্বপ্ন দেখাতে। একাকীত্বের রাত্রি বা দুপুরগুলোতে কিছু মানুষের ছোট ছোট ভালোলাগাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে। সত‍্যি লাইফটা একদম বোরিং হয়ে গিয়েছিলো,এতো ফাষ্টু খাওয়া লাইফ কার ভালোলাগে। সারাদিন নিজের মনকে সেই উত্তীয়র চারপাশে প্রদক্ষিণ করানো হয় ওর আ্যটেনশন ড্র করা,ওকে খুশি রাখা। আর নাহলে চ‍্যাটে থাকা কখন একটা মেসেজ পাঠাবে। ধুৎ কি লাভ হলো? সেই তো সুতোটা ছিঁড়েই গেলো। এখন মনে হয় জাষ্ট সময় নষ্ট। আসলে জীবনে প্রেমে থাকা ছাড়া হয়তো আরো কিছু করার আছে,যা এখন ধাক্বা খেয়ে বোঝে ইচ্ছা।
              নিজেকে সত‍্যিই একটা ক্ষেপি মনে হয় ইচ্ছার। তবে কেমন যেন একটা অদ্ভুত বন্ধুত্ব হয়ে গেছে এই পাগলামির সাথে। তাই ছাড়তে ইচ্ছা করেনা। বয়েই গেছে ওর কারো জন‍্য নিজেকে পাল্টাতে। তবে সত‍্যি এবার মাথায় আসে ইউনিক ভাবনা।
             আসলে ইচ্ছার ইচ্ছাশক্তিটা অন‍্য মেয়েদের চেয়ে অনেক বেশি,সার্থক নাম দিয়েছিলেন ওর দাদু। তাই বোধহয় ইচ্ছাপূরণের স্বপ্ন দেখতে আর দেখাতে চায় সবাইকে ও। ওর নতুন ইনোভেশন "ইচ্ছাপূরণ"। ইচ্ছা ঠিক করেছে ওর " ইচ্ছাপূরণ"মানুষকে দেবে জীবনে চলার পথে কিছু ছোট্ট টিপস্। সত‍্যিই তো অনেকেরই একটু সাজেশন পেলে ভালো হয়,কারো বা সাহায‍্য। কখনো অনেকের দরকার হয় মনটাকে হাল্কা করার জন‍্য কোন ভালো বন্ধুর বা একটু পরামর্শ। কেমন হয় সেই কাজটা করলে?
                 হঠাৎই চিন্তাটা কেটে যায়। মোবাইলে মেসেজ আসছে..."গুডমর্ণিং"
......মর্ণিং,ভালো কাটাও সারাদিন কুহেলীদি।"
.....একটু হেল্প করবি?
.....সিওর,বলো।
.....আমার একটা পার্টি আছে,কি শাড়ী পরবো বলতো?
.....তোমার গাঢ় সবুজ বা নীল আর লাল পাড়,তার সাথে জরির ছোঁয়া দেওয়া শাড়ী আছে না?
.....আচ্ছা তোকে পাঠাচ্ছি কয়েকটা ছবি
....ওকে
....আরে এইতো। হ‍্যাঁ এই ব্লুটা দারুণ যাবে। আর এর সাথে কোন মণিপুরী ডিজাইনের সোনার গয়না বা রেড সেমিপ্রেশাস স্টোনের অর পার্ল ট্রাই করতে পারো। আইলাইনারে একটু ব্লু শেড ভালো লাগবে।
.....থ‍্যাংকস আ লট ডিয়ার।
                  কুহেলীদিকে ছাড়তেই মেসেজ ঢোকে,
......হাই! কাল গার্লফ্রেন্ডের বার্থডে কি দিই বলতো? বাজেট কিন্তু কম।
.......তুমি নিউমার্কেটে চলে যাও ওখান থেকে সুন্দর পটে একটা ছোট বনসাই,কিছু সেন্টেড ক‍্যান্ডেল আর দোতলায় যে দোকানটা আছে ওদের দারুণ ইয়াররিঙ এর কালেকশন ওখান থেকে একটা মিষ্টি দুল কিনে দাও। ছোট বনসাই আর বোলে সেন্টেড ফ্লোটিং ক‍্যান্ডেল ভাসিয়ে,গার্লফ্রেন্ডের ঝুমকো পরা কানে হয়ে যাক প্রেমের গোপন কথা।
                   একটু বাদেই ফোন আসে,"ইচ্ছাদি কোন মেডিসিন শপে অক্সিজেন সিলিন্ডার পাবো বলতো?"
           কথা শেষ না হতেই কল্লোলদা,"টেনথ আ্যনিভার্সারি বৌকে একটু সারপ্রাইজ দিতে চাই। বাজেট কম,হাতে দিন কম। একটু সাজেস্ট করো।
......এখন তো বসন্তকাল,চলে যাও পুরুলিয়া,লাল পলাশের রঙে রাঙা হয়ে আবার রক্তিম হয়ে উঠুক তোমাদের প্রেম। ওয়েট আমি তোমায় রিসর্টের ফোননম্বর দিচ্ছি।
.........আবার চোখ রাখে মেসেজে ইচ্ছা, করবী মাসিমা।
....."একটু হেল্প করবে। বৌমা তো বাইরে থাকে,ওর জন‍্য কয়েকটা শাড়ী পাঠাবো। তোমায় ছবি পাঠাবো একটু পছন্দ করে দিয়োনা। আগের বারের গুলো ওর খুব ভালো লেগেছে।"
......ওয়েট আমি তোমায় একটা ভালো বুটিকের ঠিকানা দিচ্ছি,দারুণ কালেকশন ওদের।"
                   চায়ের কাপটা হাতে নিতেই ...."অন আছো? একটা ভালো নতুন রেষ্টোরেন্ট বলোনা। তোমার আন্টিকে নিয়ে যেতে চাই আমাদের টোয়েন্টি ফিফথ আ্যনিভার্সারিতে। নতুন কিছু বোলো বাট বেষ্ট হবে ।
......আচ্ছা একমিনিট জানিয়ে দিচ্ছি। নো চিন্তা,আরে ইচ্ছা তো আছে ইচ্ছাপূরণের জন‍্য।
               নিশ্চয় আপনাদেরও অবাক লাগছে,কি করছে ইচ্ছা? জানা অজানা সবাইকে নানা টিপস দিয়ে যাচ্ছে!
                এটাই ইচ্ছার নতুনভাবে,নতুন উদ‍্যমে ভালো থাকার আর ভালো রাখার একটা ছোট্ট চেষ্টা। সত‍্যিই তো আমাদের নিজেদের পাওয়া আর না পাওয়ার হিসেব করতেই জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়ে দিই। কখনো আনন্দ পাই আবার কখনো দুঃখ। ইচ্ছা চেষ্টা করে ওর সাধ‍্যমতো মানুষকে সাহায‍্য করতে,ওদের ছোট ছোট ইচ্ছাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে। অবশ‍্য অনেক সময় কেউ কেউ খারাপ ইচ্ছেও প্রকাশ করে। ভালো খারাপ সব মিলিয়েই তো মানুষ।
            ইচ্ছাকেও এরজন‍্য অনেক খোঁজখবর রাখতে হয়,নার্সিং হোম,হসপিটাল,ফুলের বুটিক,শাড়ীগয়নার দোকান হোটেল,রেষ্টুরেন্ট,ট্রেন,বাস সব খোঁজই রাখতে হয়। এখন অনেকেরই অনেক আনন্দ আর দুঃখের সঙ্গী ইচ্ছা।
                     আর ফালতু সময় নষ্ট করতে ইচ্ছা করেনা ইচ্ছার, অন‍্যের মেসেজের রিপ্লাই পাওয়ার জন‍্য হা পিত‍্যেশ করে বসে থাকা ভাবলেই খারাপ লাগে। প্রথমে হয়ত নিজের মনখারাপ কাটানোর জন‍্যই চেয়েছিলো অন‍্যদের ইচ্ছেগুলোকে দাম দিতে। এখনতো ওদের ফিডব‍্যাকগুলোই ওদের পরম প্রাপ্তি।
                       ...." তোর টিপসে ম‍্যাচিংটা পারফেক্ট ছিলো,লাভ ইউ সো মাচ।''
........."বৌমার খুব পছন্দ হয়েছে গো শাড়ীগুলো।"
......"তোমার বৌদি তো মুগ্ধ,বলেছে পলাশ বিছোনো পথে পাশাপাশি হাঁটতে চায় বছরের পর বছর।"
             এরই মাঝে স্ক্রীপ্ট লেখে ইচ্ছা,সবাই আ্যপ্রিসিয়েট করে।
        " ইচ্ছাদি ফ্রি আছো? এই কবিতাটা কৃশানুকে শোনাতে চাই আমাদের বাসরে,একটু কারেকশন করে দিয়ো প্লিজ,কোনো তাড়া নেই।'
               বিয়ের সাতদিন বাদে উচ্ছ্বসিত গলা শুনতে পায় রূপার। ওতো বললো এমন কবিতা শোনালে সাতজন্ম কেন প্রতি জন্মে শুধু আমাকেই চাইবে,হা হা হা। মনটা ছুঁয়ে যায় ইচ্ছার।
                  আজকাল পূর্বা আর নাতাশাও মাঝে মাঝে ইচ্ছাপূরণের কাজে সাহায‍্য করে। " সত‍্যি তুই ইউনিক,যেখানে ব্রেক আপের পর অনেকেই নতুন কাউকে খোঁজে সেখানে তোর এই ইচ্ছাপূরণ জাস্ট দুর্দান্ত।"
                          সত‍্যিই ভালো আছে ইচ্ছা,তবুও মাঝে মাঝে হয়ত খোঁজে উত্তীয়কে। অনেকটা সময় কেটে গেছে মাঝে। ইচ্ছার ব‍্যস্ততা তুঙ্গে,রাতজাগার অভ‍্যেসটা সত‍্যি কাজে লেগে গেছে।
               ইচ্ছাপূরণের মেসেজ বক্সে একটা মেসেজে চোখটা আটকে যায় ইচ্ছার......
     " কয়েকদিন ধরে রেষ্টুরেন্টের কোণের টেবিলটায় বসি দেশে ফেরার পর থেকে,যদি তুই একবার আসিস। আসবি একবার? আয়না রে,শ‍্যাম্পেনের বোতলটা যে তোকে ছাড়া খোলা যায়না।''
             চোখটা ঝাপসা হয়ে যায় ইচ্ছার, পূর্বা বলে "একদম যাবিনা ,থাক বসে চুপ করে।নিশ্চয় ল‍্যাং খেয়েছে কোথাও থেকে। এমনি হয় ছেলেগুলো।''
                   সত‍্যিই মোহনা টাইমপাশ করেছিলো উত্তীয়কে নিয়ে কিছুদিন,আসলে সবার সঙ্গে সবার হয়ত যায়না। এই কথাটা শুনেছিলো মোহনার কাছেই। খারাপ লেগেছিলো খুব।
                    রেষ্টোরেন্টের কোণটা আবার জমেছে ওদের কথায়,তবে আজ ছবিটা উল্টো উত্তীয় আজ বেশি কথা বলছে। ইচ্ছা শুধুই শ্রোতা,ও যে শুধু উত্তীয়র ইচ্ছাপূরণের জন‍্যই এসেছে। এখন যে ওটাই ওর কাজ। আর উত্তীয়র ইচ্ছা বলে কথা না পূরণ করে কি ও পারে?
                     রাত জাগে এখন ঊত্তীয়, দেখে ইচ্ছার ছবির পাশের সবুজ লাইটটা জ্বলছে। শ‍্যাম্পেনের বোতলটা হাসিমুখে বন্ধুদের সাথে খুললেও উত্তীয় বোঝে ও আর এখন ইচ্ছার প্রায়োরিটি লিষ্টে নেই । ছবিটা একটু পাল্টে গেছে। এখন উত্তীয়কে অপেক্ষা করতে হয় কথা বলার জন‍্য, সবসময় রিপ্লাইও দিতে পারেনা ইচ্ছা,হয়ত বা ব‍্যস্ততার জন‍্যই। ইচ্ছা অনেক পরিণত এই দুবছরে, একজনের ভালোবাসা হারিয়ে লুকিয়ে কাঁদা ইচ্ছার মনটা আজ সমৃদ্ধ অনেকের ইচ্ছাপূরণের আনন্দে।
            সমাপ্ত:-
              
              
                 
            
       

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...