Skip to main content

হ‍্যাপি এন্ডিং

#হ‍্যাপি_এন্ডিং#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

"আচ্ছা ঐ শাড়িটা একটু দেখি,আপনাদের আর আগের মতো কালেকশন নেই। পূজোর সময় এতোদূর থেকে এলাম কষ্ট করে।"
..."কি বলছেন ম‍্যাডাম! আমাদের সব শাড়িই এক্সক্লুসিভ,সবই মোটামুটি সিঙ্গেল পিস বানানো হয়। এমন সুন্দর ভ‍্যারাইটি আর কোথাও পাবেন না। সবগুলোই একদম নতুন পূজোর জন‍্য,আচ্ছা এই শাড়ীগুলো দেখুন তো,কালই এসেছে।"
      ....ইশ্ খুব লাউড কালার! কি গো কিছু বলো,শুধু সাথে আসো আর কোন মতামত দাওনা। কি করতে যে আসো কে জানে।"
            মনে মনে হাসেন সুবিমল আর স্বগতোক্তি করেন ড্রাইভার কাম কুলির কাজ করতে আসা। এই তো চলছে এতো বছর ধরে গিন্নির ইচ্ছাই শিরোধার্য। আর তাতেই শান্তি বজায় থাকে। মোটামুটি বত্রিশ বছর ধরে তো তাই করছেন হাসিমুখে।
         দক্ষিণাপণে অনেকদিন বাদে এসেছে মণিকা,সত‍্যি কথা বলতে বিরাটি থেকে এতো দূরে সবসময় আসা হয়ে ওঠেনা। তারপর আজকাল হাঁটুর ব‍্যাথাটাও বেশ বেড়েছে। এবার মেয়ের আবদার দক্ষিণাপণের খাদি এম্পোরিয়ামের সিল্কই তার চাই তাই চলে আসা এখানে। মণিকার নিজেরও কম বয়সে বিয়ে হয়েছিলো,মেয়ের বিয়েও দিয়েছে কমবয়সেই।বছর চারেক হলো মেয়ের বিয়ে দিয়ে মণিকা এখন শুধু শাশুড়িই না দিম্মাও হয়েছে কিছুদিন হলো। তবে মেয়ে অনেকটা দূরে চলে গেছে এখন আপাতত ব‍্যাঙ্গালুরুতে এরপর হয়ত বাইরে চলে যাবে। এখন বাড়ীতে শুধু কর্তা গিন্নী আর দিনরাত মিষ্টি ঝগড়া। সুবিমল বলেন প্রেমের প্রলাপ,ওটুকু না থাকলে ঠিক জমেনা।
             সামনে একগাদা শাড়ি জমে গেছে,সুবিমল মনে মনে ভাবছেন ভাগ‍্যিস দুপুরবেলা এখন খুব একটা ভিড় নেই দোকানে। মণিকা তো পুরো দোকানটাই নামিয়ে ফেলবে মনে হচ্ছে। চারটে শাড়ি পছন্দ করে মেয়েকে ভিডিও কল করে বকুনি খায়," ওহ্ মা এখন অফিসে আছি। তুমি ছবি তুলে হোয়াপে পাঠিয়ে দাও আমি দেখে নিচ্ছি। "
           যুগের সাথে সাথে তাল রেখে কিছুটা আধুনিক হতে হয়েছে। মেয়ে দুটো সিলেক্ট করে,বলে দেয় আরো একটা পছন্দ করে নিতে আর মণিকা যেন নিজের জন‍্যও দুটো কেনে।
            একটু বিরক্তি নিয়ে বলে," এগুলো পছন্দ করতেই হয়ে গেলো,আবার আমার জন‍্য নিতে বলছে। এখনো তিনটে বাকি মহা ঝামেলা।"
       সুবিমল হেসে বলেন,"আরে ঝামেলার কি আছে? আরো পঞ্চাশখানা মতো দেখো,হয়ে যাবে।"
         সুবিমলের চিমটি কাটা কথায় মাথাটা গরম হয়ে যায়,তবুও দোকান বলে কিছু বলতে পারেনা।
      শাড়ি দেখতে শুরু করে মণিকা,এরমাঝেই প্রায় চার পাঁচজন একসাথে এসে ঢোকে। নিজেরগুলো নিয়েই ব‍্যস্ত ছিলো,ওরা উল্টোদিকের কাউন্টারে কিনছে। হঠাৎই কানে আসে সবাই যেন একজনকেই বলছে শাড়ি পছন্দ করে দিতে আর তার পছন্দ করা শাড়ি নিয়ে মোটামুটি কাড়াকাড়ি চলছে,"ইশ্ তুই এটা নিয়ে নিলি! এই ব্লু টা আমার খুব ফেভারিট। মুখ ঘোরায় মণিকা দেখে সুবিমলও মুগ্ধ চোখে ওদের কেনাকাটা উপভোগ করছে।
               ভদ্রমহিলার পেছনটা দেখতে পায় মণিকা,যিনি ওই দলের মধ‍্যমণি। কি স্টাইলিশ একখানা ব্লাউজ পরেছে,সত‍্যি পিঠেই চোখটা আটকে যায়। পিঠের কাটা ডিজাইনটার ঠিক মাঝখানে একটা কৃষ্ণের বাঁশী হাতে ট‍্যাটু,সেই জন‍্যই বোধহয় পিঠটা এতো স্টাইলে কাটা। এভাবে দেখাটা ঠিক নয়। মুখটা আবার শাড়ীর দিকে ফেরায় মণিকা। হঠাৎই কানে আসে ,"ওহ্ এটা আমার ফেভারিট কালার, এটা আমি নেবো, কি রে একদম বসন্তের লাল পলাশের রঙ। বলনা আমায় ভালো লাগবে তো?"
......"আরে এটা তো তোমার জন‍্যই তৈরি হয়েছে,যা লাগবে না তোমায়,তুমি যা সুন্দর সুন্দর রঙের শাড়ি পছন্দ করো ওহ্ দুর্দান্ত অথচ তোমার সবই এক দেখাতেই পছন্দ করা!"
          কথাটা কানে আসে মণিকার,কি মজা করে এরা শপিং করছে,একজনের শাড়ি আরেকজন পছন্দ করছে। আর ও রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে পছন্দ করা নিয়ে। ওর কর্তাটি তো সাক্ষীগোপাল, শুধু সঙ্গে আসে এই যা। তার মাঝেই শুনতে পায়," তোরা কিনতে থাক,আমার পছন্দ করাটা নিয়ে নিস। আমি একটু গুর্জরীতে ঢুকছি। খুব ভালো কালেকশন এসেছে দেখলাম।'
                শপিং করে ধোসা আর কফি খেয়ে বাইরে বেড়িয়ে আসে মণিকা। সুবিমল গাড়ির দিকে যায় প‍্যাকেটগুলো নিয়ে। "তুমি যাও আমি একটু বাইরের জুয়েলারীগুলো দেখবো।"
            মনে মনে হাসেন সুবিমল ইশ আরো কতক্ষণের ধাক্কা কে জানে। তার চেয়ে পার্কিংয়ে থাকা ভালো। আরেকবার নাহলে লিকার চা খেয়ে নেওয়া যাবে।
           একটু এগিয়ে যেতেই আবার নজরে পরে ট‍্যাটু আঁকা পিঠে," বাবা এখানেও ওরা! জিনিস কিনছে। সত‍্যি আজ মনে হয় পুরো বাজার নিয়ে যাবে সাথে করে।"
            ভদ্রমহিলার মুখটা একটু সাইড থেকে নজরে এলো,কেন যেন খুব চেনা চেনা লাগলো মনে হলো যেন কোথায় দেখেছে। খুব মনে করার চেষ্টা করলো। যদি একবার সামনে থেকে দেখা যেতো! কিন্তু এভাবে দেখাটা ঠিক নয়। ইশ কেন যে মনে পড়ছেনা। কয়েকটা গয়না কিনে গাড়ী পার্কিং এর দিকে এগোয় মণিকা।
             হঠাৎই কানে আসে ,"বেশ দম লাগিয়ে ঝাল আর টক মারোতো ভাই।' থমকে দাঁড়ায় ও রুমেলা না,এই কথাটা কতবার ওর মুখে শুনেছে ফুচকা খেতে যাবার সময়। একটা কথাই কেমন যেন চিনিয়ে দিলো ওর একসময়ের ক্লাশমেটকে।
              ওরই তো রুমমেট ছিলো হস্টেলে। বিশ্বভারতীতে পড়তো ওরা। ওদের বন্ধুত্বটা সত‍্যিই খুব গাঢ় ছিলো। খুব ইচ্ছে করে রুমেলার সাথে কথা বলতে, ইশ্ কতদিন বাদে দেখলো ওকে! সময়ের সাথে সাথে কোথায় যে সবাই ছিটকে পরেছে কোন যোগাযোগও নেই দুএকজনের সাথে ছাড়া। তাছাড়া খুলবো খুলবো করেও ওর ফেসবুকে আ্যকাউন্টটা খোলা হয়নি, মেয়ে সুবিমলকে খুলে দিয়েছে ওতেই কাজ হয়ে যায়। আর সংসার করে সিরিয়াল দেখে অতদিকে মন দেওয়া যায়না। পড়তে পড়তেই তো বিয়েটা হয়ে গিয়েছিলো বেশ কম বয়সে। আজ রুমেলাকে দেখে সত‍্যি মনটা খুশি হয়ে গেলো। খুব বন্ধুত্ব ছিলো ওদের কিন্তু একটা বিচ্ছিরি অশান্তিতে মনটা ভেঙে গিয়েছিলো,বন্ধুত্বটাও নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। মানে ওই সরে গিয়েছিলো আর মেনে নিতে পারেনি রুমেলাকে।না থাক, কি দরকার পুরনো কথা ভেবে?কে জানে চিনতে পারবে কিনা,এই ভেবেই এগোতে যায়।
                        সবেই একটু এগিয়েছে এমন সময় পেছন থেকে কে যেন গলাটা জড়িয়ে ধরে," হাই প্রেটি লেডি! আমায় ফাঁকি দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিস। আমি তো তোকে গয়নার দোকান থেকেই ফলো করছি। দেখছি তুই কি করিস? যদি না চিনে চলে যাস ,একদম খপ্ করে ধরবো। কতদিন বাদে দেখা কি যে মিস করেছি তোকে।আসলে মন থেকে কিছু চাইলে বোধহয় সত‍্যিই পাওয়া যায়। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম তুই হঠাৎ বিয়ে করে চলে যাওয়াতে। কত চিঠি লিখেছি,কোন উত্তরও দিসনি। কেন রে কি করেছিলাম আমি? আর এতো বছর বাদেও রাগ করে আছিস!"
                নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা মণিকা, সামলাতে পারেনা চোখের জল। সত‍্যিই তো ওর খুব মনে হোত রুমেলার কথা। তবে সেভাবে খোঁজার চেষ্টা করেনি কখনো। দক্ষিণাপণের সামনে অনেকবছর বাদে দুই বান্ধবী আবার একসাথে। দুজনের চোখেই আজ জল। কিছুক্ষণ বাদে কথা বলে রুমেলাই," শুধু কাঁদলেই হবে একটা বোকাবুড়ি কোথাকার, চিরকাল এক রয়ে গেলি,শুধু কথায় কথায় কান্না। তোর কর্তাকে ডাক এখন বাড়ী যাওয়া হবেনা। জমিয়ে আড্ডা দেবো, কত কথা জমে আছে সেগুলো একদম বস্তা থেকে বার করবো,খাবো তারপর যাবি। তোর বিয়ের খাওয়া টা কিন্তু পাওনা আছে। সেলফিশ একটা বিয়েতে নেমতন্ন করলিনা। খুব রাগ হয়েছিলো আমাদের।"
               মুখ তোলে মণিকা রুমেলার সঙ্গে অনেকগুলো একদম ইয়ঙ্গ মেয়ে,ওর মেয়ের বয়সী। ওরাও মুগ্ধ চোখে দেখছে দৃশ‍্যটা।
                    " তোমাদের সাথে আলাপ করিয়ে দিই আমার খুব খুব ভালো বন্ধু মণিকা কিন্তু একটু কাঁদুনে এই যা,এখনো একইরকম আছে।আর এরা আমার লেডিস হস্টেলের বন্ধুরা। একতলাটা হস্টেল করে দিয়েছি। ভালো থাকি ওদের সাথে আড্ডা দিয়ে। ওরাও আমায় ভালোবাসে।এই নে ফুচকা খা আগে, আর শোনো বাচ্চেলোগ তোমরা বাড়ি চলে যাও। আমার ফিরতে দেরি হবে। আমি বলেই এসেছি সব,তোমাদের ডিনার,চা সব পেয়ে যাবে।
                          জমিয়ে আড্ডা আর খাওয়া হয়। রুমেলা এখনো সুন্দরী,কি সুন্দর ওয়েল মেইনটেইন্ড। কলেজে পড়ায় এখন।বললো তো  সংসার করে কিন্তু অন‍্যরকম সংসার আর পাঁচটা মেয়ের মতো নয়। সুবিমল তো মুগ্ধ ওকে দেখে। মনে মনে ভাবলেন যদি বৌটা একটু ভালো থাকে, এমন বান্ধবীকে দেখে। সারাক্ষণই তো হাঁটু ব‍্যাথা,কোমরে ব‍্যাথা,গ‍্যাস,অম্বল লেগেই আছে। আর ভালো লাগেনা। মেয়ের বিয়ে দিয়েও শান্তি নেই খুঁটিনাটি সব খবর রাখবে মেয়ের,টেনশন করবে আর উপদেশ দেবে। কাজকম্ম না থাকলে যা হয়। অনেক কথার মাঝেও মণিকা বলতে পারলোনা কেন ওদের বন্ধুবিচ্ছেদ হয়েছিলো,যদিও রুমেলা বার বার জিজ্ঞেস করছিলো। এতোবছর বাদে কি লাভ, বিশেষ করে সুবিমলের সামনে পুরোনো কথা বলে। যেকথা সেদিনই বলতে পারেনি মুখ ফুটে।
                      হস্টেলে এক ঘরে থাকতো ওরা,জামাকাপড়,খাবারদাবার সবই লুটপাট করে  নিতো। যার যখন যেটা লাগতো। রুমেলা ছিলো খুব বড়লোকের একমাত্র মেয়ে তেমন সুন্দরী আর পড়াশোনায় ভালো। তেমন সুন্দর ওর রুচি পছন্দ। বসন্ত উৎসবের সময় সবাই বোধহয় তাকিয়ে থাকতো মুগ্ধ হয়ে রুমেলার দিকে।আর রুমেলার বন্ধু বলে মণিকারও ভালো পরিচিতি ছিলো।ছেলেরা ওর সাথে একটু কথা বললেও ধন‍্য হত। অনেকেই চাইতো ওর রাঙা মুখটাকে আবীরে রাঙাতে। কিন্তু ও পাত্তা দিতোনা তেমন কাউকে। তবে বন্ধু ছিলো অনেক,খুব আড্ডা দিতে ভালোবাসতো। আসর জমাতে ওস্তাদ ছিলো ও।
             মণিকাই আলাপ করিয়ে দিয়েছিলো মৃগাঙ্কদার সাথে ওর,মণিকাদের ডিপার্টমেন্টের টপার। যেমন ভালো কথা বলতো তেমন সুন্দর আবৃত্তি করতে পারতো কিন্তু খুবই গরীব ঘরের ছেলে। মৃগাঙ্কদার বুদ্ধিদীপ্ত গভীর চোখদুটোতে হারিয়ে যেতো মণিকা। আবৃত্তি শুনতে শুনতে ওর মনটা চলে যেতো কোন অলকাপুরীতে,বা ঝিলমের তীরে অথবা রডোডেনড্রনের জঙ্গলে।  মৃগাঙ্কদাকে মনে মনে ভালোবেসে ফেলেছিলো মণিকা। কিন্তু মৃগাঙ্কদার ব‍্যক্তিত্বের কাছে এসে কেমন যেন নত হয়ে যেত। কাজের প্রয়োজনে কতই হেঁটেছিলো লালমাটির পথে পাশাপাশি,কখনো বসতো ছাতিমতলায়।তবুও অধরা ছিলো ভালোবাসা। মৃগাঙ্কদার চোখে কখনো ভালোবাসা দেখেনি মণিকা সবসময় ব‍্যস্ত থাকতো বিভিন্ন কাজে।রুমেলাকেও কিছু বলা হয়নি কখনো।
                     সেবার বসন্তউৎসবে ওরা একসাথে রাঙা হয়েছিলো বসন্ত ঋতুর মনে দোলা দেওয়া রঙে।
রুমেলাও রাঙা হয়েছিলো মৃগাঙ্কদার অনুরাগের লাল রঙে। গভীর কালো চোখে হয়ত রুমেলা দেখেছিলো ওর সর্বনাশ। রক্তিম হয়েছিলো প্রেমের রঙে।
                 মণিকা কিন্তু বুঝতেই পারেনি,রুমেলা কখন যে ওদের মাঝে ঢুকে পড়েছিলো। হস্টেলের সামনের মাঠে যখন মৃগাঙ্কদা আবৃত্তি করতো গলা মেলাতো রুমেলাও। কখনো রুমেলার গান শুনে ওর গভীর হাল্কা নীলচে চোখের সাগরে ডুব দিতো মৃগাঙ্কদা। চোখ এড়াতোনা মণিকার। খুব দুঃখ পেয়েছিলো যেদিন আবছা অন্ধকারে খুব কাছাকাছি অবস্থায় দাঁড়িয়ে মৃগাঙ্কদাকে দেখেছিলো রুমেলার আদরে ভিজতে। শেষ চেষ্টা করেছিলো একবার," মৃগাঙ্কদা রুমেলার মতো মেয়েরা আগুনের মতো,তুমি সরে যাও। ও শুধু পোড়ায় ভালোবাসাকে। তুমি পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। ওর গুণমুগ্ধ অনেক।"
            মৃগাঙ্কদা বলেছিলো," মানুষ চিনতে আমার ভুল হয়নারে। আমার মতো একটা ছোট্ট পতঙ্গ না হলে পুড়েই মরবো। কি এসে যায় তাতে?"
            দুঃখে ঘেন্নায় হস্টেলে এসে খুব কেঁদেছিলো,সব ছেলেরাই আসলে সুন্দরের পূজারী। ও ভেবেছিলো মৃগাঙ্কদা হয়তো একটু অন‍্যরকম হবে। মৃগাঙ্কদাও এমন! অনেকদিন ধরেই একটা ভালো সম্বন্ধ এসেছিলো,ওদের খুব পছন্দ মণিকাকে। বাবাও জোর করছিলেন তাই আর আপত্তি করেনি। মাঝে শুধু এসে পরীক্ষাটা দিয়ে গিয়েছিলো। রুমেলা অনেক জিজ্ঞেস করেছিলো, অনেক আদর করেছিলো। কিছু বলতে পারেনি,আর তখন রুমেলাকেই সবচেয়ে খারাপ মনে হয়েছিলো। আর বলেই বা কি লাভ?ওদের ভালোবাসার মাঝে যে আর ঢোকা সম্ভব নয় সেটা বুঝেই আর কিছু ভাবতে পারেনি শুধু কষ্ট পেয়েছিলো। এখন বোঝে সত‍্যিই তো রুমেলার কিই বা দোষ?
                  পরে শুনেছিলো ওদের বিয়েটা হয়নি,রুমেলার বাবা কিছুতেই রাজী হননি ওইরকম একটা ছেলে যার কোন পরিচয় নেই তেমন,বাড়ীতে অনেক বোঝা ঘাড়ে তার সাথে বিয়ে দিতে। মণিকার জিজ্ঞেস করতেও ইচ্ছে করলোনা মৃগাঙ্কদার কোন খবর ওর জানা আছে কিনা? কি করেই বা জিজ্ঞেস করবে আর কিই বা লাভ,যখন বিয়েটাই হয়নি। এমন প্রশ্নে সুবিমলের সামনে অস্বস্তিতে পড়বে দুজনেই।
                 মনটা খুব হাল্কা লাগলো অনেকদিন বাদে মণিকার। মাঝে মাঝেই একটা কষ্ট বুকে চিনচিন করতো। কি পজেটিভ আর স্ট্রং রুমেলা,কথা বললেও মন ভালো হয়ে যায়। সুবিমল তো সারা রাস্তা প্রশংসা করতে করতে এলো। এখন আর রাগ হলোনা মণিকার,সত‍্যি রুমেলাটা বোধহয় যেকোন মানুষকে মুগ্ধ করার ক্ষমতা রাখে। তবে এখন ওর সৌন্দর্যকে ঠান্ডা জলের মতো লাগলো,যেখানে অবগাহন করলে মানুষের সব মনখারাপ দূর হয়ে যায় একনিমেষে। পাওয়া যায় এক অদ্ভুত প্রশান্তি,মনটা ভালো হয়ে যায় নিমেষে।
           হোয়াটসআ্যপে বেশ ভালো যোগাযোগ হয় দুজনের। অনেক বন্ধুই আছে,আত্মীয়স্বজনও আছে তবে রুমেলার মতো মনে হয় কেউই হয়না।বন্ধুত্ব জিনিসটাই বোধহয় এমন,একটুকরো খোলা হাওয়ার আশ্বাস।অনেকদিন বাদে হলেও বন্ধুত্বটা বেশ আবার গাঢ় হয়ে আছে তেমনই। আসলে ভালো বন্ধুত্ব থেকে যায় এমনি অমলিন। প্রায়ই দেখা হয় ওদের,রুমেলা অফ থাকলেই এখানে ওখানে আড্ডা মারে,ছবি তোলে। কখনো হোয়াটস আ্যপে মেয়েকেও ছবিগুলো পাঠায়। বাবা আর মেয়ে একটু বেঁচেছে মণিকা ভালো আছে দেখে। মণিকার যেন এখন আবার সেকেন্ড মেয়েবেলা ফিরে এসেছে,হাঁটু ব‍্যাথাটাও বেশ কমে গেছে। শুধু শপিং করাটা একটু বেড়ে গেছে। সুবিমলের স্বচ্ছলতা যথেষ্ট,মণিকা ভালো আছে এটাই ওর ভালো লাগে।
                মণিকার একটাই খারাপ লাগে অনেক করে বলার পরেও রুমেলা কখনো আসেনি ওদের বাড়ীতে। আর ওকেও কখনো যেতে বলেনি ওর বাড়ীতে। তবুও একদিন বলেই ফেলে মণিকা,'একদিন আমার বাড়ি আর একদিন তোর বাড়িতে আড্ডা হবে। বেচারা সুবিমলটা তোর গুণমুগ্ধ,ওই বলছিলো।''
            হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলো রুমেলা," ধুর বাড়িতে আড্ডা হয় নাকি? বাইরে কোন ঝামেলা ছাড়া বিন্দাস আড্ডা মারা যায়। তোর বাড়ি গেলেই তো তুই রান্নাঘরে গিয়ে বসে থাকবি। আর আমি বোর হবো।"
                        এর মাঝেই গলব্লাডার স্টোন অপারেশন হলো মণিকার। সব সময় পাশে থাকলো রুমেলা, সুবিমলকে যে কিভাবে সাপোর্ট দিলো ভাবা যায়না। সুবিমলের তো কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
                      মাঝে অনেকগুলো দিন কেটে গেছে,রুমেলার একটু জ্বর হয়েছে। সুবিমল বার বার বলছে," আমাদের একবার যাওয়া উচিত। তোমার অপারেশনের সময় যা করলো ও।"
               একটু অস্বস্তি হয় মণিকার যদি রুমেলা কিছু ভাবে। তবুও যাবে মনস্থ করে।সারপ্রাইজ ভিজিটই থাক তাই জানায়নি কিছু। নীচতলায় মেয়েদের কাছে জিজ্ঞেস করে দোতলায় উঠে যায় মণিকা,কাজের মেয়েটি ওদের নিয়ে যায়।
রুমেলাকে ডেকে দেয়। আজো সেই মিষ্টি হাসিটা দেখে রুমেলার মুখে কিন্তু শরীরটা বেশ খারাপ লাগছে ওর।...." ওহ্ তুই এতোটা দূর থেকে আবার ছুটে এলি। সত‍্যি তোকে নিয়ে আর পারিনা। এতো ভালোবাসা কি করে ভুলে ছিলি এতোদিন শুনি? সুবিমলদা আসুন আসুন।"
......"আরে ওই তো বায়না ধরলো তোকে দেখতে আসার। আমার বরটাও তো দেখি তোর গুণমুগ্ধ ভক্ত হয়ে উঠেছে।"
            সুবিমল আর রুমেলা দুজনেই হেসে ফেলে। ওরা বসে চা খায়,সত‍্যি দারুণ সুন্দর বাড়ি রুমেলাদের মণিকার ধারণাই ছিলোনা। অথচ সাধারণ ভাবেই থাকতো কি সুন্দর মিলেমিশে। কখনো কোনো ঔদ্ধত‍্য আর অহঙ্কার দেখেনি ওর মধ‍্যে। হঠাৎই রুমেলা বলে," তোরা একটু বোস আমি আসছি।"
                       মণিকা আর সুবিমল কথা বলছে,ওদের দেওয়ালে রুমেলার আঁকা কি সুন্দর সুন্দর সব ছবি! সত‍্যি মেয়েটার গুণের অন্ত নেই। এতো ভালো মেয়েটা অথচ একটা সংসার পেলোনা!
                   "সরি রে তোদের একটু একা রাখলাম", রুমেলার কথা শুনে পেছনে তাকায় মণিকা। তবে মুখের হাসিটা মিলিয়ে যায়, কাকে দেখছে রুমেলার সাথে! হুইলচেয়ারটা ধরে এগিয়ে আসছে রুমেলা,চেয়ারে মৃগাঙ্কদা। অনেক বছর চলে গেছে,বদলেছে অনেক কিছু তবুও ওই চোখদুটো বদলায়নি। অসম্ভব উজ্জ্বল চোখদুটো,এখনো স্বপ্ন দেখে যেন। কথা হারায় মণিকা,কি বলবে ভেবে পায়না।
                   রুমেলা হাসে," আলাপ করিয়ে দিই,মণিকা অবশ‍্য চেনে,এই আমার নতুন ভাড়াটে,মাস চারেক এখানে আছে। তাইনা?"
                          "কিরে মণি কেমন আছিস? আমায় দেখে চমকে উঠলি তাইনা? বাহ্ বেশ তো গিন্নী হয়েছিস। রুমেলার কাছে শুনেছি তুই নাকি দিম্মাও হয়েছিস। এখনো কাঁদিস! আজো তোর চোখে জল? কেনো রে আমায় দেখে? আসলে তোকে দেখলেই আমার ছোট বোনটার কথা মনে হত। তোর মতোই পুতুল পুতুল চেহারা। তাই কত বকেছি শাসন করেছি। আর ভালো নোটস গুলো তো তোর জন‍্যই রাখা থাকতো।"
                 সত‍্যি মণিকার চোখে আজও জল। রুমেলা এসে ওর খুব কাছে বসে," তোকে বলতে পারিনি সবটা,আমায় ভুল বুঝিসনা। বাবা আমাদের বিয়েটা মেনে নেননি। আর বাবাকে আমিও দুঃখ দিতে চাইনি,আসলে মা মারা যাবার পর বাবা বিয়ে করতে পারতেন কিন্তু করেননি আমার কথা ভেবেই। তাই পারিনি বাবার বিরোধিতা করতে, আমাদের সময়ে এতোটা সাহসও ছিলোনা। তবে ওর সাথে যোগাযোগটা ছিলোই হয়ত গোপনে। ওরও তখন অনেক দায়িত্ব ভাইবোনের পড়াশোনা , বিয়ে। হয়ত আমার থেকে দূরে থাকবে বলে চাকরি নিয়ে চলে গিয়েছিলো হৃষিকেশে। সবই ঠিকঠাক চলছিলো মাঝে কেটে গিয়েছিলো অনেকগুলো বছর কিন্তু হঠাৎই খবর পাই ট্রেকিংয়ে গিয়ে ও সাঙ্ঘাতিক আ্যক্সিডেন্ট করেছে। আমিই যাই,নিয়ে আসি ওকে। এখন অনেকটা ভালো আছে,তবে এখনো পায়ের জোরটা পুরো আসেনি,চেষ্টা করছি। ও চেষ্টা করছে প্রাণপণ। এখনো আমাদের বেঁচে থাকার আর ভালোবাসার লড়াই চলছে রে।"
                      রুমেলাকে সত‍্যি শ্রদ্ধা করতে ইচ্ছে করে মণিকার,শ্রদ্ধা জানাতে ইচ্ছে করে ওর ভালোবাসাকে। মৃগাঙ্কদা বোধহয় সত‍্যিই ভবিষ‍্যৎদ্রষ্টা। রুমেলার ভালোবাসার আগুনে বোধহয় পুড়ে মরাও যায়। এক অদ্ভুত আশ্রয়ের চাদর বিছিয়ে রেখেছে রুমেলা। অথচ নিজেকে তার মধ‍্যেও ভালো রেখেছে। কিছু বোঝার উপায় নেই।
                নীরবতা ভাঙলো আবার মৃগাঙ্কদা," এতোদিন বাদে মণি আর ওর বেটার হাফকে পেলাম। ওকি শুধু কাঁদবে নাকি? একটা গান হয়ে যাক রুমি।"
                 মৃগাঙ্কদা ধরলো ,"আমি পথ ভোলা এক পথিক এসেছি,' গলা মেলালো রুমেলা। ওহ্ সুবিমল ও গুণগুণ করছে তো। মনটা ভরে গেলো সবার।
            রুমেলার বাড়ী থেকে ফেরার পথে অদ্ভুত এক মুগ্ধতায় মনটা ভরে যায় সুবিমল আর মণিকার। মণিকাও যেন নতুন করে চিনছে সুবিমলকে। সত‍্যিই খুব ভালো মানুষটা, কি সুন্দর আপন করে নিয়েছে ওর বন্ধুদের। হঠাৎই সুবিমল বলে,"মণিকা তোমার ওপর একটা দায়িত্ব দিতে চাই।" হাসে মণিকা,"এখনো দায়িত্ব নেওয়া বাকী আছে?"
....."আরে আছে তো? তোমার বান্ধবীর জীবনটা সাজিয়ে তো তোমাকেই দিতে হবে।"
              সত‍্যি শ্রদ্ধা করতে ইচ্ছে করলো সুবিমলকে এমন জীবনসঙ্গী কজন পায়? কিন্তু ওরা কি রাজী হবে। অথচ রুমেলা কি প্রাণবন্ত,লাল রঙে এখনো কি ভালো লাগে ওকে। সবটাই নাকি মৃগাঙ্কদার পছন্দ,কখনোই মনের রঙকে ফিকে করতে চায়না ও।
                লেগে পড়লো মণিকা আর সুবিমল। ওদের ম‍্যাজিক কাজে লেগে গেলো। মণিকা পারলো অসাধ‍্য সাধন করতে।
   
                মণিকার হাঁটুব‍্যাথা আর নেই, বেলফুলের মালা খোঁপায় জড়িয়ে একতলা দোতলা করে বেড়াচ্ছে। আর সুবিমল তো বরকর্তা, ব‍্যাপারটা বেশ অন‍্যরকম। বসন্তের প্রেমকে অপরাহ্নে পূর্ণতা দেওয়া। রুমেলার গার্লফ্রেন্ডরা তো ওকে নিয়েই ব‍্যস্ত, পুরো নিজেদের আন্ডারে নিয়ে নিয়েছে ওকে। রুমেলার পরনে আজ পলাশরঙা স্বর্ণচরী আর খোঁপায় লাল পলাশের মালা। কখনো বোধহয় আব্দার করেছিলো মৃগাঙ্কদা, রূপের স্নিগ্ধতায় এখনো বোধহয় ভুবন ভোলায় রুমেলা। মৃগাঙ্কদার বন্ধুরা মজা করে বললো," যাক বুড়ো বয়সে হলেও আইবুড়ো নামটা ঘুঁচলো তোর।''
             বাসরে আজ শুধুই বসন্তের সমারোহ। দেরীতে হলেও বসন্ত এলো ওদের জীবনে।
    দোলা লাগলো রুমেলার অকাল বসন্তে মৃগাঙ্কদার অসাধারণ গলায় কবি জয় গোস্বামীর প্রেমের কবিতা শুনে.....

'তুমি সঙ্গে ছিলে তুমি সঙ্গে ছিলে একরাস্তা পার
এখোনো রয়েছে স্মৃতি পারাপার-সমগ্র পড়ার
এক বৃক্ষ ছিল, বৃক্ষ প্রতিটি লাইটপোস্ট মানি
ট্র্যাফিকনগর নয়, ঝিঁঝিঁ জোনাকির অরণ্যানী
পথ পিচ ঢাকা নয়, পথে বইছে স্রোত হাঁটুজল
তোমার গোড়ালি ডুবছে, আমার শরীর ছলোচ্ছল
কিভাবে যে পার হলাম, কি ভাবে যে এলাম ফেরত্
সব জল শুকিয়েছে, হাতে শুকনো মাটি – ভবিষ্যত্
সেই শুকনো মাটি থেকে আজ বৃক্ষ দাঁড় করালাম
তুমি ঠিক করে দাও ক্ষুদ্র এই পুস্তকেরনাম।'
         
               "ইশ্ শুধু দুজনে মিলে ক্ষুদ্রপুস্তকের নাম ঠিক করলেই হবে? তা হচ্ছেনা। সবাই রাজী তো তাহলে হয়ে যাক,কি বলো সবাই?"
               মৃগাঙ্কদার বন্ধুরা একসাথে বলে উঠলো, মধুচন্দ্রিমাটা খোয়াইয়ের ধারেই হোক। লজ্জা একটু পায় রুমেলা,হেসে ফেলে মৃগাঙ্কদা। তবে বরযাত্রী আর কনেযাত্রী সবাই যাচ্ছি আমরা ব‍্যবস্থা হয়ে গেছে। রাজী তো হতেই হবে।
                      একঘেঁয়ে দাম্পত‍্যের মাঝে এ যেন এক বন্ধুত্বের মিষ্টি স্বাদ। সবাই মিলে মজা,গান আর গল্পে স্মরণীয় হয়ে থাকলো কিছু মুহূর্ত। বসন্তের ছোঁয়া লাগলো অনেকগুলো জীবনে রুমেলা আর মৃগাঙ্কদাকে ঘিরে। সম্পর্কগুলোকে বন্ধুত্বের মিষ্টি আঁচে একটু উষ্ণ করে নেওয়া। হয়ত এই ছোঁয়াটুকু রক্তিম করে রাখবে জীবনের বাদবাকি দিনগুলো।
               
                    "সব ভালো যার শেষ ভালো তাইনা?কিরে আমাদের ঘটক বিদায়টা তো এবার দে।"
                   আজ মণিকার মুখে হাসি,রুমেলার চোখভরা জল। ভালো বন্ধু মনেহয় এমনই হয়।
         
             
             

             

             
             
           
        
                       
         

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...