Skip to main content

আগুনের_পরশে

#আগুনের_পরশে#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

মালটাকে দেখেছিস? কি হেব্বি ফিগারটাকে ধরে রেখেছে মাইরি অথচ একদম কচিও নয়।
                    মনে হলো ঠাস করে একটা চড় কষিয়ে দেয়, অনিলের মুখে। কিন্তু পারেনা শুধুই মুখে বলে "ছিঃ মেয়ে মানেই মাল! তাহলে আমাদের মা বোন আর মেয়েগুলো কি রে?"
       "আরে বস বাড়ীর মা বোনদের সাথে এদের এক ক্লাসে বসাচ্ছো? তুমিও পারো মাইরি,এতো সাধু কবে থেকে হলে?"
      কেনো রে হঠাৎ আমাকে নিয়ে পড়লি কেনো? চিরকালই মেয়েদের সম্মান করতাম এখন হয়ত আরো বেশি করি।" ..." যাক ছাড়ো তোমাকেও দেখেছি বস তাই বললাম।"
                      অনেকদিন বাদে এই ক‍্যাফেটাতে এসেছে শীর্ষ তাও প্রায় বছর দুয়েক হবে,আসলে বাড়ী আর অফিস থেকে অনেকটা দূরে এই ক‍্যাফেটা। আজই সেলসের কাজে এদিকটায় এসেছিলো,তার আগেও দুএকবার এসেছে। আজ অনিলই জোর করে ঢোকালো এখানে," চলো বস একটু কোল্ড কফি খাওয়া যাক,এখানকার কোল্ড কফিটা ফ‍্যান্টাসটিক। গরমে পুরো অমৃত। মনটা একটু উদাস হয়ে যায় শীর্ষর এই অমৃতের স্বাদ নিতে একসময় মাঝে মাঝেই এখানে আসতো। পুরোনো অনেক কথা মনে পরে যায় এখানে এলে। তাই আর আসতে ইচ্ছে করেনা। কোল্ড কফিটা হাতে নিয়ে একটু আনমনা হয়ে যায় শীর্ষ।
                   "আরে দাঁড়া দাঁড়া ভালো করে দেখি, কোথায় যেন দেখেছি মেয়েটাকে,ওহ্ এতোক্ষণ পেছন থেকে দেখছিলাম বুঝতেই পারিনি। ওহ্ বস এইতো মনে পড়েছে। এদিকে একটু তাকিয়ে দ‍্যাখ,কফিতেই ডুবে গেলি নাকি। এইবার মনে পড়েছে,আরে এই আইটেমটাকে তো তোর সাথেই কফি খেতে দেখেছিলাম একবার। ওহ্ দারুণ কিন্তু মাইরি একবার দেখলে ভোলা যায়না। "
         অনিলের কথায় তাকায় শীর্ষ, সত‍্যি ওর পরিচিত মুখ। কয়েকদিন ওর সাথেই এই ক‍্যাফেতে এসেছে অনেকদিন আগে,তাই হয়ত চিনতে অসুবিধে হয়না। ওহ্ অগ্নিতা! সত‍্যিই আগুন জ্বালাতে পারে যে কোন পুরুষের মনে। অথচ কোনদিনই শাড়ী ছাড়া অন‍্য পোশাক পরতে দেখেনি ওকে। অদ্ভুত আকর্ষণীয় আর ব‍্যক্তিত্বময়ী যে কোন মানুষকে মুগ্ধ করতে পারে। একটু ছোট ভুল বুঝেছিলো শীর্ষ ওকে। পরে সে ভুল ভেঙেছিলো,কিন্তু আর ফিরে পায়নি অগ্নিতাকে। হয়ত ও ইচ্ছে করেই সরে গিয়েছিলো ওর জীবন থেকে। পরে বুঝেছিলো সবটাই,ভেঙেছিলো ভুলটাও।
"কি রে যাবি নাকি একবার? চেনা তো তোর?"
                  তাকিয়ে থাকে শীর্ষ,অগ্নিতা ততক্ষণে এগিয়ে গেছে বেরোনোর দরজার দিকে,সাথে পরিচিত কেউ। আজও চাঁপারঙের শাড়ীতে আগুন ছড়াচ্ছে অগ্নিতা। আজ শীর্ষর চাউনিতে শুধুই শ্রদ্ধা, মেয়েদের ছোট ভাবতে খুব খারাপ লাগে। আর এই শিক্ষাটা হয়তো অগ্নিতাই দিয়েছে। অগ্নিতা বলতো," নারীই জন্ম দেয় নারী আর পুরুষ উভয়কে। তাই মেয়েরা আধার, মেয়েরা মায়ের জাত। তাকে,আইটেম বা মাল বলা মানে নিজের মা বোনকে ছোট করা,দেবী দুর্গাকে ছোট করা।
                "ইশ্ বেড়িয়ে গেলো,আলাপ করালি না তো!"। "তুই কি সত‍্যি বুদ্ধিসুদ্ধি হারাস নাকি মেয়ে দেখলেই"। হাসে অনিল ওহ্ মুডটাই দিলি নষ্ট করে একটু মজা করছিলাম,আরে তোর বান্ধবী থাকতে পারে আমার বেলাই যত ঝামেলা। চল এবার যাওয়া যাক,এমন বান্ধবী থাকলে মন ভালো হয়ে যায়।"
              এই কথাটা সত‍্যি খাঁটি বলেছে অনিল। স্মৃতির অতলে ডুব যায় শীর্ষ। বাড়ীতে তখন চরম অশান্তি ওর সাথে মিমির। প্রতিদিনই কিছু না কিছু কারণে অশান্তি চলছে। অথচ একসময় একই অফিসে কাজ করতো শীর্ষ আর মিমি,ওখানেই আলাপ। প্রথমে শীর্ষরই ভালো লেগেছিলো মিমিকে। আসলে একটু উইক বোধহয় মেয়েদের ব‍্যাপারে চিরকালই। প্রায় একবছর এই একটুকু ছোঁয়া লাগে করতে করতেই বলেই ফেলেছিলো। মিমি প্রথমে একটু কিন্তু কিন্তু করছিলো,বাড়ি থেকে আপত্তি করবে বলে,কিন্তু তবুও হয়ত হার মেনেছিলো শীর্ষর ভালোবাসার কাছে। ওর বাবা বলেছিলেন," ছেলেটি খারাপ নয়,তবে বাড়ির অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। তুমি পারবে তো,ওর সাথে মানিয়ে নিতে। তোমাদের দুই বোনকে তো সবচেয়ে বেষ্ট সবকিছু দিয়ে মানুষ করেছি।" পুরোটাই ম‍্যানেজ করেছিলো ওর ছোট বোন রিম্পি,বাবাকে রাজি করানো থেকে ওদের বিয়ের প্ল‍্যান,ইভেন্ট ম‍্যানেজমেন্ট সবটাই।
     শীর্ষর প্রেমে ভেসে গিয়েছিলো মিমি,না ভেসে পারেনি। তবুও মাঝে মাঝে অভিযোগ করতো দেখো এখন আমাদের আলাদা অফিস,কাজের সময়ে এতো ফোন করো কেন? সিনিয়ররা বিরক্ত হয়। আমি অফিসে গিয়েই তোমায় জানিয়ে দেবো পৌঁচেছি,তারপর ফ্রি থাকলে আমিই কল করে নেবো। প্রথমটা এভাবেই বেশ চলছিলো তবে পরে যেন কেমন শীর্ষর মনে হোত মিমির ফ্রি টাইম কমে যাচ্ছে ওর জন‍্য। ফোন করলেই শুনতো মিটিংয়ে আছি অথবা বিজি আছি।"
       অভিযোগ করতো শীর্ষ "কি এমন বিজি থাকো? ফোন করার সময় পাওনা? মানে আমি রিং করলেও ধরোনা। কখনো কেটে দাও।"
        শীর্ষকে আদরে ডুবিয়ে দিয়ে মিমি বলে,আরে নতুন অফিসার এসেছেন না,ওনার আমার কাজ খুব পছন্দ। ওনার টেবিলেই বেশিরভাগ সময় কেটে যায় নোট নিতে নিতে।"
           একটু আদুরে অভিযোগ করে শীর্ষ," শুধু কাজই যেন পছন্দ হয়,আমার সুন্দরী বৌটার দিকে নজর দেয়না যেন।"
....." সত‍্যি তুমি একটা হিংশুটে বুড়ো। এইরকম করলে আমি কিন্তু..."
       মিমিকে আরো কাছে টেনে নেয় শীর্ষ। সময় এগিয়ে চলে,হঠাৎই একদিন অনেক খাবার নিয়ে ঢোকে মিমি। " কি ব‍্যাপার? আজ এতো দেরী করলে,আমি তো কখন এসে পড়েছি।"
     মিমির চোখে বিদ‍্যুৎ খেলে ওঠে,খুব কাছে এগিয়ে আসে শীর্ষর ঠোঁটে ঠোঁট রাখে।" চুপপপ একদম কথা বলতে নেই,আদর করছি। তুমি তৈরি হয়ে নাও চট করে, প্রথমে বাবার কাছে  যাবো তারপর রিম্পিকে নিয়ে সোজা ডিনারে,আমি টেবল বুক করেছি।"
......"হঠাৎ কেন?"
..."সারপ্রাইজ সোনা,ওয়েট।"
    খুব ভালো রেষ্টোরেন্টের খাবারগুলো কেন যেন বড্ড বিস্বাদ লাগলো,শীর্ষর মিমির প্রমোশনের কথাটা শুনে। এরপর আরেকটা ধাপ পেরোলেই হয়ত মিমিকে ম‍্যাডাম বলে ডাকতে হবে ওকে।
" কি জাম্বো তুমি তো প্রায় কিছুই খাচ্ছোনা, ঐ দিভাই দেখনা।"
         জোর করে কিছুটা খাবার তুলে দেয় দুইবোন মিলে শীর্ষর প্লেটে। কেমন যেন অদ্ভুত একটা ফিলিংস হয় ওর,তবে কি এটাকেই ইগো কমপ্লেক্স বলে? নাকি জেলাসি? উত্তর পায়না শীর্ষ।
           মিমির ফিরতে আজকাল প্রায়ই দেরি হয়। শীর্ষ এখন আর বেশি ফোন করেনা ওকে। বোঝে ওর কাজের চাপটা। কদিনই মিমির শরীরটা ভালো যাচ্ছেনা। সেদিন সকালে হঠাৎই মাথাটা ঘুরে যায়। শীর্ষকে বেরোতেই হবে তাই নিরুপায় হয়ে রিম্পিকে ফোন করে,ছোটবোনের মতোই ভরসা করে আর ভালোবাসে ওকে।
......" তুমি চাপ নিয়োনা জাম্বো,আমি এসে যাচ্ছি।"
         রিম্পিই খবর দেয় ডক্টর চেম্বার্সে আ্যপয়েন্টমেন্ট করেছে ও শীর্ষ যেন চলে আসে ওখানে। আজ অফিসে বলে একটু তাড়াতাড়িই বেড়িয়ে আসে শীর্ষ,সোজা চলে আসে ডক্টরের চেম্বারে। মিমি ততক্ষণে ভেতরে,রিম্পিকে দেখতে পায়," আরে দিভাই তো অনেকক্ষণ গেছে ভেতরে কি করছে কে জানে?" এই কথার মাঝে হঠাৎই মুখ বাড়ায় একজন মিমি সেনের বাড়ির কেউ আছেন? তাড়াহুড়ো করে ভেতরে যায় শীর্ষ,ডক্টরের সামনে বসে মিমি। ডাক্তারবাবুই শুরু করলেন," আপনি ওনার হাজব‍্যান্ড তাই আপনার কনসেন্টটা খুব জরুরী আসলে সি ইজ এক্সপেকটেড,কিন্তু উনি এখনই মা হতে চাইছেন না। আ্যবরশন করাতে চাইছেন কিন্তু আপনার কনসেন্ট ছাড়া তো কিছু হবেনা। তাই আপনার সাথে কথা বলছি,তবে প্রথম বেবি তো তাই একটু ভাবতে পারেন।
  কেমন যেন অসহ‍্য দমবন্ধ করা লাগে শীর্ষর,কেন মিমি ঐ ছোট প্রাণটাকে পৃথিবীর আলো দেখার আগেই শেষ করতে চায়?
....." ওকে ডক্টর আমরা একটু ভেবে জানাচ্ছি। চলে এসো মিমি, এখনো সময় আছে।
...." কিন্তু আমি যে ফর্মটা"....শীর্য আর শেষ করতে দেয়না মিমিকে। হাতটা ধরে বেড়িয়ে আসে চেম্বার থেকে।
   আচ্ছা রিম্পি ওকি পাগল হয়ে গেছে? এমন একটা মিষ্টি খবর সবাই কতো খুশি হবে বলতো জানলে। তা না কি সব বলছে। তুমি দেখো একবার। রাস্তায় রিম্পি বোঝাতে বোঝাতে নিয়ে আসে। মিমি তবুও বলে এরমধ‍্যেই হয়ত আমার নেক্সট প্রমোশনটা হয়ে যেতো আর তাহলেই আমাকে বাইরে যেতে হবে। ইশশ পুরো ব‍্যাপারটাই একদম শেষ। না না তুই একটু বোঝা শীর্ষকে।"
          রিম্পি চলে গেলেও অশান্তি আর ঠান্ডালড়াই চলতে লাগলো ওদের মধ‍্যে তবে শেষপর্যন্ত হয়ত শীর্ষরই জয় হোলো। অনেক বাধা মনকষাকষি আর চাপা অশান্তির মধ‍্যেই ওদের মাঝে এলো  রুমনা। ফুটফুটে মিষ্টি ফুলের মতো সুন্দর মেয়ে শীর্য আর মিমির,নামটা ঠিক করেছিলো রিম্পিই।
       যতদিন ছুটিতে ছিলো ততদিন মেয়ের সাথে থেকে মিমির মনটা ভরে গেলেও মাঝে মাঝেই অফিসের ঝামেলা মেটাতে হোত বাড়িতে বসেই মিমিকে। শীর্ষর বিরক্ত লাগলেও কিছু বলতে পারতোনা। দেখতে দেখতে মিমির জয়েনিং ডেট এগিয়ে আসছে। যদিও শীর্ষ বলেছিলো আরো যদি কিছুদিন এক্সটেন্ড করা যায় ছুটিটা। মিমি একটু রেগে উঠেছিলো," এরপর জবটা আমার আর থাকবেনা মনে হচ্ছে,একেই তো প্রমোশনটা পিছোলো। ঠিক মানুষ হয়ে যাবে মেয়ে,আমাদের মতো ওয়ার্কিং গার্লরা যেভাবে বেবি টেককেয়ার করে তার থেকে অনেক বেশি আ্যটেনশন পায় ও। আমার মা নেই ঠিক কিন্তু মাসি,দাদু সবাই তো দেখছে ওকে। রিম্পি তো মাঝে মাঝেই চলে আসে এখানে।..." তা ঠিক কিন্তু রিম্পির ওপর এতোটা ডিপেন্ড করা কি ঠিক? তাহলে কি মা বাবাকে বলবো দেশের বাড়ি থেকে এখানে এসে কিছুদিন থাকতে?"
..." ওনাদের আবার এখানে টেনে আনা কেন? ওনারা এলে তো আরো ঝামেলা বাড়বে,আর  বাড়িতে এক্সট্রা গেষ্ট দেখে হয়ত ডুব মারবে রান্নার মাসি। ওর আয়া তো আছেই,ভদ্রমহিলা ভালো ঠিকই থাকবে রুমনা ওর কাছে।"
      সত‍্যি বোধহয় ওয়ার্কিং মাদারদের বেবি টেককেয়ার করা একটা প্রবলেম সেটা জবে জয়েন করেই বোঝে মিমি। কিছুনা কিছু বেবির লেগেই আছে,তাই ওরও হয় কোনদিন দেরী আর নাহলে আ্যবসেন্ট এমনি চলছে। অবশ‍্য শীর্ষ অনেকটা সামলায় রুমনাকে আর মেয়েটাও তেমন হয়েছে। বাবাকে পেলেই আর কিছু চাইনা,মাঝে মাঝে মিমি বলে "তোমাদের বাবা আর মেয়ের মাঝে আমার তো কোন স্পেশই নেই।"
      "মেয়েকে একটু সময় দাও মিমি,সারাদিন পর ও একটু তোমায় চায়। তুমি যদি তখনো তোমার কাজ বা সেলফোনে থাকো। তাহলে বেচারা কি করবে?"
       কথাটা ছোট কিন্তু রিঅ্যক্ট করে মিমি," আমি বুঝতে পারিনা,সংসার মেয়েদের কাছে কি চায়। আর কতটা দেবো বলতো আমি? কতদিন পার্লারে যাইনা,সেদিন অহনা বললো তুমি কি নেলপলিশ লাগানোরও সময় পাওনা। আর শীর্ষ তোমার সেই কেয়ারিং রোমান্টিক ইমেজটা তো পুরো ভ‍্যানিশ। আজকাল তো একটা ফোনও করোনা। বেবি হয়ে গেছে আর আমার কোন প্রয়োজন নেই।"
       বুঝতে পারে শীর্ষ অভিমানের মেঘ জমেছে মিমির মনে। আসলে এই সময় একটু ডিপ্রেসনও আসে মেয়েদের। তাই রুমনাকে এই উইকএন্ডে রিম্পিই সামলালো,ওই বুদ্ধি দিলো," জাম্বো যাও, একটু প্রেম করে এসো,আসলে আমার দিদিটা একটু বেশি প‍্যাম্পার্ড চাইল্ড,আসলে বাবা মায়ের প্রথম সন্তান তো। তাই ওর আদরে একটু ঘাটতি হলেই মহা মুশকিল। তাই আবার হাতে হাত আর চোখে চোখ থাক।"সত‍্যি রিম্পির কোন তুলনা হয়না। শীর্ষর ওকে মনে হয় মিমির বোন কম ওর বোন বেশি। অনেকদিন বাদে যেন আবার মিমির মুখে হাসি দেখলো শীর্ষ হয়ত একঝলক হাওয়া এলো ওদের দাম্পত‍্যে।
                   রুমনা একটু একটু করে বড় হচ্ছে,প্রায় বছর দুয়েক বয়েস এখন ওর। টুকটুক করে মিমিরও প্রমোশন হয়ে গেছে। মিমি তাই অফিস নিয়ে একটু বেশি ব‍্যস্ত হয়ে পড়েছে। তবুও সব ঠিকঠাক চলছিলো। মিমির অভাবটা পূরণ করার চেষ্টা করতো শীর্ষ। কিন্তু একটু একটু করে সম্পর্কের বরফ জমতে থাকে ওদের মাঝে। এটাকেই হয়ত বলে ইগো কমপ্লেক্স। শীর্ষর প্রমোশন যেখানে আটকে,সেখানে মিমি কিছুটা এগিয়ে গেছে একই অফিস হলে হয়ত এতোদিনে শীর্ষকে অফিসে মিমিকে ম‍্যাডাম বলতে হোত। তবুও চলছিলো সব ঠিকঠাক, কিন্তু মিমির অনেক কথাই আহত করতো ওকে। এই তো সেদিন রুমনার খুব জ্বর মাকে কিছুতেই ছাড়তে চাইছিলোনা। "আজ একটা ছুটি নাও না,মেয়েটার এতো শরীর খারাপ।" ..."রিম্পিকে কল করেছি ও চলে আসবে। আমি খবর নেবো মাঝে মাঝেই,বিকেলে ডক্টরের কাছে নিয়ে যেয়ো আ্যপয়েন্টমেন্ট করা আছে। আমি চলে আসবো। তুমি থেকে যাও বরং আজ,তোমার যাওয়াটা তো অত জরুরী নয়। কিন্তু আমার এখন যা পোষ্ট হঠাৎ করে আ্যবসেন্ট করা একদম ইমপসিবল। ওকে আমি বেরোচ্ছি।" শীর্ষর উত্তরের কোন অপেক্ষা না করেই বেড়িয়ে যায় মিমি। রিম্পি আর শীর্ষ মিলে রুমনাকে সামলে নেয়। যথারীতি ডাক্তারের চেম্বারেও আসতে পারলো না মিমি। একটু একটু করে অভিমানের মেঘ জমতে থাকে শীর্ষর আকাশে হয়ত তার সাথে মেশানো ছিলো কিছুটা ইগোর লড়াইও। আজকাল অফিসের পার্টিগুলোতেও শীর্ষর এককোণে বসে ড্রিংক করা ছাড়া এমন কিছু করার থাকেনা। সান‍্যালের সাথে মিমিই ঘোরে পার্টির মধ‍্যমণি হয়ে। রাতে হালকা টলতে টলতে যখন বাড়ী ফেরে তখন দেখে রুমনা আয়ার কাছে ঘুমিয়ে পড়েছে। আয়নার সামনে নিজেকে দেখতে দেখতে মিমি বলে," রোজি বলছিলো বেবি হওয়ার পর আমি আরো আ্যট্রাক্টিভ হয়ে গেছি। খুব সেক্সি লাগছে নাকি আমায় ঘাড়ের ট‍্যাটুটা করে। এইইই কিছু তো বলো।" মুখ ফিরিয়ে দেখে শীর্ষ ঘুমিয়ে পড়েছে।
      রিম্পি দেখতে দেখতে একদিন বলেই ফেললো দিভাই এভাবে সংসারটা নষ্ট করিসনা,একটু সংসার আর মেয়ের দিকে দেখ। ও তো এখন স্কুলেও যাচ্ছে। তোকে ও খুব মিস করে,হয়তো কিছু বলেনা। তবুও মাঝে মাঝে দুএকদিন ওর স্কুলে যাস। আমি মাঝে মাঝে যাই,কি যে খুশি হয় বেবি।"
..." আচ্ছা বনু,তোরা কি চাস বলতো? আমি কি জব ছেড়ে হাউসওয়াইফ হয়ে একদম বাড়িতে বসে থাকি? একসময় দেখবি আমার বেবিই প্রাউড হবে ওর মা এতো ভালো একটা পোষ্টে আছে বলে।"
তবুও তো শীর্ষদা আর রুমনা তোর অর্ধেক আকাশ একটু খেয়াল রাখিস। কখনো রোদ আর কখনো মেঘে সম্পর্কটা চলছিলো একরকম হয়ত কিছুটা প্রাণহীন হয়ে তবুও বন্ধনটা ছিলো। শীর্ষ হয়ত সেদিন একটু বেশি মাথা গরম করে ফেলেছিলো যেদিন শুনেছিলো অফিসের কাজে অন্ততপক্ষে মাসখানেকের জন‍্য বাইরে যেতে হবে মিমিকে। হয়তবা আরো বেশি থাকতে হবে,শীর্ষর কোন আপত্তিই টিকলোনা,এই অপরচুনিটি কিছুতেই মিস্ করবেনা মিমি জানিয়ে দিলো। ও না গেলেই অন‍্য কেউ খপ করে নেবে প্রোপোজালটা। রুমনাটা খুব মনখারাপ করছিলো যাবার দিন,কাঁদছিলো একটানা। রিম্পি সামলে নিলো, অসহ‍্য লাগছিলো শীর্ষর যখন দেখলো সান‍্যাল এয়ারপোর্টে হাসিমুখে এসে মিমির সাথে ইন করলো। অদ্ভুত একটা নিঃসঙ্গতা গ্ৰাস করলো,একা একা বাকি পথটা আসতে আসতে মনটা ভরে গিয়েছিলো অনেক অসন্তোষে। মিমির হাইড করা পোষ্টের ছবিগুলো দেখিয়েছিলো এক অফিস কলিগ,সান‍্যালের সাথে একসাথে অনেকগুলো ছবি। মিমি ফিরেছিলো মাসদুয়েক বাদে কিন্তু ওদের সম্পর্কটা যেন ঝুলছিলো একটা সরু সুতোয় ঐ সরু সুতোটা ছোট্ট রুমনা।
   ...." দিভাই একটু আ্যডজাস্ট কর,শীর্ষদাকে একটু বোঝার চেষ্টা কর। মেয়েটাকে একটু কাছে টেনে নে। ও তোদের দুজনকেই চায়।"
....." আমাকে আর জ্ঞান দিসনা,একটা ইনফিরিওর পার্সন,মেয়েটাকে আমার থেকে দূরে নিয়ে যাচ্ছে, পয়জনিং মাই বেবি। জানিস বেবি এখন আর আমার কাছে আসতে চায়না। বাইরে থেকে আনা গিফ্টগুলো ছুড়ে ফেলে দিলো!"
        বাড়ী ছেড়ে বাবার কাছে চলে এলো মিমি মেয়েকে নিয়ে। হয়ত শীর্ষকে বেশি করে একা করে দেবার জন‍্য।
  বাধা দিলেও শোনেনি কোন বাধা। একা বাড়ীটা অদ্ভুতভাবে গ্ৰাস করতো ওকে, সবসময় মনে হোত মেয়ের কথা। তাই মাঝে মাঝেই একা ফ্ল্যাটে বসে ড্রিঙ্ক করতো, রিম্পি একদিন এসে খুব বকুনি দিয়ে যায়," এমন করলে আর আমি বেবিকে নিয়ে আসবোনা। কি অবস্থা করেছো নিজের আর বাড়িটার!"
     হঠাৎই এইসময় রিম্পির মিউচ‍্যুয়াল ফ্রেন্ডের সোর্সে আলাপ হয়ে যায় অগ্নিতার সঙ্গে। জীবনে অনেক সুন্দরী মেয়ে দেখেছে শীর্ষ,মিমিও কম সুন্দরী নয় তবে অগ্নিতা যেন এক অদ্ভুত মন ছুঁয়ে যাওয়া সুন্দরী। একটু একটু করে মেসেঞ্জারে আলাপ বাড়তে থাকে,অদ্ভুত এক আকর্ষণ অনুভব করে শীর্ষ। কথা বলার জন‍্য অপেক্ষা করে থাকতো সবসময়, এতো সুন্দর কথা বলে মেয়েটা। কিন্তু রিম্পিকে জিজ্ঞেস করাতে বললো "আছে তো অনেকেই ফ্রেন্ডলিষ্টে সবাইকে তো চিনিনা,কেনো গো জাম্বো"? "না না আমাকে রিকোয়েষ্ট পাঠিয়েছে তাই।" অগ্নিতার সাথে কথা বলে মনে হত একটা ঠান্ডা শীতল প্রলেপ। একটু একটু করে শীর্ষকে বোঝাতো অগ্নিতা,আসলে মানুষ যখন কোন কারণে অসুখী থাকে তখন সে অন‍্যের কাছে সুখ চাইতে যায়। অথচ জীবনে যখন থাকে পরিপূর্ণতা তখন মানুষ নিজের মাঝেই হয়ত অনুভব করে স্বর্গসুখ।
                  ....."তোমার যদি কোন আপত্তি না থাকে তাহলে তোমার হোয়াটসআ্যপ নম্বরটা যদি দাও।" হাসে অগ্নিতা,"কি দরকার এই তো বেশ কথা হয় মেসেঞ্জারে।" তবুও শীর্ষর আবদারে ফোন নম্বর দেয় অগ্নিতা। কথা হয় অনেক, একটু একটু করে যেন কিভাবে শীর্ষর মনের ভিতরে ঢুকে গিয়েছিলো ও স্বচ্ছ আয়নার মতো দেখেছিলো একজন মানুষের মন বুঝেছিলো পরিবার আর সন্তানকে ভালোবাসতে চাওয়া প্রত‍্যাখ‍্যাত এক পুরুষের সাইকোলজি।
                  .... খুব দেখা করতে চাইছিলো শীর্ষ, তবে অগ্নিতা বলেছিলো সম্পর্কটা শুধু বন্ধুত্বের শীর্ষর সাথে কথার বেশিরভাগটা জুড়েই থাকতো রুমনার কথা। রুমনার ছবি দেখতে প্রায়ই চাইতো অগ্নিতা,কখনো প্রশংসা করতো মিমিরও। প্রথম দিকে এড়িয়ে গেলেও এতো পজেটিভলি ব‍্যাপারগুলো বলতো যে শীর্ষ আর বিরক্ত হতে পারতো না। আশ্চর্য হয়ে যেতো একটা আনম‍্যারেড মেয়ে কিভাবে সম্পর্কের সমীকরণ এতো সুন্দর ভাবে বোঝে। যদিও স্টেটাস সিঙ্গেল দেখার পর কোনদিনই জিজ্ঞেস করেনি ব‍্যক্তিগত প্রশ্ন। বুঝতো শীর্ষ অগ্নিতাও হয়ত একা ওরই মতো কিন্তু তবুও এতো ভালো আর পরিচ্ছন্ন কনসেপ্ট ওর ম‍্যারেড লাইফের ব‍্যাপারে ভাবাই যায়না। অনেক সময়ই অগ্নিতা বলতো অন্ততপক্ষে রুমনার জন‍্যই ওদের একসাথে থাকা উচিৎ,মিমিকে একটু অন‍্যভাবে বোঝা উচিত। হয়ত মিমিও বুঝতে পারবে শীর্ষর ফাঁকা জায়গাটা কোন একদিন।
      এরমাঝেই একদিন রুমনার খুব বায়নায় যেতে হোলো ওর স্কুলের আ্যনুয়াল প্রোগ্ৰামে,গিয়ে একটু অবাকই হোলো মিমিকে দেখে,ভাবতেই পারেনি ওর ইম্পর্ট‍্যান্ট জব ছেড়ে মিমি আসবে। ছোটো ছোটো একটা দুটো কথা হোলো। মিমি হঠাৎই বলে উঠলো," রিম্পি বলছিলো তুমি নাকি আজকাল বাড়িতে ড্রিঙ্ক করছো। কি অবস্থা করেছো নিজের! মেয়েটা এরপর কি ভাববে,ওর কথা তো ভাবো। স্বাধীনতা পেলে যা হয়!"
          চুপ করে থাকে শীর্ষ, অনেকদিনবাদে হয়ত কেউ এমন করে বললো। আজকাল অবশ‍্য অগ্নিতাও বলে। হয়ত একটু বেশিই বলে,তবুও মনে হোলো কোথাও একটা টান হয়তো রয়ে গেছে ওদের মাঝে। অগ্নিতাই বললো, আসলে এটাই ভালোবাসা। অনেক সময় নিজেকে জাহির করতে বা আইডেন্টিটি খুঁজতে আমরা হয়ত বাঁধন আলগা করি কিন্তু প্রথম ভালোলাগার রেশটা রয়ে যায় সারাজীবন বাকিটা শুধু মাইন্ডকে একটু ডাইভার্ট করার জন‍্য সুখ খোঁজা,বা ভালো থাকার আশ্বাস খো়জা। এই যেমন তুমি খোঁজো আমার মাঝে, হয়ত মিমির ছায়া।"
       সত‍্যি কথাগুলো কি সুন্দর করে বোঝে অগ্নিতা,তবুও গলায় জোর এনে বলে," আমাকে আর বোলোনা মিমির কথা,ভালো লাগেনা।"
       " মিমিকে তুমি সত‍্যিই খুব ভালোবাসো তাই হয়ত মিমির মতো বা মিমির থেকে একটু আলাদা হলেও অনেকটা একরকম কাউকে খুঁজছো। মিমিও তোমায় মিস করছে একটু দেখো বুঝতে পারবে হয়ত ইগোটাই আলাদা করে রেখেছে তোমাদের। তবে তোমাদের বাচ্ছাটার কথা ভাবো একবার,ওরা সবসময় মা বাবাকে এক জায়গায় দেখতে চায়।"
......." আমি অফ হয়ে যাচ্ছি, তুমি কি কাউন্সিলিং করছো? ভাবলাম একটু মনটা ভালো করবো। নেক্সট উইকএন্ডটা ফ্রি রেখো। অনেকটা সময় একসাথে কাটাবো। শুধু ক‍্যাফেতে গিয়ে কথা বলে মন ভরেনা। চলে যাবো শহর থেকে দূরে কোন রিমোট জায়গায় একদম প্রকৃতির কাছে তুমি আর আমি।"
               পরের উইকএন্ডটা একদম ফাঁকা রেখেছিলো শীর্ষ অগ্নিতার জন‍্য,অনেক সময় বন্ধুদের সাথেও আড্ডা মারে। তবে সেদিন আর কিছু রাখলো না, সেদিন সারাদিন শুধু অগ্নিতার জন‍্য। একদম লঙ ড্রাইভে চলে যাবে দুজনে। মিমি এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে সান‍্যালের সাথে এবার ও দেখাবে কি করতে পারে ও। এক মুহূর্তের জন‍্য একটু দূর্বল হয়ে যায় রুমনার কথা ভেবে। ওরা যদি ওদের মতো ভাবে তাহলে মেয়েটার কি হবে একদিন তো রিম্পিরও বিয়ে হয়ে যাবে। অবশ‍্য অগ্নিতা রুমনাকে খুব ভালোবাসে,কিন্তু খুব ভালো করে জানে মিমি ওকে ছাড়বেনা,এই ভাবেই কষ্ট দেবে শীর্ষকে।
             আর ভাবতে ভালো লাগেনা। অগ্নিতাকে বলে," আমি তো দিন গুনছি,কবে ফার ফ্রম দ‍্য ম‍্যাডিং ক্রাউডে চলে যাবো শুধু দুজনে। সেদিন একটা রিকোয়েষ্ট করবো, শাড়ি ছাড়া অন‍্য কিছু পরবে? প্লিজ....আমার জন‍্য।"
    ......' আমার তো মিমির মত অত ভালো ফিগার নয় তাই ভালো লাগেনা পরতে। মিমিকে ওয়েষ্টার্নে দারুণ লাগে।"
   "একদম জল ঢেলে দেওয়া কথার মাঝে,হঠাৎ ওর কথা কেন?"
......" তুমি তো আমার মাঝে মিমিকেই খোঁজো। হয়ত তোমাদের এই ঠান্ডা লড়াইয়ে আমি ট্রামকার্ড। যদি কোনদিন তোমরা ভাবো আবার একসাথে থাকবে তখন আমার কি হবে? থাকনা বন্ধুত্বটা এরকমই ভালো মন্দ আদান প্রদানের খোলা জানলা হয়ে। ঘনিষ্ঠতার কি দরকার?"
......." এইসব কেন হঠাৎ বলছো তুমি কি আমায় আ্যভয়েড করতে চাইছো?"
....." আসলে আমাদের সুন্দর বন্ধুত্বটা নষ্ট করার ইচ্ছে আমার নেই। ওকে দেখা হবে",অফ হয়ে যায় অগ্নিতা।
         অদ্ভুত একটা ফিলিংস হয় শীর্ষর কেনো যেন মনে হয় অগ্নিতা ওকে আ্যভয়েড করছে,একটু রাগও হয়।
                   ওদের যেখানে মিট করার কথা ছিলো অনেকক্ষণ সেখানে অপেক্ষা করছে শীর্ষ ওর ইনোভা নিয়ে। অগ্নিতাকে অনেকবার ফোন করছে সকালে বলেছিলো বেরোবে,সময়ও বলে দিয়েছিলো,তাই ওয়েট করছে। কিন্তু এখন ফোনটা সুইচড অফ বলছে,কোনদিনই বাড়ির ঠিকানা বলেনি ও শীর্ষও জানতে চায়নি,শুধু বলেছে গল্ফগার্ডেনে থাকে। ফেসবুক মেসেঞ্জারেও দেখতে পায়না। হঠাৎই একটা মেসেজ আসে ও আজ আসতে পারবেনা একটা সমস‍্যার জন‍্য। মাথাটা প্রচন্ড গরম হয়ে যায়,রিং ব‍্যাক করতে চায় ফোনটা সুইচড অফ দেখে। মনে হোলো গাড়িটার কাঁচগুলোকে ভাঙে। খুব ডিপ্রেসড লাগে,ঠিক করলো আজ শুধু ড্রিঙ্ক করবে।
         গাড়িটা বাড়ির দিকে ঘোরায় শীর্ষ,হঠাৎই ফোনটা বেজে ওঠে, তাহলে কি অগ্নিতা? ফোনটা ধরতেই কলকল করে ওঠে রুমনা," বাবা মানি আমাকে জু তে নিয়ে যাচ্ছেনা। আমার সব ফ্রেন্ডরা যাচ্ছে উইনটার ভ‍্যাকেশনে বেড়াতে। মা তো অফিসে,কে আমাকে নিয়ে যাবে,তুমি নিয়ে চলোনা গো।"
       মেয়েটা বায়না করতে করতে কেঁদেই ফেলে, পাশে রিম্পির গলা পায়। মাথাটা গরম হয়ে যায় মেয়ের দায়িত্ব নিয়েছে,আর বাড়ি নেই। নিশ্চয় গেছে কোথাও ঘুরতে সেই স্কাউনড্রেলটার সাথে।
        ...." তোমার বাবা আছে তো তোমার চিন্তা কি? মানিকে বলো তোমাকে রেডি করে দিতে আমি আসছি।"
        রিম্পি খুব তাড়াতাড়ি রুমনাকে তৈরী করে শীর্ষর গাড়িতে তুলে দেয়," কি ব‍্যাপার বলতো জাম্বো,এতো তাড়াতাড়ি চলে এলে? মেয়ের বায়না শুনে থাকতে পারলেনা নাকি অন‍্য কোথাও গেছিলে। লুকিং সো স্মার্ট,অনেকদিন বাদে তোমায় ভালো লাগছে দেখতে একদম ফ্রেস দিভাইও দেখলে জাষ্ট ফিদা হয়ে যেতো।"
....." তুমিও চলোনা " বলে শীর্ষ।
....." বাবার ব্লাড নিতে আসবে, দিভাই নেই। আমাকে থাকতে হবে গো। আজ বাবা আর মেয়ে এনজয় করো।"
......ছোট্ট রুমনা যে কি খুশি ভরে দিলো শীর্ষর একলা জীবনে,আজ মেয়ের জন‍্য ও মনে হয় বাচ্ছা হয়ে গেছে। সারাদিন বাবা আর মেয়ে যা খুশি তাই করে বেড়ালো। নানান পোজের ছবি ফটাফট চলে যাচ্ছে রুমনার মানি রিম্পির কাছে।
অগ্নিতার ওপর আর রাগ থাকলোনা মনে হোলো এতো সুন্দর দিনটার সাথে বোধহয় অন‍্য কোন খুশিকে মেলানো যায়না।
          মন ভরে মজা করে বাবার কোলে পিঠে উঠে রুমনার খুশির অন্ত নেই। সন্ধ‍্যে প্রায় হয়ে আসছে," চল এবার তোকে মানির কাছে দিয়ে আমি বাড়ি যাই। তোর মা চলে আসবে তো।"
....." আমি আজকে বাইরে ডিনার করবো,নাহলে তোমার সাথে আমাদের বাড়ি যাবো।"
      কিছুতেই মেয়েকে ম‍্যানেজ করতে না পেরে,মেয়ের মানি রিম্পিকে ফোন করে।
...." তুমি যাও জাম্বো,আমাদের পুরোনো জায়গাটাতেই যাও,রুমনার তো ওটা খুব পছন্দ,আমি যাচ্ছি,একসাথে ডিনারও করবো আর তারপর রুমনাকে নিয়ে চলে আসবো।"
       .....রুমনাকে নিয়ে চলে আসে শীর্ষ,অনেক স্মৃতি জড়িয়ে এই রেষ্টোরেন্টের সাথে ওদের। রুমনা ছুটে চলে যায় যে টেবলটায় ওরা বসতো সেদিকে। অন‍্যমনস্ক হয়ে যায় শীর্ষ। "স‍্যার কি অর্ডার দেবেন,একটু হাসে ছেলেটি।"
...."একটু পরে বলছি,এখন শুধু ...
..."বাবা আমি কাবাব নেবো"..."ও.কে তাই দিন।"
....কত কথা মনে পড়ে যায়,এখানে এলেই। একসময় গল্পে আড্ডায় সময় কেটে যেতো এখানে।
...." এসে পড়েছি।"
পেছন ফেরে শীর্ষ,অবাক হয়ে যায়,মিমি আর রিম্পি। সত‍্যি দেখছে তো!
....." দিভাইকে নিয়ে এলাম,বোর হচ্ছে বেচারা ,অফিসে একটা ছোট্ট কাজ ছিলো,আর বেবিও নেই বাড়িতে।"
      ওয়েষ্টার্ন আউটফিটে খুব ভালো লাগছে মিমিকে,ঠিক আগের মতো। যেন কিছুই পাল্টায়নি। হাততালি দিয়ে ওঠে রুমনা মাকে দেখে," কি মজা,আবার আমরা আগের মতো সবাই এলাম।"
            সত‍্যি বোধহয় সব আগের মত হয়ে গেছে। ভালো লাগে শীর্ষরও গল্প করতে শুরু করে ওরা মুখরিত হয়ে ওঠে রেষ্টোরেন্টের কোণটা। ওদের মুখগুলো আজ আনন্দে ভরা,খাওয়া প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। হঠাৎই রিম্পি মিমিকে বলে কি সুন্দর লাগছে দেখতে ভদ্রমহিলাকে তাকিয়ে দেখ দিভাই, আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিষ্টে আছে,সামনে দেখলাম আজ। চোখ ফেরায় শীর্ষ তবে কিছু বলতে পারেনা,অগ্নিতা! গল্পে মশগুল সঙ্গীর সঙ্গে। খুব রাগ হয়,কিন্তু মুড খারাপ করবেনা ঠিক করে। ভাবতেই পারেনি এই দৃশ‍্যও ওকে দেখতে হবে। সময় হয়ত চোখে আঙুল দিয়ে সব দেখিয়ে দেয়। ফেসবুকে লোককে সত‍্যিই চেনা যায়না। অথচ কত ভালো লেগেছিলো অগ্নিতাকে একটা রিলেশন করে ফেলেছিলো,সে কি সুন্দর বসে সঙ্গীর সাথে গল্প করছে।
                         সেদিন মেয়ের বায়নায় শীর্ষর আর বাড়ি ফেরা হয়নি, থেকে যেতে হয়েছিলো মিমিদের বাড়িতে। অনেকদিন বাদে রুমনাকে মাঝখানে নিয়ে ওরা শুয়েছিলো,বাবা মা দুজনের দুটোহাত দুই হাতে ধরে বুকের মধ‍্যে নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছিলো । মনটা ভরে গিয়েছিলো রিম্পির ভেবেছিলো দিভাইটা একটু সুখে থাক,জুড়ে যাক ওদের ভাঙা সংসারটা। রুমনা বড় হোক আরো পাঁচটা বাচ্চার মতো মা বাবার আদরে।
       সকালে,মিমির ঘুমন্ত মুখটা দেখে অদ্ভুত ভালোলাগায় মনটা ছুঁয়ে গিয়েছিলো শীর্ষর। মনে হয়েছিলো নিজের সমস্ত উষ্ণতা দিয়ে ছুঁতে ওর ঠোঁটদুটো। বলতে ইচ্ছে করেছিলো," ফিরে চলো মিমি আবার থাকবো আমরা ঝগড়া আর আদরে একসাথে।" কিন্তু বলতে পারেনি হয়ত ইগোতে আর সঙ্কোচে। চোখটা বুজে স্পর্শ নিচ্ছিলো ওর নরম হাতটার। নির্ভরতায় হাতে হাত রেখেছিলো মিমিও,কেনো যেন ছাড়াতে ইচ্ছে করছিলোনা।
            চোখ খুলে রুমনা বলে," আমার দুগালে হামি দাও তোমরা, আগের মতো আদর করে।"
           ছোট্ট নরম গালদুটো আজ অনেকদিন পর মা বাবার আদরে আহ্লাদে খুশিতে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। আনন্দে লাফাতে লাফাতে মানির কাছে যায় রুমনা,মিমির মুখেও আজ হাসি। শীর্ষ বলে," আমি আসি এবার,ভালো থেকো। হঠাৎই অনেকদিন বাদে শীর্ষর বুকে মাথা রাখে মিমি। এলোমেলো হয়ে যায় শীর্ষর মনটা। দুজনেই নিবিড় বাহুবন্ধনে খোঁজে হারানো ভালোবাসাটাকে আকুল হয়ে,আছে কি সেটা বেঁচে?"
          রুমনাকে অনেক বুঝিয়ে শীর্ষ ফিরে আসে। ফিরে এসে ফাঁকা বাড়িটা আরো বেশি ফাঁকা লাগে। মিমিকে বলতে পারেনি জোর দিয়ে বাড়ি ফেরার কথা। মোবাইলটা খোলে,প্রচন্ড রাগ হয় অগ্নিতার ওপর,ফোন করে ইচ্ছে হলো ওর কাছে জানতে কেনো এমন করলো? তবে রাগ করতে পারেনা। হয়ত ওর জন‍্যই এতো সুন্দর একটা দিন উপহার পেলো এতোদিন বাদে।
              .........অগ্নিতাকে ইনবক্সে পায়না খুঁজে,হয়ত ব্লক করেছে ওকে আর দরকার নেই বলে। ফেসবুকে দেখে আছে ফ্রেন্ডলিষ্টে,যে ফোননম্বরটা দিয়েছিলো সেটা সুইচড অফ দেখে। কথা বলা হয়না। সত‍্যি কি মোহে জড়িয়ে পরেছিলো এমন একটা মেয়ের সাথে!
           মিমির সাথে সম্পর্কের বরফটা গলছে ধীরে ধীরে,রুমনার বায়নায় আজকাল প্রায়ই এক জায়গায় হয় ওরা। খুশির ছোঁয়া লেগে থাকে দুজনেরই মুখে। আবার যেন কাছাকাছি আসার এক সুন্দর অনুভূতি,একটু রোমান্টিক ছোঁয়া।
                     আর দুদিন বাদে শীর্ষর জন্মদিন, এর মাঝে কাজের চাপটা অফিসে একটু বেড়েছে। জন্মদিনের দিন সকালটা বড় ফাঁকা লাগে শীর্ষর,খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যায়। এমন অনেক জন্মদিন মিমির সাথে কাটিয়েছে কত আলাদাভাবে,চোখটা বুজে যায় হঠাৎই মনে পড়ে যায় কিছু পুরোনো কথা।
               মন ছুঁয়ে যাওয়া অতীতের পাতায় ডুব দেওয়া শরীরে হঠাৎই জাগে শিহরণ। শরীর পায় অতি পরিচিত এক নরম স্পর্শ,আদরে আদরে ভরিয়ে দিচ্ছে মিমি। এতো সকালে কখন যে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে ঘর খুলে ঢুকেছে বুঝতেই পারেনি। বহুদিনের জমানো ভালোবাসা,রাগ আর অভিমান আজ যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে ভেসে গেলো অলকানন্দার জলে।
                শীর্ষর সেরা বার্থডে গিফ্টটা পেয়ে সত‍্যিই বোধহয় কিছুক্ষণ নিজের মধ‍্যে ছিলোনা ও। নিজেদের সামলাতে বেশ কিছুটা সময় লাগে ওদের। ওভার স্মার্ট মিমির মুখটাতে আজ লজ্জা মেশানো পরিতৃপ্তির খুশি।
              প্রায় ঘন্টা দুয়েকবাদে রুমনাকে নিয়ে হৈ হৈ করে হাজির হয় রিম্পি," ও তাইতো বলি,সকালে উঠে দিভাইয়ের খোঁজ নেই কেনো। বাবা তো ব‍্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমি তো ভাবছিলাম থানায় যাবো। ইশ্ জাম্বো আমি ভেবেছিলাম প্রথম উইশ করবো!"
        ভালোবাসা মাখানো মিমির পরিতৃপ্ত মুখটা দেখে খুব ভালো লাগে রিম্পির। রুমনা জড়িয়ে ধরে বাবার গলাটা একটা হামি দেয়," হ‍্যাপি বার্থডে বাবা।"
                    মিমি অনেকদিন বাদে নিজের ফেলে যাওয়া সংসারের রান্নাঘরে কফি বানাচ্ছে।এরমাঝেই রিম্পি হঠাৎ গিয়ে খুলে দেয় টিভিটা। " এখন আবার টিভি কেন? রুমনাকে আর কার্টুন দেখিয়ো না।"
            হাসে রিম্পি,রিমোটটা হাতে নিয়ে 'সাতসকালে' অনুষ্ঠানটা খোলে,টিভির পর্দায় চোখটা আটকে যায় শীর্ষর আ্যনাউন্সমেন্টটা শোনে.... আজ আমাদের মাঝে আজকের অতিথি মনোবিদ অগ্নিতা মিত্র। নীচে ভেসে ওঠে কয়েকটা লেখা,অনুষ্ঠানটি পুনঃপ্রচার হচ্ছে দয়া করে ফোন করবেন না। কথাগুলো কানে বাজতে থাকে,বাবা মায়ের আলাদা থাকায় শিশুমন কিভাবে ক্ষতিগ্ৰস্ত হতে পারে? আপনার কি মনে হয়....
                 ইনবক্সে মেসেজের শব্দে ফোন খোলে শীর্ষ....' শুভ জন্মদিন,জীবনের প্রতিটিক্ষণ থাক এমন উজ্জ্বল,একটু যত্নে আর সহানুভূতিতে ভালো থাক সম্পর্কগুলো আর তোমাদের সন্তান রুমনা...অগ্নিতা"
                  রিম্পির মুখের হাসিটা আজ অনেক না বলা কথা বলে গেলো। আসলে অগ্নিতা ওর বান্ধবী তাই খুবই অনুরোধ করেছিলো একটু সাহায‍্যের জন‍্য যদি রুমনা পায় তার মা বাবাকে আবার একসাথে। প্রথমে রাজী না হলেও পরে রিম্পি রাজী করিয়েছিলো। অগ্নিতার কাজই অনলাইন কাউন্সেলিং করা। নিজের জীবনের ভাঙা সংসারের যন্ত্রণাটা ভুলেছিলো অন‍্যদের সংসার জোড়া লাগিয়ে। শীর্ষর সাথে দেখা করা কফি খাওয়া আর সেদিন না আসা পুরোটাই একটা প্ল‍্যান, যা খুব পরিষ্কার ভাবে বুঝে নিতে অসুবিধে হয়না শীর্ষর। মনে মনে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় মনটা ভরে গেলো,আর ভাবলো যদি এমন আগুনের পরশমণির ছোঁয়া ওদের মতো অনেক জীবনে লাগতো তাহলে হয়ত বদলে যেতো অনেক কিছু। কানে কানে ফিসফিস করে বলে," ওর ফোননম্বরটা যত্ন করে রেখে দিয়ো,যদি কখনো কারো লাগে..." ভালোবেসে রিম্পির মাথায় হাত দিয়ে চুলগুলো একটু এলোমেলো করে দেয় শীর্ষ। মিমি কফি নিয়ে এসে মিষ্টি হেসে বলে," এই যে কি হচ্ছে এই সব শীর্ষ,রিম্পি...
         ...." আরে আধি ঘরওয়ালী কে একটু আদর করছি।" হেসে ওঠে একসাথে সবাই।©ইচ্ছেখেয়ালে শ্রী
           

সমাপ্ত:-
     
      

   
        

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...