Skip to main content

বন্ডিং

#বন্ডিং#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

এয়ারপোর্টে ঢোকার আগে অনিককে," বাই দাভাই, টেক কেয়ার বলতে গিয়ে চোখটা ছলছল করে উঠলো রিমির।" ধুর ছাতা ভালোলাগেনা,কোথায় চলে যাচ্ছিস আমাদের ছেড়ে। আমি আর মা বাবা খুব একা হয়ে যাবো তোকে ছাড়া। আর মা তো ভালো কিছু রান্নাই করবেনা। সবটাই বলবে, দাদা নেই তো এখন ওসব আর করতে ইচ্ছে করেনা ও খুব খেতে ভালোবাসতো এই রান্নাগুলো।" হাসেন অনিক আর রিমির মা। " শোনো পাগলীটার কথা,ওকে নাকি খেতে দেওয়া হয়না। খেয়ে খেয়ে এই মুটি হচ্ছে এরপর বিয়ে দিতে হলে আমাকে আগে কয়েকহাজার খসাতে হবে রোগা করার জন‍্য।"
...." ওহ্ মা নজর দিয়োনা আমার মিত্তি মিত্তি সুইট গোলু বোনটার ওপর। থাকনা ও ওর মতো  পিৎজা আর বার্গারে। চিন্তা করিসনা,ওখানে ডলারে স‍্যালারিটা ভালোই দেবে মনে হচ্ছে,তোর পকেটমানিটা আমি পাঠিয়ে দেবো, আমার প্রেটি ডলু লিটল্ সিস্।"
       বাবা এবার তাড়া লাগান,"ওহ্ তোদের খুনশুটিটা আর গেলোনা। কিরে এখন যাবি তো ভেতরে?"
......" একটু ওয়েট, মাই ডিয়ার টাইপ এ পার্সোনালিটি ড‍্যাড,একটু থাকি তোমাদের সাথে এখনো অনেকটা বাকি আছে সময়। আমি একাই তো, আর লাগেজ খুব বেশি হয়নি তাই কোন প্রবলেম হবেনা আশাকরি। সব কিছু হাতের কাছেই আছে,চিন্তা কোরোনা,জাষ্ট কুল। এবার তো আমাকে ছাড়ো। আমি পারবো সবটা একদম ঠিক করে।
    খবরটা ভালো হলেও যখনই জানতে পারেন চাকরিতে ঢুকেই ছয়মাসের মধ‍্যেই ছেলেকে বাইরে পাঠাচ্ছে তখন আত্মীয়স্বজনের কাছে গল্প করলেও বুকের ভেতরটা একটু চিনচিন করেছিলো চাপা কষ্টে। এতোদিন যেখানেই গেছেন চারজনে। খাবারদাবার সবই হিসেব হোত চারজনের মাপেই। এবার থেকে ওরা তিনজন,ছেলেটা অনেক দূরে চলে যাচ্ছে। ইচ্ছে করলেই আসতে পারবেনা। এবার থেকে ওর লড়াইটা ওকে একাই লড়তে হবে।
       আসলে ওদের ছেলেমেয়েদুটোর বাড়িই বোধহয় একমাত্র জগৎ,অথচ বন্ধুবান্ধব দুজনেরই আছে তবুও মা বাবা আর ভাইবোন মিলে থাকতেই ওরা ভালোবাসে। সত‍্যিই এমনটা দেখা যায়না। কি যে ভালো বন্ডিং দুইভাইবোনের মধ‍্যে ভাবা যায়না, দাদার দেরি হলে মাথা খারাপ করে রিমি,ওরই যেন রাজ‍্যের চিন্তা। রজত হেসে বলেন,"আমার মা এসেছে আবার ফিরে বুঝলে মলি। রিমিটা বসে বসে সবার চিন্তা করে।"
....ঠোঁট উল্টে মলি বলেন," ওই চিন্তা করে মাথাখারাপ করাটাই সার, একটা কাজও তো করেনা ঘরের।"
......অনিক বাধা দেয়," কি যে বোলো মা,ও পড়াশোনা করবেনা। তাছাড়া এইতো সেদিন আমাকে ম‍্যাগি আর কফি করে খাওয়ালো। ও সব পারে মা। আমার বনুর মত এমন সুন্দর মন কজনের আছে বলতো। শুধু একটু পাগলাটে এই যা। এইবয়সের মেয়েদের দেখিতো,সেই তুলনায় আমার বনু অনেক ইনোসেন্ট।"
  খুব মিস করবে দাদাকে রিমি,আর মলি আর রজত মিস করবেন দুইছেলেমেয়ের খুনশুটি,কখনো ব‍্যাপক ঝগড়া আবার কখনো তুমুল ভাব। সবই চরমে,আসলে ওরাই তো জমিয়ে রাখতো বাড়ীটা।
            ফিউজ হয়ে যাওয়া বনুর চুলটা ধরে একটু হাল্কা টান মারে অনিক। ছলছলে চোখে একটু চেঁচিয়ে ওঠে," মা বলেছেনা,মেয়েদের চুলে হাত দিতে নেই। দেবো একটা রামচিমটি।"
     ...বাহ্ এই তো পুরো ঠিকঠাক মুডে,আয় একটা সেলফি হয়ে যাক। বাহ্ বেশ ভালো উঠলো কিন্তু ছবিটা,আয় আয় আরেকটা হয়ে যাক। মা,বাবা তোমরাও চলে এসো একটা গ্ৰুফি হয়ে যাক। নে নে এবার চট করে স্টেটাস আপডেট করে দেতো। আচ্ছা,কাঁদুনি বুড়ি দাঁড়া আমি করে দিচ্ছি। আচ্ছা এবার আমি ভেতরে যাই বোর্ডিং পাসটা নিতে হবে তো। ভালো থেকো তোমরা,আমি ভালো থাকবো। আর কথাতো হবেই ভিডিও কলিংয়ে। চলি বনু,আর জ্বালাবোনা,ভালো থাকিস। তোর পছন্দের গাউন আর চকোলেট আনবো ব‍্যাগ ভর্তি করে ফেরার সময়। আয় একটা জাদু কি ঝাপ্পি হয়ে যাক। আর যা যা লাগে আমাকে বলে দিস,পারফিউম,ঘড়ি আরো যদি কিছু লাগে। "
                 ভেতরে চলে যায় অনিক,ছলছল করে রিমির চোখদুটো। মেয়েকে কাছে টেনে নেন মলি, "একটু ওয়েট করি। ওর বোর্ডিং পাস নেওয়া হয়ে গেলে চলে যাবো কি বলো?"
          " কি রে মা আইসক্রীম খাবি নাকি? আমি বরং একটা কফি নি।"
  মোবাইলটা ঘাঁটাঘ়াটি করতে থাকে রিমি,প্রথমটায় খুব মজা লাগছিলো দাদা বিদেশে যাবে শুনে কিন্তু সত‍্যি এখন মনটা খারাপ লাগছে। গ‍্যালারি খুলে পুরোনো ছবিগুলো দেখে। ওহ্ বাবা হোয়াপে ছবিগুলো পাঠিয়ে দিয়েছে দাভাই। ওহ্ ফেসবুক স্টেটাসও আপডেট করেছে। রিমিও লেখে মিস ইউ দাভাইয়া।"
             ...." হ‍্যালো মা লাগেজে দিয়ে দিয়েছি বড় ট্রলিটা,ছোট স্কাইব‍্যাগটা কাছেই রাখলাম,বোর্ডিং পাস নিয়ে নিয়েছি, হুঁ হুঁ উইন্ডো পেয়েছি। সব ঠিক আছে। বাবাকে একটু দাও না, হ‍্যাঁ হ‍্যাঁ সব ঠিক আছে,তুমি চিন্তা কোরোনা। আমি দুবাইয়ে গিয়ে আবার কল করে নেবো। ওষুধগুলো ঠিকমতো খেয়ো আর মাঝে মাঝেই টেষ্ট আর চেক আপ কোরো দুজনেই। বনুতো রইলোই,ও অনলাইনে সব করে দেবে। এবার একটু পাগলীটাকে দাওনা।
কি রে মুড ঠিক তো,আমি তো দেখলাম তুই আইসক্রীম খাচ্ছিলি। ইশ! পারলি এটা,আমাকে বাদ দিয়ে।"
......"ভালো হচ্ছেনা কিন্তু দাভাই,আমার খুব অসহ‍্য লাগছে এবার। সামনে থাকলে না দিতাম একদম।"
......" হেল্পলেশ নো ওয়ে আপাতত রাগগুলো পুষে একা একা আদর খা। ভালো থাকিস রে।"
                   বাড়ি ফিরে আরো খারাপ লাগে রিমির,দাভাইয়ের পুরো রাজ‍্যটাই ফেলে গেছে। একসময় যেগুলো নিয়ে প্রচুর ঝগড়া হোত। আজ আর ওগুলো নেড়ে দেখতে ইচ্ছে করলো না।
        মলি অভিযোগ করলেন রজতের কাছে,"দেখো কি অবস্থা ঝগড়ারও শেষ নেই আবার ভাবেরও শেষ নেই। কেমন মনমরা হয়ে গেছে মেয়েটা। ভালো করে খেলোও না।"
    ...." তুমি বরং আজ ওর কাছেই শোও,ওর একটু ভালো লাগবে। আসলে ঐ দুটো তো আমার বাড়ীর লক্ষ্মী গণেশ ছিলো। তাই মনমরা,আমাদের ছেলেমেয়েগুলো জানোই তো একটু অন‍্যরকম। আসলে ছোট থেকে একসাথে বড় হয়েছে। অনিক তো বেশ কিছুটা বড় রিমির চেয়ে তাই ও কম দাদা বেশি গার্জেন।"
                 এক একটা করে দিন চলে যায় সময় হয়তো মানুষকে অভ‍্যেস করিয়ে দেয় অনেক কিছু। তাই ওরাও তিনজনেই একটা ছোটবৃত্তে কাটাতে লাগলো দিনগুলো। মলির রান্নার ঝামেলা অনেকটাই কমে গেছে। আসলে খাদ‍্যরসিকটাই তো নেই যে চেটেপুটে খেতো মায়ের হাতের সব রান্না। রিমির তো বায়নার শেষ নেই,তার তো বাড়ির খাবার কিছুই ভালো লাগেনা। তাই মাঝে মাঝেই অর্ডার দেয় বাইরে। আর দাদাকেও দেখায় ছবি তুলে। ওদিক থেকে অনিক ও বলে," আরে খাবিই তো, খাওয়ার জন‍্যই তো বেঁচে থাকা। বাবা দিচ্ছে তো তোর পকেটমানিটা। আমি আরো বেশি পাঠিয়ে দেবো।'
        ...." ওর মাথাটা খাসনা বাবু, দিন দিন যা মোটা হচ্ছেনা! ওহ্ আর মদত দিসনা ওকে।"
        .."ওহ্ মা ছাড়ো তো,আমাকে একটু পোস্তর রেসিপিটা বলোনা,আজ আর ভালো লাগছেনা একঘেঁয়ে বাইরের খাবার। একটু রান্নার অভ‍্যেস করি কি বলো। এইই আমি কিচেনে এবার পরপর বলে যাওনা মা।"
         সারাদিনে এইসময়টার জন‍্য অপেক্ষা করে থাকে সবাই। ভিডিও কলেই হয়ে যায় দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর স্বাদ। কখনো ছেলেকে রান্না শেখান মলি। কখনো বা রিমি দেখায় ওর নতুন কোন ড্রেস বা টিপস চায় পড়াশোনার ব‍্যাপারে। অথবা দুষ্টুমি করে বলে তুই আজ এইগুলো খেয়েছিস আমিও আজ বিরিয়ানি অর্ডার দিচ্ছি। ও জানে ওটা দাদার একটু দূর্বল জায়গা। আবার কোনদিন দাদার কাঁচা হাতের রান্না দেখে আড়ালে মন খারাপ করে ওরা।
                 এর মাঝেই রিমিটা একদিন মাথা ঘুরে কলেজে পড়ে গেছিলো। সত‍্যি তো এমন তো কোনদিন হয়না,তাহলে কি কদিন একটু কম খাচ্ছে তাই এমন হলো। নাহ্ বাবা ডায়েটিং ওর দ্বারা হবেনা পেটে না খেলে কি পিঠে সয়। ধুৎ কাল থেকে সব বন্ধ। ও বারণ করলেও ম‍্যাডাম শুনলেন না। মাকে ফোন করে খবর দিলেন। বুকের ভেতরটা অস্থির হয়ে যায় মলির,এতো ছটফটে মেয়ে,সারাদিন বকবক করছে তার আবার কি হোলো হঠাৎ!
            বাড়িতে এসে শুইয়ে দিলেন মেয়েকে। রজতকে কিছু বললেননা। কি দরকার অফিসে চিন্তা করবে। পরে রাতে বললেন। ভিডিও কলে অনিকই প্রথম বললো," মা গোলু বুড়িটার মুখটা এতো শুকনো লাগছে কেনো গো? ওকে কি ভালো করে খেতে টেতে দিচ্ছোনা? আরে আমার জন‍্য চাপ নিয়োনা। আমি এখানে বেশ ভালো আছি। কি রে পকেটমানিটা পুরো জমাচ্ছিস নাকি? আরে ভালোমন্দ খা জমিয়ে,আমি আবার পাঠিয়ে দেবো টাকা। ম‍্যায় হুঁ না?"
     ছোট থেকে দাভাইয়ের এই কথাটাতে যে কি ভরসা পেতো রিমি বলার নয়। ভেঙে যাওয়া পুতুল, কমপ্লিট না হওয়া প্রোজেক্ট অথবা মাকে ম‍্যানেজ করা সবটাই দাদা করে একটা আত্মতৃপ্তির হাসি হাসতো আর বলতো ম‍্যায় হুঁ না?
          ছেলেকে আর কিছু বিশেষ জানাননা মলি। ছেলেমানুষ একা একা বিদেশে থাকে অযথা চিন্তা করবে আর অস্থির হবে। কি দরকার? তাছাড়া রিমি এখন ভালোই আছে,তবুও ওদের হাউস ফিজিসিয়ন ডক্টর সরকারকে কাল একবার দেখিয়ে নেবেন।
           পরদিন সকালে বারণ করছিলেন মলি," আজ আর যাসনা,বিকেলে ডক্টর আঙ্কেলকে দেখিয়ে নিই তারপর কাল থেকে যাস।
   "না মা আজ যেতেই হবে, এই পাঁচমিনিট বাদেই উঠছি।"
        উঠতে গিয়ে মাথাটা আবার কেমন যেন ঘুরে ওঠে রিমির একটু বমিও পায়। ঠিক ভরসা পায়না এভাবে একা কলেজে যেতে।" মা আজ আর যাবোনা ভাবছি,নোটসগুলো আমি নিয়ে নেবো তথার কাছ থেকে। আরেকটু ঘুমাই,ঘুম পাচ্ছে।"
               মেয়েকে আর ডাকেননা মলি তবে বোঝেন কিছু একটা লুকোচ্ছে মেয়েটা,শরীরটা সত‍্যিই ভালো নেই ওর। তাই চোখে চোখে রাখেন।
          বিকেলে ডাক্তারবাবু দেখে কিছু টেস্ট লিখে দেন,বলেন তেমন কিছুনা। তবুও করিয়ে নেওয়া ভালো,আপাতত ওষুধ খাক। আর একটু রেস্ট নিক।
         অনিকও জানতে পারে রিমির শরীরটা ভালো যাচ্ছেনা। একটু অস্থির হয়,ওর ফিরতে এখনো প্রায় আটমাস বাকি।
            টেস্টের রিপোর্টগুলো দেখে একটু চিন্তিত হন ডঃ সরকার।রজতকে ওনার প্রফেসরকে দেখাতে বলেন। সবারই মনটা কেমন যেন অশান্ত হয়ে ওঠে। রিমিটাও বেশ রোগা হয়ে গেছে,আর প্রায়ই শুয়ে থাকে। রজতের বাড়ি ছিলো চাঁদের হাট। দুইছেলেমেয়ের চিল চিৎকারে অতিষ্ঠ লাগতো মাঝে মাঝে। সেই বাড়িতে যেন ছূঁচ পড়লে শোনা যায়। রিমির খুব মনে হয় ওর ম‍্যাজিকম‍্যান দাভাইয়ের কথা,অনিক একবার ম‍্যায় হুঁ না বললেই বোধহয় সারা পৃথিবী জয় করতে পারে রিমি।
               বড় ডাক্তার দেখে রিমিকে,রজতকে ডেকে কথা বলেন আলাদা করে। রিমির ব্রেনে খুব ছোট একটা টিউমার গ্ৰো করেছে। অপারেশন করিয়ে নিলেই ভালো তেমন ভয়ের কিছু নেই। মনে হচ্ছে খারাপ কিছুনা। ভয়ে চিন্তায় বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে রজতের বড় অসহায় লাগে নিজেকে,এইসময় ছেলেটাও কাছে নেই। বাঁচাতে পারবেন তো মেয়েটাকে। যদিও মলি আর রিমিকে বলেন ভয়ের কিছু নেই বলেছে ডাক্তার। কিন্তু রজতের শুকনো মুখটা চোখ এড়ায়না ওদের মা মেয়ের।
            বাইরে থেকে  কল করেন ছেলেকে। আশ্চর্য লাগে অনিকের,বাবা এইসময়ে কেন,এমনিতেই মনটা ভালো নেই। কালই তো বাবা বলেছেন চিন্তার কিছু নেই তেমন। রজত পুরোটাই বলেন ছেলেকে আসলে অনিক এমনি ছেলে যার ওপর ভরসা করা যায়। বাবাকে ভরসা দেয় অনিক নিজেও ঘাঁটতে থাকে নেট,যোগাযোগ করে ওর ডাক্তার বন্ধুদের সাথে যারা কিছুদিন আগেই সার্জারি কমপ্লিট করেছে।
     ভিডিও কলে যথারীতি বোনুর পেছনে লাগে,"আজ একটা পিৎজা অর্ডার দেনা"
...." ও গুলো আমার খেতে ভালো লাগেনা দাভাই,তাছাড়া ডক্টর বারণ করেছে।"
...." তাই নাকি? ওহ সেইজন‍্যই ভূতের মুখে রামনাম। তাহলে খাসনা। আরে ম‍্যায় হুঁ না,কে কি করবে আমার গোলুটাকে দেখিতো!"
        চোখটা ভিজে যায় রিমির,ছোট্ট একটু ভরসা হয়ত পায়। সব ঠিক হয়ে যাবে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে।
        কাজ বাড়িয়ে নিয়েছে অনিক,ও জানে বাবার তেমন কিছু জমানো টাকা নেই। সবটাই তো ওদের দুজনকে ভালো করে মানুষ করতে চলে গেছে। ওদের অনেক শখ মেটাতে বাবা মা কত কিছু যে ছেড়েছে এখন বোঝে।
          আজকাল উইকএন্ডেও পার্টটাইম জব করে অনিক,অনেকটা টাকার দরকার। টাকা জোগাড় করছেন রজতও পি এফ এ লোনের আ্যপ্লিকেশনটা দিয়েছেন পেলেই অপারেশনের তোরজোড় শুরু করতে হবে। পাশে দাঁড়িয়েছে নিজের আর ছেলের কিছু বন্ধুবান্ধব। রিমির বন্ধুরাও প্রায় আসে। এছাড়া আত্মীয়স্বজনও কিছু আছে। তবুও ওরা সবাই ভীষণ মিস করে অনিককে।
          ভরসা দেয় অনিক,"এই তো বাবা আর তো কয়েকটা মাস, চলে আসবো আমি। টাকাটাও তো দরকার তাইনা?" বিদেশে কে কাকে চেনে তাই উইকএন্ডে কোনসময় রেষ্টুরেন্টেও কাজ করে নেয় অনিক। বোনকে যে বেষ্ট ট্রিটমেন্ট দিতে হবে।
           মাসদুয়েক বাদে অপারেশনটা হয়ে যায় রিমির সবচেয়ে বেষ্ট হসপিটালে।অপারেশন সাকশেশফুল বলেন ডাক্তাররা। শুধু কয়েকটা কেমো নিলেই রিমি আউট অফ ডেঞ্জার,আর কোন চিন্তা নেই। অনিক ওদিকে সবসময় ফোনে কথা বলে নিচ্ছে বাবার সঙ্গে। রজত আর মলি বোঝেন কেমন অস্থির হয়ে আছে ছেলেটা। রিমি বাড়িতে আসে,মাস ছয়েক ট্রিটমেন্টে থাকলে ও একদম সুস্থ হয়ে যাবে বলেছেন ডাক্তার। স্বস্তি পান রজত যাক ততদিনে ছেলেটাও এসে পড়বে।
       অনিকের খুব ইচ্ছে করে একটু ভিডিও কলে কথা বলতে কিন্তু রজত বলেন ওদের স্মার্ট ফোনটা খারাপ হয়ে গেছে,রিমিরটাও। আশ্চর্য হয় অনিক এ আবার কি? কতদিন দেখতে পাচ্ছেনা বাবা মা আর বোনকে। বারবারই বলছে," এমন কি করে হয়? বাবা একটা স্মার্ট ফোন কেনো। আমি তো আ্যকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি,কতদিন বোনটাকে দেখিনি। কেমন আছে অপারেশনের পর কিছুই দেখা হোলোনা। ফোনে কথা বলে কি ভালো লাগে।
          আসলে রিমিই বলেছিলো দাভাইকে বলতে ওদের ফোনগুলো কাজ করছেনা। ওরা আবার সেই পুরোনো ফোনে ফিরে গেছে। ওর মাথার একগোছা ঢেউ খেলানো চুলটা যে আর নেই। যেটা দেখে রজত বলতেন আমার প্রিন্সেস। আর ওই চুলে হাত দিলে খুব রাগ করতেন মলি। রিমি জানে ওর এই চেহারাটা দেখলে দাভাই খুব কষ্ট পাবে। এর মাঝেই একদিন রজত মলিকে নিয়ে স্কাইপে বাইরে গিয়ে কথা বলে এলেন ছেলের সাথে। ওদেরও খুব খারাপ লাগছিলো ছেলেকে না দেখে। কিন্তু রিমিটা ওর এই চেহারাটা দাভাইকে দেখাতে চায়না।
           ফোনে কথা হয়," আমি ভালো আছি দাভাই,তুই আর বেশি কাজ করিসনা। কবে যে তুই আসবি,কতদিন ঝগড়া হয়না,ধ‍্যুৎ।"
             " এই তো দেখতে দেখতে এসে যাচ্ছে সময়। তোর জন‍্য কি কি আনবো বলে দিস। ফেসবুক করছিস না কেন? ওহ্ তোর ফোনটাও তো খারাপ,আমি গিয়েই একটা ফোন কিনে দেবো তোকে।"
       অনিক হয়ত একটু বোঝে রিমি কেন ফেসবুক করেনা। কেনোই বা ভিডিও কলে আসেনা।
     একটু একটু করে সেরে উঠছে রিমি। লাষ্ট কেমোটাও হয়ে গেলো। ডাক্তার সব ঠিক আছে বলেছেন। বাড়িতে অনেকদিন বাদে একটুকরো স্বস্তির নিশ্বাস। হয়ত বা একটু খুশির মেজাজও,আর মাসখানেক বাদেই তো অনিক ফিরবে। শুধু রিমিটাই বেরোতে চায়না কারো সামনে।
            দেখতে দেখতেই দিনগুলো কেটে গেলো এক এক করে, অনিকের ফেরার সময় হয়ে যাচ্ছে। রজত আর মলি একটু একটু করে গোছাচ্ছেন,কিছুদিন ধরে সংসারের যা হাল হয়েছে। ছেলেটা এসে কি বলবে এমন অবস্থা দেখে!
             এয়ারপোর্টে আসার দরকার নেই বলেছিলো অনিক,তবুও রজত শোনেননি,কতদিন দেখেননা ছেলেটাকে। রিমিটা সুস্থ থাকলে তো সবাই যেতেন। খুশি হোত কত মেয়েটা‌।
            বাইরে গাড়ীর আওয়াজ শুনতে কানটা খাড়া করে রাখে রিমি,মাঝে মাঝে অস্থির হয়ে ওঠে "মা এখনো বাবা এলোনা তো দাভাইকে নিয়ে। একটু ফোন করোনা মা।"
     "আরে এসে পড়বে তোর বাবার সঙ্গে কথা হলো। হয়ত একটু দেরি হবে লাগেজ নিতে তবে চলে আসবে কিছুক্ষণের মধ‍্যে। তুই একটু তৈরি হয়ে নে মা,মাথায় স্কার্ফটা বেঁধে নে আর ড্রেসটা পাল্টে নে। তোকে এভাবে দেখলে বাবুর ভালো লাগবেনা।"
       একটুকরো করুণ হাসি খেলে যায় রিমির শুকনো মুখটাতে," জামাটা ঠিকই আছে মা,তুমি বরং স্কার্ফটা দাও আমি মাথায় ব়েধে নিই‌‌। মা দেখোনা মনে হয় গাড়ীর আওয়াজ পেলাম।"
        "মাআআআ, বনুউউউ আমি এসে গেছি তো,কোথায় তোমরা?"
        তাড়াতাড়ি করে বেড়িয়ে আসে মলি জড়িয়ে ধরে ছেলেকে। ইশ্ কতদিন পরে দেখছে," তুই কিন্তু খুব রোগা হয়ে গেছিস বাবা,ওখানে কি ভালো করে খেতিস না নাকি? কি যে হলো আমার সংসারে, ছেলেমেয়ে দুটোরই কি অবস্থা।"
        চোখটা ঝাপসা হয়ে যায় মলির," ঠিক হয়ে যাবে সব মা, কইরে ঝগড়ুটে বুড়ি,রাগ করছিস নাকি? চলে এলাম আমি আদরে ভাগ বসাতে তাই? কতদিন দেখিনা মা ওকে,কোথায় ও?"
        আস্তে আস্তে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে রিমি ঠিক দাদার পেছনে এসে দাঁড়ায়। "এইতো আমি এসে গেছি।"
..."ওহ্ এতোক্ষণে?" বলেই মুখটা ফেরায় অনিক। অসুস্থ বোনের একটা ছবি মনে মনে এঁকেছিলো কিন্তু চোখে দেখা হয়ত মনকে নিয়ে যায় দুঃখের এক নীরব অন্ধকারে। মেলাতে পারেনা,অনিক হয়ত ছলছল করে ওঠে চোখটা তবুও গলায় জোর এনে বলে," তোকে তো পুরো হিমাচলের সুন্দরীদের মতো লাগছে বনু। বেশ স্লিম হয়ে গেছিস। আর ফাস্টফুড খাসনা, রোগা হয়ে খুব মিষ্টি লাগছে কিন্তু। "জড়িয়ে ধরে বোনটাকে। রিমির মনটা যেন হালকা হয়ে যায়, হয়ত সবাই স্বস্তি পায়।
                 ঘরের ভেতরে এসেই ঢাউস ট্রলিটা টান দিতে যায় অনিক। মলি আর রজত বলেন,কি দরকার এখন খোলার,আগে রেস্ট নে তারপর হবে। আচ্ছা মা,একটু বাদেই খুলবো কিন্তু,দেখছো তো একজন মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। ও ভাবছে হয়ত কিছুই আনিনি।"
       মিষ্টি হাসে রিমি," তুই এসে গেছিস,আর কিছু চাইনা দাভাই,একবার শুধু বলনা তোর ফেমাস ডায়ালগটা।"
      " ম‍্যায় হুঁ না....সো ডোন্ট ওরি। কিন্তু তোদের ফোনগুলো তো খারাপ হয়েছে বললি ওগুলোকে চার্জে বসানোর কি দরকার? আমি একটা নতুন হ‍্যান্ডসেট এনেছি। আরেকটাও কিনে দেবো।"
         ওরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বলে না না এইগুলো সারিয়ে নিয়েছি। অনেক না বলা কথা বুঝতে বাকি থাকেনা অনিকের। শুধু মনটা ব‍্যাথায় খচখচ করে বোনটার জন‍্য,কি সুন্দর একমাথা চুল ছিলো!
                " ওহ্ মা এতো কিছু করেছো,ওখানে তো স‍্যান্ডউইচ খেয়েই.. "কথাটা গলায় আটকে যায় ওর। মলির বুঝতে অসুবিধে অসুবিধে হয়না কিছুই।
           ট্রলিটা খুলে বসে,অনিক," মা তুমি আর বাবা একটু পাশের ঘরে যাওতো। আমাদের অনেক ঝগড়া হবে এখন।"
....." দেখিস বাবা বাড়ির কাকগুলো যেন না পালিয়ে যায় তোদের চিৎকারে।"
         অনেকদিন পর বাড়িতে একঝলক খুশির হাওয়া,তাই একটু হেসে দুজনেই পাশের ঘরে যান।
       একটা একটা করে সবার গিফ্টগুলো বার করে অনিক," এই যাহ্ তোর জিনিসগুলো কোথায়? পাচ্ছিনা কেন? আরে এইতো... চোখটা বোজ বোজ এইইইই...."
           অনেক খুঁজে এই দামী গাউনটা বোনের জন‍্য কিনেছিলো অনিক ওর তো একটাই আবদার ছিলো। রিমিকে প্রায় ঢেকে দেয় অনিক।
......" কি রে পছন্দ হয়নি? হাসি নেই কেন মুখে।"
....." খুব ভালো হয়েছে দাভাই,কিন্তু এটা এখন রেখে দে যত্ন করে। এটা আমাকে আর মানাবেনা দাভাই।"
...." কে বলেছে,তুই যা এটা পরে আয়,প্লিজ বনু। আমি অনেক খুঁজে এটা এনেছি।"
....গাউনটা পরে আসে রিমি আয়নার সামনে দাঁড়ায়।
" কি সুন্দর লাগছে তোকে! কে বলেছে মানাবেনা? একমিনিট,চোখটা এবার বন্ধ কর।"
চোখ বন্ধ করে রিমি,আস্তে আস্তে ওর মাথায় একদম ন‍্যাচারাল লুক হেয়ারের একটা উইগ পরিয়ে দেয়। সত‍্যি একদম আগের মতো লাগছে ওর বোনটাকে,হয়ত আগের চেয়েও অনেক সুন্দর আর স্মার্ট। "নে,এবার চোখটা খোল।"
            সত‍্যিই চোখটা খুলে নিজেকে হয়ত নিজেই চিনতে পারলোনা রিমি। আবার ইচ্ছে করলো বাঁচতে নতুন করে। সত‍্যিই তো জীবনের এতো রূপ,রস আর গন্ধ। নিজের প্রেমে আবার পড়লো রিমি। আজ আবার ভরসা হোলো দাভাইয়ের ওপর,ওর জীবনের ম‍্যাজিকম‍্যান।
                     ততক্ষণে মায়ের চোখদুটো আটকে নিয়ে এসেছে অনিক,হাতটা সরিয়ে দেয় রিমির সামনে এনে,পেছনে এসে দাঁড়ায় রজতও। আজ সত‍্যিই বোধহয় চাঁদের হাট বসেছে ওদের বাড়ীতে।  প্রাণভরে দেখেন ঘরের লক্ষ্মী গণেশকে রজত।
......." কি গো মা একটা গ্ৰুফি হয়ে যাক। আমি ফেসবুক স্টেটাসটা আপডেট করি। আয় বনু আগে সেলফি। ওমা আগের চেয়েও অনেক সুন্দর লাগছে।"
        জলভরা চোখে রিমি আর মলি দেখে,অনিক বিছানায় রেখেছে আরো কয়েকটা উইগ।
...." আর তো কয়েকটা মাস,তারপরেই আবার চুল টানবো। এই কদিন আমার বনু শুধুই স্টারদের মতো হেয়ারস্টাইল চেঞ্জ করবে মাঝে মাঝে।"
            এমন দাদা বোধহয় অনেক ভাগ‍্যে পাওয়া যায়। একফোঁটা টলটলে মুক্তো ঝরে পড়ে রিমির গাল বেয়ে। হাত দিয়ে মুছিয়ে অনিক বলে," আর চুল টানবোনা রে। মা বলতো না মেয়েদের চুলে হাত দিতে নেই।"
            ছেলেমেয়ে দুটোকে বুকের কাছে আঁকড়ে ধরে মলি, দুচোখ ভরে দেখেন রজত লক্ষ্মীগণেশ কোলে মা দুর্গাকে।

সমাপ্ত:-

  
 
                 

              
            

    
      

     
        
        
                 
        

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...