#শক্তিরূপেণ#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
"দেখেছিস লোকটাকে? ইশ্ কি বিচ্ছিরি ভাবে লুঙ্গিটা ফাঁক করেছে আমাদের দেখে। আমি আর তাকাতে পারছিনা।" বলেই চোখটা বন্ধ করে জবা।
উল্টোদিক থেকে আসা লোকটাকে দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারলো না দূর্বা, ইচ্ছে করছিলো দুর্গা হতে কিন্তু তার তো উপায় নেই তাই ছাতাটা দিয়েই কাজ সারলো, ছাতাটা দিয়ে সপাটে মারলো এক ঘা,লোকটা ভাবতে পারেনি আচমকা বিপদটা এভাবে আসতে পারে। ওদেরকে দেখেই লুঙ্গিটা সরিয়ে দিয়েছিলো,কুৎসিত প্রদর্শন করতে চেয়েছিলো পুরুষাঙ্গ দেখিয়ে। কিন্তু ওর রণচন্ডী মূর্তি দেখে পিছু হটে একদম ছুটে পাশের গলিতে। আসলে যারা অপরাধ করে তাদের মানসিকতা অনেক বেশি কাপুরুষ আর নীচ সাধারণ সৎ মানুষের চেয়ে। ছোট বেলায় একটা গল্প পড়েছিলো, স্বয়ং ঠাকুরও বলে গেছেন, 'ফোঁস করতে বারণ নেই।' তাই ইচ্ছাকৃত মানুষকে হেনস্থা করার জন্য যে অন্যায়গুলো হয় তাতে পারেনা চুপ করে থাকতে। কখনোই মনে হয়না,এটা তো আমার সাথে হচ্ছেনা আমি কথা বলবো কেন? আর সেই জন্যই বাসের সামনের সিটে বসে যখন দেখলো কন্ডাকটার ইচ্ছে করে পিঠে হাত দিয়ে দিয়ে কমবয়সী কলেজের মেয়েগুলোকে বাসে তুলছে তখনো কথা না বলে থাকতে পারেনা। কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায় ব্যাপারটা পুরো ইচ্ছাকৃত,অথচ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় সাময়িক খারাপ লাগলেও মেয়েরা ব্যাপারগুলো মেনে নেয়। মানে মেনে নিতে নিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। হয়ত মানতে পারেনা দূর্বার মতো হাতে গোণা কয়েকজন যারা ফাঁকা রাস্তায় ইচ্ছাকৃত কেউ পেছনে হাত দিয়ে চলে গেলে উল্টোদিকে ঘুরে কলার ধরে টেনে গালে একটা চড় মেরে বলে,এরপর হাতদুটো ভেঙে দড়ি বেঁধে ওপরে ঝুলিয়ে রাখবো,আর কোনদিন মেয়েদের পেছনে হাত ঘষার আগে ভেবে নিস। বাসে তার পাশে বসা লোকটা যখন ইচ্ছে করে পায়ে পা ঘষতে থাকে বা কনুইটা বাড়িয়ে দেয় ওর বুকে ধাক্কা মারার জন্য তখন ব্যাগটা দিয়ে প্রতিরোধ করে অনেকেই। অথবা জানলার দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয় বা ভাবে কখন নেমে যাবে লোকটা। কখনো বা কিছু বললে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সহযাত্রীদের নীরবতা বা উত্তর পাওয়া যায় প্রাইভেট গাড়িতে যান বাসে ওঠেন কেন? দূর্বা তেমনটা না করে যখন দেখলো প্রতিপক্ষ ধাক্বা দিয়ে আরাম পাচ্ছে তখন ব্রেক কষার ফাঁকে পাল্টা একটু জোরে ধাক্বা দেয় লোকটাকে বেশ মজা লাগে লোকটার বেসামাল অবস্থা দেখে বলে,"দেখছিলাম একটু,ধাক্কা দিয়ে কতটা সুখ পাওয়া যায়,আপনি তো অনেকক্ষণ ধরেই কাজটা করে যাচ্ছেন। ইশ্ ঠিক মতো হলোনা ব্যাপারটা আরেকটু জোরে দিতে হত।"
চাঁদার জুলুমে ওদের ফ্ল্যাটের লোকেরা যখন নাজেহাল,বচশা করতে গিয়ে হঠাৎই চড় খায় ওদের পাশের ফ্ল্যাটের ভদ্রলোক,তখন দূর্বাই ছুটে গিয়েছিলো চিৎকার করতে করতে । ভীড়ে টিটকিরি শুনেছিলো," এখানে মেয়েরা নেতা,মেয়েদের সাথে কথা বলবোনা।" রণচন্ডী দূর্বা উত্তর দিয়েছিলো "এবার থেকে আর যাতে মেয়েদের পুজো আর আপনাদের করতে না হয় সে ব্যবস্থা আমি করবো। বন্ধ হোক দেবীপূজা।"
সেবারের মত পুজো সত্যিই বন্ধ হওয়ার জোগাড় হয়েছিলো। আর কোনদিন চাঁদার জুলুম সহ্য করতে হয়নি ওদের। এগুলো কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা,দূর্বা হয়ত জয়ী হয়েছে,অনেকে বাধা দিতে গিয়ে প্রাণ হারান এমন নজিরও আছে। তবে ভয় পেয়ে পিছিয়ে থাকলে মুখ বুজে কখনো বুকে ধাক্কা কখনো পেছনে ধাক্কা সহ্য করলে সমাজের শরীরে একটু একটু করে ক্ষত সৃষ্টি হবে যার সমস্যা অনেক গভীরে। লালসা আর ভোগ ছড়িয়ে পড়েছে এভাবে সমাজের বিভিন্নস্তরে,ঘরে বাইরে এমনকি দূরদর্শনেও যথেচ্ছে দেখা যায় দুটো তিনটে বউ রাখার উদাহরণ। অবাক হয়ে মনে হয় এটাই কি তাহলে সমাজের প্রতিচ্ছবি? হোয়াটসআ্যপ ফেসবুক জুড়ে নোংরা ভিডিও আর নোংরা জোকস এর ছড়াছড়ি। একটা ভালো গল্পের পাঠক অনেক কম,অশ্লীল জোকস বা খারাপ ভিডিও মুহূর্তে ছড়িয়ে পরে মোবাইল থেকে মোবাইলে। পড়ে মজা নেন বিভিন্নবয়সী লোকজন। অকপটে ঘরে পতিব্রতা স্ত্রী বা গ্যালারি ভর্তি তাকে নিয়ে ছবি থাকলেও প্রেম করার মানে ফ্রীতে টাইমপাস করার ইচ্ছা অনেকেরই। চা কফি খাওয়ার আহ্বানে সাড়া দিতে না পারলে বন্ধুবিচ্ছেদ হয় অনেকক্ষেত্রেই। তাই যেটা অনুচিত তাকে পরিস্কার করে না বলতে শেখো।
ভয় পেয়োনা,সমাজে ভালো মানুষের সংখ্যাই বেশি। একটু একটু করে প্রতিরোধ গড়ে তোলো,সন্তানকে বড় করে তোলো মানবিকতা আর মূল্যবোধে। প্রথমে মা,ঠাকুমা,দিদিমা আর পরে মেয়েদের যাতে প্রকৃত সম্মান করতে পারে।ওদের কার্টুনে রেখে নিজেরা হোয়াটস আ্যপ বা ফেসবুকে থেকে শুধুই সেলফিতে খুঁজোনা লাইকের মানে। আমি একা কি করবো কি আর করতে পারি তা ভেবোনা তুমি তোমার মত প্রতিরোধ গড়ে তোলো। যেমন দূর্বা ওর ছাত্রীদের নিয়ে করেছে রক্ষাশ্রী,সমাজের ছোট ছোট অন্যায়গুলোর প্রতিবাদ করে নিজেদের ভালো রাখার চেষ্টা করে ওরা। কখনো বা মাতাল বাবার পেটানির হাত থেকে মাকেও বাঁচায়,প্রতিবাদ করে। অন্ততপক্ষে ভীড়ে কেউ গায়ে হাত দিলে বেশ করে পা টা মাড়িয়ে দিয়ে বলতে পারে, "সরি দাদা আপনার সুড়সুড়িতে পা স্লিপ করে গেছে।" সেল্ফডিফেন্সের মেডেল গলায় ঝুলিয়ে এসে যখন বলে," দিদি এক রাউন্ড দেখাবো। এটা পেয়েছি।" মনটা ভরে যায় দূর্বার। অনেকেই বলে মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু। আবার কেউ বলে,মেয়েরা শোষণও করে আবার ভাষণও দেয়। তবে সামাজিক অনুশাসনে আর সমাজ গড়ায় মেয়েদের ভূমিকাই হয়ত বেশি। দূর্বা শ্রদ্ধা করে পুরুষকে,কখনোই পিতা স্বামী বা সন্তানকে ধর্ষক দলভুক্ত বলে মানতে মন চায়না। ভালো থাক সমাজের নারীরা একটু একটু করে শান দিক তাদের প্রাকৃতিক অস্ত্রগুলোকে,শুধু মুখে নয় এগিয়ে আসুক নারীরা আর পাশাপাশি পুরুষেরাও সমাজ সংশোধনে আর আত্মসংশোধনে।শুরু হোক আপনার বাড়ীর সন্তানকে দিয়েই,কথাই তো আছে চ্যারিটি বিগিনস আ্যট হোম। দূর্বা তো তাই বলে,আর স্বপ্ন দেখে এক নতুন সমাজের।
আর সেটা তো শুরুও হয়ে গেছে,আজকাল বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মহিলাবাহিনী তৈরী হয়েছে পুরুষেরাও আসছেন এগিয়ে।অসম্মানের বদলে নিশ্চয় আসবে আত্মসম্মান নিয়ে নারী পুরুষ উভয়েরই ভালো থাকার দিন। এতো শুধু নারীদেরই সংকটের দিন নয়।সংকট পুরুষেরও স্বামী,পুত্র,পিতা,ভ্রাতা,বন্ধু হিসেবে। নারীর সম্মান যেমন দোলাচলে,পুরুষের সম্মানও তেমন। তাদেরকেও আর কেউ বিশ্বাস করবেনা এরপর। চরম দুশ্চিন্তায় তারাও থাকবেন বাড়ির প্রিয় বা স্নভালোবাসার পাত্রীর জন্য।আপনারা কি বলেন?©ইচ্ছেখেয়ালে শ্রী🦋🍃
Comments
Post a Comment