Skip to main content

#মাতৃদিবসে_মা#

#ভালো_থাক_মায়েরা#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

সকালে মাথায় ইঁটের বোঝা বা পিঠে জঞ্জালের বস্তা নিয়ে যে মায়েরা ঘুরে বেড়ায় তারা জানেনা মাদার্স ডে কি? শুধু জানে যে ভালো রাখতে হবে সন্তানদের তুলে দিতে হবে একমুঠো গরম ভাত বাচ্ছাদের পাতে। সুন্দর বনের সুষমা,যে বাঘ কুমীরের সাথে লড়াই করে প্রতিনিয়ত ধরে কাঁকড়া বা মাছ। ঝাড়খন্ডের মালতী যে ইটভাটায় সকাল থেকে বইছে ইট। অথবা শেফালী যে ভোর তিনটের লোকাল ট্রেনে সব্জির বস্তা মাথায় করে ওঠে ট্রেনে এমন অগণিত মা প্রতিনিয়ত লড়াই করছে তাদের সন্তানদের বাঁচানোর জন‍্য। আর যেন ঝরেনা তাদের চোখের জল। পাশে থাক সন্তানেরা পাক একটু ভালোবাসা আর সহানুভূতি। বিশ্বের সকল মাকে জানাই প্রণাম।

*****************************************

বিছানায় শুয়ে মা, পা ভেঙেছে। লাবণী সকালে উঠে মাকে যত্ন করে ধরে শাড়িটা পরিয়ে দেয়। আজ আবার অফিসে ফাংশান,তাড়াতাড়ি করে নিজে তৈরি হতে যায়। ইশ শাড়ি পরা সত‍্যিই চাপের মা যে কি করে ম‍্যানেজ করে কে জানে! যাক মোটামুটি হয়েছে।মা ডাকে," এদিকে একটু নিচু হয়ে বোস আমার কাছে পিনটা লাগিয়ে দিই। বেশ পরেছিস শাড়ীটা। বলেছিলাম না সব শিখে যাবি।"
আজ লাবণীর বড্ড বলতে ইচ্ছে করলো," শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই। ভালো থেকো মা।

*******************************************

বিয়ের সময় মায়ের সব গয়নাগুলো চলে গিয়েছিলো প্রায় উর্ণাকে সাজাতে। মনটা যেন বড় ফাঁকা হয়ে গিয়েছিলো সিটি গোল্ডের হার গলায় পরে মাকে ঘুরতে দেখে। প্রাইমারী স্কুলের চাকরিটা পেয়ে মাকে একটু সাজিয়েছিলো নিজের ইচ্ছেমতো,বলেছিলো "এগুলো তোমাকেই মানায় মা। তোমার চেয়ে বেশি দামি যে আর কিছুই  হয়না গো।"©রুমাশ্রী

*******************************************

অপরাজিতা নতুন এসেছে শ্বশুরবাড়িতে। মনে একরাশ চিন্তা নিজে তো একদমই অকম্মার ঢেঁকি আসলে ওর মা ওকে তাই বলতেন। ঘুম থেকে উঠে কি করে যে সব ম‍্যানেজ করে অফিসে যাবে।
অফিস বেরোনোর সময় টিফিন কৌটোটা ব‍্যাগে ভরে দেন শ্বাশুড়ি মা," খেয়ে নিয়ো,তোমার মায়ের কাছে সব শুনেছি।"
    "ইশ্ কি টিপ্পুনি মার্কা কথা! গা জ্বলে যায়।মা আবার কি বললো?"
      "না না তুমি টিফিনে কি খাও তা জিজ্ঞেস করছিলাম। তুমিতো কিছু বললেনা।"
     মুখে একটু মিষ্টি হাসি ফোটে অপরাজিতার। হঠাৎই কানে এলো ছোট্ট করে একটা কথা অকম্মার ঢেঁকি আর সাথে হাসি। কথাটা খারাপ হলেও,কেন যেন বেশ মিষ্টি লাগলো। মায়ের কথা খুব মনে হোলো। মুচকি হাসেন শাশুড়িমা,আমি বকে দিয়েছি বেয়ানকে এসব আবার কি কথা!
 
******************************************
  "মায়ের খুব ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হয়েছে। নিয়ে এসো আজ।" একটু কড়া গলায় বলে অভ্র এখন কত দাম জানো ইলিশের,আরো কিছুদিন অপেক্ষা করো একটু দাম কমুক। ব‍্যাগ থেকে টাকাটা বার করে সুধা বলে," দেখো মাণিকতলায় পাবে।"
  আসলে ভালোবাসা যেমন শেখায় তেমন জীবনযুদ্ধও মানুষকে শেখায়। তাই আজ সুধার খুব ইচ্ছে করলো কিছু দিয়ে নিজের জীবনের না পাওয়াগুলোকে ভুলতে।
   বড়দের অসম্মান করতে যে ওর মা ওকে শেখাননি। ©রুমাশ্রী
******************************************

বৃদ্ধাশ্রমের দরজাটা খুলে দাঁড়িয়ে পেছনে তাকান মায়া। বেশ মায়া পরে গেছে কয়েক বছরে। সবাই দাঁড়িয়ে পেছনে হয়ত ওরাও ফিরতে চায় বাড়িতে।
" বাড়ি চলো মা,আমরা সবাই আবার একসাথে থাকবো।" ছেলে বড় হবার পর হঠাৎই মনে হয়েছিলো টুয়ার যদি তাদেরও এক অবস্থা হয়। দেরিতে হলেও বুঝতে পেরেছে মায়ের দাম।💟

******************************************
এত বয়স্ক মানুষকে নিয়ে মন্দিরে এসেছেন ভীড়ে?সত‍্যি আপনারা পারেন বটে! পাত্তা দেয়না সিধু। মাকে কোলে নিয়ে উঁচু করে জগন্নাথ দর্শন করায়। ছোটবেলায় মা সবসময় কোলে আর বাবা ঘাড়ে করে ঠাকুর দেখাতেন। তাই হোক ভালোবাসার পুনরাবৃত্তি। ফিরিয়ে দিতে চাই তোমায় অনেক কিছু কিন্তু পারিনা।

*******************************************

মা বাবার একমাত্র সন্তান বরুণ, আবার একমাত্র জামাইও। শ্বশুর মশাই চলে যাবার পর ওর মা বলেন, "বেয়ানকে এ বাড়িতে নিয়ে আয়। একা থাকবে কি করে?" দুই মাকে নিয়ে ভালো আছে বরুণ,একটু ব‍্যস্ততা বেড়ে গেছে হয়ত। তবুও তো মায়ের আদর সে যে সবচেয়ে দামী,আবার জামাই আদরও। কজনের এমন ভাগ‍্য হয়! ভালো থাক মায়েরা।

*******************************************

কদিন মায়ের সাথে ভালো করে কথা নেই রজতের। মা যে মাঝে মধ‍্যে কেন এত ঝামেলা আর খিচখিচ করে। সকালে ছেলে জড়িয়ে ধরে বলে,হ‍্যাপি মাদার্স ডে মা। হুঁ মায়ের সাথে ঝগড়া করে আবার....মাকে কথাটা শেষ করতে দেয়না রজত," তোমার সাথেই যে মা আড়ি,ঝগড়া,রাগ আর আদর সবটাই করা যায়। আজ মিল করে নিলাম। কাল আবার শুরু হবে।"
   হাসেন সুনীতি,বড় মিঠে মায়ের মুখের হাসিটা।
"এমনি থেকো মা কখনো ঝাল কখনো মিষ্টি"।

*******************************************
হ‍্যাপি মাদার্স ডে দিদি.. ছাত্রীরা বলে ওঠে রুণাকে। মাকে বলেছিস? আদর করেছিস? হ‍্যাঁআআআ করে উত্তর দেয় ওরা। হঠাৎই এগিয়ে আসে ইতু," আমার তো মা নেই,একটু মাথায় হাত দিয়ে দিন না দিদি।" কাছে টেনে নেয় রুণা,এ যেন এক অন‍্য মাতৃত্বের স্বাদ। অন‍্য মেয়েরাও ছুটে আসে," আমাদেরও মাথায় হাত রাখুন দিদি।"
প্রাণভরে নেয় রুণা মাতৃত্বের স্বাদ।

******************************************

মা কিছু খাবার দেবে? বয়স্ক ভিখারিনীকে দেখে বড্ড মায়ের কথা মনে হলো শ‍্যামার। খাবারের বাক্সটা  কিনে এনে হাতে দিয়ে বললো খেয়ে নিয়ো। কোথায় যেন মনে হোলো মায়েরা থাকে এভাবেই। হাতটা বাড়ালে ক্ষতি কি? 💝

*******************************************
মা মাংস রান্না করলেই বাটি নিয়ে একটু কষা মাংস টেস্ট করবেই মিতু। কিন্তু বাপের বাড়ির মত কি আর শ্বশুরবাড়ি হয়! শাশুড়িমা মাংস রান্না করতে করতে হাঁক পাড়েন," এদিকে এসো দেখি,বাটিটা নিয়ে একটু চেখে দেখো সব ঠিক আছে কিনা।".." মা আমি?"..চেটে মাংসর ঝোলটা খেয়ে পরিতৃপ্তি ছড়ায় মিতুর চোখে মুখে। "ঠিক আছে সব?"..শাশুড়ি মায়ের কথাগুলো বড্ড মায়ের মত শোনালো।©ইচ্ছেখেয়ালে শ্রী

সমাপ্ত:-
      

#মাতৃদিবসে_মা#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

কান পাতে অলকানন্দা মা শ্রীকৃষ্ণের অষ্টত্তর শতনাম পড়ছে,'
কৃষ্ণ ভজিবার তরে সংসারেতে আইনু
মিছা মায়ায় বদ্ধ হইয়া বৃক্ষসম হইনু।
ফলরূপ পুত্র কন‍্যা ডাল ভাঙ্গি পড়ে
কালরূপ সংসারেতে পক্ষ বাসা করে।'
      হঠাৎই মনে পড়ে যায় আজ তো মাদার্স ডে।
মাদার্স ডের ইমেজ আর কোটসে ছয়লাপ ফেসবুক। ছোটবেলায় মাদার্স ডে জানতো না অলকানন্দা,তবে শুধু জানতো মায়েদের কোন বাড়ী হয়না। হয়ত বা হয়না মায়েদের পছন্দের কোন খাবারও। ছোটবেলায় খেতে বসে প্রায়ই বায়না করতো খাওয়া নিয়ে,মা চেষ্টা করতেন এটা ওটা রান্না করে সামাল দিতে। যেদিন বেশ তৃপ্তি করে খেতো,একটা তৃপ্তির হাসি হেসে মা বলতেন," কি খাবি বলবি আমি রান্না করে দেবো,আমি তো ভুলেই গেছি কি খেতে ভালোবাসতাম ছোটবেলায়। বিয়ের পর ও বাড়িতে গেলেই মা তোর বাবার পছন্দমত রান্নাই করতো। না না একেবারে খাইনি বললে ভুল হবে তুই আর বাবু হবার সময় বেশ কিছুদিন ছিলাম মায়ের কাছে তখন বাবা আর মা বলতেন কি খেতে ইচ্ছে করে,যা বলতাম মা রান্না করে দিতো। যদিও বৌদি বিরক্ত হত বুঝতাম।"
      মনে মনে অলকানন্দা ভাবতো,ও যখন বড় হবে চাকরি করবে তখন মাকে খাওয়াবে মায়ের পছন্দের রান্নাগুলো। প্রতিদিন একবার জিজ্ঞেস করে নেবে কি খাবে মা?ঠাকুমাকে মাঝে মাঝেই বলতে শুনতো,এ কেমন তোমার কাজের ছিরি বৌমা,কতদিন বলেছি এ বাড়িতে এসব চলবেনা। মাথা নিচু করে মা বলতো,ঠিক আছে মা আর ভুল হবেনা। কখনো ছোট অলকা আর বাবুকে খাওয়াতে খাওয়াতে চোখটা ছলছল করতো মায়ের। না বুঝেই ও বলতো,' মন খারাপ কোরোনা মা,তোমার মায়ের কাছে যাবে? বাবাকে বলবো?' মা চোখ মুছে হেসে বলতেন," বোকা মেয়ে আমার।" ছোটমেয়েটা তখন বুঝতেই পারেনি বিয়ের পর মায়ের বাড়িটা মেয়েদের আর নিজের বাড়ি থাকেনা। ঠাকুমা মারা যাবার পর একদিন হঠাৎ বাবাকেও বলতে শুনলো," এই যে শোনো সংসারে হাড়ি ঠেলা ছাড়া আর তো কোন কাজে লাগলেনা,কি করে যে এতো খরচ সামলাই তা আমিই জানি। কোথায় টাকা পাও বোনকে নিয়ে আদিখ‍্যেতা করার জন‍্য,নিজের বাড়ি সামলে এতো দিকে আর সামলাতে পারবোনা।"
খুব খারাপ লেগেছিলো,ভেবেছিলো না না ওকে একটা কিছু করতে হবে। মায়ের মত ওকে যেন কেউ বলতে না পারে আমার বাড়িতে এসব চলবেনা। কেমন আশ্চর্য লাগতো মাকে দেখে,মায়ের জীবনে রান্নাঘর আর ঘর গোছানো পূজো করা এসব ছাড়া তেমন কিছু ছিলোনা।
তবুও অলকানন্দার জীবনেরও স্বপ্ন পূরণ হোলোনা, দাদা তখন পড়ছে। অলকানন্দা বি.এ পরীক্ষা দিয়েছে,হঠাৎই বাবার ব‍্যবসার অবস্থা খারাপ হওয়াতে বাবা পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন,আর পড়াতে পারবেননা ওকে,কারণ ছেলেকে পড়াতেই হবে। আর ওর তেমন কোন ভবিষ‍্যতও নেই। তাই বিয়ে হয়ে গেলো অলকানন্দার। আপত্তি করাতে শুনেছিলো বাবার কাছে,' আমার বাড়িতে এসব অবাধ‍্যতা চলবেনা। যদি না পোষায় নিজের ব‍্যবস্থা নিজে করে নাও।' স্বপ্নগুলো সব অধরাই রয়ে গেলো,দাদাকে পড়াশোনার সুযোগ করে অলকানন্দা কণকাঞ্জলি দিয়ে নিজের ঘর খুঁজতে বেরোলো। মাকে নিজের বাড়ি আর নিজের পছন্দমত খাবার খাওয়ানো আর বোধহয় হবেনা। ছোটবেলার সব কথাগুলো রূপকথার মতো মিথ‍্যেই রয়ে গেলো।
           কে জানে শুধু মা বোধহয় বুঝেছিলেন ওর কষ্টটা,তাই বাবার কথা শুনে যখন কান্নায় আর অভিমানে মায়ের কোলে মাথা রেখে ফুঁপিয়েছিলো। এক আপোশ করা খাঁচায় বন্দী নারী আরেকজনকে বলেছিলো,' এমনই রে মেয়েদের জীবন,একদিন আমাদেরই ভুলে যাবি। হয়ত সময়ই পাবিনা এই বাড়িতে আসার স্বামী সংসার সামলে।'
       দুঃখ ভোলাতে স্বপ্নের কাজল পরিয়ে দিয়েছিলেন অলকার চোখে মা।
    শ্বশুর বাড়ির জানালার পর্দায় স্বপ্নের আঁকিবুকি কেটেছিলো অলকানন্দা। ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখতো সুন্দর সুন্দর ফুল। ছোটবেলায় খেলনাবাটি খেলতে খেলতে বড় হয়ে হয়ত সত‍্যিকারের রান্নাঘরটাকেও বেসেছিলো ভালো। সত‍্যিই তাই সময়ই পায়না মায়ের কাছে যাবার একদম। কলকাতা থেকে দিল্লীতে চলে এসেছে অলকানন্দা। তবে যখন পাঁচবছরেও ওর কোন সন্তান এলোনা,তখন একটু বেশিই ঘনিষ্ঠ হয়ে পরলো ওর স্বামী নিশার সঙ্গে। প্রশ্ন করে উত্তর পেয়েছিলো,আমার বাড়িতে আমি যা খুশি করবো। খাচ্ছো,দাচ্ছো,দামী শাড়ী ড্রেস পাচ্ছো এতেই খুশি থাকো। কি গুণ আছে তোমার?"
আবারও একবার বুঝেছিলো অলকা এই বাড়িটাও ওর নিজের বাড়ি নয়।
      সত‍্যিই তো গুণও নেই আর যাবার যায়গাও নেই এর মাঝে দাদারও বিয়ে হয়ে গেছে। আর দাদার বিয়ের কিছুদিন পরেই মারা গেলেন বাবা। মা হয়ত এখন আরো বেশি বোঝা সংসারের। আগের মত তেমন কাজও করতে পারেনা মা। মাঝে মাঝে অলকানন্দাই ফোন করে,সব কথা হয়ত ভালো করে বলতে ও পারেনা মা। এরমাঝেই একদিন শুনলো দাদা খুব চাপ দিচ্ছে বাড়িটা ওর নামে করে দেবার জন‍্য। সমাধান ওরা মা মেয়ে মিলেই করেছিলো দাদাকে বাড়িটা লিখে দিয়েছিলো মা। সুখের চেয়ে স্বস্তি ভালো।
      এর মাঝেই অলকানন্দার বিয়েটা ভেঙে গেলো,উপায় ছিলোনা ডিভোর্স পেপারে সই না করে। সত‍্যিই আর পারছিলোনা অলকা। বাপের বাড়ি না দাদার বাড়ি চলে এলো অলকা। অনেকদিন বাদে আবার কলকাতায়,নিজের পুরোনো শহরে। মায়ের ঘরটা আর মায়ের নেই,ওদের ছোট্ট স্টোররুমটায় মা এখন থাকে। অবাক হলো অলকা,দাদাকে জিজ্ঞেস করাতে উত্তর পেলো,আমাদের এখন সংসার বড় হয়েছে। বাড়িতে লোকজন আসে ঘরের দরকার। মা কি করবে অত বড় ঘর নিয়ে। অলকাও স্বত্ব হারিয়েছে,এ বাড়িটা যে ওর আর মায়ের কারো নয়। তাই মায়ের ঘরেই অনেকদিন বাদে মায়ের একদম কাছে শুয়ে ছোটবেলার সেই মিষ্টি গন্ধটা পেলো। একসময় জিজ্ঞেস করতো মা তুমি গায়ে কি মাখো গো?
           একটা কাজের খোঁজে তখন দিশাহারা হয়ে ঘুরছে অলকানন্দা,যা হোক একটা কাজ। মেয়েদের যে নিজের পায়ে দাঁড়ানো কত জরুরী সেটা অনুভব করে কষ্ট পায়,দিশাহারা লাগে। হঠাৎই দেখা হয়ে যায় তুলির সাথে,ওর সাথে পড়তো। হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় ওকে বাড়িতে কত গল্প হোলো। অবাক হয়ে যায় অলকা বিয়ে করেনি তুলি,মা আর মেয়ে থাকতো। মা মারা যাবার পর এখন একা। হঠাৎই বলে,' কি করছিস? কাজ করবি? তুই তো খুব ভালো সেলাই করতিস আর ছবি আঁকতিস,এখন করিস না?সত‍্যিই তো একটা কাজের খুব প্রয়োজন তার,তুলিকে বলতে পারেনি সে কথা। সত‍্যি কি ভালো আছে তুলি!আসলে ওকে তো কেউ বলেনা আমার বাড়িতে এসব চলবেনা। তুলির নিজের একটা বাড়ি আছে।
       তুলির উদ‍্যোগে কিছু গয়না বিক্রী করে,তুলির সাথেই শুরু করলো হস্তশিল্পের ব‍্যাবসা। কিছু করতে পারলো অলকানন্দা,ওর স্বপ্ন সত‍্যির পথ দেখালো তুলি। এই কয়েকবছরে দাদার কাছে অনেকবারই শুনেছে,সারাদিন বাড়িতে থাকিসনা সংসারের কোন কাজে লাগিসনা এইসব আমার বাড়িতে চলবেনা। একটা অপদার্থ! না করলি সংসার,না হোলো পড়াশোনা।সহ‍্য করলো অলকা নিরুপায় হয়ে।কাঁদলো মা আর মেয়ে দুজনে দুজনকে জড়িয়ে,সত‍্যিই তো ওদের নিজের বাড়ি নেই। তাই কখনো শাশুড়ি,কখনো স্বামী আবার কখনো আত্মজর কাছে শুনতে হয় জীবনের প্রতি ধাপে,আমার বাড়িতে এসব চলবেনা।
          মায়ের হাত ধরে অলকানন্দা চলে এসেছিলো ওদের বাড়িতে মানে যেখানে শুধুই থাকবে ও আর মা,অনেক কষ্টে অনেক লড়াইয়ে মাকে দিতে পেরেছে এমন একটা বাড়ি যেখানে কেউ বলতে পারবেনা আমার বাড়িতে এসব চলবেনা। এক কামরার ফ্ল্যাট,একটাই ঘর সেখানে তবুও শান্তির নীড় আর সেটাই অলকানন্দার স্বপ্ন দেখার একটুকরো আকাশ। সত‍্যিই মাদার্সডের কথা ভাবতে ভাবতে কোথায় যে হারিয়ে গিয়েছিলো মনটা। রান্নাঘরে গিয়ে আজ ফুলকো লুচিটা ভেজে প্লেটে সাজায় অলকানন্দা। মায়ের পছন্দের ভুলে যাওয়া পুরোনো রান্নাগুলো আবার মনে পড়েছে মায়ের, এক একদিন একেকটা রান্না হয়। ব‍্যাচেলর লাইফ এনজয় করো মা আবার সুখি থেকো নিজেকে নিজের ইচ্ছেমতো রেখে। মা দিবসে একটু মুক্তির স্বাদ নাও তোমার স্বপ্নের পৃথিবীতে। মনে মনে বলে অলকানন্দা। জানেনা মা কতটা খুশি এ জীবনে,আসলে খাঁচাবন্দী পাখি কখন যে খাঁচাটাকেই খোলা আকাশ ভেবে নেয়।
         পূজো সেরে উঠে এসেছে মা, মাকে প্রণাম করে পরম আশ্রয়ে মায়ের ঘাড়ে মাথাটা রাখে পরম তৃপ্তিতে। মনে মনে বলে,'আছি গো মা,অনুভব করি তোমায়,ভালো রাখতে চাই তোমাকে। শুধু মাদার্স ডে নয় ভালো থাক আর সম্মানিত হোক মায়েরা বাকি তিনশো চৌষট্টি দিনেও। সন্তানের কাছে সব দিনগুলোই হোক মায়েদের একটু ভালো রাখার দিন। অক্লান্ত পরিশ্রমের ফাঁকে একটু সহানুভূতির স্পর্শ মাখিয়ে দিলে ক্ষতি কি? ফেসবুক স্ট‍্যাটাসে মাকে রাখার সাথে সাথে মণের মণিকোঠায় যত্নে থাক মায়েরা একটু ভালোবাসায় আর সহানুভূতিতে।
    সমাপ্ত:-
     

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...