#আমার_রবীন্দ্রনাথ#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
যখন আমার দুই
**************
খুব ছোটোবেলায় তখনো গুছিয়ে সবটা বলতে
পারতাম না,বাড়িতে কবিগুরুর ছবি দেখে মা কে বলতাম,নমো করি। ঠাকুর....মা বলতেন এ ঠাকুর অন্য ঠাকুর। বড় হও বলবো। নমো নমো করো।
আমি যখন চারে
***************
কদিন ধরে মায়ের স্কুলে ভীষণ তোড়জোড়,দাদা দিদিরা করবে নাটক,গাইবে আর নাচবে। শিশু ভোলানাথ হাতে নিয়ে আমিও করছি ঘোরাঘুরি। মুখস্থ হয়েই গেছে প্রায়। মিঠে গলায় বলছি," তোমার কাছে আমি দুষ্টু ভালো যে আর সবাই।"
বিরাট বড় প্যান্ডেল ভাই,সামনে হাজার লোক একটু বলেই শেষের দিকে,গিলছি আমি ঢোক। বন্ধুরা সামনে বসে করলো হাসাহাসি,বলার মাঝেই ধমকে দিলাম।
আমার যখন আট
****************
সবেই তখন পেরিয়েছি ক্লাশ থ্রীর চৌকাঠ। সহজপাঠে মজা করে বাংলা শেখা মন,ছবির আর ছন্দের সাথে বেড়ায় সারাক্ষণ। ঘটা করে আমাদের স্কুলে রবীন্দ্রজয়ন্তী হোত। সে যেন এক অদ্ভুত মন ভালো করা সময়। ইন্টারনেটের দৌরাত্ম্য নেই,নেই সেলফির ঘনঘটা। সবাই করছে মাতামাতি,হয় যেন ভালো নাটকটা। পুঁচকে দের নাটক ছিলো ডাকঘর,আমায় করলো সুধা। পায়ে মল আর হাতে সাজি নিয়ে বেশ জমিয়ে করলাম আমার পার্টটা। হাততালি পড়লো অনেক,মনে একঝুড়ি খুশির মেলা। রূপোর একটা ছোট্ট মেডেলও গলায় ঝুললো। কবিগুরুর ছবিতে প্রণাম করে ঠাকুর ভেবেই আশীর্বাদ নিলাম,মেডেলটা ছুঁইয়ে নিলাম পায়ে।
যখন আমার বারো
******************
মনে ধরেছিলো কবিগুরুর গান,'আমি ভয় করবোনা ভয় করবোনা। দুবেলা মরার আগে মরবো না ভাই মরবো না।' গাইতাম কোরাসে,প্রাণে জাগতো সাহস। বাড়তো আত্মবিশ্বাস। তখন প্রিয় কবিতা ছিলো নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ।
পনেরোতে যখন আমি
*********************
একটু একটু আসছে জীবনে বসন্তের হাতছানি। মনে পেতাম সাহস গাইতাম," সঙ্কোচের বিহ্বলতায় নিজেরে অপমান।" ভালো লাগতো ভাটিয়ালি সুরে কবির গানগুলো। চাঁদনি রাতে খোলা মাঠে হাঁটতে হাঁটতে কবির সুরেই মিলাতাম সুর।
সতেরোয় পা
*************
ছোটবেলার ঠাকুর কবি আজ যে বড় আপন। সাহস,ভালোবাসা,প্রেম অনুরাগ সবেই যে কবি। অভিনয় করলাম কর্ণ কুন্তী সংবাদে। সে ক্যাসেট আজ নষ্ট কালের নিয়মে। একসময় কতসময় কাটাতাম স্মৃতির অনুরণনে বসে বসে নিজের কন্ঠস্বর শুনে।
সাবালিকা আমি
***************
কবির গানে মানসপ্রেমে খেয়েছি হাবুডুবু। কবিগুরু তার সুরের উপাচার সাজিয়ে ছিলেন নানা সময়ে নানা ভাবে। জীবনে তখন একটুকু ছোঁয়া লাগে একটুকু কথা শুনি। কলেজে গিয়ে খুব মিস করতাম ছেলেবেলার জোব্বা দাদু রবীন্দ্রনাথকে। আর আমার স্কুলের ফাংশানটা।
কলেজে খুঁজে পেয়েছিলাম কবিকে,কিন্তু কেমন যেন অচেনা লেগেছিলো।
আমার যৌবনে রবীন্দ্রনাথ
*******************
ততদিনে বন্ধু হয়ে গিয়েছেন কবি। রাতে শুয়ে শুয়ে অনেক কথা হোত গুণগুণ করে কবির গানে গানে মনে মনে। ততদিনে ভ্রমরও এসে মাঝে মাঝে শুনিয়ে যাচ্ছে আসছে কেউ আমার জীবনে। তারপর আমার রবীন্দ্র সঙ্গীতপ্রেমী স্বামীর সাথে গানে গানে বেঁধেছি ঘর। সাজিয়েছি সংসার আর তার মাঝে মাঝে খুঁজে পেয়েছি প্রেমের রবীন্দ্রনাথকে।
কবি থাকবেন মননে যতদিন আছি
******************************
শোকে স্তব্ধ হয়ে আশ্রয় খুঁজেছি কবির কাছে পিতারূপে। শান্তি খুঁজেছি, 'আছে দুঃখ আছে মৃত্যুতে। ' সারাদিনের আঘাতে আর শ্রমে ক্ষতবিক্ষত হয়ে কবির কথাতেই ঈশ্বরকে বলি,' ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু,পথে যদি পিছিয়ে পড়ি কভু।' অথবা বোঝাপড়া কবিতার লাইনগুলো বুঝিয়ে যায় মনকে...' মনেরে আজ কহ যে, ভালো মন্দ যাহাই আসুক সত্যেরে লও সহজে।'
আবার ভাগাড়ের মাংস খেলো যখন বঙ্গবাসী তখন কবির মজার গানটা খুব মনে পড়ে, অসামান্য ছিলো তাঁর প্রতিভা...
কত কাল রবে বল' ভারত রে. শুধু ডাল ভাত জল পথ্য ক'রে । দেশে অন্নজলের হল ঘোর অনটন—. ধর' হুইস্কি-সোডা আর মুর্গি-মটন । যাও ঠাকুর চৈতন-চুট্কি নিয়া—
কবিগুরু তখন যদি জানতেন বাঙালীকে শেষ পর্যন্ত ভাগাড়ের মাংস খেতে হোলো,মুর্গি মটনের বদলে না জানি কি বলতেন উনি। হে গুরুদেব বাঙালীর ডাল,ভাত আর জল খাওয়াই ভালো ছিলো।
---------------অসামান্য কবির সৃষ্টি,ছোট থেকে আজ পর্যন্ত জীবনের প্রতি পরিবর্তিত পর্যায়ে তাঁকেই পেয়েছি আপন করে। কবির গানে এসেছে,প্রেম আর আনন্দ। জয় করেছি দুঃখ আর মৃত্যুশোক। এভাবেই হয়তো সাথে সাথে হাত ধরে পার হবো জীবনের পড়ে থাকা বাকি কটা দিন আমার রবীন্দ্রনাথের সাথে। কবির জন্মদিনে তাঁর গানেই তাঁকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাই,' হে নূতন, দেখা দিক আর-বার জন্মের প্রথম শুভক্ষণ।'
লেডিজ সীটের সামনে দাঁড়িয়ে রিমা,উল্টোদিকে মেয়েটি বসে আছে তন্বী,সুন্দরী। ফ্রক পরেছে,বাহ্ বেশ লাগছে। হঠাৎই নজর পরে কানে হেডফোন আর হাতে মোবাইলে সে এতো ব্যস্ত যে তার
#ভরা_থাক_স্মৃতিসুধায়#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
ওহ্ তোর শাশুমা তো দারুণ! পুরো ছেলের বিয়েতে বরযাত্রী চলে এসেছে,ভাবা যায়না! কথাটা শুনে একটু ভ্যাবাচাকা লেগেছিলো বছর দশেক আগে বসুধার। উত্তরবঙ্গের মেয়ে বসুধা,ছোটো থেকেই একটু ঠান্ডা গোছের। মা বলতেন গোবেচারা। একটু চালাকচতুর না হলে সবাই তোকে বোকা বানাবে। সত্যিই এভাবে কতই যে বোকা হয়েছে ভাইয়ের কাছে তার কোন ঠিক নেই। সবচেয়ে তাড়াতাড়ি বিশ্বাস করে ফেলতো যে কোন জিনিস। চোখ গোলগোল করে ভাবতো এমনটা হয় সত্যি! কখনো আকাশে কল্পনায় মেঘে হাতি দেখতো। কখনো বা রাতে ভয় পেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরতো।
ইউনিভার্সিটির প্রেম ওদের, কি করে যে ডানপিটে স্পোর্টসম্যান ছেলেটা ওর প্রেমে পড়লো ও বুঝতেই পারেনি। যদিও এক ক্লাশ সিনিয়র তবুও নবীনবরণের দিনই বসুধার গলায় 'জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ' শুনে বড়ো মিঠে লেগেছিলো বরুণের কি যে অপূর্ব গেয়েছিলো! অন্যদের সাথে গলা মিলিয়েছিলো হয়ে যাক আরেকটা,বসুধা ধরেছিলো,' কৃষ্ণকলি আমি তারে বলি।' মনে মনে ভেসে গিয়েছিলো পুলকে এক যুবক মনে হয়েছিলো স্বয়ং কৃষ্ণকলিই বোধহয় কবির গানের মাধুর্যে মুগ্ধ করেছে সবাইকে। পরপর বসুধার তিনটে গান ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো বরুণকে কোন বসন্তের রঙিন উৎসবে। অদ্ভুত মায়াবী চোখদুটো মেয়েটার, কিন্তু এতো কথা কম বলে কেনো? আলাপ করাই যাচ্ছেনা তেমন ভাবে। ওদের হস্টেলের পাশের রুমে থাকা সোমাদিই প্রথম বলেছিলো, "বরুণটাকে কি করলিরে বসুধা? সবসময় করিডোরে ঘোরাঘুরি করে। আজকাল রাত জেগে তোর স্বপ্ন দেখতে দেখতে প্র্যাকটিসেও নাকি যেতে পারছেনা। একটু দেখ তাকিয়ে মা আর মুখ ফিরিয়ে থাকিসনে।"
লজ্জায় মুখ লুকিয়ে চলে গিয়েছিলো বসুধা। ঘরে গিয়ে অদ্ভুত একটা অনুভূতি হয়েছিলো ভালো লাগার। শাল সেগুনের মনকেমন করা প্রকৃতিতে এভাবেই কখন যে প্রেমটা হয়ে গিয়েছিলো বুঝতেই পারেনি। বরুণ অনর্গল কথা বলতো আর বসুধা শুনতো। শুধু মাঝে মাঝে রবিঠাকুরের গান শোনাতো কখনো আমার পরাণ যাহা চায় গলা মেলাতো বরুণও আবার কখনো আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ।.."নাহ্ এটা তুই গা আমার হবেনা,আমি শুনি। অদ্ভুত মাদকতা তোর গলায় সুধা,ওহ্ এই গানটাই যে আমায় একদম বোল্ড আউট করে দিলো।" কোকড়াচুলের ঝাপটায় কখনো ঢাকতো বরুণের মুখও, আদর করে বলতো,'কেশবতী কন্যা।' বসুধার একবছর আগেই চলে গিয়েছিলো পাশ করে বরুণ।" আমায় ভুলে যাবেনা তো?"..." না না আর দুটো বছর অপেক্ষা কর এক্বেবারে বরযাত্রী নিয়ে আসবো।"... " তোমার মা মেনে নেবে তো?"
"ওহ আমার বেষ্টফ্রেন্ড, একটু জেলাসি করবে হয়ত। আমি ম্যানেজ করে নেবো। আসলে বাবা চলে যাবার পর আমিই তো জগৎ মায়ের।ভালো থাকার অক্সিজেন। তুই তো দেখিসনি মাকে, কি যে ভালো মানুষ বুকভরা দুঃখকে মেনে নিয়ে যে মানুষ!কিভাবে যে ভালো থাকতে পারে কষ্ট নিয়েও, মাকে না দেখলে বুঝতেই পারবিনা।"
সত্যিই আশ্চর্য ভদ্রমহিলা,বসুধাকে একবার দেখতেও এলেননা। স্পোর্টসের জন্য খুব ভালো চাকরি হয়ে গিয়েছিলো বরুণের নেভিতে তাছাড়া রেজাল্টও খুব ভালো ছিলো। বসুধা পাশ করে যাবার পর আর বেশি দেরী করেনি বরুণ। বিয়েটা সেরে নিতে চেয়েছিলো তাড়াতাড়ি। আর বিয়ের বরযাত্রীতে খুব আনন্দ করে এসেছিলেন ওর শাশুড়িমা। ওদের তল্লাটে বেশ সাড়া পরে গিয়েছিলো সবাই বলাবলি করেছিলো কলকাতার মানুষেরা অত নিয়ম মানেনা তাই মা চলে এসেছে ছেলের বিয়েতে। তবে বিয়েটা দুই মায়ের কেউ দেখেনি। ঐসময়টা দুই বেয়ান গল্প করেই কাটিয়েছেন। ওর মা মুগ্ধ হয়েছিলেন, বলেছিলেন "সত্যি ভাগ্য করে শাশুড়ি পেলি মা। তোকে আর ঠকতে হবেনা,আমি একটু নিশ্চিন্ত হলাম আমার এই গোবেচারা মেয়েটাকে নিয়ে।"
সুখের সংসার হয়েছিলো বসুধার,না না একদম জেলাসি করেননি বরুণের মা। তবে বসুধার যেন মনে হয় খুব যেন হাল্কা মেজাজের শাশুড়িমা ,আরো একটু বেশি শাশুড়িমা মেজারের হলেই ভালো হোত। শুধু বরুণ বলতো," আমার বেষ্টফ্রন্ড ভালো তো?তোমার কেমন লাগছে?"সত্যিই তো ওনার সম্বন্ধে কোন অভিযোগই চলেনা। হয়ত এতোটা ফ্রীভাবে বসুধাই মিশতে পারতোনা।
মাঝে মাঝে ওনার ছেলেমানুষী দেখে হাসিই পেতো। কখনো চুরমুর খাচ্ছেন কখনো বা ফুচকা। বরুণ এলেই শিশি ভর্তি খাবার দাবার এনে রাখতো,কখনো বা বাইরে থেকে আনতো নানা খাবার দাবার। এর মাঝেই সংসারে এসেছে আরেকজন নতুন সদস্য। নাতনিকে নিয়ে মজার সংসার ছিলো ঠাকুমার। মনটা ভালো হয়ে যেতো বসুধার আর বরুণের যাক তবুও অনেক না পাওয়া নিয়ে ভালো থাক মানুষটা কিছু পেয়ে।
তবুও কেনো যে ভালো সময়টা বেশিক্ষণ থাকেনা মানুষের জীবনে কে জানে? হঠাৎই খবর এলো বরুণ আর নেই,অনেকের সাথে ও চলে গেছে আ্যক্সিডেন্টে। এর থেকে বোধহয় আকাশটা মাথায় ভেঙে পড়লেও ভালো হোত বেশি। বসুধার মনে হয়েছিলো, কি মনে হয়েছিলো তা অনেকদিন মনেই করতে পারেনি। কি করেছিলো তাও মনে পড়েনা ভালো করে। সামলেছিলেন শাশুড়িমা বলেছিলেন," স্বর্গে বোধহয় আবার ভালোমানুষের অভাব পড়েছে। কিন্তু আমার কোলটাই খালি হোলো। আমাকেও তো নিতে পারতো ডেকে। আমি কি সত্যিই অকম্মা কারো কোনো কাজে লাগিনা! আছে ও আমাদের মাঝেই কোথাও আছে।"
হঠাৎই বসুধার ঘোরের মাঝে শুনতে পায় একটা গান। স্তব্ধ হয়ে হঠাৎই উঠে যায় শাশুড়িমায়ের ঘরের দিকে। পুরোনো টেপরেকর্ডারটা চালিয়ে শুনছেন," যখন পড়বেনা মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে।"...কার গাওয়া গান? অদ্ভুত সুন্দর! দুচোখ বেয়ে জলের ধারা গড়িয়ে পরে বসুধার। আত্মমগ্ন হয়ে রয়েছেন মা,খেয়ালই করেননি বসুধাকে। গান শেষ হওয়ার পর চোখ খুলেই বসুধাকে বলেন," তোমার শ্বশুরমশাইয়ের গাওয়া। অদ্ভুত সুন্দর গাইতেন। বরুণের গলাতেও সুর ছিলো কিন্তু আমি আর শিখতে দিইনি। ভেবেছিলাম যদি অসময়ে ডাক পড়ে স্বর্গে,গাইবার জন্য। কিন্তু সেই তো চলেই গেলো।"
ভেঙে পড়া বসুধাকে সামলেছিলেন একটু একটু করে রবিঠাকুরের হাত ধরে। "তোকে তো বাঁচতে হবে সুধা। দিদিভাইকে কে দেখবে শুনি? আমি এবার আর কোনদিকে তাকাবোনা,অনেকদিন আছি সংসার বুকে নিয়ে। সবাই স্বার্থপর যে যার মতো চলে গেলো মজা করে।"
হাতটা চেপে ধরে বসুধা খোঁজে একটু অবলম্বন। কখন যে গানটা বেজে ওঠে বুঝতেই পারেনি," আছে দুঃখ,আছে মৃত্যু বিরহদহন লাগে। তবুও শান্তি,তবু আনন্দ,তবু অনন্ত জাগে।"
মা চালিয়েছিলেন হয়ত ওরই অজান্তে। গান শেষ হওয়ার পর দুজনেরই চোখে জলের ধারা। নীরবতা ভাঙেন মা," আসলে আমাদের শোক,দুঃখ,আনন্দ আর ভালোবাসায় আছেন কবিগুরু পরম অবলম্বন হয়ে। তোদের বাবা চলে যাবার পর এই গান গুলোর জন্যই যে কখন উঠে দাঁড়িয়েছি বুঝতেই পারিনি। অথচ একসময় রবীন্দ্রসঙ্গীত ভালো লাগতো বলেই শুনতাম,এভাবে অর্থ উপলব্ধি করাই হয়নি কোনদিন। সেইজন্যই তো বাবু তোর গান শুনেই ভালোবেসে ফেলেছিলো। দুষ্টুটা সব কথা আমায় বলতো,না বললে শান্তিই পেতোনা। গানই তোকে বাঁচিয়ে রাখবে,গান যে তোকে গাইতেই হবে। নিজেকে সঁপে দে পরম নির্ভরতায় কবিগুরুর গানে।"
কোথা থেকে এতো শক্তি পেয়েছেন মা,আশ্চর্য হয় বসুধা সত্যিই হয়ত সঙ্গীতেই খুঁজে পেয়েছেন জীবনের উপলব্ধি। বসুধাকেও যে বাঁচতে হবে,ভালো থাকতে হবে ওদের সন্তানের জন্য। শোক আর বিরহের মধ্যেও তাই মনে এলো," ভরা থাক স্মৃতিসুধায়,হৃদয়ের পাত্রখানি।"
বসুধার গানের স্কুলের উদ্বোধন আজ, আলমারি খুলে ঘিয়ে লাল,সবুজ,হলুদ দেওয়া যত্নে রাখা ঢাকাইটা হাতে তুলে দিয়ে মা বলেন," অন্য সব রঙের মতো লালও একটা রঙ। তোমায় ভালো থাকতে দেখলে দিদিভাই খুশি হবে। জীবনে আনন্দ,দুঃখের সাথে সাথে থাক সঙ্গীত আর রামধনুর সাতরঙের মেলবন্ধনও।"
দক্ষিণের জানালা খোলা,টেবিলে বাবুর ছবিখানা রাখা ওর বাবার পাশেই। বসুধার গান ভেসে আসছে,' আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে তাই হেরি তাই সকল খানে।।'
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment