আলো ৫) আমি মারের সাগর পারি দিতে ৬)আমার সকল রসের ধারা ৭)প্রাণ চায় চক্ষু না চায় ৮) বসন্তে ফুল গাঁথলো
'আজি হতে শতবর্ষ পরে কে তুমি পড়িছো বসি আমার কবিতাখানি কৌতূহল ভরে'..... নিজের মতো করে কবিগুরু রচনা করে গেছেন তাঁর জন্য আর সবার জন্য। তাই কবিকে প্রণাম জানাই তাঁর সৃষ্টি করা সুধাময় গানে । প্রকৃতিতে ফুলে ফুলে পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে তাঁর রচনার সৌরভ। আকাশ থেকে ঝড়ে পরা বৃষ্টির শব্দ যে এতো মিষ্টি হতে পারে আর সেই শব্দেও মন নেচে উঠতে পারে ময়ূরের মতো,এমন ভাবনা কেবল কবিই ভাবতে পারেন।প্রকৃতির ছন্দে ছন্দ মিলিয়ে কবি সৃষ্টি করেছেন তাঁর অপূর্ব সুধামাখানো সাহিত্যসম্ভার যা হৃদয়কে নাড়া দিয়ে যায় আনন্দে,শোকে,প্রেমে আর বিরহে।
আজ আমাদের আয়োজিত আমাদের রবীনঠাকুর অনুষ্ঠানে আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই প্রাণের কবিকে যাঁর কাব্যের মাধুর্যে প্রতিদিন হয় সৌরভে সুন্দর, মাধুর্যে পরিপূর্ণ। জীবনের চলার পথে কবি আছেন প্রতিনিয়ত আমাদের সাথে সকল কাজে। আগুনের পরশমণির ছোঁওয়ায় জীবনের অনেক অসম্পূর্ণতাই হয় পূর্ণ।
মহাবিশ্ব, মহাকাশ এক অপূর্ব বিস্ময়,যা সাধারণ মানুষকে করে আবিষ্ট,মুগ্ধ। হয়ত বা স্বয়ং বিশ্বনাথ নিয়ন্ত্রণ করেন এই বিশ্বকে সবার অলক্ষ্যে বসে। বিশ্বের রহস্যে আবিষ্ট হয়ে কবি তার মতো করে বলেছেন ....মহাবিশ্বে মহাকাশে।
আলোর ছটায় কবি ভরিয়ে দিতে চেয়েছেন বিশ্বমানবের অন্তর। নিজেও মুগ্ধ হয়ে দুচোখ আর অন্তর দিয়ে উপভোগ করেছেন আলোকের মাধুর্য। একদিকে তিনি বলেছেন,' আলোকে মোর চক্ষুদুটি মুগ্ধ হয়ে উঠলো ফুটি। আবার তিনি আধার কেও আমন্ত্রণ করেছেন জীবনে। নিজের জীবনেও কখনো শোকে দুঃখে কখনো বা আনন্দে একটা কথাই বলেছেন,' মনেরে আজ কহ যে ভালো মন্দ যাহাই আসুক সত্যেরে লও সহজে। এইভাবেই আমরা কবিকে
দেখেছি অপূর্ব এক জীবনীশক্তিতে জীবনের মুখোমুখি হতে। কখনো তিনি আঁধারেই ভালো থেকেছেন,আবার কখনো মুক্তি চেয়েছেন আকাশের অসীম আলোয়। এমনি আলো ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বমানবের জীবনে,দূর হোক কলুষতা,হিংসা আর হানাহানি।
গান....অন্ধকারের উৎস হতে....
জীবনে শোক দুঃখ এসেছে নানা সময়ে কবির জীবনে,শোকে স্তব্ধ হয়েছেন। ব্যাথিত হয়েছেন,তবু থেমে থাকেননি। পরমেশ্বরের কাছে চেয়েছেন এগিয়ে যাওয়ার জন্য সাহস আর আত্মবিশ্বাস। থেমে থাকেনি তাঁর সৃষ্টি শুধু কথা আর ভাবের হয়েছে পরিবর্তন। মনের পরিবর্তনের সাথে সাথে। তাই দুঃখে কাতর কবি বিশ্বপিতার কাছে বলেছেন.....মোরে আরো আরো দাও প্রাণ। এমন করে কজন বলতে পারে,আজ নানা বিপর্যয়ে মন যখন ক্লান্ত তখন কবির সুরে সুর মিলিয়ে আমরাও বলি তাঁর সঙ্গে সেই অমৃত প্রার্থনার কথা....
গান.....প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে।
প্রাণ ভরে বাঁচতে চাওয়া সবার এক অদম্য ইচ্ছা। মুক্তির আশ্বাস কবি খুঁজেছেন তাঁর সৃষ্টির মধ্যে কবিতায় আর গানে নানাভাবে। মুক্তি পেতে চাই আমরা সকল বিশ্বমানব আপন আনন্দে নিজের মতো করে। বাঁচতে চাই প্রাণভরে। ভালো থাকতে চাই,আর ভালো রাখতে চাই সবাইকে সাধ্যমতো। তাই তো নিজের মনের আনন্দ আর খুশিকে ভাগ করে নেওয়া সবার সাথে। প্রকৃতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে খুঁজে পেতে চাওয়া একটুকরো মুক্তির আশ্বাস।
......এই আকাশে আমার মুক্তি আলোয় আলোয়।
মুক্তির আনন্দের রেশটুকু সবসময় রয়ে যায় সুখস্মৃতিতে। মন হয়ে ওঠে উদ্যম আর তারুণ্যে ভরপুর।প্রস্তুত হয় জীবনে যে কোন লড়াই লড়তে।কবিও তার জীবনের ওঠা পড়ার মধ্যে বারবার খুঁজতে চেয়েছেন বেঁচে থাকার আর বাঁচিয়ে রাখির সম্ভার। মনের সব ঘাত প্রতিঘাতে আর বিপদে তাঁরই সঙ্গীতসুধার হাত ধরে আমরাও পাড়ি দিই জীবনসাগর।
.......আমি মারের সাগর পারি...গান।
প্রকৃতির ছয়টি ঋতুর অপূর্ব সাজের সাথে সাথে মানুষের জীবনেও ঘটে ঋতুপর্যায়। জীবনের এক এক পর্যায়ে আসে এক এক রকম উপলব্ধি। মনে কখনো আসে প্রেম,বিরহ আর আনন্দের অপূর্ব সমাহার। জীবনে থাক ভালোবাসার ছোঁয়া প্রতিদিন। জীবন হোক গীতি গন্ধে পরিপূর্ণ কবিও তাই চেয়েছেন। তাই জীবনে প্রেমের বন্দনা করেছেন,ভালো থাকতে চেয়েছেন। তাঁর রচনা আমাদেরও মন ছুঁয়ে গেছে পরিপূর্ণ করেছে।
......আমার সকল রসের ধারা।
প্রাণে দোলা লাগলেও চোখ হয়ত অবনত হয় লাজে। মন ছুঁয়ে যায় এক অপরূপ প্রাপ্তি আর অনুভবে। নীরব মনের কথা বলতে চায় দুটি চোখ তবুও একটু দ্বিধা আর সঙ্কোচের মাধুর্যে মনের ভাষাগুলো হয়ত আরো বেশি প্রকট হয়ে ওঠে। চির বসন্তের আহ্বায়ক কবি সাড়া জাগিয়েছেন প্রাণে ছোট ছোট অনুভূতির অণুরণনে।
প্রাণ চায় চক্ষু না চায়।.......
অনুভূতির জয়েই হয়ত হৃদয়ের জয়। তাই বসন্তের আহ্বায়ক কবি জয়মাল্য নিজেই গেঁথে গিয়েছেন নিজের জন্য। সমস্ত রঙে বর্ণে তাঁর সঙ্গীত এবং রচনার বিপুল সম্ভার তাঁকে জয়ী করেছে বিশ্বমানবের কাছে। শ্রদ্ধা অবনত চিত্তে কবিকে প্রণাম জানিয়ে বলি," হে কবি জয়মাল্য শুধু তোমারেই সাজে তাই বসন্তের ফুলে গাঁথা সুন্দর সুঘ্রাণে ভরা জয়ের মালা আজ তুলে দিলাম তোমারই গলায় শ্রদ্ধাভরে। প্রণাম চরণে কবি।
#মনে_রেখো_মা#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
আমার মা যাকে আমি কখনোও আলাদা করে বলিনি তোমায় খুব ভালোবাসি মা। আসলে ছোটবেলায় তো জানতাম না এমন একটা দিন হয়। পরে যখন জেনেছি তখনও কখনও বলতে ইচ্ছে করতনা তেমন ভাবে। আসলে মায়েরা আমাদের ভালো খারাপ আনন্দ দুঃখ আর নিত্য ঝগড়া ঝামেলার সঙ্গী। যদিও আমাদের সময় আমরা কখনোই মায়েদের মুখে মুখে কথা বলার সাহস পেতামনা বেফাঁস কিছু বলে ফেললেই মা বলতো,"মুখে মুখে কথা বললে একদম মুখ ভেঙে দেবো।" ব্যাস চুপ করে যেতাম একদম। আমার ছোটবেলার শাস্তি ছিলো অপকর্ম কিছু করলেই মা কথা বন্ধ করে দিত। আমার নিজের ভাইবোন ছিলোনা,যদিও দেশের বাড়িতে আমাদের একটা মিষ্টি যৌথ পরিবার ছিলো। তবুও মা বাবার চাকরির জায়গা আলাদা হওয়ায় সেখানে আমি একাই বড় হয়েছি। তাই মা কথা বন্ধ করলেই আমার সমস্ত জগৎ অন্ধকার হয়ে যেত।কাঁদতে কাঁদতে মায়ের পেছন পেছন ঘুরতাম কথা বলার জন্য। কখনও বা পাও ধরেছি মায়ের। মায়ের পেটটা আমার খুব প্রিয় ছিলো,আমি খুব বড় বেবি হয়েছিলাম। মায়ের পেটে ছিলো অসংখ্য দাগ,ঐ পেটটা ছুঁয়ে আমি শুয়ে থাকতাম আর মা বলত মণিষীদের ছেলেবেলার গল্প। কখনও ইতিহাসের নানান গল্প অথবা স্বাধীনতা সংগ্ৰামীদের গল্প।
ছোটবেলা থেকে শুনেছি আমি নাকি আমার বাবার মত দেখতে চোখ,মুখ,নাক এমনকি আমার ছোট খাড়া কানদুটোও নাকি বাবার মত। শুধু একটা জিনিস ছাড়া গায়ের রঙ,ওটা বাবার মত পেলেই দারুণ হত।একেকদিন মাকে বলতাম মা ভালো করে সাবান মাখিয়ে দাও তো আমি বাবার মত ফর্সা হবো। তখন মনে হত মায়ের এতো কিছু ভালো জিনিস আছে তবুও আমাকে সেই কালো রঙটাই শুধু দিলো! মা ছিলো আমার ঘোর সংসারী,সাজগোজ করতনা,নিজের দিকে কখনও তাকাতোনা। অথচ বাবা আর আমি খুব চাইতাম মা একটু সাজুক।মায়ের সংসার ছিলো রান্নাঘরের চার দেওয়ালের মাঝে। ভীষণ ভালোবাসতো ভালো ভালো রান্না করতে। তবে সেই রান্না হবে একদম চটজলদি,বেশি সময় নিলে হবেনা। আমার কিনে দেওয়া সব ভালো শাড়ি যত্নে গুছিয়ে রাখতো পরে পরবে বলে। আমি মায়ের উল্টো চরম অগোছালো,সাজগোজ করতে ভালোবাসি,প্রচুর শাড়ি কিনি গয়নাও পরি ম্যাচিং করে। মা খুশি হত আমাকে দেখে,আমার দামি শাড়ি গয়না সব মায়েরই পছন্দে কেনা।
মা খুব ভালোবাসতো সবাইকে ভালো রাখতে। কারো শরীর খারাপ হলে বা সমস্যায় পড়লে বড় অস্থির হয়ে যেত মা বাবা দুজনেই। অনেক ছুটির দিনেই আমাদের বাড়িতে বাবা নেমন্তন্ন করে গরীবমানুষদের খাওয়াতো। মাকে দেখতাম ক্ষীর থেকে মিষ্টি থেকে সব নিজের হাতে বানিয়ে ওদের খাওয়াতো।
আমার দিদা দাদু মাকে খুকি বলতো ছোটবেলায় খুব হাসি পেতো। আমি তো ছোট খুকি আবার মা খুকি হলো কি করে? অদ্ভুত একটা বন্ধন ছিলো সেইসময়,মা বাড়ির সবচেয়ে বড় হওয়ায় সব ভাইবোনেদের কাছে মা খুব প্রিয় ছিলো। আবার আমার ঠাকুরদা ঠাকুমাকেও দেখেছি মাকে খুব ভালোবাসতে। আমাদের দেশের বাড়িতে খুব বড় পরিবার ছিলো সেখানেও মাকে দেখতাম সবার সাথে হাসিমুখে মিশে যেতে। আসলে মা বাবা সবার জন্য সাধ্যমত করত হয়ত এই ভেবেই যে ভবিষ্যতে তাদের একমাত্র সন্তানটি যেন একা হয়ে না যায়।
মা সাহসী,আত্মপ্রত্যয়ী তেমনভাবে মাকে কখনও কাঁদতে দেখিনি,এমনকি বাবার মৃত্যুর পরেও না। আর আমি আদুরে,নরম মনের একটুতেই কাঁদি। তবুও মা যেমন আমায় বলতো," সব ঠিক হয়ে যাবে ভাবিসনা। বিশ্বাস রাখ সব ভালো হবে দেখিস।" আমি সেভাবেই সন্তানদের বলি এক কথা ওরা ভরসা পায়। মা বোধহয় মায়ের সেরা জিনিসটাই আমাকে দিয়ে গেছে পজিটিভিটি,ভালো থাকার আর রাখার ইচ্ছে।মা চলে গেছে তারাদের দেশে বাবাও নেই। এখন আমি শুধুই আমার মত।তবুও যখন কেউ বলে আমি ওদের মত বড় ভালো লাগে কেন জানিনা হয়ত এটাই উত্তরাধিকার।
মা শব্দটা আমাদের প্রতিদিনের উচ্চারিত একটা প্রিয় শব্দ। কে যেন বলেছিলো আমায় মা বাবারা তারাদের দেশে চলে গেলে তাদের আর ডাকতে নেই তারা কষ্ট পায়। আমার বিয়ের পর টানা এতদিন মায়ের সাথে থাকিনি তাই মা চলে যাওয়ার আগের দিনগুলোতে আবার পেয়েছি মায়ের গায়ের গন্ধ নরম পেটের স্পর্শ।
আঘাতে,যন্ত্রণায়, আনন্দে,দুঃখে বলবোনা ভাবলেও তোমার নামটাই আগে চলে আসে নিজের অজান্তেই বলে ফেলি মাগো মা। কখনও বা একলা মনের মন খারাপে সবার আড়ালে চোখ মুছে বলি এত তাড়ার কি ছিলো শুনি তোমার বরটাই তোমার সব ছিলো তাই তার কষ্ট হচ্ছে দেখে দৌড়লে পেছন পেছন একবার ভাবলেনা মেয়েটার কথা। তুমি মিশেছিলে আমার প্রাত্যহিক কাজে,মন খারাপে,খুশিতে আলাদা করে কোনদিনই ভালোবাসি টাসি বা আই লাভ ইউ মম বলা হয়নি। আচ্ছা মানুষের মৃত্যুর পর কি সে আরও প্রিয় হয়ে যায়? হয়ত বা হয়ে যায় দেবী। আমরা ফটো বাঁধাই বাৎসরিক করি আর লোকজন খাওয়াই। তোমাদের সামনেও ধরে দিই প্লেটে সাজানো ফল আর মিষ্টি। কে জানে তুমি থাকতে তোমায় কতটা যত্ন করেছি! সব সময় পেয়েছি আর নিয়েছি দিতে পারিনি হয়ত কিছুই। তবুও এখনও আমার একলা মন জুলুম করেই বলে..কোথায় চলে টলে গেছো আমি জানিনা সাথে থেকো আর রক্ষা কোরো ছোটবেলার মত বলে দিয়ো ব্যাস যার সাথে মা আছে তার কোন ভয় নেই।
গতবার তুমি ছিলে ফোনে বলেছিলাম হ্যাপি মাদার্স ডে মা..তুমি ভালো থেকো অনেকদিন। এবারও বলতে চাই বড় মা মা করে মনটা গো তাই সাথে থেকো সবসময়।
Comments
Post a Comment