#মাই_ওন_চয়েস#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
"ইশ্ কি যে টিফিন দেয়না মা রোজ রোজ আর ভালো লাগেনা। এই এষা তুই তো খুব ভালোবাসিস পরটা তরকারি,খেয়ে নে সোনা প্লিজ। টিফিন কৌটো খালি না করে নিয়ে গেলে আবার শ্রীমতী মাতৃদেবী আমার ওপর একদম ঝাঁপিয়ে পড়বে। তারপর শুরু হবে কত কথা,শেষে হয়ত কান্নায় শেষ হবে।"
পর্ণার এই কথাগুলো প্রায় মুখস্থ হয়ে গেছে এষার। আর টিফিন খাবোনা,বা না পসন্দ এটা একটা বাহানা ওকে ওর টিফিনটা খাওয়ানোর জন্য।
" প্রতিদিন এক কথা বলিস কেন রে,এতো সুন্দর পরটা আলুর দম লোকে পায়না। আর আজ আমি সত্যিই খেয়ে এসেছি তাই দয়া করে টিফিনটা খেয়ে ধন্য কর। আচ্ছা আয় আমি তোকে খাইয়ে দিই,মুখটা খোল তো।"
....." আগে তুই খা তারপর আমি খাবো,দুটো তুই খাবি,একটা আমি খাবো। "
আপত্তি করেনা এষা,ও জানে ওর কোন বারণ শুনবেনা পর্ণা। আর তাছাড়া এই টিফিনটাই অনেকটা সময় ওর পেটটা ভরিয়ে রাখে। কি করে যে সবটা বুঝে যায় কে জানে! এষারা তিন ভাইবোন,এষা বড় আর ওর দুই ভাইবোন যমজ। ওর বাবার চাকরিটা প্রাইভেট একটা কোম্পানীতে ছিলো এখন বেশ কিছুদিন হলো অন্যদের সাথে বাবাও বেকার হয়ে গেছে। কোম্পানী বন্ধ হয়ে গেছে। বাবা একটা হার্ডওয়ারের দোকানে কাজ করে এখন,এষা কলেজে পড়ে বাংলা অনার্স,ভাইবোন দুটো এখন ক্লাস নাইনে। কলেজের সাথে সাথে এষা কয়েকটা টিউশন করে সেটা দিয়ে ভাইবোনদুটোর সায়েন্সের টিউশনটার খরচ চলে যায়। এছাড়াও বাড়তি কিছু হাতে থাকলে মাকে দিয়ে দেয়,মা কোন মাসে ওটা থেকে ঘাটতিটা মিটিয়ে নেয়। এইভাবেই চলে যায় ওদের তবুও সবসময় হাসিমুখ এষার হয়ত এটাই ওর বেঁচে থাকার শক্তি।
কিভাবে যে পর্ণার সাথে এতোটা বন্ধুত্ব হয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি। এখন তো দুজনের দুজনকে ছাড়া চলেনা। এমনকি ম্যামও যখন একজনকে দেখেননা জিজ্ঞেস করেন,আসলে পর্ণাকে আর এষাকে স্যার ম্যামরা ও ভালোবাসেন। অনেকটা হেল্পও পায় এষা।
....." এই শোননা,আজ একটু আমার সাথে শপিংয়ে যাবি? তোর তো আজ টিউশন নেই।"
..." কিন্তু মাকে তো বলে আসিনি,গুড্ডু আর টিকলিকে আজ একটু পড়াতাম।"
...." আমি কাকিমাকে ফোন করে বলে দিচ্ছি। ওরে তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। তারপর বাড়ি গিয়ে ওদের পড়াস।"
.....খুঁজে খুঁজে ম্যাচিং করে কি যে সুন্দর ড্রেস চটি আর জুয়েলারী পছন্দ করে দিলো পর্ণাকে ওর পিসতুতো দিদির বিয়েতে পরার জন্য যে ভাবা যায়না। অথচ কম দামে সুন্দর জিনিস।
...." এই জন্যই তো তোকে নিয়ে আসি,আমি হলে একগাদা টাকা দিয়ে শুধু ড্রেসটা কিনেই বাড়ি চলে যেতাম।"
...." এই যে মহারানী এখনো ব্যাগটা হয়নি মনে আছে তো।"
..." ওহ্ তাইতো রে,তুইও একটা ব্যাগ কিনে নিবি প্লিজ। অনেকটা টাকা বেচে গেছে। তোর ব্যাগটাও তো গেছে রে।"...." এই পর্ণা ঘুষ এটা না টিপস বলতো? আর কোনদিন আসবোনা কিন্তু এমন বললে তোর সাথে।"
পর্ণাকে এড়িয়ে যাওয়া বোধহয় এষার কম্ম নয় তাই একটা ব্যাগ কিনতেই হলো।
"সত্যি তোর ড্রেস সেন্স এতো ভালো না! ভাবা যায়না রে। খুব খিদে পেয়েছে রে একটু না খেয়ে আর যেতে পারছিনা, চলতো এইইই।"
এষার হাতটা ধরে ওদের সেই ফেভারিট রেষ্টুরেন্টে নিয়ে আসে পর্ণা। ম্যাঙ্গোশেকটা হাতে নিতেই হঠাৎ চোখ পড়ে যায় কোণের টেবলটার দিকে। ফিজিক্সের অনিকেতদা না! সঙ্গে ওটা কে,ওহ্ সেই ন্যাকা রোমিটা। অসহ্য লাগে পর্ণার ও জানে এষা খুব পছন্দ করে অনিকেতদাকে। এর আগে ওদের কলেজের গ্ৰুপ নাটকের সময় একসাথে ওরা অভিনয় করেছিলো। এষা বেশ ব্লাশ করে ওর কথা শুনলে। পর্ণা একটু মধ্যস্থতা করতে চেয়েছিলো,এষা রাগ করেছে এসব করলে ওকে গায়ে পড়া ভাববে অনিকেতদা। তাই মনের কথা মনেই থেকে গেছে।
পর্ণা মুখটা ঘুরিয়ে এষার দিকে তাকাতেই দেখে ওর চোখদুটোও দেখেছে ওদের। মুখটাতে একটু হাসি এনে এষা বলে," খুব ভালো রে শেকটা। অনেকদিন বাদে খেলাম,প্রাণটা জুড়িয়ে গেলো।"...." তোর রাগ হচ্ছেনা ওদের দেখে,আমার তো গা জ্বলে যাচ্ছে।"
...." কেনো রে আমার তো আর কিছুই মনে হয় না। জীবনে এতো না পাওয়া,তাই আর বেশি কিছু পাবার ইচ্ছেও করিনা,ভয় পাই রে।"
....." বোকা হাঁদা একটা তুই,জাষ্ট একটা যা তা। মনটা কাউকে দেখতে দিলিনা।"
....পরম নির্ভরতায় পর্ণার কাঁধে মাথা রাখে এষা,ওদিকে অনিকেত তখন কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করছে রোমির সাথে।
না এষার কোনদিনই বলা হয়নি আর ভালোবাসার কথা তবে অনিকেতদা মাঝে মাঝে বলতো মানে কমপ্লিমেন্ট আর কি," এষার ড্রেস সেন্স কিন্তু খুব সুন্দর,আরে তুই তো ফ্যাশন ডিজাইনার হতে পারতিস।"
....." অনেক কিছুই হতে পারতো অনিকেতদা,তাই বোধহয় ওর কিছুই হলোনা। কেউই ওর দাম বুঝলোনা।"....পর্ণার হাতটা ধরে টেনে ক্যান্টিনের কাছের কৃষ্ণচূড়া গাছটার তলায় এসে দাঁড়ায় এষা। ওর গভীর কালো চোখদুটো অনেক না বলা কথাই বলে যায়।
মাঝে কেটে গেছে বেশ কয়েকবছর,নাহ্ পর্ণার কোন চাকরি হয়নি তখনো,যদিও মাস্টার্স আর বি.এড সবটাই করেছে ইতিমধ্যে। চাকরির জন্যও পরীক্ষা দিয়েছে। অনিকেতদা এখন একটা বন্ধ অপ্রয়োজনীয় বই হয়ে গেছে ধীরে ধীরে ওর জীবনে,একতরফা ভালোলাগায় কিছু হয়না,তা বেশ বুঝেছে এষা তবে ওদের বন্ধুত্বটা রয়ে গেছে,মাঝে মাঝেই দেখা করে ওরা ঐটুকুই একমুঠো খোলা আকাশের রোদ্দুর,মেঘলা মনে।
বাড়িতেও টাকার প্রয়োজন বাড়ছে ধীরে ধীরে। বাবার কর্মক্ষমতা কমছে, ভাইবোনগুলোও বড় হচ্ছে ওদের পড়ার খরচ বাড়ছে। মাঝে মাঝে খুব অসহায় লাগে এষার,কি করে যে সামলাবে বুঝতে পারেনা। কবে এস এস সি দিয়েছে চাকরির কোন নাম নেই। ভরসা শুধু টিউশনগুলো,কি করে যে কি হবে!
এর মাঝেই একদিন দেখা করে পর্ণার সাথে। পর্ণাও প্রেম করছে তাহলে,ওকে চুপিচুপি ফোনে বলে অনেক কথা," এই শোন,তোকে সবটা বলবো। আমি ভাবতেই পারিনি কি করে একেবারে লাট্টু হয়ে গেলাম। ইশ্ তোকে কত বলেছি বল আমার আর প্রেম হবেনা। সেই হয়ে গেলো রে।"...." বেশ হয়েছে,এরপর বিয়ে হবে। আর আমি কব্জি ডুবিয়ে খাবো সাতদিন ধরে। শুধু বিয়ের শপিংয়ের সময় কিন্তু আমায় বাদ দিসনা।"
....." ইশ এখনি বিয়ে করতে আমার বয়েই গেছে। দাড়া আগে চুটিয়ে প্রেম করি,দেখি এর সাথে থাকা যাবে কিনা?"
ফোনে নাকি গপ্পের ঝুলি খালি হচ্ছেনা তাই তলব,সিটিসেন্টারের সামনেই তো দাঁড়াতে বলেছে,ওখান থেকে একটু এগিয়ে গোর্খা কাউন্সিলের সুন্দর নিরিবিলি ছোট রেষ্টুরেন্ট আছে সেখানেই বসবে কথা হয়েছে।
একটু দাঁড়াতেই হৈ হৈ করে হাজির মহারানী,বেশ সুন্দর লাগছে পর্ণাকে। প্রেমে পড়লে কি গ্ল্যামার বাড়ে? কে জানে ওর তো আর হোলোনা এইসব এখন তো ভাবতেই পারেনা। শুধু স্বপ্ন একটাই চাকরি চাই।
....." আরে আরে দেখি তো,আ্যয় এই কুর্তিটা কবে কিনলি শুনি,ওমা কি সুন্দর দুলটারে। আমাকে বলিসনি তো।"
....." খুব সস্তা রে, তোর যে এতো ভালো লাগবে বুঝতেই পারিনি। মা টাকা দিয়েছিলো জন্মদিনে কিছু কেনার জন্য তাই। ভালো হয়েছে রে?"
...." জাস্ট ফাটাফাটি হয়েছে। আসলে তোর ম্যাচিং সেন্সটা এতো ভালো যে দুর্দান্ত লাগে।"
দুজনে আবার অনেকদিনবাদে মুখোমুখি,একটু একটু করে খালি হচ্ছে দুজনের মনে জমে থাকা এলোমেলো শব্দভান্ডারটা। প্রেমে পর্ণা,আর অপ্রেমের অভাবে এষা মিলে মিশে যায় বন্ধুত্বের নিবিড় বাঁধনে। দুজনের মনের কত ভালোলাগা মন্দ লাগা,আলতো ছোঁয়া দেয় গরম মোমোতে কামড় দিতে দিতে।
...." কি এতো মোবাইল নিয়ে খুটখুট করছিস রে,এই জন্যই আমি প্রেম করিনি। আরে চব্বিশঘন্টার মধ্যে কুড়ি ঘন্টাই চলে যাবে প্রেমে।"
পর্ণার খুটখাটের কারণ একটু বাদেই বুঝলো এষা। মিনিট পনেরো বাদেই দুই থেকে ওরা তিন হলো।" সারপ্রাইজ,সারপ্রাইজ এই জন্যই খুটখাট করছিলাম,আলাপ করিয়ে দিই আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড অবশ্য তুমি তো সবই জানো। আর এষা,দেখতো একে মানায় নাকি আমার সাথে?"
একটু লজ্জা পায় প্রথমে এষা তারপরে আকাশই সুন্দর আলাপ করে নেয়,আর অস্বস্তি হয়না। গল্পের শেষে আকাশ তো বলেই দেয়," এষা তুমি আমাকে দাদা বা বন্ধু বলে ভাবতেই পারো,আমার ভালো লাগবে।"
সত্যি বেশ অনেকদিন বাদে দারুণ কাটলো সন্ধ্যেটা। টিউশনের চাপে তো বেড়োনোই হয়না।
দিন পনেরো পর পর্ণার আবার তলব," এই শোন, একটু সময় কর খুব আর্জেন্ট কথা আছে। আমি যাচ্ছি তোদের বাড়িতে।"
বেশ গুছিয়ে মুড়িমাখা খেয়ে পর্ণা যা বললো এষা তো হেসেই কুটিপাটি," ইশ্ কি সব প্ল্যান তোর! এমন আবার হয় নাকি?"....." আরে এটা আমার প্ল্যান নয় আকাশের তবে কিন্তু ফাটাফাটি প্ল্যানটা। তুই রাজি কিনা বল,ফোনে ফোনেই তো হয়ে যাবে মোটামুটি সবটা। এই মানে পছন্দ আর বুদ্ধি বেচে খাওয়া আরকি? আর বেরোতে হলে বেরোবি,আকাশের কাকিমার একটা ডিজাইনার বুটিক আছে প্রথমে ওখান থেকেই শুরু কর।
পর্ণা আর আকাশই তৎপর হয়ে শুরু করিয়েছিলো এষার নিজের আইডিয়া বিক্রীর ব্যবস্থা করাতে। সাজগোজ আর ড্রেসের সমস্ত টিপস দিতো এষা,ধীরে ধীরে অনলাইনে ওর পছন্দমত ম্যাচিং দেখাতে শুরু করলো মানে কোন শাড়ির সাথে কোন জুয়েলারী যায়,সাথে আর কি কি লাগবে। কোথায় কেমন পোশাক হবে? বিয়ে আর রিসেপশনের পুরো সাজটা কেমন হবে সবকিছু। ইভেন অনেক বয়স্ক মানুষ যারা পাজল্ হয়ে যান তাদের সাজ নিয়ে অথচ সাজতে চান সবার জন্যই এষা ভাবলো। মানে একদম পুচকে থেকে সব্বাই।
আর সব শেষে একটু একটু করে এগিয়ে গেলো এষার পেজ 'মানানসই সাজ'...ওয়েবসাইটে। সবদিক দিয়ে পুরোটাই হয়ত ওর দাদার জন্য। আকাশকে এখন সত্যিই এষার দাদা বলে মনে হয়। " তোর পছন্দের কথা সবসময় শুনতাম পার্ণোর(আকাশের আদরের ডাক) কাছে,একদিন ভাবলাম দেখি তো মেয়েটাকে। সত্যি দেখলাম আগুন আছে একটু শুধু জ্বালিয়ে দিতে হবে জাষ্ট।"...." কি যে বলোনা দাদা,তুমি না থাকলে কি এতোটা হত নাকি এই আইডিয়াটাই তো তোমার।"
বাড়িটা সুন্দর করে সামলে নেয় এষা আর খরচের কথা ভাবতে হয়না। আকাশের কাকিমার সাথে কোলাবোরেট করে অনেকটা এগিয়ে গেছে ও,এছাড়া অনেক দোকানই আছে যারা এখন অনলাইন শপিংয়ে ওর "মানানসই সাজের" সাথে আসতে চায়। তবে মাঝে মাঝে একটু সমস্যায় পড়তে হয় এষাকে,আকাশের কাকিমার বুটিকে মাঝে মাঝেই যেতে হয় ওকে। আর ওকে দেখলেই সবাই জানতে চায়,কি পরলে ভালো হবে। পুরো ম্যাচিং করে দিলে তবে ওর ছুটি,অবশ্য এখানেও রোজগার আছে। এটাই এখন ওর পেশা,কিছু করার নেই। কখনো মেসেঞ্জারে,কখনো বা হোয়াটস আ্যপে আবার ওয়েবসাইটেও আছে এষা ওর মানানসই সাজ নিয়ে। অনুরাগীদের লম্বা লিষ্ট,মহিলাই বেশি তবে পুরুষও আছে।
....." এই যে মহারানী,ওরে বাবা তোকে তো পাওয়াই যায়না। ইশ্ কতদিন আড্ডা হয়না,আয়না একদিন।"..." আচ্ছা দাঁড়া এই উইকএন্ডে যাবোই,আমারও খুব বোর লাগছে রে।"....জমজমাট আড্ডা তবে পর্ণার বাড়িতে। এষাকে সত্যিই খুব সুন্দর দেখতে হয়ে গেছে একদম পুরোপুরি প্রফেশনাল লেডি। তবে এষার ঝুলি থেকে বেরোলো মানানসই সাজের পুরো সাজগুজু ম্যাচিং সম্ভার পর্ণা আর আকাশের জন্য।...." কি করেছিস রে,এতো খরচ কেউ করে! সত্যিই তুই একটা পাগল।"...."সবটাই তো তোদের জন্য রে,আকাশদা তোমার পার্ণোর সাথে ড্রেসের ম্যাচিংটা ঠিক ঠাক আছে তো?"...." তুই এনেছিস আর ঠিক হবেনা,কি যে বলিস!"....আনন্দে দুই বন্ধু দুজনকে জড়িয়ে ধরে,মাথা রাখে আদর করে একটু মনের শান্তিতে,ছুঁয়ে যায় একরাশ খুশি।
"কাকিমা,এটা তোমার,দেখোনা কেমন হয়েছে?"পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে এষা ওর আরেক আপনজনকে,যার পাঠানো বাড়তি টিফিন খেয়ে কেটে গেছে কতদিন।
গল্পের মাঝে হঠাৎই ফোন আসে,আকাশের কাকিমা,এষাকে জরুরী তলব কাল যেন অবশ্যই আসে একবার বুটিকে। " উফ্ শান্তি নেই দেখছিস তো।"
পরের দিন ওখানে গিয়ে জানতে পারে ওনার এক খুব পরিচিত কাষ্টমারের ছেলের বিয়ে উনি এষাকে নিয়ে একটু সিলেক্ট করতে চান সব শাড়ীগুলো এমনকি ছেলে বৌমার ড্রেসও। আশ্চর্য হয়ে যায় এষা,এ আবার কি,এখন তো একদিন হবু বৌমাকে নিয়ে বেড়িয়েই কেনাকাটা সারে সবাই,ও পছন্দ করলে যদি ওদের পছন্দ না হয়? পরে জানতে পারে,ছেলের একদম ছুটি নেই জাষ্ট বিয়ের আগের দিন আসবে। তবে হবু বৌমার কেন যেন খুব একটা আসার ইচ্ছে নেই। হয়ত অভিমান হয়েছে ছেলের ওপর। অবশ্য উনি বলবেন আসতে তাই অগত্যা "মানানসই সাজই" ভরসা। ছেলে তো বলেই দিয়েছে ওনার পছন্দই শেষ কথা।
যাদের বিয়ে তারা নেই,তবুও একদিন হবু বৌমাকে নিয়ে এসেছিলেন ভদ্রমহিলা। এষাই ওর পছন্দমত সব ঠিকঠাক করে দিলো,ভদ্রমহিলা তো ওভারপ্লিজড,ওনার হবু বৌমাও বাধ্য মেয়ের মত ঘাড় নাড়লো। অবশ্য এষাও এখন অনেক বেশি কনফিডেন্ট ওর চয়েশের ব্যাপারে। একগাদা জিনিসের লিষ্ট ভদ্রমহিলার আর তার সাথে এষার ইনোভেটিভ আইডিয়াতে শপিংটা উনি নিশ্চিন্তেই সারলেন। খুব টেনশন ছিলো,একটু সময় লাগলেও একদম পারফেক্ট সব একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা।
ভদ্রমহিলা খুব খুশি হয়ে এষাকে হয়ত একটু বেশিই দিয়ে গেলেন আর সাথে ইনভিটেশন কার্ডও,সত্যি মেয়েটা খুব খেটেছে কদিন ধরে।
অবশ্য এমন নেমন্তন্ন ও প্রায়ই পায় তবে যাওয়া হয়না।
মাঝে কাজের ঝামেলায় পর্ণার সাথে টুকটাক কথা ছাড়া আর কথা হয়নি,আসলে বিয়ের সিজন চলছে। আকাশদা বলছিলো ওর কাজটাকে আরো বাড়াতে,মানে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট পুরোটাই যদি করা যায়। একটু আলোচনা করতে হবে।
ফোনে ফোনে কথা হয়ে যায়,সেদিন অনেকদিন বাদে,ওরা আবার তিনজন কথাই ছিলো বাইরে লাঞ্চ করে একটা মুভি দেখে বাড়ি ফিরবে। এষা বাড়িতে বলেই এসেছে মাকে।
লাঞ্চ করতে করতেই আকাশের সাথে জরুরী কথাগুলো হয়ে যায়,আর পর্ণার সাথে টুকরো মনের কথা। কথার মাঝেই আকাশের ফোন আসে,ও দুএকটা কথা বলেই কেমন যেন অস্থির হয়ে ওঠে," এই শোন আমাদের এক্ষুণি যেতে হবে কাকিমণির কাছে ওখানে খুব একটা ঝামেলা হয়েছে,দেখি ব্যাপারটা কি?"
...." কি বললো কাকিমা?"
...." ইমিডিয়েট আসতে বললো।"
ওখানে পৌঁছে যা দেখলো,তা হয়ত ওরা আশা করেনি কখনো। ওর কাকিমা ওদের পাশের ঘরে নিয়ে যান,ওখানে খুব বিপর্যস্ত হয়ে ঐ মহিলা বসে। এষাকে দেখেই ওর হাতটা চেপে ধরেন উনি," তুমিই একমাত্র বাঁচাতে পারো আমাকে,সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে আর তো কোন উপায় নেই।"
মাথায় কিছু ঢুকলোনা এষার কাকিমা বুঝিয়ে বললেন ওনার ঠিক করা পাত্রী তার আগের প্রেমিকের সাথে হঠাৎই চলে গেছে,কাউকে কিছু না বলে। কাল বিয়ে,সব হয়ে গেছে। ওনার খুব অনুরোধ এষা যদি একবার ভাবে। শান্ত এষার মুখটা সত্যি পাল্টে যায় এবার," মানে এসব কি,বিয়েটা ছেলেখেলা নাকি? আমার কোন মতামত নেই। তারপর ওনার ছেলে?"
....." দাঁড়া আমরা কথা বলছি।"..পর্ণা আর আকাশ যায় পাশের ঘরে কথা বলতে।
...." ওনার ছেলে বোধহয় তোমার ছবি দেখেছেন,যখন তুমি গায়ে ফেলে শাড়ি দেখাচ্ছিলে, উনিই বললেন।আসলে ওনার সাথে আমার অনেকদিনের পরিচয় একরকম আত্মীয়তাই হয়ে গেছে বলতে পারো,অন্য কেউ হলে অনেক আগেই বিদায় করতাম। ছেলেটাকেও অনেক কম বয়েস থেকে দেখেছি। তুমি ভেবে দেখতে পারো। "
এষার কোর্টে এটা কেমন বল,কি করবে বুঝতে পারলোনা। এর মাঝেই পর্ণা আর আকাশদা এসে গেছে। পর্ণা একগ্লাস ঠান্ডা জল এনে ওর সামনে ধরে," পুরো হিস্ট্রি শুনলাম,ভেবে দেখতে পারিস। তোর আকাশদারও সেই মত।"
...." উনি তোর বাড়িতেও যেতে পারেন যদি তুই রাজি থাকিস। কি রে ভেবে দেখবি নাকি?"
আকাশ বলাতে মাথাটা নিচু করে এষা। আর তারপরের কাজটুকু কাকিমণি আর আকাশদাই সেরে ফেললো মানে ভদ্রমহিলাকে নিয়ে যাওয়া ওদের বাড়িতে। আর তো কয়েকঘন্টাই মাত্র হাতে।
পর্ণা হঠাৎ বলে," কিন্তু মাসিমা,এষা তো একবার দেখবে ছেলেকে,ওরও তো মতামত আছে।"....খুব অসহায় লাগে ভদ্রমহিলাকে," আচ্ছা এই বাড়িতেই একবার ডেকে নিই তাহলে, বাড়িতে তো অনেক আত্মীয়স্বজন।"
কে জানে এমন ছেলেরও বৌ পালিয়ে যায়,সত্যিই বোধহয় একটা হাঁদুরাম ছেলেটা। তবে কথাবার্তা খুব ভালো। এষার খুব ইচ্ছে ছিলো বলার," ইশ্ এমনও হয়,বৌ পালায়!"....নাহ বলতে পারেনি এষা তার আগেই অনুরাগ বলছিলো, "হোয়াপে আপনার ছবিও চলে গিয়েছিলো ড্রেস চুজ করার সময়,ভালো লেগেছিলো,ভেবেছিলাম কতো ইনোভেটিভ এখন মেয়েরা,তবে আপনার হাসিটা বোধহয় একটু বেশিই সুন্দর, আজ এতো গম্ভীর কেনো? আসলে চাপে কিন্তু আমিই আছি,হবু বউ এস এম এস করে চলে গেছে কি অবস্থা ভাবুন তো।"
একটুকরো ভালোলাগা ছুঁয়ে গিয়েছিলো এষাকে এটাই কি লাভ আ্যট ফার্সট সাইট ? কোনদিন তো কেউ এভাবে জোর করে ঢুকে পড়েনি ওর জীবনে তাই হয়তো।
"মানানসই সাজের" অসাধারণ পছন্দের শাড়ী আর আ্যক্সেসারিজ আজ এষার গায়ে। কোনদিন কি ভেবেছিলো অন্য কারো জন্য পছন্দ করা ড্রেস পরে ওর বিয়ে হয়ে যাবে। ইশশশ্ একেবারে যাতা।
পর্ণা কানে কানে ফিসফিস করে বলে," এই শাড়িগুলোতে শুধু তোকেই মানায় রে। ঐ জন্যই বোধহয় গায়ে ফেলে দেখিয়েছিলি। ইশ্ পরে এসেও তোর ট্রেন আগে চলে গেলো,আমি সেই আটকেই রইলাম।"
লজ্জা পায় এষা,এ তো ওঠ্ ছুড়ি তোর বিয়ে ওর ঠাকুমা বলতেন।
ভাতকাপড়ের থালাটা ছেলের হাতে দিয়ে ওর শাশুড়িমা বলেন," এই ছেলে যেটা বলে দিয়েছি বল।"....." একদম মা,এই তো...আজ থেকে আমার মানে আমাদের জামাকাপড়ের দায়িত্বে 'মানানসই সাজ'। ভাতের দায়িত্বটা কি আমি নেবো?"
একগাল হেসে ফেলে এষা থালাটা হাতে নিয়ে,মনে মনে ভাবে ওরে বাবা এই ছেলে তো মোটেই শান্ত নয়। একটু বেশিই দুরন্ত আর অশান্ত। বার বার প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করলো এষার অনুরাগের। অনুরাগের চোখেমুখে তখন দুষ্টুমি মাখানো হাসি। আকাশ আর পর্ণা ক্যামেরা বন্দী করলো মিষ্টি মুহূর্তগুলো।
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment