#ম্যাজিক_টাচ্#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
ও মাজী,মাজী দরজা খোলো না,খোলো না এই বলে বাথরুমের দরজায় দুমদুম ধাক্বা মারতে থাকে টিটো, তিন্নীর দুবছরের ছেলে। দরজাটা একটু ফাঁক করে তিন্নী," এই যে সোনা এই তো হয়ে গেলো,আরেকটু দাঁড়া আমি বেরোচ্ছি। তুই যা দেখতো দিদা কি করছে।"...." না না তুমি বেরোও আগে,এক্ষুণি।"
...."টিটো দাদুভাই চলো তো,দাদু এই বাজার থেকে চকোলেট এনেছে তোমার জন্য খাবে তো।"
....." না না আমি মাজী যাবো,এখানে থাকবো। ও মাজী।"
...." সত্যি একটা ছেলে হয়েছে তোর বটে সারাক্ষণ শুধু মাজী আর বাবাজী। মা আর বাবাকে ছাড়া আর কিছুই বোঝেনা।"
....অনেক ভুলিয়ে নাতিকে কোলে নিয়ে সরে যান টিটোর দিদা। তবুও বায়না ভোলেনা ছেলে।
....এর মাঝেই একটু বাদেই মাথায় টাওয়েল জড়িয়ে হাউসকোটের ফিতেটা বাঁধতে বাঁধতে ছুটে আসে তিন্নী,ছেলের চিৎকারে স্নানের বারোটা,বেরোতে পারলে বাঁচে।
...." মাজী মাজী,কোলে নাওনা।"
...ছেলেকে কোলে তুলে নেয় তিন্নী,মানে তমসা।
....." নে এবার মা কে পেয়ে শান্তি। ওহ্ কি যে মা ন্যাওটা হয়েছে ছেলেটা।"
....এতোক্ষণ হাসিমুখে নাতির কান্ড দেখছিলেন প্রশান্তবাবু,মেয়ের বিরক্তি দেখে বলেই ফেললেন," শোনো,এখন এই আদর আর মা ডাকটা প্রাণভরে উপভোগ করে নাও। এরপর বড় হয়ে সারাদিনে হয়ত মা বলে একবারও ডাকার সময় পাবেনা।"
হাসে তিন্নী," বাবা এই দুষ্টুটার জ্বালায় না মাঝে মাঝে অস্থির লাগে। একদন্ডও শান্তি দেয়না। শুধু মা আর মা,আর নাহলে বাবা।"
"ছেলেরা বোধহয় একটু বেশিই মা নেওটা হয় তাইনা গো?"
...." হুঁ পরে গিয়ে এরাই আবার বৌ নেওটা হয়ে যায়,তখন মায়েরা হা হুতাশ করে,এইরে আমার ছেলেটা পর হয়ে গেলো।"
সত্যি টিটোটা যেন বড় বেশি মা মা করে। রাতে মাকে জড়িয়ে,মায়ের গায়ে ঠ্যাং তুলে না শুলে ওর যেনো ঘুমই আসেনা। কয়েকবছরে আরো বড় হয়েছে কিন্তু স্বভাবটা একই রয়ে গেছে।
পড়াশোনাতে স্লো আর অমনোযোগী বলে মাঝে মাঝে মায়ের কাছে পিটানিও খায়। তবুও কাঁদতে কাঁদতে এসে গায়ে পড়ে। এক একসময় রাগের মাথায় মারলেও খুব মায়া হয় তিন্নীর মানে তমসার। ওর দাদু দিদা আর ঠাকুর্দা খুব রাগ করেন,এসব আবার কি,এতো রাগ তো ভালো নয়।
অঙ্ক পরীক্ষার আগের দিন মায়ের পাশে শুয়ে বলতো টিটো," মা আমি পারবো তো? সব ভালো হবে তো? আমার খুব ভয় করছে।"....ছেলেকে কাছে জড়িয়ে গায়ে মাথায় হাত দিয়ে তমসা বলতো," যেই বাচ্ছাদের সাথে মা থাকে তাদের কোন ক্ষতি হয়না,আর তোর সাথে তো আমি আছি,নে এবার ঘুমিয়ে পড়তো,মাথায় হাত বুলিয়ে দিই।" পরীক্ষার দিন সকালে মায়ের হাতের আঙ্গুলটা জোরে ধরতো টিটো," মা সব পারবো তো,সোজা আসবে তো কোশ্চেন?"
পরীক্ষা দিতে যাবার আগে ছেলের কপালে হাত দিয়ে একটা চুমু দিয়ে দিতো সবসময়। টিটোর জীবনের ম্যাজিকম্যান ওর মা। বাবাও আছে তবে খেলা দেখার সময় আর বেড়াতে নিয়ে যাবার সময়।
তমসার যাদুকাঠির ছোঁয়ায় ছোট্ট টিটো একটু একটু করে বড় হয়ে কৈশোরে পা রেখেছে,এখন পড়াশোনার মজাটাও বুঝেছে তবে একটু একটু করে খুব তাড়াতাড়ি পাল্টাচ্ছে ছেলেটা। তমসা বোঝে,বদলাচ্ছে দিন আর তার সাথে সাথে ছেলেটাও। যদিও এখনো অঙ্ক পরীক্ষার দিন এসে মায়ের পাশে এসে শোয়। আঁকড়ে ধরে এখনো সাহস দেয় তিন্নী," কিছু চিন্তা করিসনা সব ভালো হবে।"
ভালো হয় সব হয়ত অনেক ভালো হয়,টিটো সাফল্যের শীর্ষে পৌঁচেছে,এখন সত্যি আর মা বলে ডাকার সময় পায়না। মন কেমন করে তমসার একসময় বিরক্ত হোত আজ কান পেতে থাকে মা ডাক শোনার জন্য। টিটোর ব্যস্ত জীবনে ওর একটু একটু করে সরে গেছে তমসা।
সেই কবে যেনো মায়ের গলা জড়িয়ে ছবি তুলেছিলো, মন ভরে গিয়েছিলো তমসার। খুব আনন্দ করে ফেসবুকে ছবিটা দিয়েছিলো।
রাতে বাড়ি এসে টিটো বলেছিলো," তোমার ছবিতে আমাকে ট্যাগ কোরোনা প্লিজ,ঐ ন্যাকা ন্যাকা কমেন্টগুলো জাষ্ট অসহ্য লাগে। এক একজন তো আরো যাতা,দেখো কি কমেন্ট করেছে।"....পরে জানতে পারে তমসা টিটোর বান্ধবী খুব অসন্তুষ্ট হয় ওদের মা ছেলের ক্লোজ ছবি দেখে।
তবুও সেকথা ভুলে গিয়েছিলো তমসা সেবার বেড়াতে গিয়ে। জড়িয়ে ধরেছিলো ছেলেকে পরম স্নেহে..." ওহ্ মা! একটু সরে দাঁড়াওনা। তোমার ওই একই পোজ। ছাড়ো আনইজি লাগছে। "
ছিটকে দাঁড়িয়ছিলো তমসা,না আর যায়নি ছবি তুলতে সেম পোজে,ট্যাগও করেনি ছেলেকে।
পাশের ঘরে যখন ছেলে ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলে,অথচ ওর সাথে কথা বলার সময় নেই তমসা মাথা রাখে ওর কর্তার বুকে কখনো ঝরে দুএক ফোঁটা জল," টিটোটা কত বদলে গেছে!"
ঘরের কাজ করতে করতে ঘড়ির দিকে নজর যায় তমসার,ইশ্ কত বেলা হয়ে গেছে! টিটো ডেকে দিতে বলেছিলো। পর্দাটা সরিয়ে ঘরে গিয়ে দেখে অকাতরে ঘুমোচ্ছে ছেলেটা,কে জানে কত রাতে ঘুমিয়েছে! সত্যিই ডাকতে মায়া লাগে,কি করে যে ডাকবে। আস্তে আস্তে ছেলের গায়ে হাত বোলায় তমসা ডাকে। আধবোজা চোখে টিটো বলে," ওহ্ গায়ে হাত দিয়োনা,উঠছি পাঁচমিনিট বাদে।"....ঘুমের ঘোরে ছেলের বলা কথা শুনে হাতটা ছিটকে সরিয়ে নেয় তমসা,ওর ম্যাজিক টাচ আজ জাষ্ট একটা ব্যাডটাচ হয়তো টিটোর জন্য,কেনো এমন হলো? কে দায়ী এর জন্য?
সমাপ্ত:-
মাই বেষ্ট ফ্রেন্ড
রুমাশ্রী🦋🍃
তিতলি,একটু থেমে যা," উফফ্ আমি কি এতো ছুটতে পারি তোর সাথে?
"কেনো মা একসময় তো কত খেলতে আমার সাথে?"....." ওরে তখন যে আরো কুড়ি বছর বয়স কম ছিলো।"
মাকে জোর করে মর্নিং ওয়াকে নিয়ে এসেছে তিতলি,ডাক্তার হাঁটতে বলেছেন। একসময় মা ওকে ভালো রেখেছে,আজও রাখছে। এখন যে একটু একটু করে মাকে ভালো রাখার দায়িত্বটা ওকে নিতে হবে। পেছন ফিরে পিছিয়ে পরা মায়ের দিকে বন্ধুত্বের হাতটা বাড়িয়ে দেয় তিতলি।
হাতটা ধরে নেয় ওর বেষ্টফ্রেন্ড পরম অবলম্বনে।
Comments
Post a Comment