Skip to main content

গোপন আত্মকথা

#গোপন_আত্মকথা#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

সূর্যপ্রণাম করতে করতে গঙ্গায় আরেকবার ডুব দেন চন্দ্রনাথ,দুহাতে জল নিয়ে জানান সর্ব পাপ খন্ডনের আকুতি। ছোটবেলা থেকে শুনেছেন গঙ্গায় স্নান করলে নাকি সব পাপ ধুয়ে মুছে যায়।
     খুব ইচ্ছে একবার নর্মদায় স্নান করার,পবিত্র নর্মদাকে নাকি শুধু চোখে দেখলেই বিনাশ হয় সব পাপের। আগে এই অভ‍্যেসটা ছিলোনা তার এখন বেশকিছু বছর ধরে নিয়মিত আসেন গঙ্গায় স্নান করতে। তার এই অভিশপ্ত জীবনে পরম আশ্রয় এখন মা গঙ্গা।
           তবে যে পাপ তিনি করেছেন সত‍্যি কি সেই পাপের গ্লানি ধৌত করবে মা গঙ্গা?
         নিজের সাময়িক লোভে আর বিকৃত কামে নষ্ট করেছেন তিল তিল করে গড়ে তোলা সংসার।
দেখতে সুপুরুষ চন্দ্রনাথ,বরাবরই শরীরচর্চা করতেন তাই সুঠাম তার দেহ। শ‍্যামলা রঙ হলেও অনেকেরই নজর কাড়তেন। বাবা পছন্দ করে বিয়ে দিয়েছিলেন,আপত্তি করতে পারেননি। শুধু মনে হয়েছিল বড় বেশি ঘরোয়া আর বোকা বোকা তন্দ্রা। দেখতে মোটামুটি তেমন চোখে পড়ার মত কোন বৈশিষ্ট‍্য নেই। মেয়েরাই সংসার পরিচালনা করে,কিন্তু এক্ষেত্রে কোনরকম সিদ্ধান্তই নিতে পারেনা ভালো করে তন্দ্রা। তার শারীরিক চাহিদার কাছে নিজেকে বাধ‍্য খরগোশের মত ছেড়ে দিত তন্দ্রা। নিজের ইচ্ছেমত ভোগ করতেন শরীরের সুখ চন্দ্রনাথ। তবুও যেন কোথায় থেকে যেত অতৃপ্তি,বড় বাধ‍্য তন্দ্রা শরীরের সাড়া দেবার ক্ষমতা কম।
             মা হবে তন্দ্রা,শরীরটা খুব একটা ভালোনা। তবুও ভাবলেশ হয়ে মেটাতো স্বামীর চাহিদা,একসময় ক্লান্ত হয়ে বলত,' আর পারছিনা।'..বিরক্ত লাগত চন্দ্রনাথের,'মেয়েরা কত চালাক চতুর হয়,এত তাড়াতাড়ি তোমার মা হওয়ার কি দরকার ছিলো?কিছু ব‍্যবস্থা নিতে পারলেনা?'অবাক হয়ে স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবত,'কি ব‍্যবস্থা নিতে পারত ও।'..চন্দ্রনাথের মনে হত স্ত্রী বাধ‍্য হওয়া ভালো কিন্তু তন্দ্রার যেন কোন ব‍্যক্তিত্বই নেই জাষ্ট একটা পুতুল।
          মা হলো তন্দ্রা,তবে বাঁচলোনা সেই ছেলে। আরও চুপচাপ হয়ে গেলো ও,শ্বশুরমশাই প্রথম বংশধরের মৃত‍্যু মেনে নিতে না পেরে চলে গেলেন অকালেই। বাবাহারা তন্দ্রার কাছে উনিই ছিলেন পিতৃতুল‍্য,শোকে অবসন্ন হয়ে গেলো তন্দ্রা।
          চন্দ্রনাথের ডাক্তার দেখালেন স্ত্রীকে,ডাক্তার বললেন,'মানসিক ট্রমাতে এমন হয়েছে, এমনিতে কোন সমস‍্যা নেই। আবার সন্তান এলেই হয়ত সবটা ঠিক হয়ে যাবে।'
  চেষ্টা চলে আবার সন্তান আনার কিন্তু এবারও প্রসবের আগেই মারা যায় সন্তান। তন্দ্রা যেন অদ্ভুত বাতিকগ্ৰস্ত হয়ে ওঠে,সারাদিন শুধু পূজো আর পূজো। কখন স্নান করছে কখন খাচ্ছে কোন ঠিক নেই। একেক দিন চন্দ্রনাথ অফিস থেকে এসে বলতেন,'একি তোমার এখনো খাওয়া হয়নি?আমার বন্ধু এসেছে দুজন ওদের একটু চা করে দিতে হবে।'..মাথা নাড়ায় তন্দ্রা,চা করে নিয়ে ফেরে। মাঝে মাঝে অসহ‍্য লাগত চন্দ্রনাথের এমন মেয়েমানুষের সাথে কি ঘর করা যায়? রাতে শরীরের চাহিদা মেটানোই কি সব!
      হয়ত ঠাকুর আর সাড়া না দিয়ে পারলেন না,এবার সত‍্যিই মা হলো তন্দ্রা কোল আলো করে ছেলে এলো। তন্দ্রা নিজেই নাম দিলো দেবপ্রসাদ। নামটা ভালোই তাই আর কেউ বাধা দিলোনা। দেবপ্রসাদকে নিয়েই কেটে যেতে লাগলো তন্দ্রার সময়,আর ছেলেটাও তেমন হয়েছে মা ন‍্যাওটা সারাক্ষণ মায়ের গায়ে লেগে থাকে,তন্দ্রাকে একা পাওয়াই মুশকিল। বাবা মায়ের আদরে একটু একটু করে বড় হতে লাগলো ছেলে। ও বুঝতো ওর মা অন‍্য মায়েদের মত স্মার্ট নয়,বড় অগোছালো কিন্তু এমন স্নেহের মিষ্টি ধারা বোধহয় মা ছাড়া আর কেউ দিতে পারেনা।সারাক্ষণ মায়ের মুখে একটাই ডাক দেব আর দেব,ও পড়তে বসলে কাছে বসে শোনে পড়া। রাতে লোডশেডিং হলে সমানে নাড়তে থাকে হাতপাখা,ওর ফিরতে দেরি হলে দ়াঁড়িয়ে থাকে গলির মুখে গিয়ে। মায়ের মায়ামাখা মুখটা বড় সরলতায় ভরা,তবুও বাবা কেন যে মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত হয় মায়ের ওপর বুঝতেই পারেনা। বাবা বলে,'ওহ্ এই মানুষকে নিয়ে সংসার করা কি যে কপাল আমার!ঝুলিয়ে দিয়েছিলো একটা অচল জিনিসকে গলায়। কোন ব‍্যাপারে তাপ উত্তাপ নেই এমন কি গলা তুলে ঝগড়াও করলোনা কোনদিন।"স্বামীর সব অভিযোগ চুপ করে শুনতো তন্দ্রা। বড় হয়ে দেবপ্রসাদ বলত,'আচ্ছা মা বাবা যে তোমায় এত বলে,তোমার রাগ হয়না?তুমি কেন এমন গো মা।'
        সত‍্যি বোধহয় তন্দ্রা এমনি তাই মুখবুজে থাকেন,চন্দ্রনাথ বলেন মানসিক রোগী। মায়ের কথা ভেবে বাইরে পড়তে যাওয়া হলোনা দেবপ্রসাদের কলকাতার নামকরা কলেজে চান্স পেয়ে সেখানেই ভর্তি হলো। ও বুঝেছিলো মায়ের জগত ওকে ছাড়া অন্ধকার তাই বাইরের সুযোগ হাতে পেয়েও ছাড়তে হলো। ছেলেকে আকড়ে ধরেছিল তন্দ্রা,'আমাকে ছেড়ে যাসনা দেব,আমি তাহলে পাগল হয়ে যাবো। 'তুমি সত‍্যি আমার পাগলী মা শ‍্যামা,আচ্ছা আমি যখন বাইরে চাকরি পাবো তখন তুমি কি করবে শুনি?'...' তখন আমি তোর সাথে ওখানে গিয়ে থাকবো।'..'আর বাবাকে কে দেখবে শুনি?বাবার তো এখনো কয়েকবছর চাকরি আছে।'...কিছুই বোঝেনি তন্দ্রা শুধু বলেছিলো,'আমায় ফেলে যাসনা বাবা।'..মাকে জড়িয়ে ধরে দেবপ্রসাদ বলেছিলো,'এই তো আমি আছি তোমার কাছেই।'
     ওরা বুঝতে পেরেছিল তন্দ্রা মানসিকভাবে সুস্থ নয়,তাই ডাক্তারও দেখানো হয়েছিলো। ওষুধ খেতে হত নিয়মিতই। দেখতে দেখতে কলেজের দিনগুলো শেষ হয়ে গেলো,ক‍্যাম্পাস সিলেকশনেই ভালো চাকরি পেয়ে গেলো দেবপ্রসাদ কিন্তু বাইরে যেতে হবে,এখানে নয়। সত‍্যি এখনকার দিনে হয়ত এত ভালো ছেলে দেখা যায়না। চন্দ্রনাথও বলতেন,'ছেলেটা হয়েছে একদম মায়ের মত মেনিমুখো,কে বলবে ও আমার ছেলে। সারাদিন বাড়ি আর মাকে নিয়ে আছে। কি দেখেছে মায়ের মধ‍্যে কে জানে! নিজের ভবিষ‍্যতটা নষ্ট করছে।'
      দেবপ্রসাদ জানে তার মায়ের মনটা বাচ্চাদের মত,বাবা বোধহয় মাকে কোনদিন ভালোবাসেনি,চিরকালই নিজের দাবী খাটিয়ে এসেছে। তাই চেষ্টা করে মাকে আগলে রাখতে।
তবুও তো যেতেই হবে এবার বাইরে। সাজি করে শিউলি ফুল কুড়াচ্ছিলো তন্দ্রা,সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসে দেবপ্রসাদ,'মাগো,আমাকে যে এবার চাকরি নিয়ে বাইরে যেতে হবে। নাহলে আর চাকরি পাবোনা।'..ছেলের মুখের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে তন্দ্রা। চন্দ্রনাথ এসে দাঁড়ান,'এত বলার কি আছে?এমন ভালো চাকরি কি কেউ হাতছাড়া করে নাকি! যত্তসব পাগলছাগল নিয়ে হয়েছে আমার সংসার।'
          কিছু বলেনা তন্দ্রা,মায়ের না বলা কথা অনেক কিছু বলে যায়,মনটা ভারী হয়ে যায়। সত‍্যিই ও কেন যে আজকালকার ছেলেদের মত হতে পারলোনা!তাহলে এতটা খারাপ লাগতনা।
             চাকরি নিয়ে চলে যাবার পর চট করে আসতে পারলোনা দেবপ্রসাদ। বাবাকে বললো মাকে নিয়ে একবার আসতে। আসার সময় প্রায় ঠিকঠাক,সেই সময় হঠাৎ তন্দ্রা পা পিছলে পড়ে চোট পেলো,ফিমার বোন ভাঙলো। মানসিক অবসাদে ভোগা তন্দ্রা আশ্রয় নিলো বিছানায় ছেলের কাছে আর যাওয়া হলোনা। এখন কিছুদিন একদম বিছানায়। অসহ‍্য লাগলো চন্দ্রনাথের গিন্নিকে বিছানায় দেখে,'উহ্ সারা জীবন আমার কেটে গেলো এই একটা অচল মানুষকে টানতে টানতে।'..ছুটে এলো দেবপ্রসাদ দুই দিনের জন‍্য। চোখ দিয়ে জল গড়ালো তন্দ্রার। মায়ের কষ্টমাখা অপরাধী মুখটার দিকে তাকিয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেলো ওর।'বাবা একটা লোক দেখো,এভাবে কি করে চলবে? তুমিই বা পারবে কি করে?'...'লোক মানে আয়া! সে অনেক খরচ সম্ভব হবেনা।'...'আমি পাঠাবো টাকা বাবা,তুমি ভেবোনা।'...'আর কি ভাববো? সবই আমার কপাল!'..'এটা একটা আ্যক্সিডেন্ট বাবা।'..'আর আ্যক্সিডেন্ট,বোধসোধ না থাকলে এমনি হয়। মানদা বলেছে একটা মেয়েকে দেবে ওদের দেশের থেকে। সব কাজই পারে,দেখা যাক।'
         ফোনে বাবার কাছে জানতে পারে পাওয়া গেছে একটি মেয়ে,বেশ ভালো এমনিতে। সব কাজই করছে। রান্না আর তন্দ্রার দেখাশোনা সবই। একটু নিশ্চিন্ত লাগে ওর যাক একটা ব‍্যবস্থা হলো তবে। মাস ছয়েক বাদে বাড়ি আসে দেবপ্রসাদ এতোদিনে তো মায়ের ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা,যদিও বাবা বলেছে,'তেমন কিছু উন্নতি হয়নি,মোটামুটি অকেজোই হয়ে গেলো। আর হবেই বা কি করে,ভালো হওয়ার ইচ্ছে আছে নাকি?'..দরজা খুলে দেয় একটা মেয়ে হয়ত বা ওর বয়সীই হবে,বা বড়ও হতে পারে। তাহলে এই বুঝি মাকে দেখছে। এই কয় মাসে মা যেন কেমন বুড়িয়ে গেছে,এমনিতেই কম কথা বলত। আরো চুপ করে গেছে। মা হুইলচেয়ারে বসে,দেখে ভালো লাগলোনা ওর।'মা একটু চেষ্টা করো উঠে দাঁড়ানোর ঠিক পারবে দেখো। এই ধরতো আমার হাতটা দেখি দেখি।'..বিষাদ ছুঁয়ে যায় তন্দ্রার মুখে,'উঃ লাগছে, আমি পড়ে যাবো দেব।'
      মাকে দেখে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল যদিও বাবাকে বেশ ভালো লাগলো ওর। বাবার খিটখিটে মেজাজটা আর নেই,হয়ত মেয়েটিকে রেখে চাপ কমেছে তাই। মেয়েটির সবদিকে খেয়াল, রান্নাবান্নাও বেশ ভালো করে দেখলো। শুধু মা বললো,'ভালো না,বদমাশ মেয়েটা সংসারটা শেষ করবে।'
   ....'আচ্ছা মা তুমি ভালো হয়ে গেলেই ওকে ছাড়িয়ে দেবো।আমিই বলবো বাবাকে,এখন তো একজন লোক ছাড়া তুমি চলবে কি করে?'..দেখতে দেখতে ওর ফেরার দিন চলে এলো,মায়ের মুখে নামলো বিষাদের ছায়া।'বাবা মাকে ওষুধগুলো ঠিকমত খাওয়াচ্ছো তো,এবার যেন বড় ডিপ্রেসড লাগছে মাকে।...'শোন এই অসুখ আর সারবেনা তার ওপর পা টা ভাঙলো। রেবাকে দিয়েছি বুঝিয়ে সব। নিজের চেষ্টা না থাকলে যা হয়।'
         মাঝে কেটে গেল বেশ কিছুদিন এভাবেই,ঐ ফোনে ফোনেই যেটুকু কথা হয়। এবার দেবপ্রসাদের কাজের চাপের জন‍্য বেশ দেরি হল বাড়ি ফিরতে। বোকারোর খনি অঞ্চলে কাজের ফাঁকে ফাঁকে মনটা হারিয়ে যেত দেবপ্রসাদের মায়ের কাছে। সত‍্যি ও বোধহয় মায়ের মতই তাই আজ অবধি একটা প্রেমও করা হলনা ওর। সামনেই পূজো হয়ত ছুটি পেলে যেতে পারবে মায়ের কাছে।
        দেবপ্রসাদের বাড়ি আসতে নবমী হয়ে গেলো,ওকে দেখে হাসি ফুটলো মায়ের মলিন মুখে। পূজোর দিনে মায়ের মলিন মুখটা ভালো লাগলোনা দেখতে। ' মা এই তো এক দুপা ফেলছো,চেষ্টা করলেই হবে দেখো।'..'আর হয়েছে তোর মায়ের দিন দিন যেন আরো মাথাটা কাজ করছেনা।'..মায়ের চোখে এক অদ্ভুত চাউনি দেখলো দেবপ্রসাদ,আশ্চর্য হলো। সংসারের হাল ভালোই ধরেছে রেবা তাই কোন অসুবিধে হলনা। বাড়িঘর রান্নাবান্না সব একাই সামলাচ্ছে,তবে মায়ের সাথে যেন মনে হল খুব একটা ভাল ব‍্যবহার করেনা। এমনি হয় বোধহয় এরা হাতে ক্ষমতা পেলে নিজেকে রাজা মনে করে, তবুও কিছু করার নেই।
          রাতে ঘুমের ঘোরে হঠাৎই কানে আসে কিছু কথা আর চিৎকার,ঘুমটা ভেঙে যায় দেবপ্রসাদের। আবার চোখটা বন্ধ করতে যায় পারেনা,কানে আসে রেবার গলা,'আজ এর একটা বিহিত আমি করবোই,মজা পেয়েছোনা। দাঁড়াও ডাকছি তোমার ছেলেকে এক্ষুণি।'..শুনতে পায় বাবার গলা,'একদম চোপ,এই হল ছোটলোক এদের মাথায় তুললেই মুশকিল। কি চাস বল আমাকে।'
         আস্তে আস্তে ঘর থেকে উঠে দাঁড়ায় বাবার ঘরের সামনে। একি এত রাতে রেবা এখানে কি করছে! 'তুমি এখানে কি করছো রেবা? মা একা আছে।'..রেবা যা বললো তা কোনদিন জীবনে শুনবে আশা করেনি ইচ্ছে করলো ওখানেই মরে যেতে বা নিজের মাথা নিজের হাতে ফাটিয়ে দিতে।...'আমি এখানে কি করছি মানে,আপনার বাবাকে জিজ্ঞেস করুন। উনি তো আমাকে শোওয়ার জন‍্য ডেকে আনেন। আজ থেকে না অনেকদিন থেকে। আজ ডাকেনি,আমি নিজে এসেছি একটা বিহিত করবো বলে।'..নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেনা দেবপ্রসাদ মানুষের ভোগলালসা এতটা নীচে নামাতে পারে তাকে!'ছিঃ বাবা,এইজন‍্যই আমার মা ভালো হচ্ছেনা তাই তো। আর এইজন‍্যই মা আমাকে বাইরে কোথাও যেতে দিতে চাইতনা তাই তো। ভগবান এই দিনও দেখতে হলো আমাকে!'
      চন্দ্রনাথ কিছু বলতে পারেননা,ফুঁসে ওঠে রেবা,'আমাকে বিয়ে করতে হবে না হলে আমি ছাড়বোনা কিছুতেই। আমার কাছে সব প্রমাণ আছে সবাইকে জানিয়ে দেবো ওনার কান্ড।'
....'তুমি বলো বাবা কি হবে,কেন এমন করলে?মা এই অবস্থায় কোথায় যাবে?আমার মা শিশুর মত সরল সেই সুযোগ তুমি এভাবে নিলে?'
...'ওনাকে বলুন আমাকে বিয়ে করতে হবে। আপনার মা কোথায় যাবে আমি জানিনা।'...'তা জানবে কেন সেই জন‍্যই তো একটু একটু করে সর্বনাশ করেছো।'...' বাপ কা বেটা একেবারে, নিজের বাপের দোষ দেখতে পাননা,এখনো এত ক্ষিদে শরীরে! আমি জানিনা আমাকে বিয়ে করতে হবে। আমি কি বাজারের মেয়ে নাকি। দেশ থেকে লোক আনবো এবার তারপর বুঝবে মজা।
          কি করবে বুঝে পায়না দেবপ্রসাদ পাশের ঘরে মা জেগে উঠেছে সাড়া পায়, মা ডাকে'দেব দেব এত রাতে কি করছিস তোরা?' কি বলবে মাকে,তবুও যায় ছুটে মায়ের কাছে। ' তোর কাছে ঘুমের ওষুধ না না বিষ আছে? আমাকে দিবি আমি বাঁচতে চাইনা আর।'মাকে একটা ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেয়।
          ....'তোমার কত টাকা চাই বলো,আমি দেবো তোমায়। এই লজ্জার হাত থেকে বাঁচাও আমাদের।'..'আমি তো বলেছি বিয়ে করতে হবে। উনি যদি না করতে পারেন আপনি করুন। সবদিক রক্ষা হবে,আপনার মা ও বাঁচবে।'....আর্তনাদ করে ওঠে চন্দ্রনাথ,'রাক্ষসী তোর ছলাকলা এতদূর!শেষে আমার ছেলের সর্বনাশ করবি! কিছুতেই না দেব,শুনিস না ওর কথা।'...সারা রাত ঘোরের মধ‍্যে কেটে যায় দেবপ্রসাদের কি করবে ও। কিছুতেই মাকে মরতে দিতে পারবেনা ও।
....'বাবা এটাই বোধহয় তোমার লোভ আর কামনার একমাত্র প্রায়শ্চিত্ত। আমিই বিয়ে করবো রেবাকে। তবে এখান থেকে চলে যাবো অনেক দূরে,মায়ের সব দায়িত্ব আজ থেকে তোমার। তার সবটুকু সেবা তোমাকেই করতে হবে যতদিন তুমি বাঁচবে। আজ থেকে তুমি মৃত আমার কাছে। মাকে দেখতে যখন আমি আসবো তখন তুমি বাড়িতে থাকবেনা। আর রেবাও কোনদিন ঢুকবেনা এই বাড়িতে,যদি রাজি থাকো আজই ভোরবেলা আমি রেবাকে নিয়ে চলে যাবো।'
          মাথা চাপড়ান চন্দ্রনাথ,এমনও সন্তানও হয় এই ঘোর কলিতে! যে বাবার পাপের বোঝা নিজের কাঁধে তুলে বাবাকে কলঙ্কমুক্ত করলো। তন্দ্রা যাকে তিনি চিরকাল অবহেলা করে গেছেন সেই তন্দ্রা জন্ম দিয়েছে এমন সন্তানের! হায় ভগবান!তার যে নরকেও ঠাঁই হবেনা এ পাপ কোথায় রাখবেন তিনি।
         মাকে ঘুমের ওষুধ দিয়েছিলো দেবপ্রসাদ,দশমীর ভোররাতের অন্ধকারে মাকে প্রণাম করে রেবাকে নিয়ে বেড়িয়ে আসে দেবপ্রসাদ যাত্রা করে এক বিষাক্ত সাপকে সাথে নিয়ে বিষকুম্ভের দিকে,সারাজীবন নীলকন্ঠ হয়েই হয়ত কাটবে তার।
      আরেক প্রায়শ্চিত্ত শুরু হয় চন্দ্রনাথের। কে জানে কেমন আছে ছেলেটা? তাই প্রতিদিন গঙ্গায় স্নান করে বলেন ভালো রেখো আমার শিবরাত্রির সলতেকে।
সমাপ্ত:-

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...