Skip to main content

আমার মিতা

#আমার_মিতা#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

" তাইইই শপিংয়ে যাবো! কবে কবে কবে বলনা? ইশ্ আমার তো এখুনিই যেতে ইচ্ছে করছে।"
...."এই হচ্ছে মেয়েদেরকে নিয়ে সমস‍্যা,তোদের এই শপিং ম‍্যানিয়াটাই আমার কাছে একটা জাষ্ট মানে কি বলবো ওই কি যে বলেনা মানে ভয়ঙ্কর ভীতি।"
         "সব ছেলেগুলো এমন কেনো রে? এমন কি আমার বাবাও এমনিই,মায়ের সাথে এই নিয়েই একদম ফাটাফাটি ঝগড়া,মা নাকি শাড়ি কিনে কিনে বাবাকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে।"
           "এই শোন আমার কিন্তু এতো টাকা নেই সবেই প্রথম চাকরি,মাইনে এখনও তেমন কিছুনা।তবে নতুন চাকরির প্রথম মাইনেতে আমি সবার জন‍্য গিফ্ট কিনবো একদম সারপ্রাইজ গিফ্ট। "তবে আমার তো শপিংয়ের এক্সপিরিয়েন্স নেই তাই একটু হেল্প কর।"
                   কিছু করার নেই বয়ফ্রেন্ডের শপিং তারপর একদম ফার্সট স‍্যালারি তাই না বলার কোন চান্সই নেই। আজকাল নতুন জবের পর খুব একটা বেশি দেখাই হয়না অয়নের সাথে সৌমির। যাক তবুও এই সুযোগে বেশ অনেকটা সময় কাটানো যাবে।
       .....সবার জন‍্য একটু একটু করে জিনিস কিনছে,সৌমির ভালোই লাগছে যাক তবুও ছেলেটার পছন্দ আছে। অবশ‍্য সৌমি অনেকটাই হেল্প করলো। ..." হ‍্যাঁ এই তো দাদুর ধুতি পাঞ্জাবী,বাবার শার্ট,মায়ের শাড়ী সবই মোটামুটি হয়ে এসেছে তাইনা,এখন শুধু তোর আর আমার মিতার টা বাকি আছে। "
       সারাক্ষণ মুখে শুধু আমার মিতা আর আমার মিতা লেগে আছে। অয়ন মাসিকে মিতা বলে,ওর নাকি বেষ্টি হচ্ছে মিতা। মিতা ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারেনা। একদিন সৌমি বলেই ফেলেছিলো, "এই যে সারাক্ষণ মিতা মিতা করিস আন্টি কিছু মনে করেনা?"....." মা তো মিতাকে মেয়ের মত ভালোবাসে,মনে করবে কেন শুনি,মায়ের থেকে মিতা সতেরো বছরের ছোট,আর তুই তো জানিস মা তো প্রায়ই অসুস্থ থাকে,মিতাই তো সবটা সামলায়।"
        অয়নরা থাকে বালিতে,ওখান থেকেই কলকাতায় আসা যাওয়া করে। ভীষণ হোমসিক ছেলেটা, সৌমি অনেকবার বলেছে,"তোর যাতায়াতে এতোটা সময় চলে যায়। এখন তো জব পেয়েছিস এদিকেই কোথাও একটা থাক না।"
....." না না বাবা অমন অলুক্ষুণে কথা বলতে নেই,বাড়ি ফিরে মা আর মিতার আদর আর ভালোমন্দ না খেলে হয়না আমার।"
...." না তোর চাপ হয় তাই বলছিলাম। আর আমি বুঝি একদম ফেলনা। এদিকে থাকলে আমিও তো একটু কাছে পেতাম। ধুস্ ভালো লাগেনা।"
....." আর দুটো বছর একটু ওয়েট সোনা তারপর একদম পাকাপাকি ভাবে নিয়ে যাবো তোকে একদম আমাদের বাড়ি।"
   ....মনে মনে ভাবে মিতা," ইশ গল্ফগার্ডেন ছেড়ে ঐ বালিতে গিয়ে থাকা! কেমন করে যে থাকবে কে জানে।"
              সৌমির ড্রেসটা অয়নই পছন্দ করলো বেশ চট করেই হয়ে গেলো,সত‍্যি পছন্দ আছে ছেলেটার। তবে বেশ ঝামেলা হলো মিতার ড্রেস কেনা নিয়ে,"মিতার জন‍্য তো শাড়ি নিলেই পারতিস আন্টির মত,তাহলেই তো সুন্দর হত।"
        "না রে মিতাকে কুর্তা পরলেই খুব সুন্দর লাগে,একটা লঙ ড্রেস খুঁজছিলাম মা ও বলছিলো একদিন, মিতাকে কিনে দেবে ঐরকম কিছু।"
    যাক অবশেষে ঝামেলা মিটলো এটা ওটা দেখতে দেখতে বেশ একটা এক্সক্লুসিভ ড্রেস কেনা হলো মিতার জন‍্য। অয়নের বায়নাতে তার সাথে ম‍্যাচিং জুয়েলারীও পছন্দ করতে হলো, অবশ‍্য সৌমিরও প্রাপ্তি হলো অনেক কিছুই। আজ শপিংয়ে এসে সৌমি ভালোই বুঝতে পারলো অয়নের প্রায়োরিটি লিষ্টে ও ছাড়াও আরো দুজন মহিলা আছে, তারমধ‍্যে একজন হয়ত একটু বেশিই বেলঙ্গ করে। কেনো জানেনা সৌমির একটু বাড়াবাড়ি মনে হলো অয়নের কার্যকলাপে।
                 শপিং,খাওয়াদাওয়া মুভি দেখা দিনটা বেশ ভালোই কাটলো ওদের। " কি রে সবার পছন্দ হয়েছে তো? হ‍্যাঁ রে পছন্দ হয়েছে খুউউব, সবচেয়ে বড় কথা ওরা পুরো চমকে গেছে যে আমি এতো কিছু কিনতে পারি। আর তোর মিতার পছন্দ হয়েছে ড্রেসটা?"..."আর বলিসনা,মিতার ড্রেসটা দারুণ হয়েছে। মা তো একবার নিজের গায়ে ফেলে দেখে বললো আমার জন‍্য তো এমন একটা আনলেই পারতিস,এখন তো এই ড্রেসগুলো সবাই পরে। তবে তোর মিতাকেই
এটা সবচেয়ে বেশি মানায়।"
             "আর মিতা কি বললো?" ..."দারুণ খুশি হয়েছে রে। তুই তো মিতাকে দেখিসনি,আসলে মিতাটা ছবি তুলতে চায়না। দাঁড়া যেদিন ড্রেসটা পরবে একটা ছবি চুপ করে তুলে নেবো। সৌমির কেন যেন মনে হলো অয়নই হয়ত দেখাতেই চায়না মিতাকে।
              ছোট ছোট মিষ্টি অনুভূতির আদানপ্রদানে ওদের সম্পর্কটাও হয়ত একটু একটু করে কাছে আসছে। ...."মাকে বলেছিস আমার কথা?"...." মা জানে তো,সেই তো কবেই বলেছি।"..." আর মিতাকে?বাই দ‍্য ওয়ে তোর কাছে মিতার কথা এতো শুনি। ছবি দেখাবি প্রমিস করেছিলি কিন্তু।"
....."এই যে মহারানী আমার প্রমিস সবসময় একদম পাক্কা। এই দেখ মিতাকে,এবার বল কেমন? একদম হিরোইন না?"
          সত‍্যিই কিছুক্ষণের জন‍্য কথা বলতেই পারলোনা সৌমি,অয়ন একটুও মিথ‍্যে বলেনি সত‍্যিই অপূর্ব দেখতে মিতাকে অয়নের মাসি না বান্ধবী বলে চালিয়ে দেওয়া যায় দিব‍্যি। বয়সের কোন ছাপ নেই চেহারায়,আর ড্রেসটাও দুর্দান্ত মানিয়েছে। অয়নের মাকেও দেখতে সুন্দর তবে মাসি সত‍্যিই অন‍্যরকম সুন্দর। ভালো লাগলেও নিজের থেকে সুন্দরী কাউকে দেখে মনটা একটু বোধহয় কেঁপে উঠলো সৌমির কেন জানেনা। এতদিন একটু গর্বই ছিলো নিজেকে নিয়ে।
তবুও বলেই ফেললো," এই তুই মা আর মাসির মত দেখতে হলে ইশ জাষ্ট হিরো লাগতো।"..."ওহ্ তাই নাকি,তাহলে একদিন মানালীর সাথেই ডেটে যাই,অনেক দিন ধরে পেছনে পরে আছে মেয়েটা।" মুখ ফুলিয়ে জোরে একটা চিমটি কাটে সৌমি," এইই ভালো হচ্ছেনা কিন্তু,মানালীর সঙ্গে কথা বললে নাক ফাটাবো তোর।"
              মাঝে দেখতে দেখতে দুটো বছর কেটে গেছে,ওদের দুজনের বাড়ির লোকেরাই চাইছে এবার বিয়েটা হয়ে যাক। এর মধ‍্যেই একদিন অয়নকে ওর  মা বললো,"হ‍্যাঁ রে মিতার কথা কিছু বলেছিস ওদের?" ...."কি আবার বলবো মা, এরমধ‍্যে বলার কি আছে শুনি,ওকে ছবি দেখিয়েছি বলেছি মাসি আর দাদু এখন এখানেই আছে দাদুর শরীরটা খারাপ তাই।"..." আর কিছু বলিসনি?".."তুমি কেনো এতো চাপ নিচ্ছো বলতো মা? আমার ওপর কি ভরসা নেই তোমার?"  মাঝে একদিন অয়নের মা আর বাবা সৌমিদের বাড়িতে এসে ঘুরেও গেছেন তবে মিতা আসেনি। অয়নের দাদু আর মাসি ওদের সাথেই থাকে শুনলো দাদুর শরীরটা খারাপ। সৌমির বাবা মাও একদিন এসে ঘুরে গেছেন সবটাই পছন্দ হয়েছে ওদের তবে একমাত্র মেয়ে বালিতে চলে যাবে,খুব বেশি দূর নয় যদিও। " ও মা মিতা কে দেখলে,কি সুন্দর না দেখতে!"..."ও তুই ওর মাসি শ্রেয়ার কথা বলছিস,না রে ও ছিলোনা,অয়নের মা বললেন হঠাৎই ওকে একটু ওদের দেশের বাড়ি যেতে হয়েছে। এমনি সব কথাই হলো,ওদের কোন চাহিদা নেই তবে অয়নের মা বললেন,প্রণামীগুলো যেনো একটু ভালো হয় বিশেষ করে শ্রেয়ারটা,ও একটু কালারফুল ড্রেস পছন্দ করে আর বরযাত্রীদের আপ‍্যায়ন যেন ঠিকঠাক হয়।"
            সুন্দরী বোনকে একেবারে খুব আহ্লাদ দেয় ওরা সবাই সেটা ভালো করেই বুঝলো সৌমি। বিয়েটা ভালোভাবেই মিটে গেলো,দারুণ তত্ত্ব দিয়েছে ওদের বাড়ি থেকে। অয়নের মা একটু পুরোনোপন্থী তাই ছেলের বিয়েতে আসেননি। তবে ওর মাসি আর দাদুও আসেনি,দাদুর দেখাশোনা মাসিকেই করতে হয় এমনকি ইনসুলিনও দিতে হয় তাই। একদিক দিয়ে ভালোই হয়েছে নাহলে তো ওর বন্ধুরাও হয়ত মিতা কি সুন্দরী এইসব নিয়ে মেতে উঠতো।
                ও বাড়িতে গিয়ে মহিলা আচার অনুষ্ঠানের মাঝে সত‍্যিই প্রথম নজর কাড়লো মিতা,সামনাসামনি আরো সুন্দর দেখতে। মুখে সবসময় হাসি লেগেই আছে তবে একটু বেশিই চুপচাপ। সবার হাতে হাতে জিনিসপত্র এগিয়ে দিচ্ছে,একদম দিদি জামাইবাবুর ডানহাত। অয়ন আর সৌমিকে হাত ধরে যত্ন করে ঘরে নিয়ে এলো। তবে ওর সাথে কোন কথা হয়নি সৌমির মনে হলো হয়ত একটু বেশিই অহংকার মিতার।অয়নের মায়ের হাঁটুর সমস‍্যা বেশি নড়াচড়া করতে পারেননা।
                  বৌভাতের অনুষ্ঠানে মিতাকে খুব একটা দেখতে পেলোনা,একবার শাশুড়িমাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো মিতা বাড়িতে,দাদুর কাছে। সৌমির মা বাবা আত্মীয়স্বজন সবাই এসেছিলেন,খুব মিষ্টি লাগছিলো ওকে সবাই বলছে। অয়ন কানে কানে বললো," আমি তো চোখ ফেরাতেই পারছিনা।"
           ফুলের সৌরভে আর অয়নের ভালোবাসায় ডুবে গেলো সৌমি। "আজ সত‍্যিই তোকে খুব সুন্দর লাগছিলো,আমার তো চোখের আড়াল করতেই ইচ্ছে করছিলোনা।"..." আর তুই নয় এবার একদম তুমি,শাশুমা একদম বকা দেবেন তাহলে।"...." দিক পুরনো অভ‍্যেস তাই পাল্টাতে তো সময় লাগবেই বুঝেছিস সুন্দরী গিন্নী আমার।"..." তাই নাকি,আচ্ছা আমি মিতার চেয়েও সুন্দরী?"মুখটা একটু বদলে যায় অয়নের,"হঠাৎ মিতার কথা কেনো রে? আজকে ও যেতেও পারেনি। দাদুর শরীরটা ভালো যাচ্ছেনা। দাদুর পুরোটাই তো ও দেখে।"..." এ বাড়ীর সবটাই তো দেখে দেখলাম। আমার খুব খারাপ লাগলো একটাই যে মিতা আমার সাথে এই দুদিনে আলাপই করলো না। দেখা হলোই বা কতটুকু,দেখলেই শুধু হাসি।"...."ঐটুকুই যে মিতার সবচেয়ে সুন্দর,ওর হাসিটা ভীষণ পজেটিভ। একটা কথা তোকে বলবো বলেও বলতে পারিনি,আসলে মিতাকে কখনো আমরা অস্বাভাবিক ভাবিনা,ও হয়ত অন‍্যদের চেয়ে একটু বেশিই সেন্সেটিভ। মিতা আমাদের সবার মন জুড়ে আছে। তুইও ওকে ভালোবাসিস সোনা,আসলে ও কথা বলতে পারেনা জন্ম থেকেই।"...এক মুহূর্তের জন‍্য আশ্চর্য লাগে হয়ত বা কথা হারায় সৌমি মনে মনে ও ভেবেছিলো অয়ন যেহেতু মিতার নয়নের মণি তাই ওদের লাভম‍্যারেজটা হয়ত মিতার ভালো লাগেনি। সেইজন‍্যই এতোটা রিজার্ভ মিতা আর কিছুটা অহঙ্কারীও। একটু অভিমানও হলো অয়নের ওপর ওকে এতোদিন বলেনি বলে।.."আসলে মা বারণ করেছিলো,তুই তো আমাকে ভালোবেসে এসেছিস। মিতাকে নিয়ে সবাই আলোচনা করুক মা বাবা কেউই চায়নি।"..সৌমি এবার বেশ বুঝতে পারে তাই সুন্দরী মিতাকে সবসময় আড়ালে কেন রেখে দেন ওর শাশুড়িমা।..."এতো চুপচাপ কেন সোনা আমি তো কথা বলতে পারি,আবার কথা বন্ধও করতে পারি।"..সৌমি কি যেন বলতে যাচ্ছিলো ওর ঠোঁটে ঠোঁট রাখে গভীর অনুরাগে অয়ন। আবেশে চোখ বোজে সৌমি।
  
************************************
      সংসারের নিয়মের সূত্রগুলো যেন সবসময় মেলেনা অধিকারের আর ইগোর লড়াইয়ে ভেঙে যায় পরিবার। আর এইক্ষেত্রেও তাই হলো, মিতার  প্রাধান‍্য কেন যেন খুব একটা ভালো লাগলোনা সৌমির। ওদের সংসারে একজন থার্ড পার্সন আছে,যে মুখে কথা না বললেও তার অঙ্গুলিহেলনে চলছে ওদের সংসার ভাবতেই মাঝে মাঝে একটু বিরক্ত লাগে সৌমির। নিয়ম অনুযায়ী শাশুড়িমায়ের পরেই সৌমিই সংসারের সব সেখানে ওর একজন সুন্দরী কমবয়স্ক মাসিশাশুড়ি আছে যে নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে সংসার। বিয়ের পর ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছিলো মিতা কেবল সুন্দরীই নয় বেশ বুদ্ধিমতী এবং স্মার্ট,পড়াশুনাও করেছে তবে খুব বেশি নয়। একসাথে সেজেগুজে অপরিচিত কোন জায়গায় বেরোলে অনেকেই বলতো,"তোমার দিদিকে দেখতে কি সুন্দর! কেউ বা বলতো ননদ।" মুখে একটু বিরক্তি এনে সৌমি বলতো,"উনি আমার মাসিশাশুড়ি",তারপর তো ছিলোই সবার কৌতূহল। সংসারেও শাশুড়ি একটু বেশিই প্রেফারেন্স দেন মিতাকে। পেটির মাছ আলাদা করে রাখা মিতার জন‍্য। তরকারিতে কম মিষ্টি দেওয়া মিতা খেতে পারেনা বলে। যদিও সৌমির আদরের কোন ত্রুটি ছিলোনা তবুও বাবা মায়ের একমাত্র প‍্যাম্পার্ড চাইল্ড সৌমির ধীরে ধীরে অসহ‍্য লাগতে শুরু করলো বোবা মাসিকে নিয়ে আদিখ‍্যেতা। আর অয়নটাও তেমনি,সবসময় বেষ্ট ড্রেস কিনবে মাসির জন‍্য। অফিস ফেরত সৌমির জন‍্য কিছু আনলেই বলে দেয়,এটা মিতা খুব ভালোবাসে ওকে কিন্তু দিয়ো। অভিমানে একএকদিন ছুঁড়ে ফেলে দিতে ইচ্ছে করে জিনিসগুলো। মাটন এলেই শাশুড়িমা দুপিস মেটে রাখবেনই বোনের জন‍্য। সৌমিকেও দেন তবুও ওর মনে হয় এই পুরো আদরটাই ওর পাওয়ার কথা। সহ‍্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলো সৌমির যখন মিতার ডেঙ্গু হয়েছে বলে অয়ন পরপর তিনরাত্রি নার্সিং হোমে কাটালো। সবটাই অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি মনে হলো,অয়নের কিছু হলে ওরই তো যাবে আর কার কি হবে। অশান্তি মাঝে মাঝেই করতো সৌমি কখনো খাওয়া বন্ধ করে কখনো বা অয়নের আনা জিনিস ফেলে দিয়ে কিন্তু এবারেরটা চূড়ান্ত হলো। " তোমার মাসিকে নিয়েই তো থাকলে পারতে,কি দরকার ছিলো আমায় আনার।"...সৌমির কথার ইঙ্গিতে গা টা গুলিয়ে ওঠে অয়নের শুরু হয় উত্তপ্ত কথাবার্তা। অয়নের মনে হয় সত‍্যিই বোধহয় ও সৌমিকে চিনতে পারেনি।
              সৌমিকে অনেক বুঝিয়েও কিছু লাভ হলোনা। সৌমির একটাই শর্ত ছিলো কলকাতায় ফ্ল্যাট কিনে চলে আসা অথবা মিতা আর দাদুকে ওদের দেশের বাড়িতে রেখে আসা। মাঝে ইন্ধন দিচ্ছিলেন ওর মা। অয়ন বাড়িতে কিছু বলতে পারেনা,কি করে বলবে কতগুলো মিথ‍্যে সন্দেহের জন‍্য সৌমি অযথা অশান্তি শুরু করছে। সৌমির খুব অসহ‍্য লাগলো যেদিন দেখলো ওর শাশুড়িমা কাঁটা বেছে দিলো ইলিশমাছের মিতাকে। যত সব আদিখ‍্যেতা,বয়স তো কম হয়নি মিতার তবুও দিদি জামাইবাবুর কাছে খুকি সেজে আছে। খাচ্ছে,দাচ্ছে ভালো জামাকাপড় পড়ছে গ্ল‍্যামার থাকবেনা কেন,কোন ভাবনা চিন্তা কিছুই তো নেই।
            অশান্তি ভেতরে ভেতরে চললেও অয়নের মা বুঝতে পারে সৌমি কেনো যেন মিতাকে সহ‍্য করতে পারেনা। অয়নকে জব্দ করতে বাপের বাড়ি চলে গেলো সৌমি,কারণটা কিছু নয় শুধুই ইগো ক্ল‍্যাশ,বলে গেলো অয়ন এই বাড়ি না ছাড়লে ও এখানে আসবেনা। মিতাকে নিয়ে ওদের আদিখ‍্যেতা ও সহ‍্য করতে পারছেনা। "তোমার সত‍্যিই মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে,একটা বোবা মহিলা তোমার শত্রু হলো,লোকে বলে বোবার শত্রু নেই। এই কথাটা তাহলে ভুলই।আমি তো ভাবতেই পারছিনা একটা নির্বিরোধী মানুষ তোমার কি ক্ষতি করলো?"
       অয়নের মা একদিন ছেলেকে বললেন....." সৌমি তো বেশ কয়েকদিন হলো বাপের বাড়ি গেছে,আমি ফোন করেছিলাম ভালো করে কথা বললোনা, কবে আসবে, ওকে নিয়ে আয়।".." মা ও আর এই বাড়িতে আসবেনা। হয় আমাকে কলকাতায় ফ্ল্যাট কিনতে হবে না হলে মিতাকে দেশের বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে হবে।"....অয়নের মা বাবার মুখটা ভীষণ গম্ভীর হয়ে যায়," মিতা কি করেছে ওর সঙ্গে,কতবার আমাকে বলছে মেয়েটা ওকে ফোন করতে।"..."জানিনা মা,আমার পক্ষে কলকাতায় ফ্ল্যাট কেনা এখন সম্ভব নয়। আচ্ছা মা মিতা আর দাদু যদি কিছুদিন দেশের বাড়িতে থাকে?"...." তুই বরং কলকাতায় বাড়ি ভাড়া নে। ওদেরকে দেশে রাখা সম্ভব নয়।"
         অয়নের বাবা এবার মুখ খোলেন," অন‍্যায়টা আমরাই করেছি,আর নয়,যা হয় হবে এবার সত‍্যিটা তোমার জানা দরকার। তারপর যা করার করো।" বাবা মায়ের মুখে যা শুনলো তা আশা করেনি অয়ন। মিতাকে ভালোবাসতো একটি ছেলে ওদের পাড়াতেই থাকতো যদিও পুরোটাই গোপন ছিলো,কমবয়েসে মিলিটারীতে চাকরি নিয়ে চলে ছেলেটি যায় কিন্তু আর ফেরেনা। ছেলেটা ওখানেই মারা যায় আ্যক্সিডেন্টে,ও মারা যাবার পরে জানা যায় মিতা অন্তঃসত্ত্বা তখন বেশ কয়েকমাস হয়ে গেছে। কিছুতেই অন‍্য ব‍্যবস্থা নেওয়া যায়নি,মিতাকেও রাজি করানো যায়নি। ও তখন শোকে পাগল হয়ে গেছে এমন কি আত্মহত‍্যাও করতে গিয়েছিলো মেয়েটা। এদিকে অয়নের মায়ের কনসিভ করার কোন চান্স নেই ডাক্তার বলে দিয়েছেন,মিতাকে রাখা সম্ভব হলোনা দেশের বাড়িতে কুমারী মেয়ের মা হওয়া কি বলবে সবাই,তাই ব‍্যাপারটা গোপন রেখে মিতাকে নিয়ে লক্ষৌ চলে এসেছিলেন ওর দাদু,তখন ওর বাবার পোষ্টিং ওখানে ছিলো। মিতার সম্মতিতেই অয়নকে ওরা দত্তক নিয়েছিলেন। সবটাই ওরা গোপন রেখেছিলেন মিতার কলঙ্কের ভয়ে। তবে মিতাকে কিছুতেই রাজী করানো যায়নি বিয়েতে। অয়নের মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করতে থাকে যাকে এতোদিন নিজের বন্ধু ছাড়া আর কিছু মনে হয়নি,ছোট থেকে ওর সব বায়না সামলাতো যে সেই মাসিই ওর মা। একটা কমবয়সী মেয়ের মা হওয়া তার সাথে ওর মায়ের আর বাবার অবদান আজ যেন অনেক ভাবনা এলোমেলো করে দেয় ওর জীবন। আজ খুব ইচ্ছে করলো মিতাকে জড়িয়ে ধরে মা বলে ডাকতে। মিতাকে ডেকে দিলো মা,অয়নের দুচোখের উপচে পড়া জল আজ ধুয়ে মুছে গেলো মিতার আদরে,অদ্ভুত এক আত্মার টান যা ছিলোই তা আজ আরো জোরালো হলো।
      তবে মিতা, মিতাই থেকে গেলো অয়নের কাছে,আসলে মা ডাক শোনার কপাল ঈশ্বর এই জন্মে ওর জন‍্য করেননি। অয়নের আজ আর ইচ্ছে হলোনা মিতার মাতৃত্বের পরিচয় সবার সামনে এনে একসাথে দুই মাকে অনেক প্রশ্নের সামনা সামনি করতে। থাকনা কিছু কথা মনের অন্তরালে গোপনে নিভৃতে। ওর জন্মদাত্রী মা কুমারী,  আসলে ও কুমারী মায়ের সন্তান আর পিতৃপরিচয়হীন থাকনা কথাগুলো সবার অজানা। এই পরিচয় তো টলমলে মাতৃত্বর শিরোপা দেবে ওর যশোদা মাকেও যে সন্তান স্নেহে ওকে লালন পালন করেছে। হয়ত মা বাবা না থাকলে ওর পৃথিবীতে আসাই হতোনা,বা আশ্রয় হত কোন অনাথ আশ্রমে।
...." তুই কলকাতায় থাকতেই পারিস তবে বোনটা আমার খুব কষ্ট পাবে। একটু চোখের দেখা ছাড়া আর কোন অধিকারই নেই মেয়েটার। কিন্তু আমরা তো চিরকাল থাকবোনা ভবিষ‍্যতে মিতার দায়িত্ব কিন্তু তোকেই নিতে হবে। সৌমিকে একটু বুঝিয়ে বলিস সব সত‍্যি যদি বলতে চাস বলিস জানিনা ও কি করবে,আমার বোনটা খুব ভালো কেন ওকে সহ‍্য করতে পারেনা জানিনা। ওকে আমরা সন্তানের মতোই দেখি মা মারা যাবার পর কোলেপিঠে মানুষ করেছি।"
.....সৌমিকে কিছুই বলার আগেই,কি বলবে বলবে কিনা এইসব চিন্তা করে অদ্ভুত মানসিক চাপে সাঙ্ঘাতিক আ্যক্সিডেন্ট করলো অয়ন। বালিতে কিছু করা গেলোনা একদম আ্যম্বুলেন্সে করে সোজা আনতে হলো কলকাতায় ভর্তি করা হলো নার্সিংহোমে। খবর দেওয়া হলো সৌমিকেও। নাহ খবর পেয়ে আর দেরী করেনি সৌমি ছুটে এসেছিলো,শুনেছিলো অবস্থা ক্রিটিক‍্যাল এখনই ভেতরে যাওয়া যাবেনা,ব্লাড দেওয়া হচ্ছে অনেকটা রক্ত বেরিয়ে গেছে।
            আজ নিজেকে বড় অপরাধী মনে হয় সৌমির যখন জানতে পারে যে মিতাকে ও বরাবর হিংসে করে এসেছে সে নিজের জীবন পণ করে রক্ত দিচ্ছে,তাই ওরা মিতাকেও স্পেশাল কেয়ারে রেখেছে।..."চোখের জল মুছে অয়নের মা বললেন,ছেলেটাকে আর ফেলে যাসনা। বড্ড অগোছালো হয়ে গেছে ওর জীবনটা। ওকে পাঠিয়ে দেবো কলকাতায়,সুখে থাক তোরা।"
           খুব দেখতে ইচ্ছে করলো একদম সামনে থেকে অয়নকে সৌমির বলতে ইচ্ছে করলো,"পারবোনা ছাড়তে তোকে,শুধু তুই ভালো হয়ে যা।"....বেডে শুয়ে থাকা ক্লান্ত ফ‍্যাকাশে মিতাকে দেখে আজ বড়ো মায়া হলো সৌমির, মুখে তখনো একচিলতে হাসি লেগে ওর। সৌমির হাতে হাত দিয়ে যেন বলতে চায় আছি তো আমি কিছু হবেনা অয়নের। সৌমির আজ মনে হলো এইজন‍্যই বোধহয় লোকে বলে মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি। আজ মিতা না থাকলে ঐ রেয়ার গ্ৰুপের ব্লাডটা না পেয়ে হয়ত মরতেই বসতে হত অয়নকে। অনেকটা ছোট লাগলো নিজেকে সৌমির,একটা কথা না বলতে পারা ওর থেকে অনেকটা বড় মহিলাকে ও প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে নিজের ঘর ভাঙতে বসেছিলো।
            একটু একটু করে সুস্থ হতে থাকে অয়ন,সৌমি বুঝেছে ভালোবাসা হারানোর ভয় তাই আর এক মুহূর্তও কাছছাড়া করতে ইচ্ছে করেনা অয়নকে। ওদের দুজনকে একসাথে দেখে মুখটা উজ্জ্বল হয়ে যায় মিতার,সৌমি হাত ধরে মিতাকে নিয়ে আসে অয়নের কাছে ," এই দেখো,মিতার কান্ড তোমার সাথে দেখা না করেই কেবিনের বাইরে থেকে উঁকি মেরে চলে যাচ্ছিলো।
     অয়ন আর সৌমি বারণ করলেও অয়নের বাবা শোনেননি,"না না এতোটা রাস্তা আর তোকে যাতায়াত করতে হবেনা প্রতিদিন,আমি ফ্ল্যাট দেখেছি।"...." কিন্তু বাবা আমি আর সৌমি তো তোমাদের সাথেই থাকতে চাই।"...."কে বলেছে তোকে থাকবিনা!সময় পেলেই ছুটির দিনগুলোতে চলে আসবি,আমরাও যাবো। কতটুকু আর পথ!"
           অয়ন আর সৌমির মাঝে আজ শুধুই ভালোবাসার ঢেউ,যা আছড়ে পড়ে তীরে সবসময় কারণ ওখানে যে আছে ওদের আপনজন আত্মার আত্মীয়। সৌমিও আজ বুঝেছে কাউকে তার মাটি থেকে না তোলাই ভালো। শেকড়ে আটকানো গাছ তার শাখাপ্রশাখা বিস্তার করে মনের আনন্দে বেশি আগলে না রাখলেও চলে, কিন্তু টবের গাছকে আগলে রাখতে হয় অনেক বেশি,নাহলে বাঁচেনা। সৌমির ভালোবাসায় ধুয়ে মুছে গেছে অয়নের সব অভিমান,সৌমি যে খুব নিজের করে নিয়েছে ওর আপনজনদেরও। তাই শপিংয়ে গিয়ে ড্রেস পছন্দ করার সময় সৌমিই বলে," এই ড্রেসটা মিতাকেই মানায়,কি বলো?"..." না তুমি বরং এবার মিতার জন‍্য একটা লাল পাড় কাঞ্জিভরম কেনো।"...." ধ‍্যাৎ ইশ্ মিতাকে অমন মা মা সাজ সাজাবো কেন?".....চোখের কোলটা চিকচিক করে উঠলেও সামলে নিয়ে অয়ন বলে,"মিতাটা তো জীবনে কিছুই পেলোনা একবার দেখতাম,মা সাজলে কেমন লাগে আমার মিতাকে।"

সমাপ্ত:-

          
    
          
            

            
         
        
           
          

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...