Skip to main content

হাতছানি

#হাতছানি#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

আলমারিটা খুলে ফেলে নিতু,ইশ্ কি অবস্থা! একটুও গোছানো নয়। কতবার ভেবেছে গুছিয়ে রাখবে কিন্তু আর হয়নি চাবিটাই তো পায়নি হাতে।
ওহ্ কত শাড়ি,উরিব্বাস অনেক শাড়িই তো আনকোরা নতুন ভাজই খোলা হয়নি। তার মধ‍্যে থেকেও কিছু শাড়ি বাতিল করে ও,রাজ‍্যের পুরোনো জিনিস জমিয়েছে আলমারিতে! হবেনা,যা কিপ্টে ছিলো! চাবিটাও যেন কোথায় সরিয়ে রেখেছিলো আজ নিখিল অফিসে যাওয়ার পর অনেক খুঁজে পেয়েছে চাবিটা।
            প্রথম প্রথম কিছু বলেনি নিখিলকে,ওকে লোভী ভাববে বলে। কয়েকদিন ধরেই বলছিলো,' তুমি জানো আলমারির চাবিটা কোথায়?'...' তোমার তো অনেক শাড়ি আছে নিতু,আমি তো কোন অভাবই রাখিনি। থাকনা আলমারিটা যেমন আছে সেভাবেই, ওটা নীলাশার খুব প্রিয় ছিল এক সময় খুব সাজত।'..গা জ্বলে যায় নিতুর ওর শরীরটা নিয়ে অন্ধকারে খেলার সময় তো আর মনে থাকেনা নীলাশার কথা,পুরুষগুলো এমনি হয়। আর তারপরেই পুরোনো বৌয়ের স্মৃতি খুঁজে বেড়ায়,দেখা যাক কতদিন আর নীলাশা নীলাশা করে। কি ছিল ঐ মেয়েমানুষটার,হাজার একটা রোগের ডিপো। ওর টানটান যৌবন দিয়ে সবটা ভুলিয়ে দেবে।
        নিখিল অফিসে যাওয়ার পর অনেকটা সময় হাতে থাকে, তাই আজ নিশ্চিন্তে আলমারি খুলেছে নিতু। কত গয়না,ব‍্যাগ আর শাড়ি ব্লাউজ। সব ম‍্যাচিং ম‍্যাচিং,একসময় খুব সাজুনি ছিলো বৌদি। মাসির সাথে এই বাড়িতে অনেকবার এসেছে আগে। করবেনা বরের পয়সার তো অভাব নেই। যখন যা বায়না করেছে কিনে দিয়েছে। ছেলেপুলে তো হয়নি তাই বৌকে মাথায় করে রেখেছিল। কিন্তু সেই নীল জরির কাজ করা বেনারসীটা কই,আর সেই লাল নক্সিকাঁথার শাড়িটা? ঐ শাড়ি দুটো বৌদির খুব পছন্দের ছিল। এই বাড়িতে যখন ও কাজ নিয়ে এসেছিল তখন দেখেছে দুবার বৌদিকে বিয়েবাড়িতে পরে যেতে। চোখে লেগে আছে এখনো,তখনই মনে হয়েছিল এই শাড়িটা ওর সেক্সি ফিগারেই যায়। পাড়ার মন্টুদা,বিশুদা তো ওকে দেখলেই লাট্টু হয়ে যেত। ইশ্ ওর বয়ে গেছে ঐ লোফার গুলোকে পাত্তা দিতে। কোথায় বড়লোকের বৌ হবে তা না....সারা আলমারি খুঁজে অনেক পছন্দের জিনিস পেলেও ঐ শাড়িদুটো পেলনা। কে জানে কোথায় গেলো?
              নীলাশা নিখিলের আগের পক্ষের বৌ,একসময় ভালোবেসে বিয়ে করেছিল ওকে। কিন্তু পাঁচ বছর বাদেও যখন কোন সন্তান হলোনা একটু একটু করে বদলে গেলো নীলাশা। বাতিকগ্ৰস্ত,শুচিবাই হয়ে উঠলো। প্রায় সময় কেটে যেত বাথরুমে,এটা ধুচ্ছে না হয় ওটা ধুচ্ছে। দিনে যে কতবার স্নান করত তার ঠিক নেই। বাড়ল সুগার আর প্রেসার ডাক্তার দেখাতে কোন ত্রুটি করেনি নিখিল তবে ঠিকমত ওষুধ খেতনা নীলাশা। আর লুকিয়ে লুকিয়ে খেত মিষ্টি,নিখিল বাড়িতে না আনলেও ও বেড়িয়ে যাওয়ার পর নিজে বেড়িয়ে খেয়ে আসত। যদিও পাড়ার দোকানে বারণ করা ছিল তবুও ঠিক খেত মিষ্টি। একটা সময় সংসারের কোন কাজই আর করতে ওর ভাল লাগতনা। বাইরে থেকে এলে সব জামাকাপড় সাবান দিয়ে কেচে ফেলতো। কাউন্সেলেং করে একটু কমত কিন্তু যেতে চাইত না তাই আবার বাড়ত।
          প্রায়দিনই ওদের রান্না খাওয়া হতনা। অগত‍্যা ওদের ঠিকে মাসিকে বলে রান্নার লোক খুঁজেছিল মানে এমন লোক যে সারাদিনই থাকবে বাড়িতে সবটাই খেয়াল রাখবে আর নীলাশাকেও যত্ন করবে। একদিন সকালে মাসিই নিয়ে এসেছিল নিতুকে,' দাদাবাবু এই আমার বোনঝি গো আগে এসেছে দুএকবার এই বাড়িতে আমার সাথে,খুব ভালো মেয়ে সব কাজ পারে।'...নীলাশা মুখটা কুচকে বলেছিল,' তোমার স্বামী নেই,বিয়ে হয়েছে?'...মাসির শেখানো কথায় উত্তর দিয়েছিল,' বিয়ে হয়েছিল গো বৌদি,ছেলেপুলে হয়নি বলে বর অন‍্য বিয়ে করেছে।'..কেন যেন নীলাশার মায়া হয়েছিল ওর মতই তো মেয়েটা, দুজনের দুঃখ এক। তাই ও বাড়িতে চাকরিটা হয়ে গিয়েছিল নিতুর। নিতুর বিয়ে হয়েছিল ঠিকই তবে ওটা একটা মোহ ছিল বাচ্চা না হওয়ার ব‍্যাপারটা বানানো।
              একটু একটু করে নীলাশার মন জয় করে নিয়েছিল নিতু,বুঝে নিয়েছিল নীলাশার কি পছন্দ আর অপছন্দ। নীলাশাও বেঁচেছিল যাক্ ও ওর মত থাকতে পারবে আর নিখিলের খাওয়াদাওয়াটা একটু ঠিকমত হবে। নীলাশারা দুই বোন,ওর বোন বিয়ের পর বাইরে থাকে। ছোট থেকেই নীলাশা বোনের থেকে একটু পিছিয়ে তাই হয়ত একটু একটু করে অবচেতনে কখন যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছিল কে জানে। মা মারা যাবার পর আরো একা হয়ে গিয়েছিল,ওর বোন রুনা অনেক চেষ্টা করত সহজ হতে মাঝে মাঝে ফোন করত নিখিলের সাথে অনেক কথা হত,দিদির সাথে একটু কম। ওকে ভাল থাকতে বললেই বলত তুই বুঝবিনা,তোর চাকরি আছে,বাচ্চা আছে আমার কি আছে বলতো? অথচ কোন কাজ করার ইচ্ছেও ওর ছিলনা। রুনাই ভিডিও কলে নিতুকে দেখে নীলাশাকে বলেছিল দিদি একটু নজর রাখিস। মেয়েটাকে খুব চালাক মনে হচ্ছে,দেখতেও তো বেশ ভাল। কানে ঢোকায়নি নীলাশা বরং ওর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছে।
              নিতু ধীরে ধীরে থাবা বসিয়েছিল নীলাশার ফাঁকা জায়গাগুলোতে। বাড়ির সব কিছু নিজের হাতের মুঠোয় আনতে শুরু করেছিল এমনকি নিখিলকেও। নিখিলের খাওয়াদাওয়া টিফিন জামাকাপড় সব খুঁটিনাটি ব‍্যাপারে নজর রাখত। অফিস যাওয়ার সময় হাতের কাজে সব গোছানো পেয়ে যেত নিখিল। এক এক দিন দারুণ সব রান্না পছন্দের টিফিন বানাতো,সত‍্যিই মেয়েটা খুব কাজের। একদিন নীলাশাকে বললো ওর মাইনেটা একটু বাড়িয়ে দিয়ো পারলে,আসলে নীলাশার মিষ্টির জোগানটা নিতুই দিত। অথচ সুগার বাড়লে ঠোঁট উল্টে বলত,' এই দেখুন দাদা মেথির গুড়ো,নিমপাতা,করলা আমি তো নিয়ম করেই সবটা দিই। ওষুধও খাচ্ছে বৌদি ঠিকমত,ইনসুলিনও নিচ্ছে এখন তো আমিই দিই।'
         নীলাশা ততদিনে খুবই বাতিকগ্ৰস্ত হয়ে পড়েছে,মাঝে মাঝে একটু ভাল থাকে আবার খারাপ হয়। সেদিন অফিস থেকে ফিরে নিতুকে দেখে একটু চমকে ওঠে নিখিল। এই শাড়িটা তো নীলাশার কত স্মৃতি আর প্রেম জড়িয়ে আছে এটার সাথে। শরীরের ভেতরটা শিরশির করে ওঠে অনেকদিনের অতৃপ্তি জমে আছে। ওর দৃষ্টিটা নিতুর চোখ এড়ালোনা। তবুও নিখিল ঘরে গিয়ে বললো,' তোমার শাড়ি আর ওকে  দিয়োনা।'...' শাড়িটা পুরোনো হয়েছিল ও চাইলো, তাই দিলাম।'
            চা জলখাবার দেওয়ার সময় ইচ্ছে করেই আঁচলটা ফেলে দেয় নিতু ওর বুকের দিকে চোখটা চলে যায় নিখিলের। টানটান নিটোল শরীর,বুকটা তোলপাড় হয়ে যায় ওর। নিতু সবটাই নজর করে আবার আঁচলটা তুলে নেয় গায়ে মুখটা লজ্জা লজ্জা করে। পরদিন অফিস থেকে ফেরার সময় চারটে শাড়ি কিনে আনে নিখিল,নজর রাখে নিতু। আড়াল থেকে শোনে ওদের কথা,' দুটো শাড়ি তোমার জন‍্য এই দেখো তো,আর এই দুটো নিতুকে দিয়ো।'...শাড়ি গয়না বরাবরই পছন্দের নীলাশার যদিও আজকাল আর কিছুই যেন ভালো লাগেনা,চোখটাও বেশ খারাপ হয়ে গেছে। পায়ের তলায় একটা ইনফেকশন ডাক্তার বলেছে সবটাই হাই সুগারের জন‍্য। তবুও নীলাশা একটা শাড়িই দেয় নিতুকে। নিখিলকে বলে এই সেদিনই তো চারটে পুরোনো শাড়ি দিল। মাথাটা গরম হয়ে যায় নিতুর। পাকা শিকারীর মত একটু একটু করে নিখিলকে হাত করতে শুরু করলো। নীলাশার শরীরটা বেশ খারাপ ওকে বাইরে চিকিৎসার জন‍্য নিয়ে যাবে ঠিক হল। সেদিন নিতু একটা কুর্তি পরেছে,এই বাড়িতে এসে ওর জেল্লা আরো বেড়েছে,দামি ক্রিম,সাবান প্রয়োজনে নীলাশার কিছু প্রসাধনীও ব‍্যবহার করে। নিখিলের অফিস থেকে ফিরে মনটা খারাপ হয়ে যায়,আজ বড় ঝিমোচ্ছে নীলাশা,সামনে সপ্তাহে তো ওদের যাওয়া। নিতু চা আর পকোড়ার প্লেটটা দিতে গিয়ে ইচ্ছে করেই ছোঁয় নিখিলকে,বিদ‍্যুৎ খেলে যায় ওর শরীরে।' দাদা চিন্তা করবেননা,বৌদি আবার সুস্থ হয়ে যাবে আগের মত।'..একটু একটু করে ক্ষুধার্তের দিকে মাংসের টুকরো এগিয়ে দেয় নিতু। বড় মায়া আর লোভ পড়ে গেছে এই সংসারের ওপর কি সুন্দর সব সাজানো গোছানো,এখন তো সবটাই ও নিজে করে। সবাই ওর আঙ্গুলে নাচে,শুধু বৌদির বোনটাই কেমন যেন। শুনেছে মাসদুয়েক বাদে আসবে এখানে। তা আসুক কিছুই করতে পারবেনা তার আগেই ও দাদাকে হাতের মুঠোয় করে নেবে।
              চিকিৎসার জন‍্য দক্ষিণ ভারতে যাচ্ছে নীলাশা,নিতুও সাথে যায়। জীবনে কোনদিন এসিতে ওঠেনি নিতু,নীলাশার শরীর খারাপ তাই এসি টুয়েই যাচ্ছে ওরা,কি সুন্দর পরদা টানা। একটা সীট ফাঁকাই আছে তাই পরদার ভেতরে শুধু ওরা তিনজন। সত‍্যি নিতুটা খুব যত্ন করে নীলাশাকে,আজ নিতুর দিকে বার বার চোখ চলে যাচ্ছে ওর। বাইরে যাচ্ছে বলে পার্লার থেকে মুখটা ঘষেমেজে এসেছে,ভ্রূ প্লাগও করেছে। বাড়ি থেকে,খাবার দাবার সব কি সুন্দর গুছিয়ে এনেছে। এমন কি চা কফিও মেয়েটার সব দিকেই নজর।
        রাতে নিখিলের মাথাটা খুব যন্ত্রণা করে, ওষুধের পাউচটা তো ব‍্যাগে,তাই আস্তে করে নিতুকে ডাকে। নিতু রোল অনটা ইচ্ছে করেই নিখিলের কপালে লাগিয়ে দেয়,আবেশে চোখটা বুজে আসে ওর। না করতে পারেনা।
                  ওখানে সব চিকিৎসা করতে প্রায় দিনদশেক লেগে গেল,নীলাশাকে পাঁচদিন ওরা ভর্তি রেখেছিল। ডাক্তাররা বললেন ওর চোখের অবস্থা খুব খারাপ,এমন চলতে থাকলে হয়ত তাড়াতাড়ি চোখটা নষ্ট হয়ে যাবে। নীলাশা হসপিটালে ভর্তি থাকার সময় আবার রাতে মাথাযন্ত্রণা হয় নিখিলের,না পেরে ফোন করে নিতুকে পাশের ঘরে,ইচ্ছে করেই ওষুধটা নিজের কাছে রেখেছিলো। ঘরে এসে ওষুধ দিয়েই চলে যায়না,ঝুঁকে পড়ে রাতের খোলামেলা পোশাকে,নিখিলের বুকের কাছে, নিখিলের মাথায় বামটা লাগাতে থাকে। অনেকদিনের অতৃপ্তিতে যেন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে নিতু,ওর হাতটা নিখিলের হাতে। তবুও হঠাৎ ঝাকুনি দিয়ে ওঠে নিখিল,' তুমি ঘরে যাও,এটা হোটেল সবসময় লোকজন আসছে যাচ্ছে।' শিকারকে হাতের মুঠোয় পেয়েও কব্জা করতে না পেরে,ঘরে গিয়ে বাথরুমে ঢুকে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দেয় শরীরে নিতু আগুন বেরোতে থাকে মাথা দিয়ে,হুঁ ন‍্যাকামি,পেটে খিদে মুখে লাজ।
               পরদিন নিতুকে দেখে একটু অস্বস্তি হল নিখিলের নাহ্ এটা ঠিক নয়,নীলাশা ওকে খুব বিশ্বাস করে। দরকার হলে নিতুকে ছাড়িয়ে দেবে ওখানে গিয়ে। কিন্তু এত কিছু সামলাবে কে? দেখা যাক দরকার হলে রুনার সাথে কথা বলবে। রুনার অনেক বুদ্ধি। কিন্তু নীলাশাকে নিয়ে আর বাড়ি ফেরা হলনা নিখিলের ঘটে গেল এক সাঙ্ঘাতিক দুর্ঘটনা। রাতে খুবই কম দেখতো নীলাশা চশমা ছাড়া। নিতুটারও সেদিন বমি আর মাথাযন্ত্রণা হয়েছিলো। তবুও বারবার বাথরুমে নিয়ে গেছে নীলাশাকে। রাতে নিখিল বলেছিল বাথরুমে যাওয়ার সময় ওকে ডাকতে। কিন্তু কখন যে এতটা ঘুমিয়ে পড়েছিল বুঝতেই পারেনি। ভোর রাত্রে চোখ খুলে দেখে নীলাশা নেই। নিতুও মুখ ঢেকে ঘুমোচ্ছে,ওর শরীরটা ভালোনা। লাফ দিয়ে নেমে বাথরুমের দিকে দৌড়য়,কিন্তু পায়না ওকে,ওপাশের বাথরুমগুলোও দেখে। আ্যটেন্ডেটদের ডেকে তোলে ওরা ঘুমোচ্ছিল কেউ কিছু বলতে পারেনা। ততক্ষণে নিতুও উঠে পড়েছে,সোরগোল পড়ে যায় সত‍্যি তো কোথায় গেলো নীলাশা?
                   পরদিন খবর পাওয়া যায় রেলপুলিশ স্থানীয় লোকের কাছ থেকে খবর পেয়ে উদ্ধার করে নীলাশার মৃতদেহ। কাউকে না ডেকে চশমা ছাড়া বাথরুমে যেতে গিয়ে হয়ত ভুল করে ট্রেনের দরজা খুলে পড়ে যায় নীলাশা। পুলিশের ঝামেলা এড়ানো গেলনা,পোষ্টমর্টেম হল। নিতুকেও জেরা করলো পুলিশ,দু একজন যাত্রী বললো ঐ মেয়েটির তুলনা হয়না নিজে অসুস্থ হয়েও বারবার বাথরুমে নিয়ে যাচ্ছিলো ভদ্রমহিলাকে। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে নিতু,' কতবার বলেছি বৌদি আমাকে ডেকো। কেন এমন করলে?'সবাই মানলেও শুধু রুনার মনে হল এমনটা হতে পারেনা। দি টা বোকা ছিল ঠিকই তবে এতটা বোকামি করবে,বাথরুমের দরজা বুঝতে পারবেনা!অনেকদিন লাগল নিখিলের ঝামেলা মুক্ত হতে। তবে নিতুকে ওর ছাড়ানো হলনা,নিতু সারাদিন থাকতনা রান্না করে চলে যেত আবার রাতে আসত রুটি করে নিখিলের চা দিয়ে যেত। একটা চাবি ওর কাছেই থাকত। একদিন অফিস থেকে এসে দেখে নিখিল কোলাপসিবলটা খোলা তাহলে নিতু আগেই এসে পড়েছে। বেল বাজাতে একটু দেরি হয় দরজা খুলতে,ভেজাচুল দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে নিতুর,শাড়িটা আল্গা করে গায়ে জড়ানো গায়ে তোয়ালে। একটু লজ্জা লজ্জা মুখটা করে বলে,' আজ আমাদের ওখানে জল নাই,তাই ভাবলাম এখানে স্নানটা করে নিই। আপনি এত তাড়াতাড়ি?'..নিখিলের ততক্ষণে নেশা ধরে গেছে,ওর গায়ের গন্ধটা খুব চেনা লাগছে এই  চন্দনের গন্ধের সাবানটা নীলাশার খুব প্রিয় ছিল। নিতু পেছন ঘুরতেই জলের ফোটা ছিটকে আসে ওর খোলাচুল থেকে নিখিলের মুখে,চোখ পড়ে যায় ওর অনাবৃত পিঠে। নিজেকে আর সামলাতে পারেনা,হয়ত অনেকদিন ধরে এই দিনটার অপেক্ষায় ছিল নিতু। নিখিলকে সামলে সেদিন বেশ দেরিই হল ওর বাড়ি ফিরতে। আর তারপর থেকে হয়ত এটাই অভ‍্যেস হয়ে গিয়েছিল নিতুর টানে সকাল বিকেলে আর কোন ভেদাভেদ ছিলনা নিখিলের,শুধু নিতুকে নিয়ে কখনই ওদের পুরোনো খাটে শুতে ইচ্ছে করত না ওর।
                    নিতুর চাপে নিখিলকে ওকে বিয়েও করতে হয় তবে তার জন‍্য বছর তিনেক অপেক্ষা করতে হয়েছে। নিতুর স্বপ্ন সত‍্যি হয়েছে,ঐ সাজানো সংসার সংসারের মালিক আলমারির চাবি সবই আজ ওর। আজ আলমারি খুলতে খুলতে কত কথাই মনে হল। নিখিলের তেমন আত্মীয়স্বজন ছিলনা,আর যারা ছিলো তারা আড়ালে অনেক কথা বললো,কেউ বা ছি ছি করলো। বন্ধুরা অনেকেই সাপোর্ট করলো,সত‍্যি তো ওর কি করে চলবে? শুধু খবরটা পেয়ে রাগে ফুঁসলো রুনা,কেন যেন এই মেয়েটাকে প্রথম দিন দেখেই ওর ভাল লাগেনি। জামাইবাবু শেষে কাজের মেয়েকে,ইশ্ আর ভাবতে পারেনা গা টা রি রি করে ওঠে রাগে ঘেন্নায়। ওর দিদির কত শাড়ি গয়না সব আজ ঐ মেয়েটা ব‍্যবহার করবে।
           দেখতে দেখতে ওদের বিয়ের এক বছর হতে চললো,নিখিলের সাথে নিতুর বয়সের ফারাক একটু বেশি,তবুও নিখিল চাইছে একটা সন্তান হোক ওদের এবার। নিতুর বায়নায় পূজোর সময় বাইরে বেরোনোর টিকিট কেটেছে নিখিল এসি ফার্সট ক্লাশের টিকিট। সত‍্যি নিজের ভাগ‍্য দেখে নিজেই খুশি হয় নিতু, সবার মত ও হানিমুনে যাচ্ছে। পাহাড়ের নিরিবিলিতে নিখিল যেন নতুন করে নিতুকে খুঁজে পায়। জাদু জানে যেন মেয়েটা,নীলাশা এমন ছিলোনা। কোথা দিয়ে এক সপ্তাহ কেটে যায় বুঝতেই পারেনা। ওদের ফেরার টিকিটটা এসি টুতেই করেছিল নিখিল। বেশ রাতেই ট্রেনে উঠেছিল ওরা। উঠেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো,হঠাৎই ঘুমটা ভেঙ্গে যায় বাথরুমে যেতে হবে মনে হচ্ছে। নিখিলকে আর ডাকেনা নিতু,নীলাশা মারা যাবার পর রাতে ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমোয়। ঘড়িতে দেখে দুটো বাজে,সব আলোগুলো নিভু নিভু। বাথরুমের কাছটাও আবছা আলো জ্বলছে,প্রায় অন্ধকার তবুও যাক বাথরুমটায় বেশ আলো আছে। বেরোতে যাওয়ার মুখে হঠাৎই আলোগুলো নিভে যায়,আবার জ্বলে ওঠে নিভু নিভু হয়ে। ঘুমচোখে আবছা আলোয় নিতু যা দেখে তা দেখে ওর পা দুটো অবশ হয়ে যায়,এই নীল জরির শাড়িটা তো ওর খুব চেনা। কিন্তু এটা কে? ঘোমটার ফাঁকে মুখটা বড় চেনা, বৌদি! কিন্তু...হঠাৎই আলোটা নিভে যায় হাসির আওয়াজে ভেতরটা কেঁপে ওঠে। দরজাটা খুলে যায় আর একঝটকায় নিতুকে ধাক্কা দিতে যায় কেউ। আমায় ক্ষমা করে দাও বৌদি,সেদিন আমি ইচ্ছে করে তোমায় ধাক্কা দিইনি। আমার লোভ হয়েছিল,বাঁচাও আমাকে।'...হঠাৎই আলো জ্বলে ওঠে,বেশ কয়েকজন পুলিশ বেড়িয়ে আসে আরেকটা বাথরুম থেকে,মাথাটা ঘুরে যায় নিতুর। ওর হাতটা তখনও ধরে রেখেছে কেউ। রুনাদি! একদম বৌদির মত লাগছে। এর আগে দেখেছে প‍্যান্টশার্ট পরা। ততক্ষণে ওর হাতে ততক্ষণে হাতকড়া পড়েছে। ছটফট করতেই শুনতে পায়,' পালানোর চেষ্টা করলেই গুলি চালাবো। আপনাকে হাতে নাতে ধরার জন‍্য বেশ অপেক্ষা করতে হল আমাদের। থ‍্যাঙ্কস রুনা আমাদের হেল্প করার জন‍্য,তুমি না থাকলে নীলাদির খুনিকে ধরতেই পারতামনা। ততক্ষণে নিখিলও বেড়িয়ে এসেছে। চোখভরা ঘেন্না নিয়ে ওদের দিকে তাকায় রুনা। ' মিস্টার নিখিল আপনাকেও আসতে হবে আমাদের সাথে থানায়।' পুলিশের চাপে পড়ে পুরোটাই স্বীকার করে নিতু সেদিন নিখিলের খাবারের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়েছিল যাতে ওর ঘুম না ভাঙ্গে। নীলাশার চশমাটা সরিয়ে রাখে। বাথরুমে যাবে বলে বৌদি প্রথমে দাদাকেই ডাকে,দাদার ঘুম ভাঙ্গেনা। তখন ওকে ডাকে,ও শরীর খারাপ বলে তবুও ওঠে। বাইরে তখন কেউ ছিলোনা সবাই ঘুমোচ্ছিল আলোটা গন্ডগোল করছিল,নীলাশা ওর হাতটা চেপে ধরেছিল বলছিল চশমা ছাড়া কিছু দেখতে পাচ্ছেনা। ও বাইরের দরজাটা খুলে বলেছিলো এই তো বাথরুম যাও বলে নিজেই একটা জোরে ধাক্কা দিয়ে দিয়েছিলো...
         দিদিয়ার নীল জরির বেনারসীর আঁচলের চন্দনের গন্ধটা আজও সতেজ,খুব ভালোবাসত সাজতে । ও মারা যাওয়ার পর নিতুর অনুপস্থিতে শাড়িটা বার করেছিল পুলিশের সাহায‍্যেই।মনে মনে বলে,'আমি পেরেছি দিদিয়া তোর খুনিকে শাস্তি দিতে তবে আমার ননদাই না থাকলে হয়ত কিছুই সম্ভব হতনা।'

সমাপ্ত:-
    

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...