Skip to main content

জি লে জিন্দেগী

#জি_লে_জিন্দেগী#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

"উফ্ এতো চন্দন লাগাতে হবেনা,আরে মাঝখানে একটু কলকা ফলকা নাহলে প্রজাপতি এঁকে দিলেই হবে,বেশ বিয়ে বিয়ে লাগবে তাহলেই।" ওর কথা শুনে হেসে ফেলে পার্লারের মেয়ে দুটোও।"কি যে বলেন ম‍্যাম আমাদের পার্লারের একটা সুনাম আছেনা,সবাই বলবে কি?"
             রিমলি আবার উফ্ করে,এইটা ওর একটা বদঅভ‍্যেস। মাঝে মাঝেই একবার হাত চুলকোয় আবার পা চুলকোয়। "ম‍্যাম একটু চুপ করে বসুননা,আঁকাটা বেঁকে যাবে কিন্তু। আপনি সত‍্যি খুব ছেলেমানুষ।"
           এবার একটু হেসে ফেলে রিমলি একদম দুপাশের দুটো গজদাঁত বার করে,"আচ্ছা,একমিনিট আগে একটু হেসে নিই তারপর সাজিয়ো ঠিক আছে।"...প্রায় দুমিনিট হাসলো তার মাঝেই পার্লারের মেয়েটা একটা ছবি তুলে নেয় মোবাইলে। " আচ্ছা এসব কি হচ্ছে? ছবি তুললে কেন? আমি কোথায় মনের সুখে হাসছি আর এমন হাসতে পারবোনা বলে।".." সরি ম‍্যাম,আসলে আপনাকে এত মিষ্টি লাগছিলো যে একটা ছবি নিলাম। যদি বলেন ডিলিট করে দিচ্ছি।"..."না না ঐসব রাগ টাগ আমার আসেনা।"
                    হয়ত মনের মাঝটা অনেকটা ভিজে থাকে জলে তাই সময় পেলেই ওর লাফটার থেরাপিতে নিজেকে একটু বুস্ট আপ করে নেয়। খুব ছোটবেলাতেই মাকে হারিয়েছে রিমলি। হঠাৎই সব কিছু যেন থেমে গিয়েছিলো। সংসার অচল হয়ে যাচ্ছে তাই রিমলির নতুন মা এসেছিল মণিকা,একসময় নাকি ওর বাপির ক্লাসমেট ছিলো। প্রথমে দেখে নতুন মাকে একদম পছন্দ হয়নি ছোট্ট রিমলির ওর মায়ের মত কোঁকড়া লম্বা চুল নেই,গায়ে মিষ্টি গন্ধ নেই। ছোট ছোট চুল আর সবসময় গায়ে পারফিউমের গন্ধ,মুখে মেকআপ মানে আসল মুখটা ঢাকা মুখোশের আড়ালে। যদিও রিমলির সাথে কখনো তেমন খারাপ ব‍্যাবহার করেনি আবার ভালোও করেনি। রিমলি ডাকে মামণি,"তুই ভয় পাসনা,আমি সৎমা হবোনা। তবে ভালোবাসা টাসা আমার ঠিক আসেনা।"
         ছোট থেকে নিজের মত বড় হয়েছে রিমলি,ওর মনে হত ওর কি হলো তাতে কারো কিছু আসেনা। বাপিও সবসময় ব‍্যস্ত আর মামণিও। তবে মণিকা একটা দারুণ গিফ্ট দিয়েছিলো রিমলিকে,একদম ফুটফুটে নাক চেপ্টু কিউট কিউট একটা বোন। সবাই ওকে ভয় দেখালেও খুব খুশি হয়েছিল রিমলি বোনকে পেয়ে আদর করে নাম রেখেছিলো ঝিমলি।
                 বোনকে নিয়েই বেশ সময় কেটে যেত ওর। রিমলি যেমন ডানপিটে,ওর বাপি আর মামণি বলত আদরে আদরে বখে গেছে একদম। আজকাল মণিকা প্রায় বলে," আমি কিছু বলিনা বাবা,তারপর বলবে সবাই সৎমা তো তাই দেখতে পারিনা। সবার কথা কি বলবো ঝিমলিই তো আগে কান্না জুড়বে। কে বলবে ঝিমলি আমার মেয়ে,একটা ন‍্যাকা মেয়ে একদম।".."তোমার মেয়ে আমি কে বলেছে? তোমার মেয়ে তো রিমলি তোমার মতই কাটখোট্টা। তবে তোমার চেয়ে অনেক সুন্দরী।"..সেটা জানে মণিকা,আর সেটাই ওর গর্ব,দুই মেয়েই ওর সুন্দরী তবে দুজন দুই রকম।
         ....রিমলির বাপির হঠাৎই একটা আ্যটাক হয়ে যাওয়ার পরই মণিকা লেগে পড়ে রিমলির বিয়ে ঠিক করেছেন। বড়লোক বাড়ির একটা চকোলেট বয় মার্কা ছেলে,একদম মাম্মাস গুড বয়। রিমলি চায় জীবন একটাই তাই মজা করবে,ঘুরবে বেড়াবে সারা পৃথিবী দেখবে একদম নিজের মত করে বাঁচবে। তবুও বাপির কথা ভেবে রাজি হয়ে গিয়েছিলো তারপর যখন শুনলো ওদের বাড়ির বৌয়েরা ঘরের লক্ষ্মী তারা শুধুই ঘর সামলায় তখন বুঝেছিলো নাহ্ এই ঘরে ও শুধুই অলক্ষ্মী হয়েই থাকবে। ওর হবু বর মানে অরিন্দমকে বোঝাতে চেয়েছিলো ওর মনের ইচ্ছেগুলো,পাজিটা মুচকি হেসে বললো এমন অনেক ট‍্যালেন্টেড মেয়ে ওদের বাড়ির বৌ,যারা এখন হাসি মুখে বাচ্চার ন‍্যাপি পাল্টাচ্ছে। একেক জন তো একদম পাকা গিন্নি,ছেলেমেয়ে বড় হয়ে যাবার পর ব‍্যাবসা আর বাড়ি সব সামলাচ্ছে। আর বিদেশে বেড়ানো,সে তো ওরা মাঝেমধ‍্যেই যায়। সেই শখটা পূরণ হয়ে যাবে।
...রাগে গা জ্বলে গিয়েছিলো রিমলির,মিচকে পাজি একটা। মামণিকে বলে কোন লাভ হয়নি। বলেছিলো," এত ভালো ফ‍্যামেলি,কোন কাজ করতে হবেনা। পায়ের ওপর পা দিয়ে থাকবে। রেগুলার পার্লারে যাবে,ভালো শাড়ি গয়না আর কি চাই?"...অগত‍্যা ঝিমলিকে ধরেছিলো ওই পাজিটা বলে কি," অরিন্দম দা বেশ হ‍্যান্ডসাম
কিন্তু দিভাই। আমার তো বেশ ভালো লেগেছে।"
               কাকে বোঝাবে ও বনের পাখির জীবন চায়,খাঁচার পাখির জীবন ওর ভালো লাগেনা। আর বাপিকে বললে তো বাপি শুনবেই না,অসহায় মুখ করে বলবে," তোর তো মা নেই,মণিকা তোকে কোনদিন অযত্ন করেনি। আমার শরীরটা ভালো যাচ্ছেনা। মণিকাকে দুঃখ দিসনা।"
               তবুও বাধ‍্য মেয়ে হতে পারলোনা রিমলি,ও গতসপ্তাহে একটা মেল পেয়েছে ইউনিভার্সিটি অফ গ্লাসগো তে ট্র‍্যাভেল এন্ড ট্যুরিজম নিয়ে পড়বে বলে অনেক আগে যোগাযোগ করেছিলো স্বপ্নপূরণের জন‍্য। এক মুহূর্তে মাথাটা গুলিয়ে গেছিলো সেদিন সারারাত ঘুমোতে পারেনি। কি করবে ও,সবাইকে নেমন্তন্ন করা হয়ে গেছে। সব কমপ্লিট বিয়ে বাড়ি ঠিক থেকে তত্ত্বসাজানো সবটা। শুধু বিয়েটা আর রেজিস্ট্রীটা বাকি,ইশ্ কি করবে। রাতে এদিক ওদিক পায়চারি করে,ঝিমলিটা একদম কিউট হয়ে ঘুমোচ্ছে মোটু টেডিটাকে জড়িয়ে। হঠাৎই ঠিক করে ফেলেছিলো,বিয়ের হৈ চৈ এর মাঝে ও পালাবে। ইশ্ বেচারা অরিন্দম কি করবে,যাক ঝিমলির তো কোন আ্যফেয়ার্স নেই তাই ওর সাথেই বিয়েটা হয়ে যাবে হয়ত। না না অত ভাববেনা,যাবে ফিরে বিয়ের কনেকে না পেয়ে।
               একটাই তো জীবন তাই বাঁচবে একদম নিজের মত করে। কতবার মামণিকে বলেছে ওই সব বিয়ে ফিয়ে ওর জন‍্য নয়," তুমি বরং ঝিমলিকে দাও,ও বৌ সাজতে ভালোবাসে।"..গম্ভীর মুখে মণিকা বলেছিলো," সবাই বলবে,নিজের মেয়ে তো,তাই ওর বিয়ে আগে দিলো।"...গজগজ করতে থাকে মনে মনে ঝিমলি,"লোকে ভাববে বলে তুমি আমায় বড় করলে,পড়াশোনা শেখালে শুধু আমি কি ভাবছি সেটা দেখলেনা কখনো। ধ‍্যাৎ ভালো লাগেনা কিচ্ছু।"
              রিমলি সাজুগুজু করেই সবার অলক্ষ‍্যে ম‍্যানেজ করে পালালো,সাথে নিয়ে গেলো শুধু ওর মায়ের গয়নাগুলো আর সব রেখে গেলো,বিক্রি করতে হয়ত পারবেনা তবুও যদি কাজে লাগে। সাথে শুধু একটা হ‍্যান্ডব‍্যাগ। ঝিমলিই ছোট চিঠিটা খুঁজে পেয়েছিলো," কাঁদিসনা,গোলু আমি স্বপ্নপূরণ করতে চললাম। হ‍্যান্ডু অরিন্দমকে পারলে তুই বিয়ে করিস আর না হলে ফিরে যাবে। অনেক ভেবেছি রে জীবন তো একটাই আর আমার স্বপ্ন অনেক সংসার আমার জন‍্য নয়। আমার জানতে আর দেখতে ইচ্ছে করে সব.....
               চোখের জল আটকাতে পারেনি ঝিমলি,কি সেলফিস দিভাইটা! এই রকম চুপ করে চলে গেলো। ছোট থেকেই দিভাইকে গুরু বলে মেনেছে তাই আজও রাগ হলোনা,আসলে ওর তো মা নেই তাই হয়ত এত পাগলাটে।
                অরিন্দমদের বাড়ি থেকে খুব ঝামেলা করলো,রিমলির জন‍্য অপমানিত হতে হলো ওর মামণি আর বাপিকে। রিমলির ছকটাই কাজে লেগে গেলো,অরিন্দমের বাবাই সমস‍্যা সমাধান করে দিলেন তাই সবদিকই রক্ষা হয়ে গেলো অরিন্দমকে বিয়ে করে মাকে কাঁদিয়ে ঝিমলি চলে গেলো শ্বশুরবাড়িতে। অরিন্দমকে পাত্র হিসেবে অপছন্দ কিছুই ছিলোনা মণিকার সব দিক দিয়েই ভালো তবে ঝিমলিটাকে এত কম বয়সে বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে ছিলোনা একদম। খুব ইচ্ছে ছিলো একদম ছেলের মত করে ওকে মানুষ করার ভবিষ‍্যতে ওদের পাশে কে দাঁড়াবে?
                আর রিমলির নামটা শুনতেই ইচ্ছে করলোনা ওনার যদিও ঝিমলিটা খুব কাঁদলো ওদের ঘরে গিয়ে দিদিভাই দিদিভাই করে। মণিকার বলতে ইচ্ছে করলো," নিজের দিদি হলে তোর এত বড় সর্বনাশ করতে পারতো? আর দিদিভাই দিদিভাই করিসনা। কেন যে মরতে ঐ বাউন্ডুলে মেয়ের সম্বন্ধ করেছিলেন কে জানে!"
               সারাক্ষণ মুখে শুধু বড় বড় গল্প,সাজগোজ তেমন কিছুনা। ধিঙ্গি মেয়ে একটা হাঁটুছেঁড়া প‍্যান্ট পরে আর জপের মালা মোবাইল নিয়ে কি দেখতো কে জানে! ওর সাথে থেকে থেকে খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো ঝিমলিও। রিমলির বাবা কাঁদলেও মণিকার ভীষণ রাগ হলো একদম যাচ্ছেতাই মেয়ে একটা।
                  অরিন্দমদের বাড়িতে ঝিমলি গেলো একেবারে সোনা বৌ হয়ে। ঠিক যেমনটা ওরা চেয়েছিলো তেমনি মাথায় করে রাখলো শাশুড়িমা,বর সবাই। ভগবান যা করে ভালোর জন‍্যই,একেই বা দেখতে কম কি? বড় জন আরো একটু বেশি সুন্দরী ছিলো ঠিকই কিন্তু কেমন যেন কাঠখোট্টা মার্কা। বাবা মায়ের কাছে আসাই হয়না তেমন ওর। মাঝে ওর বাবা আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো। দিভাইয়ের কথা খুব মনে পড়ে দেখতে দেখতে প্রায় ছয়মাস হয়ে গেলো,ওর ঠিকানাও তো জানেনা।
           এয়ারপোর্টে আসার আগেই কপালের চন্দন মুছে ফেলে আর বেনারসী ছেড়ে আবার ছেঁড়া জিন্স আর টপে রওনা দেয় এক অজানা ভবিষ‍্যতের দিকে যেখানে আছে শুধু স্বপ্ন দেখার আনন্দ। আর পাঁচটা মেয়ের মত স্বপ্নকে গলা টিপে কম্প্রোমাইজ করে বাঁচতে চায়না রিমলি। ও থাকতে চায় নিজের মত করে,দেখতে চায় সমুদ্রের ঢেউ আবার কখনো গুনতে চায় আকাশের তারা অথবা দেখতে চায় ভোরের সূর্য।
  এখানে ইউনিভার্সিটিতে ভালো আ্যডজাস্ট করে নিয়েছে রিমলি,মাঝে দুবার বাড়িতে ল‍্যান্ডফোনে ফোন করেছিলো। মামণি ধরাতে কেটে দিয়েছিলো,ঝিমলিটা কি আসেই না বাড়িতে?
         ফেসবুকে লুকিয়ে ঢুঁ মেরেছিলো ওর প্রোফাইলে,সুইট বনুটা ওর। বাহ বেশ মানিয়েছে তো অরিন্দমের সাথে। অনেকদিন ওর ফেসবুকটা ডিআ্যক্টিভেট করে রেখেছে রিমলি তবুও একদিন সাহস করে বোনকে মেসেঞ্জারে মেসেজ করে। তারপর কত কথা তবে সবই অরিন্দমকে গোপন করে। মণিকা আর অরিন্দম কেন যেন একদম সহ‍্য করতে পারতনা ওকে।
             দেখতে দেখতে মাঝে কেটে গেছে চারবছর,রিমলি দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়ায় ওর এমনি কাজ। আজ ফ্রান্সে তো দুদিন বাদে জার্মানি সেখান থেকে ব্রাসেলস্। কত মানুষের চোখে স্বপ্নের রামধনু এঁকে দেয় ও। নিজেও দেখে প্রাণ ভরে,খুশি আছে ও ওর স্বপ্নের জীবনে।
                 এর মাঝেই জানতে পারে বাবা খুব অসুস্থ। তার আগেও দুবার আসতে চেয়েছে বাড়িতে মণিকা মত দেয়নি,আর এখন মণিকার কথাতেই সব হয়। আবার ফোন করে ঝিমলি," দিভাই তুই চলে আয় একবার বাপিকে দেখে যা,তুই সোজা নার্সিংহোমে চলে আসবি। "...খুব বেশি কথা বলতে পারেনা রিমলি বাবার সাথে। শুধু ওর বাবা বলেন," তোর মাকে কথা দিয়েছিলাম তোর কোন কষ্ট হবেনা। আমি তোর জন‍্য কিছু করতে পারলামনা।"..." আমি খুব ভালো আছি বাবা,বিশ্বাস করো। কজনের স্বপ্ন পূরণ হয় আমার মত।"..নিশ্চিন্ত হয়ে চোখ বোজেন বাবা। মণিকার কথায় বখে যাওয়া মেয়েটা তাহলে সত‍্যিই ভালো আছে। হোটেলে ফিরে যায় রিমলি,বাবা চলে যান পরদিন ভোরে।
              মণিকা রিমলিকে তবু ঢুকতে দেননা বাড়িতে,"স্বার্থপর মেয়ে একটা,শুধু নিজের স্বপ্নের কথা ভাবলো। আমার মেয়েটার জীবন শেষ করে দিলো। ওর জন‍্যই তোর বাপি চলে গেল এত তাড়াতাড়ি। কি করতে এসেছে এখন? সম্পত্তি নিতে নিশ্চয়।"..." মা দিভাই কিছু নিতে আসেনি। তুমি যদি শুধু কর্তব‍্য না করে ওকে একটু ভালোবাসতে ও এমন হত না। ছোটবেলায় আমি অন‍্যায় করলে আমাকে বকতে। ওর বেলা চুপ করে থাকতে কেন মা? ও তোমার নিজের মেয়ে নয় বলে?".." বকলেও তো সবাই বলতো আমি ওকে দেখতে পারিনা।"..." আজ সবার কথা না ভেবে ওকে খুব বকে কাছে ডেকে নাও না মা। আমি তো খুব ভালো আছি শ্বশুরবাড়িতে। নাও না মা ওকে ডেকে কাছে,ও যে বড় একা। হয়ত মায়ের ভালোবাসাটাই খুঁজেছে ছোট থেকে কোনদিন পায়নি।"
             চিরকাল নিজের জেদে চলেছেন মণিকা আজ আর ইচ্ছে হলোনা নিজেকে নত করতে তাই ঝিমলির কোন কথাই ভালো লাগলোনা। আর তার সাথে সায় দিলো অরিন্দম। ফিরে গেলো রিমলি আবার ডুবে গেলো কাজে।
                   হঠাৎই বেশ কিছুদিন বাদে ঝিমলি কান্নায় ভেঙে পড়লো," দিভাই একবার আসবি,মায়ের স্ট্রোক হয়ে প‍্যারালিসিস হয়ে গেছে আমি কি করবো বুঝতে পারছিনা। মাকে কে দেখবে বলতো। আমি তো তোর মত স্বাধীন নই,তার ওপর ছোট বাচ্চা আমার। মায়ের একটু যত্নের দরকার রে।"...যাবেনা ভাবলেও ছুটে আসে রিমলি হয়ত একটু ভালোবাসা আর ক্ষমা পাবার জন‍্য। মণিকা আপত্তি করতে পারেননা,শুধু চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। আজ বড় অসহায় তিনি। মামণির হাতটা পরম আদরে ধরে রিমলি বলে,"মামণি তুমি আমার ওপর রাগ কোরনা,সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো।"..জড়ানো গলায় মণিকা বলেন," একবার মা বলবি।"...মা.. হয়ত এই ডাকটা ডাকবে বলেই কতদিন ভেবেছে কিন্তু সাহস পায়নি। মণিকা শিখিয়েছিলো মামণি বলতে।
                 রিমলিকে চলে যেতে হয় দুদিন বাদে কিন্তু অদ্ভুত একটা আনন্দ এবার মনে। একটু একটু করে সেরে ওঠেন মণিকা,অনেকটা ভালো ওদের দুইবোনের যত্নে। রিমলি ফিরলো আবার কিছুদিন বাদে মাত্র সাতদিনের জন‍্য। বেশ কাটলো কয়েকটা দিন এবার,অরিন্দমের সাথেও দোস্তি হয়ে গেছে আসলে ওদের ছেলটা মিমির খুব ভক্ত। এবার এয়ারপোর্টে ওরা সবাই এসেছে,মণিকা বড় মেয়ের সাথে যাচ্ছেন এবার কিছুদিন ওখানেই থাকবেন। যত্নে হুইলচেয়ারটা ধরে ভেতরে যেতে যেতে হাত নাড়ে রিমলি।
            রিমলির আ্যপার্টমেন্টটা ছোট,একটুকরো শান্তির ঠিকানা। "মা,দেখতো এটা মুখে দেওয়া যাবে কিনা?"..." খুব ভালো হয়েছে রে,এত কাজ কখন শিখলি রে? আমি তো ভাবতেই পারছিনা।"
..."তোমার বখাটে মেয়েটা তাহলে একটু মানুষ হয়েছে তাইনা?"...হাসেন মণিকা," আসলে তুই আমার মত হয়েছিস রিমলি। জানিস আমি না এমনি ছিলাম ঠিক তোর মত তাই তো অত দেরীতে বিয়ে হয়েছে। আর সংসার টংসার ঠিক আসতো না তাই বোধহয় তোকে ভালোবাসতে পারিনি ঠিকমত। "..." কে বলেছে মা তুমি ভালোবাসনি আমায়? তুমি আগলে না রাখলে এত স্বাবলম্বী হয়ে নিজের স্বপ্ন কি করে পূরণ করতাম বলো?"
           এক টুকরো রোদ্দুর খেলা করে বারান্দায়, হাঁটু মুড়ে মায়ের কোলে মাথা রাখে রিমলি। চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দেয় মণিকা," যা চিরুণীটা আনতো দেখি।"..ভিডিও কল করে ঝিমলি..." এই দ‍্যাখ মায়ের আদর খাচ্ছি।"..." আমার কিন্তু খুব রাগ হচ্ছে দিভাই। মা এটা কেমন হচ্ছে?"..মুখে কথাটা বললেও চোখটা ঝাপসা হয়ে যায় ঝিমলির মনে মনে বলে প্রাণভরে মায়ের আদর খা দিভাই। বোনের দিকে আর পুচকেটার দিকে একটা ফ্লাইং কিস্ ছুঁড়ে দেয় রিমলি "উম্মা, লাভ ইউউউউউ ঝিমলি মাই সুইট গোলু বোনু।"
©ইচ্ছেখেয়ালে শ্রী

সমাপ্ত:-
                 
         
        

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...