#অবৈধ#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
"অত সাজানোর দরকার নেই মেয়েকে,ও তো থাকবে আমাদের বাড়ির মেয়ের মতই। আসলে আমার মেয়ের কাছে ওর ছবি দেখেই আমাদের ভীষণ পছন্দ হয়েছে।"..এক গাল মিষ্টি হাসি হেসে বলেন প্রতিমা। " আসলে এখনই মেয়ের বিয়ে দেবার ইচ্ছে আমাদের খুব একটা ছিলোনা। তবে নন্দা ওর খুব ভালো বন্ধু তাই মেয়েরও মনে হয় খুব একটা আপত্তি নেই। তবে ওর পড়াশোনাটা যাতে বন্ধ না হয় একটু দেখবেন।"
অন্য শাশুড়িদের মত মুখ বেকিয়ে প্রতিমা বললেননা বিয়ের পর আবার পড়াশোনা!হাসিমুখে আবার বললেন," সৃজা পড়বে ওর যত খুশি কোন সমস্যা নেই আমাদের।"
নন্দাই নিয়ে আসে সৃজাকে সঙ্গে করে। " মা এই দেখো,আমার মিষ্টি বন্ধুকে। শাড়ি পরেই এসেছে। এবার বলো কেমন লাগছে?"বলার বোধহয় আর অপেক্ষা থাকেনা একদম ওঠ ছুড়ি তোর বিয়ে। সবারই পছন্দ হল সৃজাকে,একদম লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে কোঁকড়া কোঁকড়া চুল মাথায়। মুখে মিষ্টি হাসি,ফর্সা আর নিটোল সুন্দর মুখটা। তাছাড়া পড়াশোনাতেও ভালো। কথা হলো ছেলে এসে একবার দেখে যাবে,এখন ছেলে ট্যুরে ফিরতে আরো মাস দুয়েক লাগবে।
এক দেখাতেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো সৃজার সঞ্জয়ের সঙ্গে।শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে কখনো মনে হয়নি এটা একটা আলাদা বাড়ি,সবার আদরে গল্পে আর আবদারে মেতে উঠেছিলো মনটা। আর তার সাথে ওর প্রিয় বন্ধু নন্দা যে কিনা এখন ওর ননদ। সেই তুলনায় সঞ্জয় একটু চুপচাপ,বেশ বর বর ভাব,মনে মনে হাসে সৃজা। ও হয়ত একটু বেশিই ছেলেমানুষ। ফুলশয্যার রাতে সঞ্জয় বলেছিলো," তুমি এই বাড়িতে সবার খুব প্রিয়। ভালোই হয়েছে আমি তো প্রায়ই বাইরে বাইরে থাকি তোমার কোন অসুবিধে হবেনা। তবে পড়াশোনা তোমার আর কতদিন চলবে?"..অবাক হয়েছিলো সৃজা," আমার পড়াশোনা খুব ভালো লাগে। মা তো বলেছেন আমাকে পড়তে যত দূর চাই।"..একটু হাসে সঞ্জয়," আমিও তো তাই বলছি,জিজ্ঞেস করলাম এইজন্য যে ততদিন আমাদের একটু সাবধানে থাকতে হবে বুঝলে আমার মিষ্টি বউ।".সৃজাকে একদম বুকের কাছে টেনে নেয় সঞ্জয় দৃঢ় বাহুর বন্ধনে। নিশ্চিন্ত সৃজা মুখ রাখে সঞ্জয়ের বুকে পরম নির্ভরতায়। পরদিন জ্বালিয়ে মারে নন্দা," আমি দাদাকে বলে দিয়েছিলাম বন্ধুটা আমার খরগোশের মত নরম,বেশি কষ্ট দিসনা।"..লজ্জা পায় সৃজা,'ধ্যাৎ'।
এই বাড়িতে এসে সৃজা নন্দার সাথেই ভর্তি হয়ে গেলো অনার্সের পড়া পড়তে অভিষেকদার কাছে। অভিষেকদা ওর শ্বশুরমশাইয়ের পুরোনো ছাত্র। অভিষেকদা বৌদি দুজনেই খুব ভালোবাসে ওদের আর পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ওরা একটু চটকে নেয় পুপুকে। পুপু অভিষেকদার মেয়ে। বৌদি বলে ওকে পুচকে বৌ। সব ভালোই চলছে,সঞ্জয় মাঝে মাঝেই বাইরে যায় অফিসের ট্যুরে। ফিরে আসার পরই থাকে অনেক জমানো আদর,একদম বাক্সভরা। " এই যে আমার পড়াশোনাটা যেন বন্ধ না হয়।".." এইরকম করলে চলবে কেন,আমার এই মিষ্টি বৌটাকে কতদিন ছেড়ে থাকছি আর সবার নজর পড়ছে আমার বৌটার দিকে, আমি কিন্তু খুব হিংসুটে তাই পুরোটাই আমার।"
হাসলেও ছোট্ট একটা সন্দেহের গন্ধ পায় সঞ্জয়ের কথায় সৃজা। ভালোভাবে পাশ করে এম.এ তে ভর্তি হয়েছে সৃজা,তবে নন্দাটার হঠাৎই বিয়ে হয়ে গেলো। খুব মজা হলো কয়েকটা দিন,কোমরে কাপড় জড়ালো সৃজা,বৌদি বলে কথা। তাই এখন একাই পড়তে যেতে হয় ওকে ওর যে অনেক স্বপ্ন,শাশুড়িমাও বলেন," পড়ে নাও যতদূর মন চায়,তবে বাড়িটা বড় ফাঁকা। একটা ছেলেমেয়ে আসুক এবার,আমিই সামলাবো তোমার চিন্তা নেই।"...পুপুটাকে দেখে সৃজারও মনে জাগে মাতৃত্বের স্বপ্ন,কিন্তু তাহলে পড়াশোনাটা ঠিকঠাক চলবে তো? এর মাঝেই হঠাৎ একটা অঘটন যটে যায়,হঠাৎই চলে যান অভিষেকদার স্ত্রী মানে ওদের প্রিয় বৌদি, খুব হাই সুগার ছিলো বৌদির। তাই বলে এভাবে হঠাৎ! ওরা সবাই ধাক্কা খায়,এলোমেলো হয়ে গেছে অভিষেকদার সংসার অনেকদিন ওদের ক্লাশ হয়না। একদিন সৃজাই গেলো ওদের বাড়িতে," দাদা আবার সবটা শুরু করুন। আমরাও খুব অসহায় হয়ে যাচ্ছি আপনি না পড়ালে। আবার তো ফিরতে হবে কাজের জগতে। কতদিন এভাবে ছুটি নিয়ে থাকবেন?"..সৃজাকে দেখেই ছুটে আসে পুপু,ওর কোলে উঠে পড়ে,অনেকটা সময় থেকে যায় ওখানে সৃজা। পুপু ছাড়তেই চাইছিলোনা,ওকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে বাড়ি ফেরে বেশ দেরি হয়ে যায়। " রবিবারও তোমাকে বাড়িতে পাওয়া যাবেনা,বাজার থেকে এসে দেখি তুমি নেই। মা একা একা সব করছে।"..বেশ উঁচু গলায় বলে সঞ্জয়। আজ একটু বিরক্ত লাগে প্রতিমাকেও," একটু আসছি বলে এতক্ষণ থেকে গেলে বৌমা।"
সৃজার চেনা বাড়িটা আজ একটু অচেনা লাগে ওর। তারপর কদিন আর যাওয়া হয়নি,তার মাঝেই শুনলো অভিষেকদা আবার পড়াবেন। তাই খোঁজ নিতে গেলো,যথারীতি সেদিনও পুপু ছাড়তে চাইলোনা,আসলে সৃজা শাড়ি পরে বিবাহিতা তাই হয়ত ছোট শিশু ওর মধ্যেই দেখতে পায় মাকে। বাড়ি আসতেই শোনে ওকে অফিস থেকে ফিরে না দেখতে পেয়ে সঞ্জয় খুব রাগারাগি করেছে। প্রতিমা আজ বলেই ফেললেন," এবার তোদের একটা বাচ্চা হোক,অনেকদিন তো হলো। একটা বাঁধনের খুব দরকার মেয়েদের।"
মনটা খারাপ হলেও চুপ করেই থাকলো সৃজা। নাহ্ কোন কথার উত্তর দিয়ে অযথা মাথা গরম করবেনা। আর এটা ওর স্বভাবও নয়,তাছাড়া কাল ভোরেই আবার সঞ্জয় বেশ অনেকদিনের জন্য বেড়িয়ে যাবে বাইরে। তবুও একটু চুপ করে যায় সৃজা। রাতে অভিমান করে পাশ ফিরেই শুয়ে পড়ে। হঠাৎই সঞ্জয় জোর করেই টেনে নেয় ওকে," বর বাড়ি ফিরবে সেদিকে তোমার খেয়াল নেই,মাস্টারমশাইয়ের বাড়িতে সময় কাটালেই হবে?" কিছু বলতে গিয়েছিলো সৃজা ওর মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরে সঞ্জয়," কোন কথা নয়,আমি কাল চলে যাবো অনেকদিনের জন্য,তাই আজ মুখ ফিরিয়ে থাকলে চলবেনা।"..সঞ্জয়ের আদরটা কেন যেন আজ নির্যাতন বলে মনে হলো সৃজার,এক সময় কষ্টে কাতরে উঠলো। তবুও সঞ্জয় আজ যেন প্রাণপণে পিষ্ট করলো ওকে। ঘুমিয়ে পড়েছে সঞ্জয়,বাথরুম থেকে চোখেমুখে জল দিয়ে আসে সৃজা,পড়াশোনাটা হয়ত আর হবেনা বুঝতে পারে। সঞ্জয় দিন দিন কেমন যেন পোজেসিভ হয়ে যাচ্ছে।
সপ্তাহখানেক হলো সঞ্জয় চলে গেছে। নন্দার বিয়ের পর সৃজা একলা হয়ে গেছে। সঞ্জয় দিনে অনেকবারই ফোন করে,খবর নেয় ও কোথায় এখন কখন বাড়ি ফিরবে এইসব। আজকাল শাশুড়িমাও একটু দেরি হলেই রাগ করেন। হয়ত সঞ্জয় ওনার কাছে এত কৈফিয়ত তলব করে যে ওনার কিছু করার থাকেনা। অভিষেকদার কাছে পড়তে গেলেই,পুপুর জন্যই আজকাল বড় ফিরতে দেরি হয়ে যায়। কোনমতে ছাড়িয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে আসতে হয়। ওদের বাড়ির পুরোনো কাজের মাসিই সামলাচ্ছে পুরোটা। হঠাৎই একদিন আকাশ ভেঙে পড়ে ওদের মাথায়,সঞ্জয়ের বাইরে গিয়ে একটা আ্যক্সিডেন্ট হয়েছে,ইমিডিয়েট অপারেশন করতে হবে। ভর্তি করানো হয়েছে,ওরা যেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে আসে। কান্নায় ভেঙে পড়ে ওরা শাশুড়ি বৌমা,শ্বশুরমশাই নন্দাই এরাই সামলায়। অনেকটা দূরের পথ তবুও সৃজাকে নিয়ে শ্বশুরমশাই আর নন্দাই রওনা দেয়। অনেকটা ঝড় সামলে ওরা ফেরে সঞ্জয়কে নিয়ে। অদ্ভুত মেজাজের হয়ে গেছে সঞ্জয় বাড়িতে থেকে থেকে,আজকাল সৃজাকে বাইরে বেরোতেও দিতে চায়না। অথচ সামনেই পরীক্ষা ওর। যতটা পারে সবদিক সামলাচ্ছে সৃজা,এর মাঝে পড়াশুনা করছে যদিও সবদিন যেতে পারেনা। তবে অভিষেকদা অনেকটা সাহায্য করছেন,শ্বশুরমশাই বলেছেন নোটগুলো দিতে ওকে। মাঝে একদিন গিয়েছিলো,সেদিন পুপুর ধুম জ্বর ও কিছুতেই ছাড়ছিলোনা তাই আসতে দেরি হয়ে যায়,সাঙ্ঘাতিক উত্তেজিত হয়ে যায় সঞ্জয়,আজকাল যেন কেমন হয়ে গেছে। রেগে গিয়ে উল্টোপাল্টা কথা বলে।
মাঝে কেটে গেছে মাস তিনেক, সৃজার পরীক্ষার মাঝেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে ও। কোনরকমে পরীক্ষাটা শেষ হয়,তারপর প্রতিমাই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। ডাক্তার জানায় মা হতে চলেছে সৃজা। মিষ্টির প্যাকেটটা হাতে নিয়েই ঢোকে বাড়িতে প্রতিমা। প্রথমেই ছেলেকে সুখবর দিয়ে মিষ্টিমুখ করাতে যায়। খবরটা শুনে কেমন অদ্ভুতভাবে রেগে ওঠে সঞ্জয়," তিনমাসের ওপর ওর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই বাচ্চাটা আসে কোথা থেকে শুনি?"..সবার সামনে লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করলো সৃজার। মুখ কালো করে চলে গেলো প্রতিমাও। লজ্জা,শুধুই লজ্জা,কি করে ও বলবে সেই রাতের কথা যেদিন সঞ্জয় আষ্টেপৃষ্টে বেধে পিষে ফেলেছিলো ওর নরম শরীরটা এক দানবিক শক্তিতে নাকি ওর কিছু মনে নেই সেই রাতের কথা!
কম কথা বললেও সঞ্জয়ের অত্যাচার,সন্দেহ আর বাড়ির সবার তির্যক কথায় ঐ বাড়িতে থাকা সম্ভব হলোনা সৃজার। সঞ্জয় প্রকাশ্যেই চিৎকার করে বললো একদিন অভিষেকদার সামনে," আমি অক্ষম তাই,নিজের বৌ মরে যাওয়ার সুযোগে আমার বৌকে নিয়ে ফূর্তি করছে। তাই তো ভাবি এত দরদ কেন,বাড়িতে এসে নোট দিয়ে যাওয়া।"...আজ প্রতিবাদে চিৎকার করে সৃজা তার ফল আরো ভয়াবহ হয়। বেড়িয়ে আসে নির্মম সত্যিটা যে অপারেশনের সময় ডাক্তার বলেছেন ওর পুরুষত্বের শারীরিক ক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে। চিৎকার করে বলে সৃজা," এ তোমার সন্তান,বিশ্বাস করো, ওকে নিয়েই আমরা খুশি থাকবো। ভগবান আমাদের দিয়েছেন ওকে।"
..." না ও আমার সন্তান হতে পারেনা ও অবৈধ সন্তান,আমি তোমাকে বিশ্বাস করিনা। চরিত্রহীন মেয়েমানুষ একটা।"..নন্দা বোঝানোর চেষ্টা করে হয়না কিছুই," দাদা মনেহয় পাগল হয়ে গেছে। তুই বরং কিছুদিন বাপের বাড়ি থেকে আয়।" ঘর ছাড়ে সৃজা আশা নিয়ে ওরা ওকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে কিন্তু নাহ্ নোটিশ আসে ডিভোর্সের। তখন শুধুই চারিদিকে কানাকানি আর লজ্জা একটা সময় মরে যেতে চেয়েছিলো সৃজা। কিন্তু মরতে পারেনি ওর সন্তানের কথা ভেবে।
....." মা কি হয়েছে গো তোমার? কতক্ষণ ধরে দিদিভাই বসে ছিলো এখানে। সেই যে তুমি পাশ ফিরে শুয়ে আছো উঠলেই না।"
.."ওমা পুপু এসেছিলো নাকি বুঝতেই পারিনি। সত্যি মেয়েটা এইরকমই,আমাকে ঘুমোতে দেখলে কিছুতেই বিরক্ত করবেনা। একদম তোর উল্টো।".." হ্যাঁ মা আমি দিদিভাইয়ের মত নই,আমি একদম পোজেসিভ যা আমার তার উপর দাবী খাটাই।" আজ এত বছর বাদে হঠাৎই মনে পড়েছিলো ফেলে আসা অতীতের সবটাই। যদিও মনে পড়ে সবটাই।
...." মা তুমি উঠে পড়েছো? এই দুষ্টুটা তোমায় তুললো না?".." পুপু আয় আমার কাছে এখানে বোস।".." আর আমি,বসবোনা?".." এই তো আমি হাঁটু মুড়লাম নে এবার শুয়ে পড় দুজনে কোলে।"
..." মা তুমি জানো তোমার এই ছোট দুষ্টুটা আমাকে বলছিলো ও আগে বিয়ে করবে।".." "করবোই তো দি,আমার অত বেশি পড়াশোনা করতে ভালো লাগেনা। তুই কর। বাবা আমার বয়ফ্রেন্ডটা যদি অন্য কারো হয়ে যায় তাহলে আমি কি করবো শুনি?"
ওদের কথা শুনতে শুনতে আবার আনমনা হয়ে যায় সৃজা,একদম ওর বাবার মত হয়েছে মেয়েটা। সবার অভিযোগের তীরে যখন বিদ্ধ আর আহত সৃজা তখন অভিষেকই বলেছিলো," মিথ্যেটা এবার সত্যিই হোক। আমিও আর পারছিনা,এবার ঘুরে দাঁড়ানো দরকার।"..নিজের সন্তান কে কোলে নিয়ে পা রেখেছিলো অভিষেকের অগোছালো সংসারে সৃজা,পুপুকে টেনে নিয়েছিলো নিজের বুকের কাছে। বেঁচেছিলো দুটো জীবন। পুরোনো শহর পুরোনো স্মৃতি সব সরিয়ে অভিষেক ওদের নিয়ে চলে এসেছে অনেকটা দূরে। সৃজাও এখন চাকরি করে।
পুপু পি এইচ ডি করছে,আরো পড়তে চায়। মিঠির জন্য খুব ভালো সম্বন্ধ এসেছে,বিয়ে পাগলী একটা। ওই সবটা পছন্দ করেছে,সৃজা আর অভিষেক বাধা দেয়নি খুব ভালো ছেলে রুদ্র। কনের সাজে কি সুন্দর মানিয়েছে মিঠিকে, সত্যিই ওর দুই মেয়েই খুব সুন্দর। আজকাল ওদের দেখলে মনটা ভরে যায়। খুশির মধ্যেও মনটা ভারী হয়ে যায় সৃজার,ভালো থাকবে তো মেয়েটা?
..." মা,মিঠি খুব ভালো থাকবে তুমি দেখো। তুমি বিশ্রাম নাও এখন। আমি বাবা তো আছিই,তুমিই তো বলছিলে মেয়ের বিয়ে মাকে দেখতে নেই।''সত্যিই আজ ওর সবার আড়ালে থাকাই ভালো।
হঠাৎই একটা গন্ডগোলের আওয়াজ শোনে সৃজা। " এ কি মিঠি তুই এখানে কেন একা এভাবে? বিয়ে হয়ে গেলো নাকি?"..." মা ঐ লোকটা কে,যে আমাকে সম্প্রদান করতে বসেছে। আমার বাবা কই? আমি কিছুতেই এই বিয়ে করবোনা রুদ্রকে বলে দিয়েছি।"..মেয়ের এমন রূপ কখনো দেখেনি সৃজা। কিছুতেই শান্ত করা যায়না মেয়েকে,অভিষেককে দেখে ওকে জড়িয়ে কেঁদে ফেলে মেয়ে। "রুদ্রদের বাড়ি থেকে এমন বলেছে,না এটা তোমরা করেছো আমাকে জানতে হবে।"....মাথা নিচু করে উঠে যায় সঞ্জয়,যে সন্তানকে একদিন অবৈধ বলে ত্যাগ করেছিলো আজ ভুল বুঝতে পারলেও সন্তান আর তাকে চায়না। অভিষেকই চেয়েছিলো আ্যসাইলামে দীর্ঘদিনে থাকার পর অনুতপ্ত সঞ্জয় অন্তত কন্যাদানটা করুক। অভিষেকের বুকে মাথা রেখে ঝরঝর করে ক়াদছে মিঠি," তোমাকে এত ভালো কে হতে বলেছে। কেন তুমি এমন করলে? কেন আবার আমার মাকে অপমান করলে? তুমিই আমার বাবা আর কাউকে আমি চিনিনা।"..মাথা নিচু করে সৃজা চোখ ভর্তি জল নিয়ে,কি করে বলবে ইচ্ছেটা ওরই ছিলো। " দেখি আমার মাকে,এই যাহ্ সব মেক আপ উঠে গেলো তো,রুদ্রটা বসে আছে বোকার মত। লোকজনেরা কি ভাবছে,চল এবার।"..." তুমি চলো আগে তারপর।"
সানাইয়ের আওয়াজটা বড় বিষণ্ণ লাগে সৃজার। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে চোখদুটো অকারণেই ভিজে যায়। " আমরা আসিরে,দাদাকে নিয়ে অনেকটা ফিরতে হবে।".."ওহ্ নন্দা"...প্রিয় বান্ধবীকে জড়িয়ে ধরে সৃজা। এতগুলো বছরে ফিকে হয়নি বন্ধুত্বটা,তাই বাড়ির মেয়ের বিয়েতে অনেকটা পথ ছুটে এসেছে। সত্যি বোধহয় সবাই সৃজার মত হয়না তবুও অনেকেই হয়ত সন্তানের পিতৃত্বের স্বীকৃতিটুকু পাবার জন্য একটুকরো আশা রাখে অনেক বছর বাদেও,ভুলতে পারেনা প্রথম বিয়ের স্মৃতি।
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment