Skip to main content

সোহাগ

#সোহাগ#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

"মানেটা আবার কি,দেখো মা আমি আজকে আরো ইচ্ছে করে দেরি করে যাবো। কিট্টুকে কি আমি বাপের বাড়ি থেকে এনেছি নাকি? দাদু ঠাম্মি হওয়ার শখ আছে পুরো এদিকে নাতি সামলাবেনা। ওরা জানতো না আমি চাকরি করি? এদিকে লোকও রাখতে দেবেনা,নাতি কুশিক্ষা পাবে বলে। আমার কি কোন জীবন নেই নাকি?"..একটানা বলে যায় কথাগুলো সংযুক্তা। চুপ করে থাকেন রূপা। আদরের মেয়ে ওনার তারপর এমনিতেই মেজাজি। ওনার থেকে ভালো তো ওকে কেউ চেনেনা।
        ছোট থেকেই নিজের ভালোটা একটু বেশিই বোঝে। যদিও ওনারা সবসময় সঙ্গ দিয়ে এসেছেন মেয়ের হয়ত বা প্রশ্রয়ও। একমাত্র মেয়ে তো তাই একটু বেশিই আদুরে। অফিস ফেরত চলে আসে মাঝে মাঝেই,যদিও ওনার বলেন," দাদুভাইটা অনেকক্ষণ মাকে দেখেনা চলে যা তাড়াতাড়ি। তুই বরং ছুটির দিনেই আসিস তাহলে সবাই মিলে আসতে পারিস।" অদ্ভুত একটা ভুল বোঝাবুঝি ওদের মাঝে। এমনিতে সংযুক্তার শ্বশুর শাশুড়ি বেশ ভালো মানুষ,আর সৌম‍্যও একটু বেশিই হোমসিক। এইসব নিয়েই অভিযোগ সংযুক্তার আর বোলোনা," সারাক্ষণ শুধু ম‍্যা ম‍্যা করে যাচ্ছে। আর আমার ছেলেটাও হয়েছে তেমন সারাক্ষণ দাদান আর আম্মা।".." কি করা যাবে বল ওদের কাছেই তো ও থাকে সারাদিন।"
..." তোমাকে তো বলেছিলাম মা,ওকে তোমাদের কাছে রেখেই আমি অফিস যাই। তুমি তো রাজি হলেনা। বললে বাবার পেশমেকার বসানো। আর তোমার হাঁটু ব‍্যাথা,তাই তোমরা পারবেনা সামলাতে। অন‍্যের ফেভার নিতে ভালো লাগেনা আমার।"...হাসেন রূপা," ফেভার কেন বলছিস ওদের বাড়ির ছেলে ওরা দেখবেনা?".." না মা ওদের বাড়ির ছেলে আবার কি,আমি ওকে জন্ম দিয়েছি। একদিক দিয়ে দেখলে তোমার অধিকারই বেশি।"..." ঐসব অধিকার টধিকার বুঝিনা বাবু,আমাদের দাদুভাই যত্নে বড় হচ্ছে এটাই শান্তি। একটু ঠোকাঠুকি সব সংসারেই আছে। ওরা না থাকলে তখন বুঝবি মাথার ওপর ছাতা না থাকলে কেমন হয়।"
         নাতি সামলাতে মাঝে মাঝেই জেরবার হন সৌরভ আর সীমা,যা দুষ্টু হয়েছে ছেলেটা নিত‍্য এই বায়না নাহলে সেই বায়না। তবে ওই তো বাড়ির অক্সিজেন। সারাদিন ভালোই থাকে তবে ওর মায়ের আসার সময় হলেই ছেলেকে রাখা মুশকিল। কি করে যে বুঝে যায় সময়টা কে জানে‌। বাধ‍্য হয়ে তখন বৌমাকে ফোন করতে হয়। আর তাতেই সংযুক্তা ভীষণ বিরক্ত হয় ওরা বোঝেন সেটা, কিন্তু এক এক সময় নিরুপায় হয়ে করতেই হয়। সংযুক্তার মেজাজটা খারাপই ছিলো তাই আজ একটু বেশিই উত্তপ্ত কথা বলে ফেললো,যদিও ওর মা বারবার বুঝিয়ে বলেছিলেন তাও। " মামণি বাপি শোনো তোমরা রাগ কোরোনা,প্রতিদিন এত ঝামেলা আর ভালো লাগছেনা আমি ওকে ক্রেশে দিয়ে দেবো। সারাদিন ওখানেই থাকবে। কারণ তোমাদের তো আবার আয়া পছন্দ নয়। একটা তো বছর,সামনে বছর স্কুলে যাবে,তারপর ওখান থেকে ক্রেশ হয়ে বাড়ি ঢুকবে।"...বুকের ভেতরটা মুচড়ে ওঠে সীমা আর সৌরভের কথাগুলো শুনে। তবূও বলেন," তোমায় কি করে বোঝাই বলতো,তোমার ফিরতে দেরি হলে কি অস্থির করে ও,মাথা খারাপ করে দেয় একেবারে।"...ছেলেকে টানতে টানতে ঘরে ঢুকে যায় সংযুক্তা। কাঁদতে থাকে কিট্টু জোরে জোরে। তবুও দরজা আটকে দেয় বেডরুমের," থাক ঘরে বন্ধ,তোর জন‍্য রোজ এত অশান্তি আর ভালো লাগেনা।"..আজ সত‍্যি ছেলেটার কান্না দেখে কান্না পায় ওর। এদিকে দরজা নক করেন সীমা,"বৌমা ওকে এভাবে আটকে রেখোনা,খুলে দাও।"
       বাড়ি এসে আজ খুব খারাপ লাগে সৌম‍্যরও অদ্ভুত একটা নিস্তব্ধতা বাড়িতে,ছেলেটা কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়েছে। মায়ের মুখ ভার ওদিকে বৌয়ের চোখ ফোলা। রাতে ওর কাছে ফেটে পড়ে সংযুক্তা," তোমরা কি চাও আমি চাকরি ছেড়ে দিই না বাপের বাড়ি যাওয়া বন্ধ করি? তা তো আমি করবোনা। দরকার হলে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো ফ্ল্যাটে,লোক রেখে ছেলে মানুষ করবো। যাদের কেউ নেই তারা কি করছে, ও সেভাবেই মানুষ হবে।"..সৌম‍্য বোঝানোর চেষ্টা করে লাভ হয়না। খুব মন খারাপ হয় সীমা আর সৌরভেরও। বন্ধ দরজার ভেতরে কান্নায় ভেঙে পড়ে দুই নারী তাদের স্বামীর কাছে। সীমা বলে," ওরা চলে গেলে কি করে থাকবো গো দাদুভাইকে ছাড়া। আমি থাকতে পারবোনা।"..." বড় মায়াতে জড়িয়েছো সীমা,তখনি বলেছিলাম। তাহলে এত অধৈর্য হতে কেন,দাদুভাই কাঁদতো যখন ওর মায়ের জন‍্য কি দরকার ছিলো ওর মাকে বলার? ওরও তো একটা জগৎ আছে।"
         সংযুক্তা কাঁদলো সৌম‍্যর কাছে," আমার কি আর কোন জগৎ নেই,তুমিই বলো। আমার মা বাবা অসুস্থ আমাকেও তো দেখতে যেতে হয়। কিট্টু যেমন আমার সন্তান আমিও তো ওদের সন্তান তাইনা? এছাড়া একটু বন্ধুবান্ধব ছাড়া আমি বাঁচবো কি করে বলো।"
......নিজের খুব কাছে টেনে নেয় সৌম‍্য সংযুক্তাকে,একটা কথা বলবো রাগ কোরোনা সোনা প্লিজ," তুমি একমাত্র সন্তান বাবামায়ের,কিট্টু আমাদের সন্তান সবটা যেমন ঠিক তেমনি আমিও তো আমার বাবামায়ের একমাত্র সন্তান। ওদের প্রতিও তো আমার একটা দায়িত্ব আছে তাইনা?"..সংযুক্তার রাগ যেন আজ কিছুতেই মেটেনা," তুমি ওদেরকে যত ভালোমানুষ ভাবো ওরা তেমন নয়। সবটা বোঝা হয়ে গেছে আমার। আসলে বৌমা মেয়ের মত হয় মেয়ে হয়না। তাহলে এত হিসেব করতে পারতোনা।"..."আজ দেড়বছর ধরে ওরাই তো দেখছে ছেলেটাকে বলো।"..অশান্তি বাড়তে থাকে,সংযুক্তার বাড়ির কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করেনা। রাগ করে ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যায়। সেখানেও মা বলেন," আচ্ছা তোর এত মাথা গরম কেন,ছেলেটা থাকতে পারবে এখানে?"..." মা তাহলে তুমিও বলছো এই বাড়িটা আর আমার বাড়ি নয় তাইতো,আমার ছেলের দায়িত্ব তোমাদের কাছেও বোঝা। আমি আয়া রেখে দেবো কয়েকটা দিন একটু বিয়ার করো তারপর ফ্ল্যাট দেখছি আমি।"..." মাথাটা একটু ঠান্ডা কর মা,কেন জানি আমাদের বয়েস হয়েছে তো তোর শ্বশুর শাশুড়িকে কেন যেন খুব দোষ দিতে পারছিনা।"
         সংযুক্তার সুখের সংসারে বড় দমকা হাওয়া এলো শুধু ভুল বোঝাবুঝি আর জেদে। সুখী সংসারী মনগুলো আজ ভালো নেই। সৌরভ আর সীমার অন্তহীন অবসর,বড় ফাঁকা বাড়িটা বাচ্চাটাকে ছাড়া। সৌম‍্যর শোয়ার ঘরের বিছানাটা বড় ঠান্ডা আর ফাঁকা। অফিস থেকে এসে নিঝুম বাড়িটাতে মন বসেনা। অথচ মা বাবা বারবার বললেও ইগোর লড়াইয়ে সৌম‍্য আর সংযুক্তা দুটো রাত ছাড়াছাড়ি আছে আথচ ওর বুকে মাথা আর নাক না ঘষলে ঘুমই আসতোনা সংযুক্তার। হঠাৎই পরদিন রাতে ফোন আসে খুব জ্বর কিট্টুর একদম অচেতন হয়ে পড়েছে। এখানে এসে ছেলেটা একদিন খুব কেঁদেছিলো তারপর  থেকে চুপ করে গিয়েছিলো। সেই রাতেই ছুটে যায় ওরা তিনজন।
             দুতিন দিন টানা চেষ্টায় সেরে ওঠে কিট্টু,এক ঝটকায় ওদের ভুল বোঝাবুঝিটা কেমন যেন কেটে যায়। সৌম‍্যর বুকে মাথা রাখে সংযুক্তা,বড় নির্ভরতার জায়গা ওর,কি যে হয়েছিলো মাঝে। একটু ভয়ে ভয়ে চায়ের টেবিলে বসে বলে সীমা," একটা কথা বলবো,একটু ভেবে দেখো। ও বাড়ির দাদার শরীরটা বেশ খারাপ,দিদিও হাঁটু নিয়ে ভুগছেন। আমাদের নীচতলাটা তো খালিই থাকে। আমরা যদি সবাই একসাথে থাকি তাহলে তোমার অনেকটা চাপ কমে যাবে। আর দাদুভাইও ঠাম্মি,দিদান আর দুই দাদুকে নিয়ে ভালো থাকবে। "..." কিন্তু এই বাড়িতে ওরা?"..অবাক হয়ে যায় সংযুক্তা,হয়ত মনটা ভালোও হয়ে যায়। সৌম‍্যই বলে," ঐ ফ্ল্যাটটা ভাড়া দিয়ে এখানে নাহয় ভাড়া দিয়েই থাকবেন। তাহলে তো তোমার আর আপত্তি হবেনা।"
             সংযুক্তার ভাঙা সংসারটা জাদুকাঠির ছোঁয়ায় বাঁচিয়ে দিয়েছিলো সৌম‍্য। সত‍্যিই বোধহয় ওর তুলনা হয়না,এমন জীবনসঙ্গী যদি সবাই পেত তাহলে হয়ত অনেক সমস‍্যাই মিটে যেত এভাবেই। কিট্টুটা ওপর নিচ দাপিয়ে বেড়ায় মনের খুশিতে যদিও একজন হেল্পিং হ‍্যান্ড রেখে দিয়েছে সংযুক্তা। খুশির মহলে সুখে আছে সংযুক্তা ওর ভরা সংসার নিয়ে। ভালো আছে সৌম‍্যও জোড়া মা বাবার আদরে। বললেই মুখ ব‍্যাকায় সংযুক্তা। একান্ত আদরে সংযুক্তাকে ভালোবাসায় ডুবিয়ে সৌম‍্য বলে," আমার পাগলীটা,ভাগ‍্যিস এমন ভোলা মহেশ্বর বর পেয়েছিলে।"..আজ আর কোন তর্ক করতে ইচ্ছে করেনা ওর,শুধু ডুবে যেতে ইচ্ছে করে আদরের গভীরে আর অনুভব করতে ইচ্ছে হয় প্রাণভরে উষ্ণতাকে।©ইচ্ছেখেয়ালে শ্রী
সমাপ্ত:-

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...