Skip to main content

সুখী দাম্পত‍্য

#রসেবশে_রেসিপি#
#নোনতা_পুলি#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
সংক্রান্তির দিন দুধপুলি আর পাটিসাপটার সাথে হয়ে যাক একটা নোনতা পুলির পদ। মুখটা ছেড়ে যায়,ভালোও লাগে একদম চটপটা নমকিন। এটা আমার ঠাকুমা খুব ভালো বানাতেন। তারপর মায়ের হাতে খেয়েছি গতবার পর্যন্তও। এখন আমিই বানাই এই পুলিটি পরিবারের ছেলে মেয়ের আব্দারে। তাই শেয়ার করছি সবার সাথে।

উপকরণ: পুরের জন‍্য একটা গোটা ফুলকপি
                 চারটে আলু
                  একটু(এক চামচ) পাঁচফোড়ন আর    শুকনো লঙ্কা।
      কাঁচা বাদাম
        কয়েকটা কাঁচালঙ্কা
         পরিমাণ মত নুন,হলুদ আর চিনি
          ভাজার জন‍্য তেল( সাদা তেল অথবা সরষের তেল)
        বাইরের আবরণ বানানোর জন‍্য লাগবে
      দুই কাপ আটা বা ময়দা। এক কাপ চালের গুড়ো। এই পরিমানটা পরিবর্তন হতে পারে কতটা বানাতে চান তার ওপর। কম চাইলে কম নিতে হবে।
  প্রণালী:- আলুটাকে খুব ছোট্ট ছোট্ট ডুমো করে কাটতে হবে,আর কপিকেও ছোটছোট করে কাটতে হবে। তেলে বাদাম ভেজে তুলে রাখতে হবে তারপর সামান‍্য পাঁচফোড়ন আর শুকনোলঙ্কা দিয়ে একটু ভাজা ভাজা করে কুচনো তরকারিটা ছেড়ে দিতে হবে। ওর মধ‍্যে লবণ হলুদ আর চিনি দিয়ে ভালো করে নেড়ে গ‍্যাসটা একটু কমিয়ে কমিয়ে ভাজা ভাজা করতে হবে। বাদামের খোসা ছাড়িয়ে দিয়ে দিতে হবে চাইলে মটরশুটিও দিতে পারেন। বেশ ভাজা ভাজা হলে ওর মধ‍্যে অল্প পাঁচফোড়ন শুকনোলঙ্কা শুকনো কড়াইয়ে নেড়ে গুড়ো করে মেশাতে হবে। খুব মিষ্টি একটা গন্ধ উঠবে। ভাজাটা একটু মিষ্টি হবে কিন্তু। তরকারিটা বানিয়ে ঠান্ডা করতে হবে।
      বাইরের আবরণের জ‍ন‍্য প্রথমে কড়াইয়ে তিনকাপ মত জল নিয়ে তারমধ‍্যে একটু নুন দিয়ে ফোটাতে হবে। ফুটন্ত জলে আটা ও চালের গুড়োটা মাখতে হবে। আটার পরিমাণ অনুযায়ী জল নিতে হবে। এবার আটা আর চালের গুড়োর মিশ্রণটাকে ভালো করে মেখে নিতে হবে।
        ছোটছোট করে লেচি কেটে নিয়ে হাতে একটু ময়দা মাখিয়ে ছোট্ট বাটির মত করে ওর মধ‍্যে ফুলকপির তরকারির পুরটা ভরে দিতে হবে। এরপর পুলির মত বানিয়ে ফেলতে হবে। বেশ কয়েকটা বানানো হয়ে গেলে ডুবো তেলে লাল করে ভেজে তুলতে হবে। ব‍্যাস রেডি তরকারির পুর ভরা নোনতা পুলি।

         

#সুখী_দাম্পত‍্য#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

সকাল থেকেই গলাটা বেশ ব‍্যাথা রিনির,কাল রাতে কাশিতে ঘুমোতেও বেশ কষ্ট হয়েছে। ভোরের দিকে উঠতে ইচ্ছে করছিলোনা তবুও উঠে পড়তেই হলো সকালের কাজগুলো সারতে দেরি হয়ে যাবে। খুক খুক করে কাশছিলো তখনও বকা খেলো অভির কাছে," সারাদিনই তো বাড়িতেই থাকো এত ঠান্ডা যে কি করে লাগাও কে জানে? সারাদিন অফিস করে এসে যদি দেখি বৌ অসুস্থ কার ভালো লাগে?"
           অভি এমনিতে বর হিসেবে খুব খারাপ নয় তবে ওর অসুখ হলে অদ্ভুত বিহেভ করা শুরু করে। একটু সহানুভূতি দেখানো তো দূরের কথা উল্টে আরো বেশি খিটখিটে হয়ে যায়। যেন অসুস্থ হয়ে এক বিরাট অপরাধ করে ফেলেছে রিনি। তাই কলের পুতুলের মত অসুস্থ মুখটাতে হাসি ফুটিয়ে বা গলাতে আদা গোলমরিচের টুকরো ফেলে কাশিটাকে দমিয়ে ভালো আছি প্রমাণ করতে চায় রিনি।
         তবুও শরীর বিগড়ায় মাঝে মাঝেই,তাই শুনতে হয় প্রায়ই ওকে অভির কাছে," এত ফিগার ফিগার করে না খেয়েদেয়ে শেষে সারাবছর ভুগলে আর কি হবে এমন ফিগারের। আমাদের অফিসের বয়স্ক দিদি বৌদিরাও কত সুন্দর ফিট আছে। রিনি কি করে বোঝাবে ওর মা চলে যাবার পর ও কত একলা হয়ে গেছে। ছেলে আর বর বেড়িয়ে যাবার পর সব কিছু সারতে সারতে আজকাল প্রায়ই দেরি হয়ে যায় ওর খেতে। অদ্ভুত এক মন কেমন করা ঘিরে থাকে কখনো বা কান্না পায়। মা ফোন করে জিজ্ঞেস করত খবর নিতো খেলো কিনা,স্নান সারা হয়েছে কিনা? আজকাল যেন আর খোঁজ নেবার কেউ নেই।
                    তেমন করে কোথাও যাওয়ারও যেন কেউ নেই,বড় একলা লাগে আজকাল ওর। মাঝে মাঝে মনে হয় ওর কি মনের অসুখ হলো নাকি?
                 হঠাৎই কলিং বেলটা বেজে ওঠে,কে এলো আবার এই সময়? একটু আশ্চর্য লাগে রিনির। আইহোলে চোখ রাখে কই কাউকে তো দেখা যাচ্ছেনা,বোধহয় ভুল করে কেউ এসেছিলো তাহলে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বাথরুমে ঢুকে পড়ে,নিজেকে উন্মুক্ত করতে যায় হঠাৎই ভীষণ শীত শীত করতে থাকে মনে হচ্ছে জ্বর আসছে। গাটা স্পঞ্জ করে তোয়ালেটা জড়িয়েছে,তবুও মাথাটা ভারী লাগে। আবার মনে পড়ে মায়ের কথা,সবাই তো বেশ থাকে তাহলে ওর এত কষ্ট হয় কেন? ও কি আরো একটু ভালোবাসা পেতে চায় অভির কাছ থেকে,হয়ত আরেকটু ছোটখাটো ব‍্যাপারে খেয়াল যদি রাখত অভি। সকালের বকুনির কথাটা আবার মনে পড়ে যায়,চোখটা একটু ছলছল করে ওঠে।
            বাইরে বেড়িয়ে আসতেই বেলটা আবার বেজে ওঠে। হাউসকোটটা গায়ে জড়িয়ে এবার বিরক্ত হয়ে দরজাটা খোলে কোলাপসিবল্ গেটের ওপারে অভিকে দেখে আশ্চর্য লাগে। এই তো ঘন্টাখানেক আগেই বেরোলো, এর মধ‍্যেই আবার কি হলো!নিজের শরীরটাও বেশ খারাপ লাগছে হয়ত শরীর খারাপ শুনে রাগই করবে আবার,ভেবেছিলো একটা জ্বরের ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়বে।" ও তুমি,আমি ভাবলাম এখন আবার কে এলো।".." অবাক হওনি আমাকে দেখে।"..বেশি কথা বলতে ইচ্ছে করেনা রিনির মাথাটা বড় ভার লাগছে তবুও বলে," তুমি কি এখনি বেড়িয়ে যাবে? কিছু ভুলে গেছো?"
         ...." ইশ্ হঠাৎ এলাম ভাবলাম খুশি হবে,তা নয় কত প্রশ্ন। দেখিতো আমার বউটাকে একটু ভালো করে কাছ থেকে।"...দুষ্টুমির হাসি হেসে রিনিকে জড়িয়ে ধরতে যায় অভি," একি তোমার গা তো বেশ গরম জ্বর এসেছে মনে হচ্ছে, বেশ অনেকটা টেমপারেচার! দেখিতো।"...অভির গলায় একটু সহানুভূতির সুর পেয়ে চোখটা ছলছল করে ওঠে রিনির। ওকে জড়িয়ে ধরে খাটে শুইয়ে দেয় অভি,বাঁধে শক্ত বাঁধনে। আদর করে কাছে টেনে নেয়,রিনি পরম নির্ভরতায় ওর বুকে মুখ রাখে। মাথার কাছে রাখা সাইড টেবিল থেকে ওষুধের স্ট্রিপটা খুলে খুব যত্নে ওষুধটা খাইয়ে দেয়। " পাগলী কোথাকার,তোমার কিছু হলে আমরা কোথায় যাবো ভেবেছো। এত অভিমান আর কষ্ট কেন মনে জমিয়ে রাখো?"...
কথা বলতে চাইলেও কথা বলতে পারেনা রিনি, অভিমানে ভরা একদলা কান্না গলাট আটকে দেয়। মনে মনে বলে তুমি এমনি থেকো অভি,সকালের মত হয়োনা।
....." দেখি এখন অনেকটা ঠান্ডা হয়েছে কপালটা,এবার একটু খেতে হবে। আমি কোন না শুনবোনা।"...রিনির খুব বলতে ইচ্ছে করলো তুমি আমাকে জড়িয়ে থাকো এভাবেই আমার খুব একা লাগছিলো। রান্নাঘর থেকে টোস্ট আর স‍্যুপটা নিয়ে ওকে খাইয়ে দিতে দিতে অভি বলে," কেন যেন আজ ভালো লাগলোনা অফিস যেতে,অনেকটা গিয়েও ফিরে এলাম। তোমার মুখটা খুব মনে পড়ছিলো। হঠাৎই মনে হলো তোমার শরীরটা যদি আরো বেশি খারাপ হয়। কেন যেন মনে হলো যে মানুষটা সারাক্ষণ আমাদের খেয়াল রাখে তাকে ফেলে আসাটা ঠিক হয়নি।"
       জানলা দিয়ে সূর্যের আলোটা মাখিয়ে দিয়েছে ওদের সুখী দাম্পত‍্যকে।আজ বড় মনে পড়ছে মায়ের আর বাবার কথা। একটু মাখতে ইচ্ছে করলো রিনির আলোটা মন ভরে,সত‍্যিই কি সূর্যটা আজ ঠিক দিকে উঠেছে?রিনিকে একদম বুকের কাছে টেনে আদর মাখাতে মাখাতে অভি বলে," কতদিন এভাবে তোমায় দেখিনা,সংসার করতে করতে গিন্নিমা অভিমানে সব ভুলে গেছে
একেবারে।"..আলতো জড়ানো গলায় রিনি বলে," কি করলাম আবার?"..."আজ যে আমাদের প্রপোজ ডে ছিলো তা মনে আছে কি?"..জিভ কাটে রিনি। পকেট থেকে লাল গোলাপটা ওর হাতে দিয়ে বলে," প্রেমের কথা গুছিয়ে বলতে পারিনা। তবু বলবো তোমাকে যে ভালো থাকতেই হবে নিজের জন‍্য আর ভালো রাখতে হবে আমাদের। তাহলেই মা খুশি হবেন। আর নিজেকে কষ্ট দিয়োনা।"...রিনির গরম নিশ্বাসটা অভির বুককে ছুঁলো,প্রাণপনে ধরে রাখতে চায় এই মুহূর্তগুলোকে রিনি একদম বন্দী করে। বন্ধ ঘরে দশবছর পরেও সুখী দাম্পত‍্যের সুখের অনুরাগে রাঙা হলো রিনি। ভালোবাসার রঙে আবার নতুন করে রাঙা হলো ওর ফিকে মনটা।
সমাপ্ত:-

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...