Skip to main content

সন্দেহ

#সন্দেহ# 
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

বাথরুমে ঢুকেছে আলেয়া এই সময় একটা বাথ না নিলে ওর ভালো লাগেনা। বেশ অনেকক্ষণ ধরে বাথরুমে থাকে এই সময়টা,সারাদিন কাজের পর হয়ত এই সময়টাই একটু রিল‍্যাক্স করে ও। সৌভিক বাইরে থেকে শুনতে পায় আলেয়া গাইছে,'তুমি যাকে ভালোবাসো স্নানের ঘরে বাষ্পে ভাসো তার জীবনে ঝড়...তুমি অন‍্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর।'
           গা টা জ্বলে যায় সৌভিকের,বেডসাইড টেবিলে আলেয়ার ফোনটা দেখতে পায়না। এদিক ওদিক খুঁজতে থাকে এলোপাথাড়ি ভাবে,নাহ্ রিং করা যাবেনা। তাহলে তো ধরা পড়ে যাবে। নিশ্চয় ফোন নিয়ে বাথরুমে ঢুকেছে,শাওয়ার খুলে দিয়ে ব‍্যস্ত আছে কারো সাথে। ও কি ভিডিও কল করছে না কি,মানে স্নানের দৃশ‍্যটাও কি কাউকে পাঠাচ্ছে? রাগে মাথাটা দপদপ করে সৌভিকের আর ভাবতে পারেনা।
            বাইরে এসে একটা সিগারেট ধরায় হোয়াটসআ্যপটা খুলে দেখলেই বোঝা যাবে অনলাইনে আছে কিনা। হোয়াটসআ্যপ আর মেসেঞ্জার দুটোই খুলে দেখে নাহ্ কোথাও অন দেখেনা ওকে তবে সবটাই তো প্রাইভেসি সেটিং করা। হয়ত ওকে মিউট করে রেখেছে। আলেয়া যেন হঠাৎ করেই একটু বেশি সচেতন হয়ে উঠেছে নিজের প্রতি। আজকাল কি ওর নিজেকে নেগলেক্টেড মনে হয়! ঠিক মেলাতে পারেনা সবটা। অথচ একটা সময় সৌভিক ছাড়া তো আর অন‍্য কোন জগত ছিলোনা ওর। আলেয়াকে নিয়ে অফিস পিকনিক আর পার্টিতে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে ও প্রায়ই বলে দেয় ও খুব ব‍্যস্ত ওর এন জি ও নিয়ে। বন্ধুরা হাসাহাসি করে,' আরে বলনা,সুন্দরী বৌদিকে আমাদের দেখতে দিবিনা, এতে লজ্জার কি আছে? আরে হোতা হ‍্যায় বস। কোহিনূর মণি বলে কথা।' ওদের কথার মাঝে থাবা মারে মিলি,' ইশ্ ওর লেগপুল করিসনা একদম। আমাদের সৌভিকই বা কম কি শুনি?' মিলি ডিভোর্সি তবে একটু অন‍্যরকম,হয়ত মানসিক কোন সমস‍্যা আছে। অফিসের ছেলেরা বলে একদম বেড়ালের মত ও, মাছের গন্ধ পেলেই থাবা মারে।কে জানে হয়ত নিজের অভাবটা অন‍্য ভাবে পূরণ করে খুশি থাকতে চায়।সৌভিকেও বলেছে," চলে এসো সৌভিক কোন একদিন মেঘলা দুপুরে অথবা মনখারাপের বিকেলে আমার ফ্ল্যাটে,মন ভালো করে দেওয়ার গল্প করে তোমায় নিয়ে যেতে পারি সাঁঝবাতির রূপকথার দেশে।" কথাগুলো শুনে একটু ঘোর লেগেছিলো ওর চোখে। আবার মাথায় একটাই চিন্তা ঘোরে,সত‍্যিই তো এতক্ষণ কি করছে বাথরুমে! আজ কি একটু বেশিই দেরি করছে আলেয়া!
        আলেয়া বেড়িয়ে আসে বাথরুম থেকে মাথায় শাওয়ার ক‍্যাপ লাগানো ঘাড়ে তখনো ফোটাফোটা জল স্বচ্ছ রাত্রিবাসটা আলতো করে গায়ে জড়ানো। ওকে দেখে নেশা ধরে যায় সৌভিকের,খেয়াল করে ওর হাতের আঙুলে জড়ানো স্মার্টফোনটা।" এত বিজি বডি হয়ে গেছো যে বাথরুমেও ফোন নিয়ে ঢুকতে হচ্ছে?"
     মুখে জবাব এলেও জবাব দিতে ইচ্ছে করেনা আলেয়ার,বলতেই পারত তুমিও তো একই কম্ম করো,সে বেলা? নাহ্ মাথাটা গরম করবেনা। ওর হাতে সেলফোনটা দেখলেই অদ্ভুত আচরণ শুরু করে সৌভিক। আলেয়া বুঝতে পারে ওকে সন্দেহ করে সৌভিক। ভগবান এই রোগটা যে কি এক অদ্ভুত রোগ!মুখে হাসি মাখিয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে বলে," দরকার ছিলো একটা,একজনের ফোন আসার কথা ছিলো। আমার ফোন তো তুমি ধরবেনা। তাই বাথরুমে নিয়েই গিয়েছিলাম।"
             " এক মুহূর্তও কি ফোন ছাড়া থাকো তুমি? কি আছে ঐ ফোনে? কই আগে তো এমন ছিলেনা।"..." ফোনেই আমার সব আছে একটাই তো আমার খোলা জানলা দমবন্ধ জীবনে। সেটা আমি আর কিছুতেই বন্ধ করবোনা।"
      " জানলাটা আজকাল বড় বেশি হাট করে খুলে গেছে তাইনা? মেয়েমানুষের বেশি স্বাধীনতা পেলে যা হয়! আগে তো দিব্বি হাউসওয়াইফ ছিলে আর এখন বাইরে গিয়ে তোমার বেশি পা বেড়েছে।"
..." মুখটা একটু ভেবে খোলো, কেন মেয়ে মানুষ কি মানুষ হয়না? তাদের পছন্দ থাকতে নেই নাকি? সেটাই তো স্বাভাবিক তাইনা?আচ্ছা আমি কি করলে তুমি খুশি হও বলতো? যখন কাজ করতামনা কথায় কথায় অন‍্যের ওয়ার্কিং বৌদের দেখাতে। আর এখন চাকরি করি বলে কমপ্লেক্সে ভোগো।"
       হয়ত মোক্ষম জায়গায় হাত দিয়েছে আজ আলেয়া তাই ফুঁসে ওঠে সৌভিক," হুঁ তাই তো আমূল পরিবর্তন,শাড়ি আর শাঁখাপলা পরা আলেয়া এখন জিন্স টপ স্কার্ট পরছে। পার্লারে যাচ্ছো,জিম করছো।"..." কেন একটা সময় তুমিই তো আমাকে ম‍্যাদামারা বৌ বলতে,একটু আধুনিক হওয়ার জন‍্য কত বলতে। মনে পড়ে সেই পুরী বেড়ানোর কথা,জিন্স পরিয়েছিলে বায়না করে তুমি। ওয়েস্টে হাত রেখে বলেছিলে আরো স্লিম হতে হবে আমাকে। তাহলে খুব হট লাগবে।"..উত্তেজনায় হাঁপাতে থাকে সৌভিক," হ‍্যাঁ তখন সাজতে বলেছিলাম শুধু আমার জন‍্য। আর এখন সাজো রাজ‍্যের লোককে দেখানোর জন‍্য আমি বুঝিনা কিছু। ডিপি চেঞ্জ হচ্ছে ,স্টেটাস চেঞ্জ হচ্ছে হাজার হাজার লাইক। গায়ে জ্বালা ধরানো কমেন্ট।".." ওহ্ তাহলে তো ভালোই নজর রাখো আমার প্রোফাইলে। কমেন্টও পড়ো তাহলে। এই নাকি তোমার সময় হয়না। হিপোক্রিট কোথাকার!"..." মুখ সামলে কথা বলো আলেয়া,ডোন্ট ক্রস লিমিট।"..." লিমিট তুমি ক্রস করছো,আমরা দুজনেই আলাদা মানুষ,সংসারের বাইরে দুজনেরই একটু পারসোনাল স্পেস থাকা উচিত। আমি কি কোন অবৈধ কাজ করছি তোমাকে লুকিয়ে?আর মিলির সাথে তোলা তোমার সেল্ফিগুলো। রাত্রি জেগে মোবাইলে হাই বেবি করা। আমি কি কিছু জানিনা?"
             আলেয়াকে খিমচে ধরে সৌভিক,টেনে বিছানায় শুইয়ে দেয়। "কি জানো তুমি,যা দেখাবে তাই দেখবে। ওটাই বু্মেরাং হয়ে ফিরে আসবে তোমার কাছে।".." ওহ্ ছাড়ো আমার লাগছে,আঃ।"সৌভিকের গায়ের জোরের কাছে যন্ত্রণায় ছটফট করে ওঠে আলেয়া। " আজকাল তো কাছেই আসোনা,খুব পীরিত হয়েছে ঐ ডাক্তার বন্ধুর সাথে তাইনা? অন‍্যের ঘরের বৌকে চাকরিতে ঢুকিয়ে তার সাথে মজা করা তাইনা। সবটা শেষ করে দেবো আমি,দেখি তুমি কি করে বাইরে বেরোও।"
           মুখ ঢেকে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলে আলেয়া,ওর শরীরে তখন অনেকগুলো এলোপাথারি আঁচড় আর কামড়ের দাগ। এগুলো লাভ বাইট! এগুলো তোমার অত‍্যাচারের চিহ্ন যা দিয়ে আমাকে বুঝিয়ে দাও তোমার যা খুশি তাই করবে। একটা সন্তান থাকলে হয়ত এমন হতনা আমার,সারাদিন ঘরে বসে আমি কি করবো? তাই তো দিব‍্যেন্দুদাই বললো এই এন জিও টা জয়েন করতে। আমার কি দোষ,তুমিই তো নিয়ে গিয়েছিলে ওখানে আমাদের চেক আপ আর কাউন্সেলিংয়ের জন‍্য।"
      "ওটাই তো ব্লান্ডার করেছিলাম,তখন কি আর জানতাম ঐ ডাক্তারটা তোমার বাবার ছাত্র ছিলো। ইশ্ সব আমার দোষ,ভালোমানুষী করে আমাদের জীবনে ঢুকে পড়লো স্কাউন্ড্রেলটা। ঐ তো তোমাকে চালাচ্ছে এখন তাই হেলদি ফুড খেয়ে আর জিমে গিয়ে একদম সেক্সি বোমা হচ্ছো দিনে দিনে।".
     '"মুখ সামলে কথা বলো সৌভিক,ছিঃ নিজের বৌকে কেউ এমন বলে!" মনে মনে একটা গালাগাল দিয়ে বলে ওঠে কবেই যে নিজের বৌ অন‍্যের ভোগে চলে গেছে কে জানে।
              এভাবেই দিনের পর দিন চলতে থাকে আলেয়ার অসুখী দাম্পত‍্য। হয়ত বা সুখের আশায় দিন গোণে আলেয়াও আর সেই সুখ যখন অসুখে পরিণত হয় তখন একটু মনের জানালাটা ফাঁক করে পেতে চায় একটুকরো আকাশ ছোঁওয়ার আনন্দ। কিছুতেই আর কাউন্সেলিংয়ে নিয়ে যেতে পারেনা সৌভিককে আলেয়া প্রথম কয়েকদিন যাওয়ার পর একদম ও মুখো হতে চায়না। অথচ বিখ‍্যাত গাইনোকোলোজিস্টই বলেছিলেন ওদের দরকার চিকিৎসার পাশাপাশি একটু কাউন্সেলিংয়ের। আর সেখানেই হঠাৎ দিব‍্যেন্দুদার সাথে দেখা দশ বছর বাদে। প্রথম দিকে সমস‍্যা ছিলোনা পরে বেড়েছে সন্দেহ একটু একটু করে। ফাঁক পেয়ে ঢুকে পড়েছে মিলি একটু একটু করে,তবে সৌভিক বোধহয় একটু বেশিই ভালোবাসে আলেয়াকে নাকি ও পোজেসিভ আজকাল ভাবতে পারেনা। একই ছাদের তলায় থাকে ওরা। ইচ্ছে হলেই জোর করে টেনে আঁচড়ে কামড়ে আলেয়াকে উপভোগ করে। আলেয়া বাধা দিলে হয়ত আরো জোরে চেপে ধরে। আলেয়া কষ্ট পায়,রাগ হয়। ইচ্ছে করে সব ছেড়ে চলে যেতে। হয়ত চলে যেতোও কিন্তু তবুও পারেনা।
     চাপা আক্রোশ আর সন্দেহে একটু একটু করে দিশাহারা হতে থাকে সৌভিক। কালো স্লিভলেশ ব্লাউজ আর লাল শিফন পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মাস্কারা লাগায় আলেয়া। চোখ পড়ে যায় সৌভিকের,ওর চোখদুটোর দিকে। আজকাল আর আলেয়ার চোখদুটো গভীর ঝিলের মত লাগেনা,মনে হয় যেন শিকারীর চোখ,ঐ চোখে প্রেম দেখেনা,দেখে কামনা। " কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি এত চোখে বিদ‍্যুতের ঝিলিক দিয়ে,অভিসারে তোমার নাগরের কাছে?"
...লিপব্রাশটা বোলাতে বোলাতে বলে আলেয়া," ভদ্রভাবে কথা বলো সৌভিক,তোমাকে বলেছিলাম তো আগে থেকে যেতে আমাদের আ্যনুয়াল প্রোগ্ৰামে। তুমি তো রাজি হলেনা।"
..." কি করতে যাবো,তোমার পেছন পেছন বাধ‍্য স্বামী হয়ে ল‍্যাজ নাড়তে?"..মাথায় আগুন জ্বলে যায় আলেয়ার," গেলেই না হয় তাই,একসময় তো আমিও গেছি ল‍্যাজ নাড়তে ও রকম কত তাইনা?"
      কথায় কথা বাড়লো মেজাজ খুবই খারাপ হল দুজনেরই। আলেয়ার চোখের কোণে জমলো ফোঁটা ফোঁটা জল। টিসুর আলতো চাপে চোখটা মুছলো,নাহ্ কাঁদবে না। কেন শুধু শুধু দিনটা নষ্ট করবে। অথচ এক সময় ওর মুড ভালো করার জন‍্য কত কি করত সৌভিক,একটু একটু করে সবই কেমন বদলে গেলো। একসময় ভাবে চাকরি ফেসবুক বন্ধুবান্ধব সব ছেড়ে বসে থাকবে,আবার মন বিদ্রোহ করে,কেন? এতদিন তো সব ছেড়েছিলো কি হলো তাতে? বিশ্বাস অর্জন তো করতে পারেনি। অথচ সম্পর্কে বিশ্বাসটাই তো জরুরী। বেড়িয়ে যায় আলেয়া পার্সটা হাতে করে।
                বড় অস্থির হয় সৌভিকের মনটা,হাতের মুঠোটা শক্ত করে। আলেয়ার ফিরতে দেরি হয় রাতে। সৌভিককে খেতে ডাকে,ও বলে বাইরে বেড়িয়েছিলো খেয়ে এসেছে। রাতে তেমন কথা হয়না। আলেয়া শুয়ে পড়ে,ঘুম আসেনা,সৌভিক পাশ ফিরে শুয়ে,ঘুমোচ্ছে কিনা বোঝা যায়না। আলেয়ার শরীরটা খারাপ লাগে,গা গুলিয়ে বমি আসে। উঠে বাথরুমে যায়,কিছুটা বমি করে ঘাড়ে মাথায় জল দিয়ে শুতে আসে। অথচ সৌভিক জিজ্ঞেসও করেনা,কি হয়েছে ওর। একদলা কান্না উঠে আসে গলা দিয়ে,চোখ দিয়ে গড়িয়ে আসে জল। এভাবেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতে পারেনি।
              সাড়ে সাতটা নাগাদ বেড়িয়ে যায় আলেয়া,সৌভিক বেরোয় নটা নাগাদ। আলেয়া ফেরে তিনটে নাগাদ,কোনদিন দেরিও হয়। সৌভিক আটটা নটা। সেদিন অফিসে যায়না সৌভিক আজ ওকে দেখতেই হবে,শুনতে হবে আলেয়া একা ফ্ল্যাটে কি করে?
                   চারটে নাগাদ ফ্ল্যাটে ঢোকে আলেয়া। অস্থির হয় সৌভিক,এত দেরি করে ঢোকে তাহলে! ওয়াল ক‍্যাবিনেটের পাশে ভারী পর্দাটার আড়ালে লুকিয়ে পড়ে সৌভিক। ব‍্যাগটা রেখে কিছুক্ষণ বসে আলেয়া,হাত পা ধোয়। তারপর কিচেনে ঢোকে দেখে কি আছে না আছে। সন্ধ‍্যের পর রান্নার লোক আসবে। তারপর বাথরুমে ঢোকে ফোন নিয়ে,রাগে গা জ্বলে যায় সৌভিকের হাতে শক্ত করে ধরে শরু নাইলনের তারটা। ওকি কিছু টের পেয়েছে? তাই বাথরুমে ফোন করতে গেলো? আস্তে করে এসে কানপাতে বাথরুমের দরজায়। হ‍্যাঁ সত‍্যিই তো ফোনটা রিং হচ্ছে,শুনতে পায় আলেয়ার গলা," হ‍্যাঁ বল,এতদিন বাদে হঠাৎ। না রে বাপের বাড়ি আর কোথায় আমার,মা বাবা দুজনেই তো চলে গেলো পরপর। আচ্ছা আমি তোকে একটু বাদে কল করছি। বাথরুমে আছি।"...ওহ্ তাহলে কোন বন্ধু,দিব‍্যেন্দু নয়। সরে আসে সৌভিক,আবার লুকিয়ে থাকে পর্দার আড়ালে। আজ আর ছাড়বেনা আলেয়াকে,খুব বেড়েছে ও।
          হাউসকোট জড়িয়ে অন্তর্বাস ছাড়াই বেরোয় আলেয়া। চিৎ হয়ে শোয় খাটের ওপর,ফোনে হাত দেয় স্ক্রলিং করতে থাকে ফেসবুক হোয়াটস আ্যপ। পায়ের দিকটা অনেকটা উন্মুক্ত ওর,ফর্সা পাদুটো দেখা যাচ্ছে। কানে ফোন দিয়ে আবার কথা শুরু করে বন্ধুর সাথে,হেসে গড়িয়ে পড়ে। কথার মাঝেই হঠাৎ বলে," এই দাঁড়া আমার একটা জরুরী ফোন আসছে। পরে কল করছি ওকে।"..কানটা খাড়া করে সৌভিক,কে ফোন করছে। " হ‍্যালো দিব‍্যেন্দুদা, কি ব‍্যাপার কালই তো অনেক কথা হলো,আবার আজকেই ফোন করলে?"
     এগিয়ে আসে সৌভিক,ওর হাতে ধারালো নাইলনের দড়ি। হেসে গড়িয়ে পড়ছে আলেয়া,মনে খুশির রঙ লেগেছে তাইনা? চিরদিনের মত চুপ করিয়ে দেবে আজকে। সমস্ত অশান্তি আজই শেষ করবে ও।
        এই ডিজিটাল যুগে এমন অনেক অশান্তিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সুখী দাম্পত‍্যের গৃহকোণ। ভেঙে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সম্পর্কগুলো একটু একটু করে। আজ তেমনি হয়ত একটা ঘটনা ঘটতে চলেছে আজ সৌভিকের অন্দরমহলেও। আলেয়ার গলার দিকে চোখ রাখে সৌভিক,আজ ওকে ঘুম পাড়িয়ে দেবে চিরতরে অনেক হয়েছে।
              তখনো হাসছে আলেয়া," কি বললে? কি বলছো? আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছিনা। আরো জোরে বলো একবার শুনি,কি বলছো? স্পীকার অন করবো? কি ভিডিও কল করবো?
    মাথাতে আগুন জ্বলে যায় সৌভিকের,আজই তোমার শেষ দিন। হঠাৎই শোনে," না না,ভিডিও কল এখন করা যাবেনা। আরে এই বাথরুম থেকে বেড়োলাম। ওহ্ আমার এক্সপ্রেশন দেখতে চাইছো।"..ফোনটা স্পীকারে বাজতে থাকে,পা দুটো আড়ষ্ট হয়ে যায় সৌভিকের। দিব‍্যেন্দুর গলার আওয়াজ পায়," আরে আমি তো রিপোর্টটা পেয়েই তোমাকে ফোন করার চেষ্টা করছি। শুধু নট রিচেবল বলছে। রিপোর্ট পজেটিভ। ওহ্ এতদিনের ট্রিটমেন্ট তাহলে সফল হলো। সৌভিককে বোলো একটা বিগ ট্রিট পাওনা রইলো কোন ফাইভস্টারে। "...কথার মাঝে গলাটা বুজে আসে আলেয়ার," থাক দিব‍্যেন্দুদা,তোমার কথা শুনে আমি ওয়েট কমিয়েছি,ডায়েট করেছি। যাতে মা হতে পারি। ওকে কি বলবো,হয়ত বলবে ঐ সন্তান অন‍্য কারো। বা হয়ত অনেক নোংরা কথা। থাক আমার সন্তানকে আমি আমার পরিচয় দিয়ে মানুষ করবো। চলে যাবো এই বাড়ি থেকে।"
          ফোনটা ধরে রাখতে পারেনা আলেয়া,ছিটকে পড়ে। সৌভিক ওকে জড়িয়ে ধরেছে,ওপার থেকে তখনো আওয়াজ আসে,"হ‍্যালো আলেয়া..
            ফোনটা কেটে দেয় আলেয়া।আদরে আর চুমুতে ওকে ভিজিয়ে দিচ্ছে সৌভিক। আজ দিব‍্যেন্দুদাকে ওর সত‍্যিই দেবদূত বলেই মনে হলো সৌভিকের। যার ফোনটা একটা চরম ভুলের হাত থেকে বাঁচালো ওকে। আজ হয়ত চিরতরে নষ্ট হয়ে যেত দুটো জীবন। শেষ পর্যন্ত খুন করতে যাচ্ছিলো আলেয়া কে!
      সৌভিকের বুকে মাথা গুজে আদর খেতে খেতে আলেয়া বলে," তুমি কখন এলে এমন চুপ করে? আমি তো খেয়ালই করিনি।"
        ঘরেই লুকিয়ে ছিলো একথা বলতে পারেনা সৌভিক। " তুমি কথা বলছিলে তাই আড়ি পেতেছিলাম। দেখি তো বউটা কি করছে?"
       আদরে আর চোখের জলে ভিজে যায় আলেয়া। ভেজে সৌভিকও,কান পাতে আলেয়ার পেটে ফিসফিস করে বলে এবার থেকে একদম গুড হাবি আর পাপা হবো। কথা বলতে পারেনা আলেয়া।
             আধ ঘন্টা পর ডঃ দিব‍্যেন্দুর ফোনটা বেজে ওঠে," অনেক অনেক ধন‍্যবাদ,আলেয়ার কাছে সব শুনলাম। আজ সত‍্যি আপনাকে দেবদূত বলে মনে হচ্ছে। একটা বড় ট্রিট পাওনা থাকলো কিন্তু আপনার। এই সপ্তাহেই হবে আর দেরি নয়।"
          সৌভিকের উচ্ছ্বাসটা ছুঁয়ে যায় দিব‍্যেন্দুকেও। সাফল‍্যের আনন্দে আজ খুব কড়া করে এক কাপ কফি খেতে ইচ্ছে করলো।
সমাপ্ত:-

          

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...