Skip to main content

লক্ষ্মী আনতে যাচ্ছি

#লক্ষ্মী_আনতে_যাচ্ছি#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

টিং টিং করে বাজছে কানের কাছে ফোনটা,ধ‍্যুৎ যত ঝকমারি হচ্ছে বিয়ে করা। এ নিশ্চয় মায়ের কাজ সকালবেলা ঘুম থেকে টেনে তুলে হিড় হিড় করে নিয়ে যাবে ছাদনাতলায় ভেবেই বালিশটা কানে চাপা দিয়ে ঘুমোনোর আগে চোখ চলে যায় ফোনের স্ক্রীনে ওহ্ মা নয় টিনটিন সুন্দরী মানে ওর হবু বৌ ফোন করেছে। ফোনটা না ধরে পারেনা পার্থ,হবু বৌ বলে কথা। জড়ানো গলাতেই বলে," উঃ আবার কি হলো? কাল তো রাত দুটো অব্দি জ্বালালি!"..ও দিকে দুম্ করে একটা শব্দ হলো মনে হয় ওর মোটকা টেডিটা একটা কিল খেলো এবার, মানে যেটা পার্থ সামনে থাকলে ওর পিঠেই হয়ত পড়ত। বাপরে কি মারকুটে মেয়ে একটা! কোন কপালে যে ওর প্রেমে পড়েছিলো কে জানে? ততক্ষণে ওদিকে চ‍্যাঁচামেচি শুরু হয়ে গেছে," এইজন‍্যই বলেছিলাম বিয়ে করবোনা, বেশ তো প্রেমটা ছিলো তেমন না হলে লিভ ইন এ থাকতাম। তা নয় মায়ের বাধ‍্য ছেলে একটা। মা আর দিদান বৌয়ের মুখ দেখবে। সানাই বাজিয়ে বৌমা আনবে ঘরে।"
....একটা হাই তোলে পার্থ দিলো ঘুমের বারোটা বাজিয়ে,এই দুই মহিলার জন‍্য মনে হয় এবার বাড়ি ছাড়তে হবে।সত‍্যি তো বেশ প্রেমটা হচ্ছিলো এর মাঝে দুই বাড়ির লোক যে কেন এত ব‍্যস্ত হলো কে জানে?ভাবছিলো কোথায় একটু ঘুমোবে রাতে তো ঘুম হবেনা,মানে কত রাত যে ঘুম হবেনা তা কে জানে?.." আরে কি হলো এত ক্ষেপেছিস কেন,আমার ঘুমটাও নষ্ট করলি। একটু বাদেই মা ডাকবে সকালে কি সব আছে মানে সকালে খাইয়ে পেটে গামছা বেঁধে রেখে দেবে সারাদিন।"...রেগেমেগে টিনটিন যা বললো তা হলো এই ভোরবেলাতেই মা মাসিরা ওকে টানাটানি করছে কি সব চিঁড়ে মুড়ি খাওয়াবে বলে। সাধের ঘুম আর পোশাক পাল্টে বসতে হবে ঐ অখাদ‍্য খেতে এই ভোরে। সবজান্তার মত পার্থ বলে," শিবের মত বর পেতে হলে একটু কষ্ট করতেই হয়,একটা ছবি পোস্টা তো দেখি তোকে কেমন লাগছে।" আবার ওপাশে আওয়াজ আসে দুম,এবার বোধহয় বেচারা বালিশটা কিল খেলো।
             " ছবি পোস্টাবো,সাধ কম নয় ছেলের।"..বলেই ফোনটা কেটে দিলো টিনটিন মানে একদম সুইচড অফ্,হাসি পেলো পার্থর একদম বুনো ওল মেয়েটা কে জানে এত রাগ কোথায় রাখে। খুবই ধৈর্য ওর বাবা মায়ের যে এত তুঘলকি মেজাজ সহ‍্য করে। তাই বোধহয় ওদের বাড়িতে আসার দিনই আন্টি বলেছিলো," দিদি দেখুন আমার মেয়ে বলে আগের দিনের মায়েদের মত মেয়ের গুণের কথা বলতে পারবোনা। ঐ একটি মাত্র মেয়ে আমার নেহাৎ প্রেম করেছে বলে বেঁচে গেছি।"..পার্থর মা হেসে বলেছিলো," কেন,ওকে দেখে কি কেউ পছন্দ করতোনা?".." তা হয়ত করত কিন্তু আমি কি বলতাম?".." কি আবার বলতেন,বলতেন মেয়েকে স্বাবলম্বী করে ছেলের মতই মানুষ করেছি এইটুকুই বলতে পারি। কাজটাজ তেমন পারেনা।"
            দুই মায়ের সংলাপ শুনে তো রেগেমেগে অস্থির টিনটিন,"তা ঐ তোমার হেংলু জামাই কি কি কাজ জানে জেনে এসেছো তো,ওর মা বলেনি ওটাও একটা অকম্মা।" কথা বাড়ায়না ওর মা,কি দরকার শেষে ঝামেলা লাগবে,নিজেই অকম্মা খুঁজেছিস এবার নিজেদের মত সবটা সাজিয়ে নিবি।"..তাই ঠোঁট উল্টে বললেন," আমার কি দায় অত খবরে,তুই তো অনেক বার গেছিস ঐ বাড়িতে। আমি তো এই প্রথম গেলাম।".." মা শোন এক ছাদের তলায় না থাকলে কাউকে চেনা যায়না। ওপর থেকে দেখে আর কতটা বোঝা যায়?"..দীর্ঘশ্বাস ফেলে টিনটিনের মা রেখা,সত‍্যি কি চেনা যায়! তাই আজও হয়ত মাঝে মাঝে অচেনা লাগে ওর বাবার আর পিসিদের ব‍্যবহার। কখনো বা মেয়েকেও বড় অচেনা লাগে,মেজাজের থই পায়না। আসলে বহুদিন সংসার করতে করতে হয়ত ভোঁতা হয়ে যায় অনুভূতিগুলো। সবই গা সওয়া হয়ে যায়,মেয়েবেলায় যেগুলোতে বড় অভিমান হত এখন আর সেগুলো গায়ে লাগেনা।
             তবে মেয়েটাকে হয়ত অত টানাটানি আর কথার যন্ত্রণা সহ‍্য করতে হবেনা। ওরা আজকালকার মেয়ে দরকারে রুখে দাঁড়াতে পারে,স্বাবলম্বী আর আত্মবিশ্বাসী। ভয় না করে প্রতিবাদ করতে পারে,সব ছেড়েও চলে আসতে পারে বরের দেওয়া ভাত কাপড়ের তোয়াক্কা না করে। তাই হয়ত চারিদিকে এত ডিভোর্স আর মনে মনে ঠান্ডা লড়াই। চিরাচরিত ধ‍্যান ধারণা নিয়ে মানুষ হওয়া রেখা তবুও মনে মনে ঠাকুরকে বলেন মেয়েটা যেন সুখী হয়। নাড়ি ছেঁড়া ধন একমাত্র সন্তানকে অন‍্যের ঘরে পাঠাতে বড় কষ্ট হয়। যদিও পার্থর বাবা মাকে ভালোই মনে হয়েছে দেখে।
             হৈ চৈ চ‍্যাঁচামেচি আর নাকানি চোবানি খেয়ে মোটামুটি দই চিঁড়ে খেলো টিনটিন। তবে শাড়ি পরে বেশ লাগছে কিন্তু দেখতে ওকে। আড়ালে গিয়ে চোখ মুছলো রেখা বাড়িটা বড় ফাঁকা হয়ে যাবে। ওর চিৎকারে তো কাক চিল বসতোনা বাড়িতে।
                অবাক হয় পার্থ,একটু চিন্তাও হয় অনেকক্ষণ ধরে টিনটিনের কোন সাড়াশব্দ নেই,ছবি টবিও কিছু পাঠালোনা। সেই থেকে ফোনটা বন্ধ। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে ওর মাকেই ফোন করলো। রেখা হাসতে হাসতে বললো," আর বোলোনা,কুম্ভকর্ণ দরজা দিয়ে ঘুমোচ্ছে বলেছে কেউ উৎপাত করলেই বাড়ি থেকে চলে যাবে বিয়ে না করেই। একটু ঘুমিয়ে নিক। তোমাদের গায়ে হলুদ হলো?কখন আসছে এ বাড়িতে হলুদ?তখন ডেকে দেবো ওকে।"
                বাব্বা যা দিনকাল পড়েছে এ যুগের মেয়েরা হয়ত আর বিয়েই করতে চাইবেনা এরপরে। নিশ্চিন্তে পাশবালিশে মুখ ঢেকেছে টিনটিন। ওকে দেখে হাসে রেখা যা আজকের দিনটা সকালে একটু ঘুমোক বেচারা।
                 রাঙা বেনারসি আর চন্দনে সাজছে টিনটিন মাঝে মাঝেই বড় অস্থির হয়ে উঠছে তার মাঝেই দুএকটা ছবি তুলে পাঠানো হয়ে যাচ্ছে। ওর মাসি এসে একটু বকুনিও দিয়ে গেলো।তবুও এই মেয়ে যেন বড় বেশিই চঞ্চল। ওদিকে পার্থও বেরোবে বাড়ি থেকে। বিয়ে নিয়ে অনেক কথাই টিনটিন শুনেছে মায়ের কাছ থেকে,এই করিসনা এটা করতে হয়। ও বাড়িতে গিয়ে এগুলো করবি। শুনে মুখ বেকিয়ে বলেছিলো তাহলে মা আমার আর ভালো বৌ হওয়া হবেনা,অত কিছু আমি মানতে পারবোনা। পার্থকে কড়া অর্ডার দেওয়া ছিলো বিয়ে করতে যাওয়ার সময় কি বলছে বাড়িতে তার যেন ভিডিও পাঠায়। দাসী আনতে যাচ্ছি বললেই বিয়ে নাকচ,সত‍্যি পার্থকে কি যে দাবড়ানি দিচ্ছে এখন থেকে। রাখিই বলেছে," শোন এত শাসন করিসনা,বেশি শাসনেও মানুষ অস্থির হয়ে যায়। দুজনের মাঝে একটু জায়গা রাখিস নিশ্বাস ফেলার।"এবার পার্লারের মেয়েটা বলে আর চোখ খুলতে দেবেনা,যা দেখার দেখে নিতে। অস্থির হয় টিনটিন এখনো পাঠালোনা ভিডিওটা।তাই লক্ষ্মীমেয়ের মত চোখ বুজে বসে সবটা করে নিতে হলো। বেশ অনেকটা সময় চলে গেলো এইভাবে হঠাৎই বেজে উঠলো ফোনটা কিন্তু একি শাশুড়িমা ভিডিও কলে,একটু বিরক্ত হলেও ফোনটা ধরতেই হলো। " ছেলেটা যে আমার একদম ভয়ে গুটিয়ে আছে,কিছুই বলছেনা। আচ্ছা এবার শোনো তোমার সামনেই কথা হয়ে যাক।"এবার লজ্জা পায় টিনটিন ইশ্ বুদ্ধুরামটা মাকেও বলেছে কথাটা গলাটা শুকিয়ে বলে," নাহ্ থাক্,এমা আমি এমনি বলেছিলাম। আমি তো সাজছি এখন।"..." তা তো আমি দেখেই ফেললাম,খুব মিস্টি। তবে ওকে দেখতে দেবোনা এখন। একেবারে শুভদৃষ্টিতে দেখবে। আচ্ছা ভিডিও কল বন্ধ এবার শোন ভালো করে।" পরিস্কার শুনলো টিনটিন ওনাকে বলতে,"না দাসীও নয়,বন্ধুও নয় আবার রানীও নয়। বল ঘরের লক্ষ্মী আনতে যাচ্ছিস।"..সবার হাসির মধ‍্যে পার্থর গলাটা বেশ ভালোই শুনতে পায় টিনটিন,মনে মনে বলে কেমন লক্ষ্মী আনছো বুঝবে। নিজে ঘুমোবে আর ভোরবেলা উঠিয়ে ছাড়বে ওকে সেটা হচ্ছেনা।
                    ফোনটা কেটে যায় এরমধ‍্যেই। টিনটিনকেও নিতে এসেছে ওর মাসিরা। শুধু তাজ্জব হয়ে যায় পার্লারের মেয়েদুটো টিনটিনের শ্বাশুড়ি মায়ের কথা শুনে তাহলে কি সত‍্যিই দিন পাল্টাচ্ছে এবার! এমন শাশুড়িও হয়!
               পার্থর মা প্রতিভাকে দু একজন বারণ করেছিলো ছেলের বিয়েতে সেজেগুজে বরযাত্রী যেতে তবে প্রতিভা শোনেনি," শোন ওর সব কঠিন পরীক্ষাতে আমি পাশে ছিলাম,আর ও নতুন জীবনে পা দেবে আর আমি থাকবোনা। ঠিক আছে আড়ালেই থাকবো নাহয়।"
                    বরযাত্রী প্রায় এসে পড়েছে,তবে তার আগেই এসে পড়েছেন প্রতিভা আর পার্থর বাবা প্রিয়তোষ। রেখাও এদিকে ব‍্যস্ত জামাই বরণের সব কিছু সাজাতে। জামাই বরণের পর হঠাৎই খোঁজ পড়লো টিনটিনের,বর আর বরযাত্রীর হুল্লোরে সবাই এতক্ষণ ব‍্যস্ত ছিলো,মেয়েটা গেলো কোথায় তাহলে! সত‍্যি সবার চিন্তা লাগে,যা খামখেয়ালী মেয়ে একটা!ওমা ফোনটাও তো এখানে ফেলে রেখে গেছে। রেখা প্রথমে বিশেষ কাউকে না বললেও পরে কানাকানি শুরু হয়। অনেকেই বলে আজকালকার মেয়ে যা পাকা আর বদমেজাজী,কটা ছেলেকে নাচিয়েছে একসাথে কে জানে! একদলা কান্না গলা দিয়ে উঠে আসে রেখার হঠাৎই মনে হয় একবার ছাদে দেখা দরকার রাগ হলেই তো ছাদে গিয়ে দাঁড়াতো। বসন্তের অনুরাগে প্রকৃতি রাঙা হলেও তার মধ‍্যেও যেন উৎকন্ঠায় গরম লাগে রেখার। অসহ‍্য মনে হয় শাড়ি আর গয়নাগুলো সত‍্যি তো মেয়েটা এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চায়নি।
          বারবারই বলতো," তোমার কাছেই দিনরাত্রি গালাগাল খাই আর ওরা কি আমার মত এমন এলোমেলো ছন্নছাড়া মেয়েকে ভালোবাসতে পারবে নাকি? আমি তোমার মত নিজেকে বদলাতে পারবোনা। মেয়েদের কাজ আবার কি,সবাইকে কাজ করতে হবে।"..রেখা হাসতো,"সবাই কাজ করবে,শুধু তুই ছাড়া তাইতো?"..মায়ের কথায় চোখে একটু জল টলটল করতো টিনটিনের মায়ের গলাটা জড়িয়ে বলত," তাইতো আমি তোমাকে ছেড়ে যাবোনা।"
                     একাই ছাদে উঠে এসেছে রেখা,আকাশে হাল্কা চাঁদের আলো আর কয়েকদিন বাদেই তো দোল। ছাদের কোণায় দূর থেকে দেখতে পায় টিনটিনকে পেছন থেকে কিন্তু ওকে কে জড়িয়ে আছে এভাবে? তাহলে কি?
               পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় রেখা কাছে যেতেই আর কথা বলতে পারেনা শুধু চোখটা ভিজে যায় জলে। প্রতিভা পরম স্নেহে জড়িয়ে আছেন টিনটিনকে। হয়ত টিনটিনও মাথা রেখেছে নির্ভরতায় ওর নতুন মায়ের কাঁধে। " ইশ্ কতক্ষণ ধরে সবাই খুঁজছে তোকে,আর তুই এখানে?দিদি আপনি কখন ওকে নিয়ে ছাদে এসেছেন আমরা তো বুঝতেই পারিনি,ওর ফোনটাও..."। হঠাৎই রেখার চোখটা আটকে যায় প্রতিভার হাতে,খাবারের বাক্স! রেখার চোখের দিকে তাকিয়ে একটু অপ্রস্তুত হয়ে যান প্রতিভা ততক্ষণে জ্বলেছে ছাদের আলোটাও। " দিদি এটা কি?"..এবার হেসে ফেলে সবাই শুধু টিনটিন মিনমিন করে বলে," আমি বলছিলাম আন্টিকে আজ কিছু খেতে নেই। কিন্তু আন্টিই তো জোর করছিলো। বলছিলো একদম গরম ফিশকবিরাজী,আমি খেতে ভালোবাসি তাই...."
         রেখা কিছু বলার আগেই প্রতিভা বলে ফেললেন," দিদি,মেয়েটা বড় খেয়ালী আর ছেলেমানুষ খেতেও ভালোবাসে। সারাদিন না খেয়ে আছে। তাই..কিন্তু এ তো সত‍্যিই লক্ষ্মী হয়ে গেছে। কিছুতেই খাওয়াতে পারলামনা।"
                    রেখার চোখের কোলটা বড় ভেজা আজ,ওরা আইলাইনার পরিয়ে দিয়েছিলো সব ধেবড়ে গেলো। সত‍্যিই কি দিনকাল পাল্টাচ্ছে তবে?কে জানে? নাকি গায়ে হলুদের ছোঁয়ায় আর চন্দন বেনারসিতে সেদিনের ছোট্ট দস‍্যি টিনটিন বৌ সেজে একটু বেশিই লক্ষ্মী হয়ে গেছে!
                    বিয়ের সানাইটাতে মিলনের সুর বাজছে,অনেক হৈচৈ চলছে ওদের বড় উঠোনটা জুড়ে। পানপাতায় মুখ ঢেকে টিনটিন এলো,মুখ থেকে পাতাটা সরাতেই পার্থর বড় অচেনা লাগলো টিনটিনের একটু কান্নাভেজা মুখটা,ওর প্রেমিকা সেই দাপুটে মেয়েটাকে একটু মিস্ করলো। চোখে চোখ রেখে বলতে ইচ্ছে করলো ক্ষেপি পাগলী একটা কাঁদিস কেন ঐ রাগী মুখটাই তো বেশ।@ইচ্ছেখেয়ালে শ্রী
সমাপ্ত:-
       

        

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...