Skip to main content

বৌমা

#বৌমা#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

"..কথায় আছেনা বাপু লাখ কথা না হলে বিয়ে হয়না তা একেবারেই হুট করে সব পাকা করে ফেললে বৌদি?".. হাসে সীমা," তা আমাদের একদিক দিয়ে ভালো গো বেশি কথা খরচই করতে হয়নি। ঐ ওরা একদিন এলো,আমরা একদিন গেলাম আর তারপরেই সব পাকা।"
...." তা তো হবেই বৌদি,তোমাদের কাজ তো মোটামুটি ছেলেই সেরে রেখেছে তাই তোমার আর কি করারই আছে,তাইনা?ঘাড় নেড়ে শুধু মত দিয়ে দেওয়া। এ ছাড়া আর তো কোন উপায় নেই। বিশ্ববোকা হচ্ছে আমার ছেলেটা,এতদিন চাকরি করছে তার আগে পড়াশোনা করলো একটা মেয়ে জোটাতে পারলোনা। সেই আমাকেই জলে নামতে হবে। আমি যা করবো তাই হবে।"
        ননদের কথার খোঁচাটা বুঝতে বাকি থাকেনা সীমার। বরাবরই মিছরির ছুরির খোঁচা খেয়েছে নিজের বিয়ের পর থেকে তাই এগুলো আর গায়ে লাগেনা মানে গন্ডারের চামড়া নিয়ে বেশ আনন্দেই থাকে। ওকে চুপ করে থাকতে দেখে ওর ননদ শিউলি আবার শুরু করে," তা বাড়িতে আগে থেকেই যাতায়াত করতো নিশ্চয়। বুকুন তো বলছিলো ফেসবুকে ছবিও দেখেছে দুজনের একসাথে‌। " না গো আমি বারণ করেছিলাম বাড়িতে আসতে। আসলে আমাদের পুরোনো পাড়া। তাই বলেছিলাম একেবারে ঘিয়ের প্রদীপ দিয়ে বৌয়ের মুখ দেখে বরণ করে ঘরে তুলবো।"
       মনে মনে মুখ ব‍্যাকায় শিউলি হুঁ সবাই আমরা দেখে ফেললাম। উনি ঘিয়ের প্রদীপ দিয়ে মুখ দেখবেন যত্তসব। বেশি মহান সাজতে চায় বৌদি।
   একসময় তো খুব ভালোমানুষী দেখিয়েছে সবাই ওদেরকে পাত্তা না দিয়ে বৌদিকে নিয়েই আদিখ‍্যেতা করে গেছে। এমনকি চালাকি করে পুরো সংসারটাকে হাতের মুঠোয় নিয়েছিলো। মায়ের সাথে খারাপ ব‍্যবহার করতনা অথচ কিছুদিনের মধ‍্যেই কায়দা করে একেবারে গিন্নী হয়ে বসেছিলো। মা দুঃখ করে বলত," খারাপ বলতে পারবোনা,কিন্তু বড় চালাক রে। একদম মুখ বুজে নিজের কাজ ঠিক গুছিয়ে নিচ্ছে। আমার ছেলেটাকে দেখছিসনা কেমন ভেড়া বানিয়ে ছেড়েছে,বৌয়ের কথায় উঠছে বসছে।"
   এই রকম টুকরো কথা সীমার কানেও এসেছে ও নাকি খুব চালাক তাই এই বাড়িতে ঢুকে আস্তে আস্তে বর আত্মীয়স্বজন সবাইকে হাতের মুঠোয় করে নিয়েছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেকে নিজেই জিজ্ঞেস করতো তাহলে শাশুড়িমা আর ননদদের বশ করতে পারলোনা কেন এতদিনেও কে জানে। সবসময় নিজের ভালো বা পছন্দের অনেক জিনিস ছেড়ে দিয়েছে ওদেরকে এই বলে," ওমা! এটা তোমার পছন্দ নিয়ে যাও।"..হয়ত বেশি ভালোমানুষী করতে গিয়ে ঠকেই গেছে বেশিরভাগ। একটা সময় ওর বরই বলতো," আচ্ছা যেই কেউ এটা ভালো বললো সঙ্গে সঙ্গে তা দিয়ে দিতে হবে? দেখো আবার আমাকে কেউ ভালো বললে আমাকেই দিয়ে দিয়োনা আবার। আমি কিন্তু কোথাও যাবোনা,মালকিনকে ছেড়ে।".." ইশ্ খুব অসভ‍্য তুমি,কি যে বলো।".." ঠিকই বলছি মেমসাহেব সব পছন্দের জিনিস হাতছাড়া কোরোনা।"..সীমার বারবারই মনে হয়েছে যেটা ওর জন‍্য পড়ে থাকে সবার শেষে তাতেই ও খুশি হয়ে গেছে বরাবর তা শাড়িই হোক বা মাছের পিসই হোক। যাক এই করে তো কেটে গেছে এতগুলো বছর,আর এখন তো অনেক কিছুই অতিরিক্ত মনে হয়। সারাদিনের পরিশ্রমের শেষে নিজের পরিচিত বিছানায় পরিচিত মানুষটার স্পর্শ পেলেই মনে হয় এই বেশ আছি।
           অনেক কিছু ছেড়েও ভালো খেতাব কখনও সীমা পায়নি। ননদের কাছে শুনেছে," ওহ্ আমার দাদার মত কেউ হয়না,এইরকম ছেলে যে পেয়েছে সে ধন‍্য হয়ে গেছে।"..সীমার খারাপ লাগে যখন একবারও শোনেনা এত বছর সেই আগলে রেখেছে মানুষটাকে বিপদে সম্পদে। হয়ত নিজের অনেক কিছুর দিকে খেয়ালই করেনি। তবুও শুনেছে ভীষণ ওপর চালাক,ভালোমানুষী করেই সব ঢেকে রাখে।
                দীর্ঘশ্বাস ফেলে সীমা,জীবনের আরেকটা অধ‍্যায় শুরু হতে যাচ্ছে কি জানি সেখানে কেমন ভূমিকায় থাকবে ও ভালো না দজ্জাল। অবশ‍্য এই দিনগুলো দেখতে চায় ওর ননদেরাও। মনে মনে ভাবে এবার জমবে মজা।
          বিয়ের বাজার গুলো দেখাতে থাকে সীমা নীলাকে মানে ভাবী বৌমাকে নিয়ে একদিন বেড়িয়ে ওর পছন্দমত শাড়িগুলো কিনে নিয়েছে। বাদবাকিগুলো কেনার জন‍্যই শিউলি এসেছে ওকে না বললে ওর রাগ হবে। " বাবা এত দামি সব শাড়ি পছন্দ করেছে তোমার বৌমা,এখন থেকেই গুছিয়ে নিচ্ছে আর কি?"গুছিয়ে নেওয়া কথাটা খুব পরিচিত সীমার তাই হেসে বলে," একটু করে ওদের তো সংসার গুছোতেই হবে গো। তবে আমিই বলেছি সবচেয়ে পছন্দের জিনিসটা কিনতে। টুবলুর খুব শখ,কি সব একরকম ড্রেসে ফটোশ‍্যুট হবে।".." দেখো কার শখ আবার! তুমি আবার মায়ের মত এখনি সংসারের হাল ছেড়ে দিয়োনা।"...হাসি পেলো সীমার সুপরামর্শ,একসময় মাকে দিয়েছে,এখন বৌদিকে দিচ্ছে।
                     জমিয়ে কেনাকাটা হলো,শিউলি আর বড় ননদের জন‍্যও ওদের ইচ্ছেমত শাড়ি কেনা হলো। সীমার শাড়িটা আগেই নীলা আর টুবলু পছন্দ করে কিনেছিলো। ওর কোন আপত্তিই শোনেনি তার সাথে ওর কর্তার ম‍্যাচিং ড্রেসও। অনেক কাজ সামনে,কি করে যে সব সারা হবে!
            সংসারের নিয়মে সব কাজই সারা হয়ে গেলো সুন্দর ভাবে। তত্ত্ব সাজানো থেকে বিয়ে বৌভাত সব সুন্দর করে মিটে গেলো। এককালের বৌমা সীমা এখন নিজেই শাশুড়ি। ঘিয়ের প্রদীপ দিয়ে মুখ দেখে বরণ করে আলতা ধোয়া পা নিয়ে নতুন সংসারে পা রাখে নীলা। বিয়ে বাড়ির গন্ধ কদিন ধরেই ড়িয়ে আছে বাড়িতে। এই কদিন যে কোনদিক দিয়ে কেটে গেছে বোঝাই যায়নি। এরমধ‍্যে ওরা অষ্টমঙ্গলা থেকে ফিরে এসেছে। নীলা হয়ত খুব ডানাকাটা সুন্দরী নয় তবুও একটা অদ্ভুত স্নিগ্ধতা আছে ওর মধ‍্যে। শিউলি বলতে শুরু করেছিলো," আমাদের টুবলুকে যা সুন্দর দেখতে!"..থামিয়ে সীমা বলেছিলো," নীলার এই হাসিমুখটা আমার খুব ভালো লাগে।"..নিজে তো সারাজীবনই শুনেছে ওর ফর্সা বরের পাশে ও কেলে ভূত তাই কি দরকার! নীলা এখনকার মেয়ে হয়ত মুখের ওপর কিছু বলেই দেবে কি দরকার অপ্রিয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করার। সাথে সাথে ছেলের কাছেও খারাপ হওয়া।
              দেখতে দেখতে ওদের বিয়ের একমাস পূর্ণ হলো। নীলাও অফিসে যায় তাই ছেলেবৌকে একসাথে খেতে দিয়ে পরে নিজের সব কাজ গুছিয়ে ওরা কর্তাগিন্নী খায়। পরপর দুদিন ছুটি দেখে সেদিন ননদদের বাড়িতে খেতে বলেছে ওরা। সেই বিয়ের পর আর ওরা আসেনি,ভাববে বৌদি হয়ত ভুলেই গেছে। যদিও ছেলে বৌ এর মধ‍্যেই নেমন্তন্ন খেয়ে এসেছে ওদের বাড়ি থেকে।
                  বেশ অনেক কিছু রান্না হয়েছে বাড়িতে,খাবার টেবিলে ছেলেদের খাওয়া হওয়ার পরই ননদদের সাথে নীলাকে বসতে বলে সীমা," তুমি বসে যাও তোমার খিদে পেয়েছে। আমি বসছি একটু দিয়ে দি আগে সবাইকে তারপর। তোমাদের খেতে খেতে আমি বসে পড়বো।"
               ওদের খাওয়ার মাঝে সীমা বসে পড়ে একটা থালায় সবকিছু নিয়ে। " এ কি মা তোমার এক থালায় সব কিছু কেন? এভাবে কি খাওয়া যায়? আর তোমার মাছ কই? আর কিছু পদও তো মিসিং দেখছি...হ‍্যাঁ ঠিক।"..." আর বোলোনা নীলা বৌদি ঐ রকমই,বাড়িতে যেন বাসনের অভাব পড়েছে। আসলে কিছু না সবটাই কুড়েমি।"...হাসে সীমা নীলার দিকে তাকিয়ে," সব আছে,দেখো ভালো করে।" নিজের মাছের বাটিটা এগিয়ে দেয় শাশুড়ির দিকে নীলা," মা ইলিশ মাছের ল‍্যাজা ভাজাটার একটু শেয়ার দাওতো দেখি।মাও এমন করত সবাইকে ভালো খাইয়ে নিজে ঐ কিসব বলেনা ঘাড়া ল‍্যাজা হাবিজাবি খেতো। ছোটবেলায় বুঝতাম না এখন বুঝি। ওটা ভালোবাসা নয় অভ‍্যেস। কই দাও।"...হাঁ করে নীলার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে সীমা। " কি হলো দাও...আর চলো এটা দুজনে ভাগ করে খাই।"মাছের পেটিটা মাঝখান থেকে ভাগ করে নীলা। হেসে ফেলে সীমা," দেখেছো,কি কান্ড শিউলি এঁটোকাটা দিয়ে কিসব করছে মেয়েটা।"..
  ধমকায় নীলা," মেয়েদের এঁটো মায়েরা খেলে কিছু হয়না।"..মুখ ব‍্যাকালেও মুখে কিছু বলেনা ওর ননদরা সত‍্যি বৌদির ভাগ‍্যটা ভালো। চোখের কোলটা একটু ভিজে যায় সীমার আজ বড় মায়ের কথা মনে পড়ছে। সত‍্যিই কি ভালোবাসা ভাগ করলে বাড়ে? নীলাকে আজ পুরোনো দিনের মত বৌমা বলতে বড় ইচ্ছে করলো সীমার,বাড়ীর বৌ যে কখন মা হয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি।copyright protected@ইচ্ছেখেয়ালে শ্রী।
সমাপ্ত:-

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...