Skip to main content

নো ডায়েট ডে

#নো_ডায়েট_ডে#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

"দেখি একবার ওয়েট মেশিনে উঠে দাঁড়ান তো। আপনি ঝুঁকবেননা একদম সোজা হয়ে দাঁড়ান। আমাকে দেখতে দিন।"..বৌমাকে ওয়েট মেশিনে দাঁড়াতে দেখেই চেয়ার ছেড়ে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যান শোভা,চশমার ফাঁক দিয়ে দেখতে চেষ্টা করেন সঠিক ওজনটা। লাভ হয়না,ততক্ষণে মিহি মানে ওনার একমাত্র বৌমা নেমে এসেছে। নিজে ওজনটা চাক্ষুষ না করতে পারলেও ডাক্তার ততক্ষণে আঁতকে উঠেছেন," একি আপনি তো সেঞ্চুরি করবেন কিছুদিন বাদেই। পাঁচ ফিট দুই ইঞ্চি হাইটে ছিয়াশি কেজি ওজন! শুনুন কনসিভ করতে হলে তো আগে ওজন কমাতে হবে। এই বার সুযোগ পান শোভা," দ‍্যাখেন ডাক্তারবাবু আপনে যদি পারেন। আমি তো কইয়‍্যা কইয়‍্যা মুখে ব‍্যাথা কইর‍্যা ফালাইসি।"..শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে চোখ পাকায় মিহি। মাঝে মাঝে মনে হয় ওর মিহি নামটা কে দিয়েছিলো কে জানে! ছোটবেলায় নাকি মিহিদানার হাড়ি নিয়ে বসতো তাই ওর ডাক নাম মিহি। ভগবান এই নামে এই দেহ! তা যাই হোক খাওয়া ও ছাড়তে পারবেনা। শাশুড়ি এখন ভালোমানুষী করছে এখানে বসে বসে। কে ওকে ভালোমন্দ রান্না করে খাওয়ায় শুনি? আজ মান দিয়ে চিংড়ির ঘন্ট তো কাল শোল মূলো,তারপর দিন ইলিশভাপা বা চিংড়ি মালাইকারি ওহ্ দুটোই উনি হেব্বি রান্না করেন। রান্নাবান্না তেমন পারেনা ও, তারপর উনি করতেও দেননা। তার ওপর তো পিঠে পায়েস মাংস এইসব তো আছেই।
     হঠাৎই আবার ডাক্তারের গম্ভীর গলায় খাওয়ার চিন্তার জালটা কেটে যায়। শুনুন নিয়ম করে প্রতিদিন কম করে হলেও দুই কিলোমিটার হাঁটবেন। শুনুন ওনার হাজবেন্ড আসেননি? এরপর আপনি না এসে ওদের দুজনকেই পাঠাবেন। কতগুলো টেস্ট করতে হবে দুজনেরই।আর আমি একজন ডায়েটিশিয়ানের ফোননম্বর দিলাম ওখানে একটা ডেট নিয়ে নিন। উনি যা ডায়েট দেবেন তাই ফলো করবেন।"
  ...."আপনি একটু ভালো কইর‍্যা কইয়‍্যা দেন ওরে, আমারে তো তুড়ি মাইর‍্যা উড়াইয়া দেয়। আর আমার পোলাটাও বেশি বাইরে বাইরে থাকে।"..শোভার কথা শুনে ডাক্তারবাবুর মুখে হাসি দেখা দেয় এতো সাঙ্ঘাতিক বৌমা তবে নিশ্চয় শাশুড়িও প্রশ্রয় দেয়। " চিন্তা করবেননা যেভাবে বলছি সেভাবে চললে নিশ্চয় পজেটিভ রেজাল্ট হবে।"..প্রেসক্রিপশনটা হাতে নিয়ে শাশুড়িকে বগলদাবা করে চেম্বার থেকে বেড়িয়ে আসে মিহি। ওহ্ এত জ্ঞান শুনে মাথাটা দপদপ করছে। আবার ডায়েটিশিয়ান কি বলবে কে জানে! ঘটাং করে স্কুটিতে স্টার্ট দিয়ে শাশুড়িকে পেছনে বসিয়ে নেয়। বাবা!ও নাকি হাঁটবে দুই কিলোমিটার। পাড়ার দোকানে কোল্ডড্রিঙ্কস আনতে গেলেও স্কুটি চেপে যায় যত্তসব।
        কিছুক্ষণ চালানোর পর একটা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে পরে।" কি হলো থামাইলা ক‍্যান?বাড়িতে কত কাম পইর‍্যা আছে।"..টুক করে দোকান থেকে একটা ক‍্যাডবেরি কিনে কামড় বসায় মিহি।.." তুমি এখনি আবার ক‍্যাডবেরি কিনলা!এই না ডাক্তার কত কি কইলো।".." ঐ জন‍্যই তো মুড ভালো করছি মাজননী,ঘরে বাইরে এত জ্ঞানের কথা!"..ফেরার পথে পঞ্চুর দোকান থেকে মিষ্টি দইও কেনে। শোভা বকুনি লাগাতেই বলে.."আমার জন‍্য না তুমি আজ নিরামিষ খাবে তাই কিনলাম। যদি দয়া করে একটু প্রসাদ দাও পাবো।"..মেয়েটা মিষ্টি দই খেতে ভীষণ ভালোবাসে আর এত আদরকাড়া ওর ওপর কিছুতেই রাগ করা যায়না। এদিকে বিয়ের চারবছর পার করে পাঁচবছর হলো সবাই চাইছে এবার নতুন অতিথি আসুক ঘরে। বলতেও খারাপ লাগে খাওয়া কন্ট্রোল করতে অথচ না বললেও নয়। ওনার ছেলেও বা কম কি? হরেক রকম ক‍্যডবেরি মিষ্টি নিয়ে বাড়ি ঢোকে যেন বাচ্চাকে আহ্লাদ দিচ্ছে। আর কি মহারাণী তার বাহন নিয়ে অফিস করে বাড়ি ফিরে কোল্ডড্রিঙ্কস চিপস নিয়ে বসে পড়ছে। মানলাম বাপের বাড়ির আহ্লাদী মেয়ে, তাই বলে বৌটাকে যা বলবে তাই এনে দিবি!
          পরদিন সকালেই মিহির ঘরে শুরু হয়ে গেলো শাশুড়ি মায়ের ডাক যন্ত্রণা। ভোর পাঁচটা থেকে হাঁকডাক " উইঠ‍্যা পরো আমার লগে হাঁটতে যাইবা। ডাক্তার কইছেনা দুই কিমি হাঁটতে।" ওহ্ কিছু জ্বালাচ্ছে মহিলা নাতি নাতনি করে ওকে রোগা করেই ছাড়বে মনে হয়। অথচ কেউ সাপোর্ট করেনা ওকে সবাই বলে রোগা হলেই ভালো।
        ডায়েট হাঁটা সব চলছে রীতিমত না করে কোন উপায় নেই। শুধু সপ্তাহে দুটো দিন কেউ ওকে নাড়াতে পারেনা শনিবার আর রবিবার। ধুসস্ এত করে ওজনের কাঁটা মাত্র এক কেজি কমেছে দেখায়। নিকুচি করেছে ধ‍্যাৎ তেরি রেগে মেগে একশো গ্ৰাম মিষ্টি দই আর একটা রাজভোগ খেয়ে নেয়। কতদিন মিষ্টি খায়না।
    শোভা কিছু না বললেও বকুনি দেয় ডায়েটেশিয়ান," আপনি মনে হয় কিছুই ফলো করছেননা। এমন তো হতে পারেনা,ওজন কমার কথা।"এবার একটু লজ্জা পায় মিহি,ওর বরের মুখটাও কাচুমাচু দেখায়। বেচারা সত‍্যি বৌকে খুব ভালোবাসে। দেখতে দেখতে একবছর কেটে গেলো।কড়া গার্জেন আর কড়া ডাক্তারের আন্ডারে থেকে মিহি একটু ছিলিম হয়েছে মানে ওর শাশুড়িমা তাই বলেন।
      ...." কি কও আরেকবার কও দেহি।" লজ্জা পায় মিহি।" থাক অহন থেকেই ঢাক পেটানোর কাম নাই। মাস তিনেক যাউক আগে।"..খুশির ঝলক লাগে বাড়িতে। মহা ধুমধাম করে বৌমার সাধ দেন শোভা। সাজানো গোছানো খাবার থালাটা দেখে গা টা চিড়বিড় করে মিহির। এতদিন টকদই,শশা আর ডালিয়া খাইয়ে আজ ভালো ভালো পদ রান্না করে এনেছে। ইশ্ এখন ওরই খেতে ইচ্ছে করেনা।" মা আমি এত কিছু খেতে পারবোনা। এখন আর খেতে ইচ্ছে করেনা।"..একটা ছোট্ট কাগজে লেখা 'নো ডায়েট ডে' আর একঝুড়ি চকলেট,মিষ্টি,চিপস সব এগিয়ে দেন শোভা," এগুলা খাবা তো?অবশ‍্য আমি আনি নাই এইসব। আমার পোলা আনছে আজ নাকি নো ডায়েট ডে।...বাপের কালেও শুনি নাই এমন কোন দিন হয়!
            ওদিক থেকে মুচকি হাসে ওর বর.." আরে সত‍্যিই আজ নো ডায়েট,তাই শুধু ভরাও পেট।"..মিহির কোলে সাবধানে চকোলেটের ঝুড়িটা রেখে মিষ্টি মুহূর্তটাকে বন্দি করে নেয় চট করে ওর বর। ধমক লাগান শোভা," যা দেহি পুরুষমানুষ গো থাকতে নাই এহানে।"...হাসির রোল ওঠে সারা ঘরে। হেসে ফেলে মিহি আর শোভাও।
সমাপ্ত:-

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...