Skip to main content

গানের সুরে

#গানের_সুরে#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

তানপুরাটা বুকের কাছে জড়িয়ে চোখ বন্ধ করে রেওয়াজ করছে শ্রুতি। হঠাৎই ওর কোলে শুয়ে পড়ে মেখলা..
"পিমি তুই বাবাকে বলে দে আমার জন‍্য যেন খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন না দেয় বলেছি তো আমি বিয়ে করবোনা।"
   মেখলার পেছন পেছন কখন যে ওর বৌদিও এসে দাঁড়িয়েছে ঘরে বুঝতে পারেনি ও।
" হ‍্যাঁ পিমির ল‍্যাজ ধরে সারাদিন বাড়িতে আ আ রেওয়াজ আর তাতা থৈ নৃত‍্য চলুক। আমারও যেমন কপাল পুরোনো স্টকই ক্লিয়ার করতে পারলামনা তার মধ‍্যেই.."
কতবার যে বৌদির মুখে এই কথাটা শুনেছে শ্রুতি তার ঠিক নেই। পুরোনো স্টক মানে ও,ওকে বিদায় না করতে করতেই আবার মেয়ে বড় হয়ে উঠেছে এটাই বৌদির রাগ।
          .." ও পিমি তুই বলনা বাবাকে। তাহলেই বাবা শুনবে।".." আচ্ছা বলবো,আয় তো একটু গান কর আমার সাথে মন ভালো হয়ে যাবে।"
..."আমি গাইতে পারিনা,নাচতে পারি।"
"সত‍্যি তুই মহাপাজি হচ্ছিস দিনে দিনে ঐ জন‍্যই শ্বশুরবাড়ি পাঠাতে হবে ওটাই একমাত্র মেয়েদের সংশোধনাগার।"
   ..." তাই বোধহয় তুই চলে এসেছিলি ওখান থেকে তাইনা? মানতে পারিসনি সংশোধনাগারের নিয়ম?"
           উত্তর দেয়না শ্রুতি গান ধরে ' সঙ্কোচের বিহ্বলতা নিজের অপমান।'..ওর চোখের ইশারায় বাধ‍্য মেয়ের মত কোমরে ওড়না জড়ায় মেখলা।
              সকালবেলা মনটা ফুরফুরে হয়ে যায় নিখিলের,ওদের দুইভাইয়ের পর প্রায় বারো বছর বাদে এই বোন। যা হয়েছে ভালোই হয়েছে ও শ্বশুরবাড়ি চলে যাওয়াতে বড় সঙ্গীতছাড়া মানে ঐ হতচ্ছাড়া হয়ে গিয়েছিলো বাড়িটা। আবার বাড়িতে শ্রী ফিরে এসেছে।
                  খবরের কাগজটা দিয়ে গিয়েছে দেখতে থাকেন মন দিয়ে কয়েকটা জায়গা দাগও দেন। মনে মনে বলেন এই তো বেশ কয়েকটা ভালো ছেলের খোঁজ পাওয়া গেছে,তারপর দেখা যাক আর কারা ফোন করে।
" দাদা মেখলাটা এখনই বিয়ে করতে চাইছেনা। কিছুদিন বাদে দেখলেই তো পারো।"
.."কিছু করার নেই বাড়ির অশান্তি বুঝিসই তো। তোর বৌদি বলে মেয়েদের বেশি বয়েস হয়ে গেলে আর আ্যডজাস্ট করতে পারেনা।"
.."কিন্তু ও এখনও বেশ ছোট দাদা।"
..." আমার কাছে তো তোরা দুজনেই ছোট তবুও কি সময় থেমে থাকে?"
দাদার মুখে মুখে কখনোই কথা বলতে অভ‍্যস্ত নয় শ্রুতি তাই চুপ করতে হলো।
..."তার চেয়ে বরং একটা গান করতো শুনি সামনেই তো রবীন্দ্রজয়ন্তী তা তোদের স্কুলের এবার কি প্রোগ্ৰাম শুনি?
"অনেক কিছু আছে দাদা আর মেখলাও তো নাচবে। রিহার্সাল তো বাড়িতেই হবে তখনই সব শুনতে পারবে।"
   শ্রুতির স্কুলটা আগেও ছিলো ওর বিয়ের পর কিছুদিন একটু ভাটা পড়েছিলো। নিখিল ভাবতেই পারেনা শ্রুতির মত মেয়ে কারো সংসারে অবাঞ্ছিত হতে পারে। প্রথম কয়েকমাস ভালোই ছিলো কিন্তু পরে যা জানা গেলো ভাবলে এখনো শিউরে ওঠে নিখিল। মাসতুতো বৌদির সাথে অবৈধ সম্পর্ক ভাবা যায়! কি জানি কেন যে কোন খবরই পাওয়া যায়নি। আর পাবেই বা কি করে কোথায় ধানবাদ আর কোথায় কলকাতা। শ্রুতি থাকতে চাইলেও ওর জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিলো জা নিস্তার দেয়নি ওর স্বামীকেও কারণ অর্থ আর অধিকার দুটোই হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছিলো। যেদিনই ওরা দুই ভাই জানতে পেরেছে ওদের মা বাবা মরা বোনের দুর্গতির কথা সেদিন আর দেরি করেনি বোনকে ফিরিয়ে আনতে। তারপর থেকে গানের স্কুল,মেখলা আর বিকু মানে ছোট ভাইয়ের ছেলেকে নিয়ে অনেক কষ্ট বুকে চেপে আছে শ্রুতি। দাদারা কিছু না বললেও বৌদিরা মাঝে মাঝেই একটু টুকরো খোঁচা দেয়। তবে ভালোবাসে সবাই।
  শ্রুতি গাইতে শুরু করে...নব আনন্দে জাগো আজি নব রবি কিরণে। সকালের বাতাসে জড়িয়ে যায় ওর সুরের মূর্ছনা। " এই ধরণের গানগুলোই গাইবি। দুঃখের গান আমাকে শোনাবিনা।"
                     "শুনছো কাছাকাছি একটা পাত্রের খোঁজ পাওয়া গেছে। কাছাকাছি মানে আমাদের শ‍্যামবাজারেই নয় যাদবপুরে।"
" না না দাদা তুমি ঐ গিরীশপার্কটাই দেখো। মেখলাটা উইকএন্ডে নাচ শেখায় স্কুলে সেটার কি হবে?"
       ওর বৌদি তাকায় ওর দিকে," হ‍্যাঁ পাশের বাড়িতে হলে আরও ভালো। ছুটে ছুটে আসবে পিমির আদর খেতে।"..মাথা নিচু করে শ্রুতি।
              যাদবপুরের পাত্রকে তবুও আসতে বলেছে নিখিল তবে আগে গিরীশপার্কের ওরা আসবে।
          মেখলার কদিন ধরেই মুড অফ খুব রাগ হয়েছে পিমির ওপরও । এত করে বললো কিছুই হলোনা।
" মেখু আয়তো,দেখ কাল কি শাড়ি পরবি। এই চাঁপা হলুদ রঙটা বেশ ভালো তাইনা? বেশ সুন্দর সরু জড়ির পাড়ও আছে। আমার পান্না বসানো হারটা আর ছোট্ট দুলটা বার করে দেবো ওর সাথে মানাবে।"
  " তোর সর্ষে ফুলের রঙের কোন হলুদ শাড়ি নেই তাহলে ওদের চোখে সর্ষে ফুল দেখিয়ে ছাড়তাম আমি।"
.." ছিঃ মেখু অসভ‍্যতা করেনা। তুই না আমার সোনা মেয়ে। তুই তো বলিস পিমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। তাহলে কেন কথা শুনছিসনা?বৌদি তো আমাকেই বকবে।"
          ..." তুই শুধু নিজের দিকটাই দেখলি পিমি? নিজে ঠকেছিস এবার আমাকে পাঠাচ্ছিস সংশোধনাগারে।"
.." ভরসা রাখ মেখু আমার পছন্দ না হলে কিছুতেই দিতে দেবোনা দাদাকে।"
        এক রবিবার ওরা কয়েকজন দেখতে এলো মেখলাকে। মেখলা তো রেগে মেগে অস্থির।" পিমি দেখেছিস তো এক গাদা লোক এসেছে আর ছেলেকেই আনেনি।"..মুচকি হাসে শ্রুতি," মেখু তুই না বিয়ে করবিনা তা ছেলে দেখার অত শখ কেন শুনি? মাত্র তো চারজন এসেছে। মেখলা একাই আসে মায়ের আর কাকির সাথে। টুকটাক কথার পর নিখিলই বলে," মেয়ে আমার খুব ভালো নাচে। কিন্তু আপনাদের পরিস্কার করেই বলছি যাদের আপত্তি আছে ভবিষ‍্যতে বাড়ির বৌমা নাচবেনা তেমন বাড়িতে.."
         নিখিলকে থামিয়ে ছেলের বাবা বলে ওঠেন," আমরা খুব গান বাজনা পছন্দ করি, ঐ জন‍্যই তো যোগাযোগ করেছি। তবে মেখলা আমাদের একটু নাচ দেখাবে তো যদি তোমার কোন আপত্তি না থাকে।"..বলতে ইচ্ছে করছিলো ওর খুব আপত্তি আছে কিন্তু বলতে পারলোনা।
"মা পিমিকে ডেকে দাওনা"..মায়ের চোখেমুখে বিরক্তি দেখে মেখলা। কিন্তু পাত্তা দেয়না।
               একরাশ স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে ঘরে ঢোকে শ্রুতি ওর দাদা পরিচয় করিয়ে দেয় ওদের সাথে। কিছুক্ষণ কেউই কোন কথা বলতে পারেনা,সারা ঘরে তখন যেন আগুন জ্বলছে শ্রুতি নিমগ্ন হয়ে গাইছে..'দারুণ অগ্নিবাণে রে হৃদয় তৃষায় হানে রে॥ রজনী নিদ্রাহীন, দীর্ঘ দগ্ধ দিন. আরাম নাহি যে জানে রে ॥ ' আর মেখলার চাঁপারঙের শাড়িতে উঠেছে হিল্লোল।
   "পিমি দেখেছিলি লোকটা কি পাজি কেমন ভিডিও করছিলো? বাবা বারণ করতে পারলোনা!"
" ছিঃ মেখু তোরা আজকালকার ছেলেমেয়েরা এমন কেন রে? সবাই কি খারাপ!"
                   ওরা ফোন করে জানিয়েছে ছেলে আগে আসবে তারপর যা মতামত দেবার জানিয়ে দেবে। " বাবাকে বলে দে পিমি এখন যেন কেউ আসেনা। সামনেই রবীন্দ্রজয়ন্তী আমার খুব চাপ আছে।"
           রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিন ছাত্রী অভিভাবকের খুব ভিড় ওদের অনুষ্ঠানের হলে। ভারি সুন্দর লাগছে আজ শ্রুতিকে আর মেখলাকে। শ্রুতি পরেছে  সুন্দর লাল টেম্পল পাড় দেওয়া চন্দন রঙের শাড়ি আর সাথে খুব সুন্দর ডোকরার লকেট লাল বড় বড় পুঁতিতে সাজানো। মেখলা পরেছে নীল আর হলুদের মিশেলে দক্ষ্মিণী শাড়ি সাথে সোনালী গয়না। দুজনেরই মাথায় জুঁইয়ের মালা।
    .." আচ্ছা পিমি বাবা আর মাকে বলেছিলাম একটু তাড়াতাড়ি আসতে। এখনো এলোনা কেন বলত?"
          অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গিয়েছে নাচতে গিয়ে মেখলার চোখদুটো বারবারই খুঁজছে মা বাবাকে। দেখতে পেয়ে শান্তি হলো কিন্তু তার মধ‍্যেও খুব অশান্তি লাগলো। ঐ ভদ্রলোক এখানেও হাজির হয়েছেন বাড়ির লোকজন নিয়ে। এখান থেকে বেড়িয়ে খুব ঝামেলা হবে বাবার সাথে।
                   অনুষ্ঠান শেষে বেরোয় মেখলা,বাবা মা আর কাকিমা দাঁড়িয়ে। ওর পিমি তখনও ব‍্যস্ত সব গুছোতে। খুব ইচ্ছে করছিলো একটা চ‍্যাঁচামেচি করতে কিন্তু পারলোনা। বাবা এসে হাতটা ধরে ওর," খুব খুব ভালো হয়েছে বেটু। আমাদের তো হাততালি দিয়ে হাতব‍্যাথা হয়ে গেছে।"..এই বেটু ডাকটা শুনেই মেখলার রাগ টাগ সব ফিউজ,মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
" একটু আয় তো দেখি এদিকে।"
"কেন আইসক্রীম খাওয়াবে নাকি?"
" খাওয়াবোই তো,তোর পিমি আসার আগেই খেতে হবে। নাহলে বকা খাবি।"
কোথায় আইসক্রীম! একটা বড় গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় বাবা।
  " তুমি সত‍্যিই অপূর্ব নাচো,আমরা দেখার লোভ সামলাতে পারলুমনা।"..অগত‍্যা গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে প্রণাম করে মেখলা।
  " আর এই যে আমার ছেলে স্বপ্নিল।"..মেখলা হাত তোলার আগেই ওদিক থেকে হাত উঠে গেছে। ততক্ষণে এসে গেছে ওর পিমিও। পিমিকে দেখেই হই হই করে ওঠে স্বপ্নিল," আমি কিন্তু ইউটিউবে আপনার সব রবীন্দ্রসঙ্গীতগুলোই শুনেছি। আমি কিন্তু ভীষণ ভক্ত আপনার। সেদিন বাবার কাছে ভিডিওটা দেখেই চিনেছি। আপনার গান শুনতেই তো আজ আসা।" একটা মিঠে দৃষ্টি দিয়ে মেখলার দিকে তাকিয়েই আবার কথা বলতে শুরু করে স্বপ্নিল। বাবা এত একেবারে বকবকিয়া পাবলিক শুধু পিমিরই গুণগান করে যাচ্ছে তখন থেকে যা তো বাপু এবার বাড়ি। অবশেষে গেলো কিন্তু পিমির ফোননম্বর নিয়ে গেলো। আশ্চর্য একবারও ওর ফোন নম্বর চাইলোনা!
                  মাঝে কেটে গেছে বেশ কয়েকটা দিন,প্রোগ্ৰামের অনেকগুলো ছবিই নিজের টাইমলাইনে দিয়েছে মেখলা ওর পিমি আবার ফেসবুক করেনা।
    " মেখু তোকে কি কেউ ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে?"
.." কেন রে পিমি?কতই তো পড়ে থাকে আমি নিইনা।"
একটু আমতা আমতা করে বলে শ্রুতি না স্বপ্নিল একটা মেসেজ করেছে হোয়াটসআ্যপে।
  " ঐ পাজি ছেলেটার কথা একদম বলবিনা আমাকে, তোকে মেসেজ করেছে তুই দেখ।"
" আচ্ছা আমিই দেখি,ওমা কি সুন্দর সব ছবি পাঠিয়েছে! ধ‍্যাৎ"
   আর উৎসাহ রাখতে পারেনা মেখলা,পিমির কোলের কাছে গিয়ে উঁকি মারে ফোনটায়।
   " নে ধর বাপু সবই তোর ছবি,আমি বুড়ি বলে আমার একটাও ছবি তোলেনি ছেলেটা!"
           মেখলার মুখে তখন হাল্কা লালচে রঙ ধরেছে,সত‍্যিই কি সুন্দর ভাবে ওর নাচের মুহূর্তগুলোকে বন্দী করেছে। ছবি দেখতে দেখতেই আবার টুং করে আওয়াজ হয়। এবার হেসে ফেলে মেখলা," এই নে পিমি বুড়ি তোর ছবি দেখ। একদম মা সরস্বতীর মত স্টেজ আলো করে বসে আছিস।"
                ...সেদিন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টটা ভালো করে দেখে মেখলা,ধুসস্ কতগুলো আজেবাজে রিকোয়েস্ট। কোথায় স্বপ্নিল? একটা পাজি ছেলে। তবুও কোথায় যেন ছবিগুলো পাঠানোর পর ঐ পাজি ছেলেটা মন ছুঁয়ে নিয়েছিলো মেখলার।
" আরেকটু জোরে গা মেখু এই তো বেশ গাইছিলি ঘরেতে ভ্রমর এলো গুণগুণিয়ে।" লজ্জা পায় মেখলা। বাড়ির সবাই জানে মেখলা কাল দেখা করতে যাবে স্বপ্নিলের সাথে আর পাহারাদার হিসেবে যাবে শ্রুতি।
              পিমির চোখে যেন ঘুম নেই,আগের দিন থেকেই সব গুছিয়ে রেখেছে মেখলা কি পরে যাবে। "পিমি সত‍্যি কথা বলতো,তোর কখনো কাউকে ভালো লাগেনি?"..ঘুমের ভান করলেও শ্রুতির মনে পড়ে যায় ওদের ইউনিভার্সিটির কনভোকেশনের কথা,খুব সুন্দর করে সেজেছিলো ও। সেদিন অনেকটা রাত পর্যন্ত ছিলো ওখানে পরে দাদা গিয়ে নিয়ে আসে। কি যেন নাম হ‍্যাঁ যদিও অন‍্য ডিপার্টমেন্টের তবুও মনে আছে,কল্লোল। ও বলেছিলো তোর যে বর হবে তোর গান শুনে আর ঐ টানা টানা চোখের দিকে তাকিয়েই কাটিয়ে দেবে সারাদিন। একটু লজ্জা পেয়েছিলো শ্রুতি,তখনই বাড়িতে ওর বিয়ের কথা চলছে। " ইশ্ প্রথমদিন থেকেই ভেবেছিলাম প্রপোজ করবো,বড় দেরি হয়ে গেলো। আসলে আমার মত গরীবের স্বপ্ন দেখা চলেনা,তারপর আবার বেকার।"..নিজেই কথাগুলো বলে নিজেই হেসে লুটিয়ে পড়েছিলো।
           অদ্ভুত ভাগ‍্য শ্রুতির ওর বর তেমনভাবে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখেইনি কোনদিন। গান শোনা তো দূরের কথা।
                           বেচারা শ্রুতি আজ কাবাবে হাড্ডি তবুও দাদার আদেশ আসতেই হয়েছে। ইকো পার্কের ক‍্যাফেতে অনেকটা সময় গল্পে আড্ডায় কেটে গেলো। " আ্যকচুয়ালি আপনি না এলে আড্ডাই জমতোনা আজ। আর এত ভালো ভালো গানই বা কে শোনাতো?"..মহা পাজি ছেলেটা সমানে মেখলাকে লেগপুলিং করছে।
                       পরেরদিন একটু গম্ভীর দেখায় নিখিলকে। " শোন ও বাড়ি থেকে ফোন করেছিলো ওদের কি সব শর্ত টর্ত আছে এমনিতে  বেটুকে ওদের খুব পছন্দ।"
.
বিকেল বেলা হতেই আজ বড় ব‍্যস্ত মেখলা," ও পিমি ওঠ,আর ঘুমাসনা। আমার শ্বশুরবাড়ির লোক আসবেনা। একটু সাজগোজ করে নে।"
      আজ মেখলার উৎসাহ দেখে বড় আশ্চর্য লাগে শ্রুতির সত‍্যিই বোধহয় মেয়েটা প্রেমে পড়েছে। অবশ‍্য স্বপ্নিল সত‍্যিই ভালো ছেলে শুধু একটু পাজি এই যা।
" তোর শাড়ি তো গুছিয়েই রেখেছি পরে ফেল। এই বিয়ে করবোনা আর এখন কত আনন্দ মনে।"
  ইচ্ছে করেই মেখলা গাইতে থাকে..' আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ সুরের বাঁধনে।'
                           ওরা এসে পড়েছে, আজও চারজন এসেছে। শ্রুতি শুনতে পায় হাসির আওয়াজ ঐ ঘরে। বড়দা যেন একটু বেশিই হাসছে আজ। মেখলা চোখে আইলাইনার টানছে। " পিমি এদিকে আয় তো দেখি। তোকে একটু হাল্কা কাজল দিয়ে দিই।" আপত্তি করতেই যাচ্ছিলো শ্রুতি হঠাৎই বড় বৌদি এসে পড়ে," ওকে নিয়ে ও ঘরে যাও আমি চা দিয়েছি। এ কি গলাটা খালি কেন তোমার?বাইরের লোক এসেছে কি বলবে ওরা?" নিজের গলার লম্বা হারটা মাথা গলিয়ে শ্রুতির গলায় পরিয়ে দিলো ওর বড় বৌদি। আজ যেন হঠাৎই বৌদিকে কেমন মায়ের মত মনে হলো।
           "এই তো মেখলা এসে গেছে, তোমার পিমি কই?"..পরদার আড়াল থেকে বেড়িয়ে আসে শ্রুতি একটু হাসে সবার দিকে তাকিয়ে। স্বপ্নিলের গা ঘেঁষে বসে আছে একজন, চিনতে পারেনা ও।
" পিমি এই আমার ছোট মামু,মায়ের পোষ‍্যপুত্র। এখনও আমার আদরে ভাগ বসায়।"
           স্বপ্নিলের কথা শুনে সবাই হেসে ওঠে,খুব প্রাণবন্ত ছেলেটা মেখলার সাথে মানাবে ভালো।
              " নমস্কার আমি কল্লোল,মনে হয় আমি আপনাকে চিনি।"
       মনে একটা অদ্ভুত দোলা লাগে শ্রুতির ইউনিভার্সিটির কল্লোলের সাথে মেলাতে চেষ্টা করে ওনাকে কিন্তু ঠিক মেলাতে পারেনা।
         তবে অনেক বছর বাদে আবার পুরোনো কথাটাই বললো কল্লোল," জামাইবাবুর কাছে ভিডিও দেখে একেবারেই চিনে ফেলেছিলাম।"
        পরেরটুকু বলে দেয় স্বপ্নিল," তারপর থেকেই মামু সবসময় ইউটিউব খুলে বসে থাকে।"
          মেখলাটা মহা পাজি তো কেমন হি হি করে হাসছে। ইশ্ বড় লজ্জা লাগে শ্রুতির।
                  " আমি শর্তটা দিয়ে গেলাম একটু ভেবে দেখবেন। এবার একেবারে দায়মুক্ত হয়ে একদম সোজা সুইজারল্যান্ডে চলে যাবো গিন্নিকে নিয়ে হানিমুনে।"
          ...." পিমি হ‍্যাঁ করে দেনা রে মামু এখন আর গরীব না। শুধু তুই আছিস ভাগ‍্যে বলে বোধহয় এখনও আইবুড়ো।"
         একটা আননোন নম্বর থেকে মেসেজ আসে শ্রুতির মোবাইলে.."এখনও খুব ইচ্ছে একটা দিন শুধু গান শুনবো কোন এক নিরিবিলিতে বসে।"
                  খুব বেশি দেরি কেউই করতে চায়না তাই আসছে আষাঢ় মাস মন তাই বলছে কি জানি কি হয়। এক আষাঢ়ের সন্ধ‍্যায় পাশাপাশি বসে সাজছে মেখলা আর শ্রুতি দুজনেই পা রাখবে একসাথে নতুন জীবনে। তার মধ‍্যেই মেখলা আয়না দেখে লাফিয়ে পিমির কাছে এলো। " ওরে পিমি আমার চেয়ে যে তোকেই বেশি সুন্দর লাগছে। সবাই তোকেই দেখবে।"
       কথাটা বলতে বলতে চোখের কোলটা ভিজে যায় মেখলার। পিমিকে নিয়ে একসাথে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছে উফ্ কি আনন্দ হচ্ছে।
              একসাথে সম্প্রদান হলো বাড়ির দুই মেয়ের। বড়দাই শ্রুতিকে সম্প্রদান করলো কল্লোলের হাতে আর মেখলাকে ওর ছোটকা।
                ..." শোন পিমিকে নিয়ে একসাথে শ্বশুরবাড়ি এসেছো বলে ভেবোনা একসাথে হানিমুনেও যাবে। আমরা যাচ্ছি উটি,মামু যাচ্ছে সিমলা আর বাবা যাচ্ছে ইউরোপ ট্রিপে। মামুর অনেকদিনের ইচ্ছে পিমির চোখের দিকে তাকিয়ে রাত জাগবে আমি নেই এইসবে।"
                ....ফুলের মুকুটে জড়ানো শ্রুতির কানে মেখলা বলে," মামু তোকে খুব ভালোবাসবে দেখিস পিমি।"বক্সে তখন গান বাজছে..' তুমি এলে অনেকদিনের পরে তাই বৃষ্টি এলো।'
সমাপ্ত:-
  
       
            

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...