#মুক্তি#
রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
"অনেকগুলো মেয়ের খোঁজ এসেছে,তুই যদি একটু দেখতিস বাবু। আমরা তো ভেবেছি সামনের অঘ্রাণেই বিয়েটা দিয়ে দেবো।"
.." মা আগে তোমরা সিলেক্ট করো তারপর যেটা ভালো লাগবে বোলো তবে এডুকেটেড হলেই হবে আমার ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার দরকার নেই। আর ঐ কথাটা মনে আছে তো? ওটা আগেই বলে নিয়ো।"
কথাগুলো বলেই অঙ্কিত শোয়ার ঘরে চলে যায়,সকাল সকাল না ঘুমোলে কাল ট্রেন ধরা সমস্যা হয়ে যাবে।
রান্নাঘরটা গুছিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়ায় লতা,একটু নিঃশ্বাস নেয়। ওর লাগানো গাছগুলো নিশ্চিন্তে বোধহয় ঘুমোচ্ছে। এক ঝলক তাজা হাওয়ার আদর মুখে মেখে সারাদিনের পরিশ্রমে ক্লান্ত মন আর মুখটা হাসতে চায়। ওকেও শুয়ে পড়তে হবে কাল ভোরে ছেলের সাথে ওকেও ভোরে উঠে সব গুছিয়ে চাকরিতে যেতে হবে।
অঙ্কিত বিয়ে করতে রাজি হয়েছে এখন। যদিও প্রথমদিকে খুবই আপত্তি ছিলো ইমনের সাথে ব্রেকআপের পর। ওদের সম্পর্কটা নিয়ে আগাগোড়াই লতার দুঃশ্চিন্তা ছিলো। ইমন লতার ছোটবেলার বন্ধু সুধার মেয়ে। ছেলেমেয়ে দুটোর প্রেম আর ব্রেকআপে ওদের বন্ধুত্বটা নষ্টই হয়ে গেলো। শুধু মাঝখানে একটু ইগোর লড়াইয়ে ভাঙলো সম্পর্ক। ইমন যখন ডাক্তারিতে চান্স পেলো অঙ্কিতের মনে হলো ও বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ছে পাত্তা তেমন দিচ্ছেনা ওকে। হয়ত মাঝখানে সন্দেহও ছিলো। ডিসট্যান্ট রিলেশনশিপ আর টিকলোনা। এখন ছেলের একটাই বায়না পাত্রী চাকরি করলে চলবেনা।
এতে নাকি সন্তানরা খুব কষ্ট পায়।
ছেলের কথাগুলো শুনে চুপ করে যায় লতা। অনেকদিনই নানাভাবে অভিযোগ শুনেছে প্রথমে শ্বশুরবাড়িতে শ্বশুরের কাছে আর আত্মীয়স্বজনের কাছে,তারপর ছেলের কাছে। ও চাকরি করাতে ছেলেকে তেমন যত্নে মানুষ করতে পারেনি। মা সকালে উঠে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বেড়িয়ে যাওয়াতে তেমন করে ব্রেকফাস্টের অভ্যেসই নাকি হয়নি ওর। শাশুড়ি না থাকলেও অনেক কথা শুনেছে শ্বশুরের কাছে।ছোটবেলায় ঘুম থেকে উঠেই ছেলে দেখতো মা নেই। এ ঘর ও ঘর ঘুরতো মায়ের খোঁজে। যে সময়টা মায়ের আদর পাবার কথা সেই সময়টা কাজের লোকের কাছেই কাটিয়েছে।স্কুলের টিফিনে সেই রান্নার মাসির বানানো রুটি। যদিও লতা চেষ্টা করত কখনও চাউমিন বা ডিম পাউরুটি বানিয়ে দিতে ভোরবেলাতেই উঠে কিন্তু তাও শুনেছে ঐ ঠান্ডা খাবার ভালো লাগেনা।ছেলের কথা শুনে মন খারাপ হত লতার,চুপ করে যেত। সত্যিই তখন চাকরিটা ভীষণ প্রয়োজন কিন্তু ছোট বাচ্চাকে বাড়িতে রেখে যেতে একএক দিন চোখে জল আসত লতার ওর কান্না শুনে। তখন মোবাইল ফোনও ছিলোনা যে খবর নেবে।
সংসারকে শ্রম,অর্থ,শরীর,মন সবটুকু দিয়েও একটা সময় অভিযোগ ছাড়া আর আর কিছুই ফেরত পায়নি। সংসারকে সময় দিতে আলমারিতে পরে থেকেছে কত পাট না ভাঙা শাড়ি।ন্যাতা শাড়ি অথবা সিন্থেটিক শাড়ি চটপট জড়িয়ে নিয়েছে গায়ে সংসারের কাজের জন্য কিছুটা সময় বাঁচাবে বলে। ভোরবেলা উঠে সবটুকু সেরে ছুটতে ছুটতে পৌঁছনো কাজের জায়গায়। সময়ের সাথে ছুটতে ছুটতে সেদিনের লতা আজ শাশুড়ি হবার বয়েসে আর ছোট্ট অঙ্কিত ইঞ্জিনিয়ার।
এক সময় যে চাকরিটা প্রয়োজন ছিলো এখন সেটা একফালি খোলা জানালা। আজ মনে হয় চাকরিটা না থাকলে হয়ত এই স্বাবলম্বী জীবনের স্বাদটাই পেতনা। সংসারের মানুষদের সুখী করা বোধহয় এ জীবনে শুধু ওর কেন অনেকেরই সম্ভব হয়না। কারণ সংসার সব সময়ই বলে'গিভ্ মি মোর'।
এখনও লতা ছুটছে তবে এখন কিছুটা মুক্তির শ্বাস ফেলতে পারে সব কিছু অত গায়ে মাখেনা। সয়ে নিয়েছে অনেক কিছু ভালো থাকার দায়ে।
মেয়েটাকে দেখতে গিয়ে লতা জেনেছিলো এমএসসি দেবে। একটু সিরিয়াস টাইপের,খুব একটা সাজগোজ করেনা এই বয়েসী মেয়েদের মত। অবশ্য একদম শহরের মেয়ে নয় তাই হয়ত।নিজে চাকরি করে তাই লতার কেমন যেন গলায় আটকেছিলো বলতে আমাদের শিক্ষিত মেয়ে দরকার কিন্তু চাকরি করা নয়,তবুও বলেছিলো। কে জানে মোটা মাইনের ইঞ্জিনিয়ার পাত্র পেয়ে বর্তে গিয়ে মেয়ের বাবাই বলে উঠেছিলো," না না অত চাকরি দিয়ে কি হবে,ওর মাও তো সারাজীবন ঘর সামলালো তাই তো আমার দুই মেয়েই পড়াশোনায় ভালো। ছোটটা তো ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। আমি আর কতটুকু দেখেছি।"
মেয়ের বাবার খুবই উৎসাহ যেন এখনই বিয়েটা হয়ে যাক। লতাই বললো," পরীক্ষাটা হয়ে যাক তারপরেই হবে বিয়ে।"এক্ষেত্রে আর কেউ আপত্তি করেনা এমনকি ছেলের বাবা মেয়ের বাবা আর ছেলে কেউই নয়। শুধু এক টুকরো হাসি ফুটলো অপর্ণার মুখে।
বিয়েটা বেশ ঘটা করেই ওর পরীক্ষা শেষের দিন পনেরোর মধ্যেই হয়ে গেলো। এর মাঝে অঙ্কিত বেশ কয়েকবার দেখা করেছে ওর সাথে। ইমনের মত অপর্ণা বলিয়ে কইয়ে স্মার্ট নয়,ডাক্তার না হলেও শিক্ষিত। কথায় কথায় ডাক্তার বৌয়ের প্রায়োরিটি হয়ত ও নিতেও পারতনা। মাকে তো দেখেছে,বেশ ঝাঁঝ থাকে চাকরি করা মেয়েদের। তাই অপর্ণার মত সাদা পুতুলই ভালো। ঘরে থাকবে সংসার করবে ভবিষ্যতে ওর বাচ্চাকে অন্তত সেই দিনগুলো দেখতে হবেনা যেটা ও দেখেছে। মা বাবা বাড়িতে নেই,পুলকার আসেনি এমন যে কত হয়েছে। তবে অপর্ণা একদমই সাজেনা,আরেকটু ফিটফাট হলে ভালো হত তবে অনার্স এমএসসি তাও আবার অঙ্কে। ইমনের চেয়ে কম কি?
" অপর্ণা এত শাড়ি পেলে বিয়েতে পরোনা কেন? একটু সেজেগুজে থাকো,অঙ্কিতের ভালো লাগবে।"
"পরি তো মা,আমার সাজতে খুব একটা ভালো লাগেনা। এই তো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরছি।"
" শালোয়ার কামিজ পরলেই তো পারো। আমরা তো বারণ করিনি। আচ্ছা আমি কয়েকটা কিনে দেবো।"
" আমি আনবো মা ঐ বাড়িতে আছে অনেক।"..অপর্ণা সাথে করে এনেছিলো কিছু শালোয়ার কামিজ তবে লতার পছন্দ হয়নি,কেমন যেন পুরোনো ডিজাইনের। আর এনেছিলো একটা ঢাউস বাক্স। " কি আছে ওতে? রাখো রাখো তুমি টানাটানি কোরনা। অঙ্কিত তুলে দেবে।"
অপর্ণা নিজেই হিমসিম খেয়ে বাক্স তুলেছিলো,বিরক্ত হয়েছিলো লতা ছেলের আচরণ দেখে। পরে বুঝেছিলো ছেলের বিরক্তির কারণ। অপর্ণার বাক্স ভর্তি ছিলো ওর মোটামোটা বই আর নোটস। অপর্ণাকে কিছুদিন মায়ের কাছে রেখে অঙ্কিত চলে গিয়েছিলো চাকরির জায়গায়,কোয়ার্টারটা ঠিকঠাক করে নিয়ে যাবে।
অপর্ণা শান্ত কিন্তু কাজের নয় খুবই স্লো। লতা বুঝেছে পড়াশোনা করতে করতেই বিয়ে তাই কাজ তেমন শেখেনি। আর ওর কাজ করতে বোধহয় ভালোও লাগেনা। একটু সাহায্য পেলে ওর উপকার হত,তবুও সময়ে শিখবে এটাই ভাবে লতা। সংসার তো কাউকেই রেহাই দেয়না ঠিক শিখিয়ে নেবে। তবে ছেলের বৌয়ের ঘরে বেশ রাত পর্যন্ত আলো জ্বলে তাই দেখে একটু অসন্তুষ্ট হয়েছে অঙ্কিতের বাবা।" বৌমাকে বোলো কলকাতা শহরে ইলেকট্রিক বিলের চার্জটা অনেক বেশি। এত রাত জেগে ফেসবুক ছাড়া আর কিই বা করে! দরজা বন্ধ রাখে কিছু বলাও যায়না।"
সত্যিই তো ঘড়িটা দেখে লতা প্রায় দুটো বাজে এখনও ঘরে আলো জ্বলছে। দরজার কাছে এসে আলতো হাত ছোঁয়ায় দরজায়,কথা বলার আওয়াজ আসে ভেতর থেকে। তবে ওর হাতের ছোঁয়ায় ভেজানো দরজা খুলে যেতেই আশ্চর্য হয়ে যায় লতা,খাটের ওপর উবু হয়ে বসে সারা খাটে বই খাতা ছড়িয়ে আপন খেয়ালে বিড়বিড় করে কথা বলে খসখস করে খাতায় লিখে চলেছে অপর্ণা। লতা নিঃশব্দে পেছনে এসে দাঁড়ায়, একমনে বসে অঙ্ক করছে মেয়েটা। মেয়েটা কি পাগল নাকি!
লতাকে দেখতে পেয়ে চমকে ওঠে অপর্ণা। তাড়াতাড়ি বই গোছাতে থাকে। ওকে ঘুমোতে বলে ঘরে চলে যায় লতা আর কিছু বলেনা। শুধু রাতের অন্ধকারে জানতে পারলো বিয়ের জন্য আপোষ করা একটা মেয়ের আসল ভালোবাসা কোনটা। তাই হয়ত ঐ ঢাউস ব্যাগটা টানতে টানতে এনেছিলো সেদিন।
অপর্ণা অঙ্কিতের সাথে চলে গেছে অনেকদিন,ওর বইগুলো এই বাড়িতেই রয়ে গেছে। লতা মাঝে মাঝে ধুলো ঝেড়ে রাখে। বলেছিলো নিয়ে যেতে,কেন নেয়নি তাও জানে।
নিজের ভালোবাসা ছেড়ে কেমন আছে মেয়েটা কেমন কে জানে?কিছুদিন বাদেই খবর পায় মা হতে চলেছে অপর্ণা। খুবই খুশির খবর,তবে লতার মনে হলো বড় তাড়াতাড়ি হলো সব। সবেই তো ছয়মাস হলো বিয়ের।
মা হয়েছে অপর্ণা,নাতি এলো ওদের ঘরে। সবাই খুশি। তবে ওরা বোঝে মেয়েটা বাচ্চাটাকে সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে,তাই যতটা সম্ভব চেষ্টা করে সাহায্য করতে। মাসছয়েক এভাবেই কেটে যায় বাপেরবাড়ি শ্বশুরবাড়ি করে অপর্ণার।
" বৌমাকে ডাকো,ছেলেটা তো অনেকক্ষণ ধরে নিচে আছে মনে হয় খিদে পেয়েছে।".অপর্ণাকে খুঁজতে দোতলায় উঠে লতা দেখে পরম আদরে বইগুলোতে হাত বুলিয়ে ওগুলো গোছাচ্ছে। " আমি ওগুলো যত্নেই রেখেছি,তুমি যাও ছেলেকে নাও এবার। ওর একবছর হলে চেষ্টা করো একটা চাকরির বরং।মুখটা শুকিয়ে যায় অপর্ণার,"আপনার ছেলে খুব রাগ করবে মা,তারপর বুবাই এখন খুব ছোট ওকে কে দেখবে?"..হাসে লতা ঠিক মানুষ হয়ে যাবে,তোমার যদি ইচ্ছে থাকলেই হবে।"
"আমার এত সাহস নেই মা,অশান্তিকে ভয় পাই।"
"ভেবে দেখো,আর আমরা তো আছিই।"
বৌমাকে বললেও ছেলেকে বলতে সাহস পায়না লতা হয়ত অশান্তির ভয় ও নিজেও পায়। তবুও অপরাধবোধ হয় খুব একটা মেয়ের কাছ থেকে ভালোবাসা কেড়ে নেওয়ার জন্য। লতা এ যুগের শাশুড়ি,কেন যেন নিজের জীবনের প্রতিফলন বৌমার জীবনে হোক চায়না। শুধু আশ্চর্য হয় ছেলের মানসিকতা দেখে। কি কম রেখেছিলো ছেলেকে মানুষ করতে যে চাকরি করা মেয়ে দেখতে পারেনা?
বুবাই দেখতে দেখতে প্রায় দেড়বছরে, কুটুর কুটুর করে কথা বলে বাড়ি জমিয়ে রাখে। নাতির টানে লতা আর ওর বর প্রায়ই যায় ছেলের কাছে। সেবার যেতেই অপর্ণা হাসি হাসি মুখে বললো," মা এবার কলকাতা গেলে কয়েকটা বই এনে একটু পড়াশোনা করবো। ওকে অনেক করে রাজি করিয়েছি।"
শুনে অবাক হয়ে যায় লতা,অঙ্কিত মত দিয়েছে! তবে সেই মত যে কতটা মিথ্যে ছিলো তা দুমাস বাদেই জানতে পারে যখন ছেলেই ফোনে বলে," মা এবার পুজোতে আর বাড়ি যাওয়া হবেনা। তোমরা বরং মাস খানেক এখানে থেকে যাও।".." কেন রে কি হলো আবার?" জানতে পারে আবার মা হতে চলেছে অপর্ণা। লতা বিশেষ কিছু বলেনা,শুধু বলে," অপর্ণা খুশি তো? ও সামলাতে পারবে তো?".." বুবাইয়ের একটা সঙ্গী দরকার,ডাক্তার বললো গ্যাপটা ঠিকই হবে সমস্যা নেই।" বৌমাকে ফোন করে লতা জানতে পারে কদিন বিছানা থেকে মাথা তুলতেই পারছেনা,আর কিছু জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলোনা লতার। যদিও খুব ইচ্ছে করছিলো জানতে নিজের ইচ্ছাটাকে মেরে ফেলে বরের দেওয়া সোনার শিকল পায়ে কেমন আছে অপর্ণা?
অপর্ণার বইগুলো বন্ধ রইলো কাঁচের দেওয়াল আলমারিতে,অঙ্ক পাগলী অপর্ণা এখন ছেলে মেয়ে দুটোকে সামলাতে হিমসিম খায়। একটুও সময় পায়না ওর ভালোবাসাকে যত্ন করার। ওর বাবা মা এসে মেয়ের সুখ দেখে খুশি হন। " সত্যি বেয়ান মেয়েটা আমার সব পেয়ে সম্পূর্ণ সুখী। এমন বর শ্বশুরবাড়ি আর ছেলের কোলে মেয়ে কজনের হয়?জামাই তো খুব খুশি।"
ইমনকে মাঝে মাঝে ফেসবুকে দেখে অঙ্কিত,হাজার হোক প্রথম ভালোবাসা তো তাই সহজে বোধহয় ভোলা যায়না। গলায় স্টেথো ঝুলিয়ে কায়দা মারে,এম ডি করছে নাকি। আরে মাথার চুল পেকে যাবে বড় ডাক্তার হতে। তারপর কি হবে সেই তো পাবলিকের প্যাদানি খাবি। হুঁ যতসব ফালতু ইগো,কোথায় ঘর সংসার করবে তা না ক্যারিয়ার গড়ছে। ছেলেকে আর মেয়েকে ঘাড়ে পিঠে নিয়ে অপর্ণাকে জড়িয়ে ধরে অঙ্কিত এখন সাকসেসফুল হাবি,ফাদার,বাবার সুযোগ্য ছেলে সবটাই।
মাঝে কেটে গেছে তিনটে বছর বুবাই স্কুলে যাচ্ছে,রিতিও যাবে স্কুলে।সেবার ওদের কোয়ার্টারে গিয়ে অপর্ণাকে দেখে লতা বলে ওঠে," তুমি কি একটুও পরিপাটি থাকতে শিখলেনা এখনও? বুবাইয়ের বন্ধুর মায়েদের দেখেও তো শিখতে পারো। আমি কতগুলো ড্রেস আর শাড়ি কিনে দিলাম সেগুলো কই?".." সব আছে মা আলমারিতে আমার সময় হয়না পরার,দুটো যা দুষ্টু হয়েছে!"..." মা ওর ইচ্ছেই নেই একটু সেজেগুজে থাকার তুমি বলে কি হবে? আমারই বলতে বলতে বিরক্ত লাগে।"
" সংসার মেয়েদের কাছে সব চায় জানো তো? তাই সাজও কিন্তু মনকে ভালো রাখার জন্য জরুরী।".."কাকে বলছো এসব কথা মা? তার থেকে দুটো অঙ্ক করতে দাও করে দেবে। এই দেখো।"..একতাড়া কাগজ সামনে আনে অঙ্কিত,"পুরোনো পেপার খুঁজতে গিয়ে দেখি এখানে অঙ্ক করেছে। কখন করে কে জানে?"
কিছু না বললেও লতা জানে ভালোবাসার কাজের জন্য ও নিজেও তো লুকিয়ে সময় বের করে। আজকাল পছন্দের কাজ না করতে পারলে রাগও হয়।
লতা সেবার মনটা আনমনা নিয়েই ফিরে আসে। অপর্ণা নাকি আজকাল খিটখিটে হয়ে গেছে শুনলো। অঙ্কিতও সময় পেলেই ইন্টারনেট খুলে বসে। মাঝে কেটে গেছে আরও একটা বছর। হঠাৎই একদিন অঙ্কিতের অসন্তোষ ভরা রাগী গলাটা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো লতার। " আচ্ছা মা তোমার বৌমার মাথায় চাকরির ভূত কোথা থেকে এলো? এত জেদ তো কখনও দেখিনি ওর?ছেলেমেয়ের থেকে চাকরি বড় হলো?এবার কি বাচ্চাদুটো ক্রেশে থাকবে?
তুমি ওকে বারণ করবে।"
" আমি ওকে বারণ করবোনা বাবু,আর তুইও বাধা দিসনা,মেনে আর মানিয়ে নিতে শেখ। মানিয়ে নিয়েছে মেয়েটা অনেক। এবার ওর পাশে থাক।"..ততক্ষণে ওপাশে ফোনটা কেটে দিয়েছে ছেলে।
সংসারটাকে টিকিয়ে অপর্ণা শেষ পর্যন্ত পেরেছে ভালোবাসার ছোঁয়া পেতে। ভালো লাগার একটুকরো জানালাটা খুলে দিতে। যদিও অঙ্কিত প্রায় পনেরো দিন মায়ের সাথে ভালো করে কথা বলেনি। লতাও ঢোকেনি ওদের মধ্যে ও জানে দুই সন্তানের মা অপর্ণার পায়ের তলার মাটি কিছুটা শক্ত এখন তাই ওর ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব ওরই।
অঙ্কিত এখন কিছুটা স্বাভাবিক, গতকাল বিকেলেই এসেছে লতারা দুজনে ছেলের কাছে ,অপর্ণা স্কুলে যাবে।আজ ওর চাকরির প্রথম দিন। হেলমেটটা মাথায় দিয়ে স্কুটিতে স্টার্ট দেয় অপর্ণা,রিতিটা বায়না করছে। ওর চোখদুটো ছলছল করে। ওর পিঠে হাত রাখে লতা," আর না,এবার দেরি হয়ে যাবে। বাড়ির সুইচগুলো অফ করে এই কয়েক ঘন্টা বাইরের আলো জ্বালিয়ে রেখো। সংসার নিজের নিয়মে চলবে,কারোর জন্য কিছু পড়ে থাকেনা। যাও নিজের ভালোবাসাকে একটু যত্ন করে আগলে রেখো।"
আকাশের রঙটা গাঢ় নীল।হাল্কা সাদা মেঘ ভেসে যাচ্ছে। আকাশের দিকে চেয়ে আজ লতার গাইতে ইচ্ছে হলো...' এই আকাশে আমার মুক্তি আলোয় আলোয়।'
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment