#আধফালি_চাঁদ#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
রিমোটটা হাতে নিয়ে বোতাম টিপতে থাকেন পদ্মা মাসিমা...আরে ধ্যাৎ এই বুড়োর জ্বালাতে একটু শান্তিতে টিভি দেখার উপায় নেই রিমোটটা হাতে পেলেই হলো গ্যালপিং ট্রেনের মতো চালাতেই থাকে ইস্টিশান এলেও থামেনা।ধুত্তোরি,একটু বাংলা সিরিয়াল দেখে সময়টা বেশ কাটে তা নয় দিয়েছে চ্যানেলটা ঘুরিয়ে।
ওমা! টিভি খুলেই রাগে মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে.. ও ঐ জন্যই রাতে কর্তার ঘুম আসেনা গরম লাগে। মোবাইলে খুটুর খুটুর আর টিভি নিয়ে ঘুটুর মুটুর করে। ইশ্ এতো সব প্রায় আধা ল্যাংটো মেয়ে বালিতে শুয়ে আছে সরু সরু কোমর জামাকাপড় প্রায় নেই বললেই চলে।অনেকদিন বাজারে তেমনভাবে হাঁটু ব্যথার জন্য যেতে পারেননি।আর কলকাতায় তো কতদিনই যাওয়া হয়নি।মনে হয় এই সব ছেঁড়া ভেতরের জামা এখন ফ্যাশন হয়েছে। নিজের কোমরে হাত বুলিয়ে দেখেন মাসিমা..ওহ্ কি ব্যথা বাবা।এখন তো মনে হয় সারা শরীরে বেতো গাড়ি চলছে সব জায়গাতে টনটন আর কটকট।সেই কবে মা বাবা সগ্গে গেছেন তবুও উঠতে বসতে উরি বাবা,ওরে মা করে চলেছেন। এক কালে এমন ছিপছিপে কোমর তারও ছিলো আর বুড়োটার ছিলো একজোড়া সরু ফিনফিনে গোঁফ।কোমরে গোঁফের সুড়সুড়ি ভাবতেই মনটা কেমন যেন আগলভাঙা হৃদয়ের মত টনটন করতে থাকে। চিরদিন কি সমান যায়? তাই পদ্মার বানভাসি শরীরেও এখন ভাঁটার টান। রক্কে করো রগুবীর.. এই ডায়ালগটা আজকাল নিজের অজান্তেই মুখ থেকে বেড়িয়ে আসে।
সন্ধ্যেবেলা বুড়োটা হাঁটতে বেরোয়,ফূর্তিতে গড়ের মাঠ একেবারে। পার্কের এক কোণে অন্য বুড়োদের সাথে জমাটি আড্ডা দিয়ে চা খেয়ে ফেরে। ততক্ষণে দুতিনটে সিরিয়াল শেষ হয়ে যায় প্রায়।আজ একেই চ্যানেল পাল্টে গেছে অনেক করে পেয়েছেন,তারপর এখনো বাড়ি ফেরেনি।আজ আসুক মজা দেখাতে হবে।চ্যানেল পাল্টে সরু কোমরের মেয়ে দেখা বের করে দেবেন।
সিরিয়ালে মন দেন মাসিমা,এমা সব সিরিয়ালে এই সব কি লাল লাল বেলুন আর গোলাপের ছড়াছড়ি।নায়িকাদের গালেও গোলাপের ছোঁওয়া। কি হচ্ছে এই সব? ভালো করে চশমাটা নাকের ওপরে ধরেন। হ্যাঁ প্রেম সপ্তাহ পালন।সেকি প্রেমের আবার হপ্তা? কই বুড়োটা তো কিছুই বলেনি..ভাগ্যিস সিরিয়াল দেখেন তাই জানতে পারলেন।
পদ্মামাসিমা আর আশুমেসোর কোন ছেলেপুলে নেই, মানে হয়নি।সারাজীবন দুজনেই দুজনের ভালোবাসায় ছোট্ট বাসায় কাটিয়ে দিলেন। একটা সময় চোখে হারাতেন মেসোমশাই মাসিকে তা ভাবলে এখনো কেমন যেন বুকের ভেতরটা টনটন করে।তবে ইদানীং খুব বন্ধুদের গ্ৰুপে রসেবশে আছে বুড়োটা।ওখানে কি করো বললেই হাসির দোকান থেকে সবকটা দাঁত বেরিয়ে উঁকি মারতে থাকে..." ও অনেক কথা,কত কথা হয়।রাজনীতি থেকে দুর্নীতি।চপ থেকে ঢপ,বেগুনি থেকে গৃহিণী। সিনেমা থেকে প্রতিমা,টিভি থেকে ছবি সবই।"
হাসি আর ধরেনা মুখে...আসুক আজ এত খবর রাখে প্রেম সপ্তাহের কথা বললোনা তো। লুকিয়ে লুকিয়ে টিভিতে নিশ্চয় দেখছিলো প্রেম সপ্তাহ আর তাই নিয়ে ঐ বুড়োদের আড্ডাতে আলোচনা..ভাবতেই আবার রাগ হয়ে যায়।
ঠোঙায় বেগুনি আর মুড়িমাখা নিয়ে হাজির আশুমেসো। " কই গো..কোথায় গেলে?গরম গরম বেগুনি এই তুলে নিয়ে এলাম কড়া থেকে একদম সোজা তোমার জন্য।"
" সময় হলো বাড়ি ফেরার? এত দেরি কেন শুনি।অন্যদিন তো রসকলি সিরিয়ালের আগেই চলে আসো। পার্কে আর কারা ছিলো শুনি?"
' আরে আজ একটু গানবাজনা হচ্ছিলো ঐ মানে রবীন্দ্রনাথের গান।বসন্তের বাতাসে বেশ লাগছিলো কিন্তু।"
এবার ফেটে পড়েন মাসিমা,"বুঝেছি প্রেমহপ্তা পালন হচ্ছিলো তাইনা? ওখানে নিশ্চয় শিবাণী,ইলা দিদিমণিও ছিলো। আমায় ফাঁকি দিয়ে বাইরে প্রেমসপ্তাহ পালন! এও ছিলো কপালে?ও মাগো।"
"পদ্মা তুমি সেই ছেলেমানুষই রয়ে গেলে তাইতো তোমাকে এত ভালোবাসি।ওটা টিভিতে প্রেম হপ্তা চলবে একমাস ধরে। ভ্যালেনটাইন ডে তো চলে গেছে কালই। টিভিতে তো সবই পরে পরে আসে দুগ্গাপুজো,ষষ্ঠী,ভাইফোঁটা,দেওয়ালি সবই।"
" কাল ছিলো? তাই তুমি কাল টিভিতে ঐসব ছেঁড়া ভেতরের জামা পরা মেয়েদের দেখছিলে? বুড়ো বয়েসে ভীমরতি তাইনা? আমাকে প্রেমের কথা না বলে..ও মাগো।"
" ও পদ্মা ওগুলো ছেঁড়া জামা নয়।ওগুলো বিকিনি গো। চলোনা আমাদের পঞ্চাশ বছরের বিয়ের তারিখে ঐ রকম কোন সমুদ্রের পাড়ে যাই যেখানে তুমি ঐ রকম কোন..."
লজ্জায় মুখ ঢাকেন পদ্মামাসিমা জাস্ট ফিদা হয়ে যান আশুমেসো। পানপাতায় মুখ ঢেকে পদ্মার সাথে সেই প্রথম শুভদৃষ্টির কথা মনে পড়ে যায়। আজ মনটা বসন্তের বাতাসে উড়ু উড়ু। পদ্মার কানের কাছে মুখটা এনে বলে ফেলেন....
হৃদয় আমার আধফালি চাঁদ,
ধরেছে গ্যাস আর অম্বল।
তুমিই আমার লাল গোলাপ
আমিই তোমার কম্বল।
লজ্জায় জিভ কাটেন পদ্মামাসিমা... "এ কেমন প্রেমের কবিতা?কম্বল আবার কি কথা!"
"আরে ওটাই তো আসল কথা। হৃদয় এখন আধফালি চাঁদ মানে পেস মেকার বসানো। গ্যাস অম্বলও ধরেছে। চিরকালই তো ভালোবাসার কম্বল দিয়ে তোমায় ওম দিয়ে গেলাম। এখনো তো আমার গায়ে ঠ্যাঙটি না তুলে ঘুমোতে পারোনা।প্রেম হপ্তা আজকালকার ছেলেমেয়েদের লাগে.. ওরা আমোদ আহ্লাদ করে প্রেমকে শক্তপোক্ত করে। আমাদের প্রেম তো পঞ্চাশ বছরে ইতিহাস হয়ে গেছে।''
এককালে পদ্মামাসিকে আদর করে গোলাপ বলতেন আশুমেসো। আজও গোলাপের রক্তিমায় লাল হলো মাসিমার গাল ঝগড়া ভুলে।
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment