Skip to main content

দিশারী


#দিশারী#
রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

"পালিয়ে গেলো পরীক্ষার আগে?আশ্চর্য তো!ওর কি মাথাটা খারাপ হয়ে গেলো?সারাদিন তোদের শুধু প্রেমের গল্প তাইনা? এইটুকু সব মেয়ে নাক টিপলে দুধ বেরোয় তাদের সব পাকা পাকা হাবভাব।"
    স্কুলের এই দলটাকে একদম পছন্দ হত না সুনেত্রার কিন্তু কিছু করার নেই পাকা হলেও সব কাজেই এরা চলে আসে।ওদের দুষ্টুমি আর এনার্জি দুটোই বেশি তাই কিছু বলতেও পারেনা। তাছাড়া টুকটাক বকুনি বা বোঝানো ছাড়া আর কিই বা করতে পারে।ছোট ছোট মেয়েদের মধ‍্যেও ছোঁয়া লেগেছে বিজ্ঞাপনের, অনেকেরই রঙ করা চুল,হাতে বড় বড় নখ,সরু করা ভ্রূ।
       ঠিক মাধ‍্যমিকের আগেই পালিয়ে গেলো পিয়া,বুদ্ধি ছিলো মাথায় হয়ত চেষ্টা করলেই পাশও করে যেতো। অনেক বলেও ফোনের পর ফোন করেও কিছুতেই আ্যডমিট কার্ডটাও নিয়ে গেলোনা। মন খারাপ হলো ভীষণ সুনেত্রার। মাঝে মাঝেই এই রকম কত পিয়া হারিয়ে যায় স্কুল থেকে নিঃশব্দে।
             সুনেত্রার পরিচিত ক্লাসরুম,কাঠের চেয়ার আর ব্ল‍্যাকবোর্ডে প্রতিবছর আসে নতুন নতুন মুখ।কাউকে যত্নে শাসনে পার করে স্কুলের গন্ডী,আবার কেউ নিরুদ্দেশ হয়ে যায় মাঝ পথে।
                মাঝে কেটে গেছে বেশ কয়েকটা বছর। সুনেত্রার চোখে ভারী ফ্রেমের চশমা।মুখে অভিজ্ঞতার ছাপ চেহারায় স্থূলতা।খবরের কাগজ পড়তে গিয়ে চোখটা আটকে যায়। কুসংস্কারের শিকারে প্রাণ হারাতে বসেছিলো কয়েকটা শিশু হঠাৎই এক গৃহবধূ রুখে দাঁড়ানোতে অসম্মানিত হয় কিন্তু হাল ছাড়েনা এবং তারই চেষ্টায় বেঁচে যায় শিশুগুলো। নিজে বেশি পড়াশোনা না জানলেও প্রাণপণে চেষ্টা করেছে গ্ৰামে প্রচলিত ঝাড়ফুঁকের বিরুদ্ধে একাই রুখে দাঁড়াতে।
                   টিভিতেও খবরটা দেখে সুনেত্রা,কথা বলছে মেয়েটা।কত আর বয়েস হবে হয়ত কুড়িই পার হয়নি এর মধ‍্যেই কোলে একটা বাচ্চা মেয়ে। জোর গলায় বলছে," আমি বাধা দিয়েছি,ওরা ঝাড়ফুঁক করাচ্ছিলো তিনটে বাচ্চাকে ওঝা দিয়ে। ওদের তো ডাইরিয়া হয়েছে।কেউ শুনলোনা আমার কথা,বললো নজর লেগেছে ঝাড়লেই ঠিক হয়ে যাবে। মন্ত্র পড়া জলের নামে পুকুরের জল খাওয়াচ্ছিলো ওদের। চারিদিকে ধূপ ধুনোর ধোঁয়া।বাচ্চাগুলো নেতিয়ে পড়েছিলো। আমার শাশুড়ি আমাকে আটকে রেখেছিলো যাতে আমি না যাই সেখানে। আমি কোনরকমে জানলার ভাঙা শিক গলে পালিয়ে পুলিশে খবর দিই।"
সুনেত্রা চশমাটা আরেকবার মুছে মুখটা ভালো করে দেখতে চেষ্টা করে...পিয়া! হ‍্যাঁ একটা ক্লিষ্ট চেহারা কিন্তু চোখদুটো প্রাণবন্ত আর উজ্জ্বল।দুষ্টুমির বদলে সেখানে দুঃসাহসের ছাপ।
              অদ্ভুত এক আনন্দ হয় সুনেত্রার, মনে হয় কিছুটা হলেও শিক্ষা দিতে পেরেছে মেয়েটাকে হয়ত ওর শিক্ষা আর সাহসই বাঁচিয়ে দিলো বাচ্চাগুলোকে মৃত‍্যুর হাত থেকে। আমাদের পোড়া দেশে যেখানে এখনো টিভি সিরিয়ালে, সিনেমায় আর প্রকৃত জীবনে কুসংস্কারের ছবি প্রতিনিয়ত দেখা যায় সেখানে হয়ত ঘরে ঘরে দরকার এমন বৌ,মেয়ে বা মায়েদের যাদের বাস্তব বুদ্ধি আর শিক্ষা সমাজকে কুসংস্কার মুক্ত করে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
সমাপ্ত:-

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...