#গণেশের_হালখাতা#
রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
পয়লা বোশেখের আগে থেকেই লক্ষ্মী আর গণেশের প্ল্যান শুরু হয়ে যায় মর্ত্যলোকে যাবার।গণেশ আর লক্ষ্মী মোটামুটি লাকি সরস্বতী আর কার্তিক মাত্র বছরে একবার যাওয়ার সুযোগ পেলেও ওদেরকে ভক্তরা মাঝে মাঝেই ডাকে তাই না গিয়ে উপায় নেই। এবার মা ভীষণ কড়াকড়ি শুরু করেছে কি মুশকিলে যে পড়ছে! মায়ের কড়া হুকুম.."গণু এতো নোলা ভালো নয়,এবার মর্ত্যের অবস্থা খুব খারাপ একদম যাওয়ার চেষ্টা করবিনা।"
" কিন্তু মা ঐ অত বড় বড় লাড্ডু,জলভরা তালশাস সন্দেশ,তারপর মিষ্টি দই। ওখানের সব বড় বড় মিষ্টির দোকানের মিষ্টি।কবে থেকে খাবো বলে বসে আছি।"
মা দুগ্গা বলে " ওরে পেটুকরাম মিষ্টির দোকান এখন বন্ধ।"
গণেশকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে লক্ষ্মী," মা তোমার কাছে ভুল ইনফরমেশন মিষ্টির দোকান খোলা। তবে হ্যাঁ গণুর প্রিয় লাড্ডু বানাচ্ছে কিনা কে জানে?"
" আছে আছে মা লাড্ডুও আছে আমি দেখেছি,মানে খবর পেয়েছি।"
লক্ষ্মীরও খুব যাওয়ার ইচ্ছে ভাইয়ের সাথে। ঐ একটা দিনই তো কত সোনাদানা পরতে পারে,সবাই কত সাজগোজ করিয়ে সিংহাসনে বসায়। তারপর সাথে বর থাকেনা তাই দুই ভাইবোনে সকালে পুজো নিয়ে খেয়েদেয়ে একদম যা ইচ্ছে শপিং করে রাতে ফিরে আসে স্বর্গে। ছোট ভাইবোনেরা তো হাঁ করে বসে থাকে ওরা কখন আসবে আর সঙ্গে কি কি আনবে।
" লাড্ডু লাড্ডু করে মাথা খাবিনা একদম গণু গঙ্গাজলে তুলসীপাতা, নিমপাতা আর কপ্পুর দেওয়া আছে ঐ দিয়ে বার বার করে হাত ধুয়ে নে।যদিও এখনো ঐ ভাইরাস এখানে আসেনি। আর একদম যাবিনা এবার বন্ধ থাক হালখাতা।"
রাতে ঘুমিয়েও শান্তি হয়না গণেশের লক্ষ্মীকে চুপিচুপি ডাকে "ও দিদি অনেকেই বাড়িতে চুপচাপ হালখাতা সারছে মাঝরাত থেকেই আমার হোয়াটস আ্যপে মেসেজ ঢুকছে। যাবি নাকি? এমনিতেই ওদের ব্যবসা মন্দায় চলছে।তাই বারবার বলছে একটু কৃপা করো ঠাকুর। চলনা একবার যাই।"
" কিন্তু মা? মা যে বারণ করেছে।"
" পরে মাকে ঠিক ম্যানেজ করে নেবো।"
"ভাই আমার কিন্তু খুব ভয় লাগছে,মা যদি ত্রিশূল নিয়ে ছুটে যায় ওখানে। তারপর তো তোর ভুড়ি ফুটো করে দেবে একেবারে।"
গণেশ হো হো করে হাসে.." আরে না না,মা একদম মর্ত্যে যাবেনা।দেখলিনা বাসন্তী পুজোতে গেলোনা। গেলে তো আমরাও যেতাম। বাবা কত বললো অন্নপূর্ণা পুজোতে অন্ততঃ চলো একটা বেলার জন্য,বেশ কিছু রেশনের ব্যবস্থা হবে।তাও মানলোনা। আরে ভাই আমরা হাত ধুয়ে ধুয়ে পাগল হয়ে যাচ্ছি। আর মায়ের দশ হাত মিলে পঞ্চাশটা আঙুল,প্রত্যেকটা আঙুলের ভেতর পরিস্কার করা! তাহলে কি করবি?"
" একটা ভালো ড্রেস ঠিক করে নে।আমিও গুছিয়ে নিচ্ছি।"
" মাস্ক কোথায় পাবো রে? শুনেছি মাস্ক ছাড়া পৃথিবীতে রাস্তায় যেতে দিচ্ছেনা।"
" আরে রুমালও চলবে,নাহলে বাবার বাঘছালের থেকে একটা টুকরো কেটে মুখে বেঁধে নেবো।"
" এই সেরেছে! তুই তো একদম মরিয়া হয়ে উঠেছিস।"
ভোরের অন্ধকার থাকতেই দুই ভাইবোন বেরিয়ে যায় কৈলাশ ছেড়ে।প্যাঁচা আর ইঁদুরেরও মুখ বাঁধা। তখনো পৃথিবীর মানুষ ঘুমোচ্ছে। অন্য বছরে সবাই সাজুগুজু করে পুজোর জোগাড় করে,নতুন খাতা নিয়ে মন্দিরে যায়। এ কি অবস্থা চারদিকে! কুমোরটুলিতে মুখ ঢেকে সার দিয়ে পলিথিন ঢাকা মূর্তি বসে আছে!
শুনলো এবার নাকি বাড়িতেই ছোটখাটো করে পুজো হবে। যাকগে মিষ্টির বাক্স আর লাড্ডু পেলেই হলো।
বাইরে থেকে টুং টুং করে ঘন্টার আওয়াজ পেলো লক্ষ্মী আর গণেশ।কলিংবেল বাজালো পুরোহিত মশাই ওনার হাতের ছোট সিংহাসনে দুই ভাইবোন গুটিশুটি মেরে বসে। দোর খুলেই গৃহকর্তা বললো," ও ঠাকুরমশাই একটু দাঁড়ান" বলেই একটা উৎকট গন্ধ মেশানো হাত ধোয়ার মলম না না লোশন ওনার হাতে দিলো।গন্ধে গা গুলিয়ে উঠলো লক্ষ্মী গণেশের ওতে নাকি আ্যলকোহল মেশানো আছে।
অন্যবার গোলাপ জল আর অগরু কপ্পুর মেশানো জলের ছিটেতে ওদের শরীর গন্ধে ম ম করে এবার হঠাৎই বাড়ির গিন্নি বলে উঠলো.." ঠাকুর মশাই এক সেকেন্ড, আপনি তো ঠাকুরকে ঘরে আনবেন দাঁড়ান মূর্তিকে একটু স্যানিটাইজ করে নিন আগে।"
ওদের দেওয়া একটা উৎকট গন্ধের স্যানিটাইজার স্প্রে ঠাকুর মশাই ওদের গায়ে স্প্রে করে একদম হাত পা ধুয়ে সিংহাসন থেকে একমিটার দূরে বসলেন। ইশ্ মিষ্টি কোথায়! ছোট ছোট কয়েকটা গুলি সাজিয়ে রেখেছে।শক্ত চিনির ডেলা। ওগুলো খেলে উল্টে সুগার হবে।
বাড়ির গিন্নি বললো," কি কষ্টে যে সব জোগাড় করেছি! ওকেও তো বাজারে বারবার পাঠাতে পারছিনা।জীবাণু নাকি এখন বাতাসে ভাসছে একমিটার নয় তেরো ফুট দূরেও উড়ে যাচ্ছে জীবাণু। তারপর কতদিন দোকান বন্ধ। এবার তাই নমো নমো করে পুজো।"
একেই বিচ্ছিরি স্যানিটাইজার সারা গায়ে মেখে ওদের গা গুলোচ্ছে তারপর এই খাওয়ার মেনু।কি খাবে?আর কি নিয়ে যাবে সাথে?
হতচ্ছাড়া মিথ্যেবাদী মানুষগুলো এই বলছে জীবাণুর কথা,ওদিকে সব বাড়ির কর্তারা বারবার বাজারে যাচ্ছে বাড়িতে বসে ভালোমন্দ খাবে বলে। ফ্রীজ ঠাসা খাবারে, ফলে,আইসক্রীমে। চাল,ডাল,তেল আলু সব কিনে স্টক করেছে। আর বাড়িতে বসে ছক কষছে এবেলা কি খাবে আর ওবেলা কি খাবে? ঠাকুরের বেলা ঠনঠনে।
" ভাই এইজন্য মায়ের কথা শুনতে হয়। মা ঐজন্য বারবার বারণ করেছিলো আসতে। সব দেবতা এখন মর্ত্য ছেড়ে কৈলাশে মন্দির বন্ধ।তারমধ্যেই কেন যে এলাম লোভে লোভে।"
গণেশেরও এখন একটু টেনশন হয় কি মুখ নিয়ে ফিরবে স্বর্গে। নম নম করে পুজো সেরে পুরোহিত মশাই আবার বাড়িতে এসে ওদের স্যানিটাইজ করলেন,বাইরে থেকে এলো বলে।এদিকে ঘরে থেকেও শান্তি নেই ঠাকুরমশাই হাত দিয়েছেন ওদের গায়ে মালা পরিয়েছেন তাই বেদম স্যানিটাইজার স্প্রে করলো বাড়ির গিন্নিরা। দুপুরে সবাই যখন বাড়িতে পয়লা বোশেখ উপলক্ষে ভালোমন্দ খেলো লক্ষ্মী গণেশের তখন জুটলো ফল আর গুজিয়া,কোথাও ছোটছোট লাড্ডু। এদিকে লক্ষ্মীর শপিং হলোনা,একটাও গয়নার দোকান আর কাপড়ের দোকান খোলা নেই। সরস্বতী আর কাতুর খুব রাগ হবে ওদের খালি হাত দেখে।
অন্যবার দুই ভাইবোনের ফিরতে ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায় এবার সন্ধ্যে হতেই গুটিগুটি ইঁদুর আর প্যাঁচাকে নিয়ে রওনা দেয়। প্যাঁচাটা এর মধ্যেই কাশতে শুরু করেছে আর ই়দুরের স্যানিটাইজারে আ্যলার্জী তাই ওর হাঁচি হচ্ছে আর নাক দিয়ে জল পড়ছে। তাই ফিরতে বেশ অনেকটা সময় লেগে যায়। ভেবেছিলো মা শুয়ে পড়েছে। ঘরে ঢুকে পড়বে টুক করে তারপর সকালে যা হোক একটা কিছু বলে দেবে।আর বাবাকে নিয়ে অত চাপ নেই বাবা তো কখনই ঘুমিয়ে গেছে গাঁজা টেনে।
তখনও বাড়ির উঠোনে পা দেয়নি দেখে মা ত্রিশূল হাতে দাঁড়িয়ে ওদেরকে দেখেই হুঙ্কার দিয়ে ওঠে অসুরবধের মত..." গণু আর লক্ষ্মী তোদের বারণ করা সত্ত্বেও তোরা গেছিস পৃথিবীতে?এতো লোভ তোদের!পৃথিবী পাপে ভরে গেছে তাই মড়ক লেগেছে সেই পাপ সগ্গে এনেও ঢোকাবি এত লোভ তোদের!
নন্দী....বালতি ভরা জীবনদায়ী গোবরামৃত ঢাল ওদের ওপরে তারপর অলকানন্দায় স্নান করা দুটোকে। জামাই বলেছে একুশদিন লক্ষ্মীকে ঘরে নেবেনা। আমি এখান থেকে ছাব্বিশ ফুট দূরে ওদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করেছি। এখন কদিন সেল্ফ আইসোলেশনে থাকবে ওরা আর ঐ হতচ্ছাড়া ইঁদুর আর পেঁচাটাকে পাঠিয়ে দে পশু হসপিটালে।"
কাঁদো কাঁদো হয়ে গণেশ বলে"মা আমরা স্যানিটাইজ করেই এসেছি,আর কয়েক বোতল স্যানিটাইজার নিয়েও এসেছি।"
" ও তাইতো ভাবছি আমার বমি আসছে কেন?নন্দী ওগুলো ফেলে দে তোর কমোডে।যা বলছি তাই শোন,মায়ের কথার অবাধ্য হওয়া! এবার বোঝ মজা।"© কলমে রুমাশ্রী সাহা চৌধুরী
ভালো লাগলে নামসহ শেয়ার করবেন।
( শুধুমাত্র কাল্পনিক একটি লেখা কারো ধর্মীয় মতাদর্শকে অবমাননা করার জন্য নয়)
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment