#আঁচলের_তলায়#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
ঘরকুনো ছেলে কথাটা শুনেছেন? হ্যাঁ অনেকেই শুনেছেন তবে সেটা ব্যাঙ্গার্থে।মোটামুটি একটু বড় হলেই বন্ধুরা তাকে বলে আর কতদিন মায়ের আঁচলের তলায় থাকবি?ধুর তুই আবার একটা ব্যাটাছেলে নাকি?সারাক্ষণ ম্যা আর ম্যা, এই মা বকবে আর মা বারণ করবে।থাক তুই মায়ের কোলে বসে।
আরে পুরুষ মানুষ একদম শের কা মাফিক সে কেন এইসব শুনবে তাই একটু বড় হলেই সে একদম মায়ের আঁচলধরা বদনাম মুছতে ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়ে। কখনো আড্ডায়,কখনো সিনেমায় কখনো বা বাজারে অথবা পছন্দের জায়গায়।এখনকার মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত জেনারেশন মানে যারা এখনো মায়ের আঁচল ছেড়ে বৌয়ের আঁচলের তলায় ঢোকেনি তারা অবশ্য প্রয়োজন ছাড়া বাজারের পথে কম হাঁটে ..সবাই এক নয় তবে ব্যতিক্রমও আছে অনেক।
যাক সেসব কথা শাড়ি,সায়া,আঁচল এই সব শুনে অনেকেই রাগ করছেন।বড় নারীবাদী তো মহিলা।ছেলেরা ঘরে মুখ লুকিয়ে থাকবে নাকি,আর বাইরে মেয়েরা বেরোয়না কি? যত্তসব বাজে কথা,করোনায় আপনার মাথাটা গেছে।
সত্যিই মাথাটা গরম হয়ে যায় যখন দেখি একদল জনতা জমায়েত হয়ে আড্ডা দিচ্ছিলো বাড়িতে কারো আঁচল বা শাড়ির তলায় থাকবেনা বলে। তাদের পুলিশ জটলা করতে বারণ করলে পুলিশকে মেরে আহত করে দিচ্ছে,ভাঙছে পুলিশের গাড়ি। অথবা স্বাস্থ্যকর্মী ও ডাক্তাররা তাদের বোঝাতে গেলে অথবা নমুনা সংগ্ৰহ করতে গেলে গণপিটুনি দিয়ে তাদের মাথা ফাটানো বা ইটপাটকেল মারা হচ্ছে এলোপাথাড়ি ভাবে। অসহায় এই স্বাস্থ্যকর্মী আর ডাক্তারদের হাল্কা আকাশি রঙের পোশাকে মুখে মাস্ক পরা অবস্থায় জনতার এলোপাথাড়ি ইটবৃষ্টির মধ্যে অসহায় ভাবে দৌড়াতে দেখলাম রাস্তায়। এদের কাছে পুলিশের মত গুলি গোলা নেই যে কেউ ভয় পাবে।তাই অসহায় ভাবে রাস্তায় ছোটাছুটি করছেন। হয়ত আবার ফিরতে চাইছে মায়ের স্নেহের আঁচলের ছত্রছায়ায় অথবা স্ত্রীর নিবিড় বাহুবন্ধনে।
নিজের ভালো আর কবে বুঝবে এদেশের মানুষ। কখনো কাঁসর বাজাবে আবার কখনো ইঁট মারবে। খুব রাগ হয় যখন বাড়িতে লকডাউনে বন্দি কোন পুরুষ মানুষ তার বন্ধুকে ফোনে রসিয়ে বলে কি রে বৌয়ের আঁচলের তলায় ঢুকে আছিস নাকি? অথবা বৌয়ের শাড়ি কাচছিলি নাকি?ফোন ধরতে এত দেরি হলো? আমি ভাই সকাল থেকে দুবার বাজার ঘুরে এলাম। কি মুশকিল ভাই,এরা যে কি পেয়েছে! বাড়ি থেকে বেরোতেই দেবেনা।
যে শাড়ির আঁচল গরম সসপ্যানটা ধরে গরম জল এনে দেয় আপনাকে।চা জলখাবার এনে মুখের কাছে ধরে, পুরুষত্ব দেখাতে তাকে অপমান করার চেয়ে অনেক জরুরী বাড়িতে থাকা কারণ আপনি দেশের নাগরিক তাই আইনবিরুদ্ধ কোন কাজই আপনার করা উচিত নয় কারণ এতে সবাইকে বিপদে ফেলা হয়।পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের তাদের কাজ করতে দিন। তাদের জন্যই আপনি ভালো আছেন না হলে চোখের জল মোছার ন্যাকড়াও পাবেননা। ওদেরও বাড়িঘর আছে,আছে মায়ের আঁচলের শীতল স্পর্শ। তাই এই কটা দিন আপনি কত বড় বাঘের বাচ্চা তা নাই বা প্রমাণ করলেন কারণ করোনায় মারা গেলে পচা ইঁদুরের মত ধাপায় ফেলে আসবে আর আপনার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে অনেকেই। তাই বুঝুন আর বোঝান।
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment