#নিছক_ফোনালাপ#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
"আচ্ছা মোমের কি খবর জানিস?"
" কি আবার খবর হবে,বাড়িতেই আছে হয়ত।"
"আরে তুইও যেমন! বাড়িতে থাকবে নাকি জঙ্গলে থাকবে? মানে কোন বাড়িতে আছে?"
"আছে নিজেদের বাড়িতেই হয়ত,আমি ঠিক জানিনা।"
"নিজেদের বাড়ি মানে কি অর্কদাদের বাড়ি?"
"তুই এত কিছু জিজ্ঞেস করছিস কেন বলতো?
মেয়েদের বিয়ে হলেই কি নিজেদের বাড়িটা পরের বাড়ি হয়ে শ্বশুরবাড়িটা নিজেদের হয়ে যায়?"
অপুটা আর পাল্টালোনা। এত পিএনপিসি করতে ভালোবাসে বলার নয়। মনে মনে ভাবলো কবিতা।
" যাক তাও ভালো,এইসময় যে মায়ের কাছে আছে। আর বর ছাড়া কি শ্বশুরবাড়িতে ভালো লাগে নাকি? আমি হলে বাপু চাকরি ছেড়ে বরের পেছনে পেছনে চলে যেতাম।"
" ভাগ্যিস তোর বর একদম তোকে চব্বিশ ঘন্টা চোখে হারায় নাহলে তুই যে কি করতিস!"
"এই তো বিয়ে হলো কত ধূমধাম করে।অত ভালো ডাক্তার ছেলে একদম এমসিএইচ করছে বিরাট ব্যাপার। তারপর বিয়েতে তো দেখলাম তত্ত্বেই প্রায় আশিটা শাড়ি দিয়েছে শাশুড়ি, এটা কিন্তু খুবই বাড়াবাড়ি। শাড়ি,গয়না সবই তো মানে গাদা গাদা।অত পরবে মোম?বেশিরভাগই তো কুর্তা নাহলে টপ পরে।"
" ছাড়না ওসব কথা।একটা ছেলের বৌ,ভদ্রমহিলার হয়ত শখ ছিলো। ওর শাড়ি ও পরুক না পরুক আমাদের কি?"
" না আমাদের আবার কি?ওর কাছেই শোনা ওকে নিয়েই তো শপিং করেছে সব। তারপর অষ্টমঙ্গলার পরই তো মালদ্বীপ ঘুরে এলো।ফেসবুক ভর্তি তো ওর বিয়ের আর হানিমুনের ছবি।দেখিসনি?"
" দেখবোনা কেন! দেখেছিও আর কমেন্টও করেছি।বেস্টফ্রেন্ড বলে কথা আমার।তারপর খুব সুন্দর লাগছিলো ওদের দুজনকেই একদম মেড ফর ইচ আদার।"
" তাই তো বলছিলাম এখন কি অবস্থা বলতো একদম নতুন বিয়ের পরই এই ঘটনা।আমি হলে তো এখানে বসেই হার্টফেল করতাম। আমি মোমকে ফোন করেছিলাম বললো ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছে এখানে।অর্কদার কথা বলছিলাম কেমন আছে?"
শুনে যেন একটু আশ্চর্য হয়ে বললো,'কেন বলতো?ঠিকঠাক আছে এখনো।' বলেই একটু বাদে 'কাজ করছিরে এখন' বলে ফোনটা ছেড়ে দিলো।"
সত্যিই এবার বিরক্ত লাগলো কবিতার এতক্ষণে ব্যাপারটা বুঝলো মোমের কাছে ফোন করেছিলো ওর দূর্বল জায়গায় একটু খোঁচা দিতে আর হাড়ির খবর নিতে।সেটা হয়নি বলেই ওকে ফোন করেছে।
অপু তখনো বলে যাচ্ছে ..." আসলে মুম্বাইয়ের অবস্থা খুব খারাপ তো।আর নিউজে দেখলাম অর্কদাদের হসপিটালের অনেকেই পজেটিভ।একজন তো মারাও গেছে শুনছি।"
ফোনটা ডিসকানেক্ট করে সুইচড অফ করে দেয় কবিতা। সত্যিই বোধহয় একেই বলে কারো পৌষমাস আর কারো সর্বনাশ। বন্ধুদের মধ্যে যে কত ছদ্মবেশী লুকিয়ে আছে কে জানে। এই অপুই কদিন আগে বরকে নিয়ে সেজেগুজে মোমের বিয়ের নেমন্তন্ন খেয়ে এলো।
বেশ কিছুক্ষণ বাদে ফোনটা অন করে কবিতা ততক্ষণে হোয়াটস আ্যপে কয়েকটা মিসড্ কল অপুর। শেষে ভয়েস মেসেজ করেছে..." ঐ জন্যই ডাক্তার আমার একদম পছন্দ নয় বাবা।নামেই ডাক্তার,কোন জীবন নেই সারাদিন হসপিটালে নোংরা ঘাটা তারপর কত রকম রোগী আসছে। সরকারী চাকুরে বর আমার দিব্যি লকডাউনে বাড়ি বসে। দুজনে চুটিয়ে প্রেম করছি এই সুযোগে। বেচারি মোমটা বিয়ের দুমাসও হয়নি।"
কোন উত্তর দেয়না অপুর ভয়েস মেসেজের কবিতা। ওর বোধহয় ধৈর্য্য একটু বেশি তাই এতক্ষণ ফালতু কথা হজম করেছে।মোম ঠিকই করেছিলো। নিজেদের মানসিক অস্থিরতায় এইসব ভালো লাগেনা।
লকডাউন না থাকলে হয়ত একবার যেতো মোমের কাছে। একটা ফোন করবে? থাক দুটো দিন বাদেই ফোন করবে।
দুদিন বাদে মেসেজই করে মোমকে.." ভালো আছিস তো? অর্কদা ঠিকঠাক তো?
বিকেলে ফোন করে মোম.." মেসেজ করতে ভালো লাগছিলো না তাই ফোন করলাম রে। আছি ঠিকঠাক তবে খুব চাপ লাগছে রে। ও ওখানে খুব চাপে আছেরে। সারাদিন পর ম্যাগি খেয়েই দিন কেটে যায় হস্টেলের ক্যান্টিনে ডিউটির পরে বেশিরভাগ খাওয়ার থাকেনা।
কখনো ঘরে ম্যাগি শেষ হয়ে গেলেও কেনা সম্ভব হয়না।ও যখন ফেরে হয়ত দোকান বন্ধ। সারাদিন পিপিই পরে থাকা,কখনো আবার..."
" যুদ্ধটা একদিন ঠিক শেষ হয়ে যাবে ভাবিসনা। সাবধানে থাকতে বলিস অর্কদাকে। তুই নিজের যত্ন নিস।আর ফোন করলে ভালো ভালো কথা বলিস।"
" আর বলিসনা,আমার শাশুড়িমা আর শ্বশুরমশাইয়ের কোন তুলনা হয়না রে মাঝে মাঝে কনফারেন্স কল করি আমরা। কি হাসি মজা করতে থাকে ছেলের সাথে। অসম্ভব মানসিক জোর। আমাকেও ফোন করে আলাদা করে বোঝান। শুনলে হাসবি বলে শুধু ভালোবাসার কথা বলবে আর সাহস দেবে।অলঅয়েজ বি পজেটিভ।"
"কথা বলতে বলতে হাসছিলো মোম,ও আমার ছোটবেলার বন্ধু।আমাদের তুলনায় ওরা অনেক বড়লোক কিন্তু সবসময় পাশে থেকেছে আমার। হাসলে ওকে খুব মিষ্টি লাগে। তাই বললাম...ঐ জন্যই বোধহয় ডাক্তারের বৌ সবাই হতে পারেনা রে।যারা অনিয়মিত দাম্পত্যসুখে সুখী তারাই হতে পারে। "
" হ্যাঁ রে আর ডাক্তারের মা বাবা হওয়ার জন্যও বোধহয় খুব ধৈর্য্য লাগে।ছেলের বা মেয়ের সাথে সাথে কখন যে তারাও বছরের পর বছরের লড়াইগুলো হাসিমুখে করতে শিখে যায় তা আমার শাশুড়িমাকে দেখে বুঝতে পারি। হয়ত ভেতরে খুব টেনশন আর কষ্ট তবুও অসম্ভব পজেটিভ।সবসময় বলেন..' সব ঝড়ই একদিন থেমে যায়,অর্কও খুব তাড়াতাড়ি ফিরবে।'
আচ্ছা একবার ঐ কবিতাটা আবৃত্তি করবি...তুই ভীষণ ভালো করতিস।"
স্পীকার অন করে দেয় কবিতা..চোখ বন্ধ করে কান পাতে মোম ফোনের অপরপ্রান্তে....'আমাদের দেখা হোক মহামারী শেষে, আমাদের দেখা হোক জিতে ফিরে এসে'।©রুমাশ্রী সাহা চৌধুরী
ভালো লাগলে নামসহ শেয়ার করুন।
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment