#ফুল_ফুটুক_এপ্রিলে#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
কদিন বাড়ি থেকে হাঁফিয়ে উঠেছে মালতী।কি যে এক মারণ রোগ এলো,বাইরে যেতে পারবেনি মানুষ।প্রথম দুএকদিন বেশ ভালো লেগেছিলো।তারপর অসহ্য হয়ে উঠেছে জীবন। সারাক্ষণ ছেলেমেয়ে দুটো জ্বালাচ্ছে আর খাই খাই করছে।এদিকে বরেরও মাথা গরম রিক্সা চলছে কোথায়?দেখলেই পুলিশ তাড়া করছে লাঠি নিয়ে।
এদিকে বৌদিরা,মাসীমারা সব বারণ করেছে যেতে।বাইরের লোক ঢুকতে দেবেনা বাড়িতে।কোন বাড়িতে জল খাবার কোথাও চা,কোথাও ভাত আর পাউরুটি দিয়ে অনেকটাই হয়ে যেত। তারপর ভালো মন্দ হলেই বাড়িতে নিয়ে আসতো ছেলেমেয়েদের জন্য।ওরাও খুশি হয়ে খেয়ে নিতো।
একটু চিন্তাও হয় ঘরে বসে বসে আসলে বাইরে বেরোনোটা অভ্যেস হয়ে গেছে হয়ত বা ভালোবাসাও।বৌদিদের সঙ্গে বসে দুটো গল্প করে।কখনো কাজের ফাঁকে মাসিমার সঙ্গে ঐ যে ইন্দ্রাণী হালদারের কি সিরিয়াল হয় সেটা দেখে একেবারে আসে।ও বাবা বড় বড় ঘরে কি সব চলে বাপু এ তো ওদের বস্তির মতই গো। এই তো রমলা কদিন ঢলে ঢলে পড়ছিলো ওর বরের দিকে কি মেয়েমানুষ বাপু।যাক গে শেষে আর পারেনি।
আজ সকাল সকাল উর্মিবৌদি ফোন করেছে তার সাথে পাশের কমলা মাসিমাও। হলো কি হঠাৎ, এই তো বলেছিলো লকডাউন উঠলে আসবি। কিছু তো বললোনা শুধু বললো," ওরে আর পারছিনা,একবার দেখা দে মা।"
ছাপা শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে চুলটা খোঁপা করে মালতী। বাইরে বেরিয়ে কেমন যেন হাল্কা হয় মনটা। ফ্ল্যাটের দরজায় এসে দাঁড়ায় মালতী,যেন কতদিন বাদে আসছে।বেল বাজায়..দরজা খুলে উর্মিবৌদি বলে দাঁড়া ওখানে হাত বাড়িয়ে দে এবার। ও জানে কি করবে বৌদি তাই চেনা হাসিটা ছড়িয়ে হাতটা বাড়িয়ে দেয়। হাতে ফুস ফুস করে কি একটা স্প্রে করে বৌদি,হ্যান্ড স্যানিটাইজার বলে এটাকে।ভালো করে কনুই পর্যন্ত মেখে নেয় মালতী।
" এবার আসবো গো ভেতরে?"
"আসুন মহারাণী,শ্রীচরণ রাখুন এবার।"
ভেতরে এসে দাঁড়ায় মালতী," কি করবো বলো এবার।"
"হাতটা দে তো এবার,এই খামটা ধর।"
"কি আছে গো এতে বৌদি?"
"লকডাউনে তোর মাথাটা গেছে।মাইনে নিতে হবেনা শুনি?"
" আমার মাথাটা ঠিকই আছে বৌদি,তোমার মাথাটা কাজ করে করে খারাপ হয়ে গেছে।এই তো কদিন আগেই বললে আগাম মাইনে দিয়ে দিলাম।এই কদিন আসিসনা। আমার মনে আছে দিব্যি।"
" ধর তো খামটা,খুলেই দেখ একবার কি আছে?"
" দাঁড়াও,আমাকে বুদ্ধু পেয়েছো নাকি বৌদি মানলাম তেমন পড়াশুনা জানিনা।তাই বলে বাড়ি থেকে ডেকে এনে খাম ধরিয়ে এপ্রিলফুল! তোমার খাম তোমার কাছেই রাখো। কিছু কাজ থাকলে বলো।"
" বাবা কত খবর রাখিস রে..খুলেই দেখনা একবার।"
অগত্যা খামটা খোলে মালতী,কড়কড়ে নোটগুলো দেখতে পেলো। চোখটা ঝাপসা হয়ে গেলো দেখে..." এ কেমন এপ্রিলফুল বৌদি! মাস পয়লায় আবার মাইনে দিলে।আগেই তো দিয়ে দিয়েছো।"
গলাটা একটু ধরে আসে উর্মিরও," কতজন তো কত মানুষকে সাহায্য করছে আমি তাই ভাবলাম তোর ছেলেমেয়েগুলো দশদিন তো কিছু খেতে পারবে।কালও দিতে পারতাম,আজ একটু মজা করতে ইচ্ছে হলো তোর সাথে। কতদিন ঝগড়া হয়না তোর সাথে ওটাও তো একটা অক্সিজেন আমার।"
আজ সত্যিই বোকা হবার দিন,পাশের মাসিমাও বোকা বানালেন।অথচ কি খুটুর খুটুর আর খিটমিট করতেন মালতীর সঙ্গে। সত্যিই কি এপ্রিলফুল আজ? ঐ তো সব গাছে কত ফুল মালতী সামনের রঙ্গনগাছ আর কৃষ্ণচূড়া গাছটার দিকে তাকিয়ে দেখলো মালতী।আজ ফুল হওয়া নয় আজ বোধহয় ফুল ফোটার দিন তাইনা? কখনো বোকা হয়েও মনে খুশির ফুল ফোটে।
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment