Skip to main content

যন্ত্রণা

#যন্ত্রণা#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

বিয়ের একমাস বাদে মেয়েকে দিতে এসেছেন বেয়াইমশাই জামাই ব‍্যস্ত তাই।খুব খুশি সুনীতি "যাক,তবুও এলেন আমাদের খুব আনন্দ হচ্ছে আপনি আসাতে।"
  " কি করি বলুন,আমি না দিতে এলে তো বৌমার আসা হবেনা। সামনেই তো পরীক্ষা তাই দিতে অগত‍্যা আমাকেই আসতে হলো।"
           " অগত‍্যা কেন?ছেলের শ্বশুরবাড়িতে কি আসতে নেই নাকি? যাক এসেছেন যখন কয়েকটা দিন থেকেই যাবেন।"
     " না না তা উপায় নেই আমাকে পরশুদিন চলে যেতে হবে।একদম ফেরার টিকিট কেটেই এনেছি। ওদিকে তো আমার গার্জেনের অভাব নেই।ছেলে,মেয়েরা তারপর আবার বৌমা এসেছে।"
         ততক্ষণে মায়ের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে মৌ মুখে মিষ্টি হাসি। সুনীতি বুঝতে পারেন মেয়েটা সুখেই আছে। বিয়ের পর আরো সুন্দর হয়েছে দেখতে।নিজের মনেই বলেন থাক বলবোনা বাবা নজর যাতে না লাগে। তাছাড়া শ্বশুরবাড়িতে আছেই বা কে? ননদদের তো সেই কবেই বিয়ে হয়ে গেছে থাকার মধ‍্যে বাবা আর ছেলে। একদম ছিমছাম ছোট্ট সংসার তারপর বাড়িতে কাজের লোক আছে কাজও কিছু করতে হয়না। জামাইও খুব ভালো হয়েছে দুটিতে বেশ মানিয়েছে একদম।
                সন্ধ‍্যেবেলা মৌকে নিয়ে ওর বাবা একটু বেরোলো দোকানে কেনাকাটা করতে।নতুন বেয়াই এসেছে বলে কথা।
       সুনীতি চা আর স্ন‍্যাক্স নিয়ে এসেছে ট্রেতে সাজিয়ে।
      " বসুননা দিদি,আপনি চা খাবেননা? ওরা আবার এখন কোথায় গেলো? আমিও যেতে পারতাম সাথে।"
       " এই তো আমার চা।ওরা এসে যাবে একটু বাদেই।"
             একটু ইতস্ততঃ করেন অসীমবাবু," মানে আপনার সাথে একটা কথা ছিলো। ব‍্যাপারটা একটু প্রাইভেট মানে আমার বৌমা যেন না জানতে পারে কথাটা।"
        কেমন যেন একটু লাগে সুনীতির,কি আবার বলতে চান উনি।দেনাপাওনার ব‍্যাপারে কি কিছু? উনারা না চাইতেই তো অনেক কিছু দিয়েছে মৌয়ের বাবা। তাহলে?
তবুও আর কি বলতে চাইছেন উনি। মেয়ে বর কেউ তো বাড়িতে নেই এখন!
      " কি ব‍্যাপারে বলুন তো?মানে মৌয়ের বাবা এলে বললে হতনা?
  " তেমন কোন ব‍্যাপার নয়। আপনার সাথে একটু আলোচনা করতে চাই।"
        "আচ্ছা বলুন না ।"

কয়েকটা এই সেই কথার পর উনি যা বলেছিলেন চমকে উঠেছিলো সুনীতি শুনে।কেন যেন মনটাও খারাপ হয়েছিলো।ঠিক মেনে নিতে পারেনি।
         উনি বলেছিলেন," আচ্ছা আমি যদি কোন মহিলা মানে উইডো মহিলাকে বিয়ে করি তাহলে তো সে আমার পেনশনটা পাবে। আপনার কি মত?''
        হয়ত ভদ্রলোকের উদ্দেশ্যটা সৎ খারাপ কিছু নয়।কিন্তু সুনীতির মনে হলো মৌয়ের মুখটা, সবে মেয়েটার একমাস হলো বিয়ে হয়েছে এখনো শরীর থেকে হলুদের গন্ধ যায়নি।এই সময় যদি শ্বশুরমশাই কাউকে বিয়ে করে ঘরে আনে তাহলে মেয়েটার কি অবস্থা হবে ভেবেই কেমন যেন শরীরটা খারাপ করলো।
      শুকনো গলায় বললো," মানে বেয়ান তো অনেকদিন আগেই মারা গেছেন।তখন যদি ভাবতেন তাহলে ভালো হত। এখন সবেই ছেলের বিয়ে হয়েছে।মেয়েদেরও বিয়ে হয়েছে নাতি নাতনি....আপনি বরং ছেলে মেয়েদের সাথে কথা বলুন ওরা যদি রাজি থাকে..আমি আর কি বলবো?"
          মুখে যাই বলুকনা কেন বুকের ভেতরটা টিপটিপ করে সুনীতির খুশি হতে পারেনা।মেনেও নিতে পারেনা।হায় ভগবান ভদ্রলোকের পেটে পেটে এত! বিয়ের ইচ্ছেই ছিলো যখন ছেলের বিয়ে দেবার আগেই নিজে টোপর পরতে পারতো। বার বারই মনে হয় দেখেশুনে বিয়ে দিয়ে এই কান্ড! শেষে সৎ শাশুড়ির সাথে ঘর করতে হবে মেয়েটাকে!
                    " আসলে ওদের বলেছিলাম ওরা রাজি হয়নি কেউই তাই আপনাকে বললাম। মানে আপনি যদি কোন মতামত দেন।"
       এবার সত‍্যিই বিরক্ত লাগে সুনীতির, নিজের ছেলেমেয়েদের মত নেই আর তার কাছে মত নিতে এসেছে। কোন অধিকারে হ‍্যাঁ বলবে?
          " আমি কোন মত দিতে পারছিনা,আপনি ওদের সাথেই কথা বলুন।"

   মাঝে কেটে গেছে দুটো বছর বিয়ের উদ‍্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত মৌয়ের শ্বশুরমশাই বিয়েটা করেননি মানে তখনো পর্যন্ত। তবে সুনীতি বুঝতে পারে মেয়ের সাথে ভালো ব‍্যবহার উনি করেননা।এমনকি মৌয়ের বাবা বা ওর সাথেও ভালো ব‍্যবহার করেননা যখন ওরা মেয়ের বাড়ি যায়।
     " মা আমার সাথে কেন যে ভালো ব‍্যবহার করেনা বুঝতেই পারিনা।প্রথমে তো সবই ঠিক ছিলো। এখন ননদরাও এমনকি বাড়ির কাজের লোকও আমার সাথে খারাপ ব‍্যবহার করে।"

         " হ‍্যাঁরে জামাই ভালোবাসে তো তোকে?"

" হ‍্যাঁ মা ও সাপোর্ট করে ভালোবাসে ঐ জন‍্যই তো সব সহ‍্য করে নিই।"

    " হ‍্যাঁ মা নিজেদের মধ‍্যে ভালোবাসা রেখে চলিস তাহলেই হবে। কি আর করবি।"
           মৌয়ের বাচ্চা হবে,দুদিনের জন‍্য মেয়েকে দেখতে আর কিছু জিনিস দিতে এসেছে সুনীতি।
        একেই নতুন জায়গা,তারপর খুব গরম।রাতে ভালো করে ঘুম হয়না সুনীতির। বাথরুমে এই নিয়ে দুবার উঠতে হলো। বাথরুমে যাবার পথে থমকে দাঁড়ায় সুনীতি। আবছা অন্ধকারে দেখে বিয়াইমশাইয়ের ঘর থেকে বেড়িয়ে শাড়ির আঁচলে বুক ঢাকতে ঢাকতে চলে যাচ্ছে বাণীদি, মেয়ের বাড়ির চব্বিশ ঘন্টার কাজের লোক। যে নাকি ওর শাশুড়িমা থাকতেই এসেছে ওদের বাড়িতে।
               বাথরুম থেকে এসে মুখে চোখে জলের ঝাপটা দিয়ে বাকি রাতটা আর ঘুমোতে পারেনা সুনীতি।বুঝতে পারে এইজন‍্যই শ্বশুরমশাই কাজের লোক মিলে খারাপ ব‍্যবহার করছে মেয়েটার সাথে। ওরাই হয়ত ইন্ধন দিচ্ছে ননদদেরও। সব হিসেব কেমন যেন মিলে গিয়ে একটা অসহ‍্য যন্ত্রণা হয় মেয়েটার কথা ভেবে।©রুমাশ্রী সাহা চৌধুরী
ভালো লাগলে নামসহ শেয়ার করুন।
সমাপ্ত:-
      

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...