#অ_সুখে#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
মাস শেষ হয়ে গেছে সেই কবে...বৌদি এখনো ফোন করলোনি তো। কি আশ্চর্য মানুষ বাপু! নিজে গুচ্ছের কাজ করে মরছে ঐ খারাপ শরীর নিয়ে তবুও আমাকে আসতে দিবেনি।
হঠাৎই সেদিন বললো.."ময়না তুই আর কাজে আসিসনা। চারিদিকে রোগ রোগ কে জানে আবার কি হতে কি হয়?"
আমি বললুম আমারে যমেও ছোঁবেনা বৌদি।আর আমাদের পাড়ার তো সক্কলেই মুখে মাস্ক পরে এ বাড়ি ও বাড়ি কাজ করে বেড়াচ্ছে।
" তা ওরা করছে করুক তুই আসিসনা।আমি তোকে ফোন করবো মাসের প্রথমে এসে মাইনেটা নিয়ে যাস বুঝলি।"
তা নাই নাই করে বেশ কয়েকদিন পার হলো তা এতদিনেও একটা ফোন করলোনা। যাক্ ঘুরেই আসি নিজে থেকেই গিয়ে টাকা চাই।আমি তো কামাই করিনি বাপু তোমরাই বারণ করেছো তাই টাকাটা দাও দিকি আমার লাগবে। মনে মনে কথাগুলো সাজিয়ে নেয় ময়না।
উঃ বাবা কদিন ঘরে বসে বসে আমারও গতরে এক্কেবারে জং ধরে গেছে দেখছি গজ গজ করে ময়না। আগে বেশ লাফিয়ে লাফিয়ে সিঁড়ি উঠতাম এখন তিনতলাতে উঠতেই হাঁফ ধরে গেলো একেবারে।
কিছুক্ষণ দম নিয়ে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় ময়না..ইশ্ কি হাল ঘর দোরের,বাইরেটা জীবনেও ঝাঁট দেয়না মনে হয়।
তবে বৌদিই বা কত করবে। ঐ তো দুমাস আগেই পড়ে গিয়ে বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেলো। তারপর থেকে শরীরটাও ভালো যাচ্ছেনা।"
কলিং বেল টিপে দাঁড়িয়ে থাকে ময়না।দরজা কেউ খোলেনা।গজগজ করে ময়না এখনো ঘুমোচ্ছে নাকি সব।আবার বেল টেপে।
দরজা খোলে নম্রতা ময়নার বৌদিমণি। এই কদিনে যেন কেমন শুকনো হয়ে গেছে বৌদি। যেন কতদিন খায়নি আর ঘুমোয়নি।
" ওহ ময়না,আয় ভেতরে।ভালো আছিস তো?"
আমি আর ভেতরে যাবোনি বাপু। কোথায় আবার রোগ ছড়াবো?বেশ কয়েকটা দিন তো হলো এবার মাইনেটা দাও বাপু। আমি তো কামাই করিনি,তোমরাই ছুটি দিয়েচো।
" একটু দাঁড়া। আমি আসছি।"
পেছন ফেরে নম্রতা,হঠাৎই বৌদির পিঠটায় নজর পড়ে যায় ময়নার। কালসিটে রক্ত জমা দুটো লম্বা আঁচড়ের দাগ। ওটা যে আদরের দাগ নয় তা ময়না ওর দশবছরের দাম্পত্য থেকে জানে। দাদাবাবু কি তাহলে বৌদিকে এখনো!ভাবতেই কেন যেন শিউরে ওঠে ময়না।
নম্রতা এসে দাঁড়িয়েছে,একটা পাঁচশো টাকার নোট আর কতগুলো খুচরো টাকা আর পয়সা মিলিয়ে ময়নার হাতে দেয়। " একটু দেখে নে টাকাটা।"
" এতো খুচরো পয়সা বাপরে! মনে হচ্ছে যেন ঘট ভেঙে টাকা নিয়ে এলে। এত খুচরো আমি কি করবো?"
" ময়না একটু এদিকে আয় না?"
ময়না এগিয়ে যেতেই ওর হাতে ভারী রূপোর মল জোড়া দেয় নম্রতা.."এটা একটু বিক্রি করে টাকা এনে দিবি? আসলে তোর দাদাবাবুদের কোম্পানি বন্ধ তো তাই গতমাসে মাইনে পায়নি,আর ঐসব ছাইপাশ খেতে পারছেনা তাই খুব অশান্তি ঘরে। তুই একটা ভালো কাজ খুঁজে নিস এখন।যদি পরে পারি তোকে ডাকবো..."
ময়না কিছু বলতে পারেনা শুধু বলে
আমি আসছি বৌদি,একটু বাদেই আসছি।
হাতের ব্যাগটা নিচে রেখে বেলটা বাজায় ময়না...
আজ লোকের বাড়ি বাড়ি কাজ করা ময়নাকে কেন যেন দশভুজা দুর্গার মতো লাগলো নম্রতার..
ময়নার ব্যাগে চাল,আলু,আটা।
এগুলো রেখে দাও বৌদি..রেশনে এবার পাঁচজনের প্রায় তিরিশ কেজি চাল পেয়েছি গো,গমও পেয়েছি। ছেলেমেয়েগুলো তো ছোট অত লাগেনা। দশ কেজি চাল রেখে দাও বৌদি।
একসময়ে নিজের ব্লাউজের তলার রক্ত জমে যাওয়া দাগগুলোর সাথে বৌদির কালশিটে দাগগুলো কেমন যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। শুধু তফাৎ একটাই দাদাবাবুর পেটে লাথি মারাটাকে বৌদি আড়াল করে বলেছিলো পড়ে গেছে বাথরুমে। ময়না হলে একদম চেঁচিয়ে থানা পুলিশ করতো।
আসলে ভদ্রলোকেরা তো ওদের মত রিলিফের লাইনে বা ফিরি র্যাশনের দোকানে দাঁড়াতে পারেনা তাই বন্ধ দরজার আড়ালে বৌকে পিটিয়ে সব রাগ দুঃখু উশুল করে।
নম্রতার চোখটা বড় ভেজা। কখন যে ওর বিপন্ন মধ্যবিত্ত ঘরের অসুখের হদিস ময়না পেয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি।©রুমাশ্রী সাহা চৌধুরী
ভালো লাগলে নামসহ শেয়ার করুন
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment