#অপেক্ষা#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
ভোর পাঁচটায় উঠে তাড়াতাড়ি চলে আসতে হয়েছে হসপিটালে আইসিউতে এমার্জেন্সী কোভিড ডিউটি দিতে। পিপিই পরে নিয়েছে একটু আগেই আট ঘন্টা জল খাওয়া,বাথরুম যাওয়া কিছুই হবেনা। এগারোটা বাজার পর জল পিপাসায় কেমন যেন অস্থির লাগে সাগরিকার সকালে তাড়াতাড়ি করে জলও খাওয়া হয়নি তেমন। একটা বাজার পর আড়ষ্ট হয়ে যায় পা,কেমন যেন টান ধরে শরীরে। মনে মনে ভাবে যাক আর একটা ঘন্টা কোনরকমে হয়ত কেটেই যাবে।
আড়াইটা নাগাদ পিপিই ছেড়ে স্যানিটাইজার দিয়ে স্যানিটাইজ করে জলের বোতল থেকে জল গলায় ঢালে,তলপেটে কেমন যেন ব্যথা করছে। অথচ টয়লেট হচ্ছেনা।বুঝতে পারছে এবার শরীর একটু বিশ্রাম আর খাবার চাইছে। মা বাড়ি থেকে ফোন করছে উদ্বিগ্ন হয়ে.." কি রে কেমন আছিস? ভালো করে হাত ধুয়েছিস তো? কিছু খা এবার।"
ক্লান্তি জড়ানো গলাটাকে একটু ঠিক করে উত্তর দেয়, " হ্যাঁ মা ঠিক আছি,খাবো হোটেলে পৌঁছে এখানে সব বন্ধ।"
" সাবধানে থাকিস মা খুব চিন্তায় আছি তোর জন্য।মনটা একটুও ভালো লাগছেনা।"
" সাহস রাখো মা,শুধু একটু অপেক্ষা তারপর একদিন দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।"
প্রায় দুঘন্টা হতে চললো এখনো কোন পিকআপ আসেনি আর যেন শরীরটা চলছেনা। গাড়ির অপেক্ষায় হসপিটালের গেটের কাছে পিঠের ব্যাগটা নিয়ে দাঁড়ায় সাগরিকা।গেটের বাইরে লম্বা একটা লাইন এমার্জেন্সী গেট ছাড়িয়ে আরো অনেকদূর চলে গেছে। কি ব্যাপার দেখতে মুখটা বাড়ায় ..কতগুলো ক্ষুধার্ত মুখ হাতে থালা বাটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,ওরা কেউ কলরব করছে, কারো মুখে কোন কথা নেই। শীর্ণ চেহারায় শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে খাবারের আশায়। একটা গাড়ি এসেছে মনে হচ্ছে..ওরা এগিয়ে যাচ্ছে খিচুড়ি পাবার আশায় থালাবাটি গুলো ঠনঠন করতে করতে। কিছুদিন আগে যারা স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য থালা আর ঘন্টা বাজিয়েছিলো কে জানে এই লোকগুলোও হয়ত সেই দলে ছিলো।
আকাশের দিকে তাকায় সাগরিকা, ঝরে পড়ছে সূর্যের তাপ তখনো,ওর গলাটা আবার শুকিয়ে আসে। শরীরটা খারাপ লাগে। মা ছোটবেলায় বলতো আকাশে নাকি ভগবান থাকে। বিড়বিড় করে সাগরিকা বলে.." কবে হবে অপেক্ষার শেষ? কবে আসবে সুদিন?"
আজ যেন ঐ লোকগুলোর ক্ষিদের সাথে নিজের অভুক্ত থাকার কষ্টকে কেমন যেন গুলিয়ে ফেললো সাগরিকা।
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment