Skip to main content

আটপৌরে গৃহবধূ

#আটপৌরে_গৃহবধূ#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী

আটপৌরে গৃহবধূর সাজেই দেখতে অভ‍্যস্ত অমিত প্রায় পঁচিশ বছর ধরে সুপ্রিয়াকে। বাড়িতে ছাপা বা তাঁতের শাড়ি,লোকজন এলে গায়ে আঁচলটা জড়ানো।আর বাইরে গেলে কখনো সিল্ক বা তাঁত বা হ‍্যান্ডলুম তার সাথে কানে হাল্কা দুল,গলায় ছোট্ট সরু চেনে গুরুদেবের ফোটো দেওয়া লকেট।
           সুপ্রিয়া মানে পারফেক্ট হাউসওয়াইফ,আদর্শ বৌমা,একমাত্র মেয়ের ভালো বন্ধু কাম মা। ঘর গোছানো,রান্নাবান্না সবেতেই পরিপাটি। ঘরের বৌ ঘরের কাজ করবে মেয়ে মানুষ করবে শাশুড়ির দেখভাল করবে স্বামী ফিরলে তাকে চা খাবার দেবে এইটুকু হলেই ঠিক আছে। সুপ্রিয়াকে অন্দরমহলের বাইরে মানে নিজের গন্ডীর বাইরে খুব একটা যেতে দেখেনি অমিত। আর যাবেই বা কোথায়? মেয়ে একটা সময় পুলকারেই গেছে এখন তো অনেক বড় বাইরে পড়ছে। আর কালেভদ্রে সংসার থেকে ছুটি পেলে বাপের বাড়ি গেছে মাকে দেখতে।
                         বাইরের জগতটা পুরোই ছিলো অমিতের,আর সুপ্রিয়ার অন্দরমহল। সুপ্রিয়াকে যখন সংসারে ডুবে থাকতে হয়েছে তখন অমিত নিজের মনের আনন্দ খুঁজতে মাঝে মধ‍্যেই বন্ধুদের সাথে এদিক ওদিক ঘুরতে চলে যেতো। কখনো তেমন ভাবে মনেই হয়নি সুপ্রিয়ার কথা।জানতো যে সুপ্রিয়া অভ‍্যস্ত এই একাকীত্বে।তাছাড়া একা আবার কোথায়? কত কাজ বাড়িতে..মা আছে,মেয়ে আছে।কাজের বৌয়েরা আসা যাওয়া করছে। সে সবও তো সামলাতে হয়।
              সুপ্রিয়া এফ এমে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতো এই আকাশে আমার মুক্তি আলোয় আলোয়। হয়ত বা স্বপ্ন দেখতো একটা খোলা আকাশের। কতদিন বাইরে যায়না,শাশুড়িমাকে রেখে ওভাবে তো সবাই মিলে যাওয়া যায়না। তাই অমিতকে মুক্তি দিয়ে স্বেচ্ছাবন্দিত্ব মেনে নিয়েছিলো সুপ্রিয়া। শুধু মাঝে মাঝে দু একদিনের ছুটিতে মায়ের কাছে আসা।
   মা বলতো.." আমার যে সব দিতে হবে সেতো আমি জানি গানটা একটু গাইবি সুয়া।"
        " অনেকদিন গাইনা মা,এখন আর গলাটা ওঠেনা।আসলে ও বাড়িতে সেভাবে গান গাওয়া হয়না।"
  " কেন যে গানটা নষ্ট করলি? অথচ একটা সময় এই গানই ছিলো তোর প্রাণ। কি ভালোবাসতিস রবীন্দ্রসঙ্গীত।অবশ‍্য তোর বাবুও ছিলো এমন গান পাগল।"
       "ভালোবাসা তো থেকেই যায় মা,ওটা মরেনি। গান তো শুনি রেডিওতো। গাওয়া হয় কম। ওই গুনগুন করি কখনো।"
           একটা সময় ও রেওয়াজ করলে মা পাশে বসে থাকতো।অমিত অবশ‍্য এইসব নিয়ে মাথা ঘামায়নি। বিয়ের আগে সব মেয়েই টুকটাক গান শেখে তেমনি ভেবে আর মাথা ঘামায়নি। তবে এই পঁচিশ বছরে সুপ্রিয়া বুঝেছে ব‍্যবসায়ী অমিতের মতে মেয়েমানুষের বেশি এদিক ওদিক মন থাকলে সংসারটা ঠিকমতো করা হয়না। এই আরকি গান গেয়ে বেড়ালে বা চাকরি করলে অথবা থিয়েটার করলে বা গপ্প লিখলে সংসারে মন দেবে কখন?
                            তবুও সংসারের মাঝে মনকে বেঁধে ফেলা সুপ্রিয়া আনমনা হলো। আজকাল আর সংসারে মন বসেনা সুপ্রিয়ার। মা চলে যাওয়ার পর হঠাৎই মনে হলো মুক্তির খোলা আকাশটা আর নেই। তারমধ‍্যে মেয়েটাও চলে গেলো বাইরে পড়তে,ওর বায়না মেটাতেই তো কত সময় চলে যেতো।তারপর একসাথে চলতো খুনসুটি,কখনো বা গল্পও হতো। এখন তো কথা বলার লোকই তেমন নেই।শাশুড়িমা এমনিতেই চুপচাপ তারপর টিভির নেশা ঘরে বসে রিমোট হাতে চ‍্যানেল ঘোরাচ্ছেন।
                  গরমের ছুটিতে বাড়িতে এসে রুনা দেখলো এক আনমনা মাকে।মা যেন কেমন হয়ে গেছে আজকাল আর গানও শোনেনা।অথচ একটা সময় রেডিও পাশে রেখে কত গান শুনতো। বুঝতে পারে দিদুন ছাড়া মায়ের যেহেতু কেউ ছিলোনা তাই মায়ের খুব একলা লাগে।
   " আচ্ছা বাবা,তুমি একটু তাড়াতাড়ি এসে মাকে সময় দিতে পারো তো? মা যেন কেমন একলা হয়ে গেছে। সেই হাসিখুশি ভাবটা যেন নেই।"
               " বাড়িতে আসছি তো যেমন আসি।এইতো সেদিন গুরুদেবের আশ্রমে গেলাম গাড়ি করে তোর মা নিজেই তো বললো যাবে।"
       " ওহ্ বাবা!একটু মুভিতে যাও।মলে নিয়ে যাও মাকে।শপিংয়ে নিয়ে যাও।"
           হাসে অমিত," ঠিকই আছে,তুই এসেছিস সব ঠিক হয়ে যাবে। মায়ের সাথে থাক।আমার তো সারাদিন কাজ সন্ধ‍্যেবেলা একটু আড্ডা না দিলে মাথাটা হাল্কা থাকেনা।"
           সত‍্যিই তো হস্টেলে বন্ধুদের মায়েরা কি সুন্দর জিন্স টিশার্ট, প্লাজো,কুর্তা সব পরে আসে। আর মা সেই চিরকাল শাড়ি পরেই কাটিয়ে দিলো। কি অজুহাত যে ঠাকুমা পিসিরা পছন্দ করেনা। মাকে দুবছর আগেই একটা ফেসবুক আ্যকাউন্ট খুলে দিয়েছিলো,সেই যে একখানা ছবি ডিপি করেছিল তখন তাও পাল্টায়নি। কি যে করে কে জানে? নাহ্ মাকে একটু গ্ৰুমিং করাতে হবে। ধুর বাড়িতে এসে মাকে ডিপ্রেসড দেখতে ভালো লাগেনা কি?
      সুপ্রিয়া কিন্তু কিন্তু করলেও রুনাই লেগে গেলো মাকে সাজাতে।
  " কি করছিস! কতগুলো টাকা শুধু শুধু খরচ করলি।"
" মা আমার পকেট মানি তাই আমার যা ইচ্ছে করবো তুমি কিছু বলবেনা।"
        চারটে কুর্তা প্লাজো লেগিংস কিনে ফেললো রুনা।" দাঁড়াও আজ দেখবো তোমাকে কেমন লাগে!"
        " কি যে করিসনা! এগুলো পরেছি কোনদিন? শাড়িতেই এখন ঠিকঠাক লাগে।আর রাত্রিটুকু ম‍্যাক্সি পরি।"
   " দেখো কত ফ্রী লাগবে।"
  রুনার হাত ধরে সুপ্রিয়ার সাজবদল হলো। চুলটাকেও বাদ দিলোনা রুনা।" দেখো হেয়ারস্টাইল চেঞ্জ না করলে লুকটা পাল্টায়না। আরে ছোট তো করছোনা একদম। আর হ‍্যাঁ ঐ বড় টিপ নয়।"
            সুপ্রিয়া আয়নার সামনে নিজেকে দেখে।আগে একটা সময় সালোয়ার কামিজ পরেছে। দুএকটা বিয়ের পরও পরেছে পুরী বা দীঘা বেড়াতে গিয়ে।তবে অনেকদিন পরা হয়নি।
   " কি গো,কেমন লাগছে? বয়েস তো একলাফে দশবছর পিছিয়ে গেলো দেখছি। ব‍্যাস দাঁড়াও দাঁড়াও। একটা ছবি তুলে রাখি ডিপিটা এবার পাল্টাবো।"
               সুপ্রিয়ার বন্ধু বা আত্মীয়স্বজনের কাছে এ এক নতুন ভোল পাল্টানো সুপ্রিয়া যাকে গায়ে আঁচল জড়ানো অবস্থায় হাসিমুখে চা জলখাবার দিতেই সবাই দেখেছে।
                      সুপ্রিয়া ভেবেছিলো অমিত হয়ত খুব খুশি হবে। হয়ত বা চোখে একটু অন‍্য চাউনির ছোঁয়া দেখবে। সত‍্যিই যেন সন্ধ‍্যে থেকে মনে হচ্ছে কি হয় কি হয়।শাশুড়ি মা দেখে বললেন," ভালো,করে নাও যা ইচ্ছে মেয়ে যখন জোর করেছে।"
        অমিত সুপ্রিয়ার চেয়ে প্রায় দশবছরের বড়।তবে সুপ্রিয়ার কাছে অমিতের মানসিক বয়েস শারীরিক বয়েসের থেকেও বেশি তাই সুপ্রিয়ার নতুন সাজ অমিতের মনে কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করলোনা বা করলেও তা প্রকাশ করলোনা পাছে সুপ্রিয়া আরো উৎসাহ পায়। রাতে যথারীতি পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো অমিত।
             অমিতের গায়ে আস্তে আস্তে হাত রাখে সুপ্রিয়া," কি গো আমাকে কেমন লাগলো কিছু বললেনা তো। তোমার কি রাগ হয়েছে নাকি?"
         ঘুম জড়ানো গলায় অমিত বললো "কেমন লাগলো তা কি পঁচিশ বছর পরে আবার নতুন করে বলতে হবে নাকি?তবে শাড়িতেই তোমাকে মনে হয় ভালো লাগে। মেয়ে শখ করে কিনে দিয়েছে পরেছো পরেছো। দিন দিন কেমন যেন ছেলেমানুষ হয়ে যাচ্ছো।"
                         ফেসবুকটা খোলে সুপ্রিয়া নতুন ডিপিতে রাজ‍্যের লাইক আর কত কমেন্ট।
" মা দেখেছো কত লাইক পড়েছে ছবিতে। আর কত কমেন্ট। বেশ অনেকগুলো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট ও এসেছে।"
     হাসে সুপ্রিয়া,মায়ের গালের সেই ফেমাস টোলটা দেখতে পায় রুনা। তারপর থেকে রুনা বাইরে বেরোলেই মাকে একেকদিন একেকটা ড্রেস পরিয়ে নিয়ে গেছে। আর তার সাথে সেল্ফি আর ছবি তো আছেই।সুপ্রিয়া বুঝতে পারে মেয়ে এখন বন্ধু হয়ে গেছে তাই ওর আব্দারে সুপ্রিয়ার কানে ঝোলা দুল গলায় ডোকরা আর কড়ির মালা।
      " ঐ ছোট মটরডাল আর কানে পরতে হবেনা। দেখো মুখটাই পুরো পাল্টে গেছে।"
               সুপ্রিয়ার সাজগোজ দেখে একটু অবাক লাগে অমিতের ভাবে মেয়ের বায়না তারপর আবার ফিরে যাবে পুরোনো সাজে।
         কিন্তু কেন যেন সব অঙ্কের শেষটা এক হয়না।তাই রুনা যাবার পরও সুপ্রিয়া কুর্তা লেগিংস,প্লাজো,র‍্যাপার টপ পরতে শুরু করলো।
   আজকাল তো সুপ্রিয়াকে আর শাড়ি তেমন পরতেই দেখেনা। বন্ধু বান্ধবও বেড়েছে,সুপ্রিয়ার অবসর অনেকটাই কাটে ফেসবুক হোয়াটস আ্যপে চোখ রেখে। বন্ধু বান্ধব যাদের সঙ্গে বিয়ের পর যোগাযোগ ছিলোনা তেমন তাদের সঙ্গে ফোনে কথা হচ্ছে,কখনো তারা ভিডিও কল করছে। সুপ্রিয়ার আকাশে এখন আবার খুশির কলতান। আজকাল শরীরের যত্ন নেয় সুপ্রিয়া, অমিত বুঝতে পারে ওর জীবনযাত্রা পাল্টাচ্ছে। সুপ্রিয়ার হাতের নখে নেলপলিশ,হাত পা পরিস্কার  ঝকঝকে। নিজেও অনেক সময় বাইরে গিয়ে জামাকাপড় কিনছে। মেয়েকে একটু হাল্কা অভিযোগ করেছিলো অমিত ফোনে," তোর মায়ের তো নেশা ধরিয়ে দিয়েছিস। ছবি তুলছে পোস্ট করেছে।"
    " বাবা মাকে সুন্দর লাগছে না ছবিগুলোতে।দেখেছো রুনার ম‍্যাজিক?"
   " তা তো বুঝলাম কিন্তু এবার তো তোর মাকে আমার বড় মেয়ে বলবে।"
" বাবা ইউ আর ফিলিং জেলাস।আচ্ছা তুমি এবার একটু নিজেকে গ্ৰুম করো। আমি পরের ভ‍্যাকেশনে এসে করে দেবো।"
              সুপ্রিয়াকে নিয়ে আসলে অমিতের বন্ধুমহলে কথা হয়েছে।অনেকেই মজার ছলে প্রশংসা করেছে। রিয়েলি বৌদিকে এখন খুব ভালো লাগে আমি তো মিসেসকে বলছিলাম একটু শেখো বৌদিকে দেখে। কি সুন্দর নিজেকে মেনটেন করেছে। কোথায় লুকিয়ে রেখেছিলে ভাই এত সুন্দর বৌদিকে? ওদের কথা শুনে একটু রাগই হলো অমিতের।ফ্রী তে বৌ দেখার শখ সবার।তারপর হয়েছে এক ফেসবুক ফ্রীতে হাড়ির খবর রাখার জায়গা। কে কি খেলো?কোথায় গেলো? কি সাজগোজ করলো সব খবর আছে এই বাছাধনের কাছে।
                     সুপ্রিয়া একটা সময় অযত্নে রাখা একটা গাছের মতই সংসার বাগানের এক কোণে একটা টবে বেড়ে উঠেছে অযত্নে ঝরে গেছে কত পাতা।
সেই গাছটা আবার নতুন করে ফুলে ফুলে ভরে ওঠাতে খুশি না হয়ে বিরক্ত হলো অমিত। এতটা ফূর্তি হঠাৎই এই বয়েসে! আজকাল যেন একটা ঘোরে থাকে সুপ্রিয়া বেশ উচ্ছ্বল ছটপটে।কখনো একটু বেশি ইমোশনাল বিছানাতেও। অমিত বলে ফেলে কোন এক সময়," আরে বয়েস হচ্ছে তো নাকি বয়েস কমছে?"
              আজকাল মাঝে মাঝে হারমোনিয়াম নিয়ে বসে সুপ্রিয়া বিকেলে।ও বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছে ওটা,ওখানে তো পড়েই ছিলো।এখন তো আর কেউ বলেনা সুয়া একটা গান করনা শুনি।
       শাশুড়িমা বিকেলে বেশ বিরক্ত হন.." আমার হয়েছে যত জ্বালা গানের ঠ‍্যালাতে  সিরিয়ালের কথাগুলো কানে যায়না। একদিন দুদিন তিনদিন।মাঝে ননদও এসে বলে গেছে.." আগেই তো বেশ ছিলে লক্ষ্মী লক্ষ্মী লাগতো।দুদিন বাদে শাশুড়ি হবে এই বয়েসে আবার কি হলো হঠাৎ যে ভোল পাল্টালে?'
       সুপ্রিয়া জবাব দিলো," বুড়ো বয়েসেই তো ভীমরতি হয়। তাই হয়েছে বোধহয়।"
       ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে সুপ্রিয়ার। একুশের সুপ্রিয়া এখন ছেচল্লিশে আক্ষরিক অর্থে এখন বুড়ি।তবে কখন যে কচি মনটা মরে গিয়েছিলো বুঝতেই পারেনি।রুনাই হঠাৎই ফেরত দিলো মনটা।রুনার চোখে মুখটা দেখে মনে হলো ভালোই তো এখনো মানায়।হয়ত শখগুলোও আছে ঘাপটি মেরে কোথাও।তাই হোকনা একটু নিজের মত চলা।

             অমিত সেদিন একটু তাড়াতাড়ি ফিরেছে সুপ্রিয়া গাইছে..'এবার তোর মরা গাঙে বান এসেছে জয় মা বলে ভাসা তরী...'

          শাশুড়িমা ডাকেন অমিতকে," কি ব‍্যাপার বলতো একটু টিভি দেখবো তারও উপায় নেই এই গানের গুতোয়।"
            অমিত বিরক্তি প্রকাশ করলো ঘরে এসে এই প্রথম উদ্ধত হয়ে উঠলো সুপ্রিয়া.." তোমরা কি ভেবেছো,আমি কি সব বন্ধ করে দমবন্ধ করে মরবো? আমি দরজা দিয়ে গাইবো তবুও গাইবো।"
                " বললাম মায়ের অসুবিধা হয়।তুমি তো এমন ছিলেনা সবার সুবিধা দেখেই চলেছো এতদিন।"
        চিৎকার করে ওঠে সুপ্রিয়া," খুব ভুল করেছি,সবার সুবিধা দেখতে গিয়ে নিজের সুখটাকে গলা টিপে মেরে ফেলেছি। ব‍্যবসা বন্ধুবান্ধব সব দেখেছো।কোনদিন আমার মনটা বুঝেছো?"
            কথা কাটাকাটি অনেক দূর গেলো। আজ সুপ্রিয়া থামলোনা। বললো অনেক কথা। চোখে আজ আর জল এলোনা।
                    অমিত সেদিন বিকেল বিকেল ফিরে এসেছে..নীচের থেকে আওয়াজ পেলো সুপ্রিয়া গাইছে...' তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে..টুকরো করে কাছি আমি ডুবতে রাজি আছি তোমার খোলা হাওয়া।'
         দমকা হাওয়ার মতোই দরজা খুলে অমিত ঢুকলো, দেখলো ভিডিও রেকর্ডিং করছে সুপ্রিয়া।

    ভালো লাগলো? না না একটুও ভালো লাগলো না বরং খুব রাগ হলো একই ভাবে গেয়ে যাচ্ছে সুপ্রিয়া। ওকে কোন পাত্তা না দিয়েই।
      

           প্রথমে সন্দেহ,কানাকানি, ফিসফিস তারপর একদিন অমিত বুঝলো ওর ধারণাই ঠিক
ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে সুপ্রিয়া আর সেইজন‍্য নতুন করে এত পুলক জেগেছে ওর মনে।
          পরকীয়া! ছিঃ এই বয়েসে! ঝগড়া অশান্তি গড়ালো অনেক দূর।
        " আমি ভাবতেই পারিনা,শেষে তুমি! এইজন‍্যই বাড়ির বৌকে বেশি স্বাধীনতা দিতে নেই।"
          হাসে সুপ্রিয়া," স্বাধীনতা! কোনদিন ছিলো নাকি? কোনদিনই ছিলোনা। আর আমি কি করছি?"

           " সারাদিন মেসেজে কি হয় তা আমার জানা আছে। গান রেকর্ডিং হচ্ছে পাঠানো হচ্ছে। তাই ভাবি হঠাৎ এত গান গাওয়া কেন? এতদিন তো শুনিনি।"
               "শুনতে চেয়েছো কোনদিন? মেয়েকেও কোনদিন গান শেখাতে চাওনি তাই। দেরি হলেও শুরু করেছি আর থামবেনা।"
  " কে উৎসাহ দিচ্ছে শুনি প্রতীম? ছিঃ শেষে পরকীয়া?"
     " ও আমার বন্ধু,একসাথে কলেজে পড়তাম। ওই তো মনে করালো আমি একদিন গান গাইতাম,ওর সাথেও ডুয়েট গেয়েছি।
       একটা ভিডিও করবে বলে রেকর্ডিং করতে বলেছিলো।"
        " জানা আছে আমার কত বন্ধুত্ব! পুরোনো প্রেম ফিরে আসছে বুড়ো বয়েসে।ফেসবুকের কল‍্যাণে।তাই এতো সাজার ঘটা!"
        অমিতের কথা যেন মনের থেকে শরীরে এসে বিঁধতে থাকে সুপ্রিয়ার।

      প্রতীম ওকে পছন্দ করতো হয়ত একসময় তবে সাহস করে বলেনি কখনোই।কি করে বলবে? তখন বেকার চাকরি করতোনা।সুপ্রিয়ার বাবা অসুস্থ তাই সাত তাড়াতাড়ি পরীক্ষা দিয়েই ওর বিয়ে হয়ে গেলো। তারপর যোগাযোগ আবার পঁচিশ বছর পরে।এখন বন্ধুত্বটুকুই শুধুই আছে মানে বেঁচে আছে।
       একটু ভালো কথা শুনতে পায় প্রতীমের কাছে সুপ্রিয়া। ভালো কথাটুকু যে কত দামি তা এখন বোঝে সুপ্রিয়া।যা হয়ত শুধু ভালো বন্ধুই বলতে পারে।একটু উৎসাহ দিতে পারে।
         তবে পারফেক্ট হাউসওয়াইফ সুপ্রিয়া হেরে গিয়েছিলো অমিতের জেদের কাছে অমিত ভেঙেচুরে দিয়েছিলো সেদিনই ফোনটা রাগের মাথায়।ডিলিট করিয়ে দিয়েছিলো সুপ্রিয়ার ফেসবুকের আ্যকাউন্ট।সুপ্রিয়ার ফেসবুকের বন্ধুদের কাছ থেকে হঠাৎই হারিয়ে গিয়েছিলো সুপ্রিয়া। বন্ধুত্ব তকমা পেয়েছিলো পরকীয়ার। খবরটা গিয়েছিলো মেয়ে রুনার কাছেও।
  " শোন মায়ের মাথাটা আর খাসনা,তোর জন‍্যই এত কান্ড বাড়িতে।"
           বাবার কাছে শুনতে ইচ্ছে করেনি মায়ের কথা। তাই মাকে জিজ্ঞেস করছিলো।
     মেয়ের কাছে হাউহাউ করে কেঁদেছিলো সুপ্রিয়া.." তুই বিশ্বাস কর রুনা ও আমার বন্ধু ছিলো। একটু কথা বলতাম,কিছুক্ষণের জন‍্য হারিয়ে যেতাম কলেজের খেলার মাঠে,অডিটোরিয়ামে বা লাইব্রেরীতে। আসলে আমার কথাগুলো কেউ শোনেনি কোনদিন।ও শুনতো আমার কথা।"
                   চোখটা ভিজলো রুনারও ও যে বড় হচ্ছে আজ যেন মায়ের সাথে কোথায় একটা মিলিয়ে নিতে পারলো নিজের অদেখা ভবিষ্যত।

  " তুমি গাইবে মা,তুমি গাইবে সবটা মেনে নিয়োনা। কতদিন তোমার গান শুনিনি। গাও না একটা।"
               সুপ্রিয়া গাইছে..' আমি ভয় করবোনা ভয় করবোনা।দুবেলা মরার আগে মরবোনা ভাই মরবোনা।'....©রুমাশ্রী সাহা চৌধুরী
ভালো লাগলে নামসহ শেয়ার করুন।

           
                     
 
   

           

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...