Skip to main content

মিছে আশা


#মিছে_আশা#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

ফোনে কথা বলছে অনক রান্না করতে করতে কানে যায় অমিয়ার। রান্নাঘরের চিমনিটা বন্ধ তখন তাই শুনতে পায় বন্ধুদের সাথে ফোনে ফোনেই আড্ডা মারছে।কখনো কনফারেন্স কলে কখনো বা এমনি।
                ডালটা ফোড়ন দেওয়া হয়ে গেছে চটপট মাছটা ধুয়ে লবণ মাখিয়ে ভেজানো সব্জিগুলো ঝুড়িতে তুলে শুকোতে দিতে যায় বারান্দায়। কদিন ধরে টানা ঘর মুছে বাসন মেজে,কাপড় কেচে হাঁটু কোমরে খুব ব‍্যথা।শুনতে পায় অনক হাসতে হাসতে বন্ধুকে উপদেশ দিচ্ছে," কি বলছিস,ঘরের ঝাড়পোছ করছিস? আরে ঘরে থাকলে তো করতেই হবে।আগে দোকানে বসতিস এখন দোকানে বেরোনো নেই তাই ঘরের কাজ কর।"
                  পা টা টেনে খুড়িয়ে বারান্দা থেকে রান্নাঘরের দিকে যায় অমিয়া ইশ্ ডালটা কখন থেকে ফুটছে!তাড়াতাড়ি ডালটা ঢেলে,কড়াইটা ধুয়ে মাছ ভাজতে বসায় অমিয়া। মাছ ভাজতে ভাজতে সব্জি কাটে।সিঙ্কে অনেকগুলো চা জলখাবারের বাসন পড়ে আছে। সব্জি কাটা হলে ওগুলো ধুয়ে নেবে।
                তারপর ফল কেটে গুছিয়ে অনককে খেতে দেবে।একবার বলেছিলো," পেঁপেটা একটু কাটবে? আসলে অনেকগুলো কাজ এখনো বাকি। আমারও তো একটু পাখার তলায় বসে বিশ্রাম নিতে ইচ্ছে করে। কাল থেকে কোমরটাও খুব ভোগাচ্ছে।"
            শরীরের কথা কানেই ঢুকলোনা বললো " ওগুলো ঠিক আমার আসেনা।আর শোনো এত কাজ কাজ কোরনা,দু চারদিন ঘর মুছেছি ইচ্ছে হয়েছে তাই। এরপর আর কোরবোনা।পারলে করো নাহলে কোরনা ফেলে রাখো।"

          কেন যেন সেই কবেই এই বাড়িটা আর বাড়ির মানুষগুলোকে ভালোবেসে ফেলেছিলো যে ফেলে রাখতে পারেনা কিছুই। তাই সবাই ভেবে নিয়েছিলো কাজগুলো ওরই। আসলে যেটুকু করে ভালোবেসেই করে হয়ত তাই চায় ক্লান্তিটাও কেউ বুঝুক।

  ফোনের উপদেশগুলো কেমন যেন কানে বাজে অমিয়ার। একটু কান পাতে প্রশংসা শোনার জন‍্য।যদিও ফলের আশা করা নাকি ভীষণ পাপ তবুও সামান‍্য মানুষ তো হলোই বা মেয়েমানুষ তাই একটু লোভ হয় শোনার জন‍্য..যদি একবার অনক বলে.." আর বলিসনা অমিয়ার ওপর খুব চাপ পড়ে গেছে। অনেক কিছু সামলাচ্ছে বেচারা একা হাতে। তারপর কতরকমের ভালো মন্দ করে খাওয়াচ্ছে।"
         শুনলো অনক বলছে," আর বলিসনা,বাড়ি থেকে থেকে লাইফটা হেল হয়ে গেলো। কবে যে মুক্তি পাবো।"
                   নিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে অমিয়ার.. যদিদং হৃদয়ং মম তদস্তু হৃদয়ং তব কথাটা যে কতটা ভুলে ভরা বুঝতে পারে।©রুমাশ্রী সাহা চৌধুরী
ভালো লাগলে নামসহ শেয়ার করুন।

          
                

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...