ঠাম্মা একটা কথা বলতো.." উঠলো বাই তো কটক যাই।"
তাই রাণার কোন আপত্তি টিকলোনা উঠলো বাই তো বাই বাই..সবাই মিলে উটি যাই।
বলার অপেক্ষা রাখেনা যে দলে মুনিয়াও আছে। আর রাণার মতই মুনিয়াও নাকি ধানাই পানাই করেছে যাবেনা বলে। প্রথমে নিজে চেষ্টা করে আন সাকসেসফুল হয়ে আন্টিকে দিয়ে মত আদায় করিয়ে নিয়েছে। আর যাবেই না কেন? ওর ডঃ ওকে বলেছে ওষুধের সাথে সাথে এখন ওর হাসিখুশি থাকা,ঘুরতে যাওয়া এসব করা দরকার।
তাই চলো যাওয়া যাক.....
*****************
বাসে যাওয়াই ঠিক হয়েছে,রাণার ওপর দায়িত্ব মুনিয়াকে নিয়ে একসাথে চলে আসা।
অনেকদিন বাদে আজ ভোরবেলা মুনিয়ার ঘুমজড়ানো মুখটা দেখলো।
সাদা নেটের টপ আর ব্ল্যাক প্যান্টে একদম রেডি মুনিয়া ব্যাগ হাতে,ওকে ক্যাবে তুলে নিয়ে একদম বাসস্ট্যান্ডে ততক্ষণে জুনি আর অম্লান এসে গেছে। বাসটা খুব সুন্দর আর ঝকঝকে একদম দুধসাদা রঙের।
বাস চলতে শুরু করেছে চারদিকে সবুজের সমারোহ। মনটা ভালো হয়ে গেছে সবারই,গল্প হাসি সবই চলছে। জুনি আর মুনিয়া পাশাপাশি বসেছে বকবক করছে দুটোতেই খুব। মাঝে মাঝে মুখও নড়ছে সবার।
" কি রে গোমড়ামুখো? কেমন লাগছে? ভালোই তো খিচখিচ করে ছবি তুলে যাচ্ছিস পথের। আমাদের কয়েকটা তোল।
" হুঁ ছবি তোলার জন্যই তো নিয়ে যাচ্ছিস আমাকে বুঝতেই পারছি।"
" বেশ ঠিক আছে ফেরার দিন শুনবো কি রকম অভিজ্ঞতা হলো।
এই সর তো,আমার বরের পাশ থেকে অনেকক্ষণ বসিনি তুই যা মুনিয়ার পাশে বোস।"
জুনির খোলামেলা কথা শুনে মুনিয়া হেসে ফেলে।আজ মুনিয়ার হাসিতে পাহাড়ী ঝর্ণার কলধ্বনি মন ছুঁয়ে যায় রাণার।
"ঐ দেখ নীলগিরি পর্বত, কি সুন্দর! আর চারপাশে কত সবুজ। রাণা দেখ দেখ।"
জানলা দিয়ে ঝুঁকে দেখে মুনিয়া,অনেকদিন বাদে এভাবে মুনিয়ার পাশে বসেছে রাণা। একটা হাল্কা আবেশ জড়িয়ে রেখেছে রাণাকে। হাত তুলে ছবি নিতে ব্যস্ত মুনিয়া। সবুজের ছোঁয়ায় আর মুনিয়ার প্রাণখোলা হাসিতে আজ সত্যিই দূর থেকে দুর্দান্ত লাগছে উটিকে
চলবে:-
********************
"রাণা ঐ দেখ কত গাঢ় সবুজ চা বাগান যেন আনন্দে গড়াগড়ি খাচ্ছে পাহাড়ের ঢালে। আর মেঘগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে পাহাড়কে।"
এক নিঃশ্বাসে বলে যাচ্ছে মুনিয়া আর রাণা ওর হাত দিয়ে দেখানো দূরের পাহাড় আর চা বাগানের দিকে তাকিয়ে।
আজ যেন সবুজ খামে করে এসেছে খুশির চিঠি মুনিয়ার মনে। মেঘ ডাকহরকরা ঝুন ঝুন করে ঘন্টি বাজিয়ে দৌড়ে চলেছে ওদের বাসের পাশে পাশে, পিঠে ব্যাগ ভর্তি খুশির চিঠির ঝাঁপি।
জুনিটা দাঁড়িয়ে ওদের দিকে মুখ করে দেখছে আর ম্যাজিসিয়ানের হাসি হাসছে।
অনেক সময়ই তো মনখারাপের উদাস মনে ম্যাজিসিয়ান বন্ধু দিতে পারে খুশির ছোঁয়া।
মনছোঁয়া দৃশ্যকে মুঠোয় ভরছে মুনিয়া খুশি মনে। ওর গালে আজ খুশির ছোঁয়া।
ওদের বাস এসে থামে,হৈ হৈ করে সবাই বাস থেকে নামছে। অম্লান বুকিং করে রেখেছিলো হোমস্টেতে। চারিদিকে গাছে ঘেরা ওদের হোমস্টে। বারান্দায় বসেই চাবাগান আর পাহাড় দেখা যায় মাঝে মাঝে কফি গাছ। ওদের হোমস্টেতেই কিছু কফি গাছ আছে।ঠিক যেন মনে হচ্ছে পাহাড়ের কোলে একটুকরো সবুজ আঁচলে ওদের আস্তানা। একটু ফ্রেশ হতেই একদম গরম কফি আর স্ন্যাক্স খেলো বারান্দায় বসে।
" এবার বল গোমড়ামুখো জায়গাটা কেমন?"
রাণা কিছু বলার আগেই জুনিকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুনিয়া," একদম চুমু সুন্দরী।"
" আচ্ছা রাণা এসব কি হচ্ছে বলতো ওদের? তুমি কি জানো ওদের সম্পর্কের ব্যাপারে?"
মুচকি হেসে বলে অম্লান, ওর কথায় সবাই হেসে ওঠে।
" হম্ খুব জটিল সম্পর্ক আমাদের, অনেকদিনের পুরোনো প্রেম। তখন জুনির তিনবছর বোধহয় আমিও তখন তিনের ছোঁয়ায়...
হয়েছে এবার..."
মুনিয়া গেয়ে ওঠে ' তখন তোমার একুশ বছর বোধহয়..আমি তখন অষ্টাদশীর ছোঁয়ায়। লজ্জা জড়ানো খুশির..'
অনেক দিন বাদে মুনিয়া গান গাইছে রাণা আর জুনি খেয়াল করে ওর চোখে যেন মেঘলা বিকেলের বিষণ্ণতা।হয়ত পুরোনো কোন স্মৃতির সাগরে ডুব দিয়েছে মন। জুনি ওর হাত ধরে টানে...
" আজ রাতে নাচ গান সব হবে,এখন চল একটু ঘুরে আসি। একটু হাঁটলেই তো সবুজের হাতছানি। যাবি?"
ওরা সবাই ঘোরানো রাস্তা ধরে এগিয়ে যায় দেখতে দেখতে।মুনিয়ার মনে আবার প্রজাপতির পাখার রঙের ছোঁয়া যা হয়ত ভুলিয়ে দেবে অবসাদের ধূসর রঙ আর কান্না মাখা দুঃস্বপ্নের রাত।
চোখ জুড়িয়ে যায় ওদের ঢেউ খেলানো সবুজ উপত্যকা দেখে। কটেজের মত বাড়িগুলো মাঝে মাঝে মাথা উঁচু করেছে আকাশ দেখবে বলে। হাঁটতে হাঁটতে ওরা চলে যায় উটি লেকের কাছ। চারিদিকে নানা জিনিসের পসরা। জুনিকে অম্লান বলে.." কেনাকাটা করবে নাকি?"
" দেখেছিস আমার বরটা কেমন বৌলেট প্রুফ হয়ে গেছে,কি সুন্দর কিনতে বলছে। আহা অতি সুবোধ বর। হ্যাঁ দেখি আগে তারপর কিনবো।"
মুনিয়া বলে.." জুনি বোটিং করবি? চল যাই কি সুন্দর সবুজের মাঝে লেকের জল টলটল করছে।সবাই বোটিং করছে।"
অম্লান বলে," এই যে তিনবছর বয়েসের প্রেমিকা জানোনা তোমার জি এফের জলে ভয়। এক্ষুনি হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসবে।"
" তুই যা প্লিজ রাণার সাথে,অম্লানও যাওনা আমি ততক্ষণে দেখছি কি কেনা যায়।"
" রাণা প্লিজ একটা উপকার করো আমি এখানে না থাকলে ওকে কন্ট্রোল করা যাবেনা।"
" থাক গিয়ে কাজ নেই,এখানে বসি।"মুনিয়ার গলায় একটু অভিমানের সুর বাজে।
তবে জুনি কিছুই শুনলোনা একদম ঠেলেঠুলে ওদের তুলে দেয়..." এনজয় ডিয়ার,জীবনে ছোট ছোট আনন্দ ঝুলি ভরে নিতে হয় কখনো মিস্ করিসনা। আর রাণা খুব ভালো সাঁতার জানে ওদের পুকুর সাঁতরে পার হয়।"
একটা বোটে শুধুই ওরা দুজন ওপরে খোলা আকাশ আর চারপাশে জল।চারদিকে মন ছোঁয়া প্রকৃতি। মুনিয়া অনর্গল কথা বলে যাচ্ছে আরা রাণা ভাবছে এতো প্রাণোচ্ছল মেয়েটা কি করে এত চুপচাপ হয়ে গেছিলো!
ভূপেন হাজারিকার আমরা যাত্রী একই তরণীর ইংলিশ ভার্সনটা বারবার মনে হলো রাণার উই আর ইন দ্য সেম বোট ব্রাদার। পৃথিবীটা বোধহয় সত্যিই একটা বড় নৌকো বা ট্রেন সবাই আমরা যাত্রী।কার কখন স্টেশন এসে যাবে কেউ বলতে পারেনা।
" রাণা ঐ দেখ পাখিগুলো, তোর ক্যামেরাটায় একটা ছবি তোল প্লিজ।"
উত্তেজনায় মুনিয়া রাণার হাতটা চেপে ধরেছে। ওর হাতে একগোছা চুড়ি। গত পুজোতে ওদের মেলা থেকে বোনেদের সাথে ও অনেক চুড়ি কিনেছিলো।
" হাতটা ছাড় নাহলে ছবিটা তুলবো কি করে? আস্তে আস্তে বলে রাণা।
"চুপ কথা বলিসনা উড়ে যাবে।"
মুনিয়া একটু লজ্জা পায় এবার। রাণা ক্যামেরায় পর পর ছবি তোলে।
অনেকগুলো ভালোলাগার ছোঁয়া কেমন যেন ভোকাট্টা ঘুড়ির মতো উড়িয়ে দেয় মনটাকে আকাশে।
****************
জুনির হাতে বেশ কয়েকটা পোটলা পুটলি অম্লানের মুখে মুচকি হাসি।ওদের হাতে ধরা আইসক্রিম ওরা আসতেই ওদের হাতে ধরিয়ে দেয়।
" নে আইসক্রিম খা,একটা থ্যাঙ্কস তো দে অন্ততঃ মুনিয়া। না গেলে কতটা মিস্ করতিস বলতো।"
" হ্যাঁ তোমাদের মিস্ করতে না দিয়ে আমাকে পুরো কিশমিশ করে দিয়েছে।"
" আচ্ছা তাই নাকি? হচ্ছে তোমার।"
আইসক্রিম হাতে নিয়ে ওরা একটা জায়গায় বসে।যথারীতি দুই কন্যারই বায়নার শেষ নেই এবার জুনির বায়না টয়ট্রেনে উঠবে।
" আরে ওতে তো বাচ্চারা ওঠে।"
" আমরাও বাচ্চা।"
টয়ট্রেন চড়ে একদম লেকের পাশের মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতেই ঝুপ করে পাহাড়ের পেছনে নেমে যায় সূর্য মামা। তারপরেও কিছুটা সময় থেকে ওরা ফিরলো ওদের হোমস্টেতে।
রাতে বারান্দায় বসে চাঁদনি রাতে আলো মিটমিটে পাহাড়ের শোভা দেখতে দেখতে গানে আড্ডায় হারিয়ে গেলো কিছুক্ষণের জন্য।
*******************
পাখির ডাকে ঘুম ভেঙে যায় মুনিয়ার, তাকিয়ে দেখে ঘুম ভাঙছে সবে পাহাড়ের, তখনো আবছা আলো সবে ফুটেছে। গায়ে স্টোল জড়িয়ে বারান্দায় এসে বসেছে। ওর গালে তখন বাতাসের শীতলতার আদর...
" গুডমর্ণিং.. এতো তাড়াতাড়ি উঠে পড়েছিস কেন?"
" ঘুম ভেঙে গেলো তাই দেখছি..তুই বলেছিলি না পৃথিবীটা খুব সুন্দর অসময়ে ঘুমিয়ে পড়িসনা। তাই যতটা পারি চোখ মেলে দেখি সুন্দর পৃথিবীর রূপ।"
" এই তো সুন্দর বললি। গ্ৰীন টি খাবি? আনবো বানিয়ে?"
মাথা নাড়ে মুনিয়া।
একটু পরেই কটেজ থেকে স্বচ্ছ কাঁচের কাপে গ্ৰীন টি নিয়ে আসে রাণা।
কতদিন বাদে ওরা এইভাবে একসাথে বসে চা খাচ্ছে। শুধু আজ ওরা চুপচাপ প্রকৃতি কথা বলছে নিজের ছন্দে।
জুনিটা এখনো ওঠেনি,ওদের বেরোনোর কথা নটায় নিশ্চয় তার আগে উঠে তৈরি হয়ে নেবে।
"হাঁটতে যাবি? চল ঐ সবুজ পাহাড়টাকে একটু ছুঁয়ে আসি।"
দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা মুনিয়া রাজি হয়ে যায় এক কথায়। হাল্কা স্টোল জড়িয়ে ওরা হাঁটে পাশাপাশি সবুজ পাহাড়ের ঠিকানায়।
মুনিয়া আজ খুব শান্ত একদম ভোরের মতই। হঠাৎই একটা হোঁচট খায় মুনিয়া ওকে ধরে ফেলে রাণা।
" অন্যমনস্ক হয়ে পথ চলছিস কিন্তু পরে যেতিস এক্ষুনি।"
" সাথে আছিস তো তোরা,জানি ঠিক সামলে নিবি।"
সত্যিই অন্যমনস্ক হয়ে ভাবছিলো মুনিয়া প্রমোদের কথা। এখনো লুকিয়ে প্রায়দিন ফেসবুকে সার্চ করে মুনিয়া ওকে। হোয়াটস আ্যপে দেখে ওর লাস্ট সীন।যদিও জুনি কবে বলে দিয়েছে ওকে ব্লক করে দিতে সব জায়গা থেকে তবুও পারেনি মুনিয়া। আসলে ভালোবাসতো যে খুউবব।
হয়ত এই সবুজ গালিচা পাতা পাহাড়ের পথে ওকে জড়িয়ে ধরে হাঁটতো প্রমোদ ওদের পরনে থাকতো ম্যাচিং ড্রেস।দুজনেই লাল,কালো বা সাদা। সত্যিই বুঝিয়ে গেলো প্রমোদ সব মানুষই কোথাও একা। বেশি নির্ভরতা ডুবিয়ে দেয় কান্নার সাগরে।
রাণা ওকে পছন্দ করে বোঝে মুনিয়া, কিন্তু গাছ ঝড়ে ভেঙে গেলে গাছ লাগানো যত সহজ প্রেম আগুনে পুড়লে নতুন ভালোবাসার ঘর বাঁধা অত সহজ নয়।হয়তো ঐ ঘরের ফাঁক ফোকর দিয়ে সবসময় উঁকি মারে পুরোনো স্মৃতি।
যা ভাবায়,কাঁদায় কখনো বা ভয় পাওয়ায়।
আবার হোঁচট খায় মুনিয়া, রাণা এবার শক্ত করে হাতটা ধরে। অদ্ভুত অনুভূতি হয় রাণার।এর আগে কখনোই ওর হাত ধরেনি এভাবে।
" আর হোঁচট খাবোনা,হাতটা ছাড় এবার।"
" ধরে থাকলে ক্ষতি কি আছে? কিছু না থাক বন্ধুত্বের টাইট গিট্টুটা তো আছে।"
মুনিয়ার মনে হয় একটা সিনেমার সংলাপ ওর খুব ভালো লেগেছিলো কি যেন ছিলো কথাটা... হাতের ওপর হাত রাখা সহজ সারাজীবন বইতে পারা সহজ নয়।
হঠাৎই মুনিয়ার আরেকটা হাত কেউ একটা ধরে ফেলে পেছন থেকে এসে।
" আমিও আছি বন্ধুত্বের গিট্টুতে,আমাদের কেন ফেলে এসেছিস শুনি? এই আমাদের একটা ছবি তোলোনা এইভাবে হাত ধরাধরি করে পেছন থেকে।আরেকটা সামনে থেকেও।"
" একদম তুলে দিচ্ছি। আরে আমি তো এইজন্যই এসেছি।"
" দেখেছিস কি ভালো বর আমার!"
জুনি গেয়ে ওঠে..একদিন দল বেঁধে কজনে মিলে যাই ছুটে যাই খুশিতে হারাতে।
এই পথ খুঁজে সব ভয় মুছে....কেউ তো জানেনা মনেরই ঠিকানা।
ঠিকানা খুঁজতে খুঁজতে অনেকটা চলে এসেছে মুনিয়ার হাতের মুঠোতে দুটো হাত দুই দিক থেকে।
আর হোঁচট খাওয়ার ভয় নেই জানে সামলে নেবে।
নিরিবিলি এক সুন্দর সকাল আর ধাপে ধাপে সুন্দরী উপত্যকা মন কেড়ে নেয়।
" চল এবার ফিরি,সাইড সিনে যাবো তো।রেডি হতে হবে।"
দুই সুন্দরী প্রায় এক পোশাকে একদম প্রজাপতির মতো বেরোলো কটেজ থেকে। হলুদ লালে সেজেছে জুনি আর মুনিয়া। সবুজের মাঝে এক টুকরো মন ভালো করা রঙের ছোঁয়া।তবে আজ গাড়িতে ঘুরে বেড়ানো চারধারটা।যথারীতি অম্লানকে সামনে করে ওরা তিনজন পেছনে।
বারবারই মুনিয়া ছুঁয়ে যাচ্ছে রাণাকে ওর গায়ে সেই চেনা পারফিউমের গন্ধ।জানলা দিয়ে দেখতে দেখতে আনমনা হয়ে যায় রাণা। সত্যিই না এলে হয়ত মিস্ করতো,থ্যাঙ্কু দিতে হবে জুনিকে।
ওরা দুই বন্ধু গল্প করতে করতে হেসে গড়িয়ে পড়ছে আর মাঝে মধ্যে ছবি তুলছে।
*****************
বোটানিক্যাল গার্ডেন,রোজ গার্ডেন,চার্চ, দোদাবেতা,উটি ক্লাব,নীলগিরি লাইব্রেরী, চেরিং ক্রশ,চা বাগান আরো অনেক কিছু দেখে আর স্টাইলে ছবি তুলে সবাই বেশ খুশি। জুনিও বরের সাথে প্রচুর ছবি তুললো। চা বাগানে দুই সখী পাখা মেললো প্রজাপতির মতো। হলুদ আর লালে আলো হলো চাবাগান।মুনিয়ার চুড়ি পরা নরম হাতটা অনেক আদর করলো চা পাতা গুলোকে। তার মধ্যেই খেয়ে দেয়ে ফিরে আসা খুশি হয়ে।
ঝর্ণার কলকলে তান আজ মুনিয়ার হাসিতে।
*************
কুন্নুর আর মধুমালাই ছিলো ওদের লিস্টে। নীলগিরি পাহাড়ের যেমন সুন্দর নাম তেমনি বোধহয় সৌন্দর্য।
বর্ষাতেও অনন্য নীলগিরি, ধাপে ধাপে সবুজের পসরা নিয়ে মন ভোলাতে বসে আছে পর্যটকদের। কুন্নুর যাওয়ার সময় ট্রেনের যাত্রাপথ এত সুন্দর যে বলার নয়। সবুজের সাথে হ্যান্ডশেক করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছে ট্রেন আর ওরা মুগ্ধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে।
মুনিয়ার মনে লেগেছে উচ্ছ্বলতার ঢেউ,এ যেন হঠাৎই আবার পলি সরে যাওয়া স্রোতস্বিনীর মত উচ্ছ্বল। ট্রেনের দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় মুনিয়া, শীতল বাতাসের নরম আদর ছুঁয়ে যাচ্ছে ওকে। জুনি ইশারা করে রাণাকে,ওর কাছে গিয়ে দাঁড়াতে।
রাণা গিয়ে ওর পাশে দাঁড়ায়, মুনিয়া হাতটা বের করে দিয়েছে দরজা দিয়ে বাইরে।
যেন হাত দিয়ে ধরতে চায় সবুজ আর নিজের ঘুঁণধরা মনটাকে আবার তাজা করতে চায়।
" পড়ে যাবি মুনিয়া, হাত ভেতরে কর।"
" তুই তো আছিস ধরবি।"
মুনিয়ার কথাটা নেশা ধরায় রাণার মনে।
মুনিয়ার খুব কাছে দাঁড়িয়ে রাণা একটা হাত দিয়ে ওকে গার্ড করে রেখেছে। ট্রেনের আওয়াজের মধ্যেই বলে...." একটা সেল্ফি নেবো এই ভাবে দুজনের?"©রুমাশ্রী সাহা চৌধুরী
চলবে:-
*************
খিলখিল করে হেসে ওঠে মুনিয়া, রাণার মুখটা একদম বোকা বোকা হয়ে যায়। মাঝে মাঝে কি যে ভুলভাল কথা বলে ফেলে।ইশ্ খুব মজা পেয়েছে মুনিয়া। মনে হচ্ছে এবার হয়তো সারা ট্রিপ এই কথাটা নিয়েই ওর পেছনে লাগবে।
" কেমন ভাবে সেল্ফি নিবি শুনি? তোর সেলফোনটা যদি সেল্ফি তুলতে গিয়ে একদম হেইলে পৌঁছে যায় মানে নরকে তাহলে কি করবি? দাঁড়া এখন ফোন পড়লে একদম গড়িয়ে যাবে একটু সেফ জায়গা দেখি যাতে ফোন পড়লে তুই লাফিয়ে পড়বি আর আমি চেন টেনে দেবো।"
মুনিয়ার কথাগুলো হাওয়াতে ভাসতে থাকে।সবুজের ছায়াপথ কেটে ছুটে চলেছে ট্রেনটা মাঝে মাঝে আনন্দের বাঁশী বাজিয়ে।
রাণার পিঠে একটা হাত রাখে মুনিয়া আরেকটা হাত দিয়ে ওর কোমরটা জড়িয়ে ধরে।
" এই নে,এবার তোকে ধরেছি শক্ত করে আর পড়ে যাবিনা। তবে তোর ফোন সামলানোর দায়িত্ব কিন্তু তোর। টাইটানিকের পোজ দেবো হাত উড়িয়ে বাইরে?"
সঙ্গোপনে রেখে দেয় রাণা আলিঙ্গনের মুহূর্তটা। মুখটা সত্যিই একটু বোকা বোকা লাগছে আসলে মুনিয়া যে এভাবে ওকে ধরতে পারে ভাবেনি।
" চল এবার ভেতরে ,জুনি রেগে যাবে কিন্তু।"
" কিছুই রাগ করবেনা,অম্লানদার ঘাড়ে মাথা দিয়ে নাক ডাকছে দেখ। আমি স্টেশন এলে আগে নামবো,তারপর ভেতরে যাবো।"
পাহাড়ের কোলে সবুজ রুমালের মত স্টেশনে থামলো ট্রেনটা। মুনিয়াকে আটকানো গেলোনা লাফ দিয়ে নেমে পড়লো স্টেশনে দুপাশে দুহাত ছড়িয়ে যেন হৃদমাঝারে সঞ্চয় করতে চাইলো অনেক কিছু।উল্টোদিক থেকে চা ওয়ালা আসছে তাই তাড়াতাড়ি চা নিয়ে জানলা দিয়ে জুনিকে আর অম্লানকে ডেকে চা খাওয়ালো রাণা।
" এসো সখী এবার ট্রেনে ওঠো নাহলে ট্রেন ছেড়ে দেবে তুমি ছুটে আসবে আর রাণা তোমাকে ধরবে চেন্নাই এক্সপ্রেসের মত।"
"তাহলে তাই করি,কেউ না কেউ ঠিক ধরবে।"
" একদম উঠে পড় চুপচাপ।"
মুনিয়ার হাত ধরে টানে জুনি। ট্রেন চলতে শুরু করে আবার নিজের ছন্দে।
................
চোখ জুড়োনো পাহাড় আর সবুজ ওড়নার ট্রেনের হাওয়ায় উড়ে ছুটে চলে যাওয়া দেখতে দেখতে অবশেষে গন্তব্যে।
ইউক্যালিপটাস,সিলভার ওক,ফার্ণ আর পাইনে ঘেরা স্বপ্নসুন্দরী কুন্নুর।নীল পাহাড়ের গায়ে সবুজ শাড়ির আঁচল জড়ানো তাই হয়ত তার রূপ আরো মায়াবী।
ওদের হোটেল আপার কুন্নুরে সবই অম্লানদার কৃপাতে যথাযথ বুকিং করা। মাঝে মাঝে ঝিরঝিরে বৃষ্টি মনে করিয়ে দিচ্ছে যক্ষের প্রেমকথা। আষাঢ়ের বর্ষার ছোঁয়ায় অসময়ের কুন্নুরও ভরা যৌবনের রূপের ছটায় মন ছুঁলো ওদের মত পর্যটকদের।
" শোন আজ একটু রেস্ট নিয়ে নি,হোটেলের বারান্দায় বসে ডুব দিই সুন্দরী কুন্নুরের রূপে,কাল সব দেখে নেবো।"
গল্প করতে করতে নীল পাহাড়ের সবুজ চাদরের ওম্ নিলো ওরা।বাইরে তখন বেশ শীত শীত ভাব। খাওয়া দাওয়া সব হোটেলেই সুতরাং কোন চিন্তা নেই শুধুই আড্ডা আর হাসিতে ডুব দেওয়া।মন যেন আজ সব ভুলেছে ওদের।এই জন্যই মাঝে মাঝে সবার মনেরই সবুজ স্নান জরুরী,অবশ্য সমুদ্র স্নানও দারুণ।
সবুজে চোখ আর মন ধুয়ে নিলে আবার ক্লান্তি কাটিয়ে তাজা হয়ে যায় মন।
মুনিয়া ঠান্ডায় একটু গুটিয়ে যায়,জুনি ওকে কাছে টেনে নেয় ওর চাদরে। রাণা ওর হাত ব্যাগ থেকে চাদরটা এনে বলে..." এতো কুড়ে এরা কি বলবো। এক চাদরে থাকবে তবুও উঠবেনা।"
" আমাকে আর কত প্রেম দেখতে হবে বলতো এদের?"
" কি হিংসুটে বরটা আমার দেখেছিস?"
কফিতে চুমুক দিতে দিতে সূর্যের ঝুপ করে ডুব দেওয়া দেখে ওরা।
একটু বাদেই নামলো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি,শেডের মধ্যে টুপটাপ আওয়াজে মনটা ছুয়ে যায় সবার।
" আরে সবাই এত চুপচাপ কেনো প্রকৃতি ভিজছে বৃষ্টিতে আমাদের মন একটু গানে ভিজুক। কি জুনি আজ কিছু হবেনা?"
অম্লানের কথা শুনে জুনি ধাক্কা দেয় মুনিয়াকে," কি রে গাইবি নাকি? আমার জানা কিছু করিস বুঝলি।"
" এই শোন আজ আগে রাণা আর অম্লানদা গাইবে তারপর আমরা গাইবো।"
" এই সেরেছে আবার আমাদের কেন? আমরা তো বাথরুম সিঙ্গার।"
" রাণা ভালো গান গায়,রাণা শুরু হয়ে যাও।"
দুই বান্ধবীর জোরজুলুমে মুখ খুলতেই হয় রাণাকে.....' কতবার তোর আয়না ভেঙে শোনাবো? আমি তো বেশি গান জানিনা।"
" আমরাও জানিনা,নতুন গান শুনতে চাই।"
রাণা শুরু করে...' টাপুর টুপুর বৃষ্টি।'
" জুনি এ কে রে? টাপুর টুপুর বৃষ্টি পড়ে নদে এলো বান শোনাচ্ছে!"
রাণা কিছু না বলেই গাইতে থাকে...
' টাপুর টুপুর বৃষ্টি নূপুর
জলছবিরই গায়
তুই যে আমার একলা আকাশ
মেঠো সুরের ছায়।
রঙবেরঙের বেলোয়ারি
সাতরঙা রঙ মুখ...
তোর মুখেতেই লুকিয়ে আছে
জীবনভরের সুখ রে,জীবনভরের সুখ।
যখন শিমুল পলাশ ঝরবে পথে,
দুলবে হাওয়া বুকে,থাকবো দুজন দুজনাতে
শপথ নিয়ে সুখে।'
আবছা আলো আঁধারিতে গানের কথাগুলো বাজে মুনিয়ার বাদলা মনে।গানের কথাগুলো বড় মিঠে,শুকনো রুক্ষ জমিতেও যেন বৃষ্টি নামিয়ে ফোটাতে পারে নানা রঙের ফুল।
" উঃ কি ভীষণ প্রেম পাওয়া গান গাইলি রে। তোর মনের উপত্যকা তো ভরপুর দেখছি।"
লজ্জা পায় রাণা,জুনি প্রায় শুয়ে পড়েছে অম্লানের গায়ে।
" এই জন্যই আমি গান করছিলাম না। এবার তোদের পালা। "
" নাহ্ এতো মিষ্টি গানটা সারারাত বাজুক কানে এরপর আর কিছু শুনবোনা আর গাইবোও না। চল মুনিয়া।"
" খুব ফাঁকিবাজ তো তোরা!"
****************
গতকাল রাতে বারবার ঘুম ভেঙেছে রাণার।ট্রেনে মুনিয়ার ছোঁয়া ঠান্ডা বাতাসের মতো শীতল পরশ মাখিয়ে গেছে। সারারাত বৃষ্টি হয়েছে ঝিরিঝিরি, তবে সকালে পাহাড়ের ওপর মেঘকুয়াশার আনাগোণা থাকলেও আকাশ পরিস্কার।
লনে অনেক ফুল দিয়ে সাজানো,বাইরে বেশ একটা ঠান্ডার আমেজ। তখনও নিস্তব্ধ চারপাশ। বেতের চেয়ারে বসে শরীরটা এলিয়ে দেয় রাণা..টুংটাং শব্দে চোখটা খোলে হঠাৎ ...মুনিয়া এসেছে।
" কফি খাবি তো? বানিয়ে নিয়ে এলাম। খুব ইচ্ছে করছিলো।"
কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে দুজনেই মুগ্ধ হয়ে তাকায় সামনে।
আজও বোহেমিয়ান মনে প্রকৃতির ছোঁয়া দিতে কিছুক্ষণের জন্য প্রাতঃভ্রমণে বেরোয় ওরা।সকালে উঠে বাইরে হাঁটাটা একটু নেশা হয়ে গেছে। একটু এগিয়েই বেশ চড়াই,রাণা বারণ করলেও শুনলোনা মুনিয়া। একটু উঠেই ব্যাস হাঁপাচ্ছে তখন।
রাণা ওর ঘাড়ে হাত দেয়,"চল আস্তে আস্তে তবে
বেশিদূর নয়।"
আজ আর রাণাকে বাধা দেয়না মুনিয়া ওর ঘাড়ে ব্যালেন্স করতেই হয় ওকে উপায় নেই।
ফিরে আসতেই দেখে জুনির মুখে মুচকি হাসি," বেশ আমাকে ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছিস। আজ আর ইচ্ছে করেই যাইনি দেখলাম বেশ চড়াই।"
*****************
প্রথমে একটু বাজারে ঘুরলো ওরা দোকানগুলো হোমমেড চকোলেটের পসরা নিয়ে সেজেছে। চকোলেট দেখে লাফিয়ে ওঠে মুনিয়া তাই বেশ কিছু চকোলেট কেনা হলো।রাণাও কিনলো কিছু যদি মা আসে তাহলে দেবে ডলকে।
আর দুটো দুই বান্ধবীকে দিলো। অফিসের জন্যও কিনতে হলো কিছু। ওখানে একটা ক্যাফে তে বসে সিলভার ওকের দিকে তাকিয়ে চুমুক দিলো ওরা হট চকোলেট ড্রিঙ্কসে।
মুনিয়া আর জুনি আজ সাদা লালে পাখা মেলেছে। ওদের গাড়ি এসেছে সাইট সিনের জন্য। দুইদিকের জানলায় দুই সুন্দরী, ওদের নাকি বমি হয়।রাণা স্যান্ডউইচ ওদের মাঝে।অম্লান বেশ আছে সামনে।
সবুজের সাথে নীল পাহাড়ের দোস্তি দেখতে দেখতে ওরাও ভেসে চলেছে মেঘেদের সাথে সাথে পাহাড়সুন্দরী কুন্নুরের মোহে।
সিমস্ পার্ক দেখার পর ডলফিন নোজ মুগ্ধ করলো সবাইকে।
কাটেরি ফলসের জল পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে ঝড়ছে নিচে। ফটো তোলাতে ব্যস্ত ওরা,মুনিয়া আর জুনির বায়নায় অস্থির দুই ফটোগ্ৰাফার।
মনের প্রজাপতি আজ পাখা মেলেছে সবারই,চোখ জুড়োনো সবুজকে তাই চোখে মাখিয়ে আবার ফেরা।
*********************
দেখতে দেখতে ওদের ফেরার দিন এসে গেলো। পাঁচটা দিন কোথা দিয়ে যে কেটে গেলো কখনো মধুমালাই জঙ্গলের পাখি হরিণ দেখে আর হাতির ডাক শুনে। আবার কখনো চা বাগানের সবুজ গালিচায় মন ডুবিয়ে। আবার কখনো এলোমেলো হাঁটা পাইন আর ওকের ছায়াপথ ধরে।
" ইশ্ এত তাড়াতাড়ি ট্যুরটা শেষ হয়ে গেলো!"
" আরো থাকবি কদিন? তুই আর অম্লানদা থেকে যা বরং।"
মুখে যা বলুক মন খারাপ করে রাণারও।আবার সেই মুখ ডুবিয়ে রাখা কম্পিউটারে। একলা ঘরে বসে কফি খাওয়া আর দেওয়ালের সাথে কথা বলা।
" কি রে মুনিয়া কিছু বল?"
মুনিয়ার মুখে একটা আলতো হাসির ছোঁয়া তবে একটা মনখারাপের মেঘ ওর দীর্ঘশ্বাস থেকে উড়ে গিয়ে মেশে ঐ আকাশের মেঘেদের দলে।
আবার যেতে হবে ওর চিড়িয়াখানাতে অনেকে আছে সেখানে,তবে সত্যিই কি কেউ আছে মনের কাছে?
জুনি এক মনে বলে যায়," শোন আমরা একটু টাকা জমিয়ে সেম কমপ্লেক্সে ফ্ল্যাট নেবো যাতে সকাল বিকেল আড্ডা মারতে পারি।"
রাণার চোখ তখন সেলফোনে আনমনেই বলে হুঁ।
মুনিয়ার ফোনে একটা টুং করে আওয়াজ হয়। ফোনটা খোলে মুনিয়া.....
জুনির চোখটা চলে যায় ওর ফোনের দিকে....লাফিয়ে ওঠে জুনি.." এই দেখি দেখি,আমাকে দেখা।"©রুমাশ্রী সাহাচৌধুরী
চলবে:-
*************
জুনি মুনিয়ার ফোনের দিকে হাত বাড়ায় একদম নেবে বলে।
" অন্যের ফোনে উঁকি দিতে নেই সখী।"
" ধুর নিকুচি করেছে অন্যের ফোন যদিদং হৃদয়ং তব তদস্তু হৃদয়ং মম। দে দে ফোনটা এক্ষুনি।"
" আচ্ছা রাণা বলতে পারো জুনি আমাকে বিয়েটা করেছিলো কেন?"
" ঠিক অম্নানদা আবার তোমাকে বিয়ে করবে বলে আমাকে একা ফেলে দিয়ে চলেও গেছিলো।"
" একদম না একা ফেলে যাইনি একটা খুব ভালো পার্টনার দিয়ে গেছিলাম তোকে। ছাড় তো ওসব কথা,এবার দেখা দিকি।"
অনেকগুলো মেসেজ এসেছে একসাথে, গ্ৰুপে আলোচনা চলছে শর্মাজী বিদেশে চলে যাচ্ছে,রেজেস্ট্রী সারা। মাঝে এসে বিয়েটা করবে।
আর মুনিয়ার কাছে এসেছে অনেকগুলো ছবি তার মধ্যে সেই রাণার সাথে জড়িয়ে ধরে ছবিটাও আছে।মানে বেশ কয়েকটা ছবি আছে। ছেলেটা পারেও বটে এখানে বসে খুটুর খুটুর করে ছবি পাঠানো শুরু করেছে।
ওদের টানাটানির মাঝেই জুনির ভয়ে ব্যালকনির একদম কোণে চলে গেছে রাণা।
শেষে জুনিরই জয় হলো একদম ফোনটাকে দিতে হলো ওকে।
" আরিব্বাস এতো টাইটানিককেও ছাড়িয়ে গেছে।"
লজ্জা পায় মুনিয়া.." ধ্যাৎ না ধরলে যে তোর বন্ধু পড়ে যেতো। তখন আমাকেই বলতিস তোকে পাহারা দিতে বন্ধুকে পাঠালাম ফেলে দিলি? তাই ধরে রেখেছি।"
বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়ে জুনি..." তা বেশ বেশ খুব ভালো। আমার বরটা যদি একটু বুঝতো দোস্তি মানে কি?"
"খুব বুঝি,তাইতো বন্ধুদের মাঝে বসলে সারাক্ষণ।"
" আরে এই রাণা এদিকে আয়,লজ্জায় বারান্দা থেকে লাফ দিসনা যেন আবার।"
সত্যিই ছবিটা অসময়ে শেয়ার করা হয়ে গেছে। জুনিটা কি ভাবলো কে জানে?
ঐ দূরে পাহাড়ের কোলে মিটমিটে আলো জ্বলছে অনেকগুলো।হয়তো ওখানেও আছে কেউ।প্রমোদও ছিলো হয়ত এমনি দূরে কোথাও তবে আরো দূরে চলে যাচ্ছে। অবশ্য কিই বা আসে মুনিয়ার তাতে। আচ্ছা মন খারাপের মেঘটাকে এই নীলপাহাড়ে মেঘেদের দলে রেখে বাড়ি মানে হস্টেলে ফিরলে কেমন হয়?
একটু কি বেশি নির্লজ্জ হবে মুনিয়া? আচ্ছা ঐ ছবিগুলোর মধ্যে একটা স্ট্যাটাস করলে কেমন হয়।দেখুক প্রমোদ বুঝুক।পরক্ষণেই নিজেকে শাসন করে মুনিয়া।ওটা ঠিক হবেনা কিছুতেই।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাণার মনে হয় এতো রঙ আর সবুজের ঘনঘটা দেখার দিন আজই শেষ। এরপর হয়তো কোনদিনই মুনিয়া কাছ ঘেঁষে বসবেনা এমনভাবে বারবারই চোখ চলে যাবেনা ওর কালো চোখে। সত্যিই মনটা খারাপ লাগছে।
"কি রে আজ গান হবেনা মুনিয়া? রাণা এদিকে তো আয়।ভালো হয়েছে ছবিটা,সত্যিই।"
" আজ তোরা গাইবি আজ আমি গাইবোনা। জুনি আজ তুই গা।"
জুনিও বেশ ভালো গান গায়..." আমারো পরাণ যাহা চায় তুমি তাই তুমি তাই গো।"
কলারটা উঁচু করে অম্লান.." আমার জন্য গাইছে মনে হয়। কি বলো রাণা?"
" তুমিও ধরো কিছুটা।"
ওরা একসাথে গাইছে..' তুমি সুখ যদি নাহি চাও যাও সুখের সন্ধানে যাও।'
চোখের কোলে জলের ফোঁটাটা চিক চিক করে মুনিয়ার।
কলেজে একবার গেয়েছিলো গানটা।
" মুনিয়া এবার তুই কর। অম্লান একটু কফি বলো প্লিজ।"
" আজকে আমার ভালো লাগছেনা।সত্যিই মুড নেই।"
জুনি ওকে কাছে টেনে নেয়.." মন খারাপ? কত ভালো ছবিটা রাণা দিয়েছে বলতো।সামনের দিকে তাকাতে হয় মুনিয়া দেখ আবার এক নতুন ভোর খুশি সাজিয়ে আসবে।"
কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে গল্পে হাসিতে আবার ছন্দে ফিরতে চায় ওরা। কাল এখান থেকে নটা নাগাদ বেরোনো।
রাতে রাণা টেক্সট করে "ঘুমোলি?"
" নাহ্ ঘুমোনোর চেষ্টায় আছি।"
' কাল সকালে যাবি হাঁটতে?"
" আবার চড়াই ভাঙা?"
" যদি ঘোড়া পাই।"
" আচ্ছা দেখছি।"
ঘুমিয়ে পড়েছিলো হঠাৎ, ঘুম ভেঙে দেখে আজ একটু দেরি হয়ে গেছে। মুখ ধুয়ে বাইরে এসে দেখে মুনিয়া বসে আছে পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে।
" ইশ্ একটু বেলা হয়ে গেলো। যাবি?"
"চল একটু হেঁটে আসি এই কাছ থেকেই।"
ব্রাউনিংয়ের দ্য লাস্ট রাইড টুগেদারের প্রথম স্তবকের কয়েকটা লাইন মনে পড়ে গেলো রাণার হঠাৎ...
'My whole heart rises up to bless
Your name in pride and thankfulness
Take back the hope you gave_I claim
Only the memory of the same..'
ঠান্ডা হাওয়া মন ভরানোর সাথে সাথে যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিলো আবার কবে হবে এমনভাবে পাশাপাশি হাঁটা। হয়ত এই স্মৃতিটুকু থেকে যাবে মনের মাঝে।
" মাঝে মাঝে চলে আসিস আমার বাড়িতে। আমি তো হস্টেলে যেতে পারবোনা যখন তখন।"
আজ মুনিয়া অনেকটা শান্ত। হাসছে কম। হয়ত বা ওরও মন খারাপ।
" দেখি রে আসলে একটা ক্রাইসিস শুরু হয়েছে এখন সব দিকেই। ভাবছি চাকরিটা ছেড়ে বাড়ি চলে যাবো তারপর ওখানে গিয়ে দেখবো যদি এম টেক করে অন্য কিছু করা যায়। মাও তাই বলছে, আসলে মাইনেটাও তো তেমন নয়।
ফালতু বাড়ি ছেড়ে এতদূরে রয়েছি।"
ওর কথাগুলো শুনে মনটা মেঘকুয়াশায় ঢেকে যায় রাণার। তাও ভাবতো এখানে ওর অল্প পরিচিত হলেও কেউ আছে। এরপর তো শুধু একা একাই থাকা।
ওরা হোটেলে ফিরতেই ব্রেকফাস্টের সময় হয়ে গেছে। তাই তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে নেয় কারণ বেরোতে হবে।
সব সেরে নীলগিরিকে টা টা বাই বাই করে আবার ব্যাক টু প্যাভিলিয়ন।
জুনি আওয়াজ দেয়.." কদিন পরে আবার বেরুবেরু হবে।"
" অফিসের চাকরি ছেড়ে চল ট্যুরিজম কোম্পানি খুলে ফেলি।"
" আমাকেও সঙ্গে নিস তোদের।"
হাসতে হাসতেই ফেরার তাড়া। ফেরার সময় সবাই ক্লান্ত ওরা কিছুক্ষণ পাহাড় দেখতে দেখতে চোখটা বুজে আসে সবারই। জুনিও ঘুমোচ্ছে আরামে,মুনিয়া ঘুমিয়ে পড়েছে একটা সময় ঢুলতে থাকে এমন ভাবে যে জানলায় ঠোকা খাবে। রাণা একটু সরে বসে,মুনিয়ার মাথাটা ওর ঘাড়ে জায়গা করে নিয়েছে। ঘুমের ঝোঁকটা কেটে যায় রাণার। মুনিয়ার গায়ের গন্ধ আর চুলের গন্ধটা বড় কাছে ভাসছে।
আবার একটা আবেশে চোখটা বুজে যায় চোখটা খুলে দেখে মুনিয়া উঠে বসেছে।
যাক্ অবশেষে আবার নিজেদের জায়গায়।মুনিয়াকে পৌঁছে রাণা ফিরলো নিজের ঘরে। জুনিও বিদায় নিয়েছে টা টা করে।
রাতে বেশ একটা ঘুম আর তারপর দিন লেগে পড়া কাজে। কিন্তু ক্লান্ত শরীর হলেও চঞ্চল মন চট করে ঘুমোতে দিলোনা।সেলফোনে চোখ রাখে রাণা,মনে মনে হাসে কাল আর মুনিয়ার সাথে পাহাড়ের ঘোরানো পথে সকালে হাঁটতে যাওয়া নেই।হয়তো এই কদিন ঘোরার তাগিদেই একটু বেশি কাছাকাছি এসেছিলো ওরা।
তাই এখন পরিতৃপ্ত মনে শুধুই স্মৃতির অনুরণন।
*********************
যথারীতি মা আবার ফল্স দিলো রাণাকে,ডলের পরীক্ষা পিছোলো মায়ের আসারও কোন চান্স নেই তারমানে সেই পুজোতে বাড়ি যাওয়ার অপেক্ষা।
দেখতে দেখতে প্রায় একটা মাস কেটে গেছে। জুনিটা খুব ঝামেলা করছিলো অগত্যা মহারাণীর বাড়িতে গেট টুগেদার।
অনেকদিন বাদে আবার ওরা একসাথে হয়েছে। সবারই মনে খুশির ছোঁয়া।রাণা।আসার আগেই আজ মুনিয়া চলে এসেছে।
ও এসে অবাক..." আমি বললাম আমি নিয়ে যেতে পারি কিছু বললোনা। আর সকালে এসে হাজির!"
" সারপ্রাইজ ডিয়ার, ও তো কাল থেকেই এখানে আছে। বেচারা বোর হয়ে গেছে হস্টেলে থেকে থেকে। একবার নিজে একা থাকার অভ্যেস হয়ে গেলে অনেকের মাঝে ভালো লাগেনা।"
ওকে একটু আদর করে নিই বুঝলি আসলে সামনে মাসে কলকাতা চলে যাচ্ছে তো তাই ভাবলাম থাক একটা দুটো দিন আমার কাছে।
বুকটা কেমন যেন খালি হয়ে যায় রাণার। নিজেও বুঝতে পারেনা কেন....দুপুরের খাওয়াতে অনেক কিছু রান্না করেছে জুনি তবে রাণার যেন কেমন সব বিস্বাদ লাগলো। ভালো করে যেন খেতে আর হাসতে কিছুই করতে পারলোনা।
মুনিয়ার ওর জন্য সত্যিই কোন ফিলিংস নেই বুঝতে পারে রাণা তাই এতবড় একটা সিদ্ধান্ত হাসতে হাসতে নিয়ে নিলো। কি খুশি ওরা সবাই,হেসে গড়িয়ে পড়ছে। হবেই তো নিজের বাড়িতে যাওয়ার তো আনন্দই আলাদা আর তার মধ্যে হস্টেলের থেকে মুক্তি।কিন্তু রাণার সব ফাঁকা লাগছে কেন?
নিজেকে জিজ্ঞেস করে উত্তর পায়না রাণা। কবে তো মুনিয়ার সাথে থাকবেনা বলে আলাদা বাড়ি নিয়েছিলো। ওর সাথে দেখাও হয়না তেমন। মাঝে মাঝে দেখা হয় তবে হয়ত সেটাই অনেক।এখন তো আর দেখাও হবেনা।
বারান্দার এক কোণে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরায় রাণা। ইটকাঠ পাথরের জঙ্গলে হঠাৎ নিজেকে খুব একা মনে হচ্ছে। বাড়ি থেকে চলে আসার সময় যে ফিলিংসটা হয় ঠিক তেমন হচ্ছে।
" তুই এখানে একা দাঁড়িয়ে কেন? সেই ঘুরে আসার কতদিন বাদে দেখা হলো তবুও এতো মিসিং কেন তুই?"
" তোকে কি যেতেই হবে? মানে না গেলেই নয়।"
" হ্যাঁ রে চলে যাবো হস্টেলের মেয়েগুলো খুব একটা ভালো নয় আমি আ্যডজাস্ট করতে পারছিনা। তারপর অফিসটাও ঠিকঠাক চলছেনা প্রচুর চাপ স্যালারি কম। তাই ভাবছি চলে যাবো।ভাবছি মানে ঠিক করেই নিয়েছি।"
"যদি আমার ওখানে থাকিস,তাহলেও কি থাকা যায়না?"
পেছন থেকে হাসির আওয়াজে খুব লজ্জা পেয়ে যায় রাণা।
" ওহ্ তোর পেটে পেটে এতো? ইশ্ আগে থেকেই যদি রাখতিস তাহলে মেয়েটাকে এভাবে চলে যেতে হতনা। সেই বললি,কিন্তু দেরি হয়ে গেলো রে। সবই তো ঠিকঠাক হয়ে গেছে।"©রুমাশ্রী সাহা চৌধুরী।
চলবে:-
********************
রাণার এবার সত্যিই খারাপ লাগে যে মেয়েটা ওকে একসময় থাকতে দিয়েছিলো হঠাৎই ও তার বাড়ি ছাড়লো।হয়ত ঠিক ছাড়াটা দরকার ছিলো তখন কারণ কথাই ছিলো ছমাস থাকার।তাই তুই এবার চলে যা বলার থেকে নিজে থেকেই চলে আসা ভালো।
সত্যিই তো মুনিয়া তখন ওকে আটকায়নি যাসনা বলে। তবে জুনি যখন ওকে মুনিয়াকে রাখার কথা বলেছিলো তখন ঐভাবে অভদ্রতা না করলেই পারতো তাহলে হয়তো হস্টেলে থেকে ডিপ্রেসড হয়ে মেয়েটাকে চলে যেতে হতনা।
মুনিয়া রেলিংয়ে হাত রেখেছে,জুনি সমানেই বকবক করে যাচ্ছে..." আমি তো অনেক বললাম থেকে যা,ওখানে তো এখনো কিছু হয়নি।একেবারে পুজোর সময় যাবো সবাই তখন দেখা যাবে যদি কিছু বেটার পাওয়া যায়।"
রাণার মনে হলো গত পুজোতে একসাথে দুজনে গেছিলো যদিও তখন তেমন ফিলিংস ছিলোনা রাণার।মুনিয়াকে তখন একটা উৎপাত মানে বেশ মেজাজী মেয়ে বলে মনে হত ডোমিনেটিং ও। তবে এই পাঁচদিনে কেমন যেন একটুকরো খোলা আকাশের মতো লেগেছে মুনিয়াকে। এই কদিন মিস্ করেছে মুনিয়ার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত। শুধু কিছু বলতে পারেনি।
খুব রাগ হয় রাণার সবসময় ছেলেদেরই বা বলতে হবে কেন যে আই মিস্ ইউ।
মুনিয়া তো একটা টেক্সট করেও বলতে পারতো নীলপাহাড়ের দিনগুলো খুব মিস্ করছি।
বা অন্য কিছু যাতে একটু বোঝা যায় ওর ফিলিংস আছে।
" কবে যাচ্ছিস? টিকিট কাটা হয়ে গেছে?" রাণা বলে।
" পেলামনা রে,আসলে হঠাৎ ঠিক হলো তো। তৎকালে কেটে নেবো ভাবছি।"মুনিয়া বলে।
" একা পারবি যেতে? নাকি আন্টি আসবে?"
হাসে মুনিয়া," একাই যেতে হবে রে।মা বাবা পারবেনা এখন আসতে।"
গলাটা একটু ঝেড়ে রাণা বলে..." আমি যাবো সাথে? আচ্ছা না গেলে হোতনা?"
হাসে মুনিয়া, আজ ওর হাসিটা পাহাড়ি ঝর্ণার মত নয় একদম দুষ্টুমি মাখা মুখে হাসে মুনিয়া সেই আগের মতো।
আর জুনি সেই বিখ্যাত হায়না হাসিটা হাসে ..." তুই থেকে যেতে বলছিস ওকে?"
" মানে বলছিলাম,যদি থেকে যাওয়া যেতো তাহলে আবার ট্রিপে যেতাম। আড্ডা মারতাম।"
মুনিয়া দ্যাখ কি করবি...রাণা যখন ভালো করে খেলোনা,এতো করে থাকতে বলছে তোকে। কি করবি বলতো? ও অসুস্থ হয়ে গেলে তো সবারই খারাপ লাগবে।
" আমাকে তো যেতেই হবে রে,সব ঠিক হয়ে গেছে।"...কলকাতা এলে দেখা হবে।"
রাণা আর কিছু বলতে পারেনা...এই শহরের রঙটাই তো ফিকে হয়ে যাবে মুনিয়া না থাকলে। কলকাতা গেলে আর কখন দেখা হবে? ওকে তো বাড়ি চলে যেতে হবে। আর হয়তো কোনদিনই ফিরবেনা নীলগিরির সবুজের পাশে হাত ধরে হাঁটার দিনগুলো।
*********************
সন্ধ্যের কফির সাথে আড্ডা দিতে গিয়ে রাণা বারবার মন হারালো। সত্যিই মেয়েগুলো যেন কেমন হয়! দিব্যি হেসে গড়িয়ে পড়ছে।যদি চলেই যাবে তাহলে রাণার ঘাড়ে হাত দিয়ে ছবি তুলেছিলো কেন? সবটাই কি বন্ধুত্ব? এতোদিনে কি একটুও মুনিয়ার মন ছুঁতে পারেনি রাণা? নাকি ও থাকতে দেয়নি বলে এভাবে শোধ তুলছে।
নাহ্ এবার যেতে হবে,রাণার আজ ইচ্ছে করছে মুনিয়াকে নিয়ে পৌঁছে দিতে ওর হস্টেলে। তাই বলেই ফেলে..." তুই যাবি তো আমার সাথে?
মুনিয়ার সাথে জুনির চোখাচোখি হয়, অম্লানও হাসে। অম্লান বলে..." একি তোমরা বলোনি রাণাকে? শোন ভাই ইনি এখন যাবেননা। আজ থাকবেন,তুমিও থাকতে পারো কোন প্রবলেম নেই।"
এবার সত্যিই রাণার রাগ হয় মনে মনে ভাবে চলেই তো যাবি..একটু ক্ষণ সাথে থাকলে কি হত?
" আমাকে যেতে হবে,ওদিকে তালা বন্ধ হয়ে যাবে গেটে।"
গুডনাইট করে চলে যায় রাণা। পৌঁছে জানায় জুনিকে।সবাই যেন শত্রু হয়ে গেছে,খুব রাগ হচ্ছে। ওকে একবার কেউ বললোনা মুনিয়া চলে যাচ্ছে।
**************
দেখতে দেখতে মুনিয়ার যাবার দিন এসে যাচ্ছে। প্রতিদিন ভোরে বিছানায় শুয়ে তারিখের হিসেব করে রাণা। ভেবেছিলো একদিন দেখা করবে পরে ভাবলো কি দরকার মায়া বাড়িয়ে। ওর মনে যখন কোন ফিলিংস নেই তখন ও যা ভাবছে তাই করুক।
মাঝে মুনিয়ার সাথে দুএকটা টেক্সট হয়েছে খুশি আর ধরেনা মুনিয়ার বাড়ি যাচ্ছে বলে।ওকে বললো..." তোর যদি কিছু পাঠানোর থাকে আমাকে দিয়ে দিস,আমি পৌঁছে দেবো।
একটু আঁতকে ওঠে রাণা..." তুই আমাদের বাড়ি যাবি নাকি?
" গেলিই বা কি হয়েছে,আঙ্কেল আন্টি নিশ্চয় খুশি হবে আমাকে দেখে।"
ইশ্ কাজললতার ব্যাপারটার পর আর যেতে কেমন যেন লাগে। তবুও রাণাকে একটু ডাউন দিতে বললো.." ডল তো আসে মাঝে মাঝে কলকাতাতে ওকে বলবো নিয়ে যাবে।"
খুব রাগ হয় রাণার মনে মনে বলে.." থাক আমি কিছু পাঠালে পাঠিয়ে দেবো কুরিয়ারে। তোর ঝামেলা করতে হবেনা।"
" তোর কি হয়েছে?"
" কিছুনা,কি আবার হবে?"বলে রাণা। কি হবে ওকে বলে?আসলে ওর মনটা কেউই বুঝলোনা।
মুনিয়ার চলে যাবার কথা আজই,রাত্রে ট্রেন। জুনি বলেছে যাবে স্টেশনে,মানে ওর ওখান থেকেই যাবে মুনিয়া।
"তুই আসবি তো স্টেশনে?মানে তোর আসা উচিত।"বলে জুনি।
" তোর বন্ধু তুই যাস,তাহলেই হবে।"মুখে জুনিকে যাই বলুক যখন মুনিয়া ফোন করে ওর রিনরিনে গলায় বললো," এতোদিন ভেবেছিলাম একদিন দেখা করবি,যখন করলিনা তখন বুঝলাম রাগ করেছিস। আজ স্টেশনে আসিস একবার প্লিজ, শেষবারের মতো দেখা করিস।"
শেষবার কথাটা কেমন যেন কানে লাগলো রাণার..." ধুস্, কি যে বলিসনা তুই শেষবার কেন?কতবার দেখা হবে। তুই তো বলেছিস কলকাতাতে দেখা হবে।"
" জানিনা কি হবে আসলে বাড়ি থেকে বিয়েরও চেষ্টা করছে। আসিস আজ।"
রাণার মনটা খারাপই ছিলো শেষবার কথাটাতে আরো খারাপ হলো। নাহ্ আজ স্টেশনে যাবে।
যেদিন তাড়া থাকে সেদিনই যত ঝামেলা এসে উপস্থিত।আজই মিটিং,আজ বাড়তি চাপ সত্যি মেজাজ হারায় রাণা। যাইহোক অবশেষে বাইকে স্টার্ট দেওয়া,ইশ্ অনেকটা দেরি হয়ে গেছে তারপর রাস্তা এত জ্যাম একটা সময় ভীষণ চাপ লাগে রাণার মুনিয়ার কথাটা কানে ভাসে...শেষবারের মত দেখা।তার মধ্যেই জুনি ফোন করলো ও কোথায়।
স্টেশনে পৌঁছে দেখলো ট্রেন ছাড়তে মোটামুটি তখন দশমিনিট। সত্যিই মনে হলো যেন সিনেমার কোন সিনে অভিনয় করছে রাণা। একটা সময় বুকে একটা অদ্ভুত কষ্ট দেখা হবে তো?
যাক একদম শেষে পৌঁছনো,জুনি অভিযোগ করে," সত্যিই তুই যে কি না!"
মুনিয়া বলে.." ওকে একটু শ্বাস নিতে নে একদম হাঁফিয়ে গেছে বেচারা।"
ওদেরকে কথা বলার জন্য এক দুমিনিট দয়া করে দিয়ে জুনি নেমে গেলো ওর কর্তাকে নিয়ে।
রাণার মুখটা আজ বড়ো ক্লান্ত মুনিয়া বলে.." একটু হাস।"
" আমার হাসি পাচ্ছেনা,সত্যিই খুব রাগ হচ্ছে।"
অনেকদিন বাদে গেটের কাছে রাণার হাতটা ধরে মুনিয়া ওর কাঁধে মাথা রাখে..." ভালো থাকিস আবার দেখা হবে। নেমে যা ট্রেন থেকে সিগন্যাল হয়ে গেছে।"
সত্যিই কেন যেন আর পারেনা রাণা মুনিয়ার হাতটা ধরে সেই যেমন নীলগিরিতে ধরেছিলো..." তুই যাসনা মুনিয়া, থেকে যা।"
খিলখিল করে হাসে মুনিয়া.. ট্রেনে হুইসেল দিয়েছে। একটুও মন বলে কিছু থাকেনা বোধহয় মেয়েদের ওর সরলতার মজা ওড়ালো কেমন মেয়েটা।এই সময় ওর হাসি এলো! ইশ্ কেন যে বলতে গেলো থাকার কথা।
Comments
Post a Comment