Skip to main content

ছদ্মবেশী

#ছদ্মবেশী#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

"একটা লাস্ট প্রেমিকা প্রেমিকা সেক্সি পিক্স দাও প্লিজ।এরপর তো কালই বৌ বৌ হয়ে যাবে দেখতে।তখন তো এই লুক্সটা পাবোনা।"
         " এই শোনো আমি কিন্তু অত লক্ষ্মীমন্ত,গুণমন্ত আর কি সব যেন বলে সেইসব বৌ সেজে সারাক্ষণ থাকতে পারবোনা। শাড়ি পরে থাকতে হলে আমার দম আটকে আসে।আর তাছাড়া শাড়ি আমি ঠিক ম‍্যানেজও করতে পারিনা।"
       " আরে এত চাপ নিচ্ছো কেন? আমি মাকে বলে রেখেছি।তোমার বৌমা বাচ্চা মেয়ে শাড়ি পরার অত অভ‍্যেস নেই তাই ওর মত ওকে থাকতে দিয়ো।"
            বাচ্চা মেয়ে শুনে,দিয়ার একটু হাসিই পায়। সত‍্যিই কি করে যে প্রেমটা হয়ে শুভমের সাথে। অবশ‍্য দিয়ার সব সময়ই একটু ম‍্যাচিওর আর কেয়ারিং ছেলে পছন্দ আর শুভম ঠিক তেমনি।অফিসে সব সময় ওকে প‍্যাম্পার করা,কেয়ার করা করতো। এই সাপোর্টটা সবাই দিতে পারেনা ঠিকঠাক। আর দেখতেও তো বেশ ভালো হ‍্যান্ডসাম, সেক্সি,টল।
          সেক্স আ্যপ্রোচটা খুব ম‍্যাচিওর আর বোল্ড মানে ম‍্যানলিও। একদম পারফেক্ট পুরুষমানুষ যাকে বলে। ঐ ন‍্যাকা ন‍্যাকা ম‍্যাদামারা লালটু ছেলে নয়। আর ওখানেই মন হারিয়েছে দিয়া।
                 শুভমের সবসময়ই একটা ইচ্ছে ছিলো বৌ হবে একদম ছিমছাম, লম্বা,সুন্দরী আর সেক্সি ঠিক সেইরকমই দিয়া।
তবে আয়না বলে শুভমই বা কম কিসে? একদম ম‍্যানলি জিমে যাওয়া সুন্দর পেটানো চেহারা ওর।
         দিয়া বিছানায় শুয়ে একটা সেল্ফি  তুলে পাঠায় হাত উঁচু করে তুলে। দেখুক শুভম ও কি ড্রেস পরে আছে।হটপ‍্যান্ট আর একটা সরু ফিতের গেঞ্জি পরা এখন দিয়া।একটু আগেই মা এসে তাড়া দিয়ে গেলো, "একটা টপ তো অন্ততঃ পর,আর প্লাজোটা পরে নে নিচে।"

"পরছি মা,আমার ঘরের তো দরজা বন্ধ। এখন কাউকে পাঠিয়োনা ওপরে। উফ্ এর পর তো শুরু হবে শাড়ি কাহিনী।"
    মোবাইলে মেসেজ ঢোকে.." উফ্ বিয়ে বলে কি আরেকটু বেশি সুন্দরী হয়েছো মনে হচ্ছে,সেক্সিও।"
     " ওয়েট,ওয়েট এতো ছুকছুক করা ভালোনা কিন্তু। এতো শুধু ট্রেলার,পিকচার অভি বাকি হ‍্যায়।"
        শরীরের ভেতরটা কেমন যেন অস্থির করে শুভমের। এক বছরের কোর্টশিপে ঐ চুমুটুমু খাওয়া ক্লোজ হাগ ছাড়া তেমন এগোতে দেয়নি দিয়া। যদিও শুভমের ধৈর্য্য মানতে চাইতোনা মনে হত একটু বেশিই সাবধানী দিয়া। সবসময় বলতো ছেলেদের বেশি ছাড় দিতে নেই।তারপর সব পাওয়া হয়ে গেলে তুমিই বলবে আমার চরিত্রের দোষ আছে। আরো কতজনকে দিয়েছি এই ভাবেই।
     নাহ্ তাড়াহুড়ো করেনি শুভম,দিয়াকে ওর সব দিক দিয়েই পছন্দ।এর আগেও যে কাউকে খেলায়নি এমন নয়।খেলোয়াড় হিসেবে বেশ পাকা শুভম তবে কিছুদিন বাদেই কেমন পানসে লেগেছে।ধুর ভীষণ ম‍্যাচিওরিটির অভাব কেমন যেন ন‍্যাকা। আবার দুএকটা একদম এক্সট্রা পাকা। সব দিয়ে থুয়ে হাতে রাখতে চায় ছেলেদেরকে। ভালোবাসাটা যে কি তা এখনো বুঝলোনা শুভম,অভ‍্যেস,দেহ নাকি যৌনতা? তবে যৌনতা থাকতেই হবে,ওটা না থাকলে ঐসব প্লেটোনিক লাভ টাভ ঠিক হয়না।
      ধুর সে যা হয় হবে।আপাততঃ কাল দিয়ার সাথে ওর বিয়ে।দিয়ার মত সুন্দরী মেয়ের বর হবে ও।দিয়ার শরীরটা ওর হবে একদম ওর নিজের,অবশ‍্য ওর শরীরটাও দিয়ার।
                 বাড়িতে সানাই বাজছে সকাল থেকেই,আত্মীয়স্বজনও কেউ কেউ এসে গেছে। ওর মাসিরা এসেছে। ছোট পিশি এসেছে,বড় কাকুরাও হয়ত এসে পড়বে সন্ধ‍্যেয় বা রাতে। ছোট কাকু অবশ‍্য কাল আসবে বলেছে। ওদের পরিবার বেশ বড়। দিয়ার আবার সেটাই পছন্দ অনেক দেওর ননদ থাকবে। ও তো ছোট থেকেই একা মানুষ হয়েছে।
" আরে আমিও তো এক ছেলে। সবাই তো আলাদা থাকে।"
" সেটাই তো ভালো।তবুও তো উৎসব অনুষ্ঠানে এক জায়গায় হতে পারো তোমরা সবাই।"
                  "তবে আমার মাসিরা সব সময় আসা যাওয়া করে। মায়ের যখন হার্টের সমস‍্যা হয়েছিল তখন তো ছোট মাসিই সামলালো। ছোটমাসি অবশ‍্য গ্ৰামে থাকে।গ্ৰাম মানে বেশ গ্ৰাম।কি দেখে যে প্রেম করে ঐ গ্ৰামে গিয়ে পড়েছিলো মাসি কে জানে? কপাল খারাপ হলে যা হয়।"

     " ঐ যে মাসি উইডো তোমার তাইনা?"

"হ‍্যাঁ মেসো হঠাৎই মারা গেলো মাসির ওপর যা ঝড় যাচ্ছে পরপর। এমনিতেই ওদের অবস্থা ভালোনা। তারপর তো এই মাসতুতো বোনটাও হঠাৎই..."
      গলাটা আটকে আসে শুভমের। দিয়া সামলায়.." হ‍্যাঁ তুমি বলেছিলে, হঠাৎই সুইসাইড।"
                           
                   "মেজো আর সেজোমাসি এসেছে।ছোটমাসি নাকি বলেছে আসবেনা।মায়ের আবার তাইজন‍্য মনটাও খারাপ।যদিও কিছু করার নেই,এমন একটা ঘটনার পর কি করেই বা মাসি আসবে? আর মুনকে তো মা খুব ভালোবাসতো।বলতো একটা এইরকম ভালো আর শান্ত মেয়ে যদি থাকতো আমার!"
     মুনের কথা বারবারই মনে হচ্ছে শুভমেরও,কত আর বয়েস হবে?টিনএজার।ওর খুব ন‍্যাওটা ছিলো ছোটবেলায় দাদাভাই করে অস্থির হত।

  *******************

সকাল থেকে সানাইয়ের সুর আরো বেড়েছে,দুই বাড়িতেই চলছে ব‍্যস্ততা। সকালে একদফা আচার অনুষ্ঠান হলো তারমধ‍্যেই মায়ের বারবার চোখটা ছলছল করেছে ছোটবোনের কথা ভেবে। ছোট কাকারাও এসে পড়েছে। ভিডিও ফটোগ্ৰাফি,স্টিল ফোটোসেশন সব চলছে একদম স‍্যুটিংয়ের পর্যায়ে গিয়ে।তারসাথে মোবাইলে ক্লিক ক্লিক তো আছেই।দিয়ার বায়না সব ছবি তোলা চাই বিফোর আর আফটার। ইনস্টাগ্ৰাম আর ফেসবুকে থাকবে সব।বিয়ে কি বারবার হয়? একবারই তো হবে।
                প্রফেশনাল ক‍্যামেরাম‍্যান আছে তার সাথে আছে মাসতুতো ভাই ঋকের বন্ধুও। এই কিছুদিন আগে চাকরি পেয়েছে,বাচ্চা ছেলে কিন্তু ফটো তোলার হাতটা একদম দুর্দান্ত।

               গায়ে হলুদের তত্ত্বে ভরিয়ে দিয়েছেন শুভমের মা,একমাত্র ছেলের বৌ।তারপর অভাবটা কি আছে যে দেবেননা। নামি দামী কসমেটিকস, শাড়ি গয়না,এমন কি প্রতিটা শাড়ির সাথে ম‍্যাচিং ব‍্যাগ,রুমাল সব।
                      শাড়িগুলো অবশ‍্য দিয়াকে সাথে নিয়েই কিনেছেন আশা। তার সাথে তত্ত্বও আছে বাড়ির অন‍্যদের জন‍্য। হোকনা প্রেমের বিয়ে,কেউই কোন কিছু চাননি তবুও কোন ত্রুটি যেন না থাকে।
                         আর ভাইবোন গুলোও হয়েছে তেমন ছটফটে।সাজগোজ নিয়ে মেতে রয়েছে সবাই। আর বায়না ছবি তুলে দেওয়ার জন‍্য। মাঝে মাঝে মনে হয় বিয়েটা বোধহয় আজকাল লোকে সাজগোজ করার জন্য আর ছবির জন‍্যই করে।
              শুভমের ফোনে টুং করে একটা মেসেজ ঢোকে।দিয়া হাতে মেহেন্দী দিয়ে মুখটা ঢেকে একটা ছবি তুলেছে। ভিডিও কলে আসতে বলেছিলো শুভম।
আসেনি দিয়া উল্টে বলেছিলো..." একেবারে দেখবে বারবার দেখতে নেই।ওটা সারপ্রাইজ থাক।"
               কিছুক্ষণ বাদে ওরা রওনা দেবে...সবাই তৈরি হচ্ছে। মা বললো," ঐ সব দাসী টাসী বলিসনা বাপু আমার একটা মেয়ের শখ আমার জন‍্য তাই আনিস।মুনটা চলে যাবার পর সব ফাঁকা হয়ে গেছে।ও তো প্রায় এখানেই থাকতো আমার কাছে।"
        " মা আজ আর মনখারাপ কোরনা প্লিজ।"

        বিয়ের হৈ হৈয়ের মধ‍্যে সবার হাসিমুখটাই ভালো, তবুও ঘুরে ফিরে আসছে মুনের কথা। কি জানি কেন যে মেয়েটা এমন করলো?কি আর এমন বয়েস সবে তো ইলেভেনে পড়তো। কে জানে হয়তো কাউকে ভালোবেসেছিলো। অনেক কথাই সবার মনে হয়। মাসিও তারপর থেকে খুব একটা ওদের বাড়ি আসেনি। একবারই মাত্র এসেছিলো।

                  ঠিক সময়ে ওরা পৌঁছে যায় দিয়াদের বাড়ি। ভাইবোনেরা আগেই গিয়ে বৌ দেখে এলো।
কি দারুণ লাগছে বৌদিভাইকে দাদা!শুভমের মনটাও আনচান করে দিয়াকে দেখার জন‍্য। অবশেষে ছাদনাতলায় শুভদৃষ্টিতে মহারানী দেখা দিলেন। সত‍্যিই চোখ ফেরানো যায়না একদম অন‍্য দিনের চেয়ে আলাদা।
                  বিয়ের পর বাড়ি ফেরার পালা। চেনাজানা তবুও কাঁদলো দিয়া,শুভম ভাবলো কেজানে এটাও আবার ফটোশুটের জন‍্য নাকি?
      গাড়িতে ফিসফিস করে বললো.."এই কবে বিয়ে করবে অস্থির ছিলে। আবার এত কান্না কেন?
               শ্বশুরবাড়ির কাছাকাছি চলে আসবো একটু বাদেই মেকআপ ঠিক করে নাও।"

         হাসে দিয়া,মেকআপটা ঠিক করে নেয় হেসে। শ্বশুরবাড়িতে দিয়ার পছন্দমত প্রচুর লোকজনের আগমন হয়েছে,ও তো তাই চাইছিলো একদম ননদ দেওরের বাহিনী রেডি হয়ে আছে।হৈ হৈ করে সবটাই মিটে গেলো। দুধে আলতা গোলাপের পাপড়ি পায়ের তলায় রেখে শ্বশুরবাড়িতে পা রাখলো দিয়া।
            ঋজুকে না দেখে শুভম বলে," আচ্ছা মা আমাদের ফেমাস ফটোগ্ৰাফার কোথায়? কাল তো বিয়েবাড়ি থেকেই চলে এসেছিলো রাতেই শুনলাম শরীর খারাপ।আজও দেখছিনা তো ওকে।"
       " আজ সকালে চলে গেছে রে।শরীরটা ভালোনা।তারপর বললো আরো কি দরকার আছে।"
              বৌভাতের দিনের বেনারসীটার রঙ শুভমের পছন্দ করা। গোলাপী বেনারসীতে একদম পিঙ্কি পিঙ্কি লাগছে দিয়াকে। তার সাথে ওর গায়ে আজ হাল্কা গোলাপের গয়না।
               শুভমের চোখে মুগ্ধতা। সায়ন বলে," তোর লাক আছে মাইরি,যা দারুণ বৌদি হয়েছে আমাদের অনায়াসে মিসেস ইন্ডিয়া বা ওয়ার্ল্ড হতে পারে।"
      " এই বৌদি গুরুজন, এমন কথা বলতে নেই।"
       দিয়া ব‍্যস্ত বাড়ির লোকজনের সাথে কথা বলতে। আজ ওদের ফুলশয‍্যা, ও বাড়ি থেকে ফুলশয‍্যার তত্ত্ব এসেছে। তবে ফুলে ফুলে সুন্দর করে সেজেছে দিয়া আর শুভমের বেডরুম সোহাগ রাতের অপেক্ষায়।
                    সবাইকে নিয়ে ফটো তোলা চলছে। সব সামলাতে সামলাতে অনেকটা রাত হয়ে গেলো।তবে ঘরে ঢোকার মুখে বিপত্তি,ভাই বোনেরা একদম ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে।সবার কথা আগে টাকা দাও তারপর ঘরে ঢুকবে। সবার দাবী মিটিয়ে অবশেষে দিয়ার কাছে পৌঁছনো।
     " আর পারছিনা,এবার শাড়িটা খুলবো।"
  দুষ্টু হাসি হাসে শুভম "সেটা তো খুলতেই হবে। তবে তার আগে তোমাকে একটু দেখি ভালো করে।"
           দিয়াকে আদর কোলে তুলে করে ফুলের বিছানায় গড়িয়ে দেয় শুভম। দিয়ার অবশ‍্য ভয় আর লজ্জা দুটোই কম যা বলে একদম পরিস্কার।
"এই বাড়িতে কি তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠতে হয় নাকি? তাহলে আজ আর কিছু হবেনা কিন্তু আমার ঘুম পাচ্ছে।"
       শরীরটা ক্লান্ত শুভমের তাছাড়া দিয়াকে জোর করে খুব একটা লাভ নেই তা ও জানে। তাছাড়া অষ্টমঙ্গলার পরের দিনই তো ওরা হানিমুনে যাচ্ছে। তখন তো  শুধুই দুজন।
               দিয়া চেঞ্জ করতে যায়,নাইটড্রেসে ওর শরীরের প্রতিটা খাঁজ স্পষ্ট। শুভমের শিরায় শিরায় উত্তেজনা জাগে। দিয়াকে জড়িয়ে ধরে কিন্তু একটু বাদেই কেমন যেন রেস্টলেস লাগে তাই আর বেশি এগোতে পারেনা। কিছুক্ষণ বাদে দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ে।
                    কদিন ঘোরের মধ‍্যেই কেটে গেছে শুভমের।নতুন জামাই হিসেবে আদর,কত নিয়মকানুন। তার মধ‍্যেই মাকে বলেছে..দিয়াকে যেন শাড়ি পরার কথা বেশি না বলে।
   মা অবশ‍্য বলেছে,যে কয়েকদিন লোকজন আছে সে কয়েকদিন পরুক তারপর নাহয়। অবশ‍্য মাসিদের সবার ঢিলেঢালা ব‍্যবস্থায় দিয়া এরমধ‍্যেই কুর্তা পরেছে।
                      হানিমুনে আন্দামানে এসেছে ওরা,একদম খোলামেলা জীবন। দিয়া প্রতিদিন নতুন সাজে।
      " ইশ্ বিয়ের আগে কত কি কথা! কই এখন আর সেই জোশ কোথায় শুনি?"
     " মানে,আচ্ছা ঠিক আছে আজ দেখাবো মজা।"
                 আদরে আদরে ভালোবাসার চিহ্নে দিয়াকে ক্ষতবিক্ষত করলো শুভম।
  " ইশ্ ছাড়ো, ছাড়ো বাপরে কাল ড্রেসটা পরবো কি করে?"
       " তবে আমার পৌরুষে সন্দেহ!"

  *****************
      ওরা দুদিন আগে ফিরে এসেছে। এর মধ‍্যে ওদের কিছু ছবি এসে গেছে।দিয়া তো সেগুলো নিয়ে একদম ব‍্যস্ত।
" আচ্ছা,আমাদের ভিডিও রেকর্ডিং কবে আসবে বলতো?"
           " হ‍্যাঁ ঋজু ফোন করেছিলো। ওর কাছে যা কিছু ছিলো,ফটোশপে দিয়ে এসেছে।ওরা একসাথে এডিট করে একটা আ্যলবাম বানিয়ে দেবে আর কয়েকদিন দেরি হবে বললো।"
'' উঃ কত দেরি হবে আর?"

সেদিন অফিস থেকে এসেই শুভম বলে," কালকেই আসছে তোমার আমার বিয়ের সিডি বুঝেছো। ঋজুই নিয়ে আসবে।

          " উফ্! দারুণ।"
শুভমকে একটা চুমু খেয়ে নেয় চকাস করে দিয়া।

        ঋজু বেশ কিছুক্ষণ আগে এসেছে,সাথে ওর একজন বন্ধু।ওদেরকে মা খাবার দাবার দিয়েছে এরমধ‍্যেই। সবাই মিলে বেশ জমিয়ে বসে দেখা।
        চলতে শুরু করেছে প্লেয়ারে, বাহ্ সত‍্যিই স্টিল ছবি সুন্দর কিন্তু ভিডিও বেশ জীবন্ত।সব ঘটনাগুলো দেখা যায় সুন্দরভাবে।

            হঠাৎই ছবিগুলো কেমন যেন কাটতে শুরু করে।দিয়া একটু বিরক্ত হয়ে তাকায় শুভমের দিকে।
    " ঋজু,ডিস্টার্ব করছে কেন? এখন তো একদম নতুন।"
  " ঠিক হয়ে যাবে এখনি নাহলে দেবো আবার ঠিক করতে।"
       যাক্ আবার চলতে শুরু করে।

কিন্তু এসব কি দেখাচ্ছে ভিডিওতে? শুভমের হাত পা জমে যায়।একি! কেউ কোন কথা বলছেনা কেন?
                            পর্দায় একটার পর একটা ভেসে আসছে নগ্ন দৈহিক অত‍্যাচারের ছবি।কিন্তু এই ছবি এখানে এলো কি করে?
     হঠাৎই মা চিৎকার করে ওঠে," বন্ধ করো সব,অন্ধকার করে দাও আমি আর নিতে পারছিনা।"
দিয়া রাগে কাঁপছে তখন ও শুভমের মাথার চুলের ঝুটি ধরে গালে ঠাস ঠাস করে এলোপাথাড়ি মারছে...." ছিঃ ছিঃ জানোয়ার।"
           ততক্ষণে বাড়িতে ঢুকে এসেছে আরো দুজন পুলিশ..." ইউ আর আন্ডার আ্যরেস্ট মিঃ শুভময়। সব প্রমাণ আমাদের হাতে।দিনের পর দিন একজন নাবালিকাকে ধর্ষণ করেছেন আপনি।আমাদের বলতে লজ্জা হচ্ছে যে মেয়েটি সম্পর্কে আপনার বোন ছিলো। ওর মা একজন অসহায় বিধবা,কিছুদিনের জন‍্য বিশ্বাস করে রেখে গিয়েছিলো দিদির বাড়ি মেয়েকে।"

              মুনের মাধ‍্যমিকের রেজাল্ট বেরোনোর আগেই ওর বাবা মারা যায়। ওর মা সেইসময় দিশাহারা হয়ে পড়ে ওদের ছোট দোকান সামলাতে।গ্ৰামে ঐ মেয়ে একা একা থাকবে কি করে বাড়িতে? ওর দাদা তখন কলেজে পড়ছে। সেই সময় কিছুদিনের জন‍্য মেয়েকে দিদির বাড়ি রেখেছিলো।
                একদিন বাবা মা বাড়িতে ছিলোনা,তাড়াতাড়ি ফিরেছিলো শুভম কোন কারণে। স্নান করে কোনরকমে বেড়িয়ে দরজা খুলেছিলো মুন,ওর এলোমেলো পোশাক ভেজা চুল পাগল করে দিয়েছিলো শুভমকে। টানতে টানতে মুখে চাপা দিয়ে শরীরটাকে এলোমেলো করে দিয়েছিলো।বলেছিলো কাউকে বললে সব ছবি নেটে দিয়ে দেবে।বলবে ওর স্বভাব খারাপ। তারপর ইচ্ছেমত ধর্ষণ করেছে যখন খুশি। কিছু ভিডিও তুলেও রেখেছিলো,ওগুলো দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতো।
                  মায়ের ঐ অবস্থায় কিছু বলতে পারেনি ভয়ে,দাদা বলেছিলো খুন করে ফেলবে।মাসিকে বললে হয়ত ওকেই মিথ‍্যেবাদী ভাববে। তাই একদিন হঠাৎই এখানে আর থাকবোনা,মায়ের জন‍্য মন খারাপ করছে বলে কেঁদে লুটিয়ে পড়েছিলো। মা বকেছিলো," এখানে এলে যে ভেসে যাবি। পাড়াগ্ৰামের পরিবেশ ভালোনা। ওখানে মাসি কত ভালোবাসে,থাক কদিন তারপর আবার দিয়ে আসবো।"
                    সত‍্যিই ভেসে গিয়েছিলো মুন তবে অপমানের গ্লানিতে বলতে পারেনি ওর প্রিয় রাঙাদা একটা ধর্ষক, গলায় দড়ি দিয়েছিলো কাউকে কিছু না বলেই।
            ঋজু বলতে শুরু করলো," মাসিমণি কয়েকদিন আগে ওর বই খাতার মধ‍্যে থেকে একটা ডায়েরী খুঁজে পায় যাতে অনেক কথা লেখা ছিলো। আর একটা সিমকার্ডের কথা বলেছিলো যা দিয়ে ওকে ব্ল্যাকমেইল করা হত। আমি সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম।তোমার বিয়ের রাতে ওটা আমি চাবিওয়ালা একটা ড্রয়ার থেকে পাই।হয়ত মুনই সাহায্য করেছে কোনভাবে আমায়। ঐখানেই তুমি একটা ভুল করে ফেলেছিলে সিমটা রেখে দিয়ে। হয়ত বা ভুলেই গেছিলে।
ছিঃ শুভদা মাসিমণি তোমাদের বিশ্বাস করে একটা দায়িত্ব দিয়েছিলো। শেষে একটা ফুলের মত শান্ত,সুন্দর মেয়েকে মরতে হলো?

ওহ্ তুমি বোধহয় জানোনা, আমার চাকরিটা ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টে। তাই সবরকম সাপোর্ট আমি পাবো। আর তোমার মত মুখোশধারী এমন অনেক ঘুঁণপোকা লুকিয়ে আছে সমাজের আনাচে কানাচে যারা নিজের বোনকেও ছাড়েনা।"

           সাদা থান জড়িয়ে ছোটমাসি যে কখন এসে দাঁড়িয়েছে ওরা খেয়াল করেনি। ছোটমাসির চোখ ভর্তি আক্রোশ আর ঘেন্না। যেন অভিশাপের আগুন জ্বলছে।
    মাসির চোখের দিকে তাকাতে পারেনা শুভম।
পুলিশের গাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে শোনে মায়ের কান্না..." আমি কিছু জানতাম না বোন,বিশ্বাস কর মুন যে আমারও মেয়ে ছিলো। তুই ওকে ক্ষমা করে দে বৌমার মুখের দিকে তাকিয়ে।"
        হঠাৎই চিৎকার করে ওঠে দিয়া..." নেভার,মাসিমণি নেভার।ওকে ক্ষমা করোনা কিছুতেই।ওর জন‍্য একটা নয় দুটো জীবন না না অনেকগুলো জীবন নষ্ট হয়ে গেছে।
      আমার জন‍্য কেন শুনি? তোমরা কি ভাবো আমি আর ওর সাথে থাকবো? শুধু দুঃখ একটাই যদি একটু আগে জানতে পারতাম! ঐ জানোয়ারটা আমাকেও অপবিত্র করেছে। ছিঃ ছিঃ।"
         সমাপ্ত:-

             
           

                         

       
           
           
          
      


Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...