#মাঝবেলার_সাথী#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
তখন বেশ কিছু গল্প লিখেছি,বলতে গেলে লেখাটাই হঠাৎ মনকে ভালো রাখতে শেখালো।ভোলাতে চেষ্টা করলো চোখের জল আর মনখারাপ। বাবা মারা গেলেন খুব হঠাৎই বেড়াতে গিয়ে,শেষ দেখাটা আর হলোনা। মনের মণিকোঠায় রয়ে গেলো বাবাকে ট্রেনে তুলে দিয়ে আসার শেষ স্মৃতি। মাকে দেখলাম নিষ্প্রভ হয়ে ফিরে আসতে সব রঙ হারিয়ে। তখনকার মত সবটুকু গলাতে আটকে নিলেও ব্যাপারটা ঠিক মেনে নিতে পারলাম না।মনখারাপ কুড়ে কুড়ে খেতে লাগলো আমাকে। তখনই হঠাৎ লিখতে শুরু করলাম। মনে যা এলো তা দিয়ে শুরু করলাম কখনো দুঃখের কথা,কখনো হাসির কবিতা কখনো বা চারলাইনের কোটস্। দেখলাম নিজেকে ব্যস্ত রাখলে অনেক কিছু ভুলে থাকা যায়। সেই শুরু হলো মন খারাপের ঘন্টায় কলমের সাথে দোস্তি। গল্প লিখতে শুরু করলাম, তখন একটা বড় পেজে লিখি কিছু গল্প মন কাড়লো অনেক পাঠকের আমি একটু করে শান দিতে থাকলাম কলমের। আত্মবিশ্বাস বাড়লো একটু একটু করে নিজেকে বোঝালাম এই তো পারি দুঃখ ভুলতে।
মোটামুটি লেখার পাতাগুলো চাপা দিয়ে একটু করে দুঃখ ভুলছি।মাকে পড়ে শোনাতাম কিছু গল্প।অনেক না বলা কষ্ট আর আনন্দ বন্দি হতো কলমের খাপে। তার মাঝেই বাবা যাবার দুবছরের মাথায় মা অসুস্থ হলো।খুব অসহায় লাগতে শুরু করলো আসলে কি করবো তা বলার কেউ নেই স্বামী ছেলে সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মানে তুমি যা বলবে তাই হবে। দিনের অনেকটা সময় কেটে যেত হসপিটালের বেডের পাশে কখনো বা রাস্তায় রাস্তায় ট্র্যাফিক জ্যামের মাঝে ভিজিটিং আওয়ার্সের খোঁজে। মায়ের অপারেশন হচ্ছে বাইরে বসে আমি চোখ স্ক্রীনে, লেখার মধ্যে মন হারিয়ে শান্তি খোঁজা।
তার মধ্যেই একটা নতুন ছবিওয়ালা ব্লগের খোঁজ পেলাম #মমস্প্রেশো_বাংলা#দেখলাম কি সুন্দর ছবি দিয়ে সাজানো হয় লেখাগুলো রঙিন করে।খুব ইচ্ছে হলো আমি যদি পারতাম এখানে লিখতে। ভীষণ খারাপ মানসিক অবস্থার মধ্যে খুঁজে বেড়াতে চাইলাম নিজেকে ভালো রাখার চাবিকাঠি কারণ আমাকে যে লড়াই করতে হবে।আমার মায়ের যে একমাত্র অবলম্বন আমি।
তবে ব্লগে অনেক গল্প পাঠালেও জায়গা করে নেওয়া খুব একটা সহজ হলোনা। ঘন ঘন মেসেঞ্জারে আর মেলে মেসেজ আসতে লাগলো..' আপনার গল্পগুলো খুব বড় আর ভুলে ভরা আমাদের পেজে দিতে হলে এডিট করে ছোট করুন। দুএকটা চেষ্টা করলাম ঠিক করতে।
ততদিনে মায়ের মৃত্যুর পরোয়ানা হাতে পেয়ে গেছি জানতে পেরেছি মা আমার আর কয়েকদিনের অতিথি। তার মধ্যে এই মেসেজগুলো আমার মনোবল ভাঙার জন্য যথেষ্ট। সত্যিই আমার গলা তখন বন্ধ কান্নায় বিরক্ত হয়ে বললাম," আমার পক্ষে এই মুহূর্তে কিছু করা সম্ভব নয় আমার মা খুব অসুস্থ আপনারা আমার গল্প প্লিজ পেজে দেবেননা।"
তারপর আর দেখিনি কিছু। অ্যাপটা আনইনস্টল করে দিয়েছিলাম ফোন থেকে। হঠাৎই আমার এক প্রিয় লেখিকা বোন খবর দিলো "দিদি তুমি তো টপব্লগার হয়েছো দেখোনি?"
আমি বললাম.." কই দেখিনি তো?"
সেই প্রাপ্তিতেই হয়ত এক অনন্য তৃপ্তি তাই আর ব্লগের সমাপ্তি টানা হলোনা।রয়ে গেলাম ওখানে।
এও হয়ত আমার জীবনের এক সুন্দর মুহূর্ত দুঃখের মাঝে। চাকরি আমি করি মাসের শেষে অ্যাকাউন্টে স্যালারি জমা পড়ে। কিন্তু লিখে রোজগার! এমন অভিজ্ঞতা প্রথম মমস্প্রেশো বাংলাই দিয়েছে আমাকে। মা তখনো বেঁচে,খুশিতে মায়ের মুখে হাসির ছোঁয়া। মা বরাবরই চাইতো আমার বাড়তি গুণগুলো বাঁচুক যত্নে কিন্তু বাঁচেনি মুছে গেছিলো সংসারের চাপে।
আমি যে আবার চিলেকোঠার ঘরের ফালতু জিনিসের মাঝে আমার লেখার খাতাটা খুঁজে পেয়েছি তাতেই মায়ের মুখে এক পরিতৃপ্তির হাসি দেখেছিলাম।
অনেক ধন্যবাদ ফেসবুকের অনেক পাঠক পাঠিকা আর মমস্প্রেশো বাংলার এডিটোরিয়াল টিম ও পাঠকদের আমার আমিকে খুঁজে পেতে সাহায্য করার জন্য।
আমার হারানো কলম তোকে আবার মাঝবেলায় মনের মাঝে পেয়ে আমি ভুলে যাই অনেক কিছু,নতুন করে বাঁচতে শিখি।
সমাপ্ত:-
#আমার_লেখনীতে#
#মেয়েবেলার_চারপ্রহর#
Comments
Post a Comment