Skip to main content

মায়ের ম‍্যাজিক

#মায়ের_ম‍্যাজিক#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

কণকাঞ্জলি দিয়ে একমুঠো চাল ছড়িয়ে মুখ ফিরিয়ে চলে আসা আজ থেকে তোমার সব ঋণ শোধ করলাম বলে কাঁদতে কাঁদতে নতুন মানুষের সাথে যাত্রা শুরু হয় সব মেয়েদেরই। কিন্তু সত‍্যিই কি সব ঋণ শোধ হয়? যদি তাই হত তাহলে মা বাবাকে কথায় কথায় ছুটে আসতে হতনা মেয়ের সুখে অসুখে। মায়ের হাতের পায়েশ খেয়ে মা হওয়ার জন‍্য নার্সিংহোমে ভর্তি হতে গেলো ইতু পেছনে রইলো দুটো চিন্তিত মুখ।বাবার মুখটা খুব ছোট হয়ে গেছে আলতো আদরে মানুষ করা ইতু চলেছে মা হতে।মেয়েটা পারবে তো এত ধকল নিতে। ওর সাহসী মা বাবাকে ভরসা দেয়.." ঠিক হয়ে যাবে সব অত ভেবোনা। আমিও তো একদিন এভাবেই ইতুকে কোলে নিয়ে বাড়ি এসেছিলাম মনে নেই তোমার।"
               মায়ের কাছে কত শুনেছে সেই গল্প ইতু অনেক বড় বেবি হয়েছিলো ও মাকে খুব কষ্ট দিয়েছে জন্ম নেবার সময়। তারপর ওর মুখ দেখে সব ভুলে যাওয়া। ঠাকুমা অবশ‍্য দুঃখ করে বলেছিলেন ইশ্ পরপর দুই নাতনী বড় ছেলের ঘরে আবার মেয়ে! তবে হাত পা নাড়া পুতুলের মত ইতুকে দেখে নাকি মন ভরেছিলো ঠাকুমারও।

          মায়ের মত ছোট ফুটফুটে বাচ্চা নিয়ে হসপিটালের থেকে বাড়ি ফিরলো ইতু। তবে নাতি দেখে সবার মনে আনন্দ হলো বাবারও হলো। মনে মনে ভাবলো ইতু যদি মেয়ে হত তাহলে কি ভাবতো সবাই কে জানে? তবে সেটাও জানা গেলো যখন দ্বিতীয় সন্তান এলো মেয়ে। এক ছেলে এক মেয়েকে নিয়ে সুখী মাতৃত্ব ইতুর। তবুও মায়ের  কাছে বকুনি খেতে আদর পেতে ভালো লাগে। মা বাবার ছায়া বোধহয় সন্তানকে জড়িয়ে থাকে এভাবেই আজীবন।

          ফোনে মায়ের সিগন‍্যাল সবসময় অন। মাকে সবসময় পেতে পেতে এক অভ‍্যাস হয়ে যায় সব মেয়েদেরই। তার সাথে থাকে দাবী আব্দার আর ভালোবাসা।
   " হ‍্যালো মা,মাছটা কি করে করবো বলতো?
আজ অনেকে খাবে। আচ্ছা পোলাওয়ে কতটা চিনি দেবো বলতো? মাগো তোমার নাতনি খুব কাশছে,তোমার নাতির পেটব‍্যথা। আমার গলাব‍্যথা হচ্ছে"...সব কিছুরই মুশকিল আসান মা।
       মা বললেই সব ঠিক হয়ে যাবে,মা একাধারে ডাক্তার,শেফ,মিস্ত্রী,সাইকোলোজিস্ট,ম‍্যাজিসিয়ান সবটাই। আর বাবা হচ্ছে গ্ৰেট ম‍্যাজিকম‍্যান।

       তবে ভালো দিনগুলো কোথা দিয়ে যেন পার হয়ে যায়। আজ মা বাবা হারিয়ে একলা হয়ে যাওয়া ইতু বোঝে সেটা যে ওর সুখ দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার মত ম‍্যাজিসিয়ানরা চলে গেছে তারাদের দেশে। যেখানে ঋণশোধের পরও আবার ঋণ করতে যাওয়া যায়না।

      সাম্প্রতিক করোনার আবহাওয়াতে বুক ছমছমে পরিস্থিতি সবার মনের আকাশ মেঘলা।

   শরীর খারাপ হলে ভয় ভয় ভাব মনে আশঙ্কার মেঘ। কদিন ধরে ইতুর মন ভালো নেই বাড়িতে অসুখের বাস,মনের কুঠুরিতে ভয়। কেজানে কি হয় কি হয়? ম‍্যাজিসিয়ন আর ডাক্তার কেউই তো নেই যাদের মন খারাপের কথা বলতো অপকটে।

          ভোরের দিকে ঘুম ভেঙে যায় ইতুর ভয় লাগে,বুকটা দুরদুর করে সবাই ভালো থাকবে তো?
            আজ হঠাৎই একটা ফোন এলো ইতুর  মায়ের এক ছাত্রের..দুবছর বাদে প্রায় ফোন করলো এক দাদা বললো মাকে স্বপ্ন দেখেছে তাই হঠাৎই ফোন করলো।
        ওদের সাথে ফোন কথা বলে মনে হলো মায়ের খুচখাচ টিপস যাকে টোটকা বলে কিন্তু বেশ কাজের তা বৌদি আর দাদা বলে গেলো ওকে। দাদা বলতে শুরু করলো.." শোন বনু দিদিমণিকে কাল রাতে স্বপ্ন দেখলাম সঙ্গে সঙ্গে আজই মনে হলো তোকে ফোন করি। কেমন আছিস বোন?"

    বোন কথাটা শুনে গলাটা ভিজে গেলো ইতুর,মনে হলো কান্না পাচ্ছে।  বোজা গলায় বললো," ভালো নেই দাদা একটু জ্বর জ্বর আর গলাটা ব‍্যথা। গার্গেল করছি,ওষুধ খাচ্ছি।"

     দাদা বললো.." তোর বৌদি তোর সাথে কথা বলবে শোন কি বলছে।"

        বৌদি যেন ঠিক মায়ের মত বলতে লাগলো সুদূর পুণা থেকে.." শোনো কিছু ভয় নেই, হাফ চামচ সরষের তেল নিয়ে শুয়ে আস্তে আস্তে কাউকে বলবে নাকে দিতে।ড্রপার দিয়ে দিলেও হবে যাতে নাক দিয়ে গিয়ে গলা পর্যন্ত ঝাঁঝ যায়।প্রথম দিন একটু জ্বালা করবে পরে ঠিক হয়ে যাবে।দিনে দুবার করবে।গলায় বুকে আর পায়ের তলায় তেল মালিশ করবে দিনে আর রাতে ঘুমোবার আগে। দেখবে ঠিক হয়ে যাবে। গরম জিনিস খাও আর গার্গেল করো।"

       কথা বলতে বলতে মনটা তারাদের দেশে চলে যায় ইতুর অবাক হয়ে যায়.." আরে এ তো মায়ের কথা।ছোটবেলায় মা তো এভাবেই গলায় বুকে তেল দিতো প্রদীপের শিখায় হাত গরম ক‍রে। তাহলে কি মায়েরা সব সময় আগলে রাখে তাদের সন্তানদের এভাবেই। ঠিক বিপদে কাউকে না কাউকে পাঠায় পাশে।"

       সমাপ্ত:-

      

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...