#শৈশবের_নস্টালজিয়া#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
#ছোটোবেলা#
ছোট ছোট ইচ্ছে,প্রজাপতির পেছনে ছুট,এক্কাদোক্কার ঘর,পাথরের গুটি,মার্বেলের বাক্স,জুতোর বাক্সে পুতুলের সংসার, মা বাবা, আমাদের ছোটবাড়ি এই সব নিয়েই ছিলো আমার ছেলেবেলা যা এখনো মাঝে মাঝেই স্বপ্নে আসে তার সাথে মা বাবাও এসে দাঁড়ায়। আমিও ঘুমের ঘোরে হাত বাড়াই কখনো মায়ের আঁচলের গন্ধ পাই আবার কখনো বা শুধুই খুঁজে বেড়ানো সারারাত ধরে স্বপ্নের অলিগলিতে।
ছোটবেলায় শাসনের পাকদন্ডীতে হাঁফিয়ে উঠে মাঝেমধ্যেই মনে হত কবে যে বড় হবো আর ভাল্লাগেনা ছাই। এখন মনে হয় যদি ভূতের রাজার বর পাই তবে একটা দিনের জন্য ঐ ছেলেবেলাই ফেরত চাই।
এখন পেছন ফিরে তাকালে সব প্রাপ্তির মধ্যে মিঠে পাওয়া ছেলেবেলা,মাই সুইট মিত্তি মিত্তি ছেলেবেলা।আমার প্রাইমারী স্কুল,ফুলহার নদীর ধার,এলেঙ্গী নদীর পাড় যেখানে মাঝিরা মাছ ধরতো, স্কুলের সামনে বড় বটগাছওয়ালা বড় মাঠ যা ছিলো আমাদের ছোটবেলার হেঁটে দৌড়ে বেড়ানোর জায়গা।
স্কুলের একদম সামনেই ছিলো আমাদের কোয়ার্টার, খুবই ছোট তাই কষ্ট করেই থাকা সেখানে পাশাপাশি তিনটে ঘর ছিলো তাতে বাস করতো বাবার আরো দুই সহকর্মী তবে সম্পর্কে আমাদের আত্মীয়ের মত। বাড়িতে মাংস রান্না হচ্ছে মানেই দুটো বাটি পাশের বাড়িতে যাবেই। মায়ের হাতের আলুভাজা আবার পাশের বাড়ির ভাইয়ের খুব পছন্দ ও থালা নিয়ে এসে হাজির হত আলুভাজা খেতে। ও আবার মাকে মিয়ামা বলতো। মাকে দেখেছি সকালে উঠে উনুনে আঁচ দিয়ে রান্না করে আমাদের সবাইকে খাইয়ে স্কুলে যেতে। বাড়িতে সব সময়ই কেউ না কেউ থাকতো বা আসতো। আমার জেঠতুতো দিদিরা বাবার স্কুলেই পড়াশোনা করেছে। অল্পেই মন ভাসতো খুশিতে আর এই নিয়ে ছিলো হাসিখুশি ভরা সংসার আমাদের। বাবা মা চাকরি করলেও তখন মাইনে খুবই কম তার ওপর বাবা তখন বাড়ি করছেন। বিলাসিতা বিহীন জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন বাবা মা সব সময়ই তাদের খুব সাধাসিধে থাকতে দেখেছি যদিও খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে কখনোই কষ্ট পাইনি।
মায়ের কাছে শুনেছি আমার জন্মের পর বাবা আমাকে খাঁটি দুধ খাওয়ানোর জন্য রীতিমতো একটা ছাগল আর গরু কিনে পাশের এক মুসলিম পরিবারকে পুষতে দিয়েছিলেন।
এখন নিজের জীবন দিয়ে ভাবি মা সারাদিন কত কি করতো! তারপর দেখতাম স্কুল থেকে ফিরে বিকেলে বসতো সেলাইয়ের আসর। কত রকমের নক্সা তুলতো মা আর টি। আমাদের পাশে থাকা ভদ্রলোককে আমি জেঠা না বলতে পেরে টা বলতাম এবং ওনার স্ত্রীকে টি বলতাম।
মায়েদের সোয়েটারের ডিজাইন তোলা আর আসনে ফুল তোলা ছিলো বেশ মনে রাখার মত অবশ্য তা নিয়ে রেষারেষিও হত আমার তো খুব মজাও লাগতো। মায়ের কাছে লুকিয়ে লুকিয়ে সেলাই শেখা,গ্ৰাম বলে লোডশেডিং লেগেই থাকতো লুকিয়ে কত হ্যারিকেনের আলোতেই সেলাই করেছি ফাইভ সিক্সে পড়তে। বাবা একদম পছন্দ করতেননা সেলাই করা মা মেয়ে দুজনেই বকুনি খেতাম।
স্কুলের দিনগুলো বড় পিছু ডাকে,বাড়ি লাগোয়া স্কুলে মোটামুটি প্রেয়ারের ঘন্টার সময় ধরেই ছুট লাগাতাম খেলার নেশাতে টিফিনেও বাড়ি আসতাম না। স্কুল থেকে এসে দুধমুড়ি বা চিড়ে এই সবই বরাদ্দ ছিলো কারণ জানতাম মাও ফিরেছে স্কুল করে। কোনরকমে টিফিন করেই দৌড়তাম মাঠে চেটেপুটে বিকেলটুকু উপভোগ করার জন্য কারণ সন্ধ্যেবেলা হবার আগেই ফিরতে হবে অবশ্য দৌড় বেশিদূর নয় সামনের মাঠেই। আর মা হাঁক দিলেই ছুটে এসে টিউবওয়েলে হাত পা বেশ করে ধুয়ে পড়তে বসা। আমার আবার ঝিমোনোর বাতিক ছিলো মোটামুটি আটটার পরেই ঢুলুনি শুরু হত আর মা রান্নাঘর থেকে চ্যাঁচাতো ঘুমোসনা রে,খেয়ে ঘুমাবি।
ঐ সময় বিকেলে বাজার ছিলো,বাজার থেকে আসতো টাটকা মাছ একদম দুপুরের জালে জেলেরা মাছ তুলে পড়ন্ত বিকেলে আনতো বাজারে কখনো বা সকালে। বাবা বাজার থেকে আনতেন ডিমভরা ট্যাংরা,পিয়ালি,রায়খর,পাবদা কখনো বাঁচা মাছ। কলকাতার ক্লান্ত দুপুরে যখন স্কুল থেকে ফিরে রান্না করে পড়ন্ত বেলায় ক্লান্ত শরীরে একলা ঘরে খাবার বেড়ে খেতে বসি বড় মনে হয় ছোটবেলায় আর বড় বেলায় মায়ের আদরের কথা। একটা সময় কোনদিনই খাবার বেড়ে খাইনি।শাশুড়ি বিহীন শ্বশুরবাড়িতে বিয়ে হয়ে বরাবরই সবাইকে পরিবেশন করে নিজে খাবার নিয়ে বসি।
গ্ৰামের স্কুল হলেও আমাদের স্কুলের নাম তখন মালদা জেলাতেও ছিলো।দূরদূরান্ত থেকে ছাত্রছাত্রীরা আসতো সেখানে পড়তে।বাবা মা দুজনেই ঐ স্কুলে পড়াতেন বলে আমি মোটামুটি জব্দ ছিলাম একদম ফাইভ টু টুয়েলভ।
স্কুলের প্রতিটি অনুষ্ঠান আজও মনে দাগ কেটে আছে। সরস্বতী পুজোর আগের রাতে হস্টেলের ছেলেরা মোটামুটি আমাদের সারারাত ঘুমোতে দিতোনা।বাবাকে জ্বালিয়ে মারতো এই চাই সেই চাই করে। তাছাড়া সেদিন রাতে অনেকের বাড়ির গাছপালা ফুল তারা নিঃশব্দে পাচার করে ডেকোরেশনের কাজে লাগাতো এই নিয়ে বকুনিও খেতো। সকাল থেকেই ছাত্রীরা হলুদ মেখে স্নান করে এলো চুলে বসতো সব্জি কাটতে কারণ খিচুড়ি আর বাঁধাকপির তরকারি রান্না হবে।
এর ওর গায়ে ফুল ছিটিয়ে অঞ্জলি দেওয়া,সরস্বতী পুজোর সাজ একদিনের জন্য পড়া থেকে ছুটি সবই মনে পড়ে যায়। স্কুলে শিক্ষকতার সুবাদে সরস্বতী পুজোর দিনটা এখনো বেশ ছাত্রী ছাত্রী নষ্টালজিয়া নিয়ে কেটে যায় তবে মিস্ ইউ ছেলেবেলা... দো উই হ্যাভ নো মানি বাট চাইল্ডহুড ডেইজ আর সুইটার দ্যান হানি।
#আমার_লেখনীতে#
#মেয়েবেলার_চারপ্রহর#
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment